#রঙিলা_বউ
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_১০
–মায়া বলে চিৎকার করে কান্না করতে লাগলাম!কিন্তু মায়ার কোনো হদিশ মিললো না।হয়তো চিরতরে মায়াকে হারিয়ে ফেললাম আমি!হয়তো মেয়েটার এটাই শেষ ইচ্ছে ছিলো।হারিয়ে যাওয়ার আগে সে একবার হলেও আমাকে নিজের করে নেবে।অতিরিক্ত কান্নার ফলে সেখানেই বেহুঁশ হয়ে গেলাম।এরপর আর কিছু মনে নেই!
দুইদিন পর হুঁশ ফিরে আসলো।হুঁশ ফিরতেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি।পাশেই আম্মু-আব্বু বসে আছে।আমার জ্ঞান ফিরেছে দেখতে পেয়েই তারা কান্না কাটি লাগিয়ে দিলো।
মায়া কোথায়?
–বাবা,তার তো কোনো হদিশ মিলেনি।তোর ও কোনো খবর পেতাম না।অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে ফোন আসে।তারপর সে বলে তুই নাকি কক্সবাজার বিচের পাশে বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছিস।পরে তোর বাবা গিয়ে সেখান থেকে তোকে নিয়ে আসে।
–মাথায় তো কিছুই কাজ করছে না।তাহলে কি মায়াকে আমি চিরতরে হারিয়ে ফেললাম!নাহ,এটা হতে পারে না।মেয়েটাকে হয়তো ঘৃণা করি।কিন্তু মেয়েটার জন্য কেমন যেনো একটা খারাপ লাগা কাজ করছে।নিজেকে আর সামাল দিতে পারলাম না।আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম!
–বাবা,প্লিজ কান্না করিস না।মায়া ঠিক ফিরে আসবে।
–মা,তাকে দরিয়া নিজের কবলে টেনে নিয়ে গেছে।সেখানে এক মিনিট ও কেউ বেঁচে থাকতে পারে না।সে ফিরে আসবে কি করে?
–জানিনা।উপর ওয়ালার কাছে দোয়া কর।মায়া মামনীকে যেনো তিনি সহিসালামতে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেন।
–হসপিটাল থেকে আমাকে বাসায় নিয়ে আশা হলো।
ঈশিতা আমায় দেখতে এসেছে।
–কেমন আছো আকাশ তুমি?
–আল্লাহ যেমন ভাবে রেখেছে।
তুমি কেমন আছো?
–আমি ভালো খারাপ দু’টোই মিলে আছি।
–এটা আবার কেমন কথা?
–কেমন কথা হবে আবার।বাসা থেকে বিয়ে ঠিক করেছে।ছেলেটা ভালো জব করে।আর আমারো বেশ পছন্দ হয়েছে।পছন্দ না শুধু,ভালোও বেসে ফেলেছি তাকে!তোমার দূরত্বতা সেই মানুষটাকে আমার কাছে আপন করে দিয়েছে।
–ঈশিতার কথা শুনে কি বলবো বুঝো উঠতে পারছিলাম না!তুমি খুশি তো ঈশিতা?
–আমি খুশি হবো না মানে?
আমি তো মহাখুশি!কারন মানুষটা অনেক ভালো।তোমার থেকেও ভালো স্টাবলিস্ট।আবার আমার খুব কেয়ার ও করে।
–ওকেহ,উনাকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করো।
–দোয়া করো আমাদের জন্য।আর মায়াকে খুঁজে নিয়ে সংসার জীবন শুরু করো।
–মায়া,যে হারিয়ে গেছে,সেটা তাকে কে বোঝাবে।
চুপচাপ করে রইলাম।
–আচ্ছা ভালো থেকো।আমি আসি।
–ওকেহ।
ঈশিতা চলে গেলো।আমি চাইলে ওকে আটকাতে পারতাম।কিন্তু আটকায় নি।কারন মায়ার সাথে আমার অনেককিছুই হয়েছে।আর তার চেয়ে বড় কথা,ঈশিতা আমার থেকেও ভালো কাউকে পেয়ে গেছে।না হয় সে আমাকে আর তাকে নিয়ে কম্পেয়ার করতো না।সো ভালোই থাকুক সে।দুনিয়াটাই স্বার্থপর!চিটাগাং এর ভাষায় একটা প্রবাদ আছে।দুনিয়ার ভাইল কেউ পাইল,আর কেউ নো পাইল।চোখে মুখে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখছি না!মায়াকে হারিয়ে ফেললাম।ঈশিতাও যোগ্য কাউকে বেছে নিয়েছে।এভাবেই দিন কাটতে লাগলো।মায়ার আম্মু-আব্বুরা রোজ বাসায় এসে কান্না কাটি করে।কত জায়গায় খবর লাগিয়েছি মায়ার।কিন্তু কোনো দিক থেকেই পজিটিভ কোনো খবর আসে নি।
এভাবেই দিন কাটতে লাগলো।
দুই মাস অতিক্রম হতে চললো।ধীরে ধীরে মায়ার সৃতি গুলো মনে কাটা হয়ে বিঁধতে লাগলো।কোথাও গিয়ে শান্তি পাচ্ছি না।স্কুলে গেলেও মনটা মরা হয়ে থাকে।
খালি এটা মনে হয়,মায়া এখানে বসে ছিলো।ওখানে বসে ছিলো।তাই স্কুলে যাওয়াই বাদ দিয়ে দিলাম।ছেড়ে দিলাম স্কুল।সারাদিন ঘরেই থাকি।একাকীত্বটা আরো ভালো করে পেয়ে বসলো আমাকে।ডিপ্রেশনে চলে গেলাম।সেই থেকেই জীবনের বরবাদীটা শুরু।
সারাদিন নিজেকে চার দেওয়ালের মাঝে বন্দী করে রাখি।খাওয়ার দাওয়ার ঠিক ঠিকানা নেই।আস্তে আস্তে মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিলো।পরিচিত মানুষ গুলোও অপরিচিত হয়ে গেলো।মা,বাবা কেউ ভুলে গেলাম।বাকি মানুষের কথা তো বহু পরে।
দুই বছর কেটে গেলো।
পুরোপুরি পাগল হয়ে গিয়েছি।
সব কিছুই ভুলে গিয়েছি আমি।শুধু একটা জিনিস এই মনে আছে।মায়ার সাথে কক্সবাজারে বাজারে কাটনো শেষ রাতটা।যেই রাতে সে আমায় জোর করে নিজের করে নিয়েছিলো।যেই রাতে সে দাবী করেছিলো,আমি শুধু তার।সে আমার বাচ্চার মা হতে চায়।সেদিন অনিচ্ছা সত্বেও তাকে আপন করে নিয়েছিলাম।সেই অনিচ্ছাটা সময়ের সাথে ইচ্ছায় ধাবিত হয়ে গেলো।মিস করতে লাগলাম তাকে।ভালোবাসা জন্ম নিলো তার জন্য মনে।সেই মানুষটাই ভিতরে বসবাস করছে এখনো।বাকি সবার কথাই মাথা থেকে ক্রাশ হয়ে গেছে।
যেই বাসায় আসে।সেই আমাকে পাগল ছাড়া আর কিছু বলে না।পুরোপুরি পাগলের খেতাব পেয়ে গেলাম আমি।
পাবনায় পাঠালে হয়তো সেখানের রুগীরাও আমার পাগলামো দেখে সুস্থ হয়ে যাবে।এই ভাবে এফেক্ট করেছে মায়ার চলে যাওয়াটা আমার ভিতরে।মা,বাবা রোজ কান্না করে আমাকে দেখে।
–বাবারে,তুই এভাবে কেনো নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস?
–কিসের কষ্ট দিচ্ছি!আর কে তুই?
–নিজের মাকেও ভুলে গেছিস!এর থেকে মরে যাওয়াই ভালো ছিলোরে বাবা।তোর এসব দেখে যে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারি না।খুব কষ্ট হয় তোর জন্য।
–এই তুই যা আমার রুম থেকে।তোদের কাউকে আমি চিনি না।আর আমাকে একা থাকতে দে!
আকাশের আম্মু কান্না করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
–আকাশ যেনো নিজেকেই ভুলে গেছে।
হটাৎ একদিন ঈশিতা আকাশের বাসায় আসে।কোলে একটা বাচ্চা।সে আকাশের এমন অবস্থা দেখে নিজেই শকট হয়ে যায়!
–যাক আল্লাহ বাঁচিয়েছে আমাকে এই পাগলের হাত থেকে।না হয় এই পাগলের সাথে আমার থাকতে হতো।
কত বড় বাঁচাই না বাঁচলাম!আন্টি আপনারা ওকে পাবনায় দিয়ে আসেন।না হয় আপনারাও পাগল হয়ে যাবেন।
–ঈশিতা,তোমার কোলেও সন্তান আছে।আমি যদি বলি,তাকে তুমি পাবনায় দিয়ে আসো।তাহলে তুমি কি দিয়ে আসবে?
–নাহ,কখনোই না।
–তাহলে কি ভাবে আমি আমার ছেলেকে সেখানে দিয়ে আসবো।গর্ভে ধরা থেকে নিয়ে শুরু করে আজ ২৭-২৮ বছর ধরে লালন পালন করছি।আর তুমি বলছো সেই আদরের ছেলেকেই পাগলাগারদে দিয়ে আসতে?
–আন্টি,সে তো পাগল হয়ে গেছে।
–যাক পাগল হয়ে।তাও সে আমার ছেলে।আর সে আমার কাছেই থাকবে।
–ঈশিতা আকাশের আম্মুর যুক্তির সাথে না পেরে সেখান থেকে চলে আসে।
–ঈশিতা এসে আকাশকে এতকিছু বলে গেলো।অথচ তার সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই।সে ফ্লোরের উপরে শুয়ে শুয়ে মায়া মায়া বলে পাগলের মতন প্রলাপ করছে।সারা বাড়িতে মায়ার নাম লেখে পুরিয়ে ফেলেছে।সমস্ত দেওয়ালেই যেনো মায়াকে দেখতে পায় সে।মায়া নামটাই যেনো তাকে তৃপ্তি দেয় এখন।দুনিয়ার
স্বাদ আল্লাদ যেনো তার ভিতরে থেকে চলে গেছে।সারাদিন কয়েকহাজার বার মায়ার নাম মুখে জপে।সেটাতেই যেনো সে তৃপ্তি পায়।হয়তো এভাবেই তার সমাপ্তিটা ঘটবে!
অন্যদিকে কোনো এক অপরিচিত লোক,মায়াকে ডেকে বলছে…
–মায়া,বাবু কান্না করছে।তাকে দুধ খাইয়ে এসো।
–জ্বি,আপনার জন্য খাবারটা রেডি করেই বাবুকে দুধ খাওয়াচ্ছি।
মায়া অপরিচিত লোকটার জন্য খাবার রেডি করে বাবুর কাছে যায়,ওকে দুধ খাওয়ানোর জন্য।
সে গিয়েই দেখতে পায়,তার বাবু নেই।আকাশ তার বাবুর জায়গায় শুয়ে আছে!মায়া আকাশকে দেখেই চমকে যায়!
চলবে…..?
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।