#রঙ বেরঙের খেলা
#আলিশা
#অন্তিম_পর্ব
শ্রীলঙ্কা থেকে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এয়ারপোর্ট থেকে রাজশাহীতে আসতে সভ্যর দুপুর তিনটা বেজে গেলো। ইতিমধ্যে দেশের মিডিয়ায় তার খবর রমরমা। দেশের মাটিতে পা দিতেই হালকা কিছু কর্ণপাত হয় সভ্যর। শুধু এটুকুই এক রিপোর্টার হতে শোনা হয়
” স্যার আপনার কার সাথে এতো বড় শত্রুতা ছিল যার কারণে আপনার ওয়াইফ আজ মৃত্যুর পথ যাত্রী?”
সভ্য প্রতিটা শব্দ শুনে যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। বুকে অজানা আশঙ্কা তোলপাড় শুরু করে। এরশাদ সেই মুহূর্তে এয়ারপোর্ট হতে সভ্যকে একপ্রকার টেনে গাড়িতে বসায়। গার্ডদের সাহায্যে ভির ঠেলে এয়ারপোর্ট হতে বেড়িয়ে আসা হয়। কিন্তু সভ্য দমে রইলো না। এরশাদকে বলল তার ফোন, ল্যাপটপ দিতে। কিন্তু এরশাদও গো ধরে রইলো।সে দেবে না। অনেক ভুলভাল বুঝিয়ে সভ্যকে দমিয়ে রাখতে চাইলো। কারণ এরশাদ সাবিহার বিষয়ে সবটাই অবগত হয়েছে একটু আগে। সভ্য জানলে না জানি কেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তবুও সভ্য ফোন করেছিলোই। ফারজানা বেগমকে ফোন করলো। কিন্তু ওপাশে সভ্যর মা বারংবার কেটে দিলেন ফোন। সভ্য শুধুই হাশফাশ করা হৃদপিণ্ড নিয়ে পৌছায় রাজশাহী।
রাজশাহী এসে সর্বশেষে তাকে নিদারুণ নিষ্ঠুর সভ্যর মুখোমুখি হতেই হলো। হসপিটালের গেটে যেন জাপ্টে ধরলো রিপোর্টার। একটার একটা প্রশ্ন। ঘটনা প্রায় উন্মুক্ত করে দিয়ে প্রশ্ন করে জাবাব চাইলো সভ্যর কাছে। সভ্যর দু’টো সন্তান মৃত। সাবিহাও মৃত্যুর পদযাত্রী। এসবের কারণটা কি? অনেক অনেক প্রশ্নের ভিড়ে সভ্যর বুক যেন দাবানল শুরু হলো তখন যখন কানে পৌঁছালো সাম্য-সন্ধ্যা মৃত। আচমকাই অজান্তে চোখ চিকচিক করে উঠলো সভ্যর। ক্ষণকাল অসহায়,অবকতা নিয়ে তাকিয়ে রইলো সে রিপোর্টদের পানে। যেন মন বলে, সভ্য ভুল কিছু শুনলো না তো? তারপরই ভাবনা ছেড়ে দ্রুত গতির হাঁটা। গার্ড, রিপোর্টার ফেলে সভ্যই প্রায় দৌড়ে চলে গেলো হসপিটালের ভেতরে। নিচ তলাতে নয় সাবিহা আছে হসপিটালের দুই তলা ভবনে। সভ্য হসপিটালে প্রবেশ করতেই এগিয়ে এলো কিছু নার্স। তারা সভ্যকে পথ দেখিয়ে পৌঁছাতে সাহায্য করলো সাবিহার নিকট। সভ্যর বুক ধড়ফড় করছে। মুখে যেন লেপ্টে পরেছে দুশ্চিন্তা, বিষাদ, বেদনা।
সিড়ি গুলো যেন জ্ঞান শূন্য হয়ে পাগলের মতো অতিক্রম করে সভ্য পৌঁছালো দুই তলায়। প্রথমেই অক্ষিপটে ভেসে উঠলো তার মাকে। বিষন্ন মুখ নিয়ে বসে আছেন তিনি একটা বসার আসনে। সভ্যর চোখের তপ্ত জল এবার গাড়িয়েই পরলো। স্বাভাবিক গতিতে গিয়ে সে দাড়িয়ে পরলো মায়ের সম্মুখে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো
— মা…
ঝট করে চমকে মাথা তুললেন ফারজানা বেগম। ততক্ষণাৎ সভ্যর ভেজা আঁখি দর্শন হলো। বুঝতে বাকি রইলো না সভ্যর মনের দশা। সভ্য বুঝি সব জেনে গেছে। রাহেলা ইসলামের চোখে জল এসে পরলো। আশরাফুল ইসলামেরও চোখ সিক্ত না হয়ে পারলো না। ফারজানা বেগম ছেলের হাত ধরে নিয়ে গেলেন সোজা বাচ্চাদের নিকট। বলার আর কিছু বাকি নেই। হেঁয়ালিপনা করে লাভ শূন্যই হবে।
সভ্য পাথর হয়ে দাড়িয়ে আছে দু’টো বাচ্চার সামনে। চোখ তাদের বন্ধ। চির নিদ্রায় শায়িত। রুমটা কোনো এক ডাক্তারের হয়তো। একটা ছোটখাটো কেবিন বলা চলে। দু’টো দোলনার বস্তুতে ঘুমোয় সন্ধ্যা আর সাম্য। সভ্যর চোখের পলক পরে না। শুধুই তপ্ত হতে তপ্ত হচ্ছে নিশ্বাস। শ্বাস নালিতে যেন বড়সড় এক পাথর চাপা দিচ্ছে কেউ। ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে বুক। ফারজানা বেগম নিশ্চুপে চেয়ে রইলেন ছেলের দিকে। ছেলে তার এক সময় এগিয়ে গেলো সাম্য-সন্ধ্যার দিকে। দেখলো নিষ্পলক তাকিয়ে মিনিট তিনেক। অতঃপর আচমকা হাঁটু ভেঙে যেন পরে গেলো। মায়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো
— বাইরে থেকে শুনে আসলাম…. ওরা…. মা সত্যি কি?
ফারজানা বেগমের চোখ উপচে জল গড়িয়ে গেলো। ভাঙা গলায় শুধু বললেন
— ভেঙে পরছিস কেন? তুই এমন করলে সাবিহার কি হবে?
কিন্তু মন কি সভ্যর মানে? সইতে পারবে কোনো বাবা এমন পরিস্থিতি? যে বাচ্চারা হয়ে উঠেছিল তার সুখের কারণ, সাবিহা আর তার মাঝের ফারাকের সেতু বন্ধন। তারা আজ….। সভ্য ভাবতে গিয়ে আচমকা ডুকরে কেঁদে উঠলো। পুরুষ মনের রক্তক্ষরণ, চোখে জলের ধারা, আর বাহিরে জাহির করা কান্না। বড্ড বেমানান লাগলো কিনা ফারজানা বেগম বুঝলেন না। তবে চমকে উঠলেন। ঠিক এভাবেই সভ্য শেষ কান্না করেছিল যখন সভ্যর বাবা মারা যায়। জানাজা করার সময় হাউমাউ করে কান্না করেছে সভ্য৷ ঠিক একই ভাবে আজও। সেদিন কেঁদেছিল সন্তান হয়ে বাবার জন্য। আজ কাঁদছে আকুল হয়ে সব ভুলে বাবা হয়ে সন্তানের জন্য।
.
রাত নেমেছে এখানে। গাঢ় হতে গাঢ় হচ্ছে রাতের আঁধার। শীত পরছে হামলে পৃথিবীর একাংশে। সভ্য নিজের গায়ের ব্লেজার খুলে সন্ধ্যার গায়ে জড়িয়ে দিয়েছে। সাম্যর গায়ে জরানো সাবিহার একটা চাদর। প্রায় অনেকটা সময় চোখের পানি ঝরলো সভ্যর। অতঃপর এরশাদ আর ফারজানা বেগমের বুঝদানে খ্যান্ত সে। মাত্রই সাবিহার কথা। কলিজা রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছে।
রাত যখন সাড়ে বারোটা বাজাতে চলল তখন আচমকা ডাক্তার এসে জানালো সাবিহার জ্ঞান ফিরেছে। তবে সে সুস্থ নয়। চরম অসুস্থ, আহত। বাচ্চা দেখার জন্য ছটফট করছে। সভ্যর ভেঙে গুড়িয়ে যাওয়া ক্ষণিকের জন্য বিশৃঙ্খল হয়ে জোরা লাগেছিলো সাবিহার জ্ঞান ফেরার কথা শ্রবণ করে। আকাশসম দুঃখে মাঝেও ভাবনায় এলো, ‘তিনটা ভালোবাসার মাঝে তবুও তো একটা ভালোবাসা রইলো।’ যদি সবই যেত নির্ঘাত সভ্যও বুক ফেটে ঢলে পরতো মৃত্যুর হাতে।
— সাবিহা
কাঁপা কন্ঠে ডেকে উঠলো সভ্য। বুকের দুঃখ ভরা আর্তনাদ গুলো লুকিয়ে সে নিজেই এসেছে সাবিহার কাছে। কেউ এলো না। কারো সাহসে ধরলো না সাবিহাকে মৃত দু’টো বাচ্চা দেখিয়ে বলার,
” এই যে তোমার সাম্য-সন্ধ্যা। ওরা বেঁচে নেই। ওরা মৃত।”
সভ্যকে দেখে সাবিহার চোখের কার্ণিশ ভিজে জল গড়িয়ে পরলো। সভ্যর হাতে একটা বাচ্চা। তার পেছনে আছে শার্ট প্যান্ড পরিহিত এক মেয়ে। তার হাতে আরেকটা বাচ্চা। সভ্য এগিয়ে গেলো ধীর পায়ে সাবিহার নিকট। বেহায়া চোখ জল গড়াতে মারিয়া। কদমে কদমে সভ্যর বুক ভারি হয়ে আসছে।
— এটা তোমার সাম্য।
বহু কষ্টে কথাটা ব্যাক্ত করে সভ্য বন্ধ করে নিলো দু-চোখ। সাবিহার চোখের সামনে তুলে ধরলো অচেতন, প্রাণহীন ছেলেকে। সাবিহা দু নয়ন জুড়িয়ে দেখলো। দেখতে দেখতে হঠাৎ বলে উঠলো
— ওরা কি ঘুমোচ্ছে? মা’কে একবার চোখ খুলে দেখবে না? এই বাবা? উঠো? একটু তাকাও দেখি। কার মতো চোখ চোখ পেয়েছো দেখি? তোমার বাবার মতো সুন্দর কিনা?
সব ব্যাথা, বেদনা ভুলে সাবিহা অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে ছেলের সাথে। সভ্যর হাত পায়ে আচমকা কাঁপন ধরলো। চোখ তার এখনও বন্ধ। সেই বন্ধ চোখের পাপড়ি বেয়ে আসছে অশ্রুকণা।
— যাহ! কথাই বলছে না। এতো ঘুম?
— হুম ঘুমোচ্ছে ওরা। চোখ খুলবে না আর।
কথাটা বলেই সভ্য সাম্যকে এক নার্সের কোলে দিলো। সাবিহা বোঝেনি সভ্যর কথা। সভ্য আবার কোলে তুলে নিলো মেয়েকে। ধ্বক করে উঠলো বুক। সাবিহা প্রায়ই তাকে বলতো, ‘সাম্য আমার সন্ধ্যা আপনার। ‘
— এটা আমার সন্ধ্যা।
সাবিহা বেডে শুয়েই মাথা একটু উঁচু করে দেখলো। বসতে পারবে না সে। পেটে প্রচন্ড ব্যাথা। মেয়ের মুখ দর্শন করে সাবিহা মুচকি হেঁসে বলল
— এ মনে হয় আপনার গড়ন পেয়েছে। পুরোটাই আপনার মতো দেখতে লাগে। আমার শ্যামপরী।
সভ্য টলমলে আঁখিতে মুচকি হাসলো।
— আপনার চোখে পানি কেন?
— আনন্দের।
পুরোপুরি বিপরীত শব্দতে প্রত্তুত্যর করলো সভ্য। সাবিহা অসুস্থ শরীর নিয়ে মায়াবী নয়নে তাকিয়ে রইল সভ্যর পানে। ভাবলো তার সংসারে সুখ এসেছে। সভ্য কতো খুশি। কিন্তু সে ঘুণাক্ষরেও মাথাতেও আনলো না সভ্য সম্পূর্ণ বিপরীত আচরণ করছে। সভ্য তাকে জানতে দিচ্ছে না কিছু তার অসুস্থতার জন্য।–সাবিহা, বাচ্চারা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। ওদের ঢাকা পাঠাতে হবে। বিদায় দেবে না তুমি?
— কিহ! নিউমোনিয়া কেন? আমি আপনার বলা নিয়মেই চলেছি।
— তবুও হয়ে গেছে কোনো ভাবে। বিদায় দাও তুমি?
কথা লুকিয়ে সভ্য সাবিহার থেকে চির বিদায় নিতে বাড়িয়ে দিলো বাচ্চা। সাবিহার বুকের উপর রাখতেই আচমকা সাবিহা চুমু খেলো প্রথমে সন্ধ্যাকে। অতঃপর সাম্যকে। সভ্য জলভরা চোখে দেখে গেলো কেবল। বড্ড নিরুপায় লাগলো তার। বুক ভেঙে শুধুই আসছে কান্না।
.
.
.
— সুধা, গুড গার্লের মতো খাও। আমি পিছু কিছু ঘুরতে পারবো না।
মেয়ে সুধার পেছনে প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে সাবিহা হাঁক ছেড়ে বলল। পাঁচ বছরের পাকনা মেয়ে শুনলো না মায়ের কথা। সে ছুটে আবার ড্রয়িং রুমে চলে গেলো। ধুপ করে গিয়ে বসে পরলো বাবার কোলে। সভ্য ডুবে ছিল ভ্রু কুঁচকে বিশাল টিভির পর্দাতে। ক্রিকেট খেলা চলে। মেয়ে এসে তার কোলে বসতেই আদরে বুকের সাথে জাপ্টে নিয়ে ডানে হাতে মেয়ের মুখ মৃদু চেপে ধরলো। যেন অনর্গল মিষ্টি মিষ্টি বকবকানি না করে। কারণ সভ্য এখন গুরুত্ব সহকারে ক্রিকেট ম্যাচ দেখছে। ভারত আর পাকিস্তান খেলছে। সুধা বাবার এহেন কান্ডে দমে গেলো না। ক্ষণকাল শুধু বড় বড় চোখে তাকিয়ে দেখলো সভ্যকে। সভ্য বুঝলো মেয়ে তাকিয়ে আছে। মুচকি হাসলো সে। সাবিহা এরই মাঝে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে এসে বসে পরলো সভ্যর পাশ ঘেঁসে। অল্পে অল্পে ডুবে গেলো সেও ক্রিকেট খেলার মাঝে। সুধা হতভম্ব হয়ে গেলো। সে তো এলো বাবার সাথে গল্প করবে বলে। গল্পে গল্পে খাবার খেয়ে নেবে তাহলে মাম্মার বকা শুনতে হবে না তাকে। ছোট মন নিয়ে এই মায়াবী শ্যামকণ্যা ভাবনায় ডুবে গেলো। অতঃপর ভাবনা চিন্তা শেষে হুট করে দাঁতের ফাঁকে বাবাইয়ের হাত ফেলে দিলো এক কামড়। আকস্মিক কামড়ে সভ্য ‘ইশ!’ বলে ছিটকে হাত সরিয়ে নিলো। মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হলো সাবিহার। তড়াক করে সে সভ্যর পানে তাকাতেই বলে উঠলো সভ্য
— মায়ের স্বভাব!
সশব্দে হাসলো সাবিহা। সুধা বাবার দিকে তাকিয়ে কয়েকটা দাঁত বের করে হেঁসে বলল
— গল্প শুনবো বাবাই। তুমি গল্প বলছিলে না বলে কামড় দিয়েছি।
— মহান কর্ম করেছেন বাবাই।
হাতের মধ্য আঙ্গুলের গোড়ায় দৃষ্টি রেখে বলল সভ্য। সুধা এবার ধাক্কাধাক্কি শুরু করলো। সভ্যকে রীতিমতো ছোট দুি হাতে ধাক্কা দিতে দিতে বলল
— গল্প বলো বাবাই, গল্প বলো। না হলে আমার খাওয়া হবে না। মাম্মা বকা দেবে। এই সন্ধ্যার সময় আমি বকা খাবো না।
সন্ধ্যা শব্দটা কর্ণকুহরে পোঁছাতেই সভ্য তড়াক করে ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলো মেয়ের পানে। আচমকা চোখে ফুটে উঠলো আফসোস, কষ্ট আর সন্তান হারানোর বেদনা। সভ্য চাইলো এবার অজান্তেই সাবিহার পানে। সভ্যর দৃষ্টি পড়তে কষ্ট হলো না সাবিহার। বুকটা হু হু করে উঠলো।
— আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি
নির্লিপ্ত কন্ঠস্বর সভ্যর। সাবিহা হুট করে উঠে পরলো সভ্যর পাশ থেকে। আজকের রাতেই তার প্রথম সন্তানদের কবরে রাখা হয়েছিল। মা হয়ে সহ্য হয়না এই রাত। সেই সাত ঐ রাত আর আজকের রাতের মাঝে কোনো পার্থক্য খুঁজে পায় না সাবিহা। সেদিনের চেয়ে এক রত্তি কষ্টও তার কম হয় না। বেড রুমের দিকে পা বাড়িয়ে দরজার নিকট আসতেই কানে এলো সভ্যর কথা। সে মেয়েকে গল্প শোনাচ্ছে। সে বলছে
— একটা রূপবতী রাণীর সাথে এক রূপহীন রাজার বিয়ে হয়। রাণী ছিল অহংকারী আর রাজা ছিল জেদি, রাগী। রাণী মানতে চাইলো না অসুন্দর রাজাকে। অপমান করলো রাজা ও রাজার মাতাকে। রাজা হঠাৎ খুব রেগে গিয়ে অবুঝের মতো একটা হীন কাজ করে ফেলল একদিন । এরপর এলো রাণীর পেটে দু’টো বাচ্চা। জমজ বেবি। এই বাচ্চারা ছিল রহমত স্বরূপ। একে অপরের শত্রু রাজা রাণীর মাঝে তারা ছড়িয়ে দিলো ভালোবাসার রঙ। তারপর আবার হুট করে এরাই চলে গেলো রাজা রাণীকে খুব কষ্ট দিয়ে। কাদিয়ে।
সুধা অবাক হয়ে শুনছে বাবার কথা। তার বাবার চোখে জল উঁকি দিচ্ছে। কন্ঠ কেমন কাঁপা কাঁপা লাগছে। প্রচন্ড আশ্চর্য হয়ে সুধা তাকিয়ে আছে বাবার দিকে। আচমকা তার বাবা নিশ্চুপ হয়ে গেলো। কথা বলছে না। শুধু তাকিয়ে আছে অজানায়।
সাবিহা দরজা হতে আবার ফিরে এলো সভ্যর কাছে। দু’হাত দূরে দাড়িয়ে সে মেয়ের উদ্দেশ্য বলল।
— বাকিটুকু আমি বলি। আমার দিকে তাকাও।
সুধা তাকালো। সাবিহা ধরা গলায় বলতে লাগলো
— রাণী যে অহংকারী ছিল তার শাস্তিটা পেলো তার বাচ্চারা। রাজার যে একটু অপরাধ ছিল সেই অপরাধ গড়ালো বাচ্চাদের ওপর। কেন জানো? কারণ প্রতিটা প্রাণীরই সবচেয়ে বেশি আপন তার সন্তান। সন্তানের সাথে সবার আত্মার সম্পর্ক থাকে। সন্তানের উপর সবসময় মা বাবার অপরাধ গুলো গড়ায়। হ্যা রাণীর বাচ্চাগুলোকে মেরেছিল রাণীর এক শত্রু। যার সাথে রাণী রঙ নিয়ে অহংকার করেছিল।
— মাম্মা, যে বাচ্চাগুলো মারলো তাকে রাজা শাস্তি দিলো না?
— নিজ হাতে দিতে পারেনি। আইনের লোক দিতে দেয়নি। তবুও রাজা জেদে হুট করে একটা গুলি মেরেছিল তাকে। এখন সে কারাগারে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়েছে।
সাবিহার কথা শেষ হতেই সভ্য বলে উঠলো
— রঙ নিয়ে কখনো অহংকার করা ভালো না। আর অহংকারে পরিণতি ভয়াবহ হয়। সাথে নারী জাতিকে কখনো ছোট করে দেখতে নেই। কে জানে সেদিন রাজা ছোট করে না দেখলে হয়তো আজ তার রাজকন্যাটা অন্তত বেঁচে থাকতো।
সমাপ্ত