রূপকথা পর্ব – ০২

0
911

#রূপকথা
#লেখিকা- DI YA
#পর্ব-০২

হুম আলু তুই আমাকে ধরে বস। আমি ও চালানো শুরু করছি – আকাশ

দূর থেকে আকাশ আর কথাকে এতোটা ক্লোজ ভাবে দেখে যে একজনে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এটা ওদের জানা হলো না। ওরা চলে যেতেই লোকটি বলে উঠলো,,

তোমার অনেক কিছু জানার বাকি আছে কথা। আমার অপেক্ষা না করেই যে তুমি এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবা আমি ভাবিনি।

আকাশ আর কথা ভার্সিটিতে ঢুকতেই তাদের দিকে একজন মেয়ে এগিয়ে আসলো। এসেই বলতে শুরু করলো,,

তোরা আসতে এত লেট করলি কেন – রিয়া

আমরা কখন লেট করলাম।আমরা তো ঠিক সময়ই এসেছি। – কথা

আমি আরো এক ঘন্টা আগে এসেছি। – রিয়া

তুমি তো আসছো তোমার উনির সাথে ইটিশপিটিশ করতে। আমাদের তো আর কোনো উনি নাই তাই আমরা এক ঘন্টা পরেই আসি – বলে আকাশ হাসতে শুরু করলো। সাথে যোগ দিলো কথা ও।

দেখ আকাশ ভাল হচ্ছে না কিন্তু। আর ইটিশপিটিশ কি হুমম ? – রিয়া

ওরে তুমি তো দেখি শিশু বাচ্চা। কিছুই বুঝো না। তুই প্রেম করে আর এক সাপ্তাহ পরে বিয়ে ও করে ফেলবি। আমরা কি করলাম জীবনে – আকাশ

তোর মত খাটাশের সাথে কোন মেয়ে প্রেম করবে ? – কথা

দেখ আলু এটা কিন্তু ঠিক না। আর তুই যেমন মিঙ্গেল। তুই ও তো আমার মতো সিঙ্গেলই। দুজনে আমরা এক গোয়ালেরই গরু।- আকাশ

এটা অবশ্য ঠিক। আচ্ছা শোন আজকে আমরা ক্লাস করবনা। – রিয়া

তো কি করবো আমরা? – কথা

আজকে আমরা সবাই একটু শপিং করতে যাবো। বিয়ের মাএ কিছু দিন বাকি। আচ্ছা আমি তো খেয়ালই করিনি অরু কোথায়? – রিয়া

হ্যা ঠিকই তো। অরু কোথায় রে আলু? আজকে আসেনি কেন? – আকাশ

আজকে ওর ভাই আসবে তাই আসেনি। তো চল আমরা শপিং এ যাই – কথা

হুম কথা তুই আকাশের সাথে যা। আমি রিয়ানের সাথে আসছি।- রিয়া

হ আমরা যাই দুজনে। তোমরা নিব্বা নিব্বির মত প্রেম করতে করতে আসো -আকাশ

(রিয়া হচ্ছে কথার আরেক বেস্ট ফ্রেন্ড।পুরো নাম রিয়া খান। রিয়ার বিয়ে আরো এক সাপ্তাহ পরে।আর রিয়ান হচ্ছে রিয়ান হবু বর। সাথে ওদের ভার্সিটির টিচার। বাকিটুকু গল্পে জানতে পারবেন)

অন্য দিকে,

চৌধুরী বাড়িতে সকলে মেতে উঠেছে রূপকে নিয়ে। রূপ ও সবার সাথে খুশি মনে মেতে উঠেছে। আরশি বললো,

ভাই – আরশি

হুম বল – রূপ

তুমি আমার জন্য কি নিয়ে আসছো – আরশি

এই যে তোর আস্ত জলজ্যান্ত ভাই আমি নিজে এসেছি তোর জন্য। তোর আর কি চাই হুম – রূপ

তাও তো আসছোই। কিন্তু তুমি যে আসছো সেই উপলক্ষে আমার গিফট কই – আরু

আচ্ছা ঠিক আছে। তোমাদের সবার জন্য আমি গিফট এনেছি।সবাই বসো তোমাদের দেখাচ্ছি – রূপ

রূপ একে একে সকলের হাতে তাদের জন্য আনা গিফট দিলো।তারপর বলতে লাগলো,

তোমাদের সবার ভাল লেগেছে তো? – রূপ

এসবের কি কোনো প্রয়োজন ছিল রূপ। আমাদের ছেলে যে এসেছে এতেই তো আমরা কত খুশি। আমাদের আর কি চাই – নীলা চৌধুরী

ঠিক বলেছিস ছোট। – রুহি চৌধুরী

প্রয়োজন অপ্রয়োজন কি হুম।তোমরা সবাই হচ্ছো আমার ভালোবাসার মানুষ। আর ভালোবাসার মানুষদের তো গিফট দেওয়াই যায় – রূপ

ভাই সব ঠিক আছে। কিন্তু – আরশি

কিন্তু আবার কি ? তোর কি গিফট পছন্দ হয়নি – রূপ

না তা নয়।গিফট আমার অনেক ভাল লেগেছে কিন্তু তুমি তো সবার জন্য কিছু না কিছু আনলে তো কথার জন্য কি কিছু নিয়ে আসো নাই ? – আরুশি

না। – রূপ

গিফট না এনেই ভাল করেছো ভাইয়া।আসলে আমি সবার থেকে গিফট জিনিসটা নিতে পছন্দ করিনা।যদি আনতে তাহলে তা তোমাকে ফিরিয়েই দিতাম।তো তার থেকে এটাই ভালো হয়েছে তুমি গিফট আনোনি। মা আমি বাইরে থেকে লান্স করে এসেছি তো এখন আর কিছু খাবনা। আর আরু তুই একটু আমার রুমে আসিস তোর কিছু জিনিস আমার কাছে – বলে কথা তার নিজের ঘরে চলে গেলো।

ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে কথা ভাবতে লাগলো কিছুক্ষণ আগের কথা। শপিং শেষে সবাই যে যার বাসায় চলে যায়। কথা ড্রইংরুমে প্রবেশ করেই শুনতে পেলো আরু আর রুপের কথোপকথন।আগের কথা হলে হয়তো সে এখন কিছু বলতো না। নীরবে রুমে এসে কান্না করতো।কিন্তু সে তো এখন বদলে গিয়েছে। সে আর আগের কথা নেই।তার মন এখন আর রূপ নামের মানুষ টার উপর দূর্বল না।তাই তো জবাব দিয়ে এসেছে রূপের কথার।এসব কিছু ভেবে কথা গোসল করে এসে বিছানায় শুয়ে পরলো। শপিংমলে ঘুরতে ঘুরতে সে পুরো ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে।

সন্ধ্যা সময় ঘুম ভাঙতেই কথা ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো রূপ আরশি বড়মা আর মা আড্ডা দিচ্ছে। কথা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কিচেনে চলে গেলো। গিয়ে নিচের জন্য এক কাপ কফি বানালো।তারপর রুমে আসতে লাগলো।তকন তাকে আরশি দেখে বললো,

কথু আয় এখানে সবাই আড্ডা দিচ্ছি। -আরশি

না আমার ভাল লাগছে না রুমে যাবো। ভাল লাগলে পরে আসবো- বলে কথা রুমে চলে গেলো

আমার মেয়েটা যে কেন এমন হয়ে গেলো বুঝি না। এক সময় যে মেয়ে পুরো চৌধুরী বাড়ি মাতিয়ে রাখতো। এখন সে রুমে থেকেই বের হতে চায় না – নীলা চৌধুরী

হুম এটা আমি ও লক্ষ্য করেছি আগে তাও ঘরে থেকে অত্যন্ত বের হতো। এখন তো প্রয়োজন ছাড়া বেরই হয়না।কখন আসে কখন যায় তাও জানিনা। – রুহি চৌধুরী

কিছু তো একটা হয়েছে কথুর। কিন্তু ও কাউকে বলছে না। আগে তো আমাকে সবকিছু বলতো। এখন আমার সাথে ও ওর কেমন জানি একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। এখন ও কারোর সাথেই কথা বলেনা।মোটামুটি যাই একটু আকটু বলে তাও আকাশের সাথেই বলো – আরশি

রূপ সবকিছু লক্ষ্য করলো। কথা সত্যি অনেক বদলে গিয়েছে। আগে যে কথা প্রতিমুহূর্ত রূপ ভাইয়া রূপ ভাইয়া করে তাকে পাগল করতো। এখন সে কথা এতদিন পর আসার পরেও এতক্ষণে তার সাথে ভালো মন্দ কোনো কথাই বলেনাই। হয়তো সত্যি কথা বদলে গিয়েছে।

রাতে ডিনার টাইমে রুহি চৌধুরী রূপকে বলে কথাকে ডেকে নিয়ে আসতে। আজকে সবাই একসাথে খাবার খাবে। রূপ ও যায় কতার রুমে। দরজায় গিয়ে নক করতেই কথা ভেতর থেকে বলে –

মা আমি খাবনা। – কথা

আমি চাচী না আমি রূপ।দরজা খুল কতা আছে – রূপ

কথা দরজা খুলে দেয়। রূপ রুমের ভিতরে চলে আসে। তারপর দরজা বন্ধ করে দেয়।কথা বলে উঠে,

কি ব্যাপার ভাইয়া কি বলবা আর দরজা কেন বন্ধ করলে? – কতা

খেতে যাবি না কেন? – রূপ

খিদে লাগেনি তাই খাবনা। তুমি এখন যাও আমি ঘুমাবো – কথা

হঠাৎই রূপ কথাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বলতে লাগে,

সমস্যা কি তোর? আসার পী থেকেই আমাকে ইগনোর করছিস। ভাল লাগছে না কিন্তু আমার – রূপ

আমাকে ছাড়ো ভাইয়া।আমাকে ধরার অধিকার কোথায় পেলে তুমি। ছাড়ো আমাকে ।- কথা

রূপ আরেকটু চেপে ধরে কথাকে আর বলে,

আমার মাথা গরম করো না। আমি একবার রেগে গেলে কিন্তু ফল ভাল হবেনা – রূপ

ভাইয়া তুমি যা মন চায় তাই কর। আর আমার রুম থেকে বেরোও – কথা

তুই এখনি নিচে যাবি আমার সাথে। নাহলে – কথার মুখের দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে বললো রূপ

নিচে থেকে রুহি চৌধুরী রূপ বলে ডাকতেই কথার কাছে থেকে সরে দাঁড়ালো রূপ। তারপর চারিদিকে তাকিয়ে কথাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

এখনি নিচে আয় তুই। নাহলে আমি আবার আসবো। তখন কোলে করে নিচে নিয়ে যাব – বলে রূপ নিচে চলে গেলো

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে