রূপকথার ম্যাজিশিয়ান পর্ব-৪+৫

0
1901

#রূপকথার_ম্যাজিশিয়ান
#লিয়ানা_লিয়া
#পর্ব_4

বিছানায় বসে একভাবে কেঁদে চলেছে লামিয়া। ধীর পায়ে তার পাশে এসে বসে সোফিয়া শিকদার। সেই কখন থেকে মেয়েটা কেঁদেই চলেছে। আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “কাঁদিস না মা।”

তার কথাতে কান্না থামে না লামিয়ার, উল্টো কান্নার বেগ আরো বৃদ্ধি পায়। কিছুক্ষণ পর এক ঝটকায় ফিরে তাকায় খালামণির দিকে। দু’হাতে নাক-মুখ মুছতে মুছতে শুধায়, “তোমার ছেলে কেন পছন্দ করে না আমাকে? কী কমতি আছে আমার মধ্যে? দেখতে খারাপ আমি? শরীরের রং খারাপ আমার?”

জিভ কাটে সোফিয়া শিকদার, “কী বলিস? তোর মতো সুন্দরী এই এলাকায় আছে নাকি আর একটা? চোখ ধাঁধানো সুন্দরী তুই।”

চিৎকার করে ওঠে লামিয়া, “তাহলে কেন আমাকে ভালোবাসে না আরজান। কেন আমার দিকে ফিরে তাকায় না?”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোফিয়া শিকদার। আফসোসের স্বরে বলে, “তুইতো জানিস ও কেমন। সবার সাথেই এমন কাঠখোট্টা ব্যবহার করে। এতো বড় হয়েছে অথচ আমি বাজি ধরে বলতে পারি ওর জীবনে কোনো মেয়ে নেই। থাকবে কিভাবে? কারোর সাথে ঠিকমতো কথায় বলেনা।”

আবার কাঁদতে শুরু করে লামিয়া। ব্যস্ত হয়ে পড়ে সোফিয়া শিকদার, “আরে কাঁদিস না, কাঁদিস না। তোর খালুর মৃত্যুর পর থেকেই ও এমন হয়ে গেছে, তুইতো সবই জানিস। ছেলেটাকে ঠিক করার তো কম চেষ্টা করিনি আমি।”

“খালুর মৃত্যু অস্বাভাবিকভাবে হয়েছিল তা আমি জানি কিন্তু আসলে কী ঘটেছিল সেইদিন? কেন আরজানের উপর এতো প্রভাব পড়েছে সেইদিনের? এতোদিন তোমার কাছে শুনতে চাইনি তুমি কষ্ট পাবে ভেবে কিন্তু আজ আমি জানতে চাই।”

গলা শুকিয়ে আসে সোফিয়া শিকদারের। চোখ থেকে ঝরে পড়ে দু’ফোঁটা নোনাজল। বড় একটা শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে, “আজ আর তোর থেকে লুকাবো না কিছু। এখন বড় হয়ে গিয়েছিস তুই, তোরও জানার অধিকার আছে।”

কথাটা বলে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে সে। লামিয়া আগ্রহের সাথে চেয়ে আছে তার দিকে। কিছুটা সময় নীরবে কেটে যাওয়ার পর পুনরায় বলতে শুরু করে,

“সেদিনের সেই কালরাত্রির কথা আজও বিন্দুমাত্র ভুলতে পারিনি আমি। গ্রামে আমার শ্বশুরের বেশ নাম ডাক তখন। গ্রামের এতো এতো টিনের ঘরের ভেতর আমার শশুরই প্রথম দালানঘর করে। ঘিয়ে রঙা পাঁচ কামরার এক দালান। কামরাগুলো ইটের, বারান্দায় মোটা মোটা কাঠের খুঁটি যাকে বলা হয় পিলার, উপরে রঙিন টিন। জমিজমা, টাকা-পয়সাও কম ছিলোনা। তোর খালু একমাত্র ছেলে হওয়ায় বাবার মৃত্যুর পর সবই সে পেয়েছিল। তোর খালু সারাক্ষণ জাদু আর আরজানকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। আরজানও হয়েছিল একদম বাবার পেছন ধরা। বাবার সাথে রোজ সাদাবিলে যাবে, জাদু শিখবে, বাবার সাথে অর্ধেক রাত পর্যন্ত গল্প করবে এই তার নিত্যদিনের কাজ। হটাৎ একদিন গ্রামে এক পরিবার এলো চার সদস্যের। স্বামী-স্ত্রী আর তাদের দুই ছেলে। তারা বড় অসহায় হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করলো। গ্রামের লোকজনের কাছে সাহায্য চাইলো কয়েকদিন থাকার মতো জায়গা চেয়ে, এরপর তারা নিজেদের ঘর করে নেবে। সকলে সরল মনে বিশ্বাস করলো তাদের। গ্রামের পঞ্চায়েত থেকে মীমাংসা হলো ঘর না হওয়া অব্দি আমাদের বাড়িতেই থাকবে তারা।
তোর খালুও মেনে নিলো একবাক্যে, সেই যেন কাল হয়ে গেল আমাদের।”

গলা ধরে এসেছে সোফিয়া শিকদারের। কথা থামিয়ে কিছুক্ষণ দম নেয় সে। লামিয়া আগ্রহের সাথে শুধায়, “তারপর কী হয়েছিল খালামণি?”

ডুকরে কেঁদে ওঠে সোফিয়া শিকদার, “তারা অসহায় মানুষ ছিলোনা বরং ভয়ঙ্কর এক ডাকাত দল ছিলো।
একদিন রাতে হটাৎ অস্ত্র দেখিয়ে বন্দী বানালো আমাদের। বারান্দায় লাগানো কাঠের মোটা মোটা খুঁটিগুলোর সাথে আমাদের বেঁধে লুটে নিলো ঘরের সবকিছু। সবকিছু নিয়ে যখন বেরিয়ে যাবে তখনই নিজের দড়ি ছিঁড়ে তাদের বাধা দিতে যায় তোর খালু। ডাকাতগুলো আমার আর আরজানের সামনেই অস্ত্র দিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিলো তার দেহ। চিৎকার করে কান্না করা ছাড়া কিছুই করার ছিলোনা আমার। চিৎকার চেঁচামেচিতে ছুটে এলো গ্রামের লোকজন কিন্তু ততক্ষণে তার শরীর নিস্তেজ হয়ে গেছে। আরজান নিজ চোখে প্রিয় বাবার মৃত্যু দেখে যেন পাথর হয়ে গেল। গ্রামের লোকজন হাজার খুঁজেও আর তাদের আর দেখা পায়নি। আমরাও গ্রাম ছেড়ে চলে এলাম শহরে। ধীরে ধীরে সবাই সবকিছু ভুলে গেলেও বদলে গেল আমার হাসি-খুশি আরজান। উল্টো-পাল্টা, আজগুবি কথাবার্তা বলে বাড়ি মাতিয়ে রাখা ছেলেটা আমার গম্ভীর হয়ে উঠলো। ঘৃণা করতে শুরু করলো নিজের গ্রামকে, গ্রামের মানুষের সরলতাকে। আমার ছেলেটা এমন গম্ভীর না রে মা। তার ব্যক্তিত্ব এতো কঠোর নয়। সে হাসতে ভালোবাসতো। সবাইকে হাসাতো কতো কী বলে।”

মুখে আঁচল চেপে অঝোরে কেঁদে চলেছে সোফিয়া শিকদার। আলতো করে তার কাঁধে হাত রাখে লামিয়া। তাকে শান্তনা দিয়ে বলে, “কেঁদোনা খালামণি।”

একহাতে কোনোরকমে চোখ মুছে নেয় সোফিয়া শিকদার। লামিয়ার দিকে চেয়ে বলে, “তুই এখন আমার একমাত্র ভরসা মা। আমার ছেলেটাকে আগের মতো করে দে।”

আচমকা শক্ত হয়ে ওঠে লামিয়ার মুখভঙ্গি। কঠোর স্বরে বলে ওঠে, “তুমি চিন্তা করো না খালামণি। আমি আবার আরজানকে একদম আগের মতো করে দেবো।”
__________________________

সকাল সকাল ফুরফুরে মেজাজে ঘুম থেকে উঠে বসেছে আরজান। জানালা খুলে দেখে বাইরে এখনো ঠিকঠাক আলো ফোটেনি। কুয়াশার চাদরে লেপ্টে আছে প্রকৃতি। অবাক হয় সে, এতো সকালে কিভাবে ঘুম ভাঙল তার?
তখনই পাশের ঘর থেকে পলাশের ব্যথাতুর গোঙানির শব্দ কানে আসতেই বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুচকে ফেলে।
মেয়েদের হাত ধরে টানাটানি করার সময় তো বেশ দাত ছত্রিশটা বের করে কেলাচ্ছিলো, আর এখন ব্যথায় কাতরাচ্ছে।

লেপের উষ্ণতা ছেড়ে বাইরে যেতে মোটেও ইচ্ছে করছে না। তবে পলাশের প্যাঁ প্যাঁ শুনতেও বিরক্ত লাগছে। হটাৎ মনে পড়ে খেজুরের রসের কথা। বাবা ছোটবেলায় ভোরবেলা রস এনে তাকে নিজ হাতে খাওয়াতো। বুক চিড়ে এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তার।

সিদ্ধান্ত নেয় আজ যখন ঘুম ভেঙেই গেছে তাহলে বরং খেজুরের রস খেয়ে আসা যাক। কিন্তু রস কোথায় পাবে এখন? কে বিক্রি করে তা তার জানা নেই। হটাৎ মনে পড়ে সাদাবিলের কথা। বিলের পাড়ের খেজুরের গাছগুলোতে মাটির হাঁড়ি বাঁধা দেখেছিল সে। সেটা অবশ্যই রস সংগ্রহের জন্যই। সে সেখানেই যাবে বলে ঠিক করে।

দ্রুত হাত-মুখ ধুয়ে নীল রঙের শার্টটা পড়ে নেয়। শার্টের ওপরে কালো জ্যাকেট জড়িয়ে মাফলারটা গলায় পেঁচিয়ে নেয়। অতঃপর মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। পলাশের ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একবার ফিরে তাকায় সেদিকে। বন্ধ দড়জার দিকে চেয়ে বাঁকা হেসে দ্রুত বেরিয়ে আসে বাড়ি থেকে।

মাঠের দিকে আসতেই নজর কাড়ে প্রকৃতির আরেক সৌন্দর্যের নাজারা। কুয়াশা পরে মাঠের ফসলগুলো ভিজে আছে। জমির আইলের উপর গজানো ছোট ছোট ঘাসগুলোতে ফোঁটা ফোঁটা পানি জমে আছে। পা ফেলতেই তা ছুটে এসে পা ভিজিয়ে দিচ্ছে। মাঠ ছেয়ে গেছে সাদা কুয়াশায়। ফাঁকা মাঠ তবুও কুয়াশার কারণে দূরের কিছু নজরে আসছেনা। এই সৌন্দর্য যেন যে কারোর মন ফুরফুরে করতে সক্ষম। তবুও নির্বিকার আরজান, খুব একটা নজর দেয় না আশেপাশে। চুপচাপ হেঁটে যায় সাদাবিলের দিকে।

কিছুদূর হাঁটতেই পৌছে যায় কাঙ্ক্ষিত স্থানে। বিলের পাড়ে উঠে দাঁড়ায় একটা খেজুর গাছের সামনে। কিন্তু এখন গাছ থেকে হাঁড়ি পারবে কিভাবে? এই চিন্তা তো আগে তার মাথায় আসেনি। নিচ থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে চেষ্টা করতে থাকে হাঁড়ি ধরার জন্য। অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পর হাঁপিয়ে ওঠে সে। তখনই শুনতে পায় সেই মধুর কন্ঠস্বর।

“ম্যাজিশিয়ান”

চকিতে ফিরে তাকায় আরজান। বিলের পানিতে আগের দিনের মতোই কোমর পর্যন্ত ডুবিয়ে ভেসে আছে মেয়েটা। আজও তাকে সেদিনের মতোই প্রাপ্তবয়স্কা কোনো নারীর মতো লাগছে। সবুজ রঙা সেই ফ্রক বদলে নতুন এক চোখ ঝলসানো রূপ ধারন করেছে। কলা পাতার রঙের ছোট্ট পোশাকটা শুধু তার বুক পর্যন্তই ঢেকে আছে। কাঁধ, গলা সবকিছুই দৃশ্যমান।আগেরদিন আলো একদম কম ছিলো বিধায় এসব নজরে আসেনি তার। চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে নেয় আরজান। পেছন দিকে ফিরে রাগান্বিত স্বরে বলে, “বিলের পানিতে নামলেই তুমি এসব ছোট-ছোট পোশাক পড়ো কেন? লজ্জা করেনা তোমার এসব পড়তে?”

মেয়েটা অবাক হয়ে নিজের দিকে তাকায়। এইটা সে খারাপ উদ্দেশ্যে পড়েছে নাকি? এমনই তো পোশাক পড়ে তারা, সবসময় তো এসব পড়েই থাকে। সে পোশাক পাবে কোথায় যে পড়বে। এগুলোই তো তাদের পোশাক। কিঞ্চিত রাগান্বিত স্বরে বলে, “আমার আর কোনো পোশাক নেই।”

“আশ্চর্য! এতো বড় মেয়ে আর তার মাত্র দুইটা পোশাক! সত্যি বলছো নাকি মিথ্যা বলছো?”

“আমি মিথ্যা কথা বলিনা, ওগুলো মানুষের স্বভাব।” মেয়েটার সোজা জবাব।

অতিশয় অবাক হয় আরজান। মেয়েটার কথাবার্তা, ব্যবহার সবকিছুই কেমন যেন আজব। তাছাড়া এই শীতের ভোরে পানির মধ্য ডুবে থাকা কোনো সাধারণ মানুষের কাজ নয়। পানির উপর ভেসে থাকা কুয়াশায় প্রমাণ দিচ্ছে পানি কতোটা ঠান্ডা অথচ মেয়েটা কী অবলীলায় ভেসে রয়েছে। আবার সবুজ ফ্রকে তাকে বাচ্চা বাচ্চা মনে হলেও পানির মাঝে তাকে প্রাপ্তবয়স্কা লাগে। এতোবড় মেয়ে নাকি ভূত কী তা জানেনা, এও কি বিশ্বাস করা যায়? তার সবকিছুই বড় অদ্ভুত।

সন্দেহের স্বরে শুধায়, “সত্যি করে বলোতো তুমি কে? এই শীতের ভোরে পানিতে কীভাবে আছো? শীত করছে না?”

উত্তর দেয় না মেয়েটা। উল্টে তাকেই শুধায়, “তুমি এখানে কেনো এসেছো ম্যাজিশিয়ান?”

চিল্লিয়ে ওঠে আরজান, “আগে আমার প্রশ্নের জবাব দাও?”

কথা ঘোরাতে চেয়েও আর ঘোরাতে পারেনা মেয়েটা। মুচকি হেসে বলে, “বলবো কোনো একদিন, তবে আজ নয়।”

আরজান কিছু বলবে তার পূর্বেই মেয়েটা বলে ওঠে, “আমার জন্য মানুষের মতো পোশাক এনে দেবে?”

বিরক্ত হয় আরজান, “তোমার জন্য কেন আমি পোশাক কিনতে যাবো?”

“চিন্তা করো না, মূল্য দিয়ে দেবো আমি। এটা নাও,,,,”

আরজানের পায়ের কাছে একটা চকচকে কিছু গড়িয়ে পরে। এটা যে মেয়েটা ছুড়ে দিয়েছে তা বুঝতে পেরেছে সে। কৌতূহলী হয়ে চকচকে জিনিসটা হাতে তুলতেই চমকে ওঠে সে। এটা তো মুক্তা!

আশ্চর্য স্বরে শুধায়, “তুমি এটা কোথায় পেলে?”

“আমার কাছে এরকম আরো অনেক আছে।”

এসব নিয়ে আর ভাবে না আরজান। পেয়েছে হয়তো কোথাও কোনো জুয়েলারির দোকানে। মুক্তাটা নিচে রেখে বলে, “এসব লাগবে না। একটু পরে দোকান খুল্লে বাজার থেকে পোশাক এনে দেবো আমি।”

মেয়েটা মুচকি হেসে শুধায়, “মূল্য নেবে না?”

“না, কিন্তু একটা শর্ত আছে আমার।”

“কি শর্ত? আমি কে তা পরে বলবো বললাম তো।”

“তুমি সবচেয়ে বেশি ভয় পাও কী দেখে?” শুধায় আরজান। সে আসলে বুঝতে চাইছে এতোবড় মেয়ে কেন ভূত চেনে না।

“মানুষ আর হাঙ্গর।”

এমন উত্তরে বিরক্ত হয় আরজান। রাগান্বিত স্বরে শুধায়, “হাঙ্গরের সাথে এক কামরায় থাকো নাকি তুমি যে হাঙ্গর ভয় পাও? অবশ্য মানুষকে ভয় পাওয়ার কারন আছে বটে। তবে তোমাকে কি তোমার মা-বাবা কেও ভূতের ভয় দেখায়নি ছোটবেলায়?”

আচমকা মনটা যেন খারাপ হয়ে যায় মেয়েটার। সে ধরা গলায় বলে, “আমার কেও নেই। আমি কাল প্রথম ঐ মানুষগুলোর মুখে এটার নাম শুনেছিলাম। তোমার কাছে জানতে চাইলাম, তুমি তো রাগ দেখালে।”

বাবা-মা নেই শুনে কিছুটা নরম হয়ে আসে আরজান। কথা বদলাতে বলে ওঠে, “খেজুরের রস খেতে এসেছিলাম এখানে, তা তো হলোই না। আর থেকে কী হবে? চললাম আমি।”

যাওয়ার জন্য দু’পা এগোতেই ভেসে আসে আকুতি ভরা কন্ঠ, “আর একটু থাকো না ম্যাজিশিয়ান?”

চলবে,,,,,

#রূপকথার_ম্যাজিশিয়ান
#লিয়ানা_লিয়া
#পর্ব_5

শীতের সকালের মিষ্টি রোদের আলোয় ঝলমল করছে সাদাবিল। ঠান্ডার তীব্রতা পূর্বের তুলনায় কিছুটা কমে এসেছে। খেজুরের রসের হাঁড়িটা হাতে ধরে দাঁড়িয়ে আছে আরজান। মেয়েটার বুদ্ধিমতো আকারে সবচেয়ে ছোট গাছটা থেকে হাঁড়ির কিছুটা নিচে আড়াআড়িভাবে লাগানো বাঁশের ওপর দাঁড়িয়ে হাঁড়ি নামিয়েছে সে। বাঁশটা লাগানো হয় রস পাড়ার সময় ওটার ওপর দাঁড়িয়ে নিজের ভারসাম্য ঠিক রাখতে।
হাঁড়িতে মুখ লাগাতে গিয়ে আবার কী ভেবে থেমে যায়।
মেয়েটার উদ্দেশ্যে বলে, “তুমি পানির নিচে যাও, শুধু মাথাটুকু বের করে রাখবে।”

সম্মতি জানায় মেয়েটা। গলার উপর পর্যন্ত পানিতে ডুবিয়ে মাথা বাইরে রেখে বলে, “এবার দেখো তো ঠিক আছে কি-না?”

আস্তে ধীরে ফিরে তাকায় আরজান। মেয়েটার দিকে চেয়ে দেখতে পায় সে থুতনি পর্যন্ত ডুবিয়ে নিয়েছে। সস্তির শ্বাস ছেড়ে বলে, “হ্যাঁ, এবার ঠিক আছে।”

বিলের পাড়ে হাঁড়ি রেখে গলা থেকে মাফলারটা খুলে নেয়। সেটা মাটিতে ঘাসের ওপর বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসে পড়ে। কুয়াশা মিলিয়ে গেলেও ঘাসগুলো এখনো ভিজে রয়েছে তাই এই ব্যবস্থা। জ্যাকেটটা খুলে কোলের উপর রেখে দ্রুত হাঁড়িটা তুলে নেয়। কত বছর পর আবার টাটকা খেজুরের রসের স্বাদ পাবে ভাবতেই যেন মনটা শান্ত হয়ে যায়। এক ঢোকে বেশ অনেকটা রস খেয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখে সে তার দিকেই চেয়ে আছে। সে হাঁড়ি দেখিয়ে শুধায়, “রস খাবে?”

ডানে-বামে মাথা নাড়ায় মেয়েটা, যার অর্থ সে খাবে না।
আবারো শুধায় আরজান, “আগে খেয়েছো কোনোদিন?”

আবারো মাথা নাড়ায় সে। কথা না বলে বারবার মাথা নাড়াতে বিরক্ত হয়ে যায় আরজান। রাগান্বিত স্বরে বলে, “এই মেয়ে, তুমি কথা বলতে পারো না?”

“আমি এসব খাই না।”

আর সাধে না আরজান। না খেলে নাই, তার কী?
পুরোটা খেয়ে নিয়ে হাঁড়ি রেখে আবার বলে, “তোমার নামটা কী? বারবার তো এই মেয়ে, এই মেয়ে বলে তো আর ডাকা যায় না।”

ভ্রু কুচকায় মেয়েটা, “নাম? আমার কোনো নাম নেই।”

এবার যেন আশ্চর্যের চরম শেখরে পৌঁছে যায় আরজান। হতবিহ্বল হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে সে। অবাক স্বরে শুধায়, “ঠাট্টা করছো? এতোবড় মেয়ের নাম নেই?”

“না নেই, তো আমি কী করবো?” তার স্বাভাবিক উত্তর।

আরজান পুনরায় হতবাক স্বরে শুধায়, “তাহলে আমি তোমাকে কী বলে ডাকবো?”

উত্তর দেয় না মেয়েটা। আরজান কিছুক্ষণ ভেবে বলে ওঠে, “রূপকথা, হ্যাঁ তোমাকে আমি রূপকথা বলেই ডাকবো। তুমি অনেকটা রূপকথার গল্পের সেই জলরূপসীর মতোই। যখনই দেখি তখনই জলের মধ্যে ডুবে থাকো।”

অবাক হয় মেয়েটা। ভ্রু উচিয়ে শুধায়, “জলরূপসী?”

“হ্যাঁ, রূপকথার গল্পে জলের মাঝে থাকতো যে রূপসী।”

“কিন্তু আমিতো রূপসী নই। দেখো না কেমন চাপা রং আমার। রূপসী বলে মানবে কেউ এই শ্যামবর্ণের মেয়েকে? উঁহু, কখনোই মানবেনা। রূপসী হয় সাদা ধবধবে রঙের।” খানিকটা কাতর স্বরেই বলে মেয়েটা। তার চোখে-মুখে স্পষ্ট এক হাহাকার ফুটে উঠেছে।

“কে বলেছে সাদা রঙের মেয়েরাই কেবল রূপসী হয়? রূপসী হতে সাদা বর্ণের প্রয়োজন হয় না। শ্যামবর্ণের মায়াভরা মুখশ্রীর মাঝেই তো বাস করে আসল রূপসী। তুমি দেখি কিছুই জানোনা!” নিজের অজান্তেই কথাটা বলে ওঠে আরজান। মেয়েটা অবাক নয়নে তার দিকেই চেয়ে আছে। কি বলেছে তা স্মরণে আসতেই নিজের প্রতি প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে ওঠে আরজান। তার মাথাতে এটাই আসছেনা যে, সে এতো কথা বলতে কবে থেকে শুরু করলো!

মেয়েটার দিকে চেয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে, “চললাম আমি।”

তাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে একহাতে মাফলার আর জ্যাকেটটা নিয়ে গটগট করে হাঁটা ধরে জমির আইল দিয়ে। এখানে বসে বসে এর সাথে বকবক করার কোনো মানেই হয় না। শুধু শুধু সময় নষ্ট। হনহন করে বাড়িতে প্রবেশ করেই নজর পড়ে পলাশের উপর। বারান্দায় রাখা কাঠের বেঞ্চটার উপর তাকে বসিয়ে গরম পানির সেঁক দিচ্ছে রোজিনা বেগম। ব্যথায় চোখদুটো খিচে বন্ধ করে রয়েছে পলাশ। তার আসার শব্দ পেয়ে ঘুরে তাকায় রোজিনা বেগম। তাকে দেখে নরম স্বরে বলে, “আইছো বাপ? তোমার খাওন বাইড়া রাখছি, ঘরে গিয়া খাইয়া নাও।”

মাথা নেড়ে ঘরে চলে যায় আরজান। দ্রুত খাওয়া-দাওয়া করে বেরিয়ে পড়ে বাজারের উদ্দেশ্যে। চেয়ারম্যানের বাড়ির কাছের রাস্তা থেকে ভ্যান ডেকে উঠে পড়ে তাতে। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর ভ্যানচালক বলে ওঠে, “আপনে মিজিশিয়ান না?”

“হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি চলো।” থমথমে গলায় উত্তর দেয় আরজান।

আর কিছু বলেনা ভ্যানচালক। ভ্যান থেকে নেমে ভাড়া দিতে গেলে নাকচ করে দেয় ভ্যানচালক। লজ্জা মিশ্রিত ভঙ্গিতে বলে, “আপনে হইলো আমাগো গেরামের কুটুম। আপনেরে আনবার পারছি এতেই ম্যালা খুশি আমি, ট্যাকা লাগবোনা।”

না চাইতেও মুচকি হাসে আরজান। এরা যে বড় ভালো মানুষ! তা কী করে অগ্রাহ্য করবে সে? জোর করে তার হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে দোকানপাটের দিকে এগিয়ে যায়। কাপড়ের দোকান খুজে পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না তার। দোকানে ঢুকতেই দোকানি তাড়াহুড়ো করে টুল পেতে দেয়। দোকানি নিজের ফোকলা দাঁতে হেসে বলে, “কী লাগবো সাহেব? লুঙ্গি দেখামু? আমার দোকানে ভালা ভালা লুঙ্গি আছে।”

দ্বিধায় পড়ে যায় আরজান, এবার কী বলবে? কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বলে, “মেয়েদের পোশাক দেখান।”

আবারো হাসে দোকানি। শুধায়, “বউয়ের লিগা নিবার আইছেন?”

কিঞ্চিত বিরক্ত হয় আরজান। বিড়বিড়িয়ে বলে, “এই লোকের এতো বকবক করতে কে বলেছে? যা কিনতে এসেছি চুপচাপ তা না দেখিয়ে বকবক করে যাচ্ছে।”

সে বেশ গম্ভীর স্বরে উত্তর দেয়, “আপনি পোশাক দেখান।”

দোকানি শাড়ির তাক থেকে শাড়ি নামাতে গেলেই চিল্লিয়ে ওঠে আরজান, “আরে শাড়ি বাদে অন্য পোশাক দেখান।”

হঠাৎ এমন চিল্লিয়ে ওঠাতে চমকে যায় দোকানি। দ্রুত হাতে থাকা শাড়িটা জায়গামতো রেখে অন্য পোশাক বের করে। কাপড়গুলো নেড়েচেড়ে দেখে চোখমুখ কুঁচকে ফেলে আরজান। ওগুলো রেখে বলে ওঠে, “বানিয়ে নেওয়ার সময় নেই রেডিমেড কিছু দেখান।”

তড়িঘড়ি করে দোকানি রেডিমেড কিছু জামাকাপড় নামিয়ে দেখায়। ধূসর রঙের পোশাকটা এক দেখাতেই বেশ ভালো লেগে যায় আরজানের। ওটা পাশে আলাদা করে রেখে আবারো বাছাই করতে থাকে। তখনই দোকানে আরো দু’জন ক্রেতা আসে, দু’জনেই পুরুষ। ঝুলিয়ে রাখা লুঙ্গিগুলো দেখতে দেখতে একজন বলে ওঠে, “রহমত আলীর বাড়িত কাইল রাইতে ডাকাত আইয়া সব নিয়া গেছে। বেচারা মাটিত গড়াগড়ি খাইয়া কানতাছে।”

অপরজন আফসোস করে বলে ওঠে, “দশটা বছর ধইরা এইতো সহ্য করতাছি আমরা। কই আর কোনো গেরামে তো ডাকাত যাই না। আমাগো গেরামের চেয়ারম্যান, মেম্বাররা তো ঘুমাইয়া কাটায়। তাগো আর কী? ট্যাকা, গইনা তো সব আমাগো যাচ্ছে।”

“হ, কতাখান খারাপ কইছ নাই। আশপাশের আর চার’ডা গেরাম দেখ, কত শান্তি তাগো। আর আমাগো রোজ রাইতে ডরাইয়া ডরাইয়া কাটাইতে হয়, এই বুঝি ডাকাত আইলো!” কিছুটা দুঃখ মেশানো কন্ঠে বলে লোকটা।

দোকানি লোকটা ধমকের স্বরে বলে, “এইসব অলক্ষুনে কতা আমার দোকানে কইতে আইছো ক্যান? শান্তিতে দোকানডা চালাইয়া খাইতে দাও তো। যাও তো মিয়া, যাও তোমরা।”

তাদের মধ্যে একজন ক্ষেপে ওঠে, “কেডা শুনতাছে আমাগো কতা? আর তোমার এই ন্যাকড়ার দোকানে ডাকাত আইবোনা। শিকদার বাড়িত ডাকাতি হইয়া সেই যে শুরু হইলো তারপর কত রক্তারক্তি, চুরি-ডাকাতি সব পয়সাওয়ালাগো বাড়িত। আমরা দুই ট্যাঁকার দিনমজুর, আমাগো বাড়িত কেডা আইবো?”

এতক্ষণ চুপচাপ তাদের কথা শুনছিল আরজান। হটাৎ শিকদার বাড়ির ডাকাতির কথা শুনে নড়েচড়ে বসে সে। বুকে চাপা ব্যথাগুলো যেন ঠিকরে বেরোতে চাইছে। সেই কালরাত্রির কথা কেন মনে রেখেছে এরা?

অপরজন বলে, “থাম তো, ম্যালা কাম পইড়া আছে। ডাকাত নিয়া যত কম কতা কবি ততই ভালা। আমাগো তো আর ট্যাকা-পয়সা নাই যে শহরে চইলা যামু। এই গেরামেই থাকন লাগবো আমাগো তাই এতো কতা কইয়া নিজেগো বিপদ বাড়াইয়া আর কাম নাই।”

“হ, চল। আইজ মাঠে ম্যালা কাম।”

নিজেদের মধ্যে ফিসফিসিয়ে কিছু বলতে বলতে তারা বেরিয়ে যায় দোকান থেকে। দোকানি হাঁফ ছেড়ে তার দিকে চেয়ে বলে, “আপনের কোনডা ভালা লাগছে সাহেব?”

হুঁশ ফেরে আরজানের। পাশে সরিয়ে রাখা ধূসর রঙের পোশাকটা দেখিয়ে বলে, “এটা প্যাকেট করে দিন। সাথে এরকম আরো একটা দিয়ে দেন।”

“আমি পছন্দ কইরা দিমু?” কথাটা বলে হাঁ করে তাকায় দোকানি।

বিরক্ত হয় আরজান। বিড়বিড়িয়ে বলে, “এভাবে চেয়ে থাকার কি আছে? আহাম্মক কোথাকার!”

“কিছু কইলেন সাহেব?” শুধায় দোকানি।

উত্তর দেয় না মেয়েটা আরজান। কাঁচা হলুদ রঙের একটা পোশাক হাতে নিয়ে বলে, “নিন এইটাও প্যাকেট করেন আর দাম বলেন।”

টাকা পরিশোধ করে পোশাকের ব্যাগ হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসে আরজান। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে থাকে, “কী চলছে এই গ্রামে? এতো ডাকাতি একটা এলাকায় কিভাবে হতে পারে? এখানকার চেয়ারম্যান, মেম্বাররা করে টা কী?”

কিছুক্ষণ পর হটাৎ তার মনে পড়ে চেয়ারম্যানের বাড়ির কথা। তারা তো নিতান্তই কম টাকা-পয়সার মালিক নয় তবুও তাদের চোখে সে কোনোদিন ভয় দেখেনি। আর না তো ডাকাতির বিষয়ে কোনো কথা বলতে শুনেছে।
এমন কেন হবে? ডাকাতের ভয় তো তাদেরই বেশি পাওয়ার কথা!

ভাবনার মাঝেই ভ্যান এসে দাঁড়ায় তার সামনে। ভ্যানচালক উচ্চস্বরে শুধায়, “যাইবেন নাকি?”

“চেয়ারম্যানের বাড়িতে যাবো, যাবে?”

“হ, ওঠেন।”

ভ্যানে উঠে বসেও তার ভাবনার যেন কোনো সুরহা হয় না। গলা খাকারি দিয়ে ভ্যানচালকের উদ্দেশ্যে বলে, “কাল কার বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে বলতে পারো?”

চমকে ওঠে ভ্যানচালক। দ্রুত ভ্যান থামিয়ে বলে, “আস্তে কন সাহেব। শুনবার পারলে আর রক্ষে নাই।”

“কে শুনবে?” অবাক হয়ে শুধায় আরজান।

“তারা গেরামের লোকের সাথে মিশে গেছে। রাইতে আইলে মুখের মধ্যে গামছা প্যাচাইয়া রাখে, কেউ দেখেনাই তাগো।” ফিসফিসিয়ে বলে ভ্যানচালক।

এবার বুঝে আসে সবার নীরবতার কারন। মাঠের সামনাসামনি ভ্যান আসতেই আরজান নেমে পড়ে। ভাড়া দিয়ে বাড়ির ভেতরে না গিয়ে বিলের দিকে হাঁটতে শুরু করে। পোশাকগুলো আগে দিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সেই মেয়ে কি এখনো বিলের পানিতে আছে? নাকি চলে গেছে?

মাঠের মাঝে কৃষকরা সারি সারিভাবে কাজ করছে। পড়নে লুঙ্গি, শরীরে হালকা-পাতলা ফতুয়া বা ছিঁড়ে যাওয়া শার্ট পড়ে তারা কাজে ব্যস্ত। কারোর বা মাথায় প্যাচানো গামছা আবার কারোর কোমরে বেঁধে রাখা। কাজ করতে করতে ঘেমে উঠেছে তাদের শরীর তবুও তারা কেমন নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।

বিলের পাড়ে এসে পানিতে নজর দিয়ে মেয়েটাকে দেখতে না পেয়ে হতাশার শ্বাস ফেলে আরজান। বিলের পানি একদম নিরব মানে মেয়েটা অনেক আগেই চলে গেছে। যাবেই তো, এতোসময় কেই বা থাকে পানিতে?
তারই ভুল, এ সময় আসা তার মোটেও উচিত হয়নি। মেলার মাঠে তো সে আসতোই বিকেলে। শুধু শুধু সময় নষ্ট!

কিছুক্ষণ পানির দিকে চেয়ে থেকে ফিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। আবার কী ভেবে গলা উচিয়ে ডেকে ওঠে, “রূপকথা, আছো তুমি?”

তখনই তাকে চমকে দিয়ে পানির নীরবতা কাটিয়ে ঢেউ উঠতে শুরু করে। পানির কলকল শব্দ পেয়ে সেদিকে তাকাতেই চোখ যেন কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার জোগার। মেয়েটা গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে দিব্যি বিলের মাঝে ভেসে আছে। কিন্তু এতক্ষণ তো কেউ ছিলোনা পানিতে। পানি একদম স্বাভাবিক ছিল। মেয়েটা কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে শুধায়, “তুমি এসেছো ম্যাজিশিয়ান?”

“তুমি কোথা থেকে আসলে?” শুধায় আরজান।

“আমিতো এখানেই থাকি।”

ধমকে ওঠে আরজান, “মস্করা করছো? পানির নিচে কোনো মানুষ থাকতে পারে?”

“আমি মানুষ তা তোমাকে কে বললো?” হেঁয়ালি স্বরে শুধায় মেয়েটা।

ভ্রু কুচকে তাকায় আরজান, “তাহলে?”

চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে