#রঙিলা_বউ
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#অন্তিম_পর্ব
–মেয়েটা এদিকে ফিরতেই আমার চোখ জোড়া কপালে উঠে গেলো!আল্লাহ,এ তো আমার কলিজার টুকরো মায়া!সাথে সাথে গিয়ে মায়াকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলাম!মায়া তুমি এখানে।আর আমি তোমায় কত জায়গায় না খুঁজেছি।কিন্তু তোমার খোঁজ কোথাও পায়নি।মায়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।
মায়াও আমায় জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
এমন সময় পিছন থেকে আসাদুজ্জামান সাহেব এসে,আমায় টেনে মায়া থেকে ছাড়িয়ে দিলো।
–মিস্টার আকাশ,আপনার কত বড় সাহস?আপনি আমার ওয়াইফকে জড়িয়ে ধরেন!
–কিহহহহ,মায়া আপনার ওয়াইফ
–হা,মায়া আমার ওয়াইফ।
–আসাদুজ্জামান সাহেবের মুখে এমন ধরনের কথা শুনে,কলিজাটা যেনো ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেলো!কলিজাটা যেনো চিনচিন করে ব্যথা করছে।আমার কলিজার টুকরো মায়া এখন অন্যকারো বউ।সেটা যেনো মানতেই পারছি না।যার জন্য দুইটা বছর পাগল ছিলাম।পরিশেষে এসে দেখি,সে অন্যের হয়ে গেছে।এই কষ্ট কই রাখবো আমি!নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলাম না।সোজা গিয়ে জানালার কাঁচের মধ্যে ঘুষি মেরে দিলাম!সাথে সাথে জানালা ভেঙ্গে হাতের মধ্যে কয়েক টুকরো কাঁচ ঢুকে গেলো।নাহ,এটা আমি মানি না।মায়া অন্যকারো হতে পারে না।হাত থেকে চুয়ে চুয়ে রক্ত পড়ছে!
–আরেহ,আকাশ সাহেব।এটা কি করলেন আপনি?
আমি তো মজা করছিলাম।মায়া আমার বউ না।মায়া আমার বোন।
–বোন মানে?
–মানে হলো,মায়াকে আমি সাগরের কিনারা থেকে উদ্ধার করেছি।তারপর তাকে আমি আমার সাথে এখানে নিয়ে আসি।আমিও বাংলাদেশের ছেলে।আমি বোট নিয়ে সাফারি করছিলাম বাংলাদেশ।তখন মায়াকে বেহুঁশ অবস্থায় একটা দীপের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখি।তারপর তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে আমার সাথে থাইল্যান্ডে নিয়ে আসি।তার অবস্থা অনেক খারাপ ছিলো।ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলে,তারা বললো,মায়ার অবস্থা ভালো না।তাকে ভালো ট্রিটমেন্ট করাতে হবে।তাই তাকে আমার সাথে রেখে দেই।সে দেশে যেতে চেয়েছিলো।কিন্তু আমি যেতে দেইনি।কারন সে আগের সমস্ত কিছু ভুলে গিয়েছিলো।কারোর নাম এই তার মনে ছিলো না।কাউকেই সে চিনতে পারছিলো হা।আর তাছাড়া তার শরীরের অবস্থাও ভালো ছিলো না।তাকে দেশে নিয়ে গিয়ে কার কাছে রেখে আসবো আমি।তাই এখানেই আমার সাথে রেখে দেই।অনেকবার মায়াকে জিগ্যেস করেছি,যে তোমার বাবা,মা কি করে।উনাদের নাম কি।সে কারোর নাম এই বলতে পারে না।খালি তোমাকেই চিনে সে।তোমার নামটাই তার মনে আছে।তো তাকে আমি কোন ভরসায় দেশে নিয়ে যাবো।তাই আর নিয়ে যাইনি।আর তাছাড়া এখনো সে পুরোপুরি স্বাভাবিক না।
–সব কিছুই মানলাম।কিন্তু আপনি আর মায়া একসাথে থাকেন।ওর সাথে কিছু করেন নি আপনি,সেটার গ্যারান্টি কি?
–আকাশ সাহেব দেখেন।আপনি ভালো করেই জানেন,যে বোন কাকে বলে।আর ভাই মানে কি।
ভাই হচ্ছে বোনের রক্ষিতা।বোনের সম্মান রক্ষা করার দায়িত্ব ভাইয়ের।আর সেখানে অনৈতিক কিছু করার তো প্রশ্নই আসে না।নিজের বোনের সাথে কেউ কখনো অনৈতিক কিছু করেছে।এমন কিছু কখনো শুনেছেন?
–না।
–তাহলে ভাবলেন কি করে,যে আমি এমন ধারা কাজ করবো।সেও তো আমার বোন।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
–আসলে আমার মাথা কাজ করছে না।কি সব ভুলভাল বলছি আমি।কিন্তু মায়া তুমি তো সাগরে ডুবে গিয়েছিলে।তো দীপে পৌঁছালে কি করে?
–তা আমি জানি না।ঢেউয়ের শক্তির সাথে পেরে উঠিনি আমি।ঢেউ আমাকে একদম তলিয়ে ফেলেছিলো।তারপর আর কিছু মনে নেই।পরে দেখি আমি দীপের কূলে ভাসছি।সেখানে খাওয়া দাওয়া ছাড়া দুইদিন ছিলাম।এরপর আবার সেন্সলেস হয়ে যাই।
পরে ভাইয়া আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে।
–মায়ার কথা শুনে খুশিতে আসাদুজ্জামান সাহেবকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিব।তা আমি জানি না।আপনার জন্য আজ আমার প্রিয় মানুষটা বেঁচে আছে।
–আরেহ,ধন্যবাদ দেওয়ার কিছুই নেই।নিজের বোনকে হেফাজত করবো নাতো কাকে করবো।আমার কর্তব্য ছিলো।সেটা আমি করেছি।এখন আপনারা কথা বলুন।আমি একটু কাজ সেরে আসছি।আর হা আকাশ সাহেব।আপনি কিন্তু বাবা হয়ে গেছেন।এবার কিন্তু আমার বোন আর ভাগিনীর সঠিক খেয়াল রাখবেন।
তারপর তিনি অন্য রুমে চলে যায় কাজ সারতে।
–বাবা হয়েছি,এটা শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না।মায়াকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসলাম।তারপর কোলে তুলে নিয়ে পাগলের মতন চুমু খেতে লাগলাম।
–স্যার আপনি এভাবে চুমু খাচ্ছেন কেনো?
আমি না আপনার ছাত্রী!
–এই মেয়ে চুপ।ছাত্রী ছিলা বহু আগে।এখন তুমি আমার কলিজার টুকরা বউ।আর তোমাকে শুধু চুমু না,পাগলের মতন চুমু খাবো।আজকে আমাকে আর কোনোকিছু বলে আটকাতে পারবে না।দীর্ঘ অপেক্ষার পর তোমাকে আমি পেয়েছি।
–আমার না খুব কষ্ট হয়েছে আপনাকে ছাড়া থাকতে!
আপনি আমাকে অনেক কষ্ট দিছেন।
–সরি মায়া।আর কোনোদিন তোমায় কষ্ট দিব না।
এখন থেকে সব সময় তোমাকে আগলে রাখবো।
–আচ্ছা,এখন চলেন আপনার বাবুকে দেখবেন।
তার আগে হাতটা ব্যান্ডেজ করতে হবে আপনার।আপনি একটু দাঁড়ান।আমি একটু আসছি।
একটু পর সে হাতে করে ফাস্টেড বক্স নিয়ে আসলো।তারপর হাত থেকে কাঁচের টুকরো গুলো বের করে,ব্যান্ডেজ করে দিলো।
–ব্যান্ডেজ করে বাবুর কাছে গেলাম।আমাদের মেয়ে হয়েছে।মেয়েটার চোখ গুলো দেখতে পুরো আমার মতন।আর সব কিছু মায়ার মতন হয়েছে।মেয়ের নাম আসাদুজ্জামান সাহেব রেখেছেন রাইসা।যাক মামার রাখা নামটা অনেক সুন্দর।মেয়েকে কোলে নিয়ে অনেকটা সময় আদর করলাম।খুশিতে যেনো কয়েকদফা কেঁদেছি আমি।সেই রাতে আসাদুজ্জামান সাহেবের বাসায় থাকলাম আমরা।মায়াকে সারাটা রাত নিজের বাহুডোরে পাঁজকোল করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছি।এক সেকেন্ডের জন্যেও তাকে ছাড়িনি।সেও আমায় জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছে।
পরেরদিন
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে নিলাম,দেশে যাবো।আসাদুজ্জামান সাহেব,আমি মায়াকে আর আমার মেয়েকে নিয়ে দেশে যাবো।
–আকাশ সাহেব,আর কিছুদিন থেকে গেলে হতো না।
বোনটার প্রতি খুব মায়া জমে গেছে আমার।
–আসাদুজ্জামান সাহেব,আপনার বোন তো দুইটা বছর আপনার কাছেই ছিলো।অন্যদিকে ওর মা,বাবা যে কষ্ট পাচ্ছে।তাদের যে শান্তনা দিতে হবে।আমি না হয় পরে আবার মায়াকে নিয়ে আসবো।
–আচ্ছা..
–তিনি আর কোনো কথা বললেন না।মায়াকে নিয়ে রওনা দিলাম দেশের উদ্দেশ্যে।বাসায় ফোন করে বলেছি,যে আমি আসছি।বাট মায়ার কথা বলিনি।
তাদের সারপ্রাইজ দিব।শুধু এটুকু বলেছি,যে মায়ার মা,বাবাকেও আমাদের বাসায় আসতে বলো।
ফ্লাইটে বসে বসে এক হাতে মেয়েকে নিয়ে খেলা করছি।আরেক হাতে মায়াকে জড়িয়ে ধরে রেখেছি।মেয়েটা যেনো ঠিক আগের মতই বাচ্চা বাচ্চা রয়ে গেছে।
দেশে পৌঁছে বাড়িতে চলে গেলাম।
গিয়ে দরজায় বাড়ি দিতেই আম্মু দরজা খুলে দিলো।
আমার হাতে বাচ্চা,বাট মায়াকে একটু দূরে দাঁড় করিয়ে রেখেছি।যাতে সারপ্রাইজটা ভালো করে দিতে পারি।
–এই তোর হাতে বাচ্চা কেনো?
–আমি বিয়ে করেছি।আর এটা আমার মেয়ে।
–কি বলিস উল্টা-পাল্টা!গেলিই তো তিন-চারমাস হবে।কাকে বিয়ে করে বসলি আবার?আর এই বাচ্চার মা কই?
–দেখতে চাও তোমরা?
–হা দেখবো নাতো কি করবো।অবশ্যই দেখবো আমরা।কোন মেয়ের সাথে অঘটন ঘটিয়েছিস।
–এই যে মেডাম এদিকে আসো।মায়া সাইড থেকে দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো।আম্মু মায়াকে দেখতে পেয়ে মায়া বলে সজোড়ে এক চিৎকার মেরে সারা বাড়ি মাথায় তুলে ফেললো!
বাসার বাকি মেম্বাররা দৌড়ে আসলো আম্মুর চিৎকার শুনে।আর মায়ার মা,বাবারাও দৌড়ে আসলো।
–মারে তুই এতদিন কোথায় ছিলি?
কি হয়েছিলো তোর?
–মা,এ সব অনেক কাহিনী।পরে বলছি,আগে বাসায় ঢুকতে দাও।আর তোমার নাতনীকে কোলে নাও।এটা আমার আর মায়ার মেয়ে।
মায়াকে ওর মা,বাবা দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
–মারে,তুই এতদিন আমায় ছেড়ে দূরে কি করে ছিলি?
–আব্বু,এমনটা হয়েছিলো আমার সাথে।সবটা খুলে বলে।আমি তোমাদের ও ভুলে গিয়েছিলাম।পরে ধীরে ধীরে সব মনে পড়ে।বাট আমার ঠিকানা কোথায়,সেটাই ভুলে গিয়েছিলাম।তাই নিজে নিজে আসতে পারি নি।
–সবাই তো অবাক!সাগরে ডুবে গেলে মানুষ তো বাঁচে না।তাও আল্লাহ তাকে বাঁচিয়েছে!যাক তুই ফিরে এসেছিস।এটাই আমাদের জন্য অনেক।যেভাবেই হোক,এসেছিস তো।আমাদের আর কিছুই চাইনা।
সবাই তো মহাখুশি!
কেউ নাতনীর সাথে গল্প করছে।কেউ মায়ার সাথে গল্প করছে।
এদিকে আকাশের তো আর তর সইছে হা মায়াকে কাছে টানতে।দুই বছর পর সে মায়াকে নিজের কাছে পেয়েছে।
–ধ্যাঁত কখন যে রাত হবে।আর মায়াকে নিজের কাছে পাবো।সময় যেনো যাচ্ছেই না।বহু কষ্টের পর সময় ঘনিয়ে রাত হলো।মায়াকে নিয়ে শুয়ে আছি।রাইসাকে আম্মু নিয়ে ঘুমিয়েছে।যাক ভালোই হয়েছে।মায়াকে এখন কাছে টানতে পারবো।কোনো কথা ছাড়াই মায়াকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে শুরু করলাম।
–স্যার কি করছেন আপনি?
–এই মেয়ে চুপ একদম।আজকের পর আর কখনো স্যার ডাকবে না।আমি এখন আর তোমার স্যার নেই।
–আচ্ছা ডাকবো না।কিন্তু আমাকে এভাবে কাছে টানছেন কেনো?
–ভুলে গেছো সব?কক্সাবাজার যে আমায় জোর করে কাছে টেনেছিলে,তা কি মনে নেই?
–না ভুলবো কেনো..
–তাহলে এবার আমার পালা।সেদিন তুমি আমায় কাছে টেনেছো,এখন তোমায় আমি কাছে টানবো।তারপর আরেকটা বাবুর আম্মু বানাবো তোমাকে।
–আপনি না অনেক দুষ্টু হয়ে গেছেন।
–হা হয়েছে।বউকে এতদিন পর কাছে পেলে,যে কেউ এই দুষ্টু হয়ে যাবে।এখন থামো,আমাকে আদর করতে দাও।তারপর মায়াকে নিজের করে নিলাম।ভালোবাসা দিয়ে একদম পরিপূর্ণ করে দিয়েছি তাকে।এখন আর আমাদের জীবনে কোনো বাঁধা নেই।মায়াকে আর রাইসাকে নিয়ে নতুন পরিকল্পনা শুর করলাম।ওদের নিয়ে কি ভাবে জীবনটা সাজাবো।তার উপরে নতুন বাবুর জন্য আবেদন করলাম।খোদায় হুকুমে হয়তো এক বছর পর আরো একটা বাবু হবে আমাদের।
এভাবেই সমাপ্তি ঘটলো আরো একটি গল্পের।
সমাপ্তি….!
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।
এ পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন।
সুস্থ থাকবেন।
খোদা হাফেজ।