#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ৩১
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)
পূর্ণ ভালোবাসার মধ্যে শূন্যতা থাকে৷ আর সেটা হচ্ছে হারিয়ে ফেলার শূন্যতার ভয়৷ একেকটা দিন, একেকটা মূহুর্ত স্মৃতির জন্য তুলে রাখাতে ইচ্ছে হয় না৷ আমার প্রচুর অস্বস্তি হচ্ছে৷ অস্বস্তি নামক শব্দটা হলেও ভালোলাগা আছে৷ লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছি বারেবারে৷ উনি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছেন৷ ঘুমিয়ে আছেন৷ কাল রাতে উনি আমার পাশে দ্বিতীয় বারের মতো শুয়েছেন ভেবেই কেমন লজ্জায় পড়ে গেলাম৷ কিন্তু ঘুমিয়েছি কখন ভেবে পেলাম না৷ রাস্তায় ছিলাম..! তাহলে আসলাম কখন৷ মনে করার চেষ্টায় আছি৷ উনার কাঁধে মাথা রেখে বসেছিলাম পার্কে৷ কখন ঘুমিয়েছি বুঝতেই পারি নি৷ ইশ..! এতো সুন্দর একটা রাত ঘুমিয়ে শেষ ভেবেই মন খারাপেরা ভীড় করলো৷ তবে উনার হাতের বাঁধনে থাকতে কেমন জানি লাগছে৷ অস্থিরতার সাথে কাঁপানো হার্ট বিট৷ তীব্র আওয়াজে ঘরময় ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ উনি আমাকে দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে রেখেছেন৷ আমার হাঁত তার হাতের নিচে৷ মাথা উঁচু করে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম, ৯ টা বেজে ২৫ মিনিট৷ মূহুর্তেই ভ্রু কুঁচকে এলো৷ আজ কি উনার ক্লাস বা অফিসের কাজ নেই? আমি নড়তেই উনি ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললেন,
–‘ শোল মাছের মতো এমন নড়ছিস কেন?’
মানে কি?শোল মাছে এলো কোথা থেকে৷ আমি ভাবছি৷ উনি আমার কোমর ধরে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন৷ থমকানো পৃথীবির নিস্তব্ধ বিচরণ দেখেছেন কখনো? হাওয়া না বইলেও শীতল হাওয়ার পরশ লেগেছে কখনো? বা কখনো মনের মাধুরি গুলো তীব্র ভাবে হুট করেই অস্বস্ততিতে পড়লেও ভালোলাগার বেড়াজালে আবদ্ধতা? এই ঘটনা গুলো আমার সাথে হচ্ছে৷ আমি চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নিলাম৷ উঠে যাওয়ার বাহানা খুজলাম৷ পেলাম না কোনো বাহানা৷ চুপ করে তার উষ্ণ পরশ গ্রহণ করতেই ফোন বেজে উঠলো৷ ফোনের আওয়াজ টা আমার কাছে ভালো লাগছে৷ উনি বিরক্তি কন্ঠে বললেন,
–‘ রাতে বউয়ের ঘুমের জ্বালা আর দিনে মোবাইল বা কাজের জ্বালা৷ রোম্যান্সের টাইম পাবো কই৷ ‘
–‘ আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে৷ ‘ আমি কাঁপা ভাবে বললাম৷ উনি আমার চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলেন৷ আমি আরেকটু কেঁপে উঠলাম৷ উনি নেশাতুর কন্ঠে বললেন,
–‘ আমি কিছু করেছি? শ্বাস আটকানোর মতো কাজ৷ অবশ্য রাতে ঘুমিয়ে পড়লেই আমার সুবিধা এমন… ‘
আমি এক ঝাটকায় উনার দিকে ঘুরে গেলাম৷ অনেক কাছে তাকে পেলাম৷ চোখের পাঁপড়ি গুলো এখনো ঘুমের রেশে টান দিচ্ছে৷ আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি৷ কিছু একটা বলার জন্য ঘুরেছিলাম৷ কিন্তু? তার দৃষ্টি উপেক্ষা করে সেই কথাটুকু মুখ থেকে বেরুলো না৷ উনি আমাকে আরো টেনে নিলেন৷ থমকানো পৃথীবিতে যেমন নিস্তব্ধতার শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই তেমন টা৷ আলিঙ্গনটা পবিত্রতায় ঘেরা৷ না চাইতেও অনেক কিছুর আকৃষ্টতা৷ পূর্ণতায় বেড়াজালের কিছুটা স্পর্শের মূহুর্ত৷ একরাশ ভালোলাগার মুগ্ধতা৷
_______________________
লজ্জা নামক শব্দটা দুনিয়া থেকে মুছে দিতে পারলে বোধহয় ভালো হতো৷ এই একটা শব্দের জন্য আমি কাটকাট হয়ে যাচ্ছি৷ ওয়াশরুমের দরজা আটকে বসে আছি এক ঘন্টার উপর৷ আয়নায় নিজেকে দেখে আরো কিছুটা লজ্জার আবরণে ডাকা পড়লাম৷ ম্যাচুরিটি হঠাৎ করেই এসে পড়েছে মনে হচ্ছে৷ নিজেকে কেমন পূর্ণ বিবাহিতা নারীর কোঠায় ফেলতে ইচ্ছা হচ্ছে৷ গলার কাছে ছোট একটা দাগ জানান দিচ্ছে, ‘ তুমি তার..তুমি সম্পূর্ণ রুপে তার..! ‘
দরজায় তার টোকা পড়তেই আমি আবারও একটু আগের কথা ভেবে মিইয়ে গেলাম৷
–‘ বের হবি? না দরজা ভেঙে ফেলবো৷ ‘ শীতল কন্ঠের থ্রেট শুনে আমি শুকনো ঢোক গিললাম৷ তাড়াহুড়ো তে কাপড় আনি নি৷ শুধু তোয়ালে নিয়ে এসেছি৷ এইবার? আমার কাছে থেকে উত্তর না পেয়ে উনি আবার বললেন,
–‘ ওকে ফাইন, মহারাণী..! আপনার বোধহয় শাওয়ার রোম্যান্স করতে ইচ্ছা হচ্ছে৷ আমি দরজা ভেঙেই আসছি আপনার কাছে৷ ‘
আমি তবুও দরজা খুললাম না৷ তার সামনে যাবো কিভাবে৷ হুট করে আলিঙ্গনটা মেনে নিতে যেমন আনন্দ রয়েছে তেমনি লজ্জাও আছে৷ আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে উনিও চুপ৷ কিছুক্ষণ নীরবতা৷ তারপর হুট করে উনি বললেন,
–‘ নীতু, ‘
তার কন্ঠে কেমন বিষাদের ছায়া৷ আমি এইবার উত্তর না দিয়ে পারলাম না৷ ছোট করে, ” হু ” বলতেই উনার দীর্ঘশ্বাসের শব্দ কানে এলো৷ হয়তো সিরিয়াস কিছু বলবেন৷ কিন্তু কি? আমি দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম৷
–‘ আমার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন ছিলো৷ আ’ম সর্যি..হুট করে সব কিছু… ‘
উনাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলাম না৷ যেখানে আমার মনের সম্মতি রয়েছে সেখানে কেনো লুকোচুরি? আমি ভেজা কাঁপড়েই বেরিয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ালাম৷ উনার দৃষ্টি অস্থির৷ মাথা নীচু করে ফেললেন৷ কেন যেনো সুপ্ত একটা শ্রদ্ধা বোধ জেগে উঠলো৷ যে মানুষ টা অপর মানুষটার অনুমতি বিহীন কাজ করার জন্য এতো টা অনুতপ্ত আর যাই হোক সেই মানুষটাকে আমি ফিরিয়ে দিতে পারি না৷ আমার আর তার মাঝের দূরত্ব ঘুঁচে যাক৷ তাকে ভালোবেসে থাকতে চাই৷ কারণ এই মানুষটা ছাড়া নিজেকে খুঁজে পাই না যে৷ বড্ড ভালোবাসি৷ অনেক বেশিই৷ প্রেম গুলো পবিত্র আর সেটা অনুমতি বিহীন পবিত্রতার সাক্ষী৷ প্রেমের বৃষ্টি গুলো আনন্দের৷ আমি শক্ত করেই ভেজা কাপড়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম৷ বললাম,
–‘ নীরবতা যে সম্মতির লক্ষণ সেটা আপনি জানেন? ‘
–‘ সব ক্ষেত্রে নীরবতা মানায় না৷ আমি তোকে নিজের মতো চাইলেও তোর মনের মতো হতে চাই৷ যেখানে শুধু আমার বিচরণ থাকবে৷ কোনো ভয়ের কারণ থাকবে না৷ ‘
উনি আমার মাথায় চুমু খেয়ে বললেন কথাটা৷ শিহরণ বয়ে যাওয়া হাওয়া দোল খেয়ে গেলো৷ আমর গলার স্বরে একরাশ খুশির ছোঁয়া নিয়ে বললাম,
–‘ আপনাকে চাই..এর বাইরে আর কিছুই না৷ আপনি আমার অভ্যেস হয়ে গেছেন৷ আপনার মাঝে আমি নিজেকে খুজে পাই৷ ‘
–‘ মনের কোণে আর কি জমা রেখেছিস? কতোটা ভালোবাসিস আমায়? ‘
হুট করে তাকে জ্ঞান দেওয়ার মতো একটা সুযোগ পেয়ে আমি তাকে ছেড়ে দিয়ে তার চোখে চোখ রেখে বললাম,
–‘ ভালোবাসা সীমাবদ্ধ নয়..!মন উজাড় করে ভালোবাসতে হয়৷ আর আমার ভালোবাসা আকাশের রৌদ্দুরের মতো যেটা রাঁতের আঁধারে চাঁদের সাথে মিলে আলোকিত করবে৷ স্নিগ্ধতা বিরাজ করবে৷ কখনো ফুরাবে না৷ আমাবস্যাতেও হালকা আলো দিবে৷ যেখানে ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকবে রৌদ্দুরের আলোতে ভরে যাবে৷ ‘
উনি আমার কথা শুনে অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন৷ নিজেকে জ্ঞানী মনে হচ্ছে৷ হাসি পাচ্ছে৷ উনি আমার দিকে ঝু কে এলেন আমি না সরে তার দিকে এগিয়ে গেলাম৷ এইবার উনি সত্যি ভড়কে গেলেন৷ তাকে অপ্রস্তুত হতে দেখে বেশ মজা লাগছে আমার৷ আমি এইবার তার দিকে এগিয়ে গেলাম৷ উনি অবিশ্বাসের সুরে বললেন,
–‘ নীতু কোথায়? এই মেয়ে তুমি কে৷ ‘
উনার অপ্রস্তুত কথা শুনে হাসি পেলো৷ আমি উনার কোমরে হাত রাখলাম৷ যদিও আমি তার বুক সমান৷ হৃদপিন্ডের কাছাকাছি৷ আমার চোখেমুখে দুষ্টুমি ছাঁপ দেখে উনি ইনোসেন্ট সাজলেন৷ কিছুই বললেন না৷ আমার পিঠে থেকে হাত সরিয়ে পকেটে হাত গুজে নিরলস দাঁড়ালেন৷ আমি নিজেই এবার থতমত খেয়ে গেলাম৷ তবুও নিজের কাজে অটুট রইলাম৷ পা উঁচু করে তার সমান হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি৷ উনি বাঁকা হাসলেন৷ উপায় না পেয়ে তার পায়ের উপর দাঁড়ালাম৷ উনি মুখ কুঁচকালেন৷ আমি তার কুঁচকানো মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলাম৷ উনি এইবার স্লো ভয়েসে বললেন,
–‘ একা একটা ছেলেকে পেয়ে ইজ্জৎ হরণের চেষ্টায় আছিস বলে মনে হচ্ছে? ‘
উনার ঠোঁটের কাছাকাছি আমার কঁপাল৷ তার নিশ্বাস ছুঁয়ে দিচ্ছে আমার কপাল৷ ভেতরের কম্পন বুঝতে পেরেও আমি চোখ উঁচু করে উনার দিকে তাকালাম৷ উনার দৃষ্টি আমাতেই নিবদ্ধ৷ হয়তো বুঝতে চাইছেন,আমি কি করবো৷ উনার পায়ের উপর দাঁড়িয়ে আরো উঁচু হলাম৷ পড়ে যেতে নিলেই আমার কোমরে ধরলেন৷ কপাল কুঁচকানো৷ আমি হাসলাম৷ খিলখিল করে হাসলাম৷ উনার ভয়ার্ত চোখের ভাষা পড়তে বেশ লাগছে আমার৷ তবে যে কাজ টা করার জন্য এতোটা কাছে আসা সেটা না করলে পাপ হবে মহাপাপ৷ আমি সোজা হয়ে দাঁড়ালাম, আবারও নিজের গলার স্বরে গাম্ভীর্য এনে বললাম,
–‘ নড়ছেন কেন? চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন৷ ‘
–‘ নড়ছিস তো তুই..! দোষ আমার৷ ‘
আমি আঙুল দিয়ে উনার ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বললাম,
–‘ হুশশশ! ‘
উনি অবাকে উপর অবাক হচ্ছেন৷ নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলেন৷ তারপর সন্ধিহান গলায় বললেন,
–‘ কুল কাব্য..! এই পিচ্চি তোর কিছুই করতে পারবে না৷ ‘
আমি ভ্রু কুঁচকালাম৷ আবার অপমান৷ আমি উনার জাম রাঙা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছি৷ যে কাজটার জন্য এসেছিলাম সেটা নিমিষেই ভুলে আকৃষ্ট হয়ে পড়লাম৷ কি হলো! কি হচ্ছে সব ভুলে যাচ্ছি৷ আমার মনের কিনারায় জানান দিচ্ছে,
‘ অধিকার তোর৷ এতো ভাবছিস কেন? সে যে তোর৷ ‘
পৃথীবি থমকে যাক৷ আমি আমার পরশ তার মাঝে বিলিয়ে দিলাম৷ যাকে শুদ্ধ বাংলাতে যাকে আদরের পরশ বলে৷ তার জাম রাঙা ঠোঁটের পরশ৷ ভালোবাসার পরশ৷ উনি তালে তাল মিলাচ্ছেন৷ নিজের জালে নিজেই ফেঁসেছি৷ এইবার নিজে থেকে সরে আসতে গেলে উনি আসতে দিলেন না৷ একদম না৷ ছোট ছোট মূহুর্ত গুলো হুট করেই হয় আর সেটা হয় সবথেকে দামী মূহুর্ত৷ এই মূহুর্ত নিয়ে সব সময় বেঁচে থাকা যায় যে।
আমি শ্বাস আঁটকে বসে আছি। উনি আমার থেকে দূরে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। সেম ভুল আবারো,,কাপড় আনি নি। উনি দরজার দিকেই তাকিয়ে আছেন এখনো। আমি আবার তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলে কাপড় নিয়ে আসলাম। ন্যানো সেকেন্ডের ব্যাপারটা ঘটলো। উনার হাসির আওয়াজে হার্ট বিট মিস হলো। ইশ,না হাসলে হয় না তার? আমি যে লজ্জার আবরণে আবার ঢাকা পড়ছি…!
চলবে,,,,