রাত যখন গভীর ২ পর্ব-২৬+২৭+২৮

0
1506

#রাত_যখন_গভীর
#জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
#(jannatul_mawa_moho)
Season:02
Part :২৬
************
=>হেই রিনি,
রিরিনিনি….
পিছনে ফিরে দেখনা?
ফাইনালি তোকে পেলাম?
রিনি।।।

=> আজিব তো।। এটা কি রিনি নই নাকি?
যাক পাশে গিয়ে দেখি!

রিনির ঘোর কাটে কারো ডাকে।রিনি তার পাশে একটা মেয়ে কে দেখে। সে মেয়ে টা ভালো ভাবে লক্ষ্য করে। এটা আর কেউ না।মেয়ে টা হলো রিনির প্রিয় বান্ধুবী ঐশী।

রিনি বলেঃ তোই এখানে?
কেনো?

ঐশী বলেঃ আরে,তোই তো অনেক অনেক দিন কলেজ যাস না।তোদের বাসার মোবাইলে ও কল দিয়ে ছিলাম।কোন রেসপন্স পাইনি।আর আমি এখানে,আমার এক কাজিন এর বিয়ে তে আসলাম।হঠাৎ গাড়ি থেকে লক্ষ্য করলাম তোকে।
দূর থেকে দেখে ও চিনতে ভুল করিনি রিনি।তোর যে এখানে দেখা পাবো কল্পনা ও করিনি রিনি।

রিনি বলেঃ হুম। তো বিয়ে তে যা!
দেরি হয়ে যাবে তো?

ঐশী বলেঃ আহা আহা।মিস আপনি ও যাচ্ছেন আমার সাথে!

রিনি বলেঃ পাগলের প্রলাপ করচিস নাকি?আমি যাবো না।

ঐশী বলেঃ কেন যাবি না?

রিনি বলেঃ যাবো না মানে যাবো না।

ঐশী বলেঃ তোর সাথে আড়ি না গেলে।

রিনি বলেঃআবে,
আমি কি ড্রেস পড়ে আছি দেখচস?
এগুলো নিয়ে বিয়ে তে কেমনে যাবো?একটা প্রস্তুতি ব্যাপার আছে না।

ঐশী বলেঃ এটা কোন কথা। মে হো না।আর শোন,
আমার কাছে অতিরিক্ত একটা কাপড় আছে। গাড়ির মধ্যে উঠে পড়।এখনই যাচ্ছি আমরা।অকে!

আবার,
ঐশী বলেঃ তোই এইখানে কি জন্য আসচস?
কলেজ না গিয়ে ঘুরাঘুরি!
অনেক পড়া মিস গেলো তোর!!

রিনি বলেঃ আমি বেড়াতে এসেছি।আব্বু বন্ধু অর্ক আঙ্কেল এর বাসায়।
কালকে ই বেক করবো।।
আর,
কলেজ এখন থেকে রেগুলার যাবো।
পড়া কভার করে নিবোনে।না বুঝতে পারলে, তুই আছিস কি জন্যে????

রিনি মনে মনে বলছে, যদি জানতি ঐশী কেনো আসলাম! এই জায়গায়?
কেনো আসলাম অর্ক আঙ্কেল এর বাসায়?
কি হয়েছে আমার সাথে? তাহলে,
তুই ও শিহরীত হবি?

আবার,
রিনি বলে উঠেঃআরে ঐশী, বাসায় কি বলতে হবে না নাকি আজব?
সবাই যদি চিন্তা করে?
তখন আবার আমাকে খুজতে বের হবে।রাস্তায় রাস্তায় পাবলিসিটি করবে??
হি হি হি।।
তাছাড়া,
মা তো বেজায় রাগ করবে!!

ঐশী বলেঃ জানিতো।চল এবার।
আমি মোবাইল করে তোর বাসায় বলবো।সো ডোন্ট ওয়ারিড মাই জান।তোর আম্মু কিছু করবে না দেখিস।।

রিনি আর দ্বিমত পোষণ করে নি।কারণ, ঐশী যে চিজ,না গেলে রিনিকে হাজার টা প্রশ্ন করবে।এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে হয়তো বা রিনি শহীদ হয়ে যাবে।

দুজন গাড়িতে উঠে পড়ে। গাড়ি চলছে। গাড়ি থেকে প্রকৃতি দেখছে, রিনি ও ঐশী।
প্রকৃতি দেখতে দেখতে,
গাড়ি টা এসে থেমেছে একটা বড় প্রাসাদ এর সামনে। দুজন গাড়ির থেকে বেরিয়ে আসে।আর তখনই, আগমন ঘটে, দুটা মহিলার।মহিলা দুটো ঐশী র কাছে চলে আসে।

তারা বলেঃআপা, বিয়ে শুরু হতে অল্প কিছু সময় বাকি।আপনারা প্রস্তুত হয়ে নিন।দেরি কইরেন না কিন্তু।

ঐশী বলেঃ আচ্ছা। আমার রুম টা কোন দিকে?
আর মা কে জানিয়ে দিবে আমি এসেছি।

মহিলা বলেঃ আপনার রুস আগের টাই আছে।

ঐশী বলেঃআচ্ছা। আমি রেডি হয়ে আসছি।

মহিলা চলে গেল। এমন সময়,
রিনি বলেঃ এই টা কার প্রাসাদে আনলি?

ঐশী বলেঃ হাটতে হাটতে বলি।সময় বেশি নেই।রেডি ও হতে হবে।

রিনি বলেঃ হুম চল।

ঐশী বলেঃ আমার দাদা পুরাতন জমিদার ছিলেন।এটা তার ই প্রাসাদ। অনেক চাকর চাকরানি ছিলো।এখন ও অল্প কিছু আছে। আর আজ আমার চাচাতো বোন সাদিয়ার বিয়ে। আমি আগে আসতে পারিনি,কারণ আমার ময়না পাখি টা অসুস্থ ছিল। আজকে পশু হাসপাতালে রেখে এখানে আসলাম।মা বলেছেন বিয়ে তে না আসলে, আমার পকেট মানি কমিয়ে দিবে।সো জাবারদাস্তি আসতে হলো।

রিনি বলেঃ হুম বুঝতে পারছি। তো রুম টা কোন দিকে?

ঐশী বলেঃ এইতো সামনের টা।আই,

দুজন রুমে প্রবেশ করে। রিনি দেখে, রুম টা অনেক আলিশান একটা রুম।রুমের প্রত্যেকটা জিনিস অনেক পরিপাটি করে রাখা আছে। বিছানার উপর একটা লেহেঙ্গা রাখা আছে।

রিনি বলেঃ এটা কার জন্য রে?

ঐশী বলেঃ আমার জন্য।

ঐশী আবার বলেঃ তোর জন্য একটা আছে, ওয়েট।

এরপর, বেগ থেকে ঐশী একটা লেহেঙ্গা বের করে দেয়। আর বলেঃ যা এটা পড়ে নে।আমি ও আমারটা পড়ে নি।

রিনি ড্রেস টা পড়ে নিলো।কিন্তু রিনির পেট দেখা যাচ্ছে। সাথে দেখা যাচ্ছে তার সেই তিল টা।

রিনি তাড়াতাড়ি এসে বলেঃ আবে,এটা কি দিলি?
পেট দেখা যাচ্ছে?
অন্য কোন ড্রেস কি নেই?

এটা বলতেই,রিনির চোখ যায়, ঐশীর দিকে। ঐশী একটা লেহেঙ্গা পড়েছে।তবে ব্লাউজ টা অন্য রকম। কাধ এর দিক দিয়ে উম্মুক্ত। পেট ও দেখা যাচ্ছে। পিট এর অনেক টা অংশ ও দেখা যাচ্ছে।

ঐশী বলেঃ মেরি জান।
আমার টার চেয়ে বেটার না তোর টা?
নাকি আমার টা পড়বি?

রিনি বলেঃ না না বাবা, এটাই ঠিক আছে। আমি এটাই পড়লাম।

ঐশী বলেঃ তোর টা ও এই ডিজাইন মানে আমার গায়ে যেটা পড়লাম। এ ডিজাইনে করার কথা ছিলো।কিন্তু ভুলে এমনটা হয়ে গেল।

রিনি বলেঃ আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন। তোর এই রকম লেহেঙ্গা পড়া আমার পক্ষে
জাস্ট ইম্পসিবল।

ঐশী বলেঃ হয়ছে মেরি জান।আমাদের দেরি হয়ে যাবে।সাজগোজ করে নে।
টেবিলের কাছে গহনা আর মেকআপ এর সামগ্রী আছে। তৈরি হয়ে নে।আমি ও তৈরি হচ্ছি।

রিনি আয়নার সামনে চলে গেল। আয়নার মধ্যে দেখে,আজ রিনি কে অন্য রকম লাগছে।এমন ড্রেস আগে পড়েনি কখনো।

আর বেশিক্ষণ নিজের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করে নি রিনি।কারণ দেরি হয়ে যাবে।
রিনি এরপর, একটা বড় গহনা গলায় পড়ে। কপালে টিকলি,হাতে হাত ভর্তি চুড়ি, কানের মধ্যে কানের দোল,
চোখে কাজল, ঠোঁটের মধ্যে লাল লিপস্টিক। কপালে একটা ছোট টিপ।
চুল গুলো খোলা রাখে নি।কারণ, চুল গুলো ও ওতপ্রোতভাবে জড়িত রিনির এই অবস্থার জন্য।

তাই রিনি চুলের মধ্যে সিতা করে, চুল গুলো খোপা করে নিলো।হালকা মেকাপ।রিনির ব্লাউজ টা লাল রঙের ছিলো।লেহেঙ্গার নিচের টা সাদা।ওড়নার সাদা হলেও পারটা লাল ছিলো।

রিনি এখন সম্পূর্ণ রেডি।রিনি পিছনে ফিরে দেখে ঐশী ও রেডি।ঐশী কে সবুজ রঙের লেহেঙ্গা টা বেশ মানিয়েছে।

ঐশী, রিনির কাছে এসে বলেঃ হাই।মেরি দোস্ত কো না নাজার না লাগে। লাল রঙের লেহেঙ্গা তে জাস্ট অস্থির লাগছে।

রিনি বলেঃ যা একটু বেশি বলিস।তোরে কিন্তু সেই লাগছে। আমি কিন্তু ফিদা হয়ে গেলাম বেবি।

ঐশী বলেঃহয়ছে হয়েছে আর বলিস না।এবার, যা তো।

রিনি বলেঃ কই যাবো?

ঐশী বলেঃ
ওই যে দরজার সামনে গিয়ে স্টাইল করে দাঁড়িয়ে থাক।

রিনি বলেঃ কেন?

ঐশী বলেঃ যা না মেরি মা।

রিনি স্টাইল করে দাঁড়িয়ে আছে। ঐশী মোবাইল দিয়ে টুস টাস কয়েক টা ছবি তুলে নেই। এরপর দুজনের কিছু সেলফি নিলো।রিনি ও ঐশী কে বেশ কিছু ছবি তুলে দিলো।

রিনি বলেঃ হলো কি?
ছবি তুলতে তুলতে বিয়ে শেষ হয়ে যাবে।এবার তো চল।

ঐশী বলেঃ আচ্ছা চল।

কতদূর এসে,ঐশী বলেঃ আরে তোর বাসায় কল করে বলে দি।

রিনি বলেঃ হা বলে দে।না হলে খুজতে বের হবে।

ঐশী বলেঃ আচ্ছা।

কল দেয় রিনির বাবা কে। মা কে দেয় নি কারণ মায়েরা প্যাচাল বাড়ায়।

ঐশী বলেঃ আঙ্কেল রিনি আমার সাথে আছে। রাতে পৌঁছে দিবো। রাতে না হলে একদম সকালে দিবো।

মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে কামাল বলেঃ আচ্ছা মা।একটু দেখে রেখো।আমার মেয়ে টার মন ভালো নেই ভালো হলো তোমার সঙ্গ পেয়ে। ঠিক সময়ে পৌঁছে দিও।আমরা কাল দুপুরে বাসায় বেক করবো।

মোবাইল টা কেটে দিলো।রিনি ও হাফ ছেড়ে বাচলো।
দুজন পা বাড়ালো অনুষ্ঠানের দিকে। তাছাড়া, রিনির ভালো লাগছে, ঐশীর সাথে থাকতে পেরে।রিনির মনটা ও ভালো হয়ে গেছে অনেকটা। কিছু সময়ের জন্য সব কিছু অনেকটা ভুলে গেছে রিনি।

অনুষ্ঠানে প্রবেশ করে দুজনেই। কিন্তু অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতেই, রিনির কেমন যেনো একটা অনুভূতি হচ্ছে।

💮

💮

সুমি বসে বসে কান্না করছে। কারণ কি করবে সে?
রহমান ও ছেড়ে চলে গেল। বিয়ে হয়ে গেছে হুক না রহমান জিন?
বিয়ে তো বিয়ে।
যার ফলস্বরুপ তো সুমি এখন বিবাহিত!
কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না সুমি।

হঠাৎ করে, সুমির সামনে, রহমান জিন ( শয়তান প্রিন্স) হাজির হলো।

রহমান জিন বলেঃ এই দিকে আসো।আমাকে জড়িয়ে ধরো।
সুমি বলেঃ কেন জড়িয়ে ধরবো?

রহমান বলেঃ চুপ একদম। যা বলছি তাই করো।অন্য তায় আমার রাগ উঠে যাবে।

সুমি আর কথা বাড়ালো না, রহমান কে জড়িয়ে ধরে। মূহুর্তে তারা আবার রহমানের রুমে চলে আসে।

রহমান বলেঃ সুমি তোমার সাথে যেভাবে হবে হোক বিয়ে টা তো হলো।তুমি আমার বউ।
তাই আমি আমার বউ কে রেখে আসতে পারলাম না।
যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।তাছাড়া, আমি পৃথিবীতে একটা কলেজ এর স্যার।কিছু দিন পর জয়েন্ট করতে হবে। তখন তুমি ও পৃথিবীতে বেক করবে আমার সাথে ততদিন এইখানে থাকতে হবে। আর আমার মা বাবা কে কষ্ট দিও না।

সুমি নিশ্চুপ হয়ে সব শুনছে।সুমির কেন জানি এই মানুষটার কথা গুলো বড্ড শুনতে ইচ্ছে করে। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকতে মন চাই।

রহমান ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গেল। সুমি দাঁড়িয়ে আছে। কারণ, তার কাছে কাপড় নেই।

রহমান কখন যে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে গেল ।আর রুম থেকে যে কখন বেরিয়ে গেল সুমি বুঝতে পারে নি।

সুমি বলেঃ এখন কাপড় কোথায় পাবো?
আমার তো গোসল করতে হবে। রহমান কেউ দেখছি না।

এমন সময়, সুমির চোখ গেল। রহমানের কমলা রঙের টিশার্ট এর দিকে।সুমি আর কিছু চিন্তা না করে সেটা নিয়ে ওয়াশরুমের মধ্যে চলে গেল।

টিশার্ট টা সুমি গোসল করার৷ পর পড়ে নেই।কিন্তু, তার পা গুলো উম্মুক্ত হয়ে আছে। টিশার্ট টা টানতে টানতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে পড়ে।

সুমি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখতে পেল………

💮

💮
শাম্মি ও হাবিব দাড়িয়ে আছে বাগানের পাশে। একটু পর শাম্মি চলে যাবে তার নিড়ে।
কিন্তু, শাম্মি চলে যাবে বলাতে হাবিবের বুকের মাঝে তিব্র যন্ত্রণা অনুভব করল।

শাম্মি নামক পাখি টা ফিরে যাবে।তার নীড়ে। কিন্তু এই চলে যাওয়া টা বড্ড জ্বালাচ্ছে হাবিব কে।

দুজন অনেক্ক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কিচ্ছু বলছে না।হাবিব নিরবতা ভেঙ্গে বলে উঠেঃশাম্মি প্রথম দেখে তোমার মাঝে ডুবে গিয়ে ছিলাম। বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।জানি না তুমি ভালোবাস কিনা।

কিন্তু আমার মন ও প্রাণ জুড়ে শুধু তুমি আছো।
আমার এই দু-হাতে তোমার হাত রাখবে কি?
একসাথে বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ হবে কি?

শাম্মি অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে হাবিবের দিকে। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে, শাম্মি বাগান থেকে চলে গেল। পিছনে ফিরে ও দেখে নি।

হাবিব বলেঃ ভালোবাসা প্রকাশ করা টা যদি পাপ হয়।তাহলে এই পাপের শাস্তি পেতে দ্বিধা বোধ করবোনা।শাম্মি মাথা পেতে নিবো।কিন্তু তোমার কাছ থেকে দূরত্ব টা মেনে নিতে পারবো না। শাম্মি তুমি কি এই ভালোবাসা হীন অপূর্ণ মরুভূমির জীবন টাকে তোমার ভালোবাসা দিবে না???
চলবে……

#রাত_যখন_গভীর
#জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
#(jannatul_mawa_moho)
Season:02
Part :২৭
************
সুমি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখতে পেল.
রহমান(শয়তান প্রিন্স জিন) বসে আছে বিছানার উপর।

সুমি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসতেই রহমানের চোখ জোড়া সুমির দিকে পড়ে।

সুমি টিশার্ট টা টানছে।সুমির মাথা দিয়ে টপটপ পানি ঝরে পড়ছে। ঠোঁটের কোণে ও এখনো জল জমে আছে।

রহমান বিছানা থেকে উঠে সুমির কাছে চলে আসে।

রহমান বলেঃ আমার কাপড় কেনো পড়লে?

সুমি বলেঃ আআ….. আসলে। আমি কাপড় পাচ্ছিলাম না।তাই বাধ্য হয়ে পড়লাম।সরি রি…..রি

সুমির তুতিয়ে বলা কথা গুলোতে রহমান বেশ মজা পাচ্ছে। তাছাড়া,সুমির মুখ খানা একদম ভয়ে চুপসে গেছে।

রহমান সুমির এমন অবস্থা দেখে হেসে দেয় ।

সুমি বলেঃ হাসছেন কেন?

রহমান জিন বলেঃ বারে কি করবো?
তোমার এই ভয়ে চুপসে যাওয়া মুখ অন্য কেউ দেখলে ও হেসে দিতো।

সুমি বলেঃ ওই মিয়া এতো হাসানি কেন.?
আমাকে নিয়ে মজা লও মিস্টার রহমান।
আজ আপনাকে কি করি দেখেন।

এটা বলে,সুমি ঝাপিয়ে পড়ে রহমান এর শরীরের উপর। রহমান ও ছেড়ে দেবার পাত্র নহে।

সুমির কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়াতে থাকে।এক পর্যায়ে, রহমান কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে বিছানার মধ্যে পড়ে যাচ্ছিলো।কিন্তু সুমি রহমান থেকে খানিকটা দুরত্বে ছিলো।তাই রহমান তাল সামলাতে সুমির হাতটা ধরে ফেলে ছিলো।

তবে,হাত ধরে উপকার হয়নি।কারণ, রহমানের গায়ের উপর পড়ে যায় সুমি।দুজনে তাল সামলাতে পারে নি।

সুমি এখন রহমানের একদম খুব কাছে।
সুমির নিশ্বাস ভারি হয়ে যাচ্ছে। রহমান এর সাথে সুমির একদম তেমন দূরত্ব নেই ।

দুটি ভেঙ্গে যাওয়া হৃদয় চাইলে অনায়াসে এক হয়ে যেতে পারে।তাছাড়া,দুটো ভাঙ্গা হৃদয় মিলে একটা হৃদয় ও হতে পারে।

হঠাৎ করে,
সুমির টিশার্ট টা উঠে গেছে কোমরের দিকে।অবশ্য হঠাৎ না,সুমি নাড়াচাড়া করার ফলাফল এটা। যার ফলে সুমির উরুর থেকে পা অবধি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

সুমি বারবার টিশার্ট টা টানছে নিচের দিকে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

রহমান আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে সুমি কে।
রহমান আজ মেয়ে টাকে ভালোভাবে দেখছে।

সুমির চুলের পানি এসে পড়েছে রহমানের মুখে। রহমান যেনো কোন এক ঘোরে চলে যাচ্ছে।হারিয়ে যাচ্ছে কোন এক অজানা সুখের রাজ্যে।
এমন সময়, দরজা তে…..

💮

💮

জান্নাত দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। লাবু এসে একটা চা দিয়ে গেছে।কালকে সবাই চলে যাবে।

জান্নাত এর মনের কালবৈশাখী ঝড় টা এখনো থেমে যায় নি।

জান্নাত আপন মনে বলেঃ বিশ্বাস ঘাতক দের কোন মাফ নেই।
কেনো লুকিয়েছে সে জে জিন পরী?
সত্যি তো চাপা থাকে না।বেরিয়ে আসে।সে কি জানতো না!

হঠাৎ করে কেউ একজন টান দেয় জান্নাত এর হাতটা ধরে। জান্নাত লক্ষ্য করে দেখে এটা মুগ্ধ।

জান্নাত বলেঃ আপনার কি লাজলজ্জা কিছু নেই?
আপনি এতো বেহায়া কেন?
এতো বড় মিথ্যা বলার পর আপনার মন এখানে আসার জন্য সাই দিলো কেমনে?
ওহু আপনি + আপনার মন দুজন ই বেহায়া।

মুগ্ধ বলেঃ
মন কে তো অনেক শাসন করি,মনটা যে শুনে না বারণ।সে চাই তার ভালোবাসা, ছাড়তে পারে না তোমাকে পাওয়ার আশা।

জান্নাত বলেঃ এসব বেহায়া কথা আপনি কেমনে বলতে পারেন?
এতোদিন বিশ্বাস ঘাতক করার পর!!!!

মুগ্ধ বলেঃ জান্নাত, আসলে,
আমি বলি না নিজের মুখে, আমায় বলায় মনের মুখ।

জান্নাত বলেঃ যত্তসব। চললাম। ফারদার আমার সামনে আসবেন না।

মুগ্ধ বলেঃ ভালোবাসি জান্নাত। একটা মিথ্যা কি মাফ করে দেয় যায় না???
আমার হৃদয়ে শুধু তুমি আছো। ভালবাসি অনেক জান্নাত।

জান্নাত বলেঃনাহ যায় না। তাছাড়া এসব লাভ টাভ আমি মানি না।এতো লাভ এর কথা আসে কেমনে???

মুগ্ধ বলেঃ
It’s my love.who came from my heart and i know my heart.

জান্নাত বলেঃ whatever. I don’t Trust u.

মুগ্ধ বলেঃ জান্নাত,
may be you aren’t serious about my love.that’s why you Don’t Trust me.

জান্নাত বলেঃ সিরিয়াস হবো কেন?
মিথ্যােক একটা।
আমি জাস্ট ঘৃণা করি।মিথ্যা বাদিদের।

মুগ্ধ বলেঃ
আমি না তোমাকে জোর করতে পারিনা।কারণ ভয় মনে, অনেক যে ভালোবাসি তোমাকে।তার জন্য দুটি লাইন লিখতে গেলে খাতা ফুরিয়ে যাবে। তোমাকে আমি ভোরের সূর্যের আলোতে দেখি।তাকে আমি খোলা আকাশে মেঘের ঢেউয়ে দেখি।তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি।

জান্নাত বলেঃ ভালো থাকবেন।আশা করি আমাদের আর দেখা হবে না ইনশাআল্লাহ। কালকেই চলে যাবো।এখন আমি বাসার ভিতরে যায়।

জান্নাত বাসায় বারান্দায় গিয়ে। একটু পিছনে ফিরে বাসায় ঢুকে যায়।

মুগ্ধ নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে জান্নাত এর চলে যাওয়া।

💮

💮

অনুষ্ঠানে প্রবেশ করে দুজনেই। কিন্তু অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতেই, রিনির কেমন যেনো একটা অনুভূতি হচ্ছে।

হঠাৎ করে একটা গান শুরু হয়েছে,রিনির বড্ড মনে বাধছে গানটা,
chal, chal ve tu bandeya,
Uss galiya
Jahaan koi kisi ko na
Jaane
Kya rehna wahaan par
Sun bandeya,
Jahaan apne hi na
Pehchaane,,,,

গান শেষ হতেই, রিনির বারবার মনে হচ্ছে আশেপাশে খুব কাছের মানুষ আছে। আনচান ভাবটা কাটাতে চাই রিনি।তাই,
এমন সময়, রিনি ডাক দেই ঐশী কে।

রিনি বলেঃ ঐশী…..
ঐশী বলেঃ হুম বল।
রিনি বলেঃ আচ্ছা, কেউ কারো প্রতি অব্যস্ত হয়ে গেলে তাকে কি অনুভব করে সবসময়?

ঐশী বলেঃ no way.এটা তো অব্যস্ত না।এটা ভালোবাসা।একমাত্র ভালোবাসার মানুষ টা কে অনুভব করা যায়। আর ভালোবাসা তে অব্যস্ত বলতে কোন শব্দ নেই রিনি।তোই কেন জিজ্ঞেস করছিস?

রিনি বলেঃ আরে এমনি।

ঐশী আবার বলেঃ আর হে।ভালোবাসে ফেলার পর যদি প্রিয় মানুষ টাকে কাছে না পাওয়া যায় ।তখন মনে হবে,রঙিন জীবন টা সাদা ও কাল হয়ে গেছে।

রিনির কিচ্ছু ভালো লাগছে না কান্না আসতে চাইছে। কিন্তু কেনো এমন হচ্ছে?
ঐশী বলেঃ কিরে কি হলো?কি সমস্যা বল আমাকে?
চোখে অশ্রু দেখতে পাচ্ছি মনে হচ্ছে!

রিনি বলেঃ কই এমন কিছু না।

ঐশী বলেঃআসলেই,
আমরা খুব দুঃখ পুষে রাখি।হঠাৎ এক একদিন আমাদের কত পুরানো কথা মনে পড়ে যায়। আর বুকের ভিতর আচমকা একটা ধাক্কা লাগে। যার ফলে চোখে অশ্রু এসে পড়ে।

রিনি বলেঃ হুম। আচ্ছা শোন ঐশী আমি একটু ওয়াশরুমের মধ্যে যাচ্ছি।

ঐশী বলেঃ আচ্ছা যা।তাড়াতাড়ি আসিস।বর, বউ এসে পড়েছে। তাদের বেশ মানিয়েছে।তাড়াতাড়ি আসবি কিন্তু ছবি তুলবো।

রিনি বলেঃ হুম।
রিনি ওয়াশরুমে চলে গেল। আর ওয়াশরুমে
গিয়ে ইচ্ছে সুখে কান্না করে। রিনি নিজে ও বুঝতে পারছে না।কেনো কষ্ট হচ্ছে?
কেনো বারবার অনুভব করছে?
কি চাই এমন?কেনো যে মনের মাঝে মেঘের সৃষ্টি হয়েছে? কিচ্ছু বুঝতে পারছে না রিনি।।।

কান্না করার পর মনটা একটু ভালো হয়ে যাই। রিনির ও ভালো লাগছে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে।

ওয়াশরুম থেকে সামনে যেতেই লেহেঙ্গা টা কিছু একটার সাথে আটকে যায়। রিনি খেয়াল করে নি।
যার ফলে সামনে এগিয়ে যেতেই টাস করে পড়ে যায়।

অবশ্য রিনি মনে করছে, সে পড়ে গেল । কিন্তু সে চোখ জোড়া খুলে দেখে সে পড়ে যায় নি।
তাকে কেউ একজন ধরেছে।

লোকটার হাত রিনির কোমরে। লোকটা রিনি কে দাড়াতে সাহায্য করে।

রিনি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। রিনি অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে একটা লোকের দিকে।যে রিনি কে পড়ে যাওয়া থেকে বাচিয়েছে।

লোক টা অবিকল প্রিন্স (ইনতিয়াজ) এর মতো.
রিনি লোকটা কে ভালো ভাবে দেখতে লাগলো।

অতঃপর,
রিনি বলেঃ আপনি ইনতিয়াজ না?
এখানে কি করেছে?

লোকটা বলেঃ কি?
ইনতিয়াজ কে?
আমি কোন ইনতিয়াজ না।
আমি হলাম মাহমুদ।

রিনি বলেঃ কিন্তু আমার যে মনে হচ্ছে আপনি ইনতিয়াজ এবং এটা উপলব্ধি হচ্ছে।

লোকটা বলেঃ
কোন বিষয় ভালো ভাবে বুঝার জন্য বা উপলব্ধি করার জন্য অভিজ্ঞতা বড্ড প্রয়োজন।
তোমার কোন প্রমাণ আছে যে আমি ইনতিয়াজ অর হোপ সো,আমি কে সে বিষয়ে তোমার অভিজ্ঞতা নেই।মিস কি নাম আপনার?
পিচ্চি মেয়ে উপলব্ধি ও করে হা হা…

রিনি বলেঃ রিনি।

লোকটা বলেঃ হ্যাঁ মিস রিনি।আপনাকে পড়ে যাওয়া থেকে বাচিয়ে দিলাম ধন্যবাদ ও দিলেন না।any way.

এমন সময় ঐশী আসে সেখানে। ঐশী বলেঃ মাহমুদ স্যার আপনি?
আপু অনেক্ক্ষণ ধরে বলছে স্যার কেন আসছে না?
আপনি দেখা করে নেন,

লোকটা চলে গেল। ঐশী বলেঃ আবে রিনি কি পেঁচাল বাধালি বল এবার। কি কি বলছিস মাহমুদ স্যার কে?তোই তো আর জানিস না উনি কত বড় মাপের একজন লোক।

রিনি বলেঃ কত বড় মাপের একজন লোক তা জানার দরকার নেই। আগে বল,
ওনার নাম মনে হচ্ছে মাহমুদ না।ইনতিয়াজ মনে হয়?

রিনি খুব ভালো ভাবে দেখলো লোকটা কে। অবিকল প্রিন্স এর মতো। প্রিন্স সাদা চশমা পরতো না লোকটা পড়ে।
প্রিন্স শার্ট ইঙ্ক দিয়ে পড়তো না।
লোকটা পড়ে।
কিন্তু লোকটা স্টাইলিস আছে তবে,attitude দেখায়।প্রিন্স তো এমন না।
প্রিন্স তো রিনি বলতে পাগল।রিনিকে দেখলে দেখে থাকে।কিন্তু এইলোক তো পাত্তা দিলো না।তাহলে কি দুজন আলাদা??

ঐশী বলেঃ আবে কই হারালি?
ওনার নাম মাহমুদ। আর হা।
মাহমুদ স্যার যে কে তুর কোন আইডিয়া আছে।শুন ওনার পরিচয়।

ঐশী আবার বলতে শুরু করেঃ

চলবে…..

#রাত_যখন_গভীর
#জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
#(jannatul_mawa_moho)
Season:02
Part :২৮
************
ঐশী আবার বলতে শুরু করেঃমাহমুদ স্যার হচ্ছেন ভার্সিটির প্রফেসর। তিনি অনেক অমায়িক মানুষ। তার অবদানের জন্য আমার চাচাতো বোন এর ভালোবাসা সফল হয়েছে।স্যার এর কাছে সাহায্য চেয়ে ছিলো।
মাহমুদ স্যার তার দিক থেকে বেস্ট চেষ্টা করছে।

তবে স্যার একা একটা ফ্ল্যাটে থাকে।পরিবারের কাউকে কখনো দেখিনি। স্যার এর জন্য ভার্সিটির অনেক মেয়ে পাগল। মাহমুদ স্যার কাউকে পাত্তা দেয় না।উনি খুব ভালো ছবি অঙ্কন করে। ওহ হা।তার একটা বন্ধু কে দেখেছি। নাম টা জানি না।প্রায় নাকি বন্ধু টা ভার্সিটি যায়।তবে মাহমুদ স্যার গম্ভীর টাইপের মানুষ।

রিনি বলেঃ এতো সব কেমনে জানলি?
তোই তু আর ভার্সিটি তে না।
তোই তো কলেজ এ?

ঐশী বলেঃ আমার আপু বলেছিল। তবে স্যার এর বন্ধু কে আমি দেখছিলাম। একদিন ভার্সিটি তে ঘুরতে গেছিলাম তখন।

রিনি বলেঃ মাহমুদ স্যার কে আমার রহস্য ময়ী লাগলো!
উনি হয়তো এমনা।

রিনির মন বলছে,এটা প্রিন্স কিন্তু প্রিন্স তো তাকে কখনো ইগনোর করে নি।তাহলে???

আবার বলে ঐশী বলেঃ ওহ হা।স্যার তেমন কোথাও যায় না।আমাদের বাসা থেকে রিকোয়েস্ট করছে অনেক। তাই আসছে।
আল্লাহ মালুম তোই কি পেচার করলি রিনি।

রিনি বলেঃ আমি কিছু করিনি বে।

ঐশী বলেঃআচ্ছা স্যার এর কথা বাদ দে তো।আয় বিয়ে তে মজা করি।

গান চলছে। ঐশী ও রিনি নাচতে লাগলো। এমন সময় আরও অনেকে জয়েন্ট হলো।সবাই নাচছে খুব সুন্দর একটা মূহুর্ত।কিন্তু,

হঠাৎ করে, একটা ছেলে রিনির কাছে চলে আসে।

ছেলে টা বলেঃ আমি কি আপনার সাথে নাচতে পারি!মিস

রিনি বলেঃ অকে। u can.

ছেলে টা রিনির হাত ধরে নাচতে লাগলো।দুজনের হাতে হাত স্পর্শ হওয়ার কিছু মুহুর্ত পর, ছেলে টার শরীর অসম্ভাবিত ভাবে ঘেমে যাচ্ছে। রিনি এটা লক্ষ্য করে। আর ভয় পেয়ে যায়।

রিনি বলেঃ কি হয়েছে আপনার?
are u okk?? Mister

রিনি তাড়াতাড়ি হাত ছেড়ে দেয় ছেলে টার। ছেলে টা সোফায় গিয়ে বসে। রিনি লক্ষ্য করে, ছেলে টার হাত ছেড়ে দেয়ার সাথে সাথে ছেলে টার ঘেমে যাওয়া অনেক টা কমে যায়।

রিনি বুঝতে পারছে না এমন কেন হলো!

রিনি আবার নাচতে লাগলো। এমন সময় একটা ঘ্রাণ পেলো রিনি।

রিনি বলেঃআমি চিনি এই ঘ্রাণ। এটা আমার খুব পরিচিত।

রিনি খুজতে লাগলো ঘ্রাণ টা।ঘ্রাণ টা খুঁজতে খুঁজতে রিনির চোখ জোড়া গেলো দূরে একটা জুটির উপর।

সেটা ছিলো,মাহমুদ স্যার ও একটা মেয়ের।
মাহমুদ স্যার একটা মেয়ের কোমরের মধ্যে হাত দিয়ে আছে। আর মেয়ে টা মাহমুদ এর গলায়। দু’জন এর খুশী খুশী চেহারা। গানের তালে তালে দুলছে তারা দুজন।

রিনি বড্ড খারাপ লাগছে। এটা দেখে। রিনির মন এতক্ষণ বলছিল,এটা প্রিন্স। কিন্তু এটা দেখার পর রিনি মন মানতে নারাজ এটা যে প্রিন্স (ইনতিয়াজ)। প্রিন্স কখনো এমন করবে না।রিনির বুকের বা পাশে বড্ড কষ্ট হচ্ছে। রিনির মনে হচ্ছে, বাঁপাশ টা তে কেউ যেনো হাতুড়ি পেটাচ্ছে।

রিনি বলেঃ এটা তো মাহমুদ স্যার।প্রিন্স তো না।মাহমুদ স্যার কে প্রিন্স মনে করলাম। তাই বলে অমন নাচের দৃশ্য সহ্য হচ্ছে না!
এটা দেখে আমার কেন কষ্ট হচ্ছে?
কেন বুকের ভিতর জ্বালাতন কাজ করছে?

রিনি আর ভাবতে পারছে না।নিজের অনিচ্ছার সত্যে ও আবার চোখ দিলো মাহমুদ ও মেয়ে টার দিকে। দুজন হেসে হেসে নেচে যাচ্ছে। রিনির কান্না পাচ্ছে।রিনি আর এক মূহুর্ত ও থাকবে না এখানে ।বাসায় যাবে।

রিনি বলেঃ ঐশী আমি চলে যাবো।আমার খারাপ লাগছে।

ঐশী বলেঃ মেরি জান তোর মুখ এমন হয়ে আছে কেন?
তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
একটু আগে খুশী ছিলি।এখন এই অবস্থা কেন?
কি হয়েছে?

রিনি বলেঃ আমি জাস্ট বাসায় যাবো।প্লিজ তোর পায়ে পড়ি বাসায় যেতে দে।কেনো যাচ্ছি?
কি হলো?
এসব প্লিজ জিজ্ঞেস করিস না।দোহাই লাগে। প্লিজ।

ঐশী বলেঃ আচ্ছা, বউ ও জামাই কে টাটা দিয়ে যা।
আর আমার আম্মুর সাথে দেখা করে নে।আমি ড্রাইভার কে বলছি।আমি নিয়ে যেতাম।কিন্তু এখন আমি বের হলে কেলেঙ্কারি করবে।

রিনি বলেঃ সমস্যা নাই।ড্রাইভার অ্যারেন্জ করে দিলে হবে।তোর অনুষ্ঠানে থাকা প্রয়োজন। আমি বুঝি ঐশী। ধন্যবাদ। আমাকে আনার জন্য।

ঐশী বলেঃ এতো ফরমালিটি কেন মেইনটেইন করচিস?
এবার চল ওদের সাথে দেখা করি।

রিনি সবাই কে বিদায় দিলো।ঐশী কে বলেছে, কাপড় টা পরে দিয়ে দিবে।

রিনি দাঁড়িয়ে আছে গেইটে। ঐশী বাড়ির ভিতরে গেছে গাড়ির ব্যবস্হা ও ড্রাইভার এর ব্যবস্হা করতে।

হঠাৎ করে,
ঐশী এসে বলেঃ সব গাড়ি বুকিং রে।কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।
চিন্তা করছিলাম।

কিন্তু হঠাৎ করে,মাহমুদ স্যার এর নাকি কি কাজ চলে এসেছে। ওনি চলে যাচ্ছে। সোনা প্লিজ আমি ওনাকে রিকোয়েস্ট করছি।তোকে ড্রপ করে দিবে।তোই মানা কনিস না মেরি জান।

রিনি বলেঃ হুম।মানা করবো না।

রিনি মনে মনে বলছে,পালাতে ই চাচ্ছিলাম।কিন্তু একি নিয়তির লিখন?
কেনো এই লোকটার সামনে নিচ্ছে।
আমি ভাবতে চাই না। প্রিন্স এর কথা না আমি ভাবতে চাই মাহমুদ স্যার এর কথা।

গাড়ির টু টু শব্দে রিনির ঘোর কাটে। গাড়ির দরজা খুলে,
রিনি পিছনে বসতে যাচ্ছি লো।

তখনই,
মাহমুদ বলেঃ ঐশী আমাকে কি ড্রাইভার এর মতো মনে হচ্ছে?
কিছু টা রেগে।আমি কি এখানে কারো ড্রাইভার?
একে তো অপরিচিত একজন এর দায়িত্ব নিলাম।তার উপর আমাকে ড্রাইভার বানানো?

ঐশী করুন দৃষ্টিতে রিনির দিকে তাকিয়ে আছে। রিনি বুঝতে পারছে ঐশীর চোখের ভাষা। তাই রিনি আবার সামনের সিটের মধ্যে বসে পড়ে ।

গাড়ি স্টারট দেয়। মাহমুদ একটা গান চালিয়ে দেয়।
“যে পাখি ঘর বুঝে না,
উড়ে বেড়ায় বন বাজারে।
ভুলা মনে মিচি কেনো,
মনের কাঁচায় রাখিস তারে।

ও পাখি ছন্ন ছাড়া,বাঁধন হারা,
মানে না প্রেমের শিখল,
ও পাখি দশ দোয়ারে,
শত মন করে তখন।

পাখিটার এমন স্বভাব,
নিজের অভাব পূরণ করে নিজের মতো,
পাখিটা হাসে খেলে অন্তরালে,
শুনিপুন করে কতো!!!

গানটা শেষ হতে হতে রিনি বলেঃ দাড়ান। আমি পৌঁছে গেছি।

মাহমুদ গাড়ি থামিয়ে দেয়।মাহমুদ একবার এর জন্য ও রিনির দিকে তাকিয়ে দেখে নি।অগুনিত বার রিনি তাকিয়ে ছিলো মাহমুদ এর দিকে।

রিনি গাড়ি থেকে নেমে গেল। তাও মাহমুদ ফিরে তাকাই নি।
রিনি নামতেই, মাহমুদ গাড়ি টা স্টার্ট দেয়।

রিনির কেন জানি কষ্ট হচ্ছে। রিনি বলেঃ আচ্ছা, আমি মাহমুদ স্যার কে প্রিন্স মনে করছি কেন?
আর মাহমুদ স্যার এমন আচরণ গুলো মনের মধ্যে কষ্টের সৃষ্টি করছে কেন?
ওনি তো মাহমুদ স্যার প্রিন্স না।প্রিন্স এমন করলে কি আমি এমন ই কষ্ট পেতাম?
তাহলে কি আমি জিলাস?
আমি কি তাহলে প্রিন্স কে?

না না এটা হতে পারে না। আমি মাহমুদ স্যার কে নিয়ে বেশি চিন্তা করছি।মাহমুদ স্যার ও প্রিন্স হয়তো এক না।আমি হয়তো গুলিয়ে ফেলছি।

রিনি নিজের সাথে কথা বলতে বলতে অর্কের বাড়ির রাস্তা ধরে।

💮

💮

সুমির চুলের পানি এসে পড়েছে রহমানের মুখে। রহমান যেনো কোন এক ঘোরে চলে যাচ্ছে।হারিয়ে যাচ্ছে কোন এক অজানা সুখের রাজ্যে।
এমন সময়, দরজা তে…..
একটা টুকা পড়ে।

রহমান জিন এর ঘোর কেটে যায়। রহমান জিন বলেঃ সরি সরি।সুমি।আমি বুঝতে পারিনি।

এটা বলে সুমি কে ছেড়ে দেয়।রহমান তাড়াতাড়ি আলমিরা থেকে একটা সাদার ওপর লাল রঙের কাজ করা শাড়ি বের করে দেয়।

রহমান বলেঃ এটা পড়ে নাও।আর কখনো আমার টিশার্ট পড়লে ও।এমন ভাবে আমার সামনে আসবে না।মিস সুমি।

সুমি একদম নিস্তেজ হয়ে গেছে।

সুমি শাড়ি টা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। রহমান দরজা খুলে দেখে এটা তাসনীয়া।

রহমান জিন বলেঃ কি রে?
কি জন্য আসলি?
আমাকে ডাক দিলে তো হতো।

তাসনিয়া(রহমান জিন এর বোন) বলেঃসমস্যা নেই। ভাই আমি ঘুরতে যাচ্ছি। তবে কখন বেক আসবো জানি না।আমার কিছু ভালো লাগছে না।

রহমান বুঝতে পারছে,তাসনীয়ার কষ্ট। রহমান নিজে ও বুঝে।নিজের ভালোবাসা কে অন্য জনের পাশে দেখলে কতটা কষ্ট হয়।

রহমান বলেঃ কোন সমস্যা নেই। যা তোর যখন ইচ্ছে বেক আসিস।আর হা কোন প্রয়োজন হলে, তোর চোখের মধ্যে নীল রঙের আস্তরণ গভীর করিস।আর চোখ জোড়া বন্ধ করে রাখিস।আমি তখন বুঝতে পারবো, তোর কোন হেল্প লাগছে আমার।যা তাসনিয়া, আল্লাহ হাফেজ।

তাসনিয়া বলেঃ সুমি কে ওফ,ভাবিকে একটু বলে যায়। একদম কথা হয়নি তার সাথে।

এমন সময় সুমি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। পরনে তার শাড়ী টা। হালকা পেট দেখা যাচ্ছে। চুল গুলো খোপা করেছে। চোখে মধ্যে কাজল।

তাসনিয়া বলেঃ বাহ বেশ লাগছে ভাবি।সত্যি তুমি অনেক সৌন্দর্যের অধিকারি।
আর হা আমি ঘুরতে যাচ্ছি। কখন বা,কত দিনের মধ্যে ফিরে আসবো জানি না।ভালো থেকো।আমার ভাই টা কঠোর হলে ও মনটা বড্ড ভালো। সালাম।

সুমি বলেঃ ধন্যবাদ। কিন্তু তোমাকে মিস করবো।তাড়াতাড়ি চলে আসিও।আল্লাহ হাফেজ।

তাসনিয়া চলে গেল। আর রহমান জিন চোখের কোণ দিয়ে আড়চোখে সুমিকে দেখছে। সুমি তাকিয়ে আছে তাসনিয়ার চলে যাওয়ার দিকে।

💮
জান্নাত, হাবিব,কামাল,রাবেয়া তাদের জিনিস সব গুছিয়ে নিলো।
তারা একটু পর রওনা দিবে।তবে রিনি না আসলে তো যেতে পারবে না।

রেশমি,রাহাত হুজুর এবং অর্ক ও লাবুর সবাই উদাস হয়ে আছে। এতো দিন একসাথে কাটিয়ে সবাই একটা পরিবার এর মতো হয়ে গেছিলো। এখন তাদের ছাড়া থাকতে হবে ভাবতেই তাদের মন খারাপ হচ্ছে।

রাজা মশাই, লোভা রানি,শাম্মি ও রেডি হয়ে যাই। তারা ও আজ চলে যাবে।শাম্মি এখনো কিছু জানায়নি হাবিব কে।শাম্মি অবশ্য হাবিব কে এডিয়ে চলছে।

একটু পর, রশিদ রাজা, লোভা,শাম্মি সবাই কে বিদায় জানিয়ে চলে গেল।

হাবিব তাকিয়ে ছিলো শাম্মির চলে যাওয়ার দিকে।
হাবিব বলে উঠেঃ
“আকাশ ভরা দুঃখ আমার
সাগর ভরা ঢেউ, এত কষ্ট
আমার বুকে,
দেখে নাতো কেউ,
দুঃখ দিয়ে স্বপ্ন বুনি
কষ্ট দিয়ে আকি
স্বপ্ন আমার ভেঙে যায়।
আমি চেয়ে থাকি।
(কবিতা লেখিকাঃ উর্মি)

হাবিব আবার বলেঃ শাম্মি তাহলে কি আমিও ব্যর্থ প্রেমিক এর দলে নাম লিখলাম!!!!!

অন্য দিকে, মুগ্ধ সবাই কে তার পরিচয় লুকানোর জন্য মাফ চাই। সবাই বলেঃ কোন সমস্যা নেই। তবে নিরব ভুমিকা পালন করেছে জান্নাত।

মুগ্ধ অনেক্ক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে জান্নাত এর দিকে। কিছু বলছেনা।মুগ্ধকে ইমারজেন্সি তলব করেছে। তাই তার ও যেতে হচ্ছে।

জান্নাত একবারের জন্য ও তাকিয়ে দেখে নি মুগ্ধের দিকে।
মুগ্ধ একবুক কষ্ট নিয়ে, চলে গেল।

বাকিরা অপেক্ষা করছে রিনির জন্য। কামাল অবশ্য রাবেয়া কে সামলে নিলো।তাই বিয়ে তে যাওয়া তে রিনি কে বকছে না।কিন্তু রিনি যদি ঠিক সময়ে না আসে তাহলে বোমব্লাস্ট করবে রাবেয়া।

এমন সময়, রিনি

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে