গল্পঃ #রাগি_মেয়ের_প্রেমে
#পর্ব_০৪ (জুয়েল)
(৩য় পর্বের পর থেকে)
ভিতরে গিয়ে সিট নাম্বার খুঁজতে লাগলাম, অবশেষে মাঝখানের একটা টেবিলে আমার সিট পড়লো, আমার পাশেই দেখি তন্নির সিট, মেয়েটা প্রথমে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো, আমাকে দেখেই যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। তারপর বললো…
তন্নিঃ ওই কুত্তা, তুই এখানে কেন?
আমিঃ এই ভদ্রভাবে কথা বলেন। এখানেই আমার সিট, তাই আমি এখানে।
তন্নিঃ কিন্তু তুই আমার পাশে বসতে পারবি না।
আমিঃ সেটা আপনি স্যারকে বলেন। আমি এখানেই বসবো।
তন্নিঃ সেদিনের মাইরের কথা ভুলে গেছিস? আজকেও তোর একই অবস্থা করবো।
আমিঃ যা পারেন করেন বাট আমি এখান থেকে অন্য কোথাও যাচ্ছি না।
তন্নিঃ দেখ আমি কি করি।
ধুর, এই মেয়েটা থেকে যতোই দূরে থাকতে চাই ততোই কাছে চলে আসি। আল্লাই জানে আজকে আমার কপালে কি আছে।
তন্নি উঠে চলে গেলো, বাইরে গিয়ে প্রিন্সিপাল স্যারকে ডেকে নিয়ে আসলো।
স্যারঃ কি ব্যাপার জুয়েল! সমস্যা করতেছো কেন?
আমিঃ স্যার বিশ্বাস করেন আমি কিছু করিনি। উনিই বলছে আমি নাকি এখানে বসতে পারবো না।
স্যারঃ কেন এখানে বসলে সমস্যা কি?
তন্নিঃ না স্যার এই ছোটলোকের বাচ্চা আমার সাথে বসতে পারবে না। ওর কোনো যোগ্যতা আছে আমার সাথে বসার?
সবগুলো স্টুডেন্ট আমার দিকে তাকিয়ে আছে। স্যার তন্নিকে বললো….
স্যারঃ বসার মধ্যে আবার যোগ্যতা কিসের? আর ও অনেক ভালো ছেলে।
তন্নিঃ আপনার এতো কথা শোনার জন্য আপনাকে ডাকিনি। আপনি জাস্ট ও কে এখান থেকে উঠতে বলেন।
স্যারঃ এটা কোন ধরনের বেয়াদবি?
তন্নিঃ আপনি কি উঠাবেন নাকি আমি আব্বুকে কল দিয়ে আপনার ব্যবস্থা নিতে বলবো।
স্যারঃ না না না, তোমার আব্বুকে বলার দরকার নাই। আমি ও কে উঠতে বলছি। বাবা (আমাকে) কিছু মনে করো না, তুমি ওই পিছনের ব্যাঞ্চটাতে গিয়ে বসো।
আমিঃ কিন্তু স্যা…..
স্যারঃ প্লিজ বাবা, আমার কথাটা শুনো।
আমিঃ ওকে স্যার।
তারপর আমি পিছনে চলে গেলাম। রাগে পুরো শরীর গরম হয়ে গেলো। ইচ্ছা করছে আগের রূপে ফিরে যাই, আর দেখিয়ে দিই জুয়েল কি জিনিষ! মুহূর্তেই বাবার বলা কথা গুলো মনে পড়ে গেলো। নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে পিছনে গিয়ে বসলাম।
পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো, প্রশ্ন মোটামুটি কমন পড়েছে। ভালোই লিখলাম। তন্নি নাকি ফাস্ট গার্ল, আমার টার্গেট তন্নিকে যেভাবেই হোক পিছাতে হবে। সেই টার্গেট নিয়ে আমি আমার মতো পরীক্ষা দিচ্ছি।
এভাবে সব গুলো পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো, আমি সবার শেষে যেতাম আর সবার আগে চলে আসুতাম। চাইতাম না আর কোনো ঝামেলা হোক, মাঝে মাঝে সানি আর আয়মান এসে বাসায় দিয়ে যায়।
পরীক্ষার পর ৭ দিন বন্ধ দেয়, সানি, আয়মান, সাদিয়া আর ফারিয়া সিদ্ধান্ত নিলো কোথাও ঘুরতে যাবে। আমাকে বললো বাট আমার পকেটে কোনো টাকা ছিলো না। তাদেরকে মিথ্যা কথা বললাম যে আমি টিউশনি রেখে যেতে পারবো না। হয়তো পরে দেখা যাবে আমার টিউশনিটাই চলে গেছে।
পরে ওরাও আর ঘুরতে যায়নি,এমনি প্রতিদিন বিকালবেলা সবাই মিলে আড্ডা দিতাম। আজকেই বন্ধের শেষ দিন, সন্ধ্যার সময় টিউশনিতে গেলাম, গিয়েই তো মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা।
আমি যেই বাসায় পড়ায় সেই বাসায় তন্নি বসে বসে tv দেখতেছে, আমি দেখেই রেগে লাল হয়ে বলে…
তন্নিঃ ওই ছোট লোক তুই এখানে কেন?
আমি কোনো কথা না বলে পড়ার রুমে চলে গেলাম, এখানে কোনো কথা বললে মেয়েটা আমাকে বার বার ছোট করবে। এখানে অন্তত আমার একটা মান সম্মান আছে।
আমি গিয়ে পড়াতে শুরু করলাম, আমার স্টুডেন্ট কে জিজ্ঞেস করলাম…
আমিঃ ও তোমার কে হয়?
লিজাঃ ও আমার ফুফাতো বোন, আপনি ছিনেন নাকি?
আমিঃ না, এমনি।
লিজাঃ আরে ভাইয়া ওতো আপনাদের ওই কলেজেই পড়ে। দেখেন নি কখনো?
আমিঃ একবার মনে হয়ে দেখেছিলাম, সেজন্যই তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম। আচ্ছা বাদ দাও, তুমি বই বের করো।
তারপর বই বের করে পড়াতে শুরু করলাম, তন্নি আমাকে দেখেই ওই মামিকে মানে আমার স্টুডেন্ট এর আম্মুকে বার বার কি যেন বলতেছে, ওর মামিও কি যেন চিন্তা করলো তারপর কাকে কল দিয়ে কথা বললো, আমি ওই দিকে খেয়াল করলাম ওরা কি করতেছে কিন্তু স্পর্শ বোঝা যাচ্ছে না।
আমি পড়ানো শেষ করে যেই বাইরে চলে যাবো এমন সময় স্টুডেন্ট এর আম্মু এসে আমাকে বলে….
আন্টিঃ এই নাও…..(একটা খাম)
আমিঃ কি এখানে আন্টি?
আন্টিঃ তোমার এই মাসের বেতন।
আমিঃ কিন্তু আন্টি আমার তো এখনো মাস শেষ হয়নি।
আন্টিঃ জানি, কিন্তু তোমার পড়ানো আমাদের ভালো লাগছে না, তাই আমরা লিজার জন্য অন্য টিচার ঠিক করেছি। তোমাকে আর আসার দরকার নেই।
মুহুর্তেই পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যেতে লাগলো, এই দুইটা টিউশনি দিয়েই আমি পড়ালেখার খরচ চালাই, খাওয়াদাওয়া করি, আর তন্নি আমার পেটেই লাত্থি দিলো? বাহ! আসলেই নিয়তি কি থেকে কি করে বকা যায় না।
আমি আর কোনো কথা না বলে ওই বাসা থেকে চলে আসলাম, তন্নিকে দেখলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসতেছে। ফক্কিনি তোরে যদি কোনো দিন জায়গা মতো পাই তখন বোঝাবো জুয়েল কি জিনিষ, আপাতত এই শহর এই ক্যাম্পাসে নতুন তাই কিছু করছি না। নিজের ফাউন্ডেশন টা ঠিক করে নিই তারপর দেখবি।
পরের দিন কলেজ খুললো কিন্তু গেলাম না, কেমন যেন বিরক্ত লাগছে, সানি আয়মান অনেক বার কল দিছে ধরিনি।
রাস্তার বের হলাম, যদি ২ – ১ টা টিউশনি পাই তাহলে আপাতত চিন্তাটা কমবে।
কিন্তু এই নিষ্ঠুর শহরে কোনো কিছুই সহজে পাওয়া যায় না। মাথার উপর বাবার ছায়া যে কি জিনিষ এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতেছি।
ইচ্ছা করছে আবার আব্বু আম্মুর কাছে ফিরে যাই, কিন্তু সেটা অসম্ভব, আমি যেই কাজ গুলো করেছি সেগুলোর জন্য আব্বু আম্মু জীবনেও আমাকে ক্ষমা করবে না।
সেদিন বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া না করেই ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি ফারিয়া কয়েকবার কল দিয়েছে আমি ব্যাক করলাম…
আমিঃ কিরে কি অবস্থা?
ফারিয়াঃ ওই হারামী কল ধরিস না কেন?
আমিঃ সরি রে ঘুমে ছিলাম, বল কি হইছে?
ফারিয়াঃ কালকে ক্যাম্পাসে আসিস নি কেন? কালকে তোকে স্যাররাও অনেক খুঁজেছিলো।
আমিঃ কেন? আমি আবার কি করলাম?
ফারিয়াঃ আগে বল ট্রিট দিবি?
আমিঃ আচ্ছা বাবা দিবো এখন বল কি হইছে?
ফারিয়াঃ তুই আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর মধ্যে ফাস্ট হইছি। Congratulation dost.
আমিঃ আরে কি বলিস সত্যি নাকি?
ফারিয়াঃ তোর কি মনে হয় আমি মিথ্যা বলছি?
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে তোরা ক্যাম্পাসে থাক আমি আসতেছি। তাড়াতাড়ি রেড়ি হয়ে কলেজে চলে গেলাম। মনের মধ্যে অন্যরকম একটা আনন্দ বয়ে যাচ্ছে, তন্নি শালি এবার ঠেলা বুঝ, বাবা সভাপতি আর নিজে একটু মেধাবী হওয়ার কারনে যা ইচ্ছা তাই বলেছিস আমাকে। এবার তোকে বুঝাবো আমি কি জিনিষ।
কলেজে চলে গেলাম, সবাই ছিলো। আমি গিয়ে ওদের সাথে হাত মিলালাম। বাকি যারা আছে সবাই এসে কথা বলে গেলো। নিজের কাছেও ভালো লাগছে। আয়মান কে দেখলাম একদম হিরো সেজে এসেছে। আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম….
আমিঃ কিরে আজকে এমন সাজুগুজু, ঘটনা কি?
আয়মানব দাঁড়া একটু পর বলছি।
আমিঃ এখন বললে সমস্যা কি?
আয়মানঃ সাদিয়া আর ফারিয়া চলে যাক।
আমিঃ ওরা সহজে যাবে না। তুই বরং এক কাজ কর, পুকুর পাড়ে চলে যা, আমি সানিকে নিয়ে আসতেছি।
আয়মানঃ ওকে।
পরে আমি সানিকে সিস্টেম করে পুকুর পাড়ে চলে গেলাম।
আমিঃ এবার বল কি হইছে?
আয়মানঃ কিভাবে যে বলি।
সানিঃ ওই শালা আমরা কি তো শ্বশুর লাগি যে লজ্জা পাচ্ছিস বল কি বলবি।
আয়মানঃ দোস্ত সাদিয়াকে আমি ভালোবাসি, একটু সিস্টেম করে দেনা।
সানিঃ কোন সাদিয়া?
আয়মানঃ আমাদের বন্ধু সাদিয়া।
আমিঃ কিহ তুই আর মেয়ে ফেলি না?
আয়মানঃ আরে কি করবো বল, সেই প্রথম থেকেই ওরে ভালোবাসি কিন্তু বলতে পারতেছি না, যদি ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট কিরে দেয় তাই। তোরা না করলে কে করবে বল।
আমিঃ আচ্ছা টেনশন করার দরকার নেই, দেখি কি করা যায়।
আয়মানঃ আজকে বলে দে।
সানিঃ শালা পাগল হয়ে গেছে।
আমিঃ আরে আজকে না, সময় করে। আচ্ছা কয়েকদিন পর তো ওর জন্মদিন সেদিন নাহয় করে দিস। আমি শিখিয়ে দিবো।
আয়মানঃ থেংক্স দোস্ত।
সানিঃ এখন থেংক্স দেওয়ার দরকার নাই, যখন কাজ হবে তখন দিস। এখন চল বাইরে যাই।
আমিঃ হুম চল, ওরা বসে আছে।
তারপর বাইরে চলে আসলাম, বাইরে এসে আমি, সানি আয়মান, সাদিয়া আর ফারিয়া বসে বসে আড্ডা দিচ্ছি এমন সময় তন্নি তার পুরো গেঙ নিয়ে আমাদের সামনে আসলো….
এসেই আমার কলার চেপে ধরলো..
তন্নিঃ ওই খুব হিরো হয়ে গেছিস না? তুই এই ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাবি।
সানিঃ যদি না যায় কি করবি তুই?
তন্নিঃ ওই তুই চুপ থাক। তোর মতো ফালতুর সাথে কথা নাই
আয়মানঃ এই তোর সমস্যা কি? সব সময় গুণ্ডামি মাস্তানি ছাড়া আর কোনো কাজ নেই তোর?
তন্নিঃ দাঁড়া তোরও ব্যবস্থা নিতেছি। খুব পাখা গজিয়েছে তাইনা? ওই (আমাকে) তোকে যেন ২য় বার আর দেখি।
আমিঃ কি করবি দেখলে?
তন্নিঃ তোর তো সাহস কম না? তুই আমার মুখে মুখে তর্ক করিস। দেখ এবার আমি কি করি।
আমিঃ আরে যা যা, যা পারিস কর। আমার চুলও ছিঁড়তে পারবি না।
তন্নিঃ দেখবি কি করি, এখনো সময় আছে চলে যা।
ধুর মেজাজটাই খারাপ করে দিলো। না আর এখানে থাকবো না, আমার জন্য আমার বন্ধুদেরও সমস্যা হতে পারে। আয়মান আর সাদিয়ার রিলেশন টা করে দিয়েই চলে যাবো।
কলেজ শেষ চলে যাচ্ছি এমন সময় একটা ছেলে আমাকে পিছনে থেকে ডাক দেয়।
তাকাতেই দেখি…..
#চলবে…..