গল্পের নাম : #রাত_বিকেলে_প্রেমের_কুঞ্জন
লেখিকা: #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্ব : ২
“ইউ স্টুপিড। কে তুমি? দেখে চলতে পারো না। আর আমার বাড়িতে চোরের মতো ঢুকছো কেন” ~ বেশ কর্কশকণ্ঠে বলে উঠল সোহান। ধমক খেয়ে সাথে সাথে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় মধুমিতা। আর বাতাসে উড়তে থাকা ওড়নাটা টেনে নিচে নামিয়ে নেয়। খোপাটাও খুলে গিয়েছে। অবাধ্য চুলগুলো সামনে এসে এলোমেলো ভাবে উড়ছে।
এদিকে সোহান একটু আগে অজানা কোনো রমনিকে ঝাড়ি দিলেও এখন এক দৃষ্টিতে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। খোলা চুলে বাঙালি মেয়েদের এত সুন্দর লাগে কেন? যেন মনে হচ্ছে দুনিয়াটা থেমে গেছে। তবে এই ঘোর তার বেশিক্ষণ রইল। নিজের অনূভুতিকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তা তার খুব ভালো করে জানা আছে।
মধুমিতা : এই কে আপনি? আর একটু আগে আমাকে ঝাড়ি মারলেন কেন?
সোহান যেতেই নিয়ে ছিল তবে মধুমিতার কথায় থেমে যায়। পিছন ফিরে তাকায় মধুমিতার দিকে। তখন ওড়নার নিচে থাকায় মধুমিতাকে চিনতে পারেনি। তবে এখন ঠিকই চিনতে পারছে। তবে মধুমিতা হয়ত চিনতে পারেনি তাকে। চিনবেই কি করে? যে কয়বার এ বাসায় এসেছে সেই কয়বারই পড়াশোনার খাতিরে ঢাকা ছিল সোহান।
“মহাপুরুষদের সুন্দরী নারীদের সাথে অযথা কথা বলাটা শোভা পায় না।” একথা বলেই সোহান বাড়ির ভিতর ঢুকে গেল। মধুমিতা হা করে তাকিয়ে আছে। ছেলেটা ইগো দেখিয়ে অপমান করল, নাকি সুন্দরী বলে সুনাম করল। কিছুই বুঝছে না সে। আর কিছু না ভেবে সেও বাসায় প্রবেশ করল।
…………
আজ জমিদার বাড়িতে হরেক রকমের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। মুরগির রোস্ট, পোলাও, গরুর গোস্ত থেকে শুরু করে খাসির মাংস কিংবা হরেক রকমের পায়েস, সেমাই। সব কিছু যেন ভরপুর রান্না হয়েছে। মনে হচ্ছে যেন বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান। মনে হবে নাই বা কেন, আজ কতদিন পর পুরো পরিবার একসাথে দুপুরের খাবার খাবে।
মধুমিতার বড় চাচা সোহেল সরকার। তার দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ে মুক্তা স্বামী নিয়ে দেশের বাহিরে পারি জমিয়েছে। ছোট মেয়ে সিনহা এবার দশম শ্রেণিতে পড়ে, আর একমাত্র ছেলে সোহান সরকার। পেশায় একজন ডক্টর। মধুমিতার ছোট ফুপু শিফা। তার এক মেয়ে ঝুমুর। এক ছেলে যে বড় তার নাম মিরাব। সাথে তো মধুমিতার দাদা দাদিই আছে।
এতদিন পর সব ভাই বোনেরা একসাথে হয়ে কত খুশি। ডাইনিং রুমে বসে সবাই আড্ডা দিতে ব্যস্ত। মধুমিতাও যেন সব ভাই বোনকে একসাথে পেয়ে খুব খুশি। শুধু মুক্তা আপুকে খুব মিস করছে সবাই। আর সোহান হলো সবার বড়। সে একপাশে চুপ করে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ফোন টিপছে।
ঝুমুর : এই মৌমাছির মধু। তোর চুল এত বড় কেনরে?
মধুমিতা : তোরে কতবার বলছি আমারে মৌমাছির মধু ঢাকবি না।😑
সিনহা : ওর তো ঘাড়ের রগ সব ত্যারা। বলে লাভ নাই মধু আপু।
মিরাব : ওর তো পুরা মাথাই নষ্ট। নতুনের কি?
ঝুমুর : এই পুরো গ্রুপ মিলে আমাকে পচালে ভালো হবে না কিন্তু বলে দিলাম।
মিরাব : পচাবো না কেন? তোর জন্য তো আমি একটা নতুন নামই ভাবছি। আজ থেকে তোর নাম “মুরগির পায়ের নূপুর “। বাহ কি মেধা আমার😌। নোবেল পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। পরে তুই গাইবি আর নাচবি। ঝুমুর ঝুমুর নূপুর বাজে, মুরগি মেলেছে পাখনা.. আয়া…..
মধুমিতা : থাক বেচারিকে আর কেউ পচাবে না।
ঝুমুর : ছোট আ..ম্মু…।(রহিমাকে উদ্দেশ্য করে) দেখো সবাই আমাকে মানষিক নির্যাতন করছে।
রহিমা ( সবাইকে পায়েস দিতে দিতে) : কার এত বড় সাহসরে আমার পরী মেয়েটাকে কথা শুনায়?
সিনহা : ও পরি না ছোট আম্মু। ও হলো পেতনি। দেখোনা চুলগুলো কেমন কোকড়ানো।
সবাই এ ভাবেই নিজেদের মধ্যকার খুনসুটি দিয়ে আছে। আর সোহান যেন এসব চেচামেচিতে বেশ বিরক্ত হচ্ছে। সে ওদের সবার স্বভাবের সম্পূর্ণ বিপরীত। তার সবসময় শান্ত পরিবেশে থাকতে ভালো লাগে। গম্ভীর স্বভাবেরও বলা যেতে পারে। তবে চোখে চশমা পরে থাকা সিলকি চুলের ছেলেটাকে চাইলেও কেউ ইগনোর করতে পারবে না। তবে সোহানকে এই মূহুর্তে ঝুমুর বাদে সবাই ইগনোর করে নিজেদের দুষ্টুমিতে ব্যস্ত। শুধু ঝুমুর একটু পরপর পানির গ্লাস হোক বা পায়েসের বাটি। এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে সোহানকে। এই বিষয়টা সিনহাও কিছুটা খেয়াল করেছে।
……….
দুপুরের ভরপুর খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই ভাতঘুম দিয়েছে। তবে দোতলায় বারান্দাতে দাড়িয়ে আছে মধুমিতা। আইসক্রীম খেতে ইচ্ছে করছে তার। তবে এখন কাকে বলবে আনতে? গ্রামের বাড়িতে তে সচরাচর সব খানে দোকানপাঠও থাকে না। এক কাজ করা যায়। ফুপিকে রসমালাই বানিয়ে ফ্রিজে রাখতে দেখেছিল মধুমিতা। দুধে চুবিয়ে রাখা গোল্লা গুলো ঠান্ডা অবস্থায় খেলে আইসক্রিম এর মতোই লাগবে। মধুমিতাকে আর পায় কে? দৌড়ে নিচে নামছিল আবার কারো সাথে সজোড়ে ধাক্কা।
মধুমিতা : আউ..চ।
সোহান : আবার তুমি।
মধুমিতার মনে পরল সকালের কথা। তখন সোহানই তাড়াহুড়ো করে ঢুকছিল তবে বকাটা দিয়েছে মধুমিতাকে। এখন প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ। সোহানকে কিছু না বলতে দিয়ে এবার সেই বলা শুরু করল।
মধুমিতা : ইউ ননছেনস । কে আপনি? দেখে চলতে পারেন না। আর আমার রুমের সামনে চোরের মতো ঘুরছেন কেন? একটু আইসক্রিমও খুজতে দিবেন না নাকি?
একথা বলেই মধুমিতা একটা ভো দৌড় লাগায়। ওকে আর পায় কে। সোহান পুরো ভেবাচেকা খেয়ে গেছে। সবসময় সে সবাইকে কথা শুনায়। আজ এই দুইদিনকার পিচ্চি মেয়ে তাকে কথা শুনালো? আর কি বলল সে চোরের মতো রুমের সামনে ঘুরছে। পাশের রুমটাই তো তার। নিজের রুমেও যাবে না নাকি সে? এর বদলা সোহান সরকার ঠিকই পরে নিয়ে ছাড়বে।
এদিকে বিকেলবেলা…..
সবাই ঠিক করেছে আজ সবাই মিলে গ্রামের বড় জঙ্গলে ঘুরতে যাবে। ট্রুথ ও ডেয়ার খেলাও খেলবে সব ভাই বোন মিলে। তবে সোহান এসব খেলায় যেতে চায়না। কিন্তু বাবা সোহেল এর জিদের কাছে হার মেনে ওকে ওদের দায়িত্ব নিতে হয়। ওরা সবগুলোই তো বাচ্চা বাচ্চা মেন্টালিটি নিয়ে থাকে। তাই সাথে মেচিউর কাউকে তো থাকা উচিত।
সবাই অবশেষে জঙ্গলে এসে হাজির হলো। গাছগাছালি তে ভরা ঘন জঙ্গলে আলো আসছে খুব কষ্ট করে। মনে হয় যেন সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছে। একটা খোলা জায়গায় সবাই গোল হয়ে বসেছে। মাঝে একটা বোতল। এখন ট্রুথ আর ডেয়ার খেলার পালা। প্রথমে মিরাব…
#চলবে…