#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ২৯
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)
নিস্তব্ধ সন্ধ্যার লুকোচুরি কেমন ভয়াবহ লাগছে৷ দোটানার বেড়াজালে বেঁধে নিজেই ফেঁসে গিয়েছে৷ একা একটা বেডরুমে শুয়ে বিছানায় হাসফাস করছি৷ কাঁন্না উঁপচে পড়ছে৷ এতোটা রাগ? এতোটা অভিমান তো আমিও করি নি৷ রুমের মাঝে নিস্তব্ধতা যেন বেদনার সুর তুলছে৷ বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে দেয়ালে কান পাতলাম৷ উহু..!ওই রুমের কোনো শব্দ কিংবা তার নিশ্বাসের শব্দও শুনতে পেলাম না৷ এতো রাগ কেন উনার? রাই কেন বলতে হবে সাথে জুম বললেই তো কিছু হতো না৷ আমি একবার বিছানায় বসছি আরেকবার বাইরে উঁকি দিচ্ছি৷ আজ একবারও আসলেন না এই রুমে৷ মোবাইল খুজে ফুঁপিকে ফোন দিলাম৷ ফুঁপি ফোন ধরতেই ফুঁপিয়ে কান্না করে দিলাম৷ ফুঁপি ঘুমে বোধহয়..! আমার কান্না শুনে শুধু বলল,
–‘ কাব্যকে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধর..! ওর রাগ গলে পানি হয়ে যাবে৷ ‘
ফুঁপির কথা শুনে কান্নার মাঝের লজ্জায় পড়ে গেলাম৷ যেমন মা তার তেমন ছেলে..! এইভাবে কেও পরামর্শ দেয়? জলদি ফোন কেটে ধপ করে বসে পড়লাম৷ নিজের চুল নিজে ছিড়তে ইচ্ছা হচ্ছে৷ উফফ..! রাগের জন্য কান্না পাচ্ছে এখন৷ আমি উঠে এইবার বাইরে গেলাম৷ উনার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি৷ দরজায় ধাক্কা দিবো কিনা ভাবতে ভাবতে জোরে ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়৷ আমি ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাই৷ না উনি খুলে নি..! তাকিয়ে দেখি ঘরময় অন্ধকার৷ কোথাও আলোর ছিটেফোঁটা নেই৷ আমি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলাম৷ কোথায় গেলেন উনি? বেডের সামনে গিয়ে পায়ে বারি খেয়ে বেডের মাঝে উপর হয়ে পড়ে যাই৷ ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠি৷ পড়েছি তো পড়েছি তার উপরেই৷ উনি জেগে গেলেন কি? বোধহয় না..! আস্ত একটা গন্ডার তাই তো ব্যাথা পেয়েও ঘুম থেকে উঠে নি৷ উনার বুকের উপর পড়ে গিয়েছি আমি৷ অন্ধকার ছাঁপিয়ে এখন একটু আলো দেখতে পাচ্ছি৷ আর সেই ক্ষীণ আলোতে দেখলাম সে ঘুমিয়ে আছে৷ হাও পসিবল? আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি৷ কতোটা নিষ্পাপ লাগছে৷ কিন্তু আদেও নিষ্পাপ না আস্ত একটা অসভ্য৷ আমার সাথে রাগ করে বসে আছেন৷ আমি না হয় ভুল করেছি৷ তাই বলে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিবেন? আমার কি আর কেও আছে এখানে৷ আমি মুগ্ধ চোখে স্নিগ্ধ তাকে দেখে চলেছি৷ আজ নিজে থেকে তার কাছে আছি সেইদিকে খেয়াল নেই৷ আজ উঠে যাওয়ার তাড়া নেই৷ উনার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখে ঘুম নেমে আসছে৷ কোথায় ঘুমাবো সেই চিন্তা নেই৷ তার বুকের মাঝে শুয়েই ঘুমের প্রহর গুনছি৷ উনি জেগে থাকলে এতোটা সময় আমাকে খুজে পাওয়া যেত না৷ ঘড়ির কাঁটা ঘোরার সাথে সাথেই আমার চোখে ঘুম নেমে আসলো৷
আমি ঘুমিয়ে যেতেই সে আমাকে তার বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন৷ চোখ খুলে তাকিয়ে হেসে উঠে৷ আমাকে আরেকটু আলিঙ্গন করে নিলেন৷ তার শরীরের উষ্ণ ছোঁয়া পেতেই ঘুম আরো গাঢ় হলো আমার৷ সে কঁপালে তার ঠোঁট জোরা ছুইয়ে বললেন,
–‘ তোর শাস্তি এখনো শেষ হয় নি..! আরেকটু পুড়তে হবে তোকে৷ আমাকে ভুল বুঝছিস অহেতুক কারণ নিয়ে সেটা তোকে বোঝাবো৷ ভুল আর সঠিক টা তোকে চিনতে হবে৷ ভুলের মাশুল যে,বড্ড কঠিন৷ এই কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে তোকে টিকে থাকতে হবে৷ ছোট ছোট অনুভূতি গুলোকে নিজের আয়ত্তে আনতে হবে তোকে৷ আর এইটা তোকে আমার থেকে দূরে রেখেই বোঝাবো৷ আমিও দেখি মহারাণী আমার রাগ ভাঙানোর জন্য কি কি করতে পারে৷ ‘
আমি উনার কথা শুনলাম৷ ঘুমের ঘোরে উনাকে নিজে থেকেই জড়িয়ে ধরে বললাম,
–‘ আপনি বড্ড খারাপ৷ আমার বুঝি কষ্ট হয় না? কেন বুঝেন না? ‘
উনি হাসলেন..! সেই হাসি আমি সপ্নে দেখছি৷ আমি তার দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে আছি৷ বারবার বলছি এতোটা সুন্দর কেন তার উঁচু দাতের হাসি…!
__________________________
~” ভোরের আলো হয়ে ফুঁটবো,
সেই আলোতে তোকে হারাবো….
মেখে দিবো রৌদ্দুর গুলো তোর চোখে
ওওও হো…তোর চোখে…..!’
~ ” ভালোবাসায় ছুঁয়ে দিবো,,
বৃষ্টি হয়ে মেখে দিবো তোর ঠোঁটে…
ওওও হো তোর ঠোঁটে।।।। ”
ডিভানে বসে গান গাইছেন উনি৷ আজ অনেক দিন পর তার গানের আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙেছে৷ আমি উঠে চারদিকে তাকিয়ে রাতের কথা মনে হয়৷ আমি তো উনার বুকের উপর ঘুমিয়েছিলাম৷ উনি কি দেখেছেন? দেখেছেন তো..! নীতু তুই সত্যি গাঁধি..! আমি ধীরপায়ে উঠে দাঁড়ালাম৷ উনার সামনে যেতেও লজ্জা লাগছে৷ কি ভাবছেন উনি৷ আমি এক দৌড়ে পাশের রুমে এসে পড়লাম৷ উনার সামনে একদম যাওয়া যাবে না৷ একদম না..! কিন্তু না গেলে রাগ ভাঙাবো কি করে? ফ্রেশ হয়ে এসে আইডিয়া পেলাম৷ রান্না করবো৷ তার ফেভারিট গরুর কালোভুণা সাথে রুটি৷ এইটা দেখলে নিশ্চয় রাগ করে থাকতে পারবেন না উনি৷ হাতের দিকে তাকাতেই আবার মন খারাপ হয়ে যায়৷ কি করে বানাবো রুটি? এই আইডিয়াতেও পানি পড়লো৷ না.. আমি ভাঙাবোই তার রাগ৷
আমি বাইরে বের হতেই উনার সাথে দেখা হয়৷ আমি তাকিয়ে লজ্জায় মাথা নীচু করে ফেলি৷ উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হেটে চলে যায়৷ আমি অবাক হয়ে তাকাতেই উনি বললেন,
–‘ দরকার আছে ফিরতে একটু লেইট হবে..!’
কথাটা আমাকে না দেয়ালকে বললেন বোঝা মুশকিল৷ আমি তাকে ডেকেও ডাকলাম না৷ আমি মন খারাপ করে কিচেনে যাই৷ সেখানে গিয়ে রুটি করা দেখতে পাই৷ উনি বানিয়েছেন? যা..! তাহলে রাগ ভাঙাবো কিভাবে? তার বানানো রুটি দিয়েই?
ভালোবাসায় কোনো ক্ষতি নেই,কিন্তু অতিরিক্ত আসক্ত হয়ে গেলে নেশা লেগে যায়৷ আর সেটাকে বলে ভালোবাসার নেশা৷
এই নেশা যতোটা গভীর হবে ভালোবাসার স্বাদ ততোটা মিষ্টির চেয়ে মিষ্টতা বাড়বে৷ আমার হয়েছে সেই দশা৷ নেশা লেগে গিয়েছে৷ সবকিছুতে এখন উনাকে খুজে বেড়াই৷ এতোটা আকৃষ্ট কবে হয়েছি আমি? তাও এই কাব্য নামক আস্ত একটা আগুনের উপর৷ উনার এতো রাগ কেন? ভেবেই আমার রাগ লাগছে৷ আমি কষ্ট করে তার ফেভারিট গরুর কালোভুণা সাথে বিরিয়ানি করলাম আর সে কিনা খেয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না৷ এখন সে, পাশের রুমে কাজে পড়ালেখায় ব্যাস্ত৷ তার কোর্সের জন্য অতিরিক্ত পড়াশোনা করতে হচ্ছে সাথে বিভিন্ন সাইডের ডিজাইন৷ আমি নিরলস ভাবে পায়চারি করেই চলেছি৷ তার রুমে গেলাম সে আমার দিকে তাকালেন না৷ তার ভাব দেখে মনে হচ্ছে, আমি নামক একটা প্রাণী দুনিয়ায় আছি সে দিকে তার কোনো খেয়াল নেই৷ আমি উনার সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি৷ উনি ভ্রুক্ষেপ করলেন না৷ আবারও ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে ল্যাপটপকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
–‘ সব ধরণের ফর্মালিটি আজ শেষ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের, কাল থেকে ক্লাস শুরু,আর একটু পর একজন ম্যাম আসবেন বাসায় পড়াতে..! ‘
আমি উনার কথা বুঝেও তাকে রাগানোর জন্য বললাম,
–‘ ল্যাপটপ আবার পড়বে? বাহ..! ভালো তো৷ আজকাল ল্যাপটপেরও পড়াশোনার প্রয়োজন হয়৷’
আমি নিজের কথা শুনে নিজেই হাসিতে ফেঁটে পড়ছি৷ কিন্তু..কিন্তু তার মুখের ভাবে কোনো পরিবর্তন নেই৷ আমি ভ্রু কুঁচকে ফেললাম৷ আমার ফুঁপির এমন একটা ছেলে কোথা থেকে এসেছে আল্লাহ মালুম৷ নিশ্চয়ই পেয়েছে কোথাও৷ এতো রাগী কেন উনি৷
উনার রুমে থেকে আসতেই আবার অস্বস্তির পরিমাণ বাড়তে লাগলো৷ সব কিছু আজ স্টপ করে দিতে ইচ্ছা হচ্ছে৷ ঘড়ির কাঁটার টিকটিক আওয়াজ আরো বিরক্ত করে তুলছে৷ উনি কথা কেন বলছেন না আমার সাথে?
ঠান্ডা শীতল হাওয়ায় শরীরে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে৷ মুখে পাংশুএ ভাব নিয়ে লুসিয়াস ম্যামের সামনে বসে আছি৷ মহিলা দারুণ৷ বয়স টা ষাটের কোঠা পেরুলেও মুখে তার ছাঁপ পড়ে নি৷ উনার মুখের অমায়িক হাসিটা এই অজানা শহরে নিজের আপন বলে মনে হচ্ছে৷ আমার সামনে মোটা মোটা ইংরেজীর বই রাখা৷ সমস্যা সেইটা না, সমস্যা হচ্ছে আমার এখন পড়তে ইচ্ছা হচ্ছে না৷ উনার রাগ কিভানে ভাঙাবো কিভানে সেই চিন্তায় রয়েছি৷ লুসিয়াস ম্যাম আবারো মিষ্টি হেসে বলল,
–‘ what’s wrong with you? ‘
আমি উনার কথা শুনে অন্যমনস্ক ভাবে বললাম,
–‘ নাথিং ম্যাম.. আ’ম ওকে৷ ‘
উনি আবার আমার কথা শুনে হাসলেন৷ আজ কোনো কিছুই পড়ালেন না৷ নিজের জীবনের গল্প বললেন৷ তার হাসব্যান্ড মারা গেছেন আরো আগেই৷ তার সাথে অনেক ভালো সম্পর্ক ছিলো৷ উনার কোনো ছেলে-মেয়ে নেই৷ ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন৷ যাওয়ার আগে একটা কথা বললেন আমায়, ‘ উনার হাসব্যান্ড যখন রাগ করতেন তখন উনি তার কথা অনুযায়ী সেজে সারপ্রাইজ দিতেন৷’ আরো কত কি করতেন৷ উনার এতোটুকু কথা শুনে আমার মুখে হাসি ফুঁটে উঠলো৷ উনি যেতেই আমি রুমে গিয়ে খুজে, ‘ রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি ‘ বের করলাম৷ মুখে তৃপ্তির হাসি নিয়ে পেজ উল্টাতে শুরু করলাম৷ মাঝের একটা পেজে আবার আমার ঘুমন্ত ছবি দেখেই হেসে উঠলাম৷ এই ছবিটা তিন বছর আগে, যখন আমি উনার রুমে ভুলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম৷
কয়েকটা পেজ উল্টাতেই একটা লিখা পড়ে আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলাম৷ যেখানে লেখা,
–‘ ভালোবাসার সামনে রাগ তো ফিঁকে..! সাদা শাড়ি হাত ভর্তি নীল চুড়ি আর চোখে গাঢ় কাজল খোঁপায় বেলীফুলের মালা পড়ে চোখ ভর্তি ভালোবাসা নিয়ে আমার সামনে দাঁড়াস আমি সমস্ত রাগ ভুলে তোলে জড়িয়ে নিবো৷ ‘
সব কিছুর সমাধানের জন্যই আমাকে সে, এইটা দিয়েছে৷ কতোটা ভালোবাসলে সব কিছুর নিখুঁত বর্ণনা দেওয়া যায় আমার জানা নেই৷ আমি সব কিছু ঘেঁটে একটা সাদা রঙের লাল পাড়ের শাড়ি বের করলাম। নীল চুড়িও পেয়ে গেলাম তার ড্রয়ারে৷ সে এতো খেয়াল কিভাবে রাখে আমার? ভেবেই হাসলাম৷ কিন্তু বাঁধ সাজলো বেলীফুলের মালা৷ মুখ গম্ভীর করে বসে আছি আবার৷ বাগানে সাদা টিউলিপের দিকে নজর দিতেই লাফিয়ে উঠি৷ আমার লাফানোর শব্দে,পাশের রুম থেকে সে বললেন,
–‘ ঘর মনে হয় আজ ভাঙবেই..! পাশের ঘরে কি ভূমিকম্প হচ্ছে নাকি? ‘
আমি উনার কথা শুনে পাত্তা দিলাম না৷ একগুচ্ছ টিউলিপ ছিড়ে এনে খোঁপায় পড়ার জন্য মালা বানালাম৷
সব তো হলো কিন্তু শাড়ি পড়বো কি করে? শাড়ি তো পড়তে পারি না..! উনার রাগ কি আমি ভাঙাতে পারবো না?…..
চলবে….
(ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন…!)
#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ৩০
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)
অসহ্য নামক শব্দটাই অসহ্য লাগছে আমার৷ শাড়ি নামক বস্তুটা হাতে নিয়ে বসে আছি৷ নিজেকে রাস্তার পাগল মনে হচ্ছে৷ ইউটিউবে দেখেও পারছি না৷ শাড়ির কুঁচি দেয় কিভাবে? উফফফ! আর কিছু পান নি উনি৷ শাড়ি কেন পড়তে হবে৷ শাড়ি কোমড়ে প্যাচিয়ে আর গলায় আঁচল দিয়ে বসে বসে আফসোস করছি৷ কি জন্য শাড়ি পড়া শিখি নি? আজ কাজে লাগতো৷ এখানে তো বাংলাদেশী কেও নেই যাকে হেল্প করতে বলবো৷ না একজন আছেন বাংলাদেশী আর সে হচ্ছে কাব্য ভাই৷ ওয়ান এন্ড অনলি কাব্য ভাই৷ তার রুমে থেকে গিটারের টুংটাং আওয়াজ আসছে৷ আমি এইদিকে শাড়ির কষ্টে মরমে মরে যাচ্ছি আর সে মনের সুখে গান গাইছেন৷ বিরক্তিকর..! মাথায় হঠাৎ করে আগুন জ্বলে উঠলো৷ শাড়ি না পড়েই আরেকটু পেঁচিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে উনার রুমের সামনে দাঁড়ালাম৷ উনি পিছনের দিকে ঘুরে আছেন৷ পাশে থাকা চাকু উঠিয়ে উনাকে মেরে ফেলার মতোও বাজে চিন্তা ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে৷ এইদিকে আমার শাড়ি ঠিক নেই সে খেয়াল নেই৷ আমি দরজার মধ্যে বারি দিলাম৷ এতেও উনার ভ্রুক্ষেপ হলো না৷ আমি আবার পা ফেলে নিজের ঘরে চলে আসলাম৷ এইবার হাতে করে একটা কাঁপড় নিয়ে আবার তার রুমের সামনে গেলাম৷ পিছন থেকে গিয়েই তার চোখ বেঁধে দিলাম৷ উনি আমার কাজে একফোঁটা ও অবাক হলেন না৷ উনার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে,উনি জানতেন আমি এই কাজ করবো৷ উনার ভ্রুক্ষেপ না দেখে আমার কপাল কুঁচকে এলো৷ উনার চুল গুলো টেনে ছিড়তে ইচ্ছা হচ্ছে৷ আমি নিজের রাগ দমন করে বললাম,
–‘ এইযে,মিস্টার. কাব্য ভাই..! আপনি শাড়ির কুঁচি ধরতে পারেন? ‘
–‘ চোখ বেঁধে দিয়ে ন্যাকামি করতে এসেছিস? কুঁচি দিতে গেলে চোখ লাগে গাঁধি৷ তোর চোখ দিয়ে কি কুঁচি দিবো৷ ‘
–‘ চোখ আপনার নেই তো কি হয়েছে আমার তো আছে৷ আপনি ধরবেন আমি বলে দিবো৷ ওয়েট…এই এই আপনি আমার সাথে কথা বলেছেন! ‘
আমি উনার সামনে গিয়ে বললাম কথাটা৷ উনি আবার বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুঁচকে ফেললেন৷ আমি বিশ্বজয়ের হাসি হাসলাম৷ কথা যখন বলেছেন আর রাগ ভাঙানোর দরকার নেই৷ আমি মুখে হাসির রেখা টেনে আবার বললাম,
–‘ আপনি সংসার করুন৷ আর শাড়ি পড়ানোর দরকার নেই৷ ‘
আমি শাড়ি শুছিয়ে যেই না বেরুতে যাবো তখন’ই সে উঠে দাঁড়ায় আমার সামনে৷ নিমিষেই আমার মুখে ভয়ের ছাঁপ পড়ে৷ আমি আবার বেরুতে গেলে উনি আমার সামনে আরো এগিয়ে আসেন৷ বললেন,
–‘ কিসের সংসার? ‘
–‘ ল…ল্যাপটপের কাজ করুন৷ আমায় পড়তে বসতে হবে৷ ‘ আমি আমতা আমতা করে বললাম৷ উনি চোখা বাঁধা অবস্থাতেই বললেন,
–‘ তোকে কিন্তু মারাত্মক হট লাগছে৷ ‘
আমি উনার কথা শুনে বিষ্ময়কর অবস্থাতে পড়ে গেলাম৷ ছিঃ অশ্লীল..! আমি শাড়ি টেনে নিজেকে আবৃত করার চেষ্টায় লেগে আছি৷ আর উনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি৷ আমায় দেখলো কি করে? ভেবেই আরেকদফা লজ্জায় লাল হলাম৷ উনি নিজের বাঁধা চোখের উপর হাত দিয়ে বললেন,
–‘ ওহহহ শীট..! কাব্য ভাইয়ার তো চোখ বন্ধ দেখলো কি করে৷ ‘
এইটা তো আমার বলার কথা৷ উনি আরেকটু সামনে এগিয়ে আসতেই কাবার্ডের সাথে আমার পিঠ ঠেকে যায়৷ উনি একহাত আমার ডান পাশে রেখে মুচকি হেসে বললেন,
–‘ সাদা শাড়ি, কোমরে পেঁচিয়ে আর গলায় আঁচল ঝুলিয়ে পিছনে দাঁড়িয়ে আমায় মারার কল্পনা করার সময় কি কেও ভেবেছিলো তাকে আমি আয়নায় দেখছি৷ ইশশ..!কি লজ্জা৷ আমি তো দেখে নিলাম৷ পেট বের করলে তোকে তো মারাত্মক লাগে নীতু৷ আমি জ্বলে পুড়ে খাঁক হয়ে যাচ্ছি৷ ‘
আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে লজ্জায় শেষ হচ্ছি৷ কে বলেছিলো ওইভাবে আসতে? তোর লাজ লজ্জা নেই নীতু৷ শেষে কিনা…
উনি আমার শাড়ি ধরে টান দিতেই ভড়কে যাই আমি৷ উল্টো আমি টেনে ধরে ভয় পাওয়া কন্ঠে বললাম,
–‘ ছাড়ু..ন! আমি পড়বো না শাড়ি আপনার কাছে৷ যেতে দিন আমায়৷ ‘ উনি কথা শুনলেন না৷ শুধু বললেন,
–‘ হুশশ..! আমার চোঁখ তো বেঁধেই দিয়েছিস আর লজ্জা পেতে হবে না৷ শুধু সাইলেন্ট হয়ে দাঁড়িয়ে থাক৷ শাড়ি না পড়তে পারায় কিন্তু আমার সুবিধা হয়েছে…!’
আমি নিজের চোখ বন্ধ করে ফেললাম৷ কাঁপা কন্ঠে বললাম,
–‘ আপনার স সুবি ধা মানে..? ‘
উনি আমাকে পেছনে ঘুরিয়ে শাড়ি কোমরে গুজে দিয়ে বললেন,
–‘ তোর অনুমতি নিয়ের ছুঁয়ে দিচ্ছি৷ ‘
আমি উনার কথা শুনে একলাফে দূরে গিয়ে দাঁড়াই৷ অসভ্য তো অসভ্য’ই হয়৷ এইটা কেন ভুলে যাই৷ আমি আবার শাড়ির আঁচল গুছিয়ে তাড়াহুড়ো করে বললাম,
–‘ লাগবে না আপনার শাড়ি পড়ানো৷ আমি নিজেই পড়ে নিবো৷ ছিঃ! এই ছিলো আপনার মনে৷ ‘
উনি হাসলেন৷ আমি আরো তেতে উঠলাম৷ কিছু না বলেই বেরিয়ে আসতে গেলে একটানে নিজের কাছে নিয়ে নেন৷ আমি উনার গলা আঁকড়ে ধরি৷ ভীতু চোখে তাকিয়ে আছি উনার দিকে৷ উনি আমার হাত নামিয়ে দিয়ে বললেন,
–‘ চোখ দিয়ে তো খেয়েই ফেলবি আমার মতো ইনোসেন্ট ছেলেটাকে৷ ‘
আমি উনার কথা শুনে দৃষ্টি লুকানোর চেষ্টা করলাম৷ ঘুরেফিরে তার দিকেই চোখ যাচ্ছে৷ উনি নিজেই ঘুরে ঘুরে শাড়ির প্রত্যেকটা অংশ যত্ন করে গুছিয়ে তুলছেন৷ আমার কোমরে স্পর্শ করতেই কেঁপে উঠি আমি৷ উনি যে ইচ্ছা করেই, স্পর্শ করছে সেটা বুঝতে বাকি নেই৷ আমাকে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হালকা টেনে নিয়ে বললেন,
–‘ তুই এতো মসৃণ কেন? ‘
আমি কিছু বললাম না৷ মানুষ বুঝি মসৃণ হয়?সেই হিসেব মিলাতে ব্যাস্ত আমি৷ শাড়ির কুঁচি গুজতেই আমি আবারো কেঁপে উঠি৷ উনি আবার হাসলেন৷ আমার হাত তার হাতের নিচে রেখে নিলেন৷ আমি হাসলাম৷ লোকটা এতোটাও অসভ্য নয়৷
–‘ একটু একটু ভদ্র হওয়ার চেষ্টায় আছি৷ তবে একদিন সব অভদ্রতামি উঁপচে দিবো৷ ‘
আমার মুখের উপর ঝুঁকে কথাটা বললেন উনি৷ আমি নিজের ভাবনায় আবারও বললাম, ‘ না! সে আসলেই অসভ্য…! ‘
_______________________
সব কিছুর জন্য একটা পার্ফেক্ট সময় চাই৷ আর সেই পার্ফেক্ট সময়টাতে সব কিছু এলোমেলো হলেও পার্ফেক্ট লাগে৷ সেই সময়টাতে একরাশ সৌন্দর্য,আর একরাশ ভালোলাগার মনের ছন্দ থাকে৷ সেই ছন্দ গুলো হয় জীবনের বিশেষ মূহুর্তের ছন্দ৷ যে গুলো ডায়েরির পাতায় বা ছবির এলবামে লুকায়িত না করলেও মনের ক্যানভাসে অদ্ভুত ভাবে গেঁথে যায়৷ কিছু কিছু মন খারাপের সময় সেই ক্যানভাসের সৃতি গুলো উজ্জ্বল দৃপ্ততা প্রকাশ করে৷ কান্নার মাঝেও মুখের এক চিলতে হাসির কারণ হয় সেই লুকায়িত ক্যানভাস টা৷ আজ সেই পার্ফেক্ট সময় টা আমার অজান্তেই এসেছে৷ এসেছে একফালি রোদের ঝলকানি নিয়ে৷ চোখ ভর্তি গাঢ় কাজল,হাতে নীল চুড়ি আর লাল রাঙা সাদা শাড়ির সাথে আমার হলুদ রাঙা কাব্য ভাইয়া৷ উনি কি আদেও ভাইয়া? সে তো আমার..! ভাবতেই মুখে লজ্জার আবরণ পড়লো৷ শাড়ির কুঁচি সামলাতে হিমশিম অবস্থা আমার৷ তাকে সারপ্রাইজ দিবো কি সে নিজেই আমাকে বড় সারপ্রাইজ দিয়েছে৷ পুরো পুল সাইড কিছু মূহুর্তেই আলোর ঝলকে ভরে উঠেছে৷ তার রাগ ভাঙানোর মতো কাজ টা আমার মাথাতে আসতেই পিছনে ঘুরে থাকা উনার পিঠে হাত দিলাম৷ সে চমকে উঠলো না৷ ঘুরে দাঁড়ালো৷ আমাকে দেখে কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়ালো৷ নিষ্পলক তাকিয়ে আছেন৷ আমি একটু লজ্জা পেলাম৷ এইভাবে কেও তাকিয়ে থাকে বুঝি৷ উনি আমার চোখের নিচে হাত দিয়ে লেপ্টে থাকা কাজল ঠিক করে দিলেন৷ আমি কম্পিত চোখে দেখলাম৷ সেই স্পর্শ টুকু বড্ড ভালোবাসা ময়৷ উনি হালকা আওয়াজে বললেন,
–‘ ঠিক ভাবে কাজল ও পড়তে পারিস না তুই৷ ‘
বড্ড অভিমান হলো৷ কই আমার প্রশংসা করবেন তা নয় কাজল নিয়ে পড়ে আছেন৷ আমি মুখ ফুলিয়ে উনার থেকে সরে দাঁড়ালাম৷ উনি কিছুই বললেন না৷ এতোশত আয়োজন কিন্তু কোনো আনন্দ নেই৷ এখনও কি আমার সাথে রেগে আছেন উনি? রাগ ভাঙানোর জন্য কি করবো? আমি তার কাছে এগিয়ে গেলাম৷ বললাম,
–‘ আপনি কি এখনো রেগে আছেন আমার উপর! ‘
–‘ কেন? আমাকে তো তোর মিথ্যুক মনে হয়৷ সেই মিথ্যুকের রাগ নিয়ে তোর মাথা ব্যাথার কারণ খুজে পাচ্ছি না তো আমি৷ ‘
কাঁন্না পেলো৷ আমার কথাটা তার বড্ড লেগেছে৷ আমি ফুঁপিয়ে উঠলাম৷ সে তাকালো না৷ কান্না পাচ্ছে৷ আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
–‘ আপনি তো বলেছিলেন, আমায় জড়িয়ে নিবেন৷ তাহলে দূরে ঠেলে কেন দিচ্ছেন৷ ‘
–‘ তোর ন্যাকা কান্না সহ্য হচ্ছে না আমার৷ জলদি কান্না থামা৷ নয়তো এখান থেকে আমি চলে যাবো৷ ‘
উনার ধমক শুনে কান্নার পরিমাণ বেড়ে গেলো আরো৷ আমি কাঁন্না থামানোর জন্য মুখে হাঁত চেঁপে দাঁড়িয়ে আছি৷ আজ কষ্ট হচ্ছে..! আমার ভুল বোঝা ঠিক হয় নি৷ তাই বলে এতোটা রাগ কেও করে৷ উনি সামনে এগিয়ে গেলেন৷ আমার চোখের কাজল হয়তোবা লেপ্টে গিয়েছে আরো৷ আমি আরো লেপ্টে দিলাম৷ কান্নার সুর হচ্ছে না তবে কষ্ট হচ্ছে৷ এমন কেন উনি? অনেক দূর এগিয়ে গেলেন৷ আমি তাকিয়ে আছি৷ উনার আর আমার সম্পর্ক কি এতোটা দূরত্ব হয়েছে? আমার সমস্ত ভাবনা ভুল প্রমাণিত করে উনি ঘুরে দাঁড়ালেন৷ হাত বাড়িয়ে বললেন,
–‘ শুভ্রতায় ঘেরা লালাভ রাঙা কাজল চোখের আমার অধিকারী মেয়েটার জন্য হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছি৷ সে কি আসবে আমার কাছে? আমি যে তার জন্যই..শুধুই তার জন্য দাঁড়িয়ে আছি৷ ‘
কান্নার মাঝেও হাসি ফুঁটে উঠলো৷ সব ভুলে আমি শাড়ি ধরে দৌড়ে তার কাছে যেতেই হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই সে আঁকড়ে ধরে৷ উনি আমায় ধরে বললেম,
–‘ বিশে স্বাগতম বুড়ি..!’
আমি অবাক হয়ে ডেট মনে করলাম৷ আজ জন্মদিন৷ আমি উত্তর না দিয়ে উনার হাত টেনে নিয়ে ঘড়ি দেখলাম ১২ঃ০০ টা বাজে৷ আমি বিস্ফোরিত চোখে জিজ্ঞেস করলাম ,
–‘ সত্যি’ই কি আজ জন্মদিন ? আমার মনে ছিলো না! এই আপনি কিভাবে মনে করলেন? না কি আমাকে ঢপ দিচ্ছেন। ‘
উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন আবার। হাত বাড়িয়ে আমাক টেনে নিলেন। আমি তার কাছে যেতেই আমার চোখের উপর হাত দিয়ে আটকে ফেলেন। সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন আমিও তার সাথে পায়ে পা মিলাচ্ছি। কিছুদূর আসার পর আমার চোখ ছেড়ে দিয়ে সামনে তাকাতে বললেন..! আমি তাকিয়ে দেখি, আগুনের আলোতে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,
” জীবনের নতুন আলোতে স্বাগতম আমার অধিকারিণী”
আমি হাসলাম। এমন ধরনের উইশ হয় আমার জানা নেই। উনি আমাকে টেনে আবার তার সামনে নিয়ে এলেন। যত্ন করে চোখের কাজলটুকু ঠিক করে দিয়ে বললেন,
–‘ একটা নতুন দিন নতুন ভাবে শুরু করতে হয়..! রাগের পিছনের কারণ ফিঁকে। ভালোবাসলে যে রাগ করে থাকা যায় না। তবে শাস্তি দেওয়া যায়। শাস্তি মওকুব করি নি। ডাবলের ডাবল মানে সুধে আসলে আরো চার গুণ সুধ বেড়ে গিয়েছে তোর শাস্তির পরিমাণ। ‘
আমার কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে উনি ফিক করে হেসে দিলেন। আমি অভিমান নিয়ে বললাম,
–‘ আর কত শাস্তি দিবেন বলুন তো? আমি ভুল করেছি আর এমন করবো না। আমাকে মারেন তবুও কথা বলা বন্ধ করবেন না। আমার শ্বাস আটকে আসে। ‘
–‘কে বললো তোকে শাস্তি দিবো? তোকে তো ভালোবাসাযুক্ত শাস্তি দিবো।’ উনার কন্ঠে দুষ্টুমির ছাঁপ। আমি কিছুই বললাম না। উনি ঘোর মাখা কন্ঠে বললেন,
–‘ সাদা রঙ ভালোবাসার প্রতীক তুই কি জানিস ? তোকে পবিত্র লাগছে। নীল চুড়ির ঝংকারে তোকে আবেদনময়ী লাগছে। তোর চোখের নিচে লেপ্টে থাকা কাজলের ভীরে গাঢ় তিলের মাঝে নিজেকে হারানো প্রেমিকের খাতায় খুজে বেড়াচ্ছি আমি। এতোটা স্নিগ্ধতা নিয়ে আজকের দিনটায় এসেছিলি তুই..! শুধুই আমার জন্য। ‘
আমি লজ্জায় পড়লাম না । অবাক চোখে তাকিয়ে উনার ওই চোখের ভালোবাসা দেখলাম। আকৃষ্টতা কেন তার চোখে? আমি তাকে নিজে থেকে জড়িয়ে ধরলাম। আজ সব কিছুর নতুন পথচলা। আমার বিশ বছরের জীবনের প্রথম আড়ষ্ঠতা যে সে…..!
_____________
বার্লিনের রাতের সৌন্দর্য অপূর্ব..! হলুদ রাঙা ফুলের উপর সোডিয়ামের নীলচে আলোয় মুখরিত চারপাশ। পাশে থাকা ব্যাক্তির গায়েও যে হলুদের সমারেশ। আমি আরেকটু শক্ত করে তার হাত ধরলাম। উনিও হাসলেন। হেটে চলেছি। আমাদের কলোনীর এই সাইডের নীরবতা। তাই গাড়ি নজরে পড়ছে না। উনি স্নিগ্ধ কন্ঠে বললেন,
–‘ কোথায় রোম্যান্স করবো তা নয় রাস্তায় হাত ধরাধরি করে হাটতে হচ্ছে। ‘
আমি উনার হাত ছেড়ে দিলাম। এই লোকটার মুখে আর কোনো কথা নেই। উনি আমার হাত পেছনে থেকে টেনে ধরে কোলে উঠিয়ে নিলেন। আমি আজ ভয় পেলাম না । ব্যাপারটা রোম্যান্টিক ওয়েতে উপভোগ করলাম। আমার হাসি দেখে উনি আমার দিকে ঝুঁকে নাকে নাক ঘষে বললেন ,
–‘ গান শোনাবি ?’
আমি অবাকের আরেকদফা উপরে মাথা দিয়ে মানা করতেই উনি আদুরে সুরে বললেন,
–‘ প্লীজ ..! আর আমি তোর সুর টেনে নিয়ে যাবো। যদিও তোর গান শুনে মানুষ ঘুম থেকে উঠে লাঠি হাতে না মারতে আসলেই হলো। ‘
আমি রেগে গেলাম। উনি যে আমাকে অপমান করছে সেটা বুঝতে বাকি নেই।
–‘ অপমান করছেন ?’
–‘ উহু…অনুপ্রেরণা দিচ্ছি। ‘
উনার হাসি মুখের কথাতে জেদ আরো চেঁপে বসলো। তবে কি গান গাইবো? উফফফ..! আমি রাগী গলায় গাইলাম,
~ ” তোমার ইচ্ছে গুলো,
ইচ্ছে গুলো,,
তোমার ইচ্ছে গুলো,ইচ্ছে হলে ,
আমায় দিতে পারো
গলার স্বরে এখন খাঁত নেমে এসেছে। হুট করেই ভালোলাগা নিয়ে আবার গাইলাম,
~” আমার ভালোলাগা ভালোবাসা…..
তোমায় দিবো আরো….! ”
~ ” তোমার ইচ্ছে গুলো,
ইচ্ছে গুলো,,
তোমার ইচ্ছে গুলো,ইচ্ছে হলে ,
আমায় দিতে পারো
~” আমার ভালোলাগা ভালোবাসা…..
তোমায় দিবো আরো….! ”
উনি আমার গানের মাঝেই নিজে গাইলেন। তার কন্ঠে গানটা আরো স্নিগ্ধ লাগছে। আমি তার গলা আরেকটু শক্ত করে ধরলাম। হিমুর হলুদ পাঞ্জাবি আর খালি পাঁ থাকলেও সে কাব্য…! কাব্যিক স্নিগ্ধময় কাব্য। আমি একরাশ ভালোলাগার চোখে তাকিয়ে উনার গান শুনছি। বার্লিনের এই রাত সারাজীবন কল্পনায় থেকে যাবে। আমার জন্মদিনের সবচেয়ে বড় উপহার এই রাত। উনি আমায় নামিয়ে দিয়ে হাত ধরে হেঁটে যেতে যেতে আবার গাইলেন,
~ ” তুমি হাতটা শুধু ধরো,আমি হবো না আর কারো… ! ‘
তার গানের সাথে আমিও তাল মিলালাম। গুঞ্জন তুলছে গানের সুর । এতোটা মায়াময় রাত না ফুরাক। তার হাত ধরে ,তার ইচ্ছে নিয়ে থাকতে চাই হাজার বছর। আদেও কি সেটা সম্ভব হবে? ভালোলাগার মাঝে ভয় কেন ঝেঁকে বসছে মনে?
চলবে…