রঙিলা বউ পর্ব-০১

0
4653

#রঙিলা_বউ
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_১

–নিজের পড়ুয়া ছাত্রী মায়াকেই যে বিয়ে করতে হবে,সেটা কোনোদিন কল্পনাতেও ভাবিনি!
মা,বাবা জোর করে ক্লাস নাইনে পড়ুয়া মায়ার সাথে বিয়ে করিয়ে দিয়েছে!
যে মেয়েকে বিগত দুই বছর ধরে পড়িয়ে আসছি,স্নেহ মমতা দিয়েছি স্টুডেন্ট হিসেবে।সেই মেয়েকে আজ নিজের বউয়ের রূপে দেখতে হচ্ছে।সেটা যেনো আকাশ জমিন এক হয়ে যাওয়ার মতন ব্যাপার!মায়া এখন আমার বউ,সেটা ভাবতেই গা শিউড়ে উঠছে!নাহ আমি মায়াকে বউ হিসেবে মানি না।কোনোদিন ও মানবো না।

বাসর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।আজ মায়ার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।বাসর ঘরে বউ সেজে বসে আছে মায়া।তখনি মায়ের আগমন..

–কিরে এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস?
ভিতরে বউমা অপেক্ষা করছে।যা ভিতরে যা।

–মা তোমরা আমার জীবনটা শেষ করে দিলে!
শেষ মেষ নিজের পড়ুয়া স্টুডেন্টকেই বিয়ে করতে হলো আমাকে?এর থেকে ভালো ছিলো তোমরা আমায় মেরে ফেলতে!

–তোর জীবন আমরা শেষ করিনি।বরং গুছিয়ে দিয়েছি।এটাতে যদি তোর খারাপ মনে হয়।তাহলে কি আর বলার আছে।

–মা,এটাকে জীবন গোছানো বলে?

–আকাশ আমি তোর মা।তোর খারাপ কখনোই চাইবো না।হা হয়তো অন্য মেয়ের সাথে তোর বিয়ে দিলে তুই মেনে নিতে পারতি।কিন্তু মায়া অনেক ভালো মেয়ে।তাই তোর সাথে ওর বিয়ে দিয়েছি।সে তোকে অনেক সুখে রাখবে!

–মা,তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে,তুমি কোনো স্বার্থপর মা!আমার জায়গা থেকে নিজেকে একবার বসিয়ে দেখো।তারপর বুঝে যাবে,যে কতটা বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে আছি আমি।

–আকাশ তুই আমায় স্বার্থপর ভাবিস আর যাই ভাবিস না কেনো।একটা সময় তুই নিজেই আমাকে বলবি,যে মা তুমি আমার জন্য বেস্ট পার্টনার চয়েস করেছো।

–সেটা কখনোই বলবো না।

–সেটা সময়ে দেখা যাবে।যা এখন ভিতরে যা বউমা অপেক্ষা করছে।

–আমায় ঠেলে বাসর ঘরে ঠুকিয়ে দিলো।
মনে হচ্ছে যেনো জেলখানার কয়েদি আমি।
বাসর ঘরে ঢুকে দেখি মায়া চুপচাপ বসে আছে।মাথায় ইয়া লম্বা একটা ঘোমটা।ইচ্ছে করছে গিয়ে কয়েকটা ঠাটিয়ে লাগিয়ে দেই।কেনো সে আমায় বিয়ে করলো।আমি না হয় মা,বাবার জোড়াজুড়িতে বিয়ে করেছি।কিন্তু সে কেনো করলো?সে তো মানা করতে পারতো।যে এই বিয়ে করবে না।চরম রাগ হচ্ছে মেয়েটার উপরে আমার।তাও রাগকে কন্ট্রোল করে খাটের দিকে এগিয়ে গেলাম।সারাদিন অনেক ধকল গেছে।একটু বিশ্রাম নেওয়া দরকার।শুতে যাবো ঠিক তখনি মায়া চেঁচিয়ে উঠলো!

–স্যার আপনি এ কি করছেন?

–কি করছি মানে?ঘুমোতে এসেছি।

–স্যার আপনার কি লজ্জা শরমে বলতে কিছুই নেই?
একে তো নিজের পড়ুয়া স্টুডেন্টকে বিয়ে করেছেন।দ্বিতীয়ত আবার একই খাটে ঘুমানোর জন্য মনস্থির করেছেন।আপনার উদ্দেশ্য টা কি বলেন তো?

–এই মায়া কি সব উল্টো-পাল্টা বলছো হা?
তোমায় কি সাধে বিয়ে করেছি নাকি?মা,বাবা জোর করে তোমার সাথে বিয়ে দিয়েছে।আর কি বললে?
একই খাটে ঘুমানোর ব্যাপারে।সেটা তোমাকে বলা উচিৎ আমার।এমন করে বলছো,যেনো মনে হচ্ছে খাট টা তোমার?

–খাটটা আমার না হোক,তবে যখন দেখছেন খাটে একটা মেয়ে বসে আছে।তার পরেও একই খাটে শোয়ার জন্য আসেন কি করে?নুন্যতম কমনসেন্স বলতে কি কিছু নেই নাকি আপনার?

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

–মায়া মুখ সামলে কথা বলো!
ভুলে যেওনা আমি তোমার স্যার।

–মুখ সামলেই কথা বলছি।আর স্যার হন আর যাই হন,সত্যটা তো আমি বলবোই।
আমার উপরে কু নজর আপনার অনেক আগ থেকেই ছিলো!তাই আপনি আমায় বিয়ে করেছেন।যাতে করে আমার শরীর নিজের করতে পারেন।

–মায়ার মুখ থেকে এসব শুনে নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে পারলাম না।ঠাসসসসস করে একটা বসিয়ে দিলাম মায়ার গালে! এই মেয়ে কি বললি তুই?
অনেক আগ থেকেই তোর উপরে আমার কু নজর ছিলো?সাহস তো কম না তোর!কিসের বাহানা নিয়ে এত বড় বড় কথা বলছিস? ক্লাস নাইনে পড়িস যে সেই মেয়ে তুই।কু নজর এই যদি থাকতো,তাহলে তোর মত বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করতাম না।মা,বাবা যতই জোড়াজুড়ি করুক না কেনো।কলেজে পড়ুয়া ভালো দেখে একটা ফিগার ওয়ালা মেয়েকে বিয়ে করতাম।

–তো তাই করতেন।আমার জীবনটা কেনো নষ্ট করলেন?কান্না করতে করতে।

থাপ্পড় খেয়ে কান্না করে দিয়েছে মায়া!

–দেখো মায়া,শেষ বারের মতন বলছি।তোমার জীবন আমি নষ্ট করিনি।বরং মা,বাবা মিলে উল্টো আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে।আমি নিজেই মানতে পারছি না,যে তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।

–যেভাবেই হোক,বিয়ে তো করেছেন।এখন আমার তিশানের কি হবে।ওকে যে কথা দিয়েছি আমি।ওর হাত কখনো ছাড়বো না।

–কোন তিশান?আমাদের স্কুলের তিশান?

–হা,ওর সাথে পাঁচমাস ধরে আমার রিলেশন চলছে।
ওকে ঠকিয়ে এখন যে প্রতারকের খাতায় নাম লিখিয়েছি আমি!আমার মা,বাবার দোষ সব।উনারা আমাকে আপনার সাথে জোর করে বিয়ে দিয়েছে।

–এই যে,এত হাইপার হওয়ার কিছুই নেই।মা,বাবা শুধু জোর করে বিয়ে দিয়েছে।তাছাড়া কিছুই হয়নি।
আর তোমার জীবন নষ্ট করার কোনো উদ্দেশ্য আমার নেই।তুমি যদি চাও,তাহলে তিশানের সাথে তোমায় মিলিয়ে দিতে পারি আমি।

–সত্যি স্যার আপনি আমাকে তিশানের সাথে মিলিয়ে দিবেন?

–হা সত্যি,তবে তার জন্য ছয়মাস সময় লাগবে।
কারন বিয়ে করার পরপর এই ডিভোর্স হয়না।কিছুটা সময় লাগে।

–ছয়মাস!তার আগে যদি আপনি আমার সাথে উল্টো-পাল্টা কিছু করে বসেন?

–মায়া,তুমি আবারো আমার উপর খারাপ কিছু মন্তব্য ছুড়ে মারলে।ডিভোর্সের জন্য ছয়মাস সময় চেয়েছি।কিন্তু এখন একটা শর্ত ও দিব তোমাকে।সেটা মানলেই ডিভোর্স দিব তোমাকে।

–আমি জানি,আপনি আমার সাথে খারাপ কিছু করতে চাইবেন!

–সেরকম কিছুই না।আমার উপরে যেই দোষ চাপিয়ে দিলে।সেটা তোমার তুলে নিতে হবে।

–অবাক চোখে তাকিয়ে আছি স্যারের দিকে!
মানুষটাকে খারাপ ভেবেছিলাম!কিন্তু এখন দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে গেলাম,যে মানুষটা ভালো কি খারাপ।

–কি তুলবে না?

–জ্বি স্যার তুলবো।
বালিস
–বালিশ নিয়ে সোফায় চলে গেলাম।কারন খাটে শোয়ার ইচ্ছে নেই আর।খাটে শুলে হয়তো কখন শয়তান মাথায় ভর করবে।তখন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না।তখন শরীর খেকো বলে সিলমোহর লেগে যাবে।এননিতেই যা না তা বলছে।

সোফায় শুয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে টিপাটিপি করছি।
কারন মনটা ভালো না।ফেসবুক থেকে একটু ঘুরে আসি।হয়তো মনের কষ্টটা কিছুটা লাঘব হবে।ফেসবুকে ঢুকতেই অনবরত মেসেজ আসতে শুরু করলো।এত মেসেজ,যে পুরো ফোনটাই হ্যাং হয়ে গেছে।কিরে আজ হটাৎ এতো মেসেজ কে দিচ্ছে?মেসেঞ্জার চেক করলাম।সবাই দেখি কংগ্রেস জানাচ্ছে।কয়েকজনের মেসেজ তুলে চেক করলাম।স্যার আপনার বিবাহিত জীবন সুখের হোক।বন্ধু সাজ্জাদ ও লিখেছে।দোস্তো ভালো করে বিড়াল মারিস।তোর জন্য সুভ কামনা রইলো।যা সালা,এটা কি হলো!মনের কষ্ট দূর করতে ফেসবুকে আসলাম।উল্টো আরো কষ্টটা বাড়িয়ে দিলো।সব কয়টা মজা নিচ্ছে আমার সাথে!নিজের প্যারায় মরে যাচ্ছি।ওরা আছে বিড়াল মারা নিয়ে।সব কয়টা খাইস্টার দল।রাগে ফেসবুক থেকে বেরিয়ে আসলাম।ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়েছি।

সকাল বেলায় মায়ের ডাকে ঘুম ভাংলো।

–আকাশ দরজা খোল।

–হা মা আসছি।শোয়া থেকে উঠে দেখি,মায়া তখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।থেকে উঠে দরজা খুলে দিলাম।

–এই নে ধর,পাঞ্জাবি আর শাড়ী।
পাঞ্জাবিটা তুই পড়বি।আর শাড়ীটা মায়া মামনীকে পড়িয়ে নিচে আসবি দু’জন।নিচে মানুষজন অপেক্ষা করছে নতুন বউকে দেখার জন্য।

–আচ্ছা।আম্মুর হাত থেকে পাঞ্জাবি আর শাড়ীটা নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখলাম।
তারপর ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি মায়া এখনো ঘুম।ডেকে দিলাম মায়াকে।
এই মায়া উঠো।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও।নিচে মানুষজন এসেছে তোমাকে দেখতে।

মায়া তাড়াতাড়ি করে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

–পাঞ্জাবি পড়ে সোফায় বসে আছি।
আরে ধ্যাঁত আপনাদের তো আমার পরিচয় দিতেই ভুলে গেছি।আসুন পরিচয় টা দিয়ে দেই।

(আমি আকাশ মাহমুদ।পড়াশোনা শেষ করে বেসরকারী একটা স্কুলে শিক্ষক হিসেবে জয়েন করেছি।যদিও বাবার অঢেল আছে।আমার শিক্ষকতা করার কোনো প্রয়োজন নেই।তবুও নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কিছু করার ইচ্ছা ছিলো আমার।তাই শিক্ষকতার পেশা টাকে বেছে নিয়েছি আমি।আর মায়ার ব্যাপারে তো অনেকটাই জেনে গেছেন।বাকি গল্পের সাথে থাকলে সবটাই জানতে পারবেন।এবার গল্পে ফেরা যাক)

মায়া ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছে।

–এই নাও,শাড়ীটা পড়ে নাও।

–আমি শাড়ী পড়তে পারি না।

–ওকেহ,তুমি যতটুকু পারো পড়ো।বাকিটা আমি ঠিক করে দিব।মায়া শাড়িটা কোনো রকমে পড়েছে।তবে শাড়ীর কুঁচি দিতে গিয়ে আটকে গেছে।

–স্যার শাড়ীটাতো কোনো রকমে পড়েছি।তবে কুঁটিটা দিতে পারছি না।ওকেহ দাঁড়াও আমি ঠিক করে দিচ্ছি।
মায়ার শাড়ীর কুঁচিটা ঠিক করে দিচ্ছি।কুঁচি ঠিক করে দিতে দিতে,মায়া বাসার কেউ যেনো না জানে,যে তোমায় আমি ছয়মাস পর ডিভোর্স দিব।আর ততদিন সবার সাথে মিলেমিশে থেকো।

–ওকেহ,তবে ছয়মাস।মনে রাখবেন কিন্তু স্যার।ছয়মাসের এক মিনিট ও বেশি আমি আপনার সাথে থাকবো না।

–ওকেহ…
তারপর মায়াকে নিয়ে নিচে চলে গেলাম।
বাসায় অনেক মানুষ এসেছে নতুন বউকে দেখতে।
অনেকটা সময় সেখানেই পেরিয়ে গেলো।মানুষজন চলে গেলে নিজের রুমে চলে আসি।মায়া নিচেই রয়ে গেলো।আম্মুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে হয়তো।এতটা সময় মানুষের সমাগমে থাকায় আমার শরীর ঘামে ভিজে চুপচুপ হয়ে গেছে।ধ্যাঁত আবার গোসল করতে হবে।টাওয়াল টা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।
গায়ে হালাক পানি মেরে আবার জামা কাপড় পড়ে নিব।টাওয়ালটা পেঁচিয়ে গায়ে পানি ঢালতে শুরু করলাম।সব কিছুর ভিড়ে ওয়াশরুমের দরজা আটকাতে ভুলে গেছি।এমন সময় হুট করে কোথা থেকে জানি মায়া এসে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।আর সাথে সাথে আমার শরীর থেকে টাওয়াল টা পড়ে যায়।

মায়া ওয়াশরুমের ভিতরে এই অবস্থায় আমাকে দেখতে পেয়ে,চোখে হাত দিয়ে সজোড়ে চিৎকার মেরে উঠে!

–তখনো আমার খেয়াল নেই যে আমার গা থেকে টাওয়ালটা পড়ে গেছে।মায়া কি করছো কি?
মানুষ শুনলে কি বলবে?

–আরে স্যার রাখেন আপনার মানুষ দেখা দেখি।
আপনি আগে আপনার আমাজন জঙ্গল টাকে ঠিক করেন।আমাজন জঙ্গলের পুরো পাছপালা সহ দেখা যাচ্ছে।

–মায়ার কথা শুনে শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখি,
আমার শরীর থেকে টাওয়াল টা খুলে নিচে পড়ে আছে!চোখ দুইটা গোল আলুর মত বড় বড় হয়ে গেছে নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে!নিজেকে দেখে নিজের এই ভয় করতে শুরু করলো!আল্লাহ কি সব গাছপালা পুষে রেখেছি আমি!তাড়াতাড়ি করে টাওয়াল টা তুলে নিয়ে আমাজন জঙ্গলটা ঢেকে ফেললাম।অন্যদিকে মায়া দৌড়ে পালিয়ে গেলো ওয়াশরুম থেকে…..

চলবে…?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে