গল্পঃ #রাগি_মেয়ের_প্রেমে
#পর্ব_০৫ (জুয়েল)
(৪র্থ পর্বের পর থেকে)
কলেজ শেষ করে চলে যাচ্ছি এমন সময় একটা ছেলে আমাকে পেছন থেকে ডাক দেয়। আমি পিছনে তাকাতেই দেখি সেদিনের সেই ছেলেটা, যে প্রথম আমার গায়ে হাত দিয়েছিলো।
আমিঃ কি ভাই সমস্যা কি আপনার?
ছেলেঃ সেদিনের মাইরে মনে হয় তোর পেট ভরেনি।
আমিঃ মানে!
ছেলেঃ মানে আজকেও তোকে মারার জন্য টাকা দিয়েছে। এখন তুই বল তোকে কি করবো?
আমিঃ তো মারেন, টাকা যেহেতু খেয়েছেন, তো মারেন। মনে রাখবেন বিনা অন্যায়ে কাওকে আঘাত করলে সেটার ফল আপনিও পাবেন।
ছেলেঃ আচ্ছা শোন, তোকে আজকের মতো ছেড়ে দিলাম। কিন্তু একটা শর্ত আছে?
আমিঃ কি শর্ত?
ছেলেঃ তোকে এই ক্যাম্পাস থেকে চলে যেতে হবে। আর এক সেকেন্ডও এখানে থাকতে পারবি না।
আমিঃ……
ছেলেঃ কিরে কিছু বলিস না কেন?
আমিঃ ওকে চলে যাবো। আপনার মেডামকে বলবেন শান্তিতে থাকতে।
ছেলেঃ তুই গেলেই উনি শান্তিতে থাকবে।
আমি আর কোনো কথা না বলে বাসার দিকে হাটা দিলাম, চিন্তা করলাম আর না থাকাই বেটার হবে।
আয়মান যে সাদিয়াকে প্রপোজ করবে বলেছিলো সেটার কি হবে? ধুর যা হওয়ার হবে আগে ওদের দুজনকে মিলিয়ে দিয়ে যাই। কিন্তু সাদিয়ার বার্থডে তো আরো কয়েকদিন পর। এ কয়দিন ক্যাম্পাসে গেলে ছেলে গুলো আবার আক্রমণ করবে।
এবার আক্রমণ করলে আর বেঁচে থাকবো বলে মনে হয় না, তারচেয়ে বেটার এই কয়েকদিন ক্যাম্পাসে যাবো না।
এভাবে কয়েকদিন চলে গেলো সানি আয়মান বার বার কল দিয়ে কারণ জানতে চাইলো আমি অসুস্থ বলে কাটিয়ে দিলাম। অবশেষে সাদিয়ার বার্থডে চলে আসলো। আগামী কাল সাদিয়ার বার্থডে, আজকে থেকেই সবাই মিলে প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করলাম কিভাবে কি করবো।
বিকালবেলা সানি, আয়মান আর আমি দিঘীর পাড়ে গেলাম….
আয়মানঃ দোস্ত কেমনে কি করবো একটু তো বল।
আমিঃ কেকের অর্ডার দিয়েছিস?
সানিঃ হুম আমি আসার সময় দিয়ে আসছি।
আমিঃ গুড, কেকের মধ্যে একটা রিং লুকানো থাকবে, আমরা ৩ জন ছাড়া আর কেউই যেন না জানে।
সানিঃ অনুষ্ঠান করবি কোথায়?
আয়মানঃ সিজলার রেষ্টুরেন্টে করলে কেমন হয়?
আমিঃ আরে না, ক্যাম্পাসেই করবো। ফারিয়াকে বলে দিবো আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর সব গুলো মেয়েকে নিয়ে আসার জন্য।
সানিঃ ক্যাম্পাসে কোথায় করবি?
আমিঃ আমাদের ক্লাসেই, ক্লাস শুরু হওয়ার আগে আমরা আমাদের সব গুলো কাজ শেরে ফেলবো।
সানিঃ আচ্ছা ও প্রপোজ কিভাবে করবে?
আমিঃ বলছি, আয়মান শোন…
আয়মানঃ হুম বল,,,
আমিঃ এই স্টাইলে প্রপোজ করবি (একটা কাব্য মুখস্থ করতে বললাম)
আয়মানঃ আচ্ছা সাদিয়া যদি রাজি না হয়?
সানিঃ সেটা পরে দেখা যাবে। আগে প্রপোজ তো কর।
আমিঃ হুম, আমরা আছি টেনশন করিস না। আশা করি একসেপ্ট করবে।
আয়মানঃ দোয়া কর দোস্ত।
আমিঃ আচ্ছা এখন কিছু কেনাকাটা করতে হবে।
সানিঃ কি কি কিনবি?
আমিঃ আগে বাজারে চল তারপর না হয় দেখা যাবে।
আয়মানঃ ওকে চল। আচ্ছা আরেকটা কথা!
আমিঃ কি?
আয়মানঃ কালকে কি শার্ট প্যান্ট পড়বো নাকি কোট ট্রাই?
আমিঃ কালকে পাঞ্জাবি পড়বি।
আয়মানঃ তাহলে তোরাও পড়িস।
সানিঃ সেটা পরে দেখা যাবে।
আয়মানঃ পরে না, চল আমরা সেম কালারের পাঞ্জাবি কিনে নিই, কালকে পড়বো।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
এরপর ৩ জনে মিলে অনেক কেনাকাটা করলাম, জন্মদিনের যতো গুলো আইটেম আছে তারচেয়ে একটু বেশিই কিনলাম।
সব গুলো কেনাকাটা শেষ, এমন জন্মদিন আমি এর আগে কখনো পালন করিনি। যাইহোক রাত অনেক হয়ে গেছে, সকালে তাড়াতাড়ি ক্যাম্পাসে যেতে হবে তাই ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালবেলা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে সানির বাসার সামনে চলে গেলাম। আমি আর সানি তাড়াতাড়ি করে ক্লাসে গেলাম, যাওয়ার সময় সব গুলো জিনিষ সাথে করে নিয়ে গেলাম। গিয়ে আমরা দুজনে ক্লাসরুম সাজাতে শুরু করলাম। সানি বললো….
সানিঃ এই ফারিয়াকে একটা কল দিবো?
আমিঃ কেন?
সানিঃ ফারিয়াকে না ডাকলে হয়তো মনে কষ্ট নিবে। সাদিয়াকে ডাকার দরকার নাই।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে কল দে।
সানি ফারিয়াকে কল দিলো…
সানিঃ হ্যালো ফারিয়া কই তুই?
ফারিয়াঃ আমিতো বাসায়। কেন কি হইছে?
সানিঃ আরে ফকিন্নি বাসায় কি করিস, আজকে যে সাদিয়ার বার্থডে ভুলে গেছিস?
ফারিয়াঃ ওহ সিট,, আমার তো মনেই ছিলো না। তোরা কোথায়?
সানিঃ আমরা ক্লাসে আছি, তাড়াতাড়ি আয়।
ফারিয়াঃ ওকে আমি সাদিয়াকে নিয়ে আসছি।
সানিঃ আরে ওরে নিয়ে আসার দরকার নেই। ওরে নিয়ে আসলে তো আমাদের সব প্ল্যান জেনে যাবে।
ফারিয়াঃ তাও ঠিক, আচ্ছা তোরা থাক, আমি আসছি।
সানিঃ তাড়াতাড়ি।
ফারিয়া আসতে আসতে আমি আর সানি সব কিছু রেড়ি করে ফেললাম। একটু পর ফারিয়া আসলো….
ফারিয়াঃ কিরে এতোকিছু কখন করলি?
আমিঃ পরে শুনিস, এখন একটা কাজ কর।
ফারিয়াঃ কি কাজ?
আমিঃ সাদিয়া আসছে কিনা দেখ, যদি আসে তাহলে ক্লাসে আসতে দিস না, আমাদের এখনো অল্প একটু কাজ বাকি আছে।
ফারিয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
সানিঃ তো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা বাইরে গিয়ে দেখ।
আমিঃ এই তুই আয়মানকে একটা কল দেতো।
সানিঃ ওয়েট দিতেছি।
সানি কল দিলো…
সানিঃ কি ব্যাপার দুলাভাই, কই আপনি?
আয়মানঃ আরে ব্যাটা এমনে বলিস কেন, সরম লাগে তো।
সানিঃ তোর সরমের গুষ্টি কিলাই। তাড়াতাড়ি আয়,,,
আয়মানঃ এইতো আমি গেইটের সামনে আছি। ২ মিনিট ওয়েট কর আসছি।
সানিঃ তাড়াতাড়ি আয়।
একটু পর আয়মানও চলে আসলো। আমাদেরও সব কিছু রেড়ি, বাহ এতো সুন্দর লাগছে ক্লাসরুমটা দেখেই শরীরে একটা ভাব চলে আসলো।
আয়মানঃ বন্ধু আমার তো শরীর কাঁপতেছে।
সানিঃ কেন?
আয়মানঃ কিভাবে যে প্রপোজ করবো। আগে কখনো কাওকে করিনি তো, তাও এই রকম একটা সুন্দর পরিবেশে।
আমিঃ কবিতাটা মুখস্থ করছিস?
আয়মানঃ হুম।
আমিঃ ওটা মনে মনে রিভিশন দে।
আয়মানঃ দিতেছি তো।
কথা বলতেছি এমন সময় ফারিয়া কল দিলো….
ফারিয়াঃ হ্যালো জুয়েল!
আমিঃ হুম বল।
ফারিয়াঃ সাদিয়া তো আসছে। এখন কি করবো?
আমিঃ আচ্ছা নিচে দাঁড়া আমিমি আসতেছি।
ফারিয়াঃ তাড়াতাড়ি আয়।
এরপর আমি চলে গেলাম, যাওয়ার সময় সানিকে বললাম সব গুলো ফ্রেন্ডকে ক্লাসে ডেকে নিয়ে আসতে।
এরপর আমি নিচে চলে গেলাম,গিয়ে দেখি ফারিয়া আর সাদিয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতেছে। আমি যাওয়ার পর…
সাদিয়াঃ কিরে তোর আবার কি হইছে?
আমিঃ কেন আমার আবার কি হবে?
সাদিয়াঃ নীল পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে আসলি, ঘটনা কি?
আমিঃ আরে কিসের ঘটনা, এমনি একটা কারণ আছে।
সাদিয়াঃ তো কারণ টা কি আমরা জানতে পারি না?
ফারিয়াঃ ওই সব জানতে পারবি, এখন ক্লাসে চল।
সাদিয়াঃ ওকে চল।
আমিঃ ওই দাঁড়া।
সাদিয়াঃ আবার কি হলো?
আমি কোনো কথা না বলে ওর চোখ গুলো আড়াল করে ধরলাম।
সাদিয়াঃ কিরে চোখ ধরতেছিস কেন?
আমিঃ তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে, এখন হাটতে থাক।
আমি সাদিয়ার চোখ গুলো ধরে ক্লাসে নিয়ে যাচ্ছি আর পুরো ক্যাম্পাসের সবাই আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমার এমন কর্মকাণ্ড দেখে সবাই আমাদের পিছন পিছন আসতে লাগলো।
যাইহোক অবশেষে ক্লাসে নিয়ে গেলাম, ক্লাসেও অনেক গুলো বন্ধু ছিলো। আমি ক্লাসে নিয়ে গিয়ে ওর চোখ খুলে দিলাম আর বললাম… সারপ্রাইজ,,,,,,
সবাইক একসাথে বলে উঠলো Happy Birthday….
আমিও বললাম Happy Birthday Sadia, Happy Birthday Too You…
সাদিয়া এমন কান্ড দেখে অবাক হয়ে যায়, আর সাথে সাথেই আমাকে জড়িয়ে ধরে।
সাদিয়া যখন আমাকে জড়িয়ে ধরে বেচারা আয়মান একবুক মনে কষ্ট নিয়ে আমার দিকে তাকায়, মনে মনে বললাম সালা সারা জীবন তোকেই জড়িয়ে ধরবে।
তারপর আমি বললাম…
আমিঃ যা কেকটা কাট,,,
সাদিয়া কেক কাটতে গেলো, সানি কয়েকজন বন্ধুর হাতে অনেক গুলো বাজি দিয়ে দিলো, সবাই বাজি ফাটাইতেছে, আবার অনেকে স্প্রে মারতেছে। এসব কান্ড দেখে ফারিয়াও অবাক হয়ে গেলো।
সাদিয়া মোমবাতি নিবালো, সবাই এক সাথে উইশ করলাম। যখন সে কেক কাটবে তখনি কেকের ভিতর থেকে একটা রিং বের হয়, রিং দেখে সাদিয়া আরো বেশি অবাক হয়ে যায়। আমি আয়মানকে ইশারা দিলাম, এবার তার কাজ সেরে ফেলতে।
আয়মান আস্তে আস্তে সাদিয়ার সামনে গেলো, রিংটা হাতে নিয়ে ফিল্মি স্টাইলে হাট গেড়ে বসে আমি যে বাক্যটা শিখিয়ে দিয়েছিলাম সেটা বলতে লাগলো,,,
“” দেখেছি যে দিন প্রথম তোমায় দিয়েছি এই মন, এক জীবনে ভালোবেসে ভরবে না তো মন,, ধরবে কি আমার হাত, সারা জীবনের জন্য? বুঝবে কি আমার মন একটি বারের জন্য? যদি ধরো এই হাত, কথা দিলাম পুরো পৃথিবী ছেড়ে দিবো, তবুও তোমার হাত ছাড়বো না। সাদিয়া আমি তোকে ভালোবাসি, নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসি। আমি সারা জীবন তোর সাথেই কাটাতে চাই,,, I ♥ U সাদিয়া।”””
কথা গুলো বলে আয়মান নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, ডানহাতে রিংটি বাড়িয়ে দিয়ে। সাদিয়া গলা শুকিয়ে গেলো মনে হয়, বার বার এদিকওদিক তাকাচ্ছে। আমার দিকে তাকাতেই আমি ইশারায় একসেপ্ট করতে বললাম, সানিও বললো। এরপর ফারিয়ার দিকে তাকালো, সেও কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো।
সাদিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে কি যেন ভাবলো, তারপর নিজের হাত বাড়িয়ে দিলো, আয়মান খুশিতে রিংটা পড়িয়ে দিলো। ক্লাসের সকল বন্ধু একসাথে তালি বাজাতে শুরু করলো।
এরপর কেক কাটলো, আমরা একে অন্যকে খাইয়ে দিলাম। পরে একজন অন্যজনের মুখে কেক মেখে দিলাম। তারপর সবাই মিলে ছবি তুলতে লাগলাম এমন সময় তন্নি মেয়েটা ক্লাসে আসলো, এসব কর্মকান্ড দেখেই রাগে লাল হয়ে গেলো, আমার দিকে বড় বড় চোখ তুলে তাকাতে লাগলো। দেখে মনে হচ্ছে আমি তার অনেক সম্পদ লুট করে নিয়ে আসছি। তারপর কি যেন চিন্তা করে আবার ক্লাসের বাইরে চলে গেলো।
তন্নিকে দেখে আমারও কেমন যেন একটা টেনশন চলে আসলো, আল্লাই জানে আজকে আবার কি করে?
যাইহোক সবকিছু শেষ করে, আমরা সবাই কলেজ থেকে বের হয়ে গেইটের সামনে গেলাম, দেখলাম একটা পুলিশের গাড়ি। আমরা গেইট পার হয়ে বাইরে আসতেই একটা পুলিশ আমার কলার চেপে ধরে বললো…
পুলিশঃ ওই তোর নাম জুয়েল?
আমিঃ জ্বি।
পুলিশঃ চল তাহলে!
আমিঃ কোথায়?
পুলিশঃ শ্বশুরবাড়ি (থানায়)
আমিঃ আমার অপরাধ?
পুলিশঃ বাহ! শ্বশুরবাড়ি কি জিনিষ তাহলে বুঝে গেছিস? অপরাধ কি সেটা থানায় গেলেই বুঝতে পারবি।
সানিঃ স্যার আপনি বিনা কারনে ও কে নিয়ে যেতে পারেন না, আগে কারন টাতো বলে যাবেন।
পুলিশঃ ওই তোরা চুপ থাক, তোদেরও ব্যবস্থা নিচ্ছি তার আগে এই হালারে একটু দেখে নিই।
তারপরেই…..
#চলবে…….