রাত বিকেলে প্রেমের কুঞ্জন পর্ব-০৩

0
620

গল্পের নাম : #রাত_বিকেলে_প্রেমের_কুঞ্জন
লেখিকা: #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্ব : ৩

গাছগাছালি তে ভরা ঘন জঙ্গলে আলো আসছে খুব কষ্ট করে। মনে হয় যেন সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছে। একটা খোলা জায়গায় সবাই গোল হয়ে বসেছে। মাঝে একটা বোতল। এখন ট্রুথ আর ডেয়ার খেলার পালা। প্রথমে মিরাব বোতল ঘুরালো। মুখের দিক সিনহার দিকে এসে পরেছে।

মিরাব : ট্রুথ নাকি ডেয়ার?
সিনহা : ট্রুথ।
ঝুমুর : ক্রাশের নাম বল।
সিনহা (লাজুক ভঙ্গিতে ) : মুরতাসিম আর হামজা।
মধুমিতা : এরাতো পাকিস্তান ড্রামার নায়ক।
সোহান : একটা থাপ্পড় দিয়ে ড্রামা দেখা বের করে দিব একদম। সামনে এক্সাম আর উনি পড়া বাদ দিয়ে ড্রামা দেখে। এই বয়সে ক্রাশ কি আবার।
মিরাব : আহ। ভাইয়া! এগুলো কেমন ব্যবহার। এজন্যই তোমাকে আমরা আনতে চাইনি। নিজেতো বুড়ো আনরোমান্টিক হয়ে গেছ। আমাদেরও এমন বানাতে চাও নাকি?
সোহান: আমি বুড়ো? আনরোমান্টিক?
সিনহা : ঠিকই তো বলছে। এত বড় হয়েছ না করছ প্রেম না করছ বিয়ে।
সোহান : বড় ভাইয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় মেনারস ভুলে গেলি নাকি?
মধুমিতা (মুখ ব্যঙ্গ করে) : নিজেই জানে না। আরেকজনকে শিখায়।

সোহান কিছু বলতে যাবে এর আগেই ঝুমুর চিল্লিয়ে বলে উঠল, ” মধুমিতা তোর গায়ে জোক।”

মধুমিতা : আ……

এক চিৎকারে সবার কানের পর্দা প্রায় ফাটিয়ে দিয়েছে। গাছে বাড়ি খেয়ে ওর চিৎকারের আওয়াজ আবার প্রতিফলিত হচ্ছে। সবাই চোখ বন্ধ করে কানে হাত দিয়ে মাথা নিচু করল। এত জোড়ে তো দশটা বক্স একসাথে বাজালেও আওয়াজ হয়না। এদিকে ভয়ে মধুমিতা সিনহাকে এমন ভাবে চেপে ধরছে যেন ওর দম যায় যায়।

সিনহা : সোহান ভাইয়া হেল্প। ওকে ছাড়িয়ে নিজের কাছে নেও। দম আটকে গেল আমার।

যতই ঝগড়া করুক বোনই তো। সোহান আর কিছু না ভেবে মধুমিতাকে ছাড়িয়ে নিজের কাছে নিল। মধুমিতার আর এত কিছু হুশ নেই। ও সামনের ব্যক্তির বুকে মাথা রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তাকে। সোহান যেন মধুমিতার প্রতিটা কাপুনি অনুভব করতে পারছে। নিজেকে প্রচুর আন কমফরটেবল লাগছে তার। কোনোদিন কোনো মেয়ে এতটা কাছে আসেনি তার। একটূ পর মধুমিতা শান্ত হলে এক ঝটকায় সড়ে যায় সে। ইশশ কি লজ্জা। তার এমন রিয়েকশন দেখে সোহান সহ বাকি সবাই হেসে দিল।

মিরাব : বাহ। কি রোমান্টিক।
ঝুমুর : একটা গুশি দিবো। এখানে রোমান্টিক কিছু হয়নি। দুর্ঘটনা শুধু।

তবে সবার সাথে এবার সোহানও হেসে দিয়েছে মধুমিতার রিয়েকশন দেখে। মেয়েটা আসলেই বাচ্চা। এইদিকে এই প্রথম সোহানকে হাসতে দেখল মধুমিতা। তবে লজ্জায় আর দ্বিতীয়বার তাকায়নি। এদিকে একেতো সবাই এসেছেই বিকেল দিকে। এখন আবার প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। সবাই তাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। মাঝপথে ব্রিজ পার হতে হয় একটা। নদীর উপরের ব্রিজের পরিবেশটা খুব সুন্দর। একটা বড় দোকানও আছে সেখানে। সোহান কি যেন ভেবে সবার জন্য আইসক্রিম কিনে নিয়ে এলো একটা করে। সবাই আইসক্রিম পেয়ে খুব খুশি।
…………

সন্ধ্যা শেষে রাত নামল। আকাশে পূর্ণিমার চাদঁ। সবাই বাড়ির উঠোনে বসে গল্প করছে। এই রাত আবার কতদিন পর আসে কে জানে। কাল আবার মধুমিতা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। হোস্টেলে উঠতে হবে। পড়াশোনায় এমনিতেই গাফলতি হয়েছে অনেক। তবে কারোরই আলাদা হতে ইচ্ছে করছে না।

মিরাব : মধুমিতা। কয়েকদিন আরো থেকে গেলে কিন্তু পারতি।
মধুমিতা : নাহ ভাইয়া। তা আর সম্ভব না।
মিরাব : কোনো সমস্যা হলে সবার আগে এই ভাইকে কল করবি বলে দিলাম।
সিনহা : আপুর সমস্যা হলে সোহান ভাইয়াতো আছেই।

সবাই সিনহার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকায়। কি বলে এই মেয়ে। সোহানও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। সিনহা বুঝতে পেরে কথাটা ঘুরিয়ে নেয়।

সিনহা : না মানে। সোহান ভাইয়াও তো ঢাকায় থাকে তাই বললাম।
সোহান ( কর্কশ গলায়) : হ্যাঁ তো। আমি কারো দায়িত্বের বোঝা টানতে ঢাকা যাচ্ছি নাকি?
মধুমিতা : 😑 তো আমি কি কাউকে বলেছি আমার বোঝা টানতে নাকি। আজব। কিছু মানুষ সবসময় বেশি বুঝে।
ঝুমুর : ব্যস ব্যস। হয়েছে। এই মৌমাছির মধু। তুইনা খুব ভালো মেহেদী দিতে পারিস। দিয়ে দিবি আমাকে? এইযে নিয়ে এসেছি।
মধুমিতা : দে।

মধুমিতা এক এক করে সবাইকে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। মিরাবেরও নাকি মেহেদী দিতে
ইচ্ছে করছে। তাই মধুমিতা ওর হাতটা টেনে কোলে নিয়ে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। তবে সোহানের কেনো জানি বিষয়টা ভালো লাগেনি। তাই সে সেখান থেকে উঠে ঘরে চলে গেল।
…………..
“ভাবি। আমার কথাটা আরেকবার ভেবে দেখবেন কিন্তু”, খুব বিনয়ের সাথে কথাটা বলল মরিয়ম বেগম ( সোহান, সিনহা, মুক্তার মা)।
রহিমা : ভেবেতো দেখবই ভাবি। তবে আপনিতো সব জানেনই। আমার বাচ্চা মেয়েটার উপরে গত কিছুদিনে কি ঝড়টাই না গিয়েছে। তাই এসব ব্যাপারে আমি ওকে এখন কিছু বলতে চাইনা।
মরিয়ম : এখন কেনো বলবেন? কিছুদিন যাক। তখন নাহয় বুঝিয়ে বলবেন। ঘরের মেয়ে আমরা দূরে কেন দিবো। ঘরের মেয়ে ঘরেই রেখে দিবো।

তাদের এসব কথা আড়ালে দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুনছে সিনহা। এই একটা বাজে সভাব ওর। সবার কথায় শুধু আড়ি পাতা। তাদের দেখার আগেই আবার আস্তে করে সড়ে গেল সে।তার ছোট মাথায় যা বুঝার সে বুঝে গিয়েছে।

পরেরদিন সকালে …
আজ মধুমিতা ঢাকায় ফিরে যাবে। সব ব্যগ গুছিয়ে বিদায় নিচ্ছে সবার থেকে। সোহানেরও আজ না চাইতেও ঢাকা ফিরতে হচ্ছে। বাবার কড়া আদেশ। হোস্টেলে ঠিকভাবে মধুমিতাকে পৌছে দিয়ে তবেই নিজের ফ্লাটে যেতে পারবে সোহান। তাই সে নিজের ব্যগটা কাধে নিয়ে মুখ গোমড়া করে দাড়িয়ে আছে।

কিছুক্ষণ পর একটা অটো আসলো ওদের নিতে। এই অটো সোজা গিয়ে রেলস্টেশনে গিয়ে থামবে। ট্রেনে করে ঢাকা যাবে ওরা। মধুমিতাতো খুব খুশি। এই প্রথম ট্রেনে উঠবে সে। নব্বই দশকের কতো প্রেমের গল্প আর উপন্যাসে ট্রেনে হওয়া প্রেম সম্পর্কে শুনেছে সে হিসাব নেই। এখন কোনোভাবে নিজেও তেমন কাউকে পেয়ে গেলে হয়।

অতঃপর ট্রেনে….

#চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে