রঙিন খামে বিষাদের চিঠি পর্ব-৩৫+৩৬

0
733

#রঙিন_খামে_বিষাদের_চিঠি
#পর্বঃ৩৫
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৯০,
ড্রইং রুমে অস্থির চিত্তে সোফায় বসে আছে সাজ্জাদ। চিন্তায় হাত পা ঠান্ডা হবার যোগার। এত চিন্তা আর নিতে পারছেনা সে। মা’কে কতবার বললো অন্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তাদের বেডরুমে অন্তি কোমড়ের ব্যথায় দাঁতে দাঁত পিষে বসে আছে দেখে আসলো। একটুও ভালো লাগছে না তার। পায়েও পানি ধরেছে অন্তির। প্রেগ্ন্যাসির সময় এগুলো সাধারণ বিষয়। অন্তির প্রেগ্ন্যাসির সাত মাস পেরিয়ে আঁটে পা দিয়েছে। কিন্তু সাজ্জাদ অন্তির চিন্তায় পাগল প্রায়। তার মা তো বললো, সাধারণ বিষয়। একটু সময় গেলেই ঠিক হবে। সাজ্জাদের মন মানছে না। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো সাজ্জাদ। রুমে প্রবেশ করে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,

“মা, অন্তিকে আমি হাসপাতালে নিয়ে যাবো। এভাবে কতক্ষণ ওকে ব্যথা সহ্য করে বসে থাকতে হবে?”

আসিফা বেগম ছেলের পাগলামিতে হাসলেন। অন্তি চোখ পাকিয়ে তাকালো সাজ্জাদের দিকে। ক্ষিপ্ত স্বরে বললো,

“বাচ্চা হবার সময় যে ব্যথা! তার বেলায় কি আমার বদলে আপনি বাচ্চাকে পেট থেকে বের করবেন?”

“পারলে তো তাই করতাম।”

সাজ্জাদ মুখ ফসকে কথা-টা বলে দিলো। অন্তি শাশুড়ীর সামনে স্বামীর মুখে কথা-টা শুনে লজ্জায় মিইয়ে গেলো। মাথা নিচু নিলো। আসিফা বেগম ছেলে-ছেলের বউকে একসাথে ছেড়ে দিয়ে সরে গেলেন। যেতেই অন্তি বলে উঠলো,

“মুখের লাগাম কোথায়? এই সময় অফিস ছেড়ে আসতে কে বলেছে?”

“তুমি-ই তো ব্যথায় চিৎকার করলে! এমনি এসেছি নাকি? মা-কে রুমে দেখে সরে গেছিলাম।”

“পেটের ভেতর বাচ্চা ফুটবল খেলায় একটু চিৎকার করেছি। আপনার ছুটে আসতে হবে সেজন্য? কোমড়েও লাগছিলো বলে মা এসেছিলো। ম্যাসাজ করে দিলো। আরামই তো লাগছে। বাসায় মানুষ থাকতেও আপনার এত চিন্তা?”

“কি করবো? বলেছিলাম বাচ্চা পরে নিই। তোমার এত জেদ!”

“সিনিয়র সাজ্জাদ বিজনেসের কাজে এদিক-সেদিক ছুটে বেড়ায়। এজন্য তো জুনিয়র একজনকে আমার চাই।”

“চাইছো, আল্লাহ দিয়েছেন। এবার সুস্থ ভাবে সে আসুক। তুমিও সুস্থ থাকো। নিজের একটু খেয়াল রাখো। এভাবে চিন্তায় ফেলো কেন?”

“আপনাকে কে বলেছিলো কল দিতে? না দিলেই তো আমার গলার আওয়াজও পেতেন না। ছুটেও আসতে হতো না।”

“হাতে পায়ে বড় হয়েছো। মাথায় তো আজও বাঁদরামি ঘুরে। তো আমি কি করবো? আর একটা কথাও বাড়াবে না। চুপচাপ রেস্ট করো।”

সাজ্জাদ অন্তির কথার জবাব দিয়ে অন্তির শিয়রে বসে তার মাথা-টা বুকে চেপে নিলো। অন্তি দুপুরে খেয়েছে কিনা! জানার জন্য কল করেছিলো সাজ্জাদ। খাওয়ায় বড্ড অনিয়ম করে মেয়ে-টা। মুড সুইং হয়। খেতে চায় না। এজন্য কল করেছিলো অন্তি কল রিসিভ করে কথা বলতে বলতে ব্যথায় একটু ককিঁয়ে উঠায়! কল কেটে দেওয়ায় আর তার মা-ও কল রিসিভ না করায় ছুটে এসেছে সে। চিন্তা নিয়ে কি আর অফিসের কাজে মন বসে? সেজন্য তো ছুটে এসেছে। যার ভালোর জন্য আসলো! সে-ই রাগ দেখাচ্ছে। পুরুষ মানুষ স্ত্রী আগ দিয়ে গেলেও দোষ! পিছ দিয়ে গেলেও দোষ বোধ হয়। সাজ্জাদের এমনই মনে হচ্ছে। সে অন্তির চুলে বিলি কেটে দিতে শুরু করলো। অন্য হাতে পকেট থেকে ফোন বের করলো। ওয়াইফাই কানেক্ট করে হোয়াটসঅ্যাপে ঢু্কে রায়াদের নাম্বারে কল দিলো। তিনবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো ওপাশ থেকে। সাজ্জাদ রিসিভ হতেই বললো,

“কি খবর দেবদাস? জার্মানি গিয়ে ভুলেই গেছো!”

“দেবদাস ঘুমোচ্ছে পরে পরে।”

কণ্ঠ-টা রিয়ানার বুঝে চুপ হলো সাজ্জাদ। এতক্ষণ যত-টা উচ্ছাস ছিলো; সব নিভে গেলো। সে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলার চেষ্টা করলো,

“কেমন আছো রিয়ানা?”

৯১,
রিয়ানার নাম শুনে অন্তি মুখ তুলে একবার তাকালো। ঐ যে মেয়ে-টা কাউকে না জানিয়ে হুট করে চলে গেলো! এরপর আজও কারোর সাথে যোগাযোগ করেনি। মেয়ে-টাকে তার মা-ফুফু মিলে কথা শুনিয়েছিলো। ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ টাও পায়নি রিয়ানা। আজও অপরাধবোধ তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। সে-ও তো কম বাজে আচরণ করেনি রিয়ানার সাথে। সে রিয়ানার নাম শুনতেই সাজ্জাদের থেকে ফোন কেড়ে নিলো। সাজ্জাদ অবাক হলেও কিছু বললো না। অন্তির পানে তাকালো। অন্তি ফেন-টা নিয়ে বলে উঠলো,

“ভালো আছো রিয়ু? আমাদের তো ভুলেই গেছো জার্মানি গিয়ে।”

একবছর পেরিয়ে যাবার পর চির পরিচিত গলার স্বরগুলো শুনে ভেতরে ভেতরে রিয়ানা কেঁপে উঠলে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টায় মত্ত হলো। কোমলতা বজায় রেখে নরম স্বরে বললো,

“ভালো আছেন ভাবী? শরীর ঠিকটাক আপনার? নিজের খেয়াল রাখেন তো?”

অন্তি জানে রিয়ানা কথা না বললেও সব খবরই কোনো এক ভাবে পেয়ে-ই যায়। তার প্রেগ্ন্যাসির খবরও যে রিয়ানার অজানা নয়! এটা বুঝতে পারলো রিয়ানার কথায়। আন্দাজ করলো হানিফ হোসাইনের থেকে জেনেছে সে। তাই নমনীয়তা বজায় রেখেই বললো,

“আলহামদুলিল্লাহ আছি ভালো। একটু ভিডিও কলে আসবে? তোমায় দেখতে ইচ্ছে করছে।”

রিয়ানা ফোঁস করে দম ফেললো। প্রেগন্যান্ট মেয়ে কিছু বলেছে! ফেরায় কি করে? অডিও কল কেটে নিজেই ভিডিও কল দিলো। অন্তি সাজ্জাদের বুক থেকে সরে বসলো। ওরনা ঠিকঠাক করে নিয়ে কল রিসিভ করলো। কল ধরেই হাসিমুখে বললো,

“ইশশশ কতগুলো মাস পর দেখছি তোমায়।”

“একবছর হলো ভাবী।”

রিয়ানা মৃদু হাসলো জবাব দিয়ে। অন্তির পানে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো। প্রেগ্ন্যাসির সময় মেয়েদের কত্ত পরিবর্তন হয়! ফর্সা মেয়ে-টা কি সুন্দর স্বাস্থ্যবতী হয়েছে। পুরো রসগোল্লার মতো লাগছে। সে মুখ ফসকে বলেই দিলো,

“আপনাকে পুরো রসগোল্লার মতো লাগছে ভাবী।”

অন্তি হাসলো। বিছানা ছেড়ে পায়ে স্যান্ডেল ঢুকিয়ে হেঁটে জানালার কাছে গিয়ে দাড়ালো। রিয়ানা খেয়াল করলো অন্তির পেছনে সাজ্জাদ বিছানায় বসা। তাকিয়ে অন্তির কান্ড দেখছে হয়তো। যে মেয়ে-টা তাকে সহ্য করতে পারতো না। সেই মেয়ে-টা এত আনন্দের সহিত তার সাথে কথা বলছে? বিষয়-টা একটু আশ্চর্যজনক হলেও রিয়ানার ভালো লাগলো। যাক সবাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এই তো আনন্দের বিষয়। রিয়ানা মুচকি হাসি ফুটিয়ে রেখেছিলো ঠোঁটের কোণে। অন্তি রিয়ানার দিকে ফোনের স্কিনে দৃষ্টি ফেলে বললো,

“আমার বাবু হলে দেখতে আসবেনা?”

“ইনশা আল্লাহ যাবো ভাবী।”

“তোমায় একটা কথা বলতাম।”

“কি কথা?”

“আমায় ক্ষমা করে দিয়ো। অনেক বাজে আচরণ করেছিলাম। ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ-টাও পাইনি। তার আগেই চলে গেলে।”

“থাক বাদ দিন সেসব কথা। ওসব মনে করে মন খারাপ করবেন না। আমি ভুলে গেছি।”

“সত্যি ভুলে গেছো?”

রিয়ানা মাথা দুলিয়ে জবাব দিলো,

“হ্যাঁ।”

“তবে একটা কথা রাখবে আমার?”

“কি কথা?”

“দেখো রিয়ু, জীবনে চলার পথে একা কখনও আনন্দের সহিত বাঁচা যায় না। একাকিত্ব একসময় ঘিরে ধরেই। যতই বলো, একাকিত্ব মানতে পারলে সুন্দর। কিন্তু দিনশেষে একজনকে ঠিকই প্রয়েজন পরে। তুমি রায়াদ ভাইকে একটা সুযোগ দাও। আমি তোমার সম্পর্কে সব জানিনা। কখনও বলোনি। তবে সাজ্জাদ বলেছে, রায়াদ তোমায় ভালোবাসে। সাজ্জাদ তোমায় এক সময় ভালোবেসে জীবনে আগাতে পারলে! তুমি তাকে ভালোবাসোনি। তবে এত জেদের সহিত রায়াদ ভাইকে একটা সুযোগ তো দেওয়া যায়। সে তোমায় অনেক বেশিই ভালোবেসে ফেলছে। এই এক বছর অনেক পাগলামি করেছে তোমার শূণ্যতায়। তুমি তো ছিলে না। সাজ্জাদ আর জুবায়ের ভাই মিলে তাকে সামলিয়ে এতদিনে তোমার কাছে নিয়ে যাওয়ার মতো যোগ্য করে তুলেছে। সে একটা সুযোগ ডিজার্ভ করে। ”

রিয়ানা আলতো হাসলো অন্তির কথায়। লম্বা দম নিয়ে বললো,

“আসলেই সে একটা সুযোগ ডিজার্ভ করে। নিজের খেয়াল রাখবেন ভাবী। পরে আবার কথা হবে।”

রিয়ানা কল কেটে দেয়। অন্তি দম ফেলে সাজ্জাদের কাছে এসে ফোন এগিয়ে দেয়। সাজ্জাদ অন্তির চুপসানো মুখ দেখে বলে,

“চিন্তা করো না। ওটা সাজ্জাদ হোসাইন নয় যে মুখ বুজে সব মেনে নিয়ে হাল ছাড়বে। জীবনে এগিয়ে যাবে। রিয়ানার মতো ঘাড়ত্যাড়া প্রেমিক পুরুষ রায়াদ। ঠিক মানিয়ে নিবে।”

অন্তি হাসলো। হাসি বজায় রেখে বললো,

“ভাগ্যিস সাজ্জাদ হোসাইন সব মেনে নেয়। নয়তো তার সাথে সুখে থাকার সৌভাগ্য আমার হতো না।”

৯২,
সন্ধ্যা সময়, বাসার থেকে ৩-৪মিনিটের দূরত্বে একটা লেক আছে। তার পানিতে পা চুবিয়ে বসেছে রিয়ানা। মাথায় ঘুরঘুর করছে অন্তির কথাগুলো। রায়াদ সত্যি একটা সুযোগ ডিজার্ভ করে হয়তো! পরপর কেটে গেছে দুদিন। রায়াদের কথার জবাব রিয়ানা দেয়নি। নিরব ছিলো
রায়াদ আশাহত হয়ে ফিরে গেছিলো। অন্তির সাথে কথা হয়েছে সকাল তখন ১০:৩০টা বাজে। রায়াদ তার বাসা ছাড়েনি। এখনও শরীরে একটু একটু ব্যথা। তার কথা, যার জন্য সে আঘাত পেয়েছে! পুরো সুস্থ না হয়ে তার বাসা ছাড়বেনা। বরাবরের মতোই ক্লাসে যাওয়ার জন্য ড্রেস আনতে গিয়েছিলো রুমে। ফোন-টা বাজায় সাজ্জাদের নাম দেখে রায়াদের সাথে সাজ্জাদের কি কথা থাকতো পারে! সেই আগ্রহের চোটে-ই সে কল রিসিভ করে। রিসিভ করে যে রায়াদ, সাজ্জাদের এত মিল সম্পর্কে জানবে? আন্দাজ ছিলো না। বর কারোর সাথে কথা না হলেও নিয়ম করে রিফার সাথে কথা হয় রিয়ানার। তার মাধ্যমেই সবার খবর জানতে পারে। রায়াদের পাগলামি তার অজানা নয়। তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা! মনে পরলেই হোসাইন বাড়িতে দুজনে কোথায় কোথায় ঝগড়া করতো! টুকটাক কথা হয়েছিলো! সেসব জায়গায় গিয়ে রায়াদ থম মেরে বসে থাকতো। যে ছেলে-টা তার উগ্র ব্যবহার, ড্রেসআপ দেখে রাগ করতো! সহ্য করতে পারতো না! সে এমন পাগলের ন্যায় তাকে ভালোবাসলো কোন কারণে? চিন্তা করে কূল পায়না রিয়ানা। কিন্তু সে-ও যে রায়াদকে মিস করেনি! এটা বললে ডাহামিথ্যে বলা হবে। তার মনের কোথাও একটা গিয়ে রায়াদের জন্য তার মন কেমন করে। এই অনুভূতি কি! রিয়ানা জানেনা। প্রেমের ২য় সূচনার ন্যায় অনুভূতি। শুধু এট আগে সাজ্জাদের কথা মনে আসতো! এবার রায়াদকে। তবে কি সে সাজ্জাদকে ভালোই বাসেনি? নয়তো এত সহজে অন্য কারোর জন্য মন কেমন করে কেন? ধ্যাত এতসব ভাবতে পারবোনা। রিয়ানা নিজের ভাবনার উপর বিরক্ত হয়ে উঠে দাড়ালো। ঘুরে দাড়াতেই দেখে রায়াদ দাড়িয়ে আছে। পরনে কালো পাঞ্জাবি, কালো জিন্স। পায়ে কালো জুতো। পাঞ্জাবির হাতা গোটানো। হাত দু’টো বুকে বাঁধা। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তার প্রতি আবদ্ধ। সে ভ্রু উঁচিয়ে বললো,

“আপনার বিয়ে ছিলো বুঝি? পাঞ্জাবি পরেছেন যে?”

“শুক্রবার আজ। এখানে মসজিদ নেই বলে কি নামাজ পরবোনা?”

রিয়ানা কিছু বললো না আর। হাতের ফোনে সময় দেখলো। দু’টোর কাটা অতিক্রম করেছে সময়। ৩টে ক্লাস ছিলো তার। শেষ করে এসে লেকে বসেছে। রায়াদ রিয়ানার পাশে হাঁটা ধরে বললো,

“আমি এখানে কি করে? জানতে চাইলে না?”

“এসে পরেছেন কোন এক ভাবে। আমি জানতে আগ্রহী নই।”

“না থাকলে, আমি বলি। তোমার সেই ক্লাসমেইট! পিউয়ি? ওকে বাসায় ঢুকতে দেখে জিগাসা করলাম তোমার কথা। ও জানালো তুমি এখানে এসেছো। আমায় পথও দেখিয়ে দিলো।”

“আচ্ছা।”

“আমার কথার জবাব পেলাম রিয়ু।”

“কোন কথা?”

“সুযোগ দিবে না?”

রিয়ানা থমকে দাড়ালো। রায়াদের মুখপানে দৃষ্ট ফেলে বললো,

“দিলাম সুযোগ। কাজে লাগিয়ে দেখুন। আপনার প্রেমে আপনার মতো করে ফেলতে পারলে! আমি বিয়ে করতে রাজী হবো।”

“চলো না বিয়ে করেই প্রেম করি!”

রিয়ানার হাসি পেলো রায়াদের কথা শুনে। এ ছেলে সুযোগ চায়। সুযোগ পেয়ে একদম বিয়ে! সে তো দেখতো চায় আদৌও দুজন সারাজীবন একসাথে থাকার জন্য উপযুক্ত কিনা! এরপর বিয়ের কথা ভাববে। নিজের হাসি চেপে রায়াদের কথার জবাবে রিয়ানা মজার ছলে বললো,

“যান কাজী খুঁজে আনুন। আনতে পারলে আজ শুক্রবার আছে। বিয়ে করে ফেলবো।”

চলবে?

#রঙিন_খামে_বিষাদের_চিঠি
#পর্বঃ৩৬
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৯৩,
ঘুম থেকে উঠে পুরো হতভম্ব রিয়ানা। তার মজার ছলে বলা কথাকে রায়াদ একদম সিরিয়াসলি ধরে নিয়ে বাসায় একদম বিয়ের আয়োজন করে ফেলছে দেখে বিস্ময়ে তার দুচোখ ছানাবড়া। লেক থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে একটু ঘুমিয়েছিলো সে। ঘুম থেকে উঠে সিড়ি দিয়ে নেমে আয়োজন সব দেখে পাথরের মতো দাড়িয়ে আছে সে। এখন সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার কাছাকাছি। লিভিং রুমে এসে সবার মাঝে ব্যস্ততা, সাজ সাজ রব দেখে আয়াতকে যখন জিগাসা করলো, বাসায় কি হচ্ছে এসব? আয়াত জবাব দিলো, সে নাকি বিয়ে-তে মতামত দিয়েছে। এজন্য রায়াদ বিয়ের আয়োজন করেছে। এরপর তার মুখের কথা ফুরিয়েছে। শুধু চোখ বড় করে করে তাকিয়ে সবার ছুটোছুটি দেখছে। তার ফ্রেন্ডসার্কেল সব বাসায় হাজির। তার বাবাও এসে পরেছেন। তিনি মেয়ে-কে উঠতে দেখে এগিয়ে আসেন। মুখোমুখি দাড়িয়ে মেয়ের গালে হাত রাখলেন। কোমল স্বরে বললেন,

“তোমার এই সিদ্ধান্তকে আমি এপ্রিশিয়েট করলাম রিয়ানা। জীবনে প্রথম কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে। আশা করি যত আঘাত আমার দ্বারা, আশেপাশের মানুষের দ্বারা, বাড়ির মানুষের দ্বারা? এই সঠিক মানুষ-টা সব ভুলিয়ে দিতে পারবে। রায়াদ সহজ-সরল ভালো একটা মানুষ। তাকে একটু ভালো রাখার চেষ্টা করো। সে তোমায় ভালো রাখতে সব ছেড়েছুড়ে এতদূর এসেছে। তার মনে কষ্ট দিও না।”

রিয়ানার ঠোঁটে অবঙ্গার হাসি ফুটলো হানিফ হোসাইনের কথায়। চোখ নামিয়ে ঠোঁট কামড়ে কান্না আঁটকানোর চেষ্টায় মত্ত হয়ে কাঁপা গলায় বললো,

“আজও আপনার অন্যের জন্য চিন্তা। নিজের মেয়ের জন্য নয়?”

“তাহলে তুমি নিজে একটু চিন্তা করে দেখো! নিজেকে কেমন ভাবে গড়ে তুলেছো যে, তোমার সাথে একটা মানুষকে জড়িয়ে যেতে দিতে আমার ভয় হচ্ছে! আমি না হয় ভুল করেছি। তোমায় সঠিক পথে পরিচালনা করতে পারিনি। তোমার তো উচিত ছিলো নিজেকে এমন ভাবে তৈরি করা! যেন আমি প্রতি পদে বুঝতে পারতাম, থাক আমায় ছাড়াও আমার মেয়ে মানুষ হয়েছে।”

“অথচ আমি প্রতি পদে ভুল করে আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চেয়েছি, আমার একটা ছায়া জরুরী। একটা গাইডলাইন জরুরী। যা আমায় সঠিক পথে পরিচালনা করবে। অথচ আপনি সব-টা সময় আমায় ভুলের দিকে যেতে দেখেও মাথায় বাবার ছায়া দেননি।”

হানিফ হোসাইন দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন,

“আমার শত অপরাধ জমা। ক্ষমা চাওয়ারও মুখ-টা বোধ হয় আমি রাখিনি। সেজন্য ক্ষমা আমার চাওয়ার নেই। তবে এতটুকু চেষ্টা করতে পারি যে; বাবার স্নেহ-টা যেন একপাক্ষিক না হয়। তোমার ছোটোবেলা থেকে তোমায় দূরে সরিয়ে রাখতে রাখতে এমন অবস্থা আমার! যে যখন বুঝলাম তোমায় আগলানো দরকার! অপরাধ বোধ তোমায় আগলানোর ইচ্ছে-টাকে ছাঁপিয়ে গেছে। যতবার চেষ্টা করেছি! মনে হয়েছে তুমি আমায় সুযোগ দিবে তো? এত এত অবহেলার পর আমার হাত-টা তোমার মাথায় রাখতে দিবে তো? অপরাধ বোধ আর সংকোচ! দুটো মিলিয়ে নিজের ভেতর-ই গুমরে মরেছি। কিন্তু কাউকে বোঝাতে পারিনি।”

রিয়ানা হাসলো বাবার কথায়। সেই হাসিতে তাচ্ছিল্য বিদ্যমান। সে কম্পিত কণ্ঠে বললো,

“পাথরও একসময় ক্ষয় হয়ে যায়। অথচ আপনার অপরাধবোধ ক্ষয় হলো না? নিজের ১৫তম জন্মদিনে আশা করেছিলাম, অন্তত সব ভুলে গিয়ে আপনি আমায় বড় হওয়ার সাথে সাথে আগলে নিবেন। কিন্তু সেদিনই সবথেকে বড় সারপ্রাইজ দিয়েছিলেন। কি জানেন তো! বিন্দু বিন্দু জল জমে যেমন সমুদ্রের ন্যায় হয়। সম্পর্কেও অবহেলা আসতে আসতে এই সম্পর্ক তার অস্তিত্ব হারিয়েছে। আমি মেনে নিয়েছি, আমার মা মারা যাবার সাথে সাথে আমার বাবা বলে মানুষ-টাও আমি হারিয়েছি। আমার বোন ব্যতিত কেউ নেই।”

৯৪
রিয়ানা দাড়ালো না। বাবাকে পাশ কাটিয়ে আয়াতের কাছে আসলো। বিক্ষিপ্ত মনে মেজাজ হারিয়ে শুধালো,

“বাসায় এসব কি চলছে আপু? এত রান্না! বিয়ের মতো করে সব প্রিপারেশন! মাথা গেছে তোর?”

“রায়াদ ভাই জানিয়েছেন তোর এই বিয়ে-তে মতামত আছে। তো সমস্যা কোথায়?”

“সমস্যা কোথায় মানে? কখন আমি মত দিলাম?”

“তুই রায়াদ ভাইকে বলিসনি?”

“মজা করে বলেছিলাম।”

“কিন্তু তোর মতো মানুষ তো মজা করে কিছু কখনও বলে না। সবসময় সিরিয়াস থাকিস। নে এবার সিরিয়াস থাকার ঠ্যালা সামলা। আমাট কাজ পরে আছে। সর সামনে থেকে।”

“এখানে কাজী পাবে কোথায়?”

রিয়ানা হতাশ হয়ে বললো। এতে যদি দমে এরা। আয়াত এগিয়ে এসে বোনের গালে হাত রেখে বললো,

“বিয়ে করার জন্য এত অধৈর্য হয়েছিস যে! কাজী কোথায় পাবে চিন্তায় পরছিস? চিন্তা নেই। এদেশেও বাঙালি-রা থাকে। বিয়ে-থা করে। বাবার সাহায্যে সব ম্যানেজ করে ফেলেছে রায়াদ।”

রিয়ানা রাগে হাত মুঠো করে নিলো। এই ছেলে-কে তো ইচ্ছে করছে পাহাড়ে তুলে ধাক্কা মারতে। অসভ্য ছেলে একটা। সে রাগে গজগজ করতে করতে সোফায় গিয়ে বসলো। তাহিয়া, মাদালিনা ফুল দিয়ে বাসা ডেকোরেট করছিলো। রিয়ানার রাগ দেখে মাদালিমা এগিয়ে এসে নিজের ভাষায় জিগাসা করে,

“রেগেছো কেন সুইটি? কি হয়েছে?”

“লিনা, প্লিজ স্টপ। আমার ভালো লাগছেনা।”

“তোমার বিয়ে আজ। তোমার-ই ভালো লাগছেনা। কেমন বিষয় এটা?”

“নিজের কাজ করো। আমায় একা ছাড়ো।”

মাদালিনা আর ঘাটালো না। নিজের কাজে ব্যস্ত হলো। এবার তাহিয়া-ই এগিয়ে আসলো। এ মেয়ের রাগ মোটেও সুবিধার নয়। সব আয়োজন বৃথা না করে দেয়! সে ভয়ের সহিত পাশে বসে রিয়ানার কাঁধে মাথা এলিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,

“এত রেগেছিস কেন?”

“তোকে কেউ মজা করে বিয়ে করতে চাইলেই তুই বিয়ে করবি?”

“অভিয়াসলি করবো। আর কত সিঙ্গেল থাকবো? সিঙ্গেল থেকে মরবো নাকি?”

তাহিয়ার কথায় মজার সুর। রিয়ানা চোখ গরম করে তাকালো। তাহিয়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো,

“চোখের সামনে থেকে সর।”

“শোন কিউটিপাই, একটা সময় গিয়ে তুই ফিল করবি, এভাবে একা থাকা যায় না। দিনশেষে মন খুলে কথা বলার জন্য একজন প্রয়োজন। কারো একটা ভরসার কাঁধ প্রয়োজন। যে কাঁধে নির্ভয়ে মাথা রেখে কান্না জরা যায়! হাসা যায়। একজন প্রয়োজন, যাকে মন খারাপ হলে বলা যাবে আমার মন খারাপ। আমার মন ভালো করে দাও। নারী যখন, বিয়ে তো একসময় করতেই হবে। সেই মানুষ-টা রায়াদ ভাই হলে সমস্যা কি? যে তোকে পেতে এত ডেস্পারেট! তাকে বিয়ে করলে তো অসুখী হবিনা। এত রাগ ঝোঁক না করে বিয়ে-টা হচ্ছে হতে দে। তোকে পুরোপুরি না জানলেও যতটুকু জেনেছি! তাতে এবার একটু সুখের মুখ দেখার অধিকার তুইও রাখিস।”

তাহিয়া শান্ত গলায় একদমে কথাগুলো বলে উঠে গেলো। হানিফ হোসাইন আয়াতের সাথে রান্না বান্নায় ব্যস্ত ছিলেন। মেয়ে তো একা পারছিলো না তাই। তাহিয়া উঠে নিজের কাজে ব্যস্ত হতেই রিয়ানা বাবা আর বোনের দিকে তাকালো। তার জীবনে একটা মানুষ জড়াচ্ছে বলে কত-টা হ্যাপি তারা! বাবা যতই অবহেলা করুক। দিনশেষে বাবা তো! বাবা আর বোনের হাসিমুখ নিভাতে ইচ্ছে করলো না রিয়ানার। যে সময়-টা বিয়ের আগে দিয়ে বুঝতে চেয়েছিলো এই সম্পর্ক বিয়ে অব্দি গড়ানোর মতো কিনা? সেটা না হয় বিয়ে করেই বুঝবে। থাকতে না পারলে ছেড়ে দিবে। তার তো স্বভাব আছে-ই পিছুটান ছেড়ে আসার। হয়তো দেখা যাবে বিয়ে-টা হলে সম্পর্কের বাঁধন আরও শক্ত হলো। কে বলতে পারে রায়াদেই তার সুখ নিবন্ধ করা আছে। রিয়ানা হাফ ছেড়ে উঠে দাড়ালো। আয়াতের কাছে আগেই জেনেছে বিয়ের জন্য শপিং করতে জুবায়ের আর ভ্লাদকে নিয়ে চলে গেছে রায়াদ। ফিরলেই বিয়ে হবে বোধ। তার ভাবনাকে সত্যি করে দিয়ে ৫মিনিটের মাথায় জুবায়ের, ভ্লাদ আর বিয়ের রেজিস্ট্রি করার জন্য উকিল আর কাজী নিয়ে বাসায় ঢুকলো রায়াদ। এইদেশে বাঙালিরা বিয়ে করে রেজিস্ট্রি করে। কাজীও পাওয়া যাবে! আন্দাজ ছিলো না রিয়ানার। রায়াদ এসেই তাহিয়া আর আয়াতকে ডেকে সব বুঝিয়ে দেয়। আড়চোখে একবার রিয়ানার দিকে তাকতেই টের পায় রিয়ানা রাগী চাহনীতে তাকেই দেখছে। রায়াদ সবার অলক্ষ্যে চোখ টিপ মেরে রিয়ানাকে বোঝায়,

“কেমন দিলাম?”

রিয়ানাও ইশারায় বোঝালো, পরে বুঝাবো মজা। এরপর তাহিয়া আর মাদালিনা মিলে রিয়ানাকে নিয়ে টেনে নিয়ে গেলো উপর তলায় সাজানোর জন্য।

৯৫,
বউ সাজিয়ে রিয়ানাকে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামিয়ে আনছে তাহিয়া এবং মাদালিনা। নিচে মানুষ বলতে শুধু হানিফ হোসাইন, জুবায়ের, ভ্লাদ এবং হানিফ হোসাইনের কিছু বিজনেস পার্টনার এসে পৌঁছেছে। বিয়ে-তে সাক্ষী থাকার বিষয় আছে একটা। রায়াদ আর পাঞ্জাবি পাল্টায়নি। রিয়ানা তার যে পাঞ্জাবিকে বিয়ের পাঞ্জাবি বলেছিলো! সেটাই পরিধান করে আছে। রিয়ানার জন্য বিয়ে সে গোল্ডেন আর সাদার মিশ্রণে তৈরি লেহেঙ্গা খুঁজে এনেছে। সব ক্ষেত্রেই তো হয় সবাই রঙিন পরে। তার ভালোবাসা না হয় শুভ্রতার মাধ্যমে সে পেয়ে গেলো। আয়াতের বিয়ের দিন সাদাতে রিয়ানাকে দেখে মুগ্ধতায় মেতেছিলো তার দুচোখ। আজ আবারও একটু শুভ্রতায় দেখতে ইচ্ছে হলো তার। যার ফলে ইন্ডিয়ান এক সুপার মার্কেট থেকে খুঁজে এনেছে সাদা লেহেঙ্গা। এখন আবার ব্লাউজ বানানোর ঝামেলা কি করে সামলাবে! এজন্য শাড়ি কেনার শখ থাকলেও লেহেঙ্গা কিনেছে রায়াদ৷ এই তো বেশ লাগছে তার শুভ্রপরিকে। সাজগোজের বালাই নেই। চুলগুলো একটু সুন্দর করে ডিজাইন করে দোপাট্টা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঠোঁটে হালকা রেড লিপস্টিক। আর হালকা অর্নামেন্টস। ব্যস তাতেই রায়াদের চোখে মুগ্ধতা বিরাজমান। জুবায়ের পাশে বসে ছিলো। তার বিয়েতে রায়াদ যেমন গুঁতা দিয়েছিলো! সেভাবেই গুঁতা দিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

“বেশি বেশি না? আমার শালীকার উপর বদ নজর লেগে যাবে। নজর সরা বজ্জাত।”

রায়াদের হাসি পেলো জুবায়েরের কথায়। বললো,

“তুমি তোমার বউকে দেখলে সমস্যা না! আমি আমার বউকে দেখলেই সমস্যা?”

এরমাঝেই রিয়ানাকে এনে রায়াদের পাশে বসিয়ে দেওয়া হলে জুবায়ের আর জবাব দেয়। রায়াদ জুবায়েরের দিকে ইশারা করে। এরপর নিজের ফোন বের করে রোজার কাছে ভিডিও কল দেয়। ফোনের ওপাশে প্রকাশিত হয় ইয়াসিন সাহেব, ফাতেহা খানম এবং রোজার মুখদ্বয়। এরপর ফোন-টা টি-টেবিলের একটা কুশন রেখে ফোন হেলান দিয়ে রাখে রায়াদ। হেসে সালাম দেয় বাবা-মাকে। সালামের জবাব নিয়ে ফাতেহা খানম বললেন,

“রিয়ানা মা! মুখ তুলে তাকা তো। একদিন আশা করেছিলাম ছেলের বউ হবি। আলহামদুলিল্লাহ আজ তা সত্যি হচ্ছে। আল্লাহর কাছে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। আমার কথা উনি কবুল করেছেন। এই আমার জন্য অনেক।”

“আরে আন্টি তুমি দুয়া করেছিলে না? মায়ের দুয়া আল্লাহ ফেলেন না। এজন্য আজ ওদের বিয়ে।”

জুবায়ের পাশ থেকে বললো। এরপর নিজের ফোন টাও রায়াদের ফোনের পাশে রাখে। ওপাশে জ্বলজ্বল করছে সাজ্জাদ, অন্তি, রিফা, আসিফা বেগম এবং আরিফ হোসাইনের মুখ। বাংলাদেশ জার্মানির থেকে ৪ঘন্টা সময় এগিয়ে। রাত বাজে প্রায় সাড়ে এগারোটা। সবাই ঘুম রেখে জেগে তাদের বিয়ে এটেন্ড করছে! ভাবতেই পুলক অনুভব করলো রিয়ানা। হানিফ হোসাইন তাড়া দিয়ে বললেন,

“এবার তবে বিয়ের কার্যক্রম শুরু হোক!”

রায়াদের বাবা ফোনের এপাশ থেকে সম্মতি দেন। উকিল সাহেব আগে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন নিয়ে নিলেন। সাইন করার সময় রিয়ানার হাত খানিক কাঁপল। আড়চোখে একবার ফোনে সাজ্জাদকে দেখলো। এটা অন্যায় বুঝেও সে দেখে ফেললো। লম্বা দম নিয়ে সাইন করে মনে মনে ভাবলো,

“পিছুটান একেবারে মুক্ত। আমি রিয়ানা হোসাইন অন্য কারোর বউ হলাম। আমার মনে, মস্তিষ্কে অন্য নারীর স্বামীর নাম ভুলেও কখনও না আসুক।”

কিন্তু রায়াদ সাইন করতে সময় নেয়নি। তার সুযোগ আসতেই চট জলদী সাইন করে দেয় সে। এরপর৷ সাক্ষীদের সাক্ষর নেওয়া হলে কাজী সাহেব বিয়ে পরিয়ে কবুল বলতে বললে রিয়ানা খানিক সময় নিয়ে একদমে বলে দিলো,

“কবুল, কবুল, কবুল।”

রায়াদের পালা আসলে সেও বলে দেয়, কবুল। এরপর পুরো রুম জুড়ে আলহামদুলিল্লাহ বলার স্বরধ্বনি শোনা গেলো। ভ্লাদ আর মাদালিনা প্রথম বাঙালি মুসলিম ধর্মের বিয়ে দেখলো। দুজনই সবার অনুসরণ করে বলার চেষ্টা করলো। তাহিয়া তা দেখে হ্যাল্প করলো বলতে। জুবায়ের উঠে সবার মাঝে খোরমা বিলি করে দিলো। রায়াদ রিয়ানার একহাত চেপে ধরলো সবার অলক্ষ্যে। কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

“এই যে ধরলাম হাত। আর ছাড়বোনা মৃত্যু ছাড়া। আমার বিষাদ রানী শুভ্রপরিকে আল্লাহ না চাইলে কেউ আলাদা করতে পারবেনা। ভালোবাসি বউ।”

রায়াদের মুখে বউ শব্দ-টা শুনে রিয়ানার বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো। ইশশ বউ ডাকটায় মায়ার টান অনুভব হচ্ছে কেন? সে চোখ তুলে তাকালো রায়াদের দিকে। তাদের চোখাচোখি উপস্থিত সকলের চোখ এড়ালেও চোখ এড়ালো না রোজার। সে বলে উঠলো,

“যা প্রেম পিরিতি বাসর ঘরে করিও ভাইয়া। এবার আমরা আছি। সিঙ্গেল।মানুষ জন। এত জ্বালাইয়ো না। ”

রায়াদ মুখ ফেরালো। ফোনের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেলো একটু বাবাকে মিটমিট করে হাসতে দেখে। রোজার কথা সবার কানেই গেছে প্রায়। যারা শুনেছে এবং বুঝেছে তারা হাসছে। রিয়ানা চোখ পাকিয়ে কটমটিয়ে তাকালো রায়াদের দিকে। রায়াদ ফের সামনের দিকেই দৃষ্টি রেখে ফিসফিস করে বললো,

“এভাবে সবার সামনে না দেখে বাসর ঘরে দেইখো বউ। দরকার পরলে তোমার দেখার সুবিধা করতে একদম কোলে নিয়ে বসে থাকবো।”

রিয়ানা কথা বাড়ালো না আর। এই বদলোককে যা বলবে, লজ্জায় ফেলে দেবে। তার লজ্জা কম, সেও মাত্রা টাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে রায়াদ। এটা কি তার সাথে মেশার ফলাফল! আচ্ছা লজ্জা কমে যাওয়া কোনো ছোঁয়াচে রোগ হলো নাকি? তার সংস্পর্শে এসে রায়াদ এমন নির্লজ্জ হচ্ছে কেন? ‘ধ্যাত কি সব ভাবছি!’ রিয়ানা নিজের ভাবনা চিন্তা সব বাদ দিলো। আয়াত সবার জন্য খাবার সার্ভ করে ডাকছে সবাইকে। রায়াদ তার ধরে সেদিকে পা বাড়ালো।

চলবে?

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে