#রঙিন_খামে_বিষাদের_চিঠি
#পর্বঃ৩১
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
৭৯,
জার্মানির বার্লিন শহর জার্মানির রাজধানী। সেখানেরই সেন্টার থেকে ১০মিনিটের দূরত্বের এক বাসায় দুই রুমের ছোট্ট হাউজ কিনে নিয়েছে রিয়ানা। এই বাসায় সে একা থাকে। বাবার সাথে দূরত্ব দিনকে দিন বেড়েছে বৈ কমেনি। রিয়ানা ইচ্ছাকৃত ভাবে কমায়নি। যাকে জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে পাশে প্রয়োজন ছিলো! তখন যখন পায়নি! এখন আর একসাথে থাকার কি প্রয়োজন। এতদিন আয়াতের মুখের দিকে তাকিয়ে সে রয়ে গেছিলো উর্জবার্গ। এখন আয়াতও তো নেই। তাই থাকার মানেও হয়না। বার্লিনের হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজি বিভাগে ভর্তি হয়েছে সে। কলেজ শেষে একটা রেস্টুরেন্টে পার্ট টাইম জব করে। বাসায় এসে আবার পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়। এই বেশ সুন্দর তার জীবন চলে যাচ্ছে। আগের থেকে অনেক বদঅভ্যাস কমিয়ে ফেলেছে সে। ড্রিংকস, পার্টি, ড্রেসআপ সবকিছুই শুধরে নিয়েছে। শুধু মাঝে মাঝে খুব বেশি খারাপ লাগলে! বোনকে মিস করলে সে যায় নাইট ক্লাবে। ইচ্ছে মতো মদ গিলে বাসায় ফিরে। সেই রাত-টা তার বিষাদময় কেটে যায়। আজও কাটছে তেমন-ই। আজ সই সই একবছর পূরণ হলো সে বাংলাদেশ ছেড়ে এসেছে। হ্যাঁ, মাঝখানে কেটে গেছে একটা বছর। রায়াদের তার প্রতি দুর্বল হয়ে আসা! একদম পছন্দ হয়নি রিয়ানার। সেদিন রায়াদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সে চুপচাপ চলে এসেছিলো। এরপর রায়াদের সাথে টু শব্দও করেনি। রায়াদ অবশ্য তার সাথে বারংবার কথা বলার চেষ্টা করেছে। রিয়ানা এড়িয়ে চলেছে। আয়াতের বউভাতের পরদিন-ই বাবা আর বোনকে একপ্রকার না জানিয়েই নিজেই টিকেট কেটে চলে এসেছে জার্মানি। জার্মানি এসে আয়াতের কাছে জানিয়ে দিয়েছিলে সে চলে এসেছে। এরপর বাবার বাসাতেও উঠেনি। মাদালিনার বাসায় উঠে ভার্সিটি এডমিট হয়ে তার সাহায্যে বাসা কিনে সোজাসুজি এখানেই এসে উঠেছে। তার বাবা প্রায় একমাস পর ফিরেছিলো জার্মানি। তিনি এসে মেয়ে-কে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। উর্জবার্গ ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন নেওয়ার কথা বলেছিলেন। রিয়ানা শোনেনি। নিজের মতো আছে এখন। এই তো পড়াশোনা, একাকিত্ব! সব মিলিয়ে দারুণ ভালো আছে সে। আসলেই ভালো আছে?
প্রশ্ন-টা নিজের মনে আসতেই রিয়ানার বুকের মধ্যে কেমন একটা জ্বালাপোড়া করতে শুরু করলো। উফফ কি যন্ত্রণা। এই যন্ত্রণা অসহনীয়। রুমের ছোট্ট সিঙ্গেল সোফায় বসে কুশন কোলে নিয়ে গা এলিয়ে কাঁচের জানালা ভেদ করে দূর আকাশে উদাস ভঙ্গিতে বসে ছিলো রিয়ানা। মনের মাঝে যন্ত্রণা চেপে ধরতেই তড়িঘড়ি করে উঠে দাড়ালো। পড়ার টেবিলের কাছে এসে টেবিলে নিচে একটা তাক আছে। সেখান থেকে বিয়ারের বোতল বের করে চুমুক বসালো। জানালার কাছে এসে গ্লাস টেনে জানালা খুলে হাত বাড়ালো বাইরে। সময়-টা এখন সামার সিজন। এই সিজনে যা একটু বৃষ্টির দেখা মিলে। টিপটিপিয়ে বৃষ্টি ঝড়ছে। রিয়ানার ইচ্ছে করলো জোড় বৃষ্টিতে ভিজতে। আশায় রইলো একটু জোড়ে বৃষ্টি নামুক। কিন্তু ঘন্টা কেটে গেলো। বৃষ্টির দেখা নেই। ঘড়ির কাটা নিজ গতিতে চলছে। রাত তখন প্রায় এগারোটা। এবার সত্যি সত্যি ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো। রিয়ানা দৌড়ে রুম থেকে বের হলো। নিচতলায় নেমে লিভিং রুম পেরিয়ে এসে দরজা খুললো। রাস্তায় নেমে দুহাত প্রশস্ত করে মুখ উঁচু করে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির ফোঁটা অনুভব করতে লাগলো রিয়ানা। সময় পেরুলো বৃষ্টির প্রকোপ তখন কমে এসেছে। রিয়ানার নড়চড় নেই। কিন্তু আচমকা অবাক করা একটা কান্ড ঘটে বসলো। নিজের উপর আর বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছেনা দেখে রিয়ানা চোখ মেলে তাকালো। রাস্তার দুপাশের নিয়ন বাতির আলোয় সামনে দাড়ানো পুরুষটির আপাদমস্তক অবলোকন করে রিয়ানা চোখ কচঁলালো। এটা কি করে সম্ভব? আজ কি বিয়ার খাওয়া বেশি হলো নাকি তার? নার্ভ কাজ করছেনা নাকি? কি সব ভুলভাল দেখছে সে! অস্ফুটস্বরে তার ঠোঁট দিয়ে বেরিয়ে আসলো,
“আপনি?”
“হ্যাঁ আমি। কি ভেবেছেন? পালিয়ে আসলেই পিছু নিবো না? পালিয়ে বেড়াতে দিবো?”
“মিঃ রায়াদ শাহনেওয়াজ। বাড়াবাড়ি করছেন আপনি।”
৮০,
এরপর আর সারাশব্দ পাওয়া গেলো না। রিয়ানার নিস্তেজ শরীর নেতিয়ে পরতে ধরলে রায়াদ অতিযত্নে তাকে নিজের সাথে আগলে নিলো। ছাতা ফেলে রিয়ানাকে কোলে তুলে নিয়ে পা বাড়ালো তার বাড়ির দিকে। লিভিংরুমের সোফায় রিয়ানার নিস্তেজ শরীর আলগোছে রেখে সে পা বাড়ালো বাড়ির লাইট জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য সুইচ হাতরাতে। ড্রিম লাইটের আলোয় সব আবছা। আবছা আলোয় দেওয়াল হাতরে সুইচে প্রেস করলো সে। পুরো বাড়ি মুহুর্তে আলো ঝলমলিয়ে উঠলো। রায়াদ এসে রিয়ানার সামনে হাঁটুমুড়ে বসলো। বৃষ্টিতে দীর্ঘসময় ভেজার ফলে রিয়ানার চোখ মুখ ফ্যাঁকাসে হয়ে গেছে। রক্তশূণ্য মানবী মনে হচ্ছে। পরণে তার শর্ট টপস আর শর্ট জিন্স। অল্প একটু পেট বেরিয়ে আছে তার। সাথে উড়ু থেকে পা পুরোটাই দেখা যাচ্ছে। রিয়ানার সেন্স নেই। ভেজা কাপড়! পাল্টাবে কে? চিন্তায় পরলো রায়াদ। গালে হাত দিয়ে মৃদু চাপড় দিয়ে আলতো স্বরে ডেকে বললো,
“রিয়ানা, এই রিয়ানা? উঠুন না!”
রিয়ানার হুঁশ নেই। ফেরার নামও নিলো না। রিয়ানার পুরো শরীর ঠান্ডায় যেন জমে আছে। এই মেয়ের যে ঠান্ডায় সমস্যা! এটা ভুলে কি সে বৃষ্টির সাথে জীবন দিতে গিয়েছিলো? মুহুর্তে রায়াদের মেজাজ বিগড়ে গেলো। সে আয়াতের সাথে কথা বলার জন্য পকেট হাতরে ফোন বের করলো। ফোনে পানি ঢুকে নষ্ট যদি হয়! এই রিস্ক এড়াতে ভালো করে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়েই সে পকেট রেখেছিলো ফোন। বের করে দেখলো তেমন কিছু হয়নি! ঠিক-ই আছে। সে চট জলদী কল লিস্ট থেকে আয়াতের নাম্বার বের করে কল করলো। আয়াত রিসিভ করতেই সে আগে বলে উঠলো,
“এই বেয়াদবের ঠান্ডায় সমস্যা জেনেও বৃষ্টিতে ভিজেছে। সেন্স হারিয়েছে। ফেরাবো কি করে?”
আয়াত ঘাবড়ালো রায়াদের কথায়। ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললো,
“এতক্ষণ চিন্তায় ছিলাম, আপনি পৌঁছাতে পারবেন কিনা! এখন ভয় ধরলো রিয়ানাকে নিয়ে। আমি কি আসবো জুবায়েরকে সাথে নিয়ে?”
“রাতে আসার দরকার নেই। সকালে আসতে পারলে আসবেন।”
“রাতের বেলা, একা মেয়ের বাসায় আপনি থাকবেন? বিষয়-টা ভীষণ উইয়ার্ড না?”
আয়াত তুতলিয়ে কথা-টা বললো। রায়াদ দমে গেলো এই কথায়। সে তো জাস্ট রিয়ানাকে দেখে-ই চলে যেতে চেয়েছিলো। এই মেয়ে সেন্স হারিয়ে কি এক সমস্যায় ফাঁসাল! সে পরিস্থিতি সামলাতে বললো,
“আমায় ভরসা করেন তো? টাচ করবো না। ফিরেও তাকাবোনা। শুধু সুস্থ করার উপায় জানলে বলুন। আর এটা বাংলাদেশ নয়। এখানে একটা মেয়ের সাথে ১০টা ছেলে এসে থাকলেও কেউ দেখতে আসেনা।”
আয়াতের মনে তবুও উশখুশ করছিলো। রায়াদকে সে ভরসা করে। তবুও বাঙালি মেয়ের মন! অসস্তি আর চিন্তা দু’টোই থাকবে। আয়াত নিজেকে সামলে লম্বা ভাবে কতগুলো নিঃশ্বাস নিলো। এরপর মলিন সুরে বললো,
“চোখেমুখে পানি দিয়েও কাজ না হলে বেডরুমে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে গরম কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দিন। সকাল হতে হতে ও একাই ঠিক হবে। ঠান্ডায় একটু নিস্তেজ হয়ে যায়। গরম পেলেই ঠিক হয়ে যাবে। এরপর না হয় বাসায় এসে পরুন।”
“ওর শরীরের কাপড় ভেজা। এটা নিয়ে বিপদে আছি।”
রায়াদ মনে খঁচখঁচানি নিয়ে কথা-টা বললো। আয়াত দীর্ঘশ্বাস ফেললো। চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,
“পাশের বাসায় ওর ক্লাসমেইট আছে একজন। ওর বাসায় গিয়ে নক করুন। জার্মানির মানুষজন এত তাড়াতাড়ি ঘুমায় না। নক করে সমস্যা জানিয়ে সাহায্য চাইলে ওরা সাহায্য করে।”
“ওকে, এখন তবে রাখছি।”
রায়াদ কল কেটে দিলো। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রিয়ানার দিকে তাকাতেই রাগে জেদে তার চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো। হাত মুঠো করে নিলো রায়াদ। রিয়ানার দিকে দৃষ্টি ফেলে বিরবির করে বললো,
“জেদ আর জেদ। জেদের চোটে নিজের কি হাল করে ছেড়েছে এই মেয়ে। একবার সুযোগ পাই! জেদ সব ছুটিয়ে দম নেবো। শুরুতেই বলেছিলাম বেয়াদব একটা মেয়ে। ভুল বলিনি। পালিয়ে এসেছিলেন না? এখন কি করে পালান দেখবো! উঠতে-বসতে, খেতে-শুতে আমাকেই দেখবেন সবসময়। আর পাবেন আমার থেকে পালানোর শাস্তি।”
৮১,
হতাশ দৃষ্টিতে রুমের জানালার গ্লাসে হাত রেখে দাড়িয় আছে আয়াত। জুবায়ের কিচেন থেকে দু মগ কফি বানিয়ে এনে আয়াতের পাশে দাড়ালো। কফির মগ এগিয়ে দিতেই আয়াত মলিন হেসে তা নিলো। জুবায়ের পাশে দাড়িয়ে কফির মগে চুমুক দিয়ে শুধালো,
“রিয়ানাকে নিয়ে চিন্তিত?”
“একটু, সেন্স হারিয়েছে। রায়াদ ভাই কল করেছিলো।”
“এক বছর ৪টা মাস পেরুলো। মেয়ে-টাকে শুরুতে যেমন দেখেছিলাম! দিনকে দিন আরও জেদি হলো বৈকি নরম হতে দেখলাম না।”
“ওর কিছু ভ্রান্ত ধারণা আছে। ওর সাথে জড়াবে যে, সুখ হারাবে সে।”
“এজন্য রায়াদকে সুযোগ দিবে না? ও কি খুব খারাপ ছেলে?”
“খারাপ হলে বিয়ের আগে তাকে গিয়ে অনুরোধ করতাম না আমার বোনকে আগলে ধরতে।”
আয়াতের কথায় বিস্মিত হলো জুবায়ের। আয়াতের দিকে তাকিয়ে বললো,
“বুঝলাম না তোমার কথা! ”
“আমার আপনার বিয়ের আগে মেহেন্দীর রাতে রায়াদ ভাইকে অনুরোধ করেছিলাম আমার বোনকে একটু আগলাতে। তার কষ্ট গুলো দূর করার চেষ্টা করতে। কারণ তার দৃষ্টিতে আমার বোনের জন্য কোথাও একটা দুর্বলতা আছে। বুঝতে পেরেছিলাম। এজন্য মেহেন্দী শেষে রুমে যেতে ধরে তাকে একা দুতলায় করিডরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কথা বলি সেদিন।”
“আচ্ছা বুঝলাম। এজন্য এতদিন ধরে রায়াদকে জার্মানি আসতে এত সাহায্য করলে?”
“আপনাকেও তো আনলাম! যেন ঘুরে যেতে পারেন। সেই উছিলায় বোন, বাবাকেও দেখে যেতে আসলাম।”
“সাথে আমাদের হানিমুন তাইনা?”
জুবায়েরের চোখে মুখে দুষ্টমির আভাস। আয়াত তা দেখে কফির মগে শেষ চুমুক দিয়ে জুবায়েরের হাত থেকে কফির মগ নিয়ে কিচেনে রেখে আসতে পা বাড়িয়ে বললো,
“হানিমুন তো নিউ কাপল করে তাই না? আমাদের বিয়ের এক বছর হয়ে গেছে। তো আমরা ওল্ড কাপল হয়ে গেছি। সো কিসের হানিমুন?”
“এবার একটা বেবি আনার জন্য হানিমুন হবে ম্যাম।”
জুবায়েরের জবাবে আয়াত থামলো না। লজ্জা মিশ্রিত মুখশ্রী নিয়ে শাড়ি সামলে ছুট লাগালো কিচেনের দিকে। জুবায়ের মাথা চুলকে হাসলো। দিন দিন মেয়েটার প্রেমে গভীর ভাবে আসক্ত হচ্ছে সে। বিয়ে করা বউ। আসক্ত হওয়াই যায়। হারানোর ভয় নেই। রায়াদ এবার তার শালীকা-কে সহজ জীবনে ফিরিয়ে নিতে পারলেই হলো। একটা সুখী পরিবার। জার্মানিতে এসেছে আজ ২দিন হলো। রায়াদ রিয়ানা যে ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে, সেখানেই ডাবল মাস্টার্সের জন্য এপ্লাই করেছিলো। আয়াতের সাহায্য নিয়ে সব সঠিক ভাবে করায় সামার সেমিস্টারে সে স্টুডেন্ট ভিসার এপ্রোভাল পেয়েছে। রায়াদের সাথে আয়াত আর জুবায়েরও এসেছে একটু ঘুরে যেতে। আয়াতের যেহেতু জার্মানির নাগরিকত্ব আছে। এজন্য বেশি সমস্যা হয়নি। রায়াদ এসে থেকে রিয়ানার সাথে দেখা করার জন্য পাগল হয়েছিলো। আয়াত সব খোজ খবর নিয়ে আজ যাওয়ার পারমিশন দেয়। ট্রেনের টিকেট কেটে রায়াদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে আসে। কথা ছিলো সবাই একসাথে গিয়ে রায়াদের থাকার ব্যবস্থা। ভার্সিটির বাকি কাজ সেরে আসবে। কিন্তু রায়াদের ধৈর্যে সইলো না। কবে যে এই ছেলে রিয়ানার শূণ্যতায় এতটা তার জতোর উন্মত্ত হয়ে উঠলো! আজও বুঝে উঠেনা জুবায়ের। অথচ রায়াদ কি বলতো! সে ভালোবাসবেনা কাউকে। ভালোবাসা তার জন্য নয়। যে বলে ভালোবাসা সম্ভব না! একসময়ে গিয়ে দেখা যায় সেই ভালোবার কাঙাল হয়ে উঠে। এসব ভেবে জুবায়ের মৃদু হাসে। এবার সব সুন্দর ভাবে মিটে গেলেই হলো।
নিচে এসে আয়াত তার বাবাকে সোফায় কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে দেখে কিচেনে মগ রেখে এসে উনার সামনে দাড়ালো। আলতো স্বরে ডেকে উঠলো,
“বাবা, ও বাবা! এখানে এভাবে বসে আছো কেন? রুমে গিয়ে শুয়ে পরো।”
বড় মেয়ের কণ্ঠে চোখ মেলে তাকান হানিফ হোসাইন। মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে আয়াতের দিকে হাত বাড়িয়ে বলেন,
“আয়াত মা! আয় বাবার পাশে একটু বোস।”
আয়াত অস্থির চিত্তে বাবার পাশে বসে। বোধ হওয়ার পর বাবাকে এতটা চিন্তিত সে কখনও দেখেনি। আজ এত চিন্তিত দেখে সে ভয় পাচ্ছে। বাবার চোখে মুখে বয়সের ছাপ স্পষ্ট হচ্ছে। অতিরিক্ত চিন্তায় তার বাবা অসুস্থ না হয়ে যায়! এই ভয়ে আয়াত বলো উঠে,
“তুমি কি নিয়ে এতো চিন্তা করছো বাবা? তোমায় বলেছি না চিন্তা করবেনা। তোমার হার্টের সমস্যা গুরুতর হয়। জানোই তো।”
“আমার ছোটো রাজকন্যাকে একটু না অনেক বেশি-ই কষ্ট দিয়েছি না? কতগুলো দিন হলো ও আমায় বাবা ডাকেনা। ভেবেছিলাম তোকে রেখে এসে মেয়ের মান ভাঙাবো। দূরত্ব মেটাবো। মেয়ে আমায় সুযোগ দিলো না। কাজ ফেলে ওর কাছে গেলে আমায় সহ্য করতে পারতো না। হাইপার হতো। ও হাইপার হলে ওর প্যানিক এট্যাক আসে জানিসই তো। এজন্য দূর থেকে খেয়াল রাখি। এভাবে আর পারছি না রে মা। আর কত এভাবে দূরে সরিয়ে রাখা যায়?”
“দূরত্ব টা তুমি তৈরি করেছিলে বাবা। আমি কতবার বলেছি তোমায়! ওকে আগলে নাও। ও শুধরে যাবে। এখম তরী ডুবিয়ে তীর খুঁজলে অকূল পাথার ছাড়া কিছুই পাবেনা।”
“এই দূরত্ব কি ঘুচবেনা রে মা?”
হানিফ হোসাইনের চোখেমুখে অসহায়ত্বের ছাপ প্রগাড় হলো। আয়াত দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো শুধু। বাবার কথার জবাব তার জানা নেই।”
চলবে?
#রঙিন_খামে_বিষাদের_চিঠি
#পর্বঃ৩২
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
৮২,
বেডরুমে বিছানায় বসে নিজের চাপা দুহাতে চেপে বসে আছে রিয়ানা। মাথা ভারের চোটে ইচ্ছে করছে না চোখ মেলে তাকাতে। রাতের কথা হুঁশ হতেই সে জোড় করেই চোখ মেললো। পুরো রুমে নজর বুলিয়ে রায়াদের হদিস পেলো না। দেয়াল ঘড়িতে দেখলো সময় ৯টার ঘর পেরিয়ে গেছে। ১১:১৫তে তার ক্লাস আছে। রেডি হতে হবে। আবার এই ছেলে কি করে আসলো এখানে! জানতে হবে। একহাতে মাথা চেপে ধরে বিছানা থেকে নামলো সে। নিজের পরনে লং স্কার্ট আর টিশার্ট দেখে একটু অবাক হলো। পরে হলো রায়াদ পাল্টিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে একটুও তার মাঝে কোনো ভাবনার উদয় হলো না। একটা ছেলে হয়ে তার কাপড় পাল্টে দিয়েছে! এটা নিয়ে একটু তো অবাক হওয়া উচিত! কিন্তু তারমাঝে কোনো অনুভূতি কেন কাজ করছে না! বুঝতে পারল না রিয়ানা। শরীরের তাল সামলে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। লিভিং রুমে পা রাখতেই দেখলো রায়াদ কিচেনে চুলায় কিছু একটা বসিয়ে লন্ড্রি এরেয়ায় পা বাড়িয়েছে। বাসার নিচতলায় লিভিং রুম, তার মুখোমুখি কিচেন। একপাশে ব্যাজমেন্ট, যেটা রিয়ানা লন্ড্রি হিসেবেই ইউজ করে। রায়াদ সেখানে গিয়ে রিয়ানার রাতে চেঞ্জ করা কাপড় ওয়াশ করার জন্য সব হাতড়ে দেখছে। রিয়ানা ক্লান্ত শরীর-টা টেনে সোফায় গিয়ে বসে এলিয়ে দিলো। চোখ বুজে বললো,
“আমি ঠিক হই। ওয়াশ করে নিবো। আপনার এত ব্যস্ত হওয়ার দরকার নেই।”
রিয়ানার কথা রায়াদের কর্ণগোচর হতেই সে ফিরে তাকালো রিয়ানার দিকে। রিয়ানা চোখ বুজেই রয়েছে। তাকিয়ে দেখল না রায়াদের প্রতিক্রিয়া। রিয়ানার জ্ঞান ফিরেছে দেখে রায়াদ মুহুর্তে ছুঁটে আসলো রিয়ানার কাছে। রিয়ানার উপর একটু ঝুঁকে কপালে গালে স্পর্শ করে দেখল জ্বর আছে কিনা! শরীর ঠান্ডা দেখে বিস্মিত হয়ে বলল,
“একটু আগেও জ্বরে শরীরে ভাপ উঠছিলো। এখনই ঠান্ডা! অদ্ভুত।”
রায়াদের ব্যস্ত ভঙ্গিমায় রিয়ানার মাঝে কোনো ভাবান্তর দেখা দিলো না। সে চুপচাপ রইলো। রিনরিনে স্বরে বলল,
“এক মগ কড়া লিকারের চা করে দিন তো। অসহ্য মাথা ব্যথা করছে।”
রায়াদ রিয়ানার কথায় থমকালো। সে ভেবেছিলো তার কথায় রিয়ানা রাগবে। ঝগড়া করবে। কিন্তু তেমন কিছু হলো না বলে অবাক হলো। ড্রেস পাল্টে দেওয়া! একবার জিগাসা করলোও না যে, কে পাল্টে দিলো! বাই এনি চান্স রিয়ানা ভাবলো না তো! সে পাল্টে দিয়েছে। এটা ভাবলে তো মহা মুশকিল। সে যা করেনি; তার দায়ভার সে কেন নিবে? রায়াদ নিজ দায়িত্বেই বললো,
“আপনার ড্রেস আমি নই। আপনার পাশের বাসায় বসবাস রত আপনার ক্লাসমেইট পিউয়ি পাল্টে দিয়েছে। কি নাম রে বাপ! উচ্চারণ করতে দাঁত নড়ে যায়।”
রিয়ানা এতেও ঘাবড়ালো না। সে শান্ত ভঙ্গিতেই বসে রইলো। আবার একটু আওয়াজ দিয়ে বললো,
“আমার চা চাই। দিতে পারলে বলেন। নতুবা বের হোন বাসা থেকে।”
রিয়ানার এমন কথায় রায়াদ বিরক্ত হলো। তাকে দিয়ে কাজ করানোর জন্য বাসায় থাকতে দিচ্ছে? কিন্তু রিয়ানার শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে নিশ্চুপে কিচেনে গিয়ে চায়ের জন্য পানি গরম বসালো। এমনিই সকালে খাবার জন্য সে ভাত বসিয়েছে চুলোয়। ক্ষুধায় তার অবস্থা খারাপ। কিচেনে ফ্রিজে তেমন কিছু খুজে না পেয়ে চাল খুঁজে ভাত বসিয়ে দিয়েছে। সাথে আলু পেয়ে তা সিদ্ধ হতে দিয়েছে। আলুভর্তা করে ভাত খেয়ে নিবে আপাতত। ভেবেছিলো রিয়ানার সেন্স আসতে দেরি হবে! একা রেখে বাইরে যাওয়াও মুশকিল। কখন আবার কোন অবস্থা হয়! এই ভেবে কিচেন হাতরে যা পেয়েছে। তাই রাঁধতে শুরু করেছে সে। চলার মতল টুকটাক রান্না জানে রায়াদ। তার মা বেশির ভাগ সময় অসুস্থ থাকে কোমড়ের অসুখ নিয়ে। এজন্য ঠ্যাকা কাজ পারি দিতে অল্পস্বল্প রান্না সে শিখেছে। রোজা তো সবসময় বাসায় থাকে না! সেক্ষেত্রে তার পেটের দায় এড়াতে শিখতেই হয়েছে। সবসময় তো বাইরে খাওয়া যায় না। ভাত দেখতে দেখতে ঝটপট চা বানিয়ে নিলো রায়াদ। কড়া লিকার দিয়ে তিতকুটে ধরণের চা বানিয়ে নিয়েছে সে। গলায় পরলে ঠান্ডার মধ্যে একটু আরাম পাবে। কিচেনের কোথায় কি! সব ঘেটে দেখা শেষ তার।
৮৩,
চা বানিয়ে নিয়ে রিয়ানার সামনে গিয়ে দাড়ালো রায়াদ। এগিয়ে দিলো রিয়ানার দিকে। রিয়ানা কপালে হাত রেখে মাথা সোফায় এলিয়ে চেখ বুজে ছিলো। রায়াদ চা এগিয়ে দিয়ে মৃদু স্বরে বললো,
“আপনার চা!”
রিয়ানা চোখ মেলে তাকালো। হাত বারিয়ে চায়ের মগ নিয়ে চুমুক দিলো। রায়াদকে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,
“বসুন আমার পাশে।”
রায়াদ সংকোচ নিয়ে রিয়ানার থেকে একহাত দূরত্ব রেখে বসলো। রিয়ানা তা দেখে একটু হাসলো। হাসি প্রশস্ত করে বললো,
“পিউয়ি ওত রাতে সারা দিলো? ও আমার ক্লাসমেইট জানলেন কি করে?”
“আয়াত বলেছে।”
“বাহ, আপু এসেছে কানে ভেসে এসেছিলো। আপনি এসেছেন আন্দাজ করিনি। আপুকে সবাই চিনে ওখানের। আপনাকে নয়। এজন্য বুঝতে পারিনি। তা আপু এসে এখানের সব খোঁজ নিয়েও গেছে দেখছি!”
“আপনার কি মনে হয়? আপনি কাউকে ভালোবাসেন না বলে আপনাকে কেউ ভালোবাসে না?”
কঠোর গলায় বললো রায়াদ। রিয়ানা চায়ের কাপে চুমুকের পর চুমুক দিয়ে চা শেষ করে আলস্য ভঙ্গিতে আবারও গা এলিয়ে বললো,
“আপনার রান্না আগে শেষ করুন। খেয়ে দেয়ে বিদায় হোন। আমার ভালো লাগছেনা।”
রায়াদ কিছু বললো না। রিয়ানার কথামতো কিচেনে এসে দেখলো ভাত হয়ে গেছে। আলুও সিদ্ধ হয়েছে। খাওয়ার তাগিদ-টা ততক্ষণে দমে গেছে। সব প্লেটে বেড়ে ঠান্ডা হতে দিয়ে ডাইনিং টেবিলে রেখে রায়াদ এসে নিজের জায়গায় বসলো। থমথমে গলায় বললো,
“অনেক তো হলো খামখেয়ালি। এবার কি সিরিয়াস হওয়া উচিত নয় আপনার?”
“কি খামখেয়ালি করলাম?”
রিয়ানা বিস্মিত হয়ে শুধালো। রায়াদ নিস্তেজ ভঙ্গিতে রিয়ানার দিকপ করুণ চাহনীতে তাকালো। রিয়ানার ভাবভঙ্গিতে সিরিয়াসনেস না দেখে রেগে একদম রিয়ানার বাহুতে হাত দিয়ে চেপে ধরলো। কঠিন স্বরে বললো,
“বুঝতে পারেন না ভালোবাসি! তবে এত কেন অবহেলা? একজনের ভালোবাসা না হয় সফট কর্ণার! মায়া, আবেগ মনে হয়েছিলো! আমার টাও কি তাই মনে হয়? থাপ্পড় চিনেন? আমার অনুভূতি নিয়ে ফাইজলামি করলে ঠাস ঠাস করে গালে বসিয়ে দিবো। পেয়েছেন টা কি আমায় হ্যাঁ? নিরবে চলে আসলেন! এচত সহজ মনে হলো সবকিছু? একবারও ভাবেননি আমার কি অবস্থা হবে? আপনার উপস্থিতিতে আমার একটুও যন্ত্রণা হয়নি। চলে আসলেন। সেই শূণ্যতায় আমায় ভাবনায, যাতনায় পুড়িয়েছে। কি চান আর! আমি মরে যাই?”
রায়াদের প্রতিটা কথায় ক্ষোভের পাশাপাশি অসহায়ত্ব খুঁজে পেলো রিয়ানা। সে স্মিত হেসে বললো,
“অনুভূতি শূণ্য নিষ্ঠুর হৃদয়ের অধিকারীনির কাছে এসে অনুভূতির কথা ব্যক্ত করছেন? অদ্ভুত! মানুষ মানুষের অভাবে মরে না! (কালেক্টেড) শুননেনি এই কথা?”
রায়াদের ক্ষোভ কমে আসলো। ঠান্ডা গলায় বললো,
“আপনি দিনদিন আর কত পাথর হবেন? ভালোবেসেছেন, তার জন্য অনুভূতি দাফন করে ফেলেছেন বলেন! তবে ২য় সূচনায় এত বিপত্তি কপন?”
“আমায় আপনি আদৌও ভালোবাসেন? আপনার মনে নেই কি বলেছিলেন? আপুর কথায় আপনি আমার আগলানোর একটা সুযোগ চান?”
“আসলে কি বলুন তো রিয়ানা! আমি মানুষ-টা কখনও ভালোবাসা! মানুষকে আপন করে পাওয়ার ইচ্ছে! একদমই ভাবিনি। ভাবলে হয়তো আয়াতের কথা আপনাকে বলতামই না। আপনার প্রতি আমার অনুভূতি-টা ঠিক কি? আমিও বুঝতে পারতাম না। ধরতেও পারতাম না। আয়াত আর জুবায়ের বুঝিয়েছে। এরপর তো আপনার শূণ্যতা আমায় সব-টা কড়ায়-গন্ডায় বুঝিয়েছে। একটা বছর কি করে প্রতিটা দিন কেটেছে! এক আল্লাহ আর ২আমি জানি। আমার ভেতর-টা চিরে আপনাকে দেখাতে পারিনি।”
রায়াদ শান্ত স্বরে রিয়ানার কথার জবাব দিলো। রিয়ানা সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ালো। রুমের দিকে পা বাড়িয়ে বললো,
“আমার সময় চাই। এভাবে কিছু হয়না।”
৮৪,
“সময় নিয়ে এরপর কি সাজ্জাদ ভাইয়ের মতো আমায় নাকচ করে দিবেন?”
রায়াদের প্রশ্নে পা থেমে গেলো রিয়ানার। পিছন ফিরে তাকিয়ে মলিন হেসে বললো,
“সাজ্জাদ ভাইয়ের কথা ২য় বার আমার সামনে বলবেন না। পরিণাম ভালো হবে না। সে অন্যের স্বামী। আমার অতীত। একপাক্ষিক অতীত। সে আমার সাথে জড়ালে আমি দূরে থেকেছি। আমি জড়াতে গেলে সে ধরাছোয়ার বাইরে ছিলো। তাই তার কথা ২য় বার বলা একদমই ঠিক হবেনা।”
রিয়ানা রুমে চলে যায়। রায়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সোফায় গা এলিয়ে দু আঙুলে কপাল চেপে ধরে। শান্ত স্বরে ধারালো অস্ত্রের ন্যায় খোঁচা দিয়ে গেলো মেয়ে-টা। আগের থেকে নিস্তেজ মনে হলেও এখনও তেজ একবিন্দুও কমেনি। রায়াদ উঠে আলুভর্তার জন্য কাচা মরিচ হাতের কাছে পেয়ে ভেজে নিয়ে ভর্তা করলো। এরপর ফ্রিজ থেকে দু’টো ডিম নিয়ে ভাজলো। ভাত সাজিয়ে রিয়ানাকে ডাকলো সে। রিয়ানার সারাশব্দ না পেয়ে উপরতলায় এসে দরজার সামনে গিয়ে নক করলো রায়াদ। কিন্তু রিয়ানার সারাশব্দ না পেয়ে রুমে ঢুকবে কি ঢুকবেনা! সংকোচ নিয়ে সরে আসলো নিচে। এরমাঝে কলিং বেলের শব্দ ভেসে আসলো রায়াদের কানে। আয়াত-রা এসেছে ভেবে দ্রুত পদে এসে দরজা খুলে দিলো সে। কিন্তু দরজা খুলতেই একজন ছেলে-কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সে জিগাস্যু দৃষ্টিতে তাকায়। ছেলে-টা জার্মানির ভাষায় কিছু একটা বললো। বাট রায়াদ আধো বুঝলো আধো বুঝলোনা। তাই ইংলিশে বললো,
“আমার সাথে ইংলিশে কথা বলুন। আমি জার্মানির ভাষা বুঝিনা।”
ছেলে-টা এবার হাসলো। ধবধবে ফর্সা ছেলে-টার চোখের মনি দু’টো একদম নীল। ছেলে-টাকে বিনাশব্দে দাড়িয়ে হাসতে দেখে রায়াদ বিরবির করে বলে উঠলো,
“উজবুকের ঘরের উজবুক। ব্রয়লার মুরগীর কেমন দাড়িয়ে আছে। ইংলিশও বুঝেনা নাকি!”
রায়াদের পরে মনে পরলো জার্মানিতে ইংলিশের থেকে নিজেদের ভাষাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ছেলে-টার কাঁধে কলেজের ব্যাগ ঝুলছে। শিক্ষিত-ই তো। ইংলিশ অজানা হওয়ার তো কথা না। রায়াদপর ভাবনা চিন্তার মাঝেই রিয়ানা নিচে নেমে আসলো। পরনে ফুল জিন্স আর লেডিস শার্ট। ভেজা চুল বেয়ে টপটপিয়ে পানি পরছে । রায়াদ সেদিকে তাকিয়ে বুঝলো রিয়ানা গোসল করলো এতক্ষণ। কিন্তু রিয়ানা রায়াদকে পাশ কাটিয়ে ছেলে-টার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে জার্মানি ভাষায় বলে উঠলো,
“হেই ভ্লাদ। কখন আসলে? লিনা কোথায়? একা কেন তুমি?”
“আরে রিলাক্স। আস্তেধীরে বলছি। তারআগে বলো ভার্সিটি যাবে না তুমি?”
ভ্লাদের জবাবে রিয়ানা ওর হাত ধরে টেনে এনে সোফায় বসালো। মুখোমুখি বসে বললো,
“এতদিন পর দেখা। একটু তো আনন্দে হাইপার হওয়াই যায়। আমার কথা মনে পরলো তবে?”
ভ্লাদের সাথে রিয়ানা আড্ডা দিতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। এদিকে রায়াদ রাগে ফুঁসছে। তার যে অস্তিত্ব এখানে বিরাজ করছে! একটুও খেয়াল নেই রিয়ানার। তারমাঝে দেখো; ঐ ছেলের সাথে কত হাসিখুশি। আর তার সামনে হাসি বেরোয়-ই না। যেন হাসার জন্য দাম দিতে হবে? রায়াদ রাগের চোটে বাসা ছেড়েই দুম করে দরজা আগিয়ে দিয়ে বেরিয়ে পরলো। রিয়ানা দরজা লাগানোর শব্দে সামনে তাকিয়ে রায়াদকে বেরুতে দেখে চিন্তিত হয়ে পরলো। এই ছেলে এখানকার কিছু চিনেনা। একা আবার কই যায়! গতকাল হয়তো গাড়িতে করে কেউ দিয়ে গিয়েছিলো! কিছুই তো তার ঠিকভাবে শোনা হয়নি। কিন্তু এখন গেলো টা কই! রিয়ানা ভ্লাদকে বলে দরজা খুলে বেরিয়ে পরলো। বাট রাস্তায় নেমে কোথায় রায়াদের ছায়া-টাও দেখলো না। আজব তো! এই ছেলে ২-৩মিনিটে কোথায় গেলো? রিয়ানা চিন্তিত ভঙ্গিতে সেন্টারের দিকে পা বাড়ালো।
চলবে?
ভুলত্রুটি মার্জনীয়, আসসালামু আলাইকুম।