রহস্য পর্ব ১
Sabiha_Rahman_Susmita
২৫-২৬ বছরের তরুণী তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছার সময় পিছন দিয়ে তার স্বামী এসে জড়িয়ে ধরল।কি কি যেন বলে আর হাসে,একটু পর মেয়েটা লজ্জা পেয়ে দূরে সরে গেলে ছেলেটা আবার দৌড়ে গিয়ে টেনে বিছানায় ফেলে দিয়ে কাছে চলে যায় কিছুটা অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর আশায়।মেয়েটা এক লাফে উঠে গিয়ে জানালার পর্দা টা টেনে দেয়।
সাথে সাথে পাশের ১৪তলা বিল্ডিং এর ছাদ থেকে ধ্যাত বলে কেউ আফসোস এর শব্দ করে!
রাত ১১টার পর ছাদে উঠে ৭-৮ টা সিগারেট খায় রিজভি নামের ১৯ বছরের যুবক,আর সেই ফাঁকে পাশের বিল্ডিং এর এক নবদম্পতির ফ্ল্যাটের বেডরুমের জানালার দিকে চেয়ে থাকে।হতাশায় ডুবে থাকা রিজভি এইচ এস সি তে এক বিষয়ে ফেইল করার পর থেকে কারো সাথে মিশে না,শুধু নিচে যায় সিগারেট কিনতে আর মাঝে মাঝে একটা ছেলে এসে ছোটো কাগজে মোড়ানো কি যেন লুকিয়ে দিয়ে যায়।এস এস সি তে গোল্ডেন পাওয়া ছেলে হঠাত ই যখন অপ্রত্যাশিতভাবে রেজাল্ট খারাপ করে,আত্মীয়স্বজন,পাড়া প্রতিবেশী কেউ কথা শুনাতে বাকি রাখেনি। একগুঁয়ে ছেলে রিজভি,সে চেয়েছিল মেডিক্যালে পড়বেই পড়বে,কিন্তু রেজাল্ট টা যেন তাকে পুরো ধসিয়ে দিলো।
নবদম্পতির খুঁনসুটি দেখার পাশাপাশি সে প্রতিদিনই সেই ফ্ল্যাটের পাশের ফ্ল্যাটের বারান্দায় একটা মেয়েকে রাত জেগে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলতে দেখে।মাঝে মাঝে আরেকটা মেয়ে ও আসে,বোন বোধহয়।রাতের অন্ধকারে তাদের চেহারা দেখা না গেলেও অবয়ব টা বুঝতে পারে,মেয়েগুলোর অনেক লম্বা চুল,ছিপছিপে গড়ন।
দিনের বেলা রিজভির বেডরুম থেকে মাঝে মাঝে মেয়ে দুটোকে বারান্দায় দেখে,কিন্তু সিউর হতে পারে না কোন বোন রাতে মোবাইলে কথা বলে আর কে বলে না।
হঠাত এক রাতে রিজভি যখন নবদম্পতির আলিংগন দেখতে ব্যস্ত,তখন মৃদু কান্নার আওয়াজ পায় সে।পাশের ফ্ল্যাটের বারান্দায় তাকাতেই বুঝতে পারে যে মেয়েটা প্রতিদিন মোবাইলে কথা বলে সে কাঁদছে আর ফিসফিসিয়ে মোবাইলে কথা বলছে। মেয়েদের কান্না দেখতে রিজভির ভালো লাগে না,আওয়াজ শুনতেও ভালো লাগে না।তাই কানে হেডফোন গুঁজে সিগারেটে সুখটান দিতে লাগলো আর আকাশের দিকে চেয়ে নিজেকে গালি দিতে লাগলো।নিজেকে গালি দিতেই তার ভালো লাগে,আর নিজেকে নিয়ে ভাবতে তার সবচেয়ে ঘেন্না লাগে।
পরদিন সকালে রিজভির ঘুম ভাঙলো এম্বুলেন্স আর পুলিশের গাড়ির আওয়াজে।সকাল সকাল এত আওয়াজ শুনে চোখ কচলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই দেখে “অর্কিড লুম” (সামনের এপার্টমেন্ট) এর সামনে বেশ কিছু গাড়ি-পুলিশের,এম্বুলেন্স,আরো কিছু গাড়ি।সবসময় ছাদ থেকে এই এপার্টমেন্টের ২ টা ফ্ল্যাটের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কেন যেন আপন মনে হয়।কার কি হলো ভেবে কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে রিজভির।খোঁজ খবর নিতে নিচে যাবে ভাবলো,তাই ফ্রেশ হয়ে বের হওয়ার জন্য দরজা খুলছে এমন সময় রিজভির মা বলল-বাবা,পাশের বিল্ডিং এ একটা মেয়ে সুইসাইড করেছে।পুলিশ টুলিশ আছে,বেশি বাইরে যাস না।
হঠাত রিজভির ভিতর কেমন যেম একটা ধাক্কা লাগল-“আচ্ছা,সেই বারান্দার মেয়েটা নয়তো!?”
৩দিন আগের ঘটনা
রমা দেবী পূজার ঘর থেকে বের হয়ে রান্না ঘরে যাচ্ছিলেন এমন সময় হাত থেকে প্রসাদের থালা পরে যায় তার মেঝো মেয়ে শোহিনীর সাথে ধাক্কা লেগে।
-কিরে,কোনদিকে মন দিয়ে হাটিস?চোখে দেখিস না?দিলি তো সব প্রসাদ ফেলে?কি অলক্ষী যে হয় ভগবান জানে।
-না,মা।কিছু না।আমি উঠিয়ে দিচ্ছি সব।
-তোর হয়েছে টা কি বল তো?একটু পর পর ওয়াশরুমে যাচ্ছিস কেন?পেট খারাপ?আর চোখ মুখ এমন লাল হয়ে আছে কেন?
– না মা,কিছুই হয়নি।এমনি একটু বদহজম হয়েছে তো,তাই বমি আসছিল।
-আচ্ছা,যা,গিয়ে শুয়ে থাক।
রুমে গিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল শোহিনী, বালিশে মুখ চেপে কাঁদতে কাঁদতে দম আটকে আসছিল যেন বারবার।হাতে বেবি টেস্টের স্টিকের দিকে বারবার দেখছে আর কাঁদছে,খুশি হবে নাকি কষ্ট পাবে কিছুই বুঝতে পারছে না।এই পৃথিবীতে কত নিঃসন্তান দম্পতির জন্য এটা কত বড় সুসংবাদ,কিন্তু শোহিনীর জন্য এটা কেমন সংবাদ বুঝতে পারছে না সে।
পিরিয়ডের ডেইট ১ সপ্তাহ ক্রস করার পরও সন্দেহ হয়নি শোহিনীর,কারণ এমন সমস্যা প্রায়ই ই হয় তার।গত ৪/৫ দিন ধরে শরীর টা ভারী ভারী,ক্লান্ত লাগছে,অরুচি,বমি বমি লাগছে তাই কেন যেন সন্দেহ হলো।তাই আজকে ভার্সিটি থেকে আসার পথে একটা অপরিচিত ফার্মেসী থেকে বেবি টেস্ট এর স্টিক নিয়ে এসে টেস্ট করতেই স্টিকে ২টি লাল দাগ ভেসে উঠার পর নিজের চোখ কে বিশ্বাস হচ্ছিল না শোহিনীর!
চোখ মুখ মুছে নিজেকে শান্ত করে তাওহীদ কে কল দিল।
-হ্যালো,তাওহীদ কোথায় তুমি?
-এইতো একটা ইন্টার্ভিউ শেষ করে বের হলাম। তোমার কি খবর বলো।
-একটা খবর দেয়ার আছে তোমাকে।
-ব্যাপারটা সিরিয়াস।ফোনেই বলব নাকি দেখা করে বলব?
-মহারানী চাইলে তো আমি হাজারবার দেখা করতে রাজি,বলো কখন কোথায় আসবে।
-সন্ধ্যার পর আমার কফি টাইমে বসো,আমি টিউশন শেষ করে আসবো।
-আচ্ছা,ঠিক আছে।আমি এখন রাস্তা পার হবো তো,রাখি তাহলে?
-আচ্ছা,সাবধানে থেকো।
সন্ধ্যার পর
শোহিনী আর তাওহীদ বসে আছে মুখোমুখি কফিশপে। কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে,সেদিকে তাদের খেয়াল নেই।দুজনেই ভাবছে কি করা যায়।
হঠাত তাওহীদ বলে উঠলো, শোহিনী,তুমি তো এখন মুসলমান,ধর্মমতে আমার বউ।তাহলে কেন এত ভয় পাচ্ছো?আমরা তো অন্যায় কিছু করিনি!ভালোবেসেছি শুধু।
-কিন্তু তাওহীদ,তোমার বাসায় কিছু জানে না,এর ভিতর আমার বাসায় জেনে গেলে আমাকে অন্য কারো সাথে যেভাবেই হোক বিয়ে দিয়ে দিবে।জানতেও চাইবে না মুসলমান হয়েছি কি না।
-আচ্ছা,তুমি এতো অস্থির হয়ো না।কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
-একটু তাড়াতাড়ি করো তাওহীদ, নাহয় আমার যে কোনো উপায় থাকবে না!
-দেখো,আমি তো ব্যাচেলর থাকি।একটা জব না পেলে কিভাবে কি করি বলোতো।বেশ কিছু ইন্টার্ভিউ দিয়েছি।একটা না একটা তো হবে।একটু ধৈর্য ধরো।
-এখন কিন্তু আমার মাঝে আরেকজন বেড়ে উঠছে,তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা করো।আর পরশুদিন ভার্সিটি যাবার পথে তোমাকে একটা কাপড়ের ব্যাগ দিব,আগে থেকেই কিছু নিয়ে তোমার কাছে রেখে দাও যেন পরে বেশি কিছু গুছাতে না হয় আমার।
-আচ্ছা,ঠিক আছে।এখন রাত হয়ে যাচ্ছে।চলো তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসি।
সারাটা রাস্তা রিকশায় তাওহীদ আর শোহিনী নির্বাক শুধু হাত ধরে বসে ছিল,যেন অনেক না বলা কথাও এই নীরবতায় বলা হয়ে যায়।
বাসায় ফিরে ছোটো বোন মোহিনী কে দেখে গোমড়ামুখে বসে আছে।কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে জানায়,”আজকে দিদি এসেছিল বাসায়। মা বাসায় ঢুকতে দেয়া তো দূরের কথা,আমি কেন দরজা খুললাম তাই আমাকে থাপ্পর দিয়েছে।”
শোহিনীর বুকের ভিতর যেন সব মুচড়ে যাচ্ছিল,কি বলবে বা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না।
এমন সময় তার মা ঘরে ঢুকলো।
১ম পর্ব
চলবে…