রিভেঞ্জ পর্বঃ ০৬
– আবির খান
তনু বিষন্ন মন নিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে বাইকে বসে ছিলো। হঠাৎই নেহাল বাইকে ব্রেক করলো। তনু কেঁপে উঠে। তনু আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সে তার বাসার সামনে না সেদিনের সেই জায়গাটায়।
তনুঃ আমরা এখানে কেনো?? অবাক হয়ে।
নেহালঃ আসলাম ঘুরতে। আর ম্যাম আপনার ভার্সিটি এখনো শেষ হয়নি। এখন বাসায় গেলে আপনার চাচি সন্দেহ করবে না হুম?? মজার স্বরে।
তনুঃ হুম। আস্তে করে।
নেহালঃ আচ্ছা কি হয়েছে বলোতো?? তোমার মনটা খারাপ কেনো??
তনুঃ কোথায়?? আমার মন ভালোই আছে।
নেহালঃ নাহহ। আমার গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনার পরই তোমার মনটা দেখলাম খারাপ হয়ে গেলো।
তনুঃ মোটেও না। আমি ঠিকই আছি।
নেহালঃ আচ্ছা চলো তাহলে আমার পছন্দের জায়গাটায় যাই।
নেহাল আর তনু হাঁটছে।
তনুঃ আপনার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে এখানে কতবার এসেছেন??
নেহালঃ আজকে নিয়ে ২ বার।
তনুঃ আজকে!!!! কখন আনলেন??অবাক হয়ে।
নেহালঃ বলবো না ম্যাজিক। হাহা।
তনুঃ উনি কি বলছেন বুঝতেই পারছি না। আজকে কখন আনলো আমিতো দেখিনি। নাকি খুব সকালে?? হয়তো।
তনুর মনটা অনেক খারাপ হয়ে যায় আবার। নেহাল তা আড় চোখে দেখছে আর মজা পাচ্ছে।
নেহালঃ একটা গিফট দেওয়ার আগে একটু মজা না করলে চলে। বাচ্চা মেয়ে একটা। কিচ্ছু বুঝে না। মনে মনে।
ওরা নেহালের সেই পছন্দের জায়গাটায় পৌঁছে যায়। তনুর কেনো যেন এখানে আসলেই মনটা অনেক ভালো হয়ে যায়। সামনে স্বচ্ছ পানির প্রবাহ, মিষ্টি বাতাস, গাছের বিশাল ছায়া। সব মিলিয়ে অনেক ভালো লাগে তনুর এই জায়গাটা।
নেহালঃ চলো নদীর পাড়টার কাছে যাই।
নেহালের কথা মতো তনু ওর সাথে নদীর পাড়ের কাছে যায়। মাথার উপর সূর্যি মামার বেগুনি রশ্মি খালের পানির উপর পরেছে ফলে তা চিকচিক করছে। কি সুন্দর যে লাগছে না তা দেখতে। তনু সেই দৃশ্য উপভোগ করছে। হঠাৎই তনুর ফিল হলো ওর গলায় কারো হাত বিচরণ করছে। তনু তাকিয়ে দেখে সেই দামি হারটা নেহাল ওকে পরিয়ে দিচ্ছে।
তনুঃ একি এটা আমাকে পরাচ্ছেন কেনো?? এটা না আপনার…
নেহালঃ এটা যার জন্য কিনেছি তাকেই পরিয়ে দিলাম। দেখি কেমন লাগছে…..বাহ কি সুন্দর মানিয়েছে তোমাকে। একদম অপরূপ সুন্দরী লাগছে তোমাকে।
তনুঃ এটা আপনি বললেন আপনার গার্লফ্রেন্ডের জন্য। তাহলে আমাকে???
নেহালঃ পাগলি আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নাই। আমার গার্লফ্রেন্ডতো শুধু তুমি।
তনুঃ কিহহ আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড!!! চোখ বড় করে আশ্চর্য হয়ে।
নেহালঃ হ্যাঁ। তুমি মেয়ে মানে গার্ল। আর আমার বন্ধু তাই ফ্রেন্ড। মানে একসাথে গার্লফ্রেন্ড। ভুল বললাম কি?? হাসতে হাসতে।
তনুঃ আপনিও না। লজ্জা পেয়ে।
নেহাল তনুর অনেক কাছে গিয়ে বলে,
নেহালঃ আমি কি হুম বাচ্চা পরী??
তনুঃ না মানে…..আপনি অনেক ভালো।
নেহালঃ আমাকে ভালো লাগে??
তনু নেহালকে এতো কাছে পায়ে ওর জ্ঞান হারাচ্ছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। ওর নেহালকে অনেক ভালো লাগে। কিন্তু এখন অনেক লজ্জা পাচ্ছে। কিভাবে বলবে এখন।
নেহালঃ আচ্ছা বলতে হবে না। কিন্তু এটা বলো, হারটাতো পছন্দ হয়েছে নাকি??
তনু নেহালের দিকে তাকিয়ে হেসে বাচ্চাদের মতো করে মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে। তনুকে যে তখন কি কিউট’টাই না লাগছিলো। একদম বাচ্চা। তনুর এই বাচ্চাপানা নেহালের খুব ভালো লাগে। তনুর মায়ায় জড়িয়ে পরে এই বাচ্চাপানা দেখলে। তনুকে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে নেহালের। নেহাল এই ইচ্ছেটাকে মারলো না। হঠাৎই ওর বুকের সাথে তনুকে জড়িয়ে ধরলো। কি যে অন্যরকম শান্তি লাগছে না নেহালের তা বলার বাইরে৷ নেহাল চোখ বন্ধ করে শুধু এই তুলোর মতো নরম মানুষটাকে ওর বুকের মধ্যে জড়িয়ে রেখেছে।
এদিকে তনু একদম বোকা হয়ে যায় নেহালের কান্ড দেখে। কিন্তু সত্যি বলতে ওর ও খুব ভালো লাগছে এই স্পর্শ। নেহালের আবেশ,অনুভব,অনুভূতি,ঘ্রাণ সব তনুকে পাগল করে দিচ্ছে। তনুও মনের অজান্তেই নেহালকে আঁকড়ে ধরে। দুজন দুজনের মাঝে হারিয়ে গিয়েছে।
কিছুক্ষণ পর নেহাল তনুকে ছেড়ে দেয়। তনু অনেক লজ্জা পাচ্ছে। তনু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
নেহালঃ চলো বাসায় যাই। প্রেমাকেও আসতে বলো।
তনুঃ আচ্ছা। আস্তে করে।
এরপর নেহাল তনুকে বাসায় দিয়ে চলে যায় খুশি মনে।
বিকেলে,
শামিমঃ কিরে নেহাল তোর খবর কি?? তনুকে কিছু বললি??
নেহালঃ নারে ভাই। তবে ওর মনে আমার জন্য জায়গা করে ফেলেছি। খুশি মনে।
সালমানঃ তাহলে বলে দে যে ভালবাসিস।
নিলয়ঃ এহহ আসছে আরেকজনকে উপদেশ দিতে। জানিস ও নিজেই বলতে পারছে না।
রাফিঃ বলবে কিভাবে!! ও তো একটা ভীতু। কিন্তু নেহাল তুই বলে দে দোস্ত।
নেহালঃ নারে এখন না। ফাইনাল এক্সামটা শেষ হোক। মানে ভার্সিটি আমার যেদিন শেষ হবে সেদিন সবার সামনে ওকে প্রপোজ করবো। ও না করবে না আমি জানি। আগে ভার্সিটিটা শেষ করি।
সালমানঃ হ্যাঁ আরতো মাত্র ২ মাস। তারপরই আমাদের ভার্সিটি লাইফ শেষ।
শামিমঃ হ্যাঁ। তাহলে নেহাল সেটাই করিস।
নেহালঃ হুম।
রাতে তনুর বাসায়,
প্রেমাঃ ওয়াও তনু, এই হারটাতো সেই সুন্দর রে। ভাইয়া দিসে বুঝি??
তনু মিটিমিটি হেসে বলল,
তনুঃ হুম। লজ্জা পাচ্ছে।
প্রেমাঃ তোকে খুব মানিয়েছে। আচ্ছা তনু একটা সত্যিই কথা বলবি?? সিরিয়াস হয়ে।
তনুঃ হ্যাঁ বল।
প্রেমাঃ তুই ভাইয়াকে ভালোবাসিস না?? মানে ভাইয়ার প্রেমে পরিস নি।
তনু খুব লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জায় মুখটা একদম গোলাপি হয়ে গিয়েছে।
প্রেমাঃ আরে বলনা আমিই তো।
তনুঃ বলবো। কিন্তু তুই তাকে বলিবি না কিছু।
প্রেমাঃ আচ্ছা বাবা বলবো না বল।
তনুঃ হুম আমিও তাকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু বোন..মন খারাপ করে।
প্রেমাঃ আবার কিন্তু কি??
তনুঃ আমরাতো মধ্যেবিত্ত। কিন্তু নেহালরাতো অনেক ধনী। ওনার পরিবার কি আমাকে মেনে নিবে??
প্রেমাঃ আরে পাগলি, ভাইয়া যদি তোকে ভালোবাসে তাহলে সে অবশ্যই সবাইকে মানিয়ে নিবে দেখিস। আচ্ছা ভাইয়া কি তোকে ভালোবাসে??
তনুঃ আমারতো মনে হয় অনেক বেশি। আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে। কিন্তু বলেনা। খালি সুযোগ পেলেই…লজ্জা পাচ্ছে।
প্রেমাঃ কি কি সুযোগ পেলে কি?? হ্যাঁ?? কৌতুহল নিয়ে।
তনুঃ জড়িয়ে ধরে। লজ্জায় মুখ হাত দিয়ে লুকিয়ে ফেলে।
প্রেমাঃ বাবাহ। ভাইয়াতো সেই রোমান্টিক।
তনু অনেক লজ্জা পাচ্ছে।
প্রেমাঃ তুই সত্যিই অনেক লাকিরে। অসহায় ভাবে
তনুঃ কেনো তোর সালমান ভাই??
প্রেমাঃ আর বলিস না। ওনার মধ্যে কোনো রোমান্টিকতাই নাই। খালি হাত ধরে ঘুরবে এই। আর এত্তো লজ্জা পায়। ভালোবেসে একটু জড়িয়ে ধরলে কি হয় বলতো।
তনুঃ আরে ভাইয়া অনেক ভালো দেখিস বিয়ের পর তোকে কত্তো আদর করবে। হাহা। রসিকতা করে।
প্রেমাঃ হুম। তুমিতো বলবাই। তুমি যে এখন কত্তো আদর পাইতাছো তাতো বুঝতেই পারছি।
তনুঃ ধুর তুইও না।
প্রেমাঃ আচ্ছা তুই ঘুমা আমি যাই আমার রুমে।
তনুঃ আচ্ছা।
প্রেমা ওর রুমে চলে যায়। তনু চুপচাপ শুয়ে আছে আর নেহালের কথা ভাবছে। তনুর খুব ইচ্ছে হচ্ছে নেহালের সাথে কথা বলার। তনু ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু নেহাল আজ কল আসছে না। তনুর মনটা খারাপ লাগছে। ঘুমও আসছে না। তনু ভাবছে, আজ কি উনি আর ফোন দিবে না? মনে হয় না। আচ্ছা উনিকি সত্যিই আমাকে ভালোবাসে নাকি আমিই ভুল ভাবছি। নাহ আর ভালো লাগছে না। এমনি সময়তো কল করতো আজ কি হলো?? আবার কিছু হলো নাতো?? আল্লাহ এখনতো টেনশন হচ্ছে। আমি কি একটা কল দিবো নাকি?? নাহ যদি উনি কিছু মনে করেন?? উফফফ। হঠাৎই তনুর ফোনটা বেজে উঠে। তনু তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করে বলে,
তনুঃ হ্যালো… একটু অস্থিরতা নিয়ে।
নেহালঃ বাবাহ। আমার কলের অপেক্ষায় ছিলে মনে হয়??
তনুঃ না আমি কারো অপেক্ষায় ছিলাম না। অভিমানী কণ্ঠে।
নেহালঃ তাহলে একটা রিং হতেই যে এত্তো অস্থির হয়ে ফোন ধরলে??হুম??
তনুঃ জানি না। কল দিয়েছেন কেনো?? অভিমানী কণ্ঠে।
নেহালঃ আমার পিচ্চু পরীটা রাগ করেছে তাইনা?? আসলে আব্বুর সাথে কথা বলছিলাম তাই আসতে লেট হলো।
তনুঃ আমি জিজ্ঞেস করেছি নাকি। আচ্ছা আপনার আব্বুর সাথে কি কথা বললেন??
নেহালঃ আব্বু বলছে বিয়ে করতে। তার নাকি একটা মেয়ে পছন্দ আছে তাকে। মজা করে।
তনুঃ কিহহহ!! বিয়ে??? এত্তো তাড়াতাড়ি?? আপনি কি বলেছেন?? উত্তেজিত হয়ে।
নেহালঃ বলেছি দেও বিয়ে করিয়ে। বউকে নিয়ে বাইকে সারাদিন ঘুরবো আর মজা করবো। আমাকে তো কেউ ভালোবাসে না। কি আর করবো বলো। মজা নিয়ে।
তনুঃ না না আপনি এখন বিয়ে করবেন না প্লিজ। আপনাকেতো আমি অনে…..
নেহালঃ কি কি আমাকে তুমি কি???
তনুঃ এইরে বলেই দিতে নিয়েছিলাম তো। ধুহ আমিও না। মনে মনে।
নেহালঃ কিহলো বলো আমাকে কি??
তনুঃ না কিছু না। কিন্তু আপনি এখন বিয়ে করবেন না। আস্তে করে।
নেহালঃ করলে তোমার সমস্যা কি হুম?? মজা করে।
তনুঃ আচ্ছা যান করেন বিয়ে। আসলেই আমার কি!! আমার কিছু না। আপনি এখনি বিয়ে করেন। যান।
নেহালঃ বাবাহ রে। তুমিতো আসলেই একটা বাচ্চা। একদম বাচ্চাদের মতো অভিমান করো।
তনুঃ আমি মোটেও বাচ্চা না। আমি অনেক বড়। আহ্লাদী কণ্ঠে।
নেহালঃ আহলে এত্তো কিউট কেন এই পিচ্চু পরীটা।
তনুঃ আমি রাখছি। আপনি বিয়ে করেন। অভিমানী কণ্ঠে।
নেহালঃ আরে আরে মজা করছি। বাবা এমন কিছু বলেই নি। আমার ভার্সিটি শেষ হয়নি আবার বিয়ে মাথা খারাপ।
তনুঃ সত্যিই তো??
নেহালঃ হাহা। হ্যাঁ বাবা তিন সত্যিই।
তনুঃ আচ্ছা। এখন ঘুমান। কাল ক্লাস আছে।
নেহালঃ তুমি??
তনুঃ আমিও তো ঘুমাবো।
নেহালঃ আমারতো মনে হয় তুমি এখন শুধু আমার কথাই ভাববা। রসিকতার স্বরে।
তনুঃ এহহহ আমার বয়েই গেছে। আমি কেনো আপনার কথা ভাববো?? আপনি পঁচা ছেলে। আমি পঁচা ছেলেদের কথা এতো ভাবিনা। মজা করে।
নেহালঃ কিহহ আমি পঁচা না। আচ্ছা দাঁড়াও কাল দেখবো নে কে পঁচা। ভয় দেখিয়ে।
তনুঃ আচ্ছা আপনি পঁচা না।
নেহালঃ তাহলে কি?? খুশি হয়ে।
তনুঃ হনুমান। টাটা।
বলেই তনু ফোন রেখে দেয় হাসতে হাসতে। নেহালও হেসে দেয় তনুর কান্ড দেখে।
এভাবে তনুর সাথে নেহাল দুষ্ট মিষ্টি ঝগড়া, মজা আর দেখা সাক্ষাৎ করেই ৪ মাস কেঁটে যায়। আজ নেহালের রেজাল্ট দিয়েছে। অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে নেহাল। নেহালের ভার্সিটিও শেষ। সেই সাথে নেহালের অপেক্ষাও শেষ। কাল পুরো ভার্সিটির সামনে তনুকে প্রপোজ করবে নেহাল। এরজন্য কদিন আগ থেকেই নেহাল তনুর সাথে কথা বলা দেখা সাক্ষাৎ সব বন্ধ করে দেয় ওকে ইগনোর করে যাতে সারপ্রাইজটা ভালো ভাবে দেওয়া যায়। নেহাল শুধু অপেক্ষায় আছে কালকের সকালের। আজ রাতে আর ঘুম হবে না নেহালের।
চলবে…?
কোনো ভুল হলে জানাবেন।
সবার অনেক বেশি সাড়া চাই। আর কেমন লেগেছে জানিয়েন কিন্তু।