#পর্ব_৫
গল্পঃ #রুপের_তরী??
writer: #Ashura_Akter_Anu
………
সাদা বিছানার চাদরে রক্তের দাগটা স্পষ্ট।তরী নিজের জায়গায় বসে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সেদিকে৷ ওর বুঝতে বাকি নেই দাগটা কিসের। হয়ত এমন কিছু জন্যই মাথা ব্যাথা করছে ওর।।
এই মূহুর্তে এতটা লজ্জা লাগছে তরীর যা বলে বোঝানো যাবে না। দরজার সামনেই দাড়িয়ে আছে রূপ। রূপ অবশ্য চোখ নামিয়ে রেখেছে। তরী একবার রূপের দিকে তাকালো৷ চোখে চোখ পড়তেই রূপ তাড়াতাড়ি করে রুমের দরজাটা লাগিয়ে চলে গেল।
নিজের এমন অবস্থার জন্য এই মূহুর্তে তরীর কোনরকম প্রস্তুতি নেই। কারন এ বাড়িতে আসার আগে নিজের সমস্ত জিনিসপত্র সেভাবে গোছায়নি সে।।
বেডশিটের ওপর ব্লাড দেখলেই গায়ে কেমন কাটা দিয়ে উঠছে। কোন কিছু চিন্তা না করেই বিছানা থেকে নেমে একটানে বেডশীট টা নিয়ে দৌড়ে বাথরুমে চলে যায়।
বেডশীটটা কাচতে কাচতে এক পর্যায়ে তরী নিজেই ভিজে যায়। তাই একই সাথে গোসলটাও সেরে ফেলে।তবে এবার সে পড়ল আসল ঝামেলায়। তড়িঘড়িতে জামাকাপড় বা শাড়ী নিয়ে আসতেই ভুলে গেছে সে। এবার উপায়?
‘আচ্ছা উনি তো এখন রুমে নেই, তাহলে তোয়ালে টা পেচিয়ে আমিই কাপড়চোপড় নিয়ে আসি। ‘
মনে মনে ফন্দি আটে তরী। ওর যা ভাবা তাই কাজ। গায়ে টাওয়ালটা পেচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আলমারির সামনে এসে দাড়ায় সে।
কিন্ত কি আর করার,মুখোমুখি তো হতেই হবে পদের দুজনকে তাইনা?
স্যানিটারি ন্যাপকিন এর প্যাকেট হাতে দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করে রূপ।রুমে ঢোকার পর তরীকে অমন অবস্থায় দেখে চিতকার দেয়।
তরীও রূপকে খেয়াল করার পর জোড়ে চিতকার দেয়৷
এরপর ন্যাপকিন এর প্যাকেট টা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে নিজের রুম থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে রূপ। লাইফে ফার্স্ট টাইম ওর সাথে এমন কোন ঘটনা ঘটল।
তরী আলমারীর সামনে একদম স্ট্যাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে। কাল থেকে ওর সাথে কি সব আজব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে৷ তবে আজ তো। তরীর ইচ্ছে করছে ব্যালকনি থেকে ঝাপ দিতে। কিন্তু পরনে তোয়ালে থাকায় সেটাও পারল না।
..
রূপের এ কাজটা তরীর খুবই ভালোলেগেছে।হয়ত রূপও জানত ওর এমন কিছুর প্রস্তুতি নেই এই মূহুর্তে। তাই হয়ত সঙ্গে সঙ্গে ন্যাপকিন নিয়ে এলেন।একটা মুচকি হেসে, ফ্লোরে পড়ে থাকা ন্যাপকিনের প্যাকেটটি হাতে তুলে জামাকাপড় নিয়ে আবারও বাথরুমে চলে যায় সে।
…….
রুমের বাইরে প্রায় অনেক্ষন দাড়িয়ে আছে রূপ।ভেতরে ঢুকতে এখন অনেকটা লজ্জা করছে ওর। যাই হোক এমন কিছু হবে সে ভাবতে পারেনি। রুমে যাবে যাবে করেও যাচ্ছেনা। কিন্তু রূপ একটা কথা চিন্তা করল,যা হবার হয়েছে,আমারই তো বউ, এতে সমস্যা কোথায়?।।এটা ভেবেই দরজার লক এর দিকে হাত বাড়ায়৷ অমনি ভেতর থেকে কেউ একজন দরজাটা খুলে দেয়।
নীল রংয়ের থ্রি পিচ ও সাদা ওরনাটি মাথায় জড়ানো।চোখে মুখে বিন্দু বিন্দু জলের ফোটা লেগে আছে, যে কারনে তরীর চেহারাটা আরও আকর্ষণীয় ও নেশা ধরানো লাগছে। রূপ মলিন চেহারায় তরীকে দেখে যাচ্ছে। নামটা ও ভুল দেয়নি তরীকে। আসলেই এ হলো এক #রূপের তরী।আজ পর্যন্ত কল্পনার জগতে ভেবে আসা সকল পরীদের রানী এই তরী।
হাতের তুড়ি বাজানোয় রূপ ভাবনার জগত থেকে বাস্তব জগতে ফেরে রূপ।
–ধন্যবাদ আপনাকে।
রূপ কিছুটা কপাল কুচকে তরীকে বলল,
— ধন্যবাদ?
–আমার সমস্যাটা বোঝার জন্য।
–তো এতে ধন্যবাদ দেয়ার কি আছে হুম?(ভ্রু নাচিয়ে) আমি এমনিতেও এমন সব ছোট ছোট কাজ করে থাকি(কোমরে হাত রেখে বুক ফুলিয়ে বলল রূপ)
তরী হেসে দিল।এ কি হৃদয় জুড়ানো হাসি। তরীর হাসি দেখে রূপের পালস রেট বেড়ে যাচ্ছিল৷ এতটা সুন্দর করেও যে কেউ হাসতে পারে তা তরীকে দেখলে বুঝতোই না সে।
–আচ্ছা হয়েছে,।আর শুনুন।এভাবে হাসবেন না প্লিজ।
করুন ভাবে তরীকে বলল রূপ। তরী ঠোট উল্টে চোখ গোল গোল ঘুরিয়ে বলল,
–কেন?হাসলে কি আপনার কানের সমস্যা হবে?(বাকা হেসে)
রূপ মনে মনে উত্তর দিল,
–তুমি কি করে বুঝবে আমার রূপের তরী, ওভাবে হাসলে যে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে। এরপরের বার মরেও যেতে পারি।
বুকের বা পাশে হাত রেখে কথাগুলো মনে মনে বলছিল রূপ। তরীর কন্ঠে আবারও চোখ মেলে তাকায়,
–আপনি কি এখানেই দাড়িয়ে ছিলেন?
–হুম
–কিহ্?
–না মানে,মাত্রই তো আসলাম। আমি তো নিচে ছিলাম।
–সত্যি তো?
–তো আপনার কি মনে হয় আমি আপনাকে আবার টাওয়ালে মোড়ানো দেখতে দাড়িয়ে থাকবো?
তরীর দিকে কিছুটা ঝুকে দুষ্টু হেসে কথাটি বলে রূপ। তরী খানিকটা লজ্জাও পায়। কারন মনে মনে ও এটাই ভাবছিল।
রূপ ওকে পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকে পড়ে। আলমারি থেকে কাপড়চোপড় বের করে বিছানায় রাখতে রাখতে বলে,
–আমি একটু পর বেরবো।ফিরতে রাত হতে পারে। আপনার একা থাকতে কোন সমস্যা হলে আন্টিকে ডেকে নেবেন।
–আচ্ছা।
–আপনার যদি কিছু দরকার হয় আমায় বলে দেবেন।আমি আসার সময় নিয়ে আসবো।
তরী মুখ ফসকে বলে দেয়,
–এখানে ফুচকা পাওয়া গেলে ফুচকা নিয়ে আসবেন।
বলার পর পরই জিহ্বায় কামড় দেয় সে। মনে মনে ভাবে,ধুর কি বলে ফেললাম। এখন তো আমায় খাদক ভাববে।
তরীর কথায় সে হেসে দেয়। মেয়েটা যতটা পাগলী ততটাই বোকা আর খুবই কিউট। এতটা কিউট যেন সুন্দর কোন নিস্পাপ শিশুদের মত। এরপর আর দেরি না করে টাওয়াল টা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় রূপ। গোসল শেষে প্রতিদিনের মতই টাওয়াল পেচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে রূপ। বিছানার ওপর বসে নখ কাটছিল তরী। রূপকে ওভাবে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে চোখ বন্ধ করে নেয় সে। উন্মুক্ত ফর্সা বুক ও পিঠে দেখতে দারুন লাগছে রূপকে। তরীর চোখ বন্ধ করা দেখে রূপ হেসে দেয়।
–এই যে রুপের তরী? চোখ বন্ধ করলেন যে?
–মানে টা কি হ্যা?আপনি এভাবে আমার সামনে আসবেন আর আমি চোখ খুলে আপনাকে দেখব?।
–তো সমস্যা কোথায়? আমি তো আর অন্য কেউ নই তাইনা?
–আচ্ছা আপনার কি লজ্জা লাগছে না? এভাবে আমার সামনে দাড়িয়ে আছেন?
–লজ্জা লাগবে কেন?আপনি তো আর অন্য মেয়ে নন। আপনি তো আমার বউ। তো লজ্জা কোত্থেকে আসবে?
–ইশশ,আমারই এখানে থাকা ভুল হয়েছে। আপনি জামাকাপড় পড়ুন।আমি গেলাম।
চোখ বন্ধ করেই দরজার বাইরে দৌড় দেয় তরী৷
রূপ ওকে দেখে হেসে বাচেনা।
…….
হসপিটালে আজ চাপ একটু কম। অন্যান্যদিনের মত আজকে তেমন কোন ক্রিটিক্যাল পেশেন্ট আসে নি।
ওয়ার্ডে গিয়ে আগের পেশেন্টদের ফাইলগুলো দেখছিল রূপ। ইন্টার্নি করলেও ওর চিকিৎসা দেখে মনে হবে কত্ত অভিজ্ঞ ডাক্তার। তাই তো বড় বড় ডাক্তাররা সার্জারী বা বড় কোন অপারেশন করতে গেলে রূপকে সাথে রেখে কাজ করেন। হসপিটাল বা পেশেন্ট সংক্রান্ত কোন বিষয় হলে রূপের অন্য কোনদিকে খেয়াল থাকে না।
ফাইলগুলো দেখার মাঝে এতটাই বিভোর ছিল যে পেছন থেকে একজন ডেকে যাচ্ছে তা টেরই পায়নি সে।
ওয়ার্ডের দরজার পাশে গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে মৃধা।মৃধা বলা চলে রূপের বেস্ট ফ্রেন্ড। ওরা দুজনে মেডিকেল কোর্স একসাথে কমপ্লিট করেছে। এখন পর্যন্ত একসাথে আছে দুজনে। এমন বন্ধুত্ব আজকাল খুব কমই দেখা যাবে। তবে রূপের বিয়ের ব্যাপারটা এখনো জানেনা সে। কারন তড়িঘড়িতে বিষয়টা বলা ওঠা হয়নি।
এত ডাকার পরও যখন উত্তর নিলনা তখন পেছন থেকে এসে মাথায় একটা বারি মেরে দিল মৃধা।রূপ জানে যে এটা মৃধার কাজ, তাই পেছনে না ফিরে ফাইল দেখায় মন দিল সে।
–ওই তুই সবসময় কাজ নিয়ে এত বিজি থাকিস কেন বলতো?
–তোর অত শুনতে হবে না,যা গিয়ে কাজ কর।
–ধুর, সবসময় কাজ করতে ভালোলাগে?
–হুম, তোর এই আলসেমির জন্যই তো রোগীদের বারোটা বেজে যায়।
–(জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলে),আচ্ছা, বাদ দে। তোর কাজ শেষ?
–হুহ,এইতো এই ফাইলটাই দেখা বাকি আছে।
লাস্ট ফাইলটি দেখা হয়ে গেলে মৃধাকে বলে,
–এবার বল?
–চল ক্যান্টিনে যাই।
–ওহ,চল তোকেও কিছু বলবো। কালই বলতাম কিন্তু খেয়াল ছিল না। (চিন্তিত মু
দুজনে মিলে ক্যান্টিনে চলে যায়।মৃধা ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে,
–হ্যা রে কি এমন বলতে চাইলি?নাকি না জানিয়ে বিয়ে টিয়ে করে ফেললি?
কথাটি বলে হাসতে থাকে মৃধা। রূপ কিছুটা ঘাবড়ে আছে। কারন এ কথ যদি মৃধা যানে তো ওকে একেবারে মেরে কিমা বানিয়ে দেবে। ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,
–কাল আমি বিয়ে করেছি।
মৃধা কথাটি শুবে আরও জোরে জোরে হাসতে থাকে। ওকে দেখে মনে হচ্ছ রূপ যেন একটা মজার জোকস শোনালো ওকে। হাসিটা কন্ট্রোল করার চেস্টা করে মৃধা বলে,
–হ্যা রে তাই নাকি?আমিও তো কাল হানিমুন থেকে ফিরেছি।
আবারও হাসতে থাকে সে।এরপর রূপ ওকে একটা ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। এবং পুরো ঘটনা খুলে বলে৷ মৃধা মনোযোগ দিয়ে শোনার পর রূপের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়। নিজের চেয়ার ছেড়ে রূপের পিঠে দুমদাম করে কিল দিতে থাকে। ওকে না জানিয়ে বিয়ের ফল পাচ্ছে হয়ত রূপ।
এরপর বিয়ের ট্রিট হিসেবে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে একগাদা খাবার অর্ডার করে তবেই শান্ত হয়।
…
বাড়ির পথে আসার সময় রূপের মনে পড়ে তরী ফুচকার কথা বলেছিল।তাই একটা ফুচকার দোকান দেখে গাড়ি থামিয়ে ফুচকা কিনতে যায়। মোবাইলটা গাড়িতেই রেখে যায়।
এদিকে রূপের মোবাইলে বারবার কল এসেই যাচ্ছে। ফুচকা কিনে গাড়িতে ঢোকার পর দেখে ফোন বাজছে। ফোনটা ধরার পর ওপাশের ব্যাক্তিটির কথা শুনে রূপের মুখটা এমন হয়ে যায় যেন কেউ ওর জীবন কেড়ে নিতে চেয়েছে।
তড়িঘড়ি করে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেড়িয়ে পড়ে সে……..।
.
.
.
#চলবে___