রঙ তুলির প্রেয়সী ৯.

0
2602

রঙ তুলির প্রেয়সী
৯.

চুল খাড়া, গায়ের রঙ মোটামুটি ফর্সা মানে যাকে বলে উজ্জ্বল শ্যামলা। কালো রঙের টি-শার্ট পরে এসেছে। দেখতে হ্যান্ডসাম মাইরি। আদিয়ার মতো সুন্দরী আর জোয়ান একটা মেয়েকে এরকম হ্যান্ডসাম ছেলের কাছে কীভাবে পড়তে দেয়া হলো এটাই ভেবে পাচ্ছেনা তিথি। এই বাড়ির মানুষ কি জানেনা? আগুন আর ঘি পাশাপাশি রাখতে নেই? একটু পরপর দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে আদিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ছেলেটা। আদিয়া তাকালেই আবার সে নিচের দিকে চোখ নামিয়ে নেয়। আদিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো আদিয়া একমনে অংক ঠিকই করে যাচ্ছে কিন্তু গালে তার লালচে আভা স্পষ্ট। বিষয়টা খটকা ঠেকলো তিথির কাছে। সে হাতে কলম ঘুরাতে ঘুরাতে পর্যবেক্ষণ করছিলো আদিয়া আর নাহিদকে। নাহিদ খেয়াল করলো তিথি তীক্ষ্ণ চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে সাবধান হয়ে গেল। এক গাল হেসে বললো, ‘তোমার হয়েছে?’

‘সেটা দেখার আর সময় কই আপনার স্যার?’ একইভাবে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো তিথি।

চট করে ফিরে তাকালো আদিয়া। নাহিদ যেন খানিক ঘাবড়ালো। তারপর আবার হেসে বললো, ‘এই স্যার ডেকোনা প্লিজ। ভাইয়া বলেই ডাকো। আদিয়াও স্যার ডাকেনা।’

‘তাই নাকি? আদিয়া কী ডাকে?’

‘আমিও ভাইয়াই ডা…’ বলতে গিয়ে আঁটকে গেল আদিয়া। নাহিদের দিকে তাকালো। নাহিদও তাকিয়ে আছে ওর দিকে। তিথির এই মুহূর্তে খুব মজা লাগছে। সে ভালোকরেই বুঝতে পারছে হয় এদের দুজনের মধ্যে কিছু আছে আর নাহয় খুব তাড়াতাড়ি হওয়ার সম্ভাবনা।

ওদের আর বিভ্রান্তিতে ফেলতে চাইলোনা তিথি তাই হেসে বললো, ‘আচ্ছা ঠিক আছে আমি স্যার ডাকবোনা। ভাইয়া ডাকবো।’

‘গুড। আচ্ছা দেখি দাওতো কতোটা হলো।’ বলে পড়ানোতে মন দিলো নাহিদ। আদিয়া আর তিথিও পড়ায় মন দিলো। তিথি মনে মনে ভেবে নিলো যে কাহিনীটা আদিয়ার মুখ থেকেই উগড়াবে।
_____________________

জাওয়াদ বারান্দায় বসে সিগারেট খাচ্ছিলো। তার হাতে তার মোবাইল বাজছে অনবরত। স্ক্রিনের নামটা যতোবারই দেখছে ততবারই দপদপ করে উঠছে কপালের রগ। রাগ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে রিসিভ করে ফোন কানে লাগালো জাওয়াদ। ওপাশ থেকে নারীকণ্ঠ ভেসে এলো, ‘কেন এমন করছিস? আর কতো ক্ষমা চাইবো আমি?’

‘তুই সারাজীবন ক্ষমা চাইলেও আমি তোরে ক্ষমা করবোনা।’ খুব শীতল কণ্ঠে বললো জাওয়াদ। ওপাশের মেয়েটা কেঁদে দিলো এবার। জাওয়াদ বিরক্ত হয়ে বললো, ‘এই বন্ধ করতো! আমার কাছে এসে এমন কাঁদবিনা। তোর কান্না আমার কানে বিষাক্ত লাগে কোনো অনুভূতি হয়না।’

কান্নার মাত্রা বাড়িয়ে দিলো মেয়েটা। জাওয়াদ হাতের সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে হিসহিসিয়ে বললো, ‘ছ্যাঁচড়ামির লিমিট আছে। আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ কর তুই। নাহলে হঠাৎ একদিন দেখবি তোকে আমি বিভৎসভাবে খুন করে জ্বালা মিটিয়েছি।’

‘জাওয়াদ প্লিজ। একটাবার ক্ষমা করে আমাকে সুযোগ দে… প্লিজ… আমি তোর জীবন আবার গুছিয়ে দেবো। প্লিজ জাওয়াদ…’ কাঁদতে কাঁদতে বললো মেয়েটা।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
রাগে দপ করে আগুন জ্বলে উঠলো জাওয়াদের দু’চোখে। সে নিজেকে প্রাণপণে সামলানোর চেষ্টা করছে। ডান হাতে নিজের চুল খামচে ধরে জোরে জোরে বার কয়েক নিশ্বাস নিলো। ওপাশের মেয়েটা তখনও কেঁদে যাচ্ছে। জাওয়াদ বললো, ‘গুছিয়ে দিবি? তুই গুছিয়ে দিবি? তোরে সুযোগ দেবো? কীসের সুযোগ চাস তুই?’

‘জাওয়াদ আমি তোকে ভা…’

মেয়েটা কথা শেষ করার আগেই জাওয়াদ খুব শান্ত স্বরে বললো, ‘মুখ সেলাই করে দেবো তোর আমি। দ্বিতীয়বার এই কথা বলার সাহস করবি তো আমি খুন করে ফেলবো তোকে। আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ কর।’

‘তুই যা বলবি আমি সব করবো শুধু আমাকে ক্ষমা করে দে।’

‘তাই নাকি? সব করবি? যা তাইলে তোর বাপ চাচাদের গিয়ে বল কী কুকর্ম করেছিলি তুই। যা।’

‘জাওয়াদ প্লিজ এমন করিসনা।’ বলে কাঁদতে থাকলো মেয়েটা। জাওয়াদ আর সহ্য করতে পারলোনা। কল কেটেই ফোন অফ করে দিলো। তারপর বসে বসে নিশ্বাস নিতে লাগলো জোরে জোরে।
_____________________

হেলাল আহমেদকে যাওয়ার আগে কিছু দরকারি জিনিসের কথা বলে দিয়েছিলেন মুনতাহা, সেগুলো মুনতাহার কাছে দিচ্ছিলেন উনি। মুনতাহা বললেন, ‘যাক, তোমার দেখি সবই মনে আছে যা যা বলেছিলাম।’

হেলাল আহমেদ বললেন, ‘হ্যাঁ। তিথি আর আদিয়াকে একটু ডাকো। দুজনের জন্যেই মোবাইল এনেছি। আদিয়ার মোবাইলটাও তো পুরনো অনেক।’

এমন সময় তিথি আর আদিয়া রুমে এলো। মুনতাহা বললেন, ‘ডাকা লাগেনি। এসেই গেছে। তোদের পড়া শেষ এতো তাড়াতাড়ি? নাহিদ তো কমপক্ষে দুই ঘণ্টা পড়ায়। আজ এতো কম?’

তিথি সরু চোখে তাকালো আদিয়ার দিকে। আদিয়া একটা ঢোঁক গিললো। তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তিন বন্ধু আজ আড্ডা দিবে শুনলাম। তাই।’

‘ও আচ্ছা।’

হেলাল আহমেদ বললেন, ‘অনেকদিন পরে শুনলাম ওদের আড্ডা হবে। গানবাজনা হবে নাকি? ছেলেটার গান শুনিনা অনেকদিন।’

আদিয়া বললো, ‘দেখলাম তো স্পিকার আর গিটার টেনে নিচ্ছে ছাদে।’

চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনছিলো তিথি। গান? কার গানের কথা বলছে ওরা? জাওয়াদ নাকি রিয়াদ?
____________________

আদিয়ার একটা এক্সট্রা সিমকার্ড ছিলো, তিথি সেটাই তার নতুন মোবাইলে এক্টিভেট করলো। আদিয়া বললো, ‘আজকে তো কেউ বেরোবেনা। আব্দুল ভাইও চলে গেছে। কালকে লোড করায়ে দিবো সিমে।’

‘সেটা ঠিক আছে। কিন্তু এতোক্ষণ থেকে তো তোর মোবাইলটা বাজছে। রিসিভ কর?’

আদিয়া চমকে গেল। তিথি কীভাবে দেখলো? সে তো মোবাইলটা উল্টে রেখেছে। আর সাইলেন্টও আছে। ভাবতে ভাবতে বিছানার ওপর নিজের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেল। উল্টে রাখেনি! আদিয়া হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা হাতে নেয়ার আগেই চট করে তিথি নিজের হাতে নিয়ে রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দিলো। ওপাশ থেকে নাহিদের গলা ভেসে এলো, ‘মাই গড! আদিয়া, তোমার বোনটা এক চিজ কিন্তু। ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি। এই কিছু বুঝেছে?’

আদিয়ার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। সে ফ্যাকাসে মুখে তাকালো তিথির দিকে। তিথি খিলখিল করে হেসে দিলো। আদিয়া তিথির কাছ থেকে মোবাইলটা কেড়ে এনে কলটা কেটে দিলো। তিথি এবার বিছানায় শুয়ে হাসতে লাগলো। আদিয়া ও হেসে দিলো তিথির সাথে। কিছুক্ষণ দুজনেই হাসার পরে তিথি বললো, ‘আগেই বুঝেছি।’

‘হয়েছে এবার চুপ আমার লজ্জা লাগছে।’ আদিয়া দুহাতে মুখ ঢেকে বললো।

তিথি হেসে দিলো আবার। বললো, ‘যা আর লজ্জা দিবোনা। আচ্ছা ছাদে যাবি?’

আদিয়া বললো, ‘পাগল? এখন ওরা হুইস্কি টুইস্কি খাবে আড্ডা দেবে। আমরা মেয়েরা ওদের মাঝে যাবো৷ কেন?’

‘হুইস্কি খায়?’ চোখ বড় বড় করে বললো তিথি।

‘হ্যাঁ। ছাদে সফট আলোর লাইট জ্বালিয়ে গিটার দিয়ে গানও গায়। আর আমরা নিচ থেকে শুনি।’

‘প্লিজ প্লিজ আদিয়া চলনা। জাস্ট পরিবেশটা দেখবো দেখেই চলে আসবো।’ আকুতি করে বললো তিথি।

‘এই না বড় ভাইয়া দেখলে মেরে ফেলবে। আমি কোনোদিনই এভাবে যাইনি।’

তিথি গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। আদিয়া বললো, ‘থাক আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসি।’ বলে উঠে গেল আদিয়া।
____________________

‘আচ্ছা তো প্লান কী জাওয়াদ? সুযোগ দিবি নাকি একটা?’ বলে চোখ টিপ দিয়ে হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিলো নাহিদ। জাওয়াদ ভ্রু উঁচিয়ে তাকালো। রিয়াদ হেসে দিলো শব্দ করে। তারপর বললো, ‘তোর পিঠ কী মার টানছে নাহিদ?’

নাহিদ অবাক হয়ে বললো, ‘আরে আমি খারাপ কী বললাম? দেখ ভুল মানুষের হতেই পারে। তাই বলে এমন করতে হবে? মেয়েটা কম ক্ষমা চায়নি।’

‘এটাকে তোর কাছে ভুল মনে হয় নাহিদ?’ জাওয়াদ বললো খুব ঠাণ্ডা গলায়। হুট করে যেন পুরো পরিবেশ শান্ত হয়ে গেল। নাহিদ ভড়কে গেল। ঢোঁক গিলে কিছু একটা বলতে চাইলো আর তখনই টপিক পাল্টানোর জন্য রিয়াদ বললো, ‘আরে ধুর এসব ফাউল টপিক বাদ দে। জাওয়াদ গান ধর। অনেকদিন শুনিনা।’

‘কালকেই দেখলাম হেডফোন লাগিয়ে ছাদে ঘুরছিস আর নাচছিস।’ হেসে বললো জাওয়াদ।

‘আরে তোর গান। নাহিদ একটু গিটারটা এগিয়ে দে আর স্পিকারটা ঠিক কর।’

‘হ্যাঁ।’ বলে জাওয়াদের হাতে গিটার দিয়ে স্পিকার ঠিক করে এসে বসলো নাহিদ।

জাওয়াদ গিটারে সুর তুলতে খানিকটা সময় টুংটাং করলো। ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য মুগ্ধ নয়নে দেখছিলো তিথি। আদিয়া ওয়াশরুমে যাওয়ার পরে অনেক দোনা মোনা করে ছাদে ছলে এসেছে সে। নিজেকে যথেষ্ট লুকিয়ে রেখেছে যাতে ওরা কেউ না দেখে। হলুদাভ লাইটের আলোয় কপালে এলোমেলো ভাবে লেপ্টে থাকা চুলে জাওয়াদকে দেখতে কতোটা নেশাময় লেখছিলো! তিথির বুক কাঁপতে লাগলো। ছাদের দরজায় শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে সে। জাওয়াদ গান ধরলো,

“I used to believe
We were burnin’ on the edge of somethin’ beautiful
Somethin’ beautiful
Selling a dream
Smoke and mirrors keep us waitin’ on a miracle
On a miracle
Say, go through the darkest of days
Heaven’s a heartbreak away
Never let you go, never let me down
Oh, it’s been a hell of a ride
Driving the edge of a knife
Never let you go, never let me down
Don’t you give up, nah-nah-nah
I won’t give up, nah-nah-nah
Let me love you
Let me love you
Don’t you give up, nah-nah-nah
I won’t give up, nah-nah-nah
Let me love you
Let me love you”

একটা দমকা হাওয়া এসে যেনো সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেল। চারিপাশে যেন উড়তে লাগলো ভালোবাসার রঙের এক একটা প্রজাপতি। গানের প্রতিটি লাইন যেনো বুকের ভেতরটাকে ধুকপুক করে কাঁপিয়ে তুলছিলো তিথির। যেনো এই গানটা জাওয়াদ তার জন্যে গাইছিলো। যতোই জাওয়াদকে এই হালকা আলোয় দেখছিলো তিথি, ততোই যেনো তার বুকের ভেতরটা অস্থিরতায় ভরে যাচ্ছিলো। তিথির পা টলতে লাগলো। সে কি এখন বেহুঁশ হয়ে যাবে? নাহ নাহ, এখানে থাকলে সেটাই হয়ে যাবে। এখানে আর থাকা যাবেনা। তিথি এলোমেলো পা ফেলে নিচে নেমে গেল। নামতে নামতে ভাবলো, ‘উনার সামনে গেলে আমার এমন কেন হয়?’
_______________

চলবে……….
@ফারজানা আহমেদ
নতুন কভারটা কেমন লাগছে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে