গল্পের নাম : #রাত_বিকেলে_প্রেমের_কুঞ্জন
লেখিকা: #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্ব : ৬
” ইউ ক্যান ট্রাই দিস।” মধুমিতা পাশ ফিরে তাকায়। চোখে কালো একটা সানগ্লাস পড়া,মুখে চাপ দাড়ি। চুলগুলো কিছুটা বড় বড়। একটা নীল কোর্ট পরিহিত যুবক দাড়িয়ে আছে পাশে। আগে কখনো এই ছেলেকে দেখেছে বলে মনে পড়ছে না। তবে কন্ঠটা কেমন চেনা চেনা লাগছে।
রাফসান : হাই। আমি রাফসান। এই বইয়ের দোকানটা আমার। আর এরা আমার কর্মচারি।
মধুমিতা : ওহ, আই ছি।
রাফসান : বই প্রেমি মনে হচ্ছে। চাইলে এই বইটা ট্রাই করতে পারেন।
মধুমিতা : ধন্যবাদ।
রাফসান : মিস মধুমিতা। নামটা সুন্দর।
মধুমিতা : আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?
রাফসান : আমার আশেপাশের সবার খুটিনাটি তথ্য আমার কাছে থাকে। আর আপনি তো স্পেশাল।
মধুমিতা :…
রাফসান : ডন্ট টেইক ইট সিরিয়াসলি। ফান করলাম। এইযে একটু আগে কেশ মেমোর ওখানে নাম লিখলেন। সেখান থেকেই দেখলাম।
মধুমিতা : ওহ। আমি তবে আসি।
রাফসান : আমার বাইক আছে। চাইলে বাসার সামনে ড্রপ করে দিতে পারি।
মধুমিতা : নো থেংকস। আমার ফ্রেন্ডসরা আছে। আমি যেতে পারব।
মধুমিতা সেখান থেকে চট জলদি কেটে পড়ে। লোকটা অদ্ভুত। এদিকে মধুমিতার যাওয়ার দিকে রাফসান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ঠোটের কোনে রহস্যময়ী হাসি।
রাফসান : ইটছ টাইম ফর রিভেনজ বেবি। আমার যেটা চাই আমি ঠিক পেয়ে যাই। নয়ত আদায় করে নেই।
……..
রুদ্রর এক হাতে তিনটা শপিং ব্যাগ। আরেক হাতে চারটা। বেচারা আর হাটতে পারছে না। মিসমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে চকলেট জুস খাচ্ছে। মধুমিতা দূর থেকে ওদের দেখে কাছে এলো। দেখে রুদ্র বেচারা ঘেমে শেষ। চোখে পানি টলটল করছে। মনে হয় ফকির বানিয়ে দিয়েছে ওকে।
মধুমিতা : কিরে এসব কি?
মিসমি : ওই একটু শপিং করলাম আরকি। বললাম কেনাকাটা করতে ইচ্ছে হচ্ছে, রুদ্র বলল করো বিল আমি দিব। তাই আরকি।
মধুমিতা : বই কিনতে এসে কি কি কিনলি?
মিসমি : বেশি কিছু না। দুইটা থ্রি পিছ, একটা শাড়ি, তিন ডজন চুড়ি, এক বক্স মেকাপ কিট, দুইটা টায়রা, দুই জোড়া জুতো। ওহ আর সাথে হালিমও নিলাম তোর তো পছন্দ। হোস্টেলে গিয়ে খাব। আর আমি তো হাবিজাবি খেয়েইছি।
মধুমিতা : আর বই।
মিসমি : বইতো কেনা এখনো বাকি। আচ্ছা আজ থাক। আরেকদিন বই কিনব। রুদ্রওও…। আরেকদিন আসবে আমার সাথে?
রুদ্র : ( কান্না কান্না ভাব) ইয়ে মানে। শরীরটা খারাপ লাগছে। কাল হয়ত পারব না।
মিসমি : কালকের কথা কখন বললাম। এক সপ্তাহ পর ভার্সিটি বন্ধ। তখন নাহয়…
মধুমিতা : থামতো। আচ্ছা ভাইয়া চলেন। আর কিছু কিনতে হবে না।
সারা রাস্তা আর রুদ্র একটা কথাও বলেনি। অথচ আসার সময় সে কি গল্প! মিসমিও বুঝেছে ডোজটা বেশি হয়ে গেছে। এত নিতে পারবে না ওহ। হোস্টেলের সামনে আসতেই মধুমিতা আগেভাগে গাড়ি থেকে নেমে চলে যায়। মিসমি নামতে গিয়েও থেমে যায়।
রুদ্র : কিছু বলবে।
মিসমি : আজ একটু পরিক্ষা করে নিলাম। আপনার ধৈর্য কেমন। সারাজীবন পারবেন নাকি।
রুদ্র : মানে?
মিসমি : সব কথা বলতে হয়না। কিছু বুঝে নিতে হয়।
মিসমি গাড়ি থেকে নেমে চলে গেল। রুদ্র এক পলকে তাকিয়ে রইল তার দিকে। তবে কি রুদ্র যা ভাবছে মেয়েটা তাই বুঝালো?
………
দেখতে দেখতে প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। সোহানের সাথে মধুমিতা ঐদিনের পর থেকে আর একটা কথাও বলেনি। ক্লাস টাইমে শুধু ক্লাস করছে চুপচাপ। সোহান কয়েকবার আগ বাড়িয়ে কথা বলতে আসলেও মধুমিতা এড়িয়ে চলেছে। এইদিকে মিসমির সাথে রুদ্রর প্রেমটাও বেশ জমেছে। আজ সবাই যে যার বাড়ি বেড়াতে যাবে। মিসমির তাই মন খারাপ। এর অবশ্য একটা কারণ আছে। মিসমি অনাথ। মধুমিতা তাই জোড় করেছে খুব ওর সাথে যেতে। তবে মিসমি যাবে না। রুদ্রতো আছেই ওর জন্য। তাই শেষমেশ মধুমিতা একাই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বাসস্টানে এসে দাড়িয়ে আছে মধুমিতা। কানে মোবাইল। ওপাশ থেকে বড়আম্মু ( সোহানের মা) বলে দিচ্ছে কোন গাড়িতে উঠবে। মধুমিতা আবার রাস্তাঘাট তেমন চিনে না। আসার সময়তো ট্রেনে করে এসেছিল সোহানের সাথে। সোহানের মায়ের কথামতো একটা বাসে উঠে পড়ল সে। তিননাম্বার সাড়িতে একপাশে দুটো সিট ফাকা। ওখানে জানালার পাশের সিটটায় বসল সে।
কিছুক্ষণ পর বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গেল সে। এই আরেক জামেলা। গাড়িতে উঠলেই তার ঘুম। এই দিকে তার পাশে যে কোনো ছেলে এসে বসেছে তার দিকে খেয়াল নেই। অনেকটা পথ পেরিয়ে গাড়িতে তেল দেওয়ার জন্য এক জায়গায় থামল বাস। মধুমিতার ঘুম ভাঙলো। জেগে বুঝল সে অপরিচিত কারো কাধে মাথা রেখে ঘুমচ্ছিল। তাড়াতাড়ি সড়ে যায় সে। উপরে তাকিয়ে ভুত দেখার মতো চমকে যায়।
মধুমিতা : আপনি?
সোহান : অন্য কাউকে এক্সপেক্ট করছিলে বুঝি।
মধুমিতা : না মানে। আপনিও বাড়ি যাচ্ছেন।
সোহান : ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন। ঐ বাড়িটা আমারও। বড় ছেলে হওয়ায় একটু বেশিই আমার। তুমিতো বিয়ে করে পরের বাড়ি চলে যাবে । তাই ঐ বাড়িকে বাবার বাড়ি বলবে। তোমার বাড়ি হবে তোমার শশুর বাড়ি।
মধুমিতা কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে ঘুরে। এই ছেলেটা সবসময় তাকে কথা শুনায়। সোহান ওর চেহারা দেখে হাসছে। মেয়েটা কিউট। বাসে তেল ভরতে সময় লাগবে। সোহান এই ফাকে বাহিরে গিয়ে পাশের হোটেল থেকে দুই প্লেট গরম খিচুরি নিয়ে এলো। বাসে কম বেশি সবাই তাই খাচ্ছে । এখানকার খিচুড়ি খুব ভালো। সোহান আগে যেই কয়বার ঢাকা থেকে গিয়েছে সেই কয়বারই খেয়েছে।
সোহান : নেও।
মধুমিতা : কি?
সোহান : খুলে দেখো কি।
মধুমিতা ( দেখেতো মনে হয় খুব মজার ~মনে মনে) : না খাবো না। যে আমাকে বারবার কথা শুনায় তারটা খাই না।
সোহান : ওকে। নো প্রবলেম।
সোহান বসে বসে নিজের প্লেটটা ফাকা করছে। কেমন লোকটে বাবা! আরেকবার সাধবে না। মধুমিতার ক্ষিদেও পেয়েছে। নিজ থেকে এখন কিছু এনে খেলে আবার লজ্জা পেতে হবে। কিন্তু নাকের কাছে ঘ্রাণও তো লুঙ্গি ডেনস করছে। এইতো আরেকবার ডিমে কামড় দিল।
সোহান : এই জানালার গ্লাস দিয়ে আমায় দেখো কেন?
মধুমিতা : আপনাকে কোথায় দেখলাম আজব। বাহির দেখছি।
সোহান : শেষ বারের মতো বলছি ডং না করে খেয়ে নেও। মেয়েদের বাড়তি ডং আমার ভালো লাগে না।
মধুমিতা (মুখ বেকিয়ে) : আপনি বললেই আমার শুনতে হবে বুঝি? যদি না খাই কি করবেন?
সোহান : কোলে বসিয়ে খাইয়ে দিবো। কোলে বসে খাবা?
মধুমিতার চোখ বড় বড় হয়ে গিয়েছে সোহানের কথা শুনে। এটা কেমন কথা? লোকটার লজ্জা নেই নাকি। আবার এত জোড়ে বলেছে যে বাসের সবাই তাকিয়ে আছে। সোহান নিজেও কিছুটা ইতস্ততঃ বোধ করল। মুখ ফসকে কি যাতা বলছে। এই মেয়ের সামনে যেন তার আরেকটা পার্সোনালিটি জেগে উঠে। মধুমিতা তাড়াতাড়ি খিচুড়ির প্লেটটা পাশ থেকে ছো মেরে নিয়ে খেতে শুরু করে। একটু পর সোহান একটা কোণ আইসক্রীম আর কিছু হাবিজাবি নিয়ে আসে মধুমিতার জন্য।
সোহান : ধরো। তোমারতো আবার খাওয়ার পর মিষ্টি কিছু না খেলে ভালো লাগে না। তেমন কিছু পাইনি। তবে এইটা টেস্ট করো।
মধুমিতা : ( লোকটাকে কিছু না বললেও মনের কথা বুঝে কি ভাবে ~ মনে মনে) থ্যাংকস।
সোহান : বারবার থ্যাংকস দিবে না তো। শুনতে ভালো লাগে না। খাও। আর রাস্তায় যে জ্যাম পড়বে একটু পর। বাড়ি যেতে যেতে রাত হবে হয়ত।
অতঃপর রাতে….
#চলবে….
( আসসালামুয়ালাইকুম। হ্যাপি রিডিং )