গল্পের নাম : #রাত_বিকেলে_প্রেমের_কুঞ্জন
লেখিকা: #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্ব : ৫
ক্লাসে বসে বসে গল্প করছে মিসমি আর মধুমিতা। কাল সকালে দুজন নীলক্ষেত যাবে। কিছু গল্প আর উপন্যাসের বই কিনবে। কাল ভার্সিটি বন্ধ। এসব কথা বলতে বলতে কখন যে স্যার এসেছেন তা দুজনের খেয়ালই নেই। বসেছেও একদম লাস্ট বেনচ এ। এদিকে স্যার ক্লাসে ঢুকে দেখে সবাই দাড়িয়েছে শুধু দুজন এখনও জমিয়ে আড্ডায় ব্যস্ত।
স্যার সবাইকে বসতে বলে চোখের চশমাটাকে আঙুল দিয়ে একটু ধাক্কা দিল। ক্লাসের কিছু মেয়েরাতো হা করে তাকিয়ে আছে। স্যার সামনের বইটা মুখের সামনে ধরে পাতা উলটাতে লাগল।
স্যার : মিস মধুমিতা এবং তার পাশের জন। কাইন্ডলি একটু দাড়াবেন।
হঠাৎ নিজেদের কথা শুনে মধুমিতা ও মিসমি একটু হচকচিয়ে গেল। আরে সামনে বই নিয়ে কে দাড়িয়ে আছে। স্যার হয়ত। কখন এলো।
মিসমি( ধীরে ধীরে) : আব হাম দোনোকা কেয়া হোগা ভাতিজি।
মধুমিতা : চুপ কর। ছরি স্যার। আর হবে না। আমরা আসলে খেয়াল করিনি যে আপনি এসেছেন।
পুরো ক্লাস ওদের কথা শুনে হেসে দিল। এই এক ধরনের ছাত্ররা সব ক্লাসেই থাকবে। কারণ ছাড়াই শুধু হাসবে। আর দাড়িয়ে থাকা লোকদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলবে। এবার স্যার তার মুখের উপর থেকে বইটা সড়ালো। মধুমিতা তো আচমকা এই চেহারাটা দেখে চমকে গিয়েছে পুরো।
মধুমিতা : সোহান ভাইয়া আপনি।
সোহান : বাহ। একতো স্যার ঢুকার পরেও গল্প করলেন। এখন আবার স্যারকে ভাই বলে ঢাকছেন। নূন্যতম মেনারস দেখি আপনার মাঝে নেই।
মিসমি ( ধীরে ধীরে) : এই আবুল। স্যারকে ভাই বললি কেন? তোর কাজিন নাকি কোনো?
মধুমিতা : আরে এইতো আমার সোহান ভাইয়া। যেই খারুচ এর কথা বলছিলাম। খালি চিল্লায়।
মিসমি : লরে লাগ গেয়ে।
সোহান: গেট আউট।
মধুমিতা : কিন্তু…
সোহান ( ধমক দিয়ে ) : আই সেইড গেট আউট। মেনারস শিখে তারপর ক্লাস করতে আসবেন।
মধুমিতাতো ধমক খেয়ে পুরো কান্না করে দিবে এমন অবস্থা। মিসমি সব সামাল দিতে মধুমিতাকে টানতে টানতে নিয়ে গেল ক্লাসের বাহিরে।
মধুমিতা : 😭
মিসমি : কিরে কষ্টে কেন্দে দিয়েছিস?
মধুমিতা : এখন মজার মুডে নেই আমি।
মিসমি : কুল বেবস। বড় বড় ভার্সিটিতে এমন ছোট ছোট ব্যাপার হয়েই থাকে। যাই বলিস। সোহান স্যার কিন্তু খুব হ্যান্ডসাম।
রুদ্র : কে হ্যান্ডসাম?
হঠাৎ দুজনের মাঝে মাথা ঢুকিয়ে দিল রুদ্র।
মিসমি : আপনি কাবাবে হাড্ডি হতে কোথা থেকে আসলেন?
রুদ্র : আগে বলো হ্যান্ডসাম কাকে বলছ।
মিসমি : যাকে খুশি বলেছি। আপনার কি।
রুদ্র : ( আমারই তো সব ~মনে মনে) কিছু না। কাল আমরা ফ্রেন্ডসরা নীলক্ষেত যাব। ভাবলাম তোমরা তো নতুন। তোমাদেরও নিয়ে যাই।
মধুমিতা : কিন্তু ভাইয়া ক্লাসেতো সবাই নতুন। শুধু আমরা কেন?
মিসমি : ঠিক। বলেন আমরা কেন?
রুদ্র : ইয়ে মানে। সকালে পানি দিলাম না। তাই ছরি হিসেবে এমনটা বললাম।
মধুমিতা না বলতেই যাবে কিন্তু মিসমি চিল্লিয়ে বলল,”যাবো।”
মধুমিতা : মিসু..
মিসমি : আরে থামতো। আমরাতো এমনিতেও কাল যেতে চেয়েছিলাম। তাদের সাথে গেলেই বা কি। কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।
রুদ্র : কি?
মিসমি : আমার বইয়ের টাকা আপনি দিবেন।
রুদ্র : ওকে ডান। আজ তাহয় গেলাম।
রুদ্র যেতে দেরি মধুমিতার মিসমিকে কিল ঘুসি মারতে দেরি না।
মিসমি : আরে আরে কি করছিস থামনা।
মধুমিতা : এসব কি মিসমি?
মিসমি : রাগ করছিস কেন? কেউ আমার উপর ফিদা হয়ে বসে আছে আমি একটু ফায়দা নিবো না।
মধুমিতা : আমিও বুঝেছি সে তোকে পছন্দ করে। তাই বলে তুই তার ফিলিংস নিয়ে মজা নিবি নাকি।
মিসমি : আমি কখন বললাম আমি মজা নিচ্ছি।
মধুমিতা : মানে?
মিসমি কিছু না বলে রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে বলল হোস্টেলে ফিরে যেতে। দুজনে তাই করল। আজ আর ক্লাস করার মুড নেই।
….
এদিকে ক্লাস শেষ করে বের হয়ে সোহান মধুমিতাকে খুজছে। মাঠের কোথাও তারা নেই। একটু বেশিই বলে ফেলেছে হয়ত। তবে সোহানতো জাস্ট ঐদিন সিড়িতে মধুমিতা যা বলেছিল তার বদলাটা নিয়েছে। আচ্ছা মেয়েটা আবার কান্না করে দেয়নি তো। করলে করুক। সোহানের কি। কিন্তু তবুও। দূরর। সোহানের আর কিছু ভালো লাগছে না। মনের মাঝে যেন মনের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ চলছে তাার।
পরেরদিন…..
সকালে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ। রুমের জানালার পাশে বসে আছে মধুমিতা। সারাদিনের ভাবসা গরম আবহাওয়ার মাঝে এই সকালের সময়টা যেন একটু স্বস্তি দেয়। তবে গতকাল রাতে মায়ের সাথে ফোনে কথা বলার পর মনটা একটু খারাপ। মায়ের নাকি শরীর তেমন একটা ভালো না। কিন্তু আসলোইতো সবে পরশু। আর এক সপ্তাহ পর ভার্সিটিতে কিছুদিনের জন্য বন্ধ আছে। তার আগে যাওয়া হবে না হয়ত।
একটা গোল্ডেন কালারের শাড়ি পড়েছে মিসমি। মাথায় ম্যাচিং করা একটা হিজাব। কাধে ঝুলানো সাইড ব্যগ। আর মধুমিতা তার সাধারণ গেট আপেই আছে। একটা নরমাল থ্রি পিচ। দুজনেই সকাল সকাল সামনের বড় রাস্তার মোড়ে ওয়েট করছে রুদ্রর জন্য। নিজের কালো গাড়িটা নিয়ে রুদ্র হাজির। গাড়িতে উঠতে বলল।
মধুমিতা : আমরা তো রিকশায় করে যাবো বলেছিলাম?
রুদ্র : আজ একটু কষ্ট করে গরিবের গাড়িতেই নাহয় গেলেন।
মিসমি : আচ্ছা সমস্যা নেই। দরজাটা খুলেন। টান দিব কিভাবে?
অতঃপর দুজনে গাড়িতে উঠে গন্তব্যস্থলে রওনা দিল। তবে কেউ একজন যে পাশের টং এ বসে বসে চা পান করছে আর তাদের দেখছে এই জিনিসটা সবার অজানা।
নীলক্ষেত। এখানে একটা এরিয়াতে আগেও কয়েকবার এসেছে রুদ্র । তাই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে ওদের। কোন দোকানে ভালো উপন্যাসের বই পাওয়া যায়, কোথায় দাম কম। ইত্যাদি। মিসমি আর রুদ্র একসাথে হাটছে আর কথা বলছে। মধুমিতা কিছুটা পিছনে। সিঙ্গেল ছেলেমেয়েদের এই একটা যন্ত্রণা। কোনো কাপলের সাথে আসলে সবার মাঝে থেকেও তারা অসহায় এতিমের মতো চলে। মধুমিতারও অবস্থাটা ব্যতিক্রম নয়।
কিছুক্ষণ পর মধুমিতা একটা স্টলের সামনে থামল। না না। বইয়ের দোকান না। বইয়ের দোকানের পাশে ছোট করে একটা কসমেটিক এর দোকান। মধুমিতার একমুঠ চুড়ি খুব পছন্দ হয়েছে। কাছে গিয়ে দাম জিগ্যেস করল। ৮০০ টাকা! মধুমিতা কোনো রকম জানটা নিয়ে সড়ে এসেছে। একমুঠ চুড়ির এত দাম হতে হবে কেন? এখন চুড়ি কিনলে বই কিনার টাকায় গরমিল হবে। তারচেয়ে ভালো বইয়ের দোকানে যাই।
মধুমিতা তাকিয়ে দেখে মিসমি অনেকটা দূরে চলে গিয়েছে। মধুমিতা তাই ওর কাছে না গিয়ে পাশের একটা দোকানে ঢুকে। নানান বই সাড়ি সাড়ি ভাবে সাজানো। বসে পড়াও যাবে দেখছি। মধুমিতা হুমায়ুন স্যারের “হিমু” উপন্যাসটা কিনল। সাথে ইলমা আপুর “পদ্মমির” উপন্যাস। আরো কয়েকজন রাইটারের বই কিনে নিল। সবই রোমান্টিক জনরার। একটা শুধু হরর বই কিনতে হবে। তবে তেমন ভালো বই খুজে পাচ্ছে না। এমন সময় কেউ একজন ওর সামনে একটা বই খুলে ধরল। আর বলল,”ইউ ক্যান ট্রাই দিস।”
#চলবে….
( আসসালামুয়ালাইকুম ।হ্যাপি রিডিং )