রঙিলা বউ পর্ব-০৯

0
1760

#রঙিলা_বউ
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৯

–আম্মুর ডাক শুনে বুঝতে বাকি রইলো না,যে মায়া নালিশ করেছে।করলে করুক।তাতে আমার কিছুই আসে যায় না।এবার আমার জীবনের সিদ্ধান্ত আমিই নিব।দেখি কে আটকায় তাতে আমাকে!নিচে চলে গেলাম।গিয়ে দেখি আম্মু সোফায় বসে আছে।আর মায়া কান্না করছে।

–কিরে আকাশ তুই বউ মাকে কি সব উল্টা-পাল্টা বলেছিস?

–কি বলেছি আমি?

–তুই নাকি বউ মা কে ছেড়ে দিবি বলেছিস?

–হা বলেছি।কারন ওর মতন মেয়ের সাথে আমি আর সংসার করবো না।

–আকাশ তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি রে?
কি যা তা বলছিস।

–মা,তুমি ঠিকই ধরেছো।আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।এখন তুমি শুনলে তোমার টাও খারাপ হয়ে যাবে।

–কি হয়েছে বল তো আমাকে?

–তোমার বউ মা আমাকে জুতা হাতে তুলে দিয়ে বলে নিজের গালে মারতে।কারন শুধু এটাই,যে তাকে নিয়ে সংসার করার স্বপ্ন দেখেছিলাম।সবটা মানিয়ে নিতে চেয়েছিলাম।সে আমায় তার বিনিময়ে অনেক কিছু উপহার দিয়েছে।মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়েছে আমার।তার কাছে নিম্ন পরিমাণ সম্মান ও আমি পাইনি।

আকাশের কথা শুনে আকাশের আম্মু বাকরুদ্ধ হয়ে যায়!

–বউমা,তুই কি এমন কিছু করেছিস?

–আম্মু বিশ্বাস করেন,তখন আমার মাথার সেন্স ছিলো না।কি কারনে উনার সাথে খারাপ আচরণ করেছি,সেটার কোনো উত্তর ও আমি খুঁজে পাচ্ছিনা।আম্মু প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দেন।

–এখন আমি কি বলবো বল?

–আম্মু,আপনি একটু উনাকে বুঝান না..

–আকাশ,আমি বলি কি,এবারের মতন মাফ করে দে।
ভুল না হয় করে ফেলেছে।আর বয়সটা দেখেছিস ওর?

–মা,ওর হয়ে আর একবার যদি ওকালতি করতে আসো তুমি,তাহলে কিন্তু আমাকে হারাবে।ঘর ছেড়ে চলে যাবো আমি।অনেক হয়েছে আর না।ছোট হলেও অনেকটা বুঝে সে।অবুঝ যদি হতো,তাহলে ভুল করতো,অপরাধ না।সম্মানে আঘাত করা কোনো অবুঝের কাজ না।আর এখন সব কিছু রাখো।এবার আমার ডিসিশন আমাকে নিতে দাও।ওকে আমি ডিভোর্স দিয়ে দিব।এটাই আমার শেষ কথা।চললাম আমি।উপরে চলে আসলাম।

রাতের বেলায় সোফায় শুয়ে আছি।
হটাৎ দেখি কেউ একজন আমায় জড়িয়ে ধরেছে।
বেশ অবাক হলাম!কে এটা…
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি মায়া।
এই মেয়ে তুমি আমায় জড়িয়ে ধরেছো কোন সাহসে?

–আমার বরকে আমি জড়িয়েও ধরেছি।তাতে আবার সাহস হতে হবে কেনো?

–নয়,ছয় হিসেব বাদ দাও।তোমার সাথে আমার সম্পর্ক শেষ হতে চলেছে কিছুদিনেই পর।সো সেভাবেই মানিয়ে নাও।আর আমার ধারে কাছেও ঘেঁষবে না।তুমি না এটার জন্যই আমায় অপমান করেছিলে?

–প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দেন।আমি না বুঝে অমন টা করেছি।

–মায়া আমায় ছাড়ো তুমি।যাও ক্ষমা করে দিয়েছি।কিন্তু এই বাঁধন আর থাকবে না।

–না,না,আপনি এটা করবেন না।আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।আমি বুঝে গেছি,যে আপনাকে ছাড়া আমার চলবে না।

–তুমি বুঝলে হবে না।সেটা সময় থাকতে বুঝা উচিৎ ছিলো।কিন্তু এখন আর সময় নেই।ঈশিতাকে বিয়ে করবো বলে কথা দিয়েছি।সো ওকেই ভালোবাসবো আমি।

আকাশের কথা শুনে মায়ার শরীরে খিচনি দিয়ে উঠে!
সে তার স্যারের ভাগ কাউকেই দিবে না।স্যারকেই চাই তার।নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে না পেরে ফুফিয়ে কান্না করে দেয়।

–এই মায়া,কান্না করার হলে দূরে গিয়ে করো।কিন্তু আমাকে আগে ছাড়ো।

–না আমি ছাড়বো না।আরো শক্ত করে আকাশকে জড়িয়ে ধরে।জড়িয়ে ধরে জোর করে আকাশের ঠোঁট জোড়ায় চুমু খেতে শুরু করে।

আকাশ অনেক জোড়াজুড়ি করছে ছুটার জন্য।কিন্তু পারছে না।

–আপনি আমার সাথে শক্তিতে পেরে উঠবেন না এখন।
আমি আপনাকে আজ শেষ করে দিব।আপনি আমায় রেখে অন্য মেয়েকে বিয়ে করবেন হা?তা আমি হতে দিব না।ওর মধ্যে যা আছে,আমার মধ্যেও তা আছে।
বলে আবার ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।

আকাশ আর কিছু বলে না।চুপচাপ সয়ে যাচ্ছে।মায়া নিজের মতন চুমু খাচ্ছে।কিন্তু আকাশের কোনো রেসপন্স নাই।আকাশের ঠোঁটে,গালে,কপালে পাগলের মতন চুমু খাচ্ছে মায়া।আকাশের কোনো রেসপন্স না পেয়ে,মায়া নিজেই ছেড়ে দেয়।মায়া আকাশকে ছাড়তেই কোষে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় মায়ায় গালে!

–এই মেয়ে তোর কত বড় সাহস,যে তুই আমার উপরে জোর খাটাস?

–আমি জোর খাটাবো না তো কে খাটাবে?গালে হাত দিয়ে।

–অতিরিক্ত করে ফেলছো মায়া।গতকালের কথা আমি ভুলিনি।আমাকে হাজারো অপবাদ দিয়েছো তুমি।
আমি শরীর খেকো।তোমার কচি শরীরের লোভ আমার।আরো নানান রকম কি সব বলেছো।কিন্তু এখন তো দেখছি তার উল্টো হচ্ছে সব কিছু।তোমার কথা অনুয়ায়ী,আমি তোমার সাথে জোর করা উচিৎ ছিলো।কিন্তু জোরটা করছো তুমি।তার মানে শরীর খেকো আমি না।শরীর খেকো হচ্ছো তুমি।আর আমাকে কলঙ্ক
দিয়ে যেই জুতা জোড়া দিয়েছিলে।সেগুলা মনে হচ্ছে এখন তোমার কাজে আসবে।সেগুলা ব্যবহার করো।হয়তো তোমার মাথা থেকে ভুত চলে যাবে।

–আমার মাথায় ভুত চাপুক আর যাই চাপুক।আপনার সাথেই আমি থাকবো।আপনি আমাকে ছাড়বেন না।

–হা,হা,সেটা সময় আসলেই দেখা যাবে।তোমার মত মেয়ে আমার যোগ্য না!তোমার থেকেও ভালো মেয়ে আমার জন্য বসে আছে।তোমায় বিয়ে করে ঠকা খেয়েছি আমি।আর নাহ,এবার ডিভোর্স দিয়ে ভুল শুধরাবো।এখন আমার সামনে থেকে যাও।

–উনার কথা শুনে ভিতরটা পুরো ফেটে যাচ্ছে!
ইচ্ছে করছে নিজের গলায় টিপ দিয়ে নিজেকে মেরে ফেলি।কিন্তু তা তো পারবো না।উনাকে ছেড়ে দিয়ে বিছানায় চলে আসলাম।বালিশের মধ্যে মুখ গুঁজে কান্না করতে শুরু করলাম।একটা জিনিস এই খালি ভিতরে কাজ করছে।উনি যদি আমায় ছেড়ে দেয়,তাহলে আমার বাঁচা অসম্ভব!হয়তো উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি!উনার মধ্যেই নিজেকে খুঁজে পেয়েছি আমি।নাহ,উনাকে আমি যে করেই হোক আটকাবো।উনাকে আমার করেই রাখবো।কারোর হতে দিব না উনাকে।আর যদি উনি অন্য কারো হয়ে যায়।সেদিন এই যেনো আমার সমাধি ঘটে।

–শুয়ে শুয়ে ভাবছি!মায়া একটু আগে আমার উপরে কি রকম জোর টাই না খাটালো।কিন্তু একটা জিনিস মাথায় ঢুকছে না!মায়া হটাৎ আমার উপরে উইক হয়ে গেলো কেনো!ধুর যাই হবে হোক।ওর সাথে আমি আর সংসার করবো না।আমি আমার মতন করে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম।কিন্তু মায়া নাছোড়বান্দা!সে আমার পিছনে লেগেই আছে।
হুটহাট করে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে।আমার কেয়ার করে।রাত হলে আমায় জড়িয়ে ধরে ঘুমোয়।সে ভেবেছে আমি বুঝতে পারবো না।কিন্তু সবটাই যে আমি জানি,সেটা সে জানে না।হাজারবার মানা করেছি তাকে।আমার আশেপাশে এসে যেনো ঘুরঘুর না করে।কিন্তু সে ঘুরঘুর করবেই।ওর আচরণে আবার দূর্বল হয়ে পড়তে লাগলাম ওর উপরে।কিন্তু সেটা তাকে বুঝতে দিলাম না।আমি আমার মতন করে গা ছাড়া ভাব নিয়ে থাকলাম।তবে মনের মধ্যে দোটানা কাজ করতে শুরু করলো!কাকে জায়গা দিব আমি মনে!ঈশিতাকে তো কথা দিয়েছি আমি,যে ওকে বিয়ে করবো।অন্যদিকে মায়া আবার মনের মধ্যে জায়গা করে নিচ্ছে।

দেশের বাহির থেকে বাবা ফিরে এসেছে।ব্যবসার কাজে তিনি বাহিরে গিয়েছিলো।এসেই দুটো টিকিট হাতে ধরিয়ে দিলো।

–যাও তুমি আর বউমা কক্সবাজার থেকে ঘুরে এসো।
তোমরা তো মনে হয় হানিমুনে যাওনি?

–বাবা,হানিমুনের দরকার দেই।ওর সাথে হানিমুনে যাবো না আমি।

–বেশি কথা বলো না।আমি যেটা বলেছি সেটাই করো।

–আর কোনো কথা বললাম না।বাবার মুখের উপরে কথা বলার সাহস আমার নাই।

মায়া তো সেই খুশি!সে তার প্রিয় স্যারের সাথে ঘুরতে যাবে।যাক স্যারকে এবার একদম নিজের করে নিব।উনার আর আমার মাঝে এবার কেউ আর আসতে পারবে না।পার্সোনাল সময় কাটাবো উনার সাথে।হানিমুন টাও করে ফেলবো এবার।ছোট হয়েছি তো কি হয়েছে।হানিমুন তো করতে পারবো।উনার বাচ্চার মা তো হতে পারবো আমি।

–রওনা দিলাম মায়াকে নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে।
পৌঁছাতে প্রায় রাত হয়েছে।কক্সবাজার পৌঁছেই আমাদের রিসোর্টে উঠে গেলাম।শুয়ে আছি।মায়া ফ্রেশ হতে গেছে।শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছিলাম।হটাৎ দেখি মায়া নীল কালারের একটা শাড়ী পরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসেছে।এক ধেয়ানে তাকিয়ে আছি মায়ার দিকে!মনে হচ্ছে যেনো কোনো হুরপরী জমিনে নেমে এসেছে।

–এই যে স্যার,কি দেখছেন এমন করে?
আপনি তো কখনো আমার দিকে এমন করে তাকান না।আজ এভাবে তাকিয়ে আছেন।আমায় কি খুব সুন্দর লাগছে বুঝি?না আমাকে দেখে কাছে পেতে ইচ্ছে করছে আপনার?আমি কি ঠিক বললাম?

–মায়া পাগল হয়ে গেলে নাকি তুমি?
কি সব উল্টা-পাল্টা বলছো হা?

–বুঝি বুঝি সব বুঝি আমি।সত্যিটা বলায় এখন আমাকে পাগল বলছেন।

–কচু বুঝো তুমি।
পিচ্চি মেয়ে,পিচ্চি মেয়ের মতন এই থাকো।

–না আমি পিচ্চি না।আর আমি পিচ্চি মেয়ের মতন ও থাকবো না।আমার বিয়ে হয়েছে।আমি পিচ্চি মেয়ের মতন কেনো থাকবো?আমি তো থাকবো আপনাকে নিয়ে।বলেই আকাশের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

আকাশের হুঁশ উঠে যায়,মায়ার এইরূপ আচরণ দেখে!

মায়া পুরোপুরি আকাশকে নিজের করে নেয়।
আকাশ ও আর নিজেকে সামলাতে পারে না।সেও মায়ার আচরণে নিজের ইগোটাকে হারিয়ে ফেলে।
এক তরফা ভালোবাসাটা যেনো আজ পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে।কারন আকাশ অনিচ্ছাসত্বে এসবে জড়িয়ে গেছে!এটা মায়ার এক তরফা ভালোবাসা নয় কি?
এটার পরিণতি কি হতে চলেছে কে জানে!

বেশ কিছু সময় পর দু’জন দু’জনকে ছেড়ে দেয়।আকাশের তখনি টনক নড়ে উঠে!আল্লাহ,এটা কি করলাম!মায়ার সাথে কি সবে জড়িয়ে গেলাম আমি।
নিজের ভিতরেই কেমন যেনো একটা ঘুটঘুটানি কাজ করছে!

এখন কোন নৌকায় পা দেবে সে।সেটা আকাশ নিজেও জানে না!তবে যেহেতু ওদের মাঝে কিছু হয়ে গেছে।সেইদিক থেকে আকাশ মায়াকে নিয়ে কিছুটা ভাবতে থাকে।ঈশিতার সাবজেক্ট টা সাইড করে রাখে।

পরেরদিন সকাল বেলায় মায়া বায়না করে সে সমুদ্র সৈকত দৈখতে যাবে।

আকাশ ওকে সমুদ্র দেখতে নিয়ে যায়।
আকাশ সমুদ্র থেকে দূরে বসে আছে।সে বসে বসে দেখছে মায়ার কান্ড গুলো।তারো ইচ্ছে করছে মায়ার সাথে গিয়ে পানি নিয়ে খেলা করতে।কিন্তু কোনো কিছু একটা ভেবে সে আর যায়না।তবে মায়া আকাশের মনের মধ্যে আবার জায়গা করতে শুরু করে দেয়।

মায়া সমুদ্র নেমে পানি নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে।সে তো মহাখুশি!বড় বড় ঢেউ আসছে।মায়া সেই ঢেউয়ের সাথে সাথে খেলা করছে।হটাৎ এক বিশাল ঢেউ আসে।যেই ঢেউয়ের পর মায়াকে আর দেখতে পাওয়া যায়না।সেই ঢেউয়ের সাথে মায়াও ডুবে গেছে সমুদ্রের একদম তলদেশে।

আকাশ তাড়াতাড়ি দৌড়ে সমুদ্রে তীরে আসে।কিন্তু সে মায়াকে আর দেখতে পায়না।অনেক খোজাখুজি করে।কিন্তু মায়ার কোনো হদিশ মিলে না।

–একটু আগে তো এখানেই খেলা করছিলো।বড় ঢেউটা আসার পর মায়াকে তো আর দেখা যাচ্ছে না।সে গেলো কই?মনের মধ্যে ভয় করতে শুরু করলো।মায়া কি সমুদ্রে ডুবে গেলো নাকি! হটাৎ চোখে পড়লো মায়ার ওড়না।যেটা সমুদ্রের কিনারায় ভাসছে।তার মানে এবার আমি শিউর,যে মায়া বড় ঢেউটার সাথে সমুদ্রে তলিয়ে গেছে!না,বলে এক চিৎলার দিকে সমুদ্রের কিনারায় বসে পড়লাম।আর মায়া,মায়া বলে চিৎকার করে কান্না করতে আরম্ভ করলাম।কিন্তু মায়ার কোনো হদিশ এই মিললো না।হয়তো মায়াকে চিরতরে হারিয়ে ফেললাম আমি।হয়তো মেয়েটার এটাই শেষ ইচ্ছে ছিলো।যে হারিয়ে যাওয়ার আগে,সে একবার হলেও আমায় নিজের করে নিবে।অতিরিক্ত কান্নার ফলে সেখানেই বেহুঁশ হয়ে গেলাম।এরপর আর কিছু মনে নেই।

চলবে…

ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে