রাত_বিকেলে_প্রেমের_কুঞ্জন পর্ব-০৪

0
651

গল্পের নাম : #রাত_বিকেলে_প্রেমের_কুঞ্জন
লেখিকা: #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্ব : ৪

ট্রেন চলছে তার নিজের গতিতে। মধুমিতা জানালার পাশের সিটে বসেছে। পাশেই সোহান কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসেছে। সামনে এক বয়স্ক দম্পতি বসে আছে। মধুমিতা জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাহিরের গতি দেখছে। কোন ফাকে যে চুলগুলো খুলে গিয়েছে খেয়াল নেই। সমানে পাল্লা দিয়ে উড়ছে সেগুলো। সোহান কিছুটা বিরক্ত হয়েই বলে।

সোহান : তোমার কি কোনো হিজাব নেই?
মধুমিতা ( কিছুটা বিব্রত হয়ে) : আছে। কেনো?
সোহান : বাহিরে চলাফেরা করলে হিজাব পরবে। নয়ত চুলগুলো এমন টাইট করে বাধবে যেন প্রয়োজনে ছিড়ে যায় কিন্তু খুলে না যায়।
মধুমিতা : 😕আচ্ছা।

সামনে বসে থাকা বয়স্ক দম্পতি ওদের কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসছে। একজন বোরকা পড়া আরেকজন পানজাবি মাথায় টুপি।

বুড়ো : দেখেছো গিন্নি। ঠিক আমাদের মতো। একসময় আমরাও এমন ছিলাম। মনে আছে কোথাও গেলে কিভাবে আমি তোমার কাপড় পড়ার বিষয়ে খেয়াল করতাম।
বুড়ি : তা আর বলতে। তা বাবা( মেহেরাবকে উদ্দেশ্য করে) বিয়ে হয়েছে কতদিন হলো।

তাদের কথা শুনে দুজনেই কিছুটা হতবম্ভ হয়ে পরল। একে ওপরের দিকে তাকালো। এই স্বামী স্ত্রী হয়ত তাদের কাপল ভাবছে।

মধুমিতা : না না দাদি। আপনি ভুল ভাবছেন। ইনি আমার চাচাতো ভাই হয়। আমার স্বামী না।
সোহান : হ্যাঁ। হ্যাঁ। আমরা অবিবাহিত।
বুড়ো ( হেসে হেসে ) : থাক থাক। আর বলতে হবে না। আমরা এখন বুড়ো হলে কি হয়েছে। একসময় জমিয়ে প্রেম করতাম। লুকিয়ে লুকিয়ে কত দেখা করেছি ট্রেনে। তোমরাতো তাও চাচাতো বলেছো। একবার তোমার দাদি এক শিক্ষকের সামনেও পরেছিল। আমাকে সোজা আপন ভাই বানিয়ে দিয়েছিল।
বুড়ি : হা হা। সেই দিনগুলোর কথা কি বলব আর। চিঠিতে কথা হতো আমাদের। কখনো কখনো চিঠি আসতে এতো দেরি হতো যেন মন চাইত গিয়ে যেনে আসি কি লিখেছে।
বুড়ো : দোয়া করি। তোমরাও যেন ভালোবাসার পূর্ণতা পাও।

মধুমিতা কি করবে না বুঝে অসহায় দৃষ্টিতে সোহানের দিকে তাকাল। সোহানও বুঝে গিয়েছে এদের আর বলে বুঝানো যাবে না। তাই প্রসঙ্গ এড়াতে সে তাদের রুমটার বাহিরে চলে গেল। মধুমিতা অবশ্য এই সুযোগে তাদের লাভ স্টোরি শুনতে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পর সোহান ঝালমুড়ি, আলুর চপ, হাবিজাবি নিয়ে এসেছে সবার জন্য। মধুমিতা না বললেও ও বুঝেছে এতো সময়ে ওর ক্ষিদে লেগেছে নিশ্চয়ই। ঝালমুড়ি দেখেতো মধুমিতা অনেক খুশি।

ঢাকায় আসতে আসতে প্রায় দুপুর হয়ে গেল। ওই দম্পতি এই স্টেশনে নামবে না। পরেরটায় নামবে। তাই তাদের থেকে বিদায় নিয়ে মধুমিতা আর সোহান নেমে যায় নিজেদের গন্তব্য স্থানে। চারপাশে জমে থাকা পানি আর ভেজা ভেজা পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে বৃষ্টি হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই।

সোহান আর মধুমিতা পাশের রেস্তোরাঁয় কিছু খাওয়া দাওয়া করে নিল। এবার মধুমিতাকে হোস্টেলে দিয়ে সোহানের নিজ ফ্লাটে যাওয়ার পালা। নামার আগে অবশ্য মধুমিতা সোহানকে একটা থ্যাংকস জানিয়েছে। তারপর হোস্টেলের গেট দিয়ে ঢুকে গেল। মধুমিতা ভাবছে আর হয়ত সোহানের সাথে দেখা হবে না। তবে সোহান ভাবছে অন্যকিছু। একটা ডেভিল হাসি দিয়ে সে তার ফ্লাটে চলে গেল।
………

অনেকদিন পর আজ ভার্সিটিতে ক্লাস করতে যাচ্ছে মধুমিতা। সাথে বান্ধবী মিসমিও আছে। ভার্সিটিতে নাকি এই ডিপার্টমেন্ট এ নতুন স্যার এসেছেন। ঢাকা মেডিকেলের ই ডক্তর। দুজন মাঠে হাটছে আর কথা বলছে।

মিসমি : মুরগি খায় ধান, নতুন স্যার আমার জান।
মধুমিতা : 😐 পাগল হলি।
মিসমি : দুধ,মাখন,দই খাই। আমি শুধু নতুন স্যারকেই চাই।
মধুমিতা : আরে কিসব হাবিজাবি কবিতা শুরু করলি।
মিসমি : দোস্ত। তুইতো এই কদিন ছিলি না। ভার্সিটিতে নতুন দুজন স্যার এসেছে। একজন আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর। অন্যজন আরেক ডিপার্টমেন্ট এর। দুজনেই যা দেখতে।
মধুমিতা : স্যাররা বাবা মায়ের সমতুল্য। তাই এসব ডং বাদ দিয়ে পড়ায় মনোযোগ দে। সামনে এক্সাম।

এমন সময় হঠাৎ মিসমির গায়ের উপর কেউ এক বালতি জল ঢেলে দিল।
মিসমি : কোন ডগিরে।
” ডগি না। আমরা।” দুজনে পিছ ফিরে দেখে একদল ছেলেমেয়ে। বুঝতে আর বাকি নেই কিসের পাল্লায় পরেছে তারা। ভার্সিটিতে পড়তে আসবে র‍্যাগিং এর পাল্লায় পরবে না এমন খুব কম ছেলেমেয়ের সাথেই হয় আজকাল। এখন এই গ্রুপে তিনটা ছেলে আর দুইটা মেয়ে আছে।

একজন ভার্সিটির প্রিন্সিপালের ছেলে রুদ্র। সাথে দুই বন্ধু স্বপন আর আয়ান। মেয়ে দুটোর নাম আরু আর রুশি। দুজনেই ছোট ছোট ড্রেশ পরা। উপরে ইউনিফর্ম। রুশির চুল বব কাট করা ছোট ছোট। দেখতে চাইনিজদের মতো।

রুদ্র ( মিসমি আর মধুমিতাকে ইঙ্গিত করে) : এই মেয়েরা। এদিকে আসো।
মিসমি : থাক সরি বলতে হবে না। আমি খুব দয়ালু। মাফ করে দিছি।
আরু : হোয়াট? কি বলছ এসব। কে কাকে মাফ করবে।
মিসমি : ও মা। আপনারা তো আমাকে ছরি বলতেই ডাকলেন। ঐ যে একটু আগে ভুলে পানি দিলেন।
আয়ান : ভুলে পানি দিয়েছি তা কে বলল।
মিসমি : হি হি হি। ভুলেই দিয়েছেন জানি। নয়ত আমার সম্পর্কে না জেনে দিয়েছেন। জানলে হয়ত দিতেন না।
মধুমিতা (আস্তে আস্তে): ঐ মিসু এখন অন্তত জামেলা করিস না। তুই মার্শাল আর্ট জানোস তাই সব কিছুতে নাক গলাস না।
রুশি : এই মেয়ে আস্তে কি বলিস।

মিসমি : আর বলিস না। ও একটু এমনই।
রুশি : তুই কি আমাকে তুই করে বললি।
মিসমি : হ্যাঁ বললাম। কেনো? তুই আমাদের ক্লাস মেট না? না হলে তুই করে বলছিস কেন। আমিও বললাম।
আরু : ইউ ব্লডি বিচ। আই উইল কিল…
রুদ্র : থাম আরু।

রুদ্র পা থেকে মাথা অব্দি মিসমিকে দেখে নিল। অত্যাধুনিক পোশাকের ছোয়া না থাকলেও মোটামুটি। একটা লং স্কার্ট আর ফুল হাতার শার্ট। উপরে গলায় পেচ দেয়া ওড়না। মাথায় ছোট একটা হিজাবও আছে দেখি। মেয়েটার সাহস আছে মানতে হবে। পাশের মেয়েটার থেকে এই মেয়েটাকে বেশ মনে ধরেছে রুদ্রর।

রুদ্র : নামকি তোমার?
মিসমি : আশফি জাহান মিসমি। আপনার?
আয়ান : সিনিয়রদের পাল্টা নাম জিগ্যেস করছ।
রুদ্র : আরে থাম। মাহিয়ান রুদ্র। কোন ইয়ার?
মিসমি : ফাস্ট।
রুদ্র : ওহহ। পানি দেয়ার জন্য সরি। এখন যাও।
মিসমি : ইটস ওকে।

মধুমিতা মিসমিকে টেনে নিয়ে ক্লাসের দিকে চলে গেল। এই মেয়ের বেশি সাহসের জ্বালায় মধুমিতা শেষ। বাকিরাতো হা করে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। যেই রুদ্রর সামনে কেউ একটা বাড়তি কথা বললে তার খবর হয়ে যেত সেই রুদ্রর আজ কি হলো।

রুশি : ডুড। কি হলো এটা?
রুদ্র : কোনটা কি হলো?
আরু : এইযে মেয়েটাকে লাই দিয়ে মাথায় উঠিয়ে নাচালি।
রুদ্র : লাই কই দিলাম। জাস্ট একটু কথা বললাম আরকি।
স্বপন : ডালমে কুচ কালা হে।
আয়ান : ডালমে কুচ কালা নেহি পুরা ডালই কালা হে।
রুদ্র : থামতো। আমি ভাই সোজা কথার মানুষ। মেয়েটাকে ভালো লেগেছে। ওর ব্যাপারে খোজ নিয়ে দেখতো। চল এখন ক্লাসে যাই। সময় হয়ে গিয়েছে ক্লাসের।
……
র‍্যাগিং এর মতো কমন থিম গল্পে আনতে চাইনি। তবে ধারাবাহিক কাহিনী প্লটের কিছু দৃশ্যের জন্য এই চরিত্র গুলোর দরকার ছিল। তবে বাকি পার্টে এই এক বিষয় টানবো না।~লেখিকা।

#চলবে….

{ আসসালামুয়ালাইকুম। হ্যাপি রিডিং }

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে