রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি পর্ব-২১

0
3069

#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ২১
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)

বাগানে রাঁতের আঁধার! বাগানের লাইট গুলো থেকে মৃদু আলো এসে পড়ছে৷ সবাই মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে ৷ কাব্য ভাইয়া ক্লান্ত মুখে লাগেজের উপর বসে আছেন৷ আমার কান্নার মূল কারণ হচ্ছে তার মাথায় ব্যান্ডেজ করা,,সাথে হাতেও! উনি আমার কান্না দেখে ধীরপায়ে এগিয়ে এসে আমায় হালকা হাতে জড়িয়ে ধরলেন৷ আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম৷ সিনান, রাহুল আর মোস্তাকিম ভাইয়া ঠিক আছেন ৷ তাহলে উনি ব্যথা পেয়েছেন কি করে? ঠোঁট কেটে রক্ত বের হয়ে শুকিয়ে গেছে৷ ফুঁপি উপর থেকে দৌড়ে আসলেন সাথে বাকিরা৷ সবার চোখ-মুখ শুকনো লাগছে৷ ফুঁপি এসেই কেঁদে উঠলেন৷ কাব্য ভাইয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন৷ ফুঁপ্পা তার হাত ধরে বললেন,
–‘ এইসব কি করে হলো,গাছের সাথে গাড়ির ধাক্কা লাগলো কি করে কাব্য? ড্রাইভ কে করছিলো? ‘
সবাই কাঁচুমাচু করছেন৷ ফুঁপি নিজেকে স্বাভাবিক করে কাব্য ভাইয়ার হাত ধরে বলল,
–‘ ছেলেটা ব্যাথা পেয়েছে! এখন এইসব কথা না বললে হয় না তোমার? ‘
ফুঁপা কাব্য ভাইয়ার দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে রইলেন৷ সেই চোখের ভাষা আমরা না বুঝতে পারলেও বাকি চারজন ঠিক বুঝতে পেরেছে৷
–‘ হিমানী তোমার ছেলেকে বাসায় ডুকতে বলো৷ আজ সে যেটা করেছে এর বিহিত করতেই হবে৷ বাসার বাইরে আমি কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাই না৷ ‘
ফুঁপা কথাটা বলেই দ্রুত বাসায় ঢুকে গেলেন৷ সবাই তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে৷ ফুঁপি আর আমি প্রশ্নসূচক চোখে তাকাতেই কাব্য ভাইয়া ব্যাথাতুর কন্ঠে বললেন,
–‘ আ’ম টায়ার্ড..! তার উপর মাথা ব্যাথা করছে আম্মু! আমি কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না এখন৷ ‘
ফুঁপি আর কোনো প্রশ্ন না করেই সিনান ভাই সহ সবাইকে বাসায় ঢুকতে বলল৷ আমায় বলল, কাব্য ভাইয়াকে রুমে নিয়ে যেতে৷ ফুঁপি চোখ মুছে পা বাড়ানোর আগে কাব্য ভাইয়া পিছনে থেকে ডেকে ধীর কন্ঠে বললেন,
–‘ আম্মু, ড্রাইভ আমি করছিলাম৷ ‘
ফুঁপি ঘুরে তাকিয়ে অবিশ্বাসের সুরে বললেন,
–‘ তাহলে এক্সিডেন্ট হলো কি করে? সিনান বা রাহুল ওদের ড্রাইভিং ভালো না৷ কিন্তু তোমার? তুমি তো সুন্দর ভাবেই ড্রাইভ করো৷ ‘
তিনি আর কিছু বললেন না৷ রাহুল ভাইয়া রেগে তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,
–‘ ইচ্ছা করে গাছের সাথে ধাক্কা লাগিয়েছে৷ মোস্তাকিমকে ড্রাইভিং সিটে থেকে উঠিয়ে নিজে ড্রাইভ করছিলো৷ তুমিই বলো আন্টি, এই কাজ করার কোনো দরকার ছিলো? বাই এনি চান্স ব্লাস্ট হলে আমাদের কি হতো? ‘
–‘ আম্মু, ‘
রাহুল ভাইয়ার কথার মাঝেই কাব্য ভাইয়া ডেকে উঠলেন ফুঁপিকে৷ ফুঁপি তার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর ভাবে বলল,
–‘ এমনটা করার কারণ? ‘
–‘ আমি বুঝে উঠতে পারি নি৷ ডেস্পারেট হয়ে গিয়েছিলাম৷ আমি জানি না, বাট যাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছিলো না৷ ‘
আমি তাদের কথার মানে বুঝতে পারছি না একদম৷ সাহস জুগিয়ে বললাম,
–‘ আপনার ফ্লাইট, আপনার সপ্ন সব নষ্ট করার মানে কি কাব্য ভাইয়া? কিসের জন্য ডেস্পারেট আপনি? ‘
–‘ তোর জন্য! ‘
আমি শিউরে উঠলাম তার কথা শুনে৷
–‘ যাওয়ার আগেই বারণ করতে পারতি কাব্য..! তোর জন্য আমাদের জীবন ঝুঁকিতে ছিলো৷ তুই পাগল হয়ে গেছিস৷ পুরো উন্মাদ৷ ‘
কাব্য ভাইয়া সিনান ভাইয়ার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালেন৷ বললেন,
–‘ ব্যাথা পেয়েছিস? ‘
হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে থতমত খেয়ে গেলেন সিনান ভাইয়া৷ মাথা দুলিয়ে বললেন, ‘ না! ‘
কাব্য ভাইয়া ফুঁপির দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে বলল,
–‘ তুমি আব্বুকে বুঝাও..! আমি উনাদের ইমেইল পাঠিয়ে দিয়েছি৷ তারা ফিডব্যাক দিয়েছে,,টাইম দিয়েছে আমায় সুস্থ হওয়ার৷ ‘
ফুঁপিও আর কথা বললেন না৷ রেগে বাসায় ঢুকে গেলেন৷ আমি উনার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছি৷ মোস্তাকিম ভাইয়া আমাদের সামনে এসে বলল,
–‘ শালা..! তোর জন্য আজ জীবন অর্ধেক নাই হয়ে যাচ্ছিলো৷ হুট করে এমন একটা প্ল্যান কি করে করলি তুই? ‘
–‘ রিজন ছাড়া ফ্লাইট ক্যান্সেল করতে পারতাম না!’
সিনান ভাইয়া তার হাতের ব্যান্ডেজের উপর থাপ্পড় মেরে বললেন,
–‘ তুই পাগল,,বদ্ধ উন্মাদ.. হুট করে এতোটা উন্মাদনা কে নিজের ভেতর পুষলি কি করে? আজ একটু হেরফের হলে মরতেও পারতি তুই৷ ‘
কাব্য ভাইয়া মাথা দুলিয়ে হাসলেন৷ আমার দিকে স্নিগ্ধ চোখে তাকিয়ে বললেন,
–‘ হঠাৎ করে উন্মাদ হয়ে গেছি৷ দুনিয়া ক্ষনিকের৷ এই ক্ষনিকের যতটুকু সময় আমার কাছে আছে সেটা আমি আমার আমিকে নিয়ে পার করতে চাই৷ যেন মরলেও আফসোস না থাকে৷ লাইফ,ক্যারিয়ার সব হবে, কিন্তু ফেলে যাওয়া সময়.. সেটা কখনো ফিরে পাবো না৷ আমি আমার জন্য ধার্য্য করা সময়টুকু শান্তি মতো বাঁচতে চাই৷ আর সেই চাওয়াটুকুর মাঝে এমন একজন হুট করেই আমার সাথে জড়িয়ে গিয়েছে৷ সেই মানুষটাকে নিয়েই আমার ছোট দুনিয়া সাজাতে চাই৷ এই সাজানোর সময়টুকু তে তাকে যদি পাশে না পাই তাহলে মরে গেলেও যে আফসোস থেকে যাবে৷ ‘
সবাই উনার বলা কথায় মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে৷ আর উনি আমার দিকে৷ সেই মানুষটা আমি! ভাবতেই ভালোলাগার একরাশ ছোঁয়া দোল খেয়ে গেলো মনের মাঝে৷ আজ চলে যাওয়াটা যে ভাবেই হোক আটকে গিয়েছে সেটা নিয়ে আফসোস করবো না ফিরে আসাটা নিয়ে খুশি হবো বুঝতেই সে আমার হাত ধরলো৷ চমকে উঠে তার দিকে তাকাতেই সে ম্লান হেসে বললেন,
–‘ আমি জানি না কোনটা ঠিক বা ভুল,,আমি তোর মোহে পড়েছি৷ সেটা আমি কাটাতে চাই না৷ আমি তোকে পাশে চাই সব সময়৷ দূরে থেকে পাশে থাকা গেলেও আমি কাছে থেকে পাশে থাকতে চাই৷ এতে আমার ক্যারিয়ার কি হবে সেটা ইস্যু করে না আমার কাছে৷ ‘
আমি কি বলবো খুজে পেলাম না৷ এতোটা কম সময়ে এতোটা গভীর ভাবে উপলব্ধি বুঝি প্রেমিক পুরুষ দের হয়? আচ্ছা উনি কি সত্যিকারের প্রেমিক পুরুষ, ‘ যার বাইরের কাঠফাটা রৌদ্দুর, ভেতরে প্রেমের বৃষ্টি! ‘
যে বৃষ্টি শুধুই তার প্রেয়সীর জন্য…! প্রমের বৃষ্টি৷
_________________________
আমি উনার একদম মুখের সামনে বসে আছি৷ আর সে আমার দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে আছে৷ তার ঠোঁটের কোণে কেটে যাওয়া জায়গাটা আমি পরিষ্কার করছি৷ উনি ব্যথা পাবেন বলে ধীরে ধীরে কটন দিয়ে আলতো চাপ দিচ্ছি৷ উনার চেয়ে ব্যাথা বোধহয় আমার লাগছে৷ আমি নিজে থেকে তার এতোটা কাছে আসি নি কখনো৷ আমি তো তার ব্যাথা কমানোর জন্য এসেছি এতোটা কাছে তাও নিজের অজান্তে৷ আমার মাথায় শুধু ঘুরছে তার ব্যাথা কিভাবে কমাবো৷ তার নিশ্বাসের হাতছানি গুলো আজও বিরক্ত করছে আমায়৷অবাধ্য ছোট চুল গুলো তার নিশ্বাসের তালে তালে উনার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে৷ আমার সেই দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই৷ উনি আজও ইচ্ছা করেই ফুঁ দিচ্ছেন৷
–‘ গোঁলাপি মিষ্টি,, খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা হয়! ‘
আমি উনার কথার মানে বুঝতে না পেরে বললাম,
–‘ গোঁলাপি মিষ্টি তো বাসায় নেই! কাল সকালে ফুঁপিকে এনে দিতে বলবো৷ ‘
–‘ তোর ফুঁপি কোথায় পাবে? ‘
আমি মেডিসিন লাগাতে লাগাতে বললাম,
–‘ কেন! ফুঁপাকে বলবে আর ফুঁপা বাজার থেকে এনে দিবে৷ ‘
উনি রহস্যজনক ভাবে হাসছেন৷ আমি সেদিকে পাত্তা দিলাম না৷ আগে মেডিসিন লাগিয়ে ফুঁপির আদেশ মতো উনায় খাবার দেওয়ার পরেই আমার শান্তি৷ লোকটার হেয়ালির জন্য আজ কতো বড় একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যেত..! ভাবলেই আমি শিউরে উঠছি৷
— ‘ তোর ফুঁপা বাজারে সেই মিষ্টি পাবে না৷ ‘
আমি শেষ করে উঠতে নিলেই উনি আমার কোমরের পিছনে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেন৷ তার এহেন কাজে ভেবাচেকা খেয়ে যাই আমি৷ আমি থেমে গেলাম৷ কারণ নড়াচড়া করলে উনার অন্যহাতে ব্যাথা পাবেন৷ ভণিতা না করে বললাম,
–‘ ছাড়ুন তো..! আপনার খাবার আনতে যাবো৷ আর ওই মিষ্টি ইমপোর্টেড নাকি? যে বাজারে পাবে না৷ ‘
উনি হাসলেন৷ আমি ভ্রু কুটি করে তার দিকে তাকিয়ে আছি উত্তরের আশায়৷ উনি নিজের ঠোঁটের উপর আঙুল দিয়ে ঘষলেন৷
–‘ বড় হবি কবে পিচ্চি? ‘
পাগল টাগল হয়ে গেছেন নিশ্চয়ই৷ তাই উল্টাপাল্টা বকছেন৷ শেষে কিনা পাগল? এইছিলো আমার কঁপালে৷ আমার কঁপালে চিন্তার ভাজ দেখে উনি আমায় টান দিলেন৷ টাল সামলাতে না পেরে তার উপর পড়তেই ব্যাথায় শব্দ করে উঠে উনি৷ আমি ভড়কে যাই৷ তড়িঘড়ি করে উঠতে গেলে ব্যাথা নিয়েই সে আঁকড়ে রাখে৷ আমি চিন্তিত স্বরে বললাম,
–‘ ইশ! কোথায় ব্যাথা পেয়েছেন? আপনার বুদ্ধি দিনে দিনে নাই হয়ে যাচ্ছে কাব্য ভাই..! টান দিলেন কেন এইভাবে৷ ব্যাথা তো আপনি’ই পেলেন৷ ‘
–‘ ব্যাথা আমার চেয়ে বেশি তুই পেয়েছিস তা কি জানিস? ‘ স্নিগ্ধ কন্ঠে বললেন উনি৷
আমি উঠে যেতে নিলেই আবার বললেন,
–‘ আমার গোঁলাপি মিষ্টি খেতে বড্ড ইচ্ছা হচ্ছে৷ ‘
–‘ আরে ভাই..! উঠতে তো দিন আগে৷ ধরে রেখেছেন এইভাবে৷ না উঠলে আনবো কি করে? ‘
আমার কথায় উনি হো হো করে হেসে উঠলেন৷ হাসি থামিয়ে আমার চুল গুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে সিরিয়াস ভাবে বললেন,
–‘ তোর আনতে হবে না..! আমি’ই নিয়ে নিচ্ছি৷ ‘
–‘ দয়া করে আনুন আর আমাকে ছাড়ুন৷ ‘ আমি উনার থেকে ছাড়া পাবার জন্য বললাম৷ উনি নিজের ভ্রু কুচকে বললেন,
–‘ সত্যি নিবো? ‘
–‘ হ্যাঁ,,নিন! ‘ আমি বলতেই উনি তার ভালো হাত দিয়ে আমার মাথার পিছে হাত দিতেই চমকে উঠি আমি৷ তার গোঁলাপি মিষ্টি..! আমার ঠোঁট গোঁলাপি৷ মনে পড়ার আগেই সে আঁকড়ে ধরে৷ হার্ট বিট ক্রমেই বেড়ে চলেছে সাথে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে৷ ধুকপুকের মাএা বেড়েই চলেছে সেই সাথে তার ছোঁয়া৷
উনি ছেড়ে দিতেই আমি কান্না করে দিলাম৷ এতো খারাপ কেন উনি? আমার কান্না দেখে নিজে উঠে বসলেন৷
–‘ এই নীতু,’
–‘ আপনি পঁচা..! বড্ড খারাপ..! ‘ কাঁদতে কাঁদতেই বললাম৷ উনার চোখে মুখে অপরাধীর ছাঁপ৷ চুপ করে বসে আছেন৷ আমি আড়চোখে তাকালাম তার দিকে৷ ঠোঁটের কোণা দিয়ে আবার রক্ত গড়িয়ে পড়ছে৷ কান্না ভুলে আমি উঠে দাঁড়াতেই উনি আমার হাত ধরেন৷ আমি পিছু ঘুরতেই উনি বললেন,
–‘ নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলি কেন তোর মাঝে? আমি যে বড্ড আসক্ত হয়ে যাচ্ছি৷ আই প্রমিস তোর অনুমতি বিহীন আর কাজ করবো না৷ ‘
আমি উনার থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলাম৷ উনি তাকিয়ে রইলেন৷ আমি আবার ফাস্টএইড বক্স হাতে উনার সামনে দাঁড়ালাম৷ উনি চোখ তুলে তাকালেন না৷ আমি উনার থুতনিতে হাত রেখে মুখ উঁচু করতেই আমার বুকের মাঝে ধক করে উঠে৷ চোখ গুলোতে কেমন অনুতাপের ছাঁপ৷ আমি এইবার নিজের কাছে নিজের কাছে অপরাধী হয়ে গেলাম৷’ সে আমার! আমি তার..! ‘ তার অধিকার আছে আনার উপর৷ আমি মুচকি হাসলাম৷ আমার হাসি দেখে মনে হচ্ছে উনি প্রাণ ফিরে পেলেন৷ আবার আমার সাথে দুষ্টমি করা শুরু করলেন৷ আমার বিরক্ত কাজ করছে না একদম৷ ভালো লাগছে৷ তাকে আগলে রাখতে ইচ্ছা হচ্ছে৷ তাকে ছাড়া নিজেকে শূন্য মনে হয়৷ এতোটা কাছের আগে তো মনে হয় নি৷’ কিছু কিছু জিনিসে শূন্যতা অনুভব করা ভালো কারণ শূন্যতার ভালোবাসায় আবেদন থাকে, একে অপরকে হারানোর ভয় থাকে, একসাথে পথ চলার অনুপ্রেরণা থাকে৷ ‘

~” রাতের আঁধার ঘুচে যাবে, তোমার কাছে এসে! ‘
এই আমি’তে তোমায় খুজে বেড়াবো
ভালোবাসার ঘরে..!
~ ” যে আমিতে থাকবে তুমি, আমায় জড়িয়ে! ‘
রাতের আঁধার ঘুচে যাবে,তোমার কাছে এসে..! ‘
______________________________
সকালের আলো তার সাথে ঘড়ির কাঁটা নিজস্ব গতিতে ঘুরে চলেছে৷ সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অস্বস্তির পরিমাণ৷ ফুঁপা সোফায় বসে কাব্য ভাইয়ার দিকেই তাকাতেই সে ফুঁপার পাশে বসে পড়ে৷ মোস্তাকিম ভাইয়ার সবাই উপরে৷ আমি, ফুঁপি আর ফুঁপা ছাড়া এখানে কেও নেই৷ ফুঁপা তার দিকে কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
–‘ কাল যা করেছিস.. তাতে তোকে থাপ্পড় মারলেও কম হবে৷ দিনে দিনে নিজের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিস৷ একমাএ তোর মা’র জন্য এতো বড় একটা ঘটানাতেও আমি চুপ৷ তোর মামা নেহাৎ সিলেটের বাইরে গেছে কাজে৷ আর এইটা ফ্লাইটের টিকিট আমি নতুন করে আজকের ডেট বলে ম্যানেজ করেছি৷ ‘
–‘ নীতুর যাওয়ার ব্যবস্থা করো৷ ‘ উনি শান্ত ভাবে উত্তর দিলেন৷ আমি চমকে উঠলাম সাথে ফুঁপিও৷ ফুঁপা রেগে গেলেন৷ বললেন,
–‘ নির্লজ্জদের মতো কথা বলছিস কেন? তোকে বলা হয়েছিলো, নিজের ক্যারিয়ারের দিকে ফোকাস করতে৷ আর নীতু কেন যাবে? ওর পড়াশোনা আছে৷ ‘
উনি চোখ তুলে তাকালেন না৷ ফুঁপি শান্ত ভাবে বলল,
–‘ কাব্য, রুমে যাও! তোমার অন্যায় আবদার মেনে নেওয়া সব সময় পসিবল না৷ ‘
তিনি গেলেন না৷ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
–‘ নীতুর যাওয়ার ব্যাবস্থা করেই আমি যাবো৷ তার আগে না৷ ‘
ফুঁপা রেগে উঠে দাঁড়ালেন৷ দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
–‘ ও যাবে না তোমার সাথে৷ সব কিছুর একটা নিয়ম থাকে কাব্য৷ আর বিয়েটা ঝামেলার মধ্যে হয়েছিলো তাই মেনে নিয়েছি আমরা৷ এখন পাগলামী করে লাভ নেই৷ ‘
উনি কারো কথার উত্তর না দিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন৷ স্থির কন্ঠে বললেন,
–‘ তোর যাওয়ার ব্যাবস্থা করলে তুই যাবি আমার সাথে?’
উনার কথা শুনে সবার মুখের দিকে তাকালাম৷ মাথা নীচু করে বললাম,
–‘ আপনার যাওয়াটা দরকার৷ কারণ আপনার সপ্ন ওইটা৷ ‘

আমায় আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উনি ফাইল উঠিয়ে বললেন, ‘ ওকে ফাইন! ‘
আহত শরীর নিয়েই বাইরের দিকে পাঁ বাড়ালেন৷ কালকের প্যাক করা লাগেজ নিচেই ছিলো৷ ওই গুলা একহাতে দ্রুত টেনে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়৷ ফুঁপি আর আমি উনার পিছু পিছু গিয়েও আটকাতে পারলাম না উনি গাড়িতে উঠেই গাড়ি স্টার্ট দিলেন৷ সত্যি চলে যাবেন? একহাতে ড্রাইভ করবে কি ভাবে? ফুঁপি কাঁদছে আর ফুঁপার সাথে তর্ক করছেন৷ আমি দৌড়ে মোস্তাকিম ভাইয়াদের রুমে গিয়ে সব বলতে তারা বের হয়৷ কান্না পাচ্ছে..! এতো অবুঝ কেন উনি?
চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে