রূপকথা পর্ব – ১২

0
749

#রূপকথা
#লেখিকা-DI YA
#পর্ব-১২

হসপিটালে এসে ওসি সাহেব এক্সিডেন্টের ব্যাপারে খোজ করতেই জানতে পারে মেয়েটিকে এই হসপিটালেই নিয়ে এসেছিল একটি লোক। কিন্তু হসপিটালের লোক মেয়েটিকে ভর্তি নেয় না। কারণ প্রথমত এটা ছিল এক্সিডেন্ট কেস। আর দ্বিতীয়ত মেয়েটির অবস্থা প্রচুর খারাপ ছিল। মুখের অনেক অংশ ও কেটে গিয়েছিল। শরীরে তো আরো অনেক ক্ষত ছিল। মেয়েটিকে ভর্তি করলে ও মেয়েটির বাঁচার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। তাই তারা মেয়েটিকে ভর্তি নেয় না।তারা না করার পর মেয়েটিকে যে ভদ্রলোক নিয়ে এসেছিল সে নিজের গাড়িতে করে আবার কোথায় জানি নিয়ে চলে যায়।

হসপিটালে থেকে সবাই এইটুকুই জানতে পারে। এসব শুনে রূপ আরো ভেঙে পরে। হঠাৎই রূপ জ্ঞান হারিয়ে পরে যেতে নেয়। আদ্র কোনোরকমে রূপকে ধরে ফেলে। আরশিও কান্না করতে করতে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে। আা্র আরশির কাছে গিয়ে বলো,

অরু আআমি বুঝতে পারছি তোমার অনেক খারাপ লাগছে।অনেক কষ্ট হচ্ছে তোমার। কিন্তু এখন আমাদের রূপকে সামলাতে হবে তাই না। আমি রূপকে হসপিটালে ভর্তি করে দিয়েছি। ডাক্তার বলেছে অতিরিক্ত টেনশনে এমন হয়েছে। আপাতত ওকে একটা ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। ওর জ্ঞান মোটামুটি আরো ১০ ঘন্টা পর ফিরবে।বাসার সবার সাথে ও আমি কথা বলে নিয়েছি। তুমি প্লিজ এখন রূপের খেয়াল রাখো।আমি ওসি সাহেবের সাথে যাচ্ছি কথার খোঁজে – আদ্র

আচ্ছা ঠিক আছে – আরশি

~~~~~~

সময় নাকি বাতাসের থেকে তীব্র বেগে ছুটে।হুম কথাটা হয়তো সত্যি। কথার এক্সিডেন্টের ২ সাপ্তাহ হয়ে গেছে। এখনো কথার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। আদ্র আর ওসি সাহেব অনেক খুঁজেছে কথাকে। কিন্তু কোথাও কথার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সবাই ধরে নিয়েছে কথা মারা গেছে। কারন বেঁচে থাকলে কোনো না কোনো খবর তো কথার পাওয়া যেত।চৌধুরী পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে । পরিবারের সবাই জানি কেমন নীরব হয়ে গিয়েছে। যে চৌধুরী বাড়ি সবসময় হাসি আনন্দে মেতে থাকতো। আজকে সেই চৌধুরী বাড়ির একটি সদস্যের মুখেও হাসির রেশ নেই।ওইদিন রূপের জ্ঞান ফেরার পর অনেক পাগলামি করেছে কথার কাছে যাওয়ার জন্য। সবাই অনেক কষ্টে তাকে সামলিয়েছে। তার পর থেকে রূপ আরো বেশি গম্ভীর হয়ে গিয়েছে। কারোর সাথে কোনো কথা বলে না।সারাক্ষণ চুপচাপ নিজের ঘরে থাকে।খাবার ও খায়না ঠিক মতো। হঠাৎ হঠাৎই কথা বলে জোরে চিল্লিয়ে উঠে।

দেখতে দেখতে একটা বছর পার হয়ে গেলো।এ সময়ের মধ্যে অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। চৌধুরী পরিবারের সবাই ও নিজেদের সামলে নিয়েছে। আর রূপ এখন অনেক টাই বদলে গিয়েছে। আগের মতো আর কথার জন্য পাগলামি করে না। কেমন জানি অনুভূতি শূন্য মানুষ হয়ে গিয়েছে। রোজ সকালে অফিসে যায়। তারপর রাত ১ টা ২ টা সময় বাসায় ফেরে। কখনো কখনো আবার অফিসেই থেকে যায়। আগের মত কথা ও বলে না কারোর সাথে। রূপের জীবন সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে অফিস টু বাসার মাঝে।যে ছেলেটা সবসময় হাসিখুশি থাকতো। সে ছেলেটা এখন হাসতে ভুলে গিয়েছে। পরিস্থিতি মানুষকে পরিবর্তন করে দেয়। বাস্তবতা মানুষকে সব কিছু মেনে চলা শিখিয়ে দেয়।রূপের জীবন ও এখন তেমনি হয়ে গিয়েছে। যে ছেলে সবসময় গোছালো পরিপূর্ণ থাকতো। সে ছেলে সম্পূর্ণ অগোছালো হয়ে গিয়েছে। কেমনই জানি এলোমেলো হয়ে গিয়েছে তার জীবন।

অফিসে নিজের কেবিনের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রূপ অতীতের কথাগুলো ভাবছিল।ভাবতে ভাবত সে আপন মনেই বলে উঠে,

যে দিন যায় ভালোই যায়।চাইলে ও আর সেদিন ফিরে পাওয়া যায় না।হুম সত্যিই তো চাইলেও হয়তো আর কখনো আমি আমার কথা রাণীকে ফেরত পাবোনা। আর কখনো তার ভালোবাসা ফিরে পাবনা।আচ্ছা কথা রাণী কেনো তুমি আমাদের #রূপকথার গল্প অসম্পূর্ণ রেখে চলে গেলে। কেন চলে গেলো তোমার রূপকে ফেলে। জানো আমি না ভালো নেই তোমাকে ছাড়া।আমি একটু ও ভাল নেই কথা। তোমার রূপ কখনো ভাল থাকতে পারেনা তোমাকে ছাড়া।ফিরো এসো প্লিজ। আর কখনো কষ্ট পেতে দিবনা কথা। – রূপের কথার মাঝেই কে যেন কেবিনের দরজার নক করে।রূপ বলে উঠে,

কে ? – রূপ

স্যার আমি রাহুল – রূপের এসিস্ট্যান্ট রাহুল বলে

ভিতরে এসো – রূপ

জি স্যার। আসলে স্যার খান কোম্পানি যে আমাদের সাথে একটা ডিল করতে চাচ্ছে।যেটার কথা আপনাকে আমি কিছুদিন আগে বলেছিলাম। – রাহুল

হুম তো কি হয়েছে ? – রূপ

স্যার তাদের মেইন বিজনেস হচ্ছে আমেরিকায়। তারা চাচ্ছেন আমরা যেন ওখানে তাদের অফিসে গিয়ে সব দেখেশুনে তাদের সাথে ডিল টা ফাইনাল করি – রাহুল

আমি যেতে পারব না। তুমি চলে যাও। গিয়ে সবকিছু দেখে ঠিক মনে হলে। ডিল ফাইনাল করে আসো। – রূপ

না স্যার এটা তো মেইন প্রজেক্ট তো মিটিং এ আপনার তো উপস্থিত থাকা লাগবে – রাহুল

আমি যেতে পারবো না রাহুল।তুমি তাহলে তাদের না বলে দাও – রূপ

স্যার এই প্রজেক্টে কাজ করলে আমাদের কোম্পানির ৬০% লাভ আছে। এই ডিল টা হাতছাড়া করলে খুব বড় একটা লস হয়ে যাবে। এক বার ভেবে দেখেন দুই দিনের ব্যাপার। যদি যেতে পারেন তো আমাদেরই লাভ – রাহুল

রূপ কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভেবে নিলো। তারপর বলে উঠে,

আচ্ছা ঠিক আছে। আমি যাব। তুমি তাদের বলো আমরা আসবো। – রূপ

জি স্যার। আর তারা জিজ্ঞেস করেছিল কবে যাবেন আর মিটিংয়ের ডেট কবে দিবে ? – রাহুল

আজকে তো ১৮ তারিখ। তুমি তাদের বলো আমরা কাল আসবো। তারপর দিন তাদের সবকিছু দেখে শুনে।২১ তারিখে মিটিং করে সবকিছু ফাইনাল করবো – রূপ

আচ্ছা স্যার ঠিক আছে। – রাহুল।

আর রাহুল তুমি কালকের দুটো টিকিট কেটে ফেলো। পরে এসে আমাকে টাইম বলে দিও – রূপ

ওকে স্যার – বলে রাহুল চলে গেল।

অন্য দিকে রূপ অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো বাসায় আসার জন্য। কালকে যেহেতু যাবে তো আজকে বাসায় গিয়ে সবকিছু গুছিয়ে নিতে হবে। কিছু মাস আগেই আমান চৌধুরী আর আরাফ চৌধুরী অফিসের সব দায়িত্ব রূপকে বুঝিয়ে দিয়েছে।তারা এখন বাসায়ই থাকে। পুরো অফিসের দায়িত্ব এখন রূপের উপর। এটা অবশ্য তারা এই জন্যই করেছিল যাতে রূপ অত্যন্ত কাজে ব্যস্ত থাকে। আর সবকিছু থেকে একটু দূরে থাকে।কারণ বাসার সব মানুষ জানে রূপ কথাকে কত ভালোবাসে সেই ছোট বেলা থেকেই।বাসায় আসার পর ড্রাইভার গাড়ি থামাতেই রূপ গাড়ি এসে থেকে নেমে বাসার ভিতরে চলে আসলো। রূপকে এ সময় বাসায় দেখে নীলা চৌধুরী বললো,,

বাবা তুই ঠিক আছিস ? – নীলা চৌধুরী

জি ছোট আম্মু – রূপ

হঠাৎ এ সময় বাসায় তুই কি মনে করে ? – রুহি চৌধুরী

বাবা অফিসে সব ঠিক আছে তো ? – আমান চৌধুরী

হুম সবকিছু ঠিক আছে। আসলে বাবা কালকে আমাকে আর রাহুল দুই তিন দিনের জন্য আমেরিকা যেতে হবে – রূপ

কেন ? ওখানে কি কোনো নতুন ডিল করতে হবে নাকি ? – আরাফ চৌধুরী

হুম খান গ্রুপের সাথে ডিল আছে। এই জন্যই আসছি বাসায় – রূপ

আচ্ছা ঠিক আছে – আমান চৌধুরী

পরদিন সকাল এগারো টায় রূপ আর রাহুল বাসা থেকে রওয়ানা দেয় এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য। ১২ টায় তাদের প্ল্যান।এয়ারপোর্টে এসে সব ফর্মালিটি শেষ করে তারা প্ল্যানে গিয়ে বসে।প্ল্যান ও উড়তে শুরু করে নিজ গন্তব্যে। আমেরিকায় প্ল্যান ল্যান্ড করতেই সবাই ধীরে ধীরে প্ল্যান থেকে নেমে আসে।এয়ারপোর্টে থেকে বের হয়ে রূপ আর রাহুল রওয়ানা দেয় হোটেলের উদ্দেশ্য। রাহুল আগে থেকেই তাদের থাকার জন্য এখানের সেরা একটা হোটেলে দুটি রুম বুক করে রেখেছে।হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়ে রাহুল আর রূপ শুয়ে পরে।পরদিন সকাল ব্রেকফাস্ট শেষে দুজন বের হয় খান কোম্পানিতে আসার উদ্দেশ্য। রূপ আর রাহুল পৌঁছাতেই তাদের সাদরে গ্রহণ করে এই গ্রুপের মালিকের ছেলে জায়ান খান।তারপর তারা পুরো অফিস ঘুরে দেখে আর ডিলের ব্যাপারে ও নিজেদের মধ্যে কথা বলে নেয়।সবকিছু দেখে রূপ রাজি হয়ে যায় ডিল করতে।সবাই ডিল ফাইনাল করতে মিটিং রুমে আসে।তখনি মিটিং রুমের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে একজন বলতে লাগে,

ওহহ সরি সরি আমার জন্য আপনাদের ওয়েট করা লাগছে। এখন আমি এসে পরেছি। তো মিটিং শুরু করা যাক – ভেতরে প্রবেশ করা মেয়েটি বলে উঠে।

হঠাৎই মিটিং রুমে পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠে রোদ।

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে