গল্পের নাম : #রাত_বিকেলে_প্রেমের_কুঞ্জন
লেখিকা: #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্ব : ৯
“আপু আমি আর পারছি নাহ।” একথা বলেই ঝুমুর অজোড়ে কাদতে লাগল। মুক্তা কি বলে শান্তনা দিবে বুঝতে পারছে না। শুধু এইটুকুই জানে যা হচ্ছে হয়ত ভালো হচ্ছে না। সে সোহানকে জানে, ও যথেষ্ট মেচিয়ুর একটা ছেলে। ও কোনো সিদ্ধান্ত নিলে বুঝেশুনেই নিবে।
মুক্তা : বোন আমার। থাম এবার। আমিতো তোকে আগেই বলেছি সোহান তোকে আর সিনহাকে একই মনে করে। নিজের আপন বোন মনে করে তোকে। তুই কেন এখনও ওকে ভালোবেসে কষ্ট পাচ্ছিস।
ঝুমুর : কেনো বাসবো না আপু? মধুমিতাকে তো সোহান ভাই বোন ভাবে না। তাহলে আমাকে কেন বোন ভাববে? মধুমিতার প্রতি তো তার খুব টান।
মুক্তা : তোর হয়ত কোন ভুল হচ্ছে।
ঝুমুর : কোনো ভুল হচ্ছে না আপু। আমি রাত হোক বা বিকেল। যখন তখন সোহানকে মধুমিতার রুমে যেতে দেখি। সোহান নয়ত পুরুষ মানুষ। কিন্তু মধুমিতা? ওকি বারণ করতে পারেনা সোহানকে? নাকি ওর চরিত্রেই দোষ।
মুক্তা : ছিহ ঝুমুর, এসব কি ভাষা! মানলাম তোর কষ্ট হচ্ছে কিন্তু ভুলে যাসনা মধুমিতাও এ বাড়ির মেয়ে। আর আমি আমার ভাইকে চিনি। ওর মনে সত্যিই যদি মধুমিতার জন্য কোনো ফিলিংস থেকে থাকে তবে ও সব ভেবে চিন্তেই এগুবে।
ঝুমুর : বাহ আপু। এখন তুমিও তোমার ভাইয়ের পক্ষ নিচ্ছো।
মুক্তা : আমি কারো পক্ষ নিচ্ছি না ঝুমুর। আমি জানি তোর যন্ত্রণা কতটুকু। কাউকে ভালোবাসলেও তাকে না পাওয়ার যন্ত্রণাটা আমি জানি। প্লিজ তুই সোহানকে ভুলে যা।
মুক্তা আর কিছু না বলে নিজের রুমে পা বাড়াল। তবে ঝুমুর এখন কি করবে? তারতো আর সহ্য হচ্ছে না। মধুমিতাকেও এখন খুব বাজে লাগছে তার।
……
এদিকে ফরহাদ নিজের রুমে বসে তার প্রেমিকার সাথে কথা বলছে। তবে সে জানে না সেই রুমে কেউ লুকিয়ে তার ভিডিও বানাচ্ছে।
ফরহাদ : ট্রাস্ট মি জান। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। এই গাইয়া ভুতকে তো শুধু জমিদারি বংশ দেখে বিয়ে করেছিলাম।
মেয়েটা :……
ফরহাদ : আরে না নাহ। তেমন কিছু না। ওতো আমার রক্ষি.তা হওয়ারও যোগ্য না। দেখলে গা গুলিয়ে বমি আসে। কোথায় ও আর কোথায় তুমি।
মেয়েটা :….
ফরহাদ : হ্যাঁ। একবার শুধু টাকাগুলো হাতিয়ে নেই। তারপর বাড়ি থেকে পালাব। ঐদিকে রিয়াদ নামের ছেলেটার কথা বলেছিলাম নাহ, ও হয়ত এতোক্ষণে নিজের কাজ শুরু করে দিয়েছে।
ব্যাস। যা জানার বা বুঝার সবটা হয়ে গিয়েছে সোহানের। আরো কিছু প্রমাণ জোগাড় করে সে মধুমিতার রুমের দিকে রওনা হলো। প্রমাণ জোগাড়ের জামেলায় রিয়াদের কথা বলতেই ভুলে গেছে মধুমিতাকে। তবে এত রাতে ওর রুমে যাওয়া ঠিক হবে। তবে না গিয়েও তো উপায় নেই। রিয়াদ যদি কিছু করে বসে।সোহান মধুমিতার রুমের সামনে এসে দেখে রিয়াদ দাড়িয়ে আছে।
সোহান : আরে। মি. রাফসান। আপনি?
রাফসান : না মানে।
সোহান : আপনার রুমতো নিচতলায় গেস্ট রুমটা। দোতলায় কি করছেন?
রাফসান ( মনে মনে ~ শালা মাদা*): এইতো যাচ্ছি। তা আপনি কি করছেন?
সোহান : বউয়ের কাছে আসছি। 😊
রাফসান : হো হোয়াট?
সোহান : এমা আপনি জানেন নাহ? মধুমিতা ইজ মাই ওয়াইফ। আমার এক মাত্র বউ।
রাফসান : আচ্ছা। আমি যাচ্ছি।
রাফসান তাড়াতাড়ি নিচে নেমে গেল। ও তো জানত মধুমিতার যেই কাজিনের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সে বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। তবে কি সোহানের সাথেই বিয়ে ঠিক হয়েছিল? বিয়েটা ভাঙেনি? এদিকে সোহান বুঝে গিয়েছে মধুমিতাকে একা রাখাটা সেইফ না। তাই নিজেই ওর রুমে ঢুকে গেল। এই মেয়েকে মাঝে মাঝে থাপ্পড় দিয়ে দাতঁ ফালিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। মেয়ে হয়ে রুমের দরজা লাগায় না। কেমন বদঅভ্যাস এটা। সোহান ওর রুমে গিয়ে দেখে পুরো অন্ধকার। কিছু না বলে দরজা লাগিয়ে পাশের সোফায় শুয়ে পড়ে।
……সকালে….
মিরাব কোনো কারণবসত বাড়ির সবাইকে বাড়ির ড্রয়িং রুমে জড়ো করেছে। মধুমিতা আর সোহানকে ডাকতে গিয়েছে মুক্তা। সোহানের রুম ফাকা। মধুমিতার রুমে নক করতে সোহান চোখ ডলতে ডলতে দরজা খোলে। দুজন দুজনকে দেখে যেন ভুত দেখার মতো চমকে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে মুক্তাকে নিয়ে নিজের রুমে যায়। আর মধুমিতা এখনও চিটপটাং হয়ে ঘুমাচ্ছে।
মুক্তা : সোহান!
সোহান: হে হেই। মাই সিস। তুই যেমনটা ভাবছিস তেমন কিছুনা কিন্তু।
মুক্তা : প্রেম করিস আর যা করিস কোনো কিছু অতিরিক্ত ভালো না। তুই জানিস বাড়িতে বাইরের লোক আছে। সামহাউ এই বিষয়টা গ্রামে জানাজানি হলে কি হবে? সবাই মধুমিতাকেই খারাপ বলবে। আর এটা গ্রাম, শহর না। তোর কোনো এক্সকিউসও কাজে দিবে না।
সোহান : ডুড। তুই যেমন ভাবছিস তেমন কিছু না। আমার কথাটা শুন।
মুক্তা : নিচে আয়। মিরাব সবাইকে আসতে বলছে।
মুক্তা আর কিছু না বলে মধুমিতাকে ডাকতে যায়। ওর রুমে সারারাত যে কেউ ছিল তা সে জানেই না। সে দিব্বি ঘুমিয়ে যাচ্ছে গায়ে চাদর দিয়ে। মুক্তা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছুটা সস্তি পায়। নাহ। দুজনের মাঝে এখনও ওমন কিছু হয়নি। তবে ওরা আজকালকার ছেলেমেয়ে। কিছু হলেও হয়ে যেতে হবে। বাড়ির বড়দের জানাতে হবে এ বিষয়ে। মধুমিতাকে ডেকে নিচে নিয়ে যায় সে।
এদিকে নিচে সবাইকে এক এক করে ফরহাদের সব কুকর্মের কথা ফাঁস করছে মিরাব। প্রমাণও সব হাতের মুঠোয়। সাথে সাথে মরিয়ম বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
মরিয়ম : এই জানোয়ারদের চোখের সামনে থেকে সড়া। আমি আর পারছি নাহ।
সোহান : মা সামলাও নিজেকে।
কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে ওদের ধরে নিয়ে যায়। মুক্তা একপাশে মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছে। ও ভাবেনি এত সহজে জানোয়ারের হাত থেকে রক্ষা পাবে সে। মিরাব শক্ত করে মুক্তার হাতটা ধরে রেখেছে। এসব অশান্তির মাঝেও মিরাবের হাতটা ধরে যেন মুক্তা কিছুটা শান্তি পায়। ডুব দেয় অতীতের স্মৃতিতে।
কলেজ লাইফের সেই প্রেম। একসময় খুব ভালোবাসত মিরাব মুক্তাকে। মুক্তা যে বাসত না এমন নয়। তবে ঐযে, পরিবার। কেউই বলতে সাহস পায়নি কাউকে। তবে আজ এতদিন পর মিরাবের করা প্রতিটা প্রার্থনা যেন আল্লাহ পূরণ করেছে। মন থেকে কাউকে এতটা চাইলে হয়ত উপরয়ালাও তাকে দিয়ে দেয়।
অতঃপর দিনশেষে সন্ধ্যায়….
#চলবে….