#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ৭
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
‘বৃষ্টিস্নাত এই ভোরের আলোয়,মিশিয়ে নেওয়ার এই খেলায়,
তুমি আমি থাকবো দুজনের মনের কিনারায়৷
ভালোবাসি,ভালোবাসি প্রেমের ঠিকানায়৷
কাব্য ভাইয়া তার মনের মাধুরি মিশিয়ে গেয়ে চলেছেন৷ গানের কথা গুলো তার লেখা৷ হয়তো সুর তুলছেন৷ তার একটা ডায়েরি আছে!আর সেটার নাম হচ্ছে,”রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি”৷ আজ পর্যন্ত কারো সাহস হয় নি তার এই সিক্রেট ডায়েরি খুলে দেখার৷ সেই পাঁচ বছর আগে একবার চুরি করে দেখতে গিয়ে কাব্য ভাইয়ের হাতে তার ক্লাসমেট তমা আপুর চড় খেয়ে গাল বাঁকা হয়ে গিয়েছিলো৷ সেই থেকে এই ডায়েরিকে সবাই ভুতের মতো ভয় পায়৷ এশারের নামাজ পড়ে ফুঁপি আবার আসে৷ কথা শেষ হওয়ার আগেই আজান শুরু হয়৷ তাই ফুপি নামাজে চলে যায়৷ আমি উৎসুকভাবে শোনার অপেক্ষায় আছি৷ হয়তো আজ আমার অপেক্ষার অবসান হবে আর তারপর মুক্তি৷ মুক্তি নামক শব্দটা বড্ড ভারী ঠেকলো আমার কাছে৷ কিসের মুক্তি?ভেবেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো৷ ফুঁপি পানির বোতল পাশে রেখে আমাকে বলল,
–‘সত্যি গুলো বড্ড তিক্ত হয় জানিস নীতু?অনেক সময় এই সত্যির জোড়ে সম্পর্ক ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়৷’
ফুঁপির বলা শব্দ গুলো বড্ড কঠিন লাগছে সেই সাথে ভয়৷ কি এমন সত্যি যেটা সম্পর্ক ভাঙতে পারে?
–‘কি এমন সত্যি ফুঁপি? আমার যে বড্ড ভয় লাগছে তোমার কথা শুনে৷’
–‘কাব্যে একজন কে অনেক ভালোবাসতো আর তাদের বিয়েও ঠিক ছিলো৷’
আশেপাশে বাজ পড়লে যেমন শব্দ হয় তেমন শব্দের ন্যায় এইটুকু কথা লাগলো আমার৷ আমি বিষ্ময়ে নিয়ে তাকিয়ে আছি৷ ফুঁপি নির্ঘাত আমার সাথে মজা করছে৷
–‘আমার সাথে মজা করছো!’
–‘মজা করার মতো পরিস্থিতি এইটা নয় তুই ভালো মতো জানিস নীতু৷’
–‘কিন্তু…..
ফুঁপি আমার দিকে দৃষ্টি মেলে বলল,
–‘সমস্ত কথা শোন আগে৷ মেয়েটার নাম ছিলো রাই৷কাব্য হুট করে একদিন এসে বলল মেয়েটাকে নাকি ও ভালোবাসে৷ আর অনেক অনুরোধ করলো তাকে বিয়ে করবে৷ সব শুনে আমি মানতে নারাজ ছিলাম৷ কিন্তু কাব্য নাছোড়বান্দা সে বিয়ে করবেই৷ আমি তোর রেদুয়ান আঙ্কেল কে জানিয়ে কাব্যকে বোঝানোর চেষ্টা করি৷ কবিতার তখন বিয়ে ঠিক হওয়ার পথে। এতশত ঝামেলায় ওকে কথা দিই আমরা বিয়ে ঠিক করে রাখবো আর কাব্য গ্রেজুয়েট হয়ে বের হওয়ার পর বিয়ে দিয়ে ঘরে তুলবো৷ কিন্তু কিছুদিন পর মেয়েটার বাবা করে অন্য একজনের সাথে বিয়ে দেয় তাও ওই মেয়ের মত নিয়ে। কাব্য শুনে চুপ মেরে বসেছিলো৷ এই ঘটনা তোদের অজানা কারণ আমরা চেয়েছিলাম ওকে কেও প্রশ্ন না করে৷ ইন্টারের সময় মেয়েটার সাথে সম্পর্ক ছিলো৷ তবে মেয়েটা ওকে ভালোবাসতো না৷ বিয়ের আগের দিন হাসিমুখে নিজে এসে বিয়ের কার্ড দিয়ে বলেছিলো,যোগ্যতা ছাড়া দুনিয়ায় কাওকে পাওয়া যায় না৷ কাব্যও হাসি মুখে কার্ড নিয়েছিলো৷নিজের ভুল বুঝে নিজেকে সামলিয়েছে৷’
আমি ফুঁপির কথা শুনে চুপ মেরে বসে আছি৷ কি বলা উচিৎ ভেবে পাচ্ছি না একদম৷ আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফুঁপি কে বললাম,
–‘ফুঁপি এইগুলো কবে হয়েছে?’
–‘আমরা যখন মিরপুর থাকতাম৷ কাব্য তখন সদ্য ইন্টারে উঠেছে৷ তখন তুই অনেক ছোট৷’
আমি আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলাম,
–‘কাব্য ভাইয়া কি ওই মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসতো?’
–‘ওর মন বুঝতে পারা অনেক কষ্ট রে নীতু৷ চব্বিশ বছর ধরে ওকে আগলে রেখেছি কিন্তু এখনো ওকে বুঝতে পারি না৷ এইটা “মা” হিসেবে আমার ব্যার্থতা৷ ওর মনের সমস্ত কিছু নিজের মধ্যে আগলে রাখতে ভালোবাসে৷ হয়তো মেয়েটাকে ভালোবাসতো খুব বেশি আবার হয়তো ওর মনের আবেগ ছিলো৷ কিন্তু আমার ছেলেটা ভালো নেই৷’
–‘তবে আমায় উনি এইভাবে নিয়ে এলো কেন ফুঁপি?’
ফুঁপি আমার দিকে নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথায় হাত রেখে বললেন,
–‘ও যে শর্তে বাধা নীতু!আর সেই শর্তে আমাকেও বেঁধে রেখেছে৷ তবে এইটুকু বলতে পারি,ও তোকে আগলে রাখার জন্য সবকিছু করতে পারে৷ আর বিয়েটা বড় ভাই ইচ্ছা করে দিতে চায় নি৷ আমিরের সাথে ব্যাবসায়ী শএুতা আছে তা জানিস তুই?’
আমি মাথা দোলালাম৷ সত্যি আমিরের সাথে বাবার টাকা নিয়ে ঝামেলা চলছিলো৷ বিয়ের দু দিন আগে “আমির” আমাদের বাসায় আসে তারপর বাবা তাড়াহুড়ো করে আমার বিয়ের সমস্ত আয়োজন করে৷ বাবা একপ্রকার জোর করেই বিয়েতে হ্যাঁ বলিয়েছে আমায়৷ ফুঁপি দম নিয়ে আবার বলল,
–‘আমি অসুস্থ ছিলাম তাই তোর বিয়েতে যেতে পারি নি৷ কাব্য আসার আগে ফোন করে বলেছিলো তোকে নিয়ে আসছে৷’
–‘কিসের শর্ত ফুঁপি?আমি ভেবে ভেবে পাগল প্রায় হয়ে যাচ্ছি৷ আর বাবাও আমাকে তার বাসায় যেতে বারণ করে দিয়েছে৷ আমি কতোদিন থাকবো এইখানে?আমার পড়ালেখার কি হবে৷’
ফুঁপি মুচকি হেসে আমাকে তার কোলে মাথা দিয়ে শুতে বলেন৷ আমি শুতেই মাথায় বিলি কাটে৷আমি শান্তিতে চোখ বন্ধ করে ফেলি৷ এখন মনে হচ্ছে সব শর্ত গোল্লায় যাক ফুঁপির আদরে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ি৷
–‘তোর পড়াশোনা এখানেই হবে আমাদের বাসায় থেকে৷ আর বড় ভাই সব কিছু সামলিয়ে তোর সাথে দেখা করতে আসবে৷ আর শর্ত সেটা উপযুক্ত সময় হলে সেটা তোকে কাব্য নিজে বলবে৷ এখনো সেই সময় আসে নি৷’
আমি চোখ খুলে বললাম,
–‘সেই সময়টা কবে আসবে ফুঁপি!আর কতো দোটানায় থাকবো আমি৷’
–‘সেইটা পাঁচ বছর পর আসতে পারে আবার দুদিন পরও আসতে পারে৷ তোর এতো কিছু ভাবতে হবে না৷ নিজের পড়াশোনার দিকে ফোকাস কর৷ নিজের পায়ে দাড়া৷ আমরা তোর পাশে আছি ইভেন তোর বাবাও তোর পাশে আছে সেইটা সময় হলেই বুঝতে পারবি৷’
পরম শান্তিতে আমার চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে আসলো৷ ফুঁপি আমাকে ঘুমাতে দেখে নিজে চুপ হয়ে মাথায় হাত বুলাতে থাকলেন৷ বাইরে থেকে কাব্য ভাইয়ের কন্ঠ ভেসে আসছে৷ কি বলছেন উনি কিছুই কানে ঢুকছে না৷ আমার ঘুম দরকার শান্তির ঘুম!
_________________________________
ছাদের কার্ণিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে কদম গাছটা৷ সকালের স্নিগ্ধ আলো কদমের ছোট ছোট নেড়া মাথায় পড়ছে৷ সূর্যের আলোয় ছোট কদম গুলো কুসুমের মতো লাগছে৷ কিছুদিন পরেই কদমের সুন্দর রুপের ছড়াছড়ি হবে এই নেড়া মাথা থেকে৷আমার এই কদম গুলো দেখতে দারুণ লাগে৷ কিছু কাঁক সেই কদম ঠোকাঠুকি করছে ছিড়ার জন্য৷ কাঁক গুলো বড্ড বোঁকা এই কদম ছিড়ে কি করবে ওরা? নিজের প্রেমিকা কে দিবে? কদম প্রিয় কাঁক প্রেমিকা৷ ভেবেই দম ফাটা হাসি পেলো৷ কাঁক গুলো কদম ছিড়ে নিয়ে ওদের প্রেয়সীকে দিয়ে বলবে,
‘প্রেয়সী কাঁক তোমার জন্য মানুষের প্রিয় কদম এনছি।
এইবার আমাকে গ্রহণ করো কাঁক সুন্দরি।’
সত্যি কি এমন টা করে ওরা?
–‘তোর মতো গাঁধা আর কি কি ভাবতে রে!’
পিছন থেকে কাব্য ভাইয়ার অপমান সূচক বাক্য শুনে আমি চুপ করে গেলাম৷ উনি আমার পাশ ঘেষে দাঁড়িয়ে কদমের দিকে তাকিয়ে বললেন,
–‘শুভ সকাল কাঁকের প্রেম বিশেষজ্ঞ৷’
আমি উনার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললাম,
–‘আপনি এখানে কখন এসেছেন?’
–‘তুই যখন কাকের প্রেমের বাণী শোনাচ্ছি….ওয়েট তোকে আমি জবাব কেন দিবো৷’
উনার এমন কথা শুনলে বিরক্ত লাগলেও আজ লাগছে না৷ উনায় একটু জ্বালাতে ইচ্ছা হচ্ছে প্রচুর৷ আমি নিরুত্তাপ ভাবে জবাব দিলাম,
–‘আপনার বউ আমি জবাব তো দিতেই হবে আপনাকে৷’
উনি ফাটাফাটা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন৷ নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললেন,
–‘আমি মানা করেছি নাকি? তা বউ বাসর ঘরের ব্যাবস্থা করি৷’
আমি উনার থেকে একহাত দূরে গিয়ে বললাম,
–‘দূরে যান আপনি!সকাল সকাল আমাকে না জ্বালালে শান্তি হয় না আপনার৷’
উনি আমার কাছে এসে বললেন,
–‘না হয় না কাঁকের প্রেম বিশেষজ্ঞ৷’
–‘উফফ!বিরক্তিকর৷’
–‘উফফ!কাঁকের প্রেমকর৷’
উনার সাথে কথা বলাই বৃথা৷ আচ্ছা উনি কি জানেন ফুঁপি আমায় অনেক কিছু বলে দিয়েছে?এইজন্যই কি আজ মেজাজ মজা করার মুডে তার!উনি হঠাৎ আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,
–‘তোকে আজ খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে জানিস?তাও বাটার দিয়ে৷ একদম স্নিগ্ধ লাগছে৷’
উনার ফিসফিস শব্দে আমার কেমন অদ্ভুত লাগছে সেই সাথে লজ্জা৷ আমি মেকি রাগ দেখিয়ে বললাম,
–‘আমাকে কি আপনার খাওয়ার জিনিস লাগে? আপনি পাগল হয়ে যাচ্ছেন দিন দিন কাব্য ভাইয়া সেইটা কি আপনি জানেন?’
উনি কদমের ডালের দিকে লাফিয়ে দুটো কদম ছিড়ে বললেন,
–‘সারাদিন এতো ভাই ভাই করিস কেন রে! তোকে না বলেছি ব্রো বলবি আমায়৷’
উনার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম৷ এই ছেলে নিশ্চয় ছ্যাঁকা খেয়ে ব্যাঁকা হয়ে গেছে পুরনো প্রেমিকার কথা মনে করে তাই উল্টো পাল্টা বকছে৷ আমি হাসবো নাকি কাঁদবো? উনি কদম গুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছেন৷
–‘ব্রো মানেও তো ভাই কাব্য ভাইয়া৷’
উনি আমার দিকে তাকিয়ে রাগী ভাব মুখে ঝুলিয়ে বললেন,
–‘এতো বুঝা লাগবে কেন তোর৷ বলতে বলেছি বলবি৷ আর না হলে শুদ্ধ বাংলা ভাষায় আমার নামটা আছে সেইটা ধরে বলবি৷ সারাদিন ভাই ভাই বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে৷ তোর কোন জন্মের ভাই লাগি আমি?’
–‘কেন এই জন্মের সাথে আরো সাত জন্ম থাকলে সেই জন্মেরও ভাই লাগেন৷’
–‘টেনে এক চড় মারবো তোর গালে৷ বেশি কথা বলিস৷ যা করতে বলবো তাই করবি আর এইটা তোর প্রতি আমার অধিকার৷’
–‘কিসের অধিকার!মিথ্যা অধিকার নিয়ে আমার উপর জোর দেখাবেন না একদম৷লেখিকা,রুবাইদা হৃদি৷ একজন ভাই হিসেবে জোর দেখাতে পারেন তাও লিমিট রেখে৷’
উনি কদম গুলো ছুড়ে ফেলে দিয়ে আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে নিজের সাথে শক্ত করে ধরে বললেন,
–‘অধিকার দেখানো তো মাএ শুরু৷ তোকে এই অজানা অধিকারের পুড়াবো৷ না তুই যেতে পারবি না সহ্য করতে পারবি৷ আর অধিকারে সমস্ত আয়োজন করবো আজ সেটা তোর সামনেই৷’
উনি আমার হাত ধরে টেনে ছাদ থেকে নামায়৷ উনাকে এইভাবে টানতে দেখে ফুঁপি বারবার মানা করেন কিন্তু উনি ফুঁপিকে উপেক্ষা করে আমায় গাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন৷ বারবার ছুটতে চাইলে আরো জোরে আঁকড়ে ধরছেন হাত৷ উনার এই রাগ আবার কোন মোড় এনে দিবে আমার জীবনে?
চলবে…….
#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#বোনাস_পার্ট
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
কাজী অফিসে বসে আছি আমি আর কাব্য ভাইয়া৷ উনি আমার একহাত শক্ত করে ধরে রেখেছেন৷ আমার কান্নার শব্দ গুলো উনার কান অবধি পৌঁছাতে পারছে কিনা সেই জানে৷ উনি অন্য হাতে তার চুল টেনে ধরে আছেন৷ চোখ গুলো রক্তলাল৷ হাত এতো শক্ত করে ধরেছেন মনে হচ্ছে এখুনি খুলে পড়ে যাবে৷ আমার মোচড়ামুচড়ি দেখে একবার আমার দিকে তাকাতেই আমি চুপ হয়ে যাই৷ উনাকে আগে এইভাবে রাগতে দেখি নি৷ ভয়ে কলিজা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আমার৷ আমার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে একবার ঘড়ি দেখলেন আবার বাইরের দিকে তাকালেন৷ আফসোসের সুরে বললেন,
— ‘ড্যাম ইট!প্রয়োজনের সময় কাওকে পাওয়া যায় না৷’
সাদা পাঞ্জাবি,কালো টুপি সাথে মুখে দাড়ি আর পান খেতে খেতে একজন লোক চেয়ার টেনে বসতেই কাব্য ভাই নড়েচড়ে বসলেন৷ উনার হাবভাব দেখে কাজী লাগছে৷ উনাকে দেখে আমি এইবার জোরে কান্না করে দিলাম৷ শেষ আশাও আজ শেষ! কাজী দাত গুলো বের করে হে হে করে হেসে বললেন,
–‘উঠিয়ে নিয়ে আসছেন নাকি ভাইজান?হয় এমন হয়!কতো করাইছি এমন বিয়া তার হিসাব নাই।তা আপনাগো সাক্ষী কই? আমার এইখানে মেলা সাক্ষী আছে লাগলে কন ডাইকা দেই৷’
–‘স্টপ!আর একটা কথা বললে আপনার দাঁত ভেঙে গুড়িয়ে দিবো৷’
উনার ধমক শুনে কাজী সাহেব চুপ হয়ে গেলেন৷ আমি উনার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,
–‘আপনি এখন বেশী বেশী করছেন কাব্য ভাই৷ তখন চুপ ছিলাম তবে আজ চুপ থাকবো না৷ আমি এইখান থেকে পুলিশের কাছে যাবো৷’
উনি আমার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
–‘যা তোকে মানা করেছে কে? অধিকারের কথা বলেছিলি না!এখন সত্যিকারে অধিকার নিবো তোর৷’
কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গেছে আমার৷ এতোটা খারাপ কেন এই লোকটা৷ সব সময় আমার উপর জোর দেখায়৷ কাঁদার ফলে কোনো কথাই বলতে পারছি না৷ কিছুক্ষণ পর রাহুল ভাইয়া আর মোস্তাকিম ভাইয়া আসতেই ভয়ে গলা শুকিয়ে যায়৷ এইবার মনে হয় সত্যি সত্যি বিয়ে হয়েই যাবে। আমাকে কাঁদতে দেখে রাহুল ভাইয়া বললেন,
–‘কাব্য ও কাঁদছে কেন এইভাবে?’
–‘আমি মরে গেছি এইজন্য কেঁদে কেঁদে শোক পালন করছে৷’
রাহুল ভাইয়া ভেবাচেকা খেয়ে গেলেন উনার কথা শুনে৷ মোস্তাকিম ভাইয়া কাকে যেন ফোন করলেন৷ শুধু বললেন,
–‘জলদি আয় তোরা আমারা অপেক্ষা করছি৷’
কার আসার কথা বলছেন আর?সবাই তো এসেই গেছে৷ আল্লাহ বাচাও আমায়৷ একটু পর তমা আপু আসতেই কাব্য ভাইয়া উঠে দাঁড়ায়৷
–‘মাহিম আর তোদের ফ্যামিলির সবাই কোথায়?তোদের সকাল নয়টায় বের হতে বলেছিলাম৷’
কাব্য ভাইয়ের কথা শুনে একটা ছেলে আর ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
–‘এই যে আমি৷ আপনার ফ্রেন্ড বাসা থেকে বের হতে দু ঘন্টা লাগিয়েছে৷’
তার কথা শুনে তমা আপু উনার পেটে গুতা দিয়ে বললেন,
–‘বেশি কথা বললে সোজা এইখানে থেকে বাসায় চলে যাবো৷’
তমা আপু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
–‘এইটা নীতু না? ও কাদছে কেন এইভাবে!’
পাশে অনেক গুলো অচেনা মুখ আমার দিকে চেয়ে আছে৷ আমি কাব্য ভাইয়ার পিছনে আর একটু সরে দাড়ালাম৷ আমাকে হাত ধরে সামনে এনে বললেন,
–‘নতুন বিয়ে করেছি তো তাই লজ্জায় তোদের দেখে কান্না করছে৷’
তমা আপুর ফ্যামিলি সাথে সবাই কাব্য ভাইয়ার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে৷ একবার আমাকে দেখছেন আরেকবার তাকে। মোস্তাকিম আর রাহুল ভাইয়াও অবাক হয়েছেন৷ আমি উনার হাত নিজে থেকে খামচে ধরি৷ উনি আমার দিকে তাকিয়ে সবাইকে তাড়া দিয়ে বললেন,
–‘আমাকে আসতে বলেছিলি এসেছি!এইবার জলদি বিয়ে কর আমায় যেতে হবে৷ তোদের প্যানপ্যানানির জন্য আমি আর নীতু না খেয়েই বেরিয়ে এসেছি৷’
উনার কথা শুনে সবাই বিয়ের দিকে মনোযোগ দেন৷ আমার আত্মায় পানি এসেছে এখন। তারমানে আজ তমা আপুর বিয়ে ছিলো। উনি আমাকে টেনে নিজের কাছে এনে নিচু হয়ে ফিসফিস করে বলেন,
–‘আবার কাঁদা শুরু কর। কারণ ওদের পর তোর আমার আর তোর রেজিস্ট্রি হবে। ওয়েট এন্ড সি।’
———————————
রৌদ্র তপ্ত দুপুরে আমি ঘেমে চিপচিপে হয়ে গেছি। কাজী অফিস থেকে বেরিয়ে আমাকে নিয়ে পার্কে এসে বসেছেন উনি। গরমে জান যায় যায় অবস্থা। আর ড্রেসের দিকে তাকালে আরো কান্না পাচ্ছে আমার। শয়তান লোক একটা আমাকে ইচ্ছা করে ভয় দেখিয়েছে। তবে রাগ ছিলো অধিকার নিয়ে বলার জন্য। হুহ! রাগ আমারও আছে শুধু বের হয় না মিস্টার কাব্য। একদিন আমার রাগে আপনি ভয়ে গুটিয়ে থাকবেন। উনি আমার এক বেঞ্চিতে বসিয়ে রেখে কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছেন। বিরক্ত লাগে! অসহ্য মানুষ একটা। কাব্য ভাইয়া হুট করে যেমন গিয়েছিলেন তেমন হুট করে এসে আমার কোলে মাথা দিয়ে সটান হয়ে শুয়ে পড়ে আর বলেন,
–‘বিরবির করে বকা হয়ে গেলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দে।’
আমি অবাকের শেষ চূড়ায় গিয়ে বসে আছি । একে তো পাবলিক প্লেস তার উপর আমার অনুমতি না নিয়ে শুয়ে পড়লেন। আমি উনার মাথা ঠেলে উঠিয়ে দেওয়ায় চেষ্টায় লেগে আছি। আর উনি মাথা ঘুরিয়ে আমার পেটে মুখ গুজে শুয়ে রইলেন। উনার গরম নিশ্বাস আমার উপর পড়ছে।অস্বস্তি তে আমার ভেতর কেঁপে উঠছে। আমার নড়াচড়া দেখে উনি নাক ঘষে বললেন,
–‘সাইলেন্ট মুডে বসে থেকে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দে। আর বেশি ভাইব্রেট করলে পাবলিক প্লেসে চুম্মা দিবো।আর আমি যা বলি তার থেকে বেশি করি।’
উনার কথা শুনে আমি একদম মূর্তির মতো বসে রইলাম। এই লোকের কাজ সম্পর্কে ধারণা হয়ে গেছে। উনি এইবার মাথা উঠিয়ে বললেন,
–‘হাত কি নেই তোর? চুল গুলো টেনে দে আমার। নিজে তো শান্তি মতো ঘুমাস আমার ঘুম হারাম করে। এখন আমায় ঘুমাতে দে না হলে…
আমি মনে মনে হাজার খানিক বকা দিয়ে উনার কথা মতো চুল টেনে দিতে থাকলাম। ইচ্ছা হচ্ছে সব গুলো চুল টেনে ছিড়ে ফেলি। আস্ত একটা রাক্ষস কেও হার মানাবে এই ছেলে। উনি আবার বিরবির করে বললেন,
–‘আমার অনাগত বাচ্চারা কেমন আছে রে নীতু?তাদের যত্নের হেরফের হলে তোকে উঠিয়ে ফেলে দিবো আমি।’
উনার নিশ্বাস ভারী হচ্ছে। ঘুমিয়ে গেলো। এইটুকু জায়গায় উনার মতো হাতির জায়গা হলো কি করে?হাও পসিবল!
টানা দেড় ঘন্টা ঘুমিয়ে উঠেছেন মহাশয়। উঠেই এটিটিউড শুরু হয়ে গেছে উনার। আমার পা ব্যাথায় ভারী হয়ে গেছে। উনি উঠেই সামনের দিকে এগিয়ে যায়। প্রচন্ড রাগ লাগলো আমার। আমি দাঁড়াতে পারছি না উনার জন্য আর উনার কোনো হুশ নেই?
–‘আমাকে কি আপনার চোখে পড়ে না। আমি উঠতে পারছি না আর আপনি নিজে একা একাই হেটে চলে যাচ্ছেন। এমন কেন আপনি?’
উনি আমার সামনে এসে কোনো কথা না বলেই কোলে উঠিয়ে নিলেন । আচমকা এমন হওয়ায় ভয় পেয়ে উনার গলা জড়িয়ে ধরি। আর উনি দ্রু বাকা করে তাকিয়ে বললেন,
–‘আজ থেকে কম খাবি তুই। দিনে দিনে হাতির বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে। আমার কোমর শেষ আল্লাহ! এর চেয়ে হাতি কোলে নিলেও হতো।’
উনার কথা শুনে রাগে আমার কান্না পেয়ে যাচ্ছে। এতো অসভ্য কেন উনি?ইচ্ছা হচ্ছে এখুনি কোলে থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ি।
গাড়িতে বসার পর আর একটাও কথা বলেন নি উনি । মুখ আবার গোমড়া করে গাড়ি চালাচ্ছেন । আর এমনটা হয়েছে একটা ফোন আসার পর থেকে। আমি রাগের জন্য কারণ জিজ্ঞেস না করেই বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে আছি। উনার যা ইচ্ছা হোক তাকে আমার কি? বাড়িতে পৌছে ফুঁপির থমথমে মুখ দেখে ভয় পেয়ে যাই। সাথে কাব্য ভাইয়াও মুখ ভার করে বাসায় ঢুকলেন। আমি উনার পিছে পিছে ড্রয়িং রুমে যেতেই ভয়ে কাব্য ভাইয়ের পিছে লুকাই। এতোটা সময় সব তো ঠিক ছিলো তাহলে এখন……….
চলবে….