রঙিন খামে বিষাদের চিঠি পর্ব-৩৭

0
726

#রঙিন_খামে_বিষাদের_চিঠি
#পর্বঃ৩৭
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৯৬
“ভ্লাদের সাথে পরিচয় হলো আজ। ছেলে-টা সহজ-সরল বোকাসোকা। বিদেশী ছেলে এমন বোকা হয়? অদ্ভুত ছেলে-টা। ছেলেদের সাথে পরিচয় হয় ঠিক আছে। হাই-হ্যালো হুট করে মুড সুইং হলে ফ্লার্ট করা! এই তো। কিন্তু ফ্রেন্ডশিপ হয়নি আজ অব্দি। অথচ এই ছেলে যেচেপরে ফ্রেন্ডশিপ করলো। মাদালিনার বয়ফ্রেন্ড। ইগনোর করলেও ফ্রেন্ডশিপে দ্বিমত করার ইচ্ছে করলো না। থাক সে তার মতো ফ্রেন্ড হয়ে। আমি আমার মতো। কিন্তু তার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করাটা বাবা পছন্দ করবেন না! এটা ভাবিনি। মনে হয়েছিলো উনি তো কেয়ার-ই করেন না। কার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করলাম! তাতে কি যায় আসে? একটু বেশি-ই ড্রিংক করে ফেলেছিলাম। ভ্লাদ বাসায় রেখে যেতে এসেছিলো। মাদালিনা সাথেই ছিলো। গাড়ি থেকে নেমে নিজের ব্যালেন্স রাখতে পারলাম না। ঢলে পরতে ধরলেই ভ্লাদ আর মাদালিনা একত্রে এসে ধরে ফেললো আমায়। দরজায় পৌঁছে দিতেই চলে যেতে বললাম। বাসার কলিং বেল বাজিয়ে দাড়াতেই বাবা এসে দরজা খুলে দিয়ে থাপ্পড় মারলেন। হয়তো ব্যালকনি থেকে সব-টা দেখেছেন। রিয়ানা গালে হাত দিয়ে বাবার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছি। অথচ বেহায়া চোখে জল ছলছল করছিলো। বাবা তখন ক্ষিপৃত স্বরে বললেন,

” এতদিন সব বাজে কাজ বাইরে চলতো। আজ বাসায় ছেলে অব্দি এসে গেলো। বাহ, হোসাইন পরিবারের মেয়ের এত উন্নতি! তোমাকে নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দিতেও লজ্জা করছে।”

জবাবে সেদিন কিছু বলিনি। চুপচাপ মন থেকে বাবা নামক শব্দ-টা মুছে ফেলেছিলাম।

রায়াদ পাতা-টা ছিড়ে ফেললো। লাইটার দিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে উড়িয়ে দিলো। এরপর এক এক ৩-৪টা পাতা উল্টালো। সেসবেও বাবা মেয়ের এরকম মন খারাপের মুহুর্ত গুলো লেখা। সেসবও ছিড়ে একই ভাবে পুড়িয়ে ছাই উড়ালো। এক পাতায় গিয়ে তার চোখ আঁটকালো। তাতে লেখা,

“আজ সাজ্জাদ বজ্জাত নামক এক বদ লোক এসে উপস্থিত বাড়িতে। একটু বাঁচাল বাট কিউট। তার ফেইস টার মতো ব্যবহার টাও কিউট হলে আমি ক্রাশড হতাম নিশ্চিত। নাম যেমন সাজ্জাদ, তার সাথে নিকনেইম বজ্জাত-টা সুন্দর ভাবে মানিয়ে নিয়েছে। কি সুন্দর একটা নিকনেইম দিলো, এটিটিউড কুইন। পছন্দ হয়েছে আমার। কিন্তু মানুষ টাকে একটুও না। আমায় এত পাত্তা দেওয়ার কি আছে? আমায় যে পাত্তা তাকে আমার চরম বিরক্ত লাগে। এই ছেলেকেও আমার এই কারণে একটুও পছন্দ হলো না।”

রায়াদ পরে মুচকি হাসলো। সাজ্জাদ ভাইকে পুরো বজ্জাত বানিয়ে দিয়েছিলো মেয়ে। ছিড়লো এই পাতাটাও। আগের মতোই পুড়িয়ে ফেললো। এরপর অন্য পাতায় মনোযোগ দিলো। তাতে লেখা,

“সাজ্জাদ ভাই এভাবে আমার প্রতি দুর্বল হচ্ছে! এটা আমার মানতে কষ্ট হচ্ছে। এই বিষয়-টা একদমই ঠিক হচ্ছে না। আমি চাইনা আমার প্রতি কেউ দুর্বল হোক। আমায় ভালোবেসে তো আঘাত-ই পাবে। আমার তো বয়স-টা আবেগের। যতই অন্য দেশে বড় হই! সেই তো আগাগোড়া মনে বাঙালি সত্তা। আমার এসব প্রেম ভালোবাসায় একটুও ভরসা নেই। এখানে এসে ফ্যান্টাসিতে ভুগে হয়তো আমায় বলছে ভালোবাসি। কিন্তু দেখা যাবে আমার চালচলন, আচার-আচরণ! সবকিছুতে তিক্ততা ছাড়া সম্পর্কের পরিণতি কিছু হবে না।”

রায়াদ পাতা উল্টালো। কয়েক-টা পাতা ফাঁকা। এরপর আবার একটু লেখা,

“আজ সাজ্জাদ ভাইকে দিলাম তো একটা সুযোগ। কিন্তু তার ভালোবাসা আমার প্রতি দয়া ছাড়া কিছু মনে হয়না। এই তো মনে হয়! সে আমার অসহায়ত্ব! একাকিত্ব! এসব জেনে শুধু সঙ্গ দিতে চাইছে। সে চাচ্ছে আমায় বদলাতে। আমি বদলাবো না। বদলে গেলে সে সফল হবে। সে আমার ডায়েরী পরেছে। মাদালিনা বলেছে আমায়, ওর সাহায্যে ভাষা ট্রান্সলেট করে জেনেছে হয়তো বাবার সাথে আমার তিক্ততার গল্প-টা। সেটা মুছে একটু হাসাতে হয়তো তার ভালোবাসা। কিন্তু আমি তো চাই আমায় আমার গল্প না জেনেই একটা মানুষ আমায় ভালোবাসুক। আমি জানি! আমার ভেতর-টা না জেনে উপর টা দেখে কেউ-ই ভালোবাসবে না। দেখা যাক এই সুযোগর পরিণতি কি হয়!”

৯৭,
রায়াদ এই পাতা পড়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মেয়ে-টার শক্ত খোলশ দেখে আন্দাজ করেছিলো কিছু একটা তো অবশ্যই হয়েছে তার জীবনে। নয়তো এত শক্ত আবরণে কোন নারী নিজেকে জড়ায়? এই ভেবে তো তাকে জানার আগ্রহ হয়েছিলো তার। এরপর আগ্রহ থেকে ভালো লাগা। সেটা রুপ নিলো ভালোবাসার। আদৌও এটা ভালোবাসা কিনা! বোঝার জন্য একটা বছর সময় লাগিয়ে দিলো। দিনদিন রিয়ানাকে পাওয়ার ইচ্ছে বাড়ার বদলে কমেনি এক বিন্দু। যার পরিণতি তো আজকের বিয়ে। রায়াদ মৃদু হেসে ডায়েরীর অন্য পাতায় চোখ রাখলো। পড়তে শুরু করলো,

“আজ সাজ্জাদ ভাইকে ফিরিয়ে দিলাম। এই সম্পর্কে রাজী হওয়া একদম উচিত নয়। আমায় বড়-আম্মু, বড়-আব্বু তার বোন কখনও মানতে পারবেনা। বাবাও রাজী হবেন না। কারণ তো দেখছিই কত আদরের ছেলে তাদের। আমার মতো খারাপ মেয়েকে কি বউ হিসেবে মানা যায়! কিন্তু আমার এরকম মনের মধ্যে চিনচিনে ব্যথা কেন অনুভব হচ্ছে? আমি কি দুর্বল হয়ে পরলাম তার প্রতি? না এটা হতেই পারে না। আমার কোনো ভালোবাসার ফিলিংস হতেই পারেনা। সবাই তো বলে আমি পাথর। তবে কি পাথরে ক্ষয় ধরলো?”

এরপর কিছু পাতা ফাঁকা। কিছু লেখা নেই। অনেক পাতা উল্টিয়ে এক পাতায় লেখা ফুঁটে আছে। সেখানে লেখা,

“সাজ্জাদ ভাই চলে গেলো আজ মাস পেরিয়ে বছরের রুপ নিচ্ছে। অথচ লোক-টার শূণ্যতা আজও আমায় পোড়াচ্ছে। এত দগদগে ঘা তৈরি করে দিয়েছে! মনের সুখ শান্তি সব নির্বাসিত। আমায় তো রোজ নিয়ম করে কেউ বিরক্ত করে না। বিরক্ত করে না সেই হিসেবে আমার খুশি হওয়া উচিত। অথচ আমার কান্না পায়। ফাঁকা ফাঁকা লাগে। এটাই কি তবে ভালোবাসা! দিনদিন তার শূণ্যতা আর এক নজর দেখার হাহাকারে রোজ মরছ। সামনে থেকে দেখতে ইচ্ছে করছে। একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে মন চাচ্ছে। অথচ দূরত্ব হাজার খানেক।”

নিজের ভালোবাসার মানুষের অন্যজনের জন্য জমানো ভালোবাসার কথাগুলো রায়াদের বুকে বিঁধছে। তবুও সাহস করে পাতা উল্টিয়ে অন্য পাতায় নজর রাখলো, পড়তে আরম্ভ করলো,

“আজ এত খুশি খুশি লাগছে! আনন্দের চোটে ইচ্ছে করছে হাওয়ায় ভাসতে। বাংলাদেশে যাবো। তাকে দেখবো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে দিবো তাকে ভালোবাসি। বজ্জাত লোক-টা। এই তার ভালোবাসা! যাওয়ার পর একটুও মনে করলো না। আমায় কি একটুও মিস করে না? একটু যোগাযোগ করার চেষ্টা তো করতে পারে! আমি চেষ্টা করেও তো পারিনা। কাকে বলবো নাম্বার দাও! বাবাকে বলার তো সুযোগ-ই নেই। আপুর কাছে চাইলে কি ভাববে কে জানে? যদি বলে ভালোবাসি কিনা! কি জবাব দেবো? আমার অসস্তি লাগে যে। বদ লোক-টা একটু কি চেষ্টা করতে পারেনা?”

রায়াদ একটু হাসলো। বদ লোক! আসলেই বদ লোক। একটু চেষ্টা করলে হয়তো তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেত। যেমন-টা তার পেলো। শুধু পার্থক্য একটা সাজ্জাদ ভাইকে রিয়ানা ভালোবাসতো। আমায় বাসে না। রায়াদ মনে মনে এটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এরপর বেশ কিছু পাতা ফাঁকা। একদম শেষপাতায় গিয়ে লেখা,

“ফিরে এলাম। নিজের পুরোনো স্বভাবে। চেষ্টা করে দেখলাম বদলিয়ে কিছু পাওয়া যায় না। শুধু পাওয়া যায় পাল্টে যাওয়ার তকমা। বুঝলাম দিনশেষে, আমি যেমন! তেমনই ভালো। নিজের ব্যক্তিত্ব বদলালে শুধু আঘাত-টা শীরধার্য। সব পিছুটানের মুক্তি ঘটিয়ে আসলাম। তার বিয়ে দেখলাম। ইশশ কি নিদারুণ যন্ত্রণা। এই যন্ত্রণায় তিক্ত মন। ভালোবাসা! সে শব্দ আমার জন্য নয় মেনে নিলাম। মাঝখানে শুধু আমার বাবা আর বোনকে অপমানিত হতে হলো। আমায় শিক্ষা দিতে পারেনি। তারা পেরেছপ, আমি গ্রহণ করিনি। এটা কি করে বুঝাতাম তাদের! আমি তো বদলে-ই গিয়েছিলাম। যার জন্য বদলালাম! সে তো অন্য কারো হলো। তবে আমি শালীন পোশাক পরে কি করতাম তখন? আমার যে অভ্যাস, কমফোর্টেবল ফিল সব এসব শর্ট ড্রেসেই। পরে ফেলেছিলাম বিয়েতে। সেজন্য এভাবে শিক্ষা তুলে মানুষ কথা বলবে? ওখানকার সমাজের মানুষ এত লো মেন্টালিটির কেন? সে যা হোক। হবার ছিলো হয়ে গেছে। শুধু দূরত্ব বাড়লো বাবার সাথে। আর আজকে-ই আমার ডায়েরী লেখার অভ্যাস-টা বাদ দিলাম। এই ডায়েরী-তে বন্দী থাকুক আমার পরাজয়ের গল্প। আমার গল্প আমার থাকুক। এটা কেউ না জানুক।”

৯৮,
রায়াদ ডায়েরী-টা পড়া শেষ করে পুরো ডায়েরীতে আগুন জ্বালিয়ে দিলো। ফেলে রাখলো ব্যালকনির ফ্লোরে। পকেট থেকে সিগারেট বের করে আগুন জ্বালালো তাতে। সিগারেটে টান দিতেই শুনতে পেলো,

“আমায় একটা দিন তো! দুজন একসাথে সিগারেট টানি। বেশ লাগবে।”

রিয়ানার কণ্ঠস্বর। রায়াদ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। রিয়ানা ব্যালকনির দরজায় দাড়িয়ে। আজ তাদের বাসর রাত। রাতের তিনটা বাজে। অথচ দুজন দুইদিকে। একজন সারাদিনের ধ্বকল শেষে নতুন জীবনপর সূচনায় নামাজ টুকু পরে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পরে। আরেকজন সাজ্জাদকে দেওয়া কথামতো বিয়ের পর-ই ডায়েরী পড়লো। অথচ এই ডায়েরী-টা জার্মানির ভাষার নিচে নিচে বাংলায় লিখে বাংলাদেশ ছাড়ার আগেই রায়াদের হাতে দিয়ে এসেছিলো রিয়ানা। আয়াতের বউভাত থেকে ফিরে তার হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলো। এরপর সকালে উঠেই জানে রিয়ানা বাংলাদেশ ছেড়েছে। যদি বিন্দুমাত্র একটা ক্লু পেত রিয়ানা চলে আসবে! তবে কখনও ডায়েরী নিত না। এটা সে সব-টা সময় বয়ে নিয়ে বেরিয়েছে এতদিন। তবে পড়েনি। যতটুকু যা গল্প! সব সাজ্জাদের মুখে শুনেছে। আজ পড়লো। পড়ার আগ্রহ থাকলেও সাজ্জাদের সেই আদেশের জোড়ে এতদিন পড়েনি। না পড়ে ভালোই করেছে। নয়তো একটা মেয়ের অনুভূতি অন্যজনের প্রতি। জেনেও কেন সে ভালোবাসা জয়ের চেষ্টা করবে? জয় করেই পড়ে ফেললো। তবে তাকে জয় করার পর কেন পড়তে বলেছিলো সাজ্জাদ? প্রশ্নটা মাথায় আসলেও উত্তর মিললো না। চট করে মনে হলো, ‘২য় সূচনা।’ হয়তো এটাই কারণ। রায়াদকে হাসিমাখা মুখে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রিয়ানা তার পাশ কাটিয়ে ব্যালকনির কিনারা ঘেষে দাড়ালো। রেলিঙে হাত রেখে শূণ্য দৃষ্টি মেলে বললো,

“পুড়িয়ে ফেললেন?”

“নতুনের সূচনা। রাখলাম না পুরোনোর ছোঁয়া।”

রায়াদ পাশে এসে দাড়িয়ে জবাব দিলো। রিয়ানা আলতো হাসলো। বললো,

“সিগারেট দিলেন না?”

রায়াদ পকেট থেকে বের করে রিয়ানার দিকে এগিয়ে দিলো। রিয়ানা সিগারেট ঠোঁটে রাখতেই রায়াদ তার কোমড়ে হাত রেখে টেনে নিজের কাছে আনলো। নিজের সিগারেট দিয়ে জ্বালিয়ে দিলো তার সিগারেট। এরপর নিজের ঠোঁট থেকে সিগারেট সরিয়ে বললো,

“আজ-ই দুজনের একসাথে সিগারেট টানা! আজই শেষ। এরপর এই জিনিস ছুঁয়ে দেখা যাবেনা।”

“তার বদলে না হয় আপানাকেই ছুঁয়ে দিবো।”

রিয়ানা সিগারেটে টান দিয়ে হেসে বললো। রায়াদও হাসলো। গম্ভীর মেয়ে হাসছে। বেশ লাগছে। আজ আকাশে চাঁদের দেখা নেই। কিন্তু রাস্তার দুপাশের নিয়ন বাতির আলো বেশ। চাঁদ থাকলে সুন্দর হতো। চন্দ্রবিলাস হয়ে যেত। জুবায়েরকে বলে ব্যালকনি যুক্ত রুমেই বাসর ঘর সাজাতে বলেছিলো রায়াদ। যেন একটু দুজনে বসে কথা বলতে পারে। দুজনের হাতের সিগারেট পুড়তেই রিয়ানা আচমকা এক কাজ করে বসলো। রায়াদের পাঞ্জাবির কলার টেনে তার পায়ে পা তুলে থুতনিতে মাথা ঠেকিয়ে দাড়ালো। জোড়ে নিঃশ্বাস টেনে বললো,

“আই নীড ইউ।”

৯৯,
রায়াদ বিস্মিত হলো। কণ্ঠে বিস্ময় প্রকাশ করেই রিয়ানার দুগালে হাত রেখে মুখ উঁচিয়ে ধরে শুধালো,

“রিয়েলি?”

“ইয়েস।”

“তবে একদম প্রথম রাতেই? একটু সময় নেওয়া উচিত নয় কি?”

“কিসের সময়? স্বামীকেই তো চেয়েছি।”

“বাট দুজনের বোঝাপরার বিষয় তো আছে। আমি তোমায় ভালোবাসলেও তুমি তো বাসো না। মেয়েদের লজ্জা পাওয়া উচিত। বিয়ে করতেই আমায় চাচ্ছো। আমার-ই তো লজ্জা লাগছে।”

“আমি নির্লজ্জ জানেন-ই তো। সবাই বলে মনের মিল না থাকলে শারীরিক মিল দিয়ে কি করবে? আমি বলি যেখানে ভালোবাসা আছে! সেখানে চাহিদাও আছে। কেউ নিজের যৌবন বিয়ে অব্দি জমিয়ে রেখে, আগলে রেখে বিয়ের পর বলবে একজন বলবে সময় দাও! বিষয়-টা কেমন অবাস্তবিক নয়? যেখানে মানুষের শারীরিক চাহিদা-টা শুরু হয় সেই বয়ঃসন্ধির সময়ে। মনের মিল করতে গেলেও শারীরিক মিল-টাও জরুরী। শরীরের ভাঁজে যদি ভালোবাসার মানুষের ছোয়া-ই না অনুভব করতে পারি! তাকে পেয়ে গেছি! এই অনুভূতি কোথায় পাবো? আর কে বললো ভালোবাসি না? একটু হলেও বাসি। পিছুটান তো কবুল বলার সাথেই ভুলে যাওয়ার সূচনা করে ফেলেছি। এখন না হয় শরীর-মন সব জায়গায় যে এসেছে বিস্তার ঘটুক!”

রায়াদ আর বোঝানোর চেষ্টা করলো না। যার মন! যার শরীর তাকে চাইছে! সে কেন বাঁধা দিবে? যেখানে মানুষ-টা ভালোবাসার। সে রিয়ানার কপালে চুমু দিয়ে কোলে তুলে নিলো। রিয়ানা রায়াদের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো। যে স্বামী তার অধিকার সর্বত্র থাকুক। রায়াদ তাকে বিছানায় এনে ফেলতেই রিয়ানা কাছে টেনে নিলো। রায়াদ গলার ভাজে মুখ ডুবিয়ে দিতেই রিয়ানার দুচোখের কার্ণিশে জল জমলো। চোখ বন্ধ করে রায়াদের মাথায় হাত রেখে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করলো রিয়ানা। লম্বা শ্বাস টেনে আনমনে ভাবলো,

“আমার শরীর-মন সব জায়গায় আপনি থাকুন। আপনার ভালোবাসা, ছোঁয়া আমার সব জায়গায় লেপ্টে থাকুক। স্বার্থপরের মতো ভালো থাকার চাওয়ায় আপনাকে চাইলাম। আপনার জন্য মনের কোথাও একটা অনুভূতি আছে। নয়তো আমায় পাওয়ার সম্মতি পেতেন না। এটা সময়ের সাথে প্রগাড় হোক। আপনাকে ঠকাতে চাই না, একটুও না।”

চলবে?

ভুলত্রুটি মার্জনীয়। আসসালামু আলাইকুম।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে