রঙিন খামে বিষাদের চিঠি পর্ব-২২+২৩

0
659

#রঙিন_খামে_বিষাদের_চিঠি
#পর্বঃ২২
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৫০,
“আসলে রিয়ু ভাইয়া তোমায় ভালোবাসতো, পছন্দ করতো। এটা আম্মুকে জানানো হয়েছিলো। ভাইয়া নিজেই সাহস করে বলেছিলো। মা তোমার চালচলন, কথার ধরণ, পোশাক আশাক সব দেখে মেনে নিতে নারাজ ছিলো। ভাইয়া যেদিন জার্মান থেকে ফিরে আসে তার অবস্থা সহ্য করার মতো ছিলো না। পুরোই বিধস্ত ভেঙে গুড়িয়ে যাওয়া এক মানুষ। অসুস্থ হয়ে বিছানায় পরেছিলো খাওয়া দাওয়া ছেড়ে। একমাত্র ছেলের এই অবস্থা মানতে পারছিলো না। ভাইয়াকে ডাক্তার দেখানো হয়। মা ভাইয়ার সাথে একান্তে কথা বলেছিলো। ভাইয়ার এই অবস্থা কেন? ভাইয়া নিজেই তখন মুখ ফুটে তোমার কথা বলে। ভাইয়া মায়ের কাছে বাচ্চাদের মতো তোমায় বিয়ে করার আবদার করেছিলো। তুমি তো আরও ছোটো ছিলে। মা সময় নেয়। বলে তোমার বিয়ের বয়স-টা হোক। এরমাঝে মা চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করে, আয়াত আপুর সাথে কথা বলে। লুকিয়ে তোমায় ভিডিও কলে দেখেও৷ কারণ আয়াত আপুকে বারংবার বলার পরও তুমি আমাদের সাথে কথা বলতে না। ঐ একটু দেখার ফাঁকে মা তোমার অবনতি দেখে আর মানতে পারলেন না। তবুও অপেক্ষা করলেন তুমি শুধরে যাবে বড় হলে। আয়াতকে বলা হলো একটু তোমায় গুছিয়ে তুলতে। সে পারলোনা। তোমার রাগ-জেদ, একরোখা স্বভাবে তুমি যেমন তেমনই রইলে। তুমি একটু শুধরালে ঠিক তখন! যখন মা ভাইয়ার জন্য নিজের ভাইয়ের মেয়েকে ঠিক করে। আমার খালামনি আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। এসে ভাইয়ার এই অবস্থা দেখে দুবোনে শলাপরামর্শ করে ভাইয়াকে অন্তির সাথে বিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করে। আমাদের মামা একজনই, বোনও একটাই। মামার ঐ একটাই মেয়ে। আর সন্তান নেই। নিজেদের আদরের ভাতিজীকে নিজেদের মাঝে-ই রাখতে চাইলেন। শুরু হলো বছর ঘুরতেই কথাবার্তা। ভাইয়া তখন নিজেকে বেশ গুছিয়ে নিয়েছে। বাবার বিজনেসে জয়েন করে নিজের মতো ছিলো। অন্যদিকে চেষ্টা করছিলো জার্মানিতে ডাবল মাস্টার্স করতে যাবে বলে সেই চেষ্টা৷ কারণ ভাইয়া নিজেকে সামলে নিলেও তোমায় ভুলেনি। রোজ একবার ছাঁদে দাড়িয়ে এক তোমাকে উদ্দেশ্য করে রাতের আঁধারে অন্ধকারে কথা ছুড়তো। তুমি জানতে পারবেনা জেনেও ভাইয়া নিজ মনে ফোনে তোমার ছবি বের করে বকবক করতো। একেকদিন ছাঁদে বাচ্চাদের মতো কাঁদতো। আমরা মা-মেয়ে শুধু দেখতাম। বাবা বিজনেসের জন্য বেশিরভাগ সময় শহরে থাকতেন। মাঝে মাঝে এসে ছেলের এই করুণ অবস্থা দেখে চাচ্চুর সাথে কথা বলে বাবা। কিন্তু চাচ্চু নিজেই আর রাজী হোন না। বলেন, তার বিগড়ে যাওয়া মেয়ের সাথে তার ভাইপো-কে বিয়ে করিয়ে, এই বংশের একমাত্র প্রদীপের জীবন-টা নষ্ট করতে চান না তিনি। বাবা দমে যান। বোঝাতে বোঝাতে শেষে গিয়ে ব্যর্থ-ই হলেন। শেষে বাবাকে বুঝিয়ে মা অন্তির সাথে ভাইয়ার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে এসে ভাইয়াকে জানায় বিয়ের কথা। ভাইয়া সেদিন বাড়ি আর বাড়ি রেখেছিলো না। পুরো বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙচুর করে যা তা অবস্থা। শেষে বাবা শান্ত করে ভাইয়াকে। বোঝাতে শুরু করে। তবুও ভাইয়াকে মানাতে না পেরে কসম দিয়ে বসে বাবা মা-কে যদি একফোঁটাও ভাইয়া ভালোবাসে তবে বিয়ে করতে-ই হবে। দিনতারিখ ঠিক করে ফেলেছে। কথা ফেরায় কি করে? বাঙালি বাবা মা-ও তেমন। সব ট্রিকস বিফল তো কসমের ট্রিকস সেই আদিম যুগ থেকে খাঁটিয়ে আসছে। ব্যস ভাইয়া শান্ত হলেও মতামত দেয় না। মা খাওয়া নাওয়া ছেড়ে ঘরবন্দী করে ফেলেন। নিজের আদরের দুলালের অবনতি না থামলে, মুভ ওন না করলে তিনি খাবেন না বলে জেদ ধরেন। ভাইয়া উপায়হীন হয়ে বিয়েতে মত দেয়। আর ঠিক তখনই তুমি আসো ভাইয়ার বিয়েতে৷ তোমার ডোন্ট কেয়ার মুড, জেদ সব দেখে ভাইয়ার জেদ চাপে। তুমি তাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারলে, সেও পারবে। ব্যস আমাদের মা আর তোমার বাবার অমত, তোমাদের দুজনের জেদ! এই সম্পর্কের অস্তিত্ব বিলীন করে দিলো।”

৫১,
রিয়ানা পরপর এতগুলো ধাক্কা নিতে পারলোনা। সে শুনতে চাইলো অন্তির পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা। অথচ রিফা আপু তাকে সাজ্জাদের অবস্থা বলে গেলো! নাস্তা করে সে রিফার রুমে এসে কোনো দ্বিধা ছাড়া-ই রিফার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে অন্তি পালিয়েছিলো কেন? সাজ্জাদের সাথে অন্তির সম্পর্ক কেমন? রিফা তার উত্তরে একদমে কথাগুলো বলে থামলে রিয়ানা বললো,

“আপনার কথাগুলো ঠিক করুন রিফা আপু। আমাদের জেদ সম্পর্কের অস্তিত্ব বিলীন করেনি। আমি কখনও আপনার ভাইয়ের সাথে সম্পর্কে যাইনি। তাই এই কথা-টা ভুল। কিচেনে গিয়ে ভাবীর কথাগুলো গোলমেলে লাগলো। তাই আপনার কাছে জানতে চেয়েছি। কিন্তু আপনি তো আমি বিহীন সাজ্জাদ ভাইয়ের বিশদ বর্ণনা করলেন। আমি তো এসব জানতে মোটেও ইচ্ছুক নই।”

রিয়ানার কাঠখোট্টা কথার জবাবে রিফা হাসলো, বললো,

“ভাইয়া ঠিক-ই বলতো তুমি এটিটিউড কুইন। তোমার ব্যক্তিত্ব একটু বেশি-ই কড়া ধাচের। এসব বিশদ বর্ণনার প্রয়োজন ছিলো। তোমারও জানা উচিত তুমি বিহীন একটা মানুষের জীবনে ঠিক কি পরিমাণ ধ্বস নেমেছিলো। আর রইলো অন্তির পালানোর ঘটনা? অন্তি আর তুমি একই বয়সী। যখন বিয়ে-টা হয় তখন ও কিন্তু টিনএজ এর ছিলো। ওর রিলেশন ছিলো একটা। ফ্যান্টাসির দৌড়ে ছিলো। পরিবারের কেউ টেরও পায়নি। ফেসবুকের রিলেশন ছিলো। পাশের জেলাতেই। বাড়িতে বলতেও পারেনি। তার আগেই আচমকা বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর ওর বাচ্চামি স্বভাব কমার বদলে আরও বেড়ে যায়। ভাইয়ার সাথে বয়সের ফারাক-টা ৫-৬এর জায়গায় ৯পেরিয়ে ১০এর কাছাকাছি হওয়ায় ভাইয়াকে সবসময় বুড়ো বর বুড়ো বর বলে যেত। সবার সামনেই। ওর আঁটকায় না কোনো কথা বলতে গেলে। বিয়ের প্রথম ১০মাস সবসময় বলতো ওর ডিভোর্স চাই ডিভোর্স চাই। ভাইয়ার মন এমনি-ই বিক্ষিপ্ত থাকতো। ওর কর্মকাণ্ডে আরও গম্ভীর হয়ে যায় ভাইয়া। তবুও বিয়ে যখন হয়েছে নিজের সব অনুভূতির দাফন করে মায়ের কথামতো অন্তিকে সামলানোর চেষ্টায় নামে। অন্তিও ছন্নছাড়া, ভাইয়াও তোমার কথা ভেবে বিষাদগ্রস্ত। সুখ-টা ঠিক কি? ভাইয়া উপলব্ধি করতে পারেনি। বিয়ের ঠিক ১০মাসের মাথায় বাবার বাড়ি যাওয়ার পর অন্তিকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ ১৭দিন পর তার খোঁজ মিলে। পুরোনো প্রেমিকের আশায় বাড়ি ছেড়ে গিয়ে দেখে ছেলে-টা তাকে ঠকিয়েছে। যে ঠিকানা দিয়েছিলো সব-টাই ভুয়া। সে লুকিয়েছিলো নিজের বেস্টফ্রেন্ড্রের বাসায়। ভয়ে-ই বাসায় আসতো না।ওর বান্ধবী আর তার বাবা মা-কে অনুরোধ করে পায়ে ধরে চুপ করিয়েছিলো। অন্তির বান্ধবী আমার সাথে যোগাযোগ করে। তার সাথে আমার বিয়ের সময় পরিচয় হয়। সে এসে সব খুলে বলার পর বাবা আর মামা গিয়ে ফেরত আনে তাকে। অন্তির ভুলগুলোর জন্য শাস্তি কি দিবে? মেয়ের ভালোর জন্য ভাইয়া-কে বোঝানো হয় সম্পর্ক টাকে একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য। ভাইয়াও হয়তো বিয়ে করা বউ! কিছুটা দায়, সম্পর্কের টান বুঝেছিলো। সেজন্য মেয়ে-টাকে সামলাতে শুরু করে। কিন্তু ওদের সম্পর্ক ঠিক কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে? কারোর মাথায় ঢোকেনা। এই ভালো তো এই মন্দ। ২টা বছর পেরিয়ে গেলো। অন্তির বয়স-টাও ২১শে এসে ঠেকলো। তবুও সম্পর্কের প্রতি এদের টান আসলো না।”

৫১,
রিয়ানা কি বলবে রিফার কথা শোনার পর বুঝে আসলো না তার। সে বিছানায় বসা ছিলো। উঠে দাড়িয়ে রুমের জানালার কাছে গিয়ে দাড়ালো। বিদ্রুপের স্বরে বললো,

“একটা মেয়ে ফেসবুকে পরিচিত এক ছেলের ভরসায় পালালো? এত বোকা মেয়েও দুনিয়ায় এক্সসিস্ট করে? ভালো বর, ভালো ঘরেও যার মন টিকে না। তার পায়ের তলায় দুনিয়ার সব সুখ এনে দিলেও মাটি নড়বড়ে হয়ে-ই থাকবে। ঘটনাগুলো সব রুপকথার গল্প মনে হচ্ছে বুঝলেন আপু। আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না অন্তির এই পালানোর ঘটনাগুলো। পুরোই লজিকলেস। সে প্রেমিকের কাছে গেলো? অথচ যাচাই করলো না কিছু? সে বিবাহিত, এটা জানার পরও ছেলে-টা তাকে একসেপ্ট করবে? ভাবলো কি করে? ফাতরামির একটা লিমিট থাকে। এই মেয়ে সবকিছু ক্রস করে গেছে। দুজনেই ভালো নেই। অথচ সাজ্জাদ ভাইয়ের আইডিতে দুজনের ঘোরাঘুরির ছবি আপলোড করার অভাব নেই। যত্তসব আজাইরা ঘটনা।”

রিফা হাসলো রিয়ানার বিদ্রুপ শুনে। তখনই অন্তি ঘরে ঢুকলো। সে দরজায় দাড়িয়েছিলো। রিয়ানার সব কথা-ই তার কানে এসেছে। অন্তি এসেছিলো রিফা আর রিয়ানাকে ডাকতে। হানিফ হোসাইনকে বাসায় আনা হয়েছে। এজন্য আসিফা বেগম তাকে উপরে পাঠায় ডাকার জন্য। এসে রিয়ানার সব কথা শুনে বলে,

“আমার প্রেমিকের সাথে পরিচয়-টা ফেসবুকে হলেও সে আমার পরিচিত ছিলো। আমার খালাতো ভাইয়ের ফ্রেন্ড ছিলো। ভাইয়ার বিয়েতে পরিচয় হয়। আমি তো কল্পনাও করিনি সে আমায় ঠকাবে। আমি তাকে বলেছিলাম আমার বিয়ে হয়েছে। সে মানতে রাজী ছিলো। ভরসা দিয়েছিলো। এরপর কেন আমায় বাসস্ট্যান্ডে নিতে আসলো না? তা আমার জানা নেই। আর রইলো তোমার সাজ্জাদ ভাইয়ের সাথে ঘোরাঘুরির কথা? আমার শখ হয় ঘোরার। ঘুরতে নিয়ে যায়। ছবিগুলোও আমি আপলোড করি। ওর আইডি ও কম-ই ইউজ করে। আমি-ই বেশি ইউজ করি। কারণ আমার নিজের আইডি বা ফোন কোনো-টাই নেই। আমার অপকর্মের পর ইউজ করতে দেওয়া হয়নি। নেহাত আমার ফুফি, ফুফা ভালো বলে আমার অন্যায় জেনেও মেনে নিয়ে রেখেছে ছেলের বউ করে। নয়তো অন্য কোথাও হলে আমার যে স্বভাব মেনে নিতো না। আর তোমার সো কলড সাজ্জাদ ভাই কম লাভার বেশি। সে যে আমার থেকে বেশি তোমায় ভালোবেসে দুই নৌকায় পা দিয়ে চলছে। সেটাও আমি ভালো মতো জানি। এজন্য আমাদের দুজনের সম্পর্ক ঠিক হয়না। বিয়ের প্রথম রাতেই সে তোমার কথা জানিয়েছিলো। তার ফোনের নোটপ্যাডে তোমায় নিয়ে অজস্র অনুভূতি। আমার মনে অন্য কেউ। সম্পর্ক-টা ঠিক কোনদিক দিয়ে আগায় বলো তো? সম্পর্কের দায়ে সম্পর্ক চলছে আমাদের। বাবা মায়েরা তো একটা ছেলে মেয়েকে জুড়ে দিলে-ই বাঁচে। তাদের মতামত গোল্লায় যাক। তোমার কাছে সব আজাইরা লাগলে-ও আমাদের স্বামী স্ত্রী দুজনের মন দুই মেরুতে। ভালোবাসা-টা আসে কোথা থেকে বলো?”

“সব কথা বুঝলাম। বাট একটা কথা ঠিক করুন। আমার সো কলড লাভার? কি করে সে আমার লাভার? আমি কখনও তাকে ভালোবাসি বলেছি? আপনারা স্বামী স্ত্রী দু’জনের-ই চরিত্রের ঠিক নেই। বিয়ের পর স্বামীর মনে পরনারী, স্ত্রী-র মনে পরপুরুষ। সেটা আনার দুজনই মুখ ফুটে বলে। নির্লজ্জ কোথাকার! লজ্জার ‘ল’ টাও আপনাদের মাঝে নেই না? কে কোন জন্মে কাকে ভালোবেসেছে! সে ধরে বসে থেকে পরিবারের প্রতি-টা মানুষকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দিয়ে যাচ্ছেন। তালিয়া জারুর বানতি হ্যায়। এত শেমলেস তো আমিও হতে পারিনি। জীবনে কোন উন্নতি-টা করলাম। যত্তসব ফাল’তু।”

রিয়ানার জবাবে অন্তি হতভম্ব। মুখের উপর অপমান সে মানুষকে করে। তাকে কেউ এভাবে অপমান করবে? চরিত্রে আঙুল তুলবে? এত সাহস? রিফার বেশ মজা লাগছে রিয়ানার উচিত জবাব দেওয়ায়। অন্তি রেগেমেগে রিয়ানার দিকে তেড়ে গিয়ে বলে,

“আমার চরিত্রে ভুলেও আঙুল তুলবেনা রিয়ানা।”

“জাস্ট কিপ ইউর মাউথ শাট । আমার উপর কেউ চিল্লিয়ে কথা বলুক! আমার পছন্দ না। তার মাঝে আপনার মতো নির্লজ্জ মেয়ে-র তো একদম-ই না।”

“তোমার খুব লজ্জা বুঝি? যার ড্রেসআপ, নাইট ক্লাবে পার্টি করার স্বভাব! সে কি করে সৎ চরিত্রের অধিকারী হয়?”

অন্তির প্রশ্নে হাসলো রিয়ানা। হাসতে হাসতে বললো,

“আমি নিজের লাইফ টাকে ইনজয় করতে এসব করেছি। আপনার মতো স্বামী রেখে সো কলড প্রেমিকের কাছে দৌড় দেইনি। আমি নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করেছি। আপনার মতো বিনা চেষ্টায় সংসার গুছিয়ে নেওয়ার বদলে পালাইনি। আপনাকে কথা শোনানোর স্কোপ আপনি নিজে ক্রিয়েট করেছেন। তো কথা তো শুনতেই হবে। পারলে সাজ্জাদ ভাই আর আপনি পারফেক্ট কাপল হয়ে দেখান। আমি মেনে নিবো আপনার সেই দম আর আমার উপর আঙুল তোলার যোগ্যতা আছে।”

রিয়ানা কথাগুলো বলেই রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে মনে মনে হাসলো। ভাবলো, ‘অন্তি ভাবী, আপনার মাঝে আমার ভেতরে থাকা তেজ দেখেছি। আমার অপমান গুলো সেই তেজে ঘি স্বরুপ ঢাললাম। এবার আগুন জ্বলবে। সেই আগুনে এবার কেউ পুড়বেনা। এই হোসাইন পরিবার ভালো থাকবে। বিশেষ করে আমার না হওয়া মানুষ-টা। সে কোনোদিন জানবেনা, রিয়ানা হোসাইন তাকে ভালোবেসেছে। জানলে কোনোদিন আর আপনাদের সম্পর্কের উন্নতি হবেনা। আমার করা প্রতি পদের অপমান আপনাদের শুধরে দিবে।’

রিয়ানা ভাবতে ভাবতে নিচে নামতে ধরতেই পা ফসকে সিড়ি থেকে পিছলে পরে যেতে ধরে রিয়ানা। আচমকা এমন হওয়ায় ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে সামলে নেয়। সামনের দিকে তাকাতেই দেখে রায়াদ তার দিকেই এগিয়ে আসছে। রায়াদ হন্তদন্ত হয়ে রিয়ানার সামনে এসে হাঁপিয়ে শুধায়,

“আর ইউ ওকে?”

“হ্যাঁ, কিন্তু আপনি আমাদের বাড়িতে? কার সাথে এলেন?”

চলবে?

#রঙিন_খামে_বিষাদের_চিঠি
#পর্বঃ২৩
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৫২,
রিয়ানার কথার জবাবে রায়াদ বলে উঠলো,

“আংকেলকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। এরপর উনি-ই সাথো আনলেন। আর বেশি সমস্যা হলে উনি ঢাকায় ফিরবেন বলেছেন। এজন্য আমিও সাথে আসলাম। অসুস্থ মানুষ-কে নিয়ে আপনাদের দুজনের ফিরতে যদি কোনো সমস্যা হয়!”

রিয়ানা আর জবাব দিলো না। রায়াদকে পাশ কাটিয়ে নিচে নামতে শুরু করলো। রায়াদ ভ্রু-কুটি করে তাকিয়ে রইলো রিয়ানার পানে। মনে মনে প্রশ্ন জাগলো তার, ‘এতগুলার কথা কি একটা উত্তর ডিজার্ভ করেনা? এভাবে এভয়েড করে যায় কোনো মানুষ?’ রায়াদের প্রশ্নের উত্তর হিসেবে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসলো,

“অবশ্যই যায়। মেয়ে-টা যদি রিয়ানা হোসাইন হয়! তবে অবশ্যই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। আস্তো বেয়াদব এক মেয়ে।”

রায়াদ বিরক্ত হলো নিজের বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলোর প্রতি। হাঁটা ধরলো উপরদিকে। ফ্রেশ হওয়ার জন্য সাজ্জাদ বলেছিলো তার রুমে যেতে। কারণ ওখানেই একমাত্র ছেলেদের ফ্রেশ হওয়ার সবকিছু পাওয়া যাবে। সেজন্য রায়াদ উপরতলায় উঠছিলো। দুজন দু’দিকে নিজেদের স্থানে পৌঁছে ক্ষান্ত হয়। রিয়ানা ড্রইং রুমে পা ফেলতেই সোফায় বসা নিজের বাবার দিকে তাকায়। ক্লান্ত, অসুস্থ শরীর-টা সোফায় এলিয়ে শুয়ে রয়েছে। রিয়ানার বুকের মাঝে ধ্বক করে উঠে। তার সুস্থ সবল তেজী বাবা-টা ২-৩দিনের ব্যবধানে কেমন নেতিয়ে গেছে। দূর থেকেই বাবাকে দেখলো রিয়ানা। কাছে গেলো না। গেলেই আবার কোন সীন ক্রিয়েট হয়! তার ভরসা নেই। আয়াত হানিফ হোসাইনের পাশে বসা। অন্য পাশে আরিফ হোসাইন। অন্তির দেখা মিললো না। সাজ্জাদ সিঙ্গেল সোফায় বসে ফোনে কিছু একটা করতে ব্যস্ত। আসিফা বেগম তখন ট্রে-তে করে লেবুর শরবত করে নিয়ে আসলেন সবার জন্য। যে গরম পরেছে আজকাল! বাংলাদেশের এই একটা বিষয় রিয়ানার একদম অপছন্দ। সেটা হচ্ছে গরম। এই গরমে আর ধুলাবালিতে তার দেশে-ই আসার মনোভাব দমে যায়। না আসলে মন আকুপাকু করে। আসলে এই সমস্যাগুলো ফেইস করতে হয়। আবার শীতকালে আসলেও সমস্যার শেষ নেই। শীতপ্রধান দেশের একটিতে থেকে যা সমস্যা না হয়! এই সাময়িক শীতের দেশে এসে তার ঠান্ডা জ্বর লেগেই থাকে। এর আগের বার তো শীতের ভ্যাকেশনে এসেছিলো। সাজ্জাদের বিয়ের সময়। সেবার একদম যা তা অবস্থা হয়েছিলো রিয়ানা। হলুদের অনুষ্ঠানে হলুদ দিয়ে মেখে একাকার অবস্থা। সন্ধ্যা সময় গোসল দিয়ে ১০৩° ঘরে জ্বর উঠেছিলো। আগের সময়ের কথা মনে পরতেই রিয়ানার মনের ভিতর-টা দীর্ঘশ্বাসে ভরে উঠলো। না চাইতেও দৃষ্টি গিয়ে থামলো সাজ্জাদের পানে। এক নাগারে তাকিয়ে রইলো খানিকক্ষন। আচমকা সাজ্জাদও দৃষ্টি ফেরাতে দুজনের চোখাচোখি হলো বেশ ভালো ভাবেই। রিয়ানা দৃষ্টি সরিয়ে নিলো চট করে। উপর তলায় হাঁটা ধরলো। রায়াদ উপর তলায় দাড়িয়ে রিয়ানার প্রতি-টা গতিবিধি লক্ষ্য করলো। সাজ্জাদ আর রিয়ানা দুজন-ই তার থেকে গম্ভীর মানুষ। এদের মাঝে কি কিছু ছিল আগে? কাজিন হয়! অথচ কোনো মিল নেই? রায়াদের মনে প্রশ্ন-রা দানা বাঁধলো। উত্তর গুলো নিশ্চিত ডায়েরিতে আছে। কিন্তু ডায়েরী জুবায়েরের কাছে আছে। রিয়ানা উপরে এসে রায়াদকে ফ্লোরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে এক ভ্রু উঁচিয়ে তাকালো। শুধালো,

“আমার ডায়েরী কোথায়?”

“পড়ার সুযোগ দিয়েছেন নাকি? ডায়েরীর খোজ পরে গেলো যে?”

রায়াদ রিয়ানার প্রশ্ন শুনে তার দিকে তাকিয়ে বুকে হাত বেঁধে প্রশ্ন করে। রিয়ানা আগের থেকেও কড়া গলায় বলে,

“আমার জিনিস, আমি ফেরত চেয়েছি। এতে খোজ পরার কি হলো?”

“দিয়ে দিবো। খালি হাত পায়ে এসেছি। আপনার ডায়েরী তো টেনে আনতে পারবো না! তাইনা?”

রিয়ানা জবাব দিলো না। এড়িয়ে নিজের রুমে ঢুকে পরলো রিয়ানা। রায়াদ হাফ ছাড়লো। বিরবির করে বললো,

“খোদা তায়ালা দিয়েছে আপনাকে এটিটিউড। এতদিন খেয়াল করিনি। এখন খেয়াল করতে বসে দেখছি আমার ব্যক্তিত্ব আপনার ব্যক্তিত্বের এক কোণাতেও যায় না।”

৫৩,
পরদিন সকালবেলায়। সাজ্জাদ গোসল দিয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছছিলো। আলমারী থেকে নিজের কাপড় বের করে লুঙ্গি ছেড়ে ফরমাল ড্রেসে রেডি হয়ে নিলো। উদ্দেশ্য অফিস যাওয়া। কয়েকদিন চাচাকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে কাজের দিকে খেয়াল করা হয়নি। অফিসের কি অবস্থা কে জানে? এরমাঝে আরেক ঝামেলা নিজের দাদুর নিজ পরিশ্রমে দাড় করিয়ে রেখে যাওয়া কাপরের বিজনেস-টায় তার চাচারও হক আছে। সেসব নিয়ে ভাগাভাগির কথা-ই চলছে। হানিফ হোসাইন নিজের ভাগ ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন। তার বাবা নিতে রাজী নয়। সাজ্জাদও নিতে রাজী না। বোঝাতে গিয়ে একপ্রকার বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়ে পরেছিলো তার বাবা আর চাচা। হানিফ হোসাইনের অতিরিক্ত উত্তেজিত হওয়ার ফলে আর মেয়েদের টেনশনে হার্টের অসুখ জেগে যায়৷ আয়াতের যেন তেন রিয়ানার ফিউচার কি হবে? এটাই মূল চিন্তা। রিয়ানার কথা মনে আসতেই সাজ্জাদ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আজ অফিস থেকে আর বাসায় আসবেনা। নিজেদের বাগান বাড়িতে চলে যাবে। এখানে আসা মানেই রিয়ানার মুখোমুখি হওয়া। আর পুরোনো ক্ষততে ছুড়ি দিয়ে খোঁচানোর মতো কষ্ট। সাজ্জাদ পুরোপুরি রেডি হয়ে হাতে ঘড়ি পরতে ব্যস্ত ছিলো। তখনই অন্তি রুমে আসে। অন্তিকে দেখে সাজ্জাদ এক পলক তাকিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হলো। ঘড়ি পরে অফিসের ফাইল, ল্যাপটপ, ফোন, আর ব্লেজার-টা কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে বেরুনোর জন্য পা বাড়াতে-ই অন্তি বলে উঠলো,

“পুরোনো প্রেমিকাকে চোখের সামনে দেখে পালাতে চাচ্ছেন?”

সাজ্জাদের পা থেমে যায়৷ ঘাড় ঘুরিয়ে অন্তির পানে তাকায়৷ অন্তি বিছানায় বসে শাড়ির আঁচল উড়িয়ে পা দোলাচ্ছে। ফর্সা মুখ-টা লাল টকটকে আছে। বিন্দু বিন্দু ঘামের দেখা মিলছে কপাল ঘেষে। সাজ্জাদ শান্ত স্বরে জবাব দিলো,

“রাতের কথা ভুলে যাচ্ছো অন্তি। তোমার অধিকার-টা কি আরও একবার মনে করিয়ে দিতে বলছো এই সাত সকালে? কতবার বোঝাবো তোমায়, রিয়ানা কখনও আমায় ভালোবাসেনি। আমি বেসেছি। হয়তো মনের কোথাও একটা রয়ে গেছে সে। তারমানে আমি এটা ভুলে যাবো না, তুমি আমার স্ত্রী। আর তোমার পরে আমার জীবনে আরও একটা নারীর অস্তিত্ব জুড়ে বসবে? এই ধারণা পাল্টাবে না তোমার? রিয়ানাকে জড়িয়ে আল্লাহর দোহায় লাগে, আর কিছু বলবেনা।”

অন্তির চুপ হয়ে যায় সাজ্জাদের কথায়। মনে পরে যায় রাতের কথা। সাজ্জাদের তার কাছে আসার কথা। রিয়ানার করা অপমানের কথা বলতেই সাজ্জাদের জবাব না পেয়ে একপ্রকার ঝগড়া করেছে অন্তি। পুরোনো প্রেমিকা তার বউকে অপমান করবে! অথচ সেটা স্বামী জেনেও তাকে কিছু বলবেনা! তার থেকে রিয়ানার অধিকার বেশি সাজ্জাদের উপর?এটা মানতে পারেনি সে। হালকা চেঁচামেঁচি করতেই সাজ্জাদ তার শাড়ির আঁচলে টান ফেলেছিলো। এরপর সাজ্জাদের উপর তার অধিকার-টা সাজ্জাদ ভালো মতোই বুঝিয়ে দিয়েছে। অন্তি সেসব কথা মনে পরতেই ফাঁকা ঢোক গিললো। সাজ্জাদ তখনও অন্তির জবাবের আশায় তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তার জবাব না পেয়ে সে দু কদম আগালো। অন্তির মুখের উপর উবু হয়ে চোখে চোখ রেখে বললো,

“মিসেস অন্তি, ডোন্ট ফরগেট ইউর আইডেন্টিটি। সাজ্জাদ হোসাইনের ওয়াইফ আপনি। সাজ্জাদ হোসাইন আর যাই হোক, নিজের স্ত্রী-কে ঠকাতে শিখেনি। শিখলে আপনাকে আপনার ভুলের জন্যই ছেড়ে দিতাম। হ্যাঁ, এটা অস্বীকার করবোনা, রিয়ানার প্রতি আমার ভালোবাসা মরেনি। আমার চরিত্রে দোষ আছে। আপনার ভাষ্যমতে, আমি দু নৌকায় পা দিয়ে ভাসছি। ভুলে যাবেন না, এক নৌকা! যেটা রিয়ানা নামক নাম দিয়েছেন আপনি? সে নৌকায় আমার ঠাই মেলেনি। আর আপনার নৌকায় আমি বাঁচার জন্য ঠাই নিয়েছি। এসব বলে আমায় জলে ডুবিয়ে মারবেন না আর। বুকের বা পাশ-টায় তিক্ত কষ্ট অনুভব হয়। দয়া করে একটু আমায় বোঝার চেষ্টা করুন৷ আমার একটু ভালোবাসার প্রয়োজন। আমার একটু শান্তি প্রয়োজন। আমি ভালো হতে চাই। ভালো থাকতে চাই। তাই দয়া করে একটু আমার পাশে থাকুন। সবকিছু আমার সহ্য সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে দিনদিন।”

সাজ্জাদ একদমে কথাগুলো বলে রুম ছাড়লো। অন্তি শ্বাস ছাড়লো সাজ্জাদ চলে যেতেই। এতক্ষণ কাছে এসে থাকায় দম-টা আঁটকে গিয়েছিলো যেন আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো অন্তির। কাঁধের উপর থেকে শাড়ির আঁচল সরিয়ে সাজ্জাদের আদর না হিংসাত্মক আচরণ! কোনটার চিহ্ন বলবে অন্তি? সেই চিহ্ন-টায় হাত বোলালো। সম্পর্ক-টার কোনো কূল খুজে পায়না অন্তি। এটা নতুন না যে সাজ্জাদ প্রথম বার তার কাছে এসেছে। বারেবারে, বহুবার সাজ্জাদকে আপন করে পেয়েছে। দুজন নারী পুরুষ পাশাপাশি শুয়ে থাকবে! এক ছাঁদের তলায় থাকার পরও একে অপরকে ছোঁবে না এমন টা তো হয় না। সেখানে তো দুজন স্বামী স্ত্রী। সম্পর্ক টাকে সুযোগ দেওয়ার চেষ্টায় নেমে একে অপরের অনেক বার কাছে এসেছে। ভালোবাসার চেষ্টায় মত্ত হয়েছে। কিন্তু দুজনের-ই অতীতের প্রতি একটা উইকনেস থাকায় একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই থেকেছে। অন্তির একটু ভয় হয়েছে রিয়ানাকে দেখে। তার যা কড়া ধাচের ব্যক্তিত্ব। যেকোনো ছেলেকে নিজের দিকে আকর্ষিত করতে সময় লাগবেনা তার। ভয় এই জায়গায় যে, সাজ্জাদ না আবার পুরোদমে রিয়ানার দিকে মন ঘুরিয়ে ফেলে। এসব ভেবেই লম্বা কয়েক-টা শ্বাস ফেলে অন্তি। স্বামী যখন তার, আগলে রাখার দায়িত্ব তার। অনেক হয়েছে বাচ্চামি। এবার ভালো থাকার সাথে রাখার পালা।

৫৪,
বিকেলবেলায়। বাড়িতে কেমন একটা সাজজ সাজ রব পরেছে। আয়াতকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। সেই নিয়ে বাড়িতে তোড়জোড় চলছে সব গোছানোর। রিয়ানার এতে হইচই ভালো লাগেনা। এজন্য কফি বানিয়ে নিয়ে ছাঁদে এসেছে। রিয়ানা ছাঁদে দাড়িয়ে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে চারপাশ টা দেখতে ব্যাস্ত। সাথে দেখছে দূর মাঠে ১২-১৩বছর বয়সী বাচ্চা ছেলেদের ফুটবল খেলার আনন্দ। তাদের বাড়ি-টা না শহরে, আবার না গ্রামের মাঝে পরে। একদিকে তাকালে মনে হয় শহর। অন্য দিকে তাকালে মনে হয় গ্রাম। তাদের বাড়ি পেরিয়ে গ্রামের সীমানা শুরু। আবার সামনের দিকে শহরের বুকে ঢোকার রাস্তা। আকাশে জাম কালোমেঘ, মৃদু বাতাস আর হাতে গরম কফি। সুন্দর একটা ওয়েদার। বিকেল-টা উপভোগ করার মতো। বাম হাতে থাকা ফোন-টা নিয়ে ডাটা এক্টিভ করলো রিয়ানা। হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে বেস্টফ্রেন্ড মাদালিনাকে ভিডিও কল করলো। রিসিভ হবে কিনা দ্বিধায় ছিলো। কিন্তু তার দ্বিধা কাটিয়ে ওপাশ থেকে কল রিসিভ হলো। হতেই সে কিছু বলার আগে ঘুমঘুম চোখে মাদালিনা বললো,

“গুড মর্নিং রিয়া।”

রিয়ানা ফোন-টা কান থেকে নামিয়ে সময় দেখলো। চারটে বাজে। মানে জার্মানিতে ১১টা বাজে। ৫ঘন্টার ব্যবধান। এই মেয়ে এত তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেছে ভেবে অবাক হলো রিয়ানা। রাত জেগে পার্টি করে সারাদিন ঘুমায়। রিয়ানা অবাকের সুর টেনে জার্মানির এসেন্ট টেনে জার্মানির ভাষায় বলে উঠে,

“এত সকালে উঠেছো? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।”

“ভ্লাদের সাথে ডেট আছে রিয়া। তুমি নেই, আমায় সাজাবে কে? আই মিস ইউ । প্লিজ তাড়াতাড়ি আসো।”

মাদালিনা বাচ্চাদের মতো সুর টেনে জবাব দিলো। ভ্লাদ মাদালিনার বয়ফ্রেন্ড। রিয়ানা হাসলো ওর কথার ধরণ দেখে। কফির মগে চুমুক দিয়ে বললো,

“আমার বাংলাদেশকে দেখবে মাদালিনা? আমার দেশ-টা বড্ড সুন্দর।”

রিয়ানা ক্যামেরা ঘুরিয়ে ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে চার পাশ-টা দেখাতে শুরু করলো। মাদালিনা নিজের ফেস রিয়েকশন ওয়াও টাইপ করে হা করে তাকিয়ে দেখছে। বিস্ময় নিয়ে বললো,

“অনেক ডাস্ট রিয়া। তোমার ডাস্টে সমস্যা হয় তো!”

“আ’ম ফাইন লিনা। প্যানিক হওয়ার প্রয়োজন নেই।”

রিয়ানা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাতে ধরে কফির মগে চুমুক দিচ্ছিলো। ছাঁদের গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে রায়াদ। তাকে মাদালিনা এক ঝলক দেখতেই বলে উঠে,

“হু ইজ হি রিয়া?”

মাদালিনার প্রশ্নে রিয়ানা চোখের সামনে থেকে ফোন সরায়। রায়াদকে দেখে অবাক হয়। কিন্তু তা চেপে মাদালিনাকে জবাব দেয়,

“বাবার বেস্টফ্রেন্ডের ছেলে। আমি পরে কথা বলবো লিনা। ইনজয় ইউর ডেট।”

“হেই রিয়া, ওয়ান মিনিট। সে তোমার বয়ফ্রেন্ড নয় তো? রিলেশন করছো দেশে গিয়ে?”

মাদালিনার প্রশ্নে ঘাবড়ে যায় রিয়ানা। এই মেয়ের মুখে শুধু উল্টাপাল্টা কথা। রায়াদ তার বফ হতে যাবে কোন দুঃখে। সে জবাব দেয়,

“নো লিনা। যেমন ভাবছো, কিছু নয়। আমি ব্যাক করে সব জানাবো। নাউ বায়।”

রিয়ানা কল কেটে দিয়ে ছাঁদ ছাড়ার প্রস্তুতি নেয়। ছাঁদের ছোট্ট দরজা দিয়ে যাওয়ার সময় রায়াদকে পাশ কাটাতে ধরলে রায়াদ বলে উঠে,

“আমি কিন্তু কিছু কিছু ভাষা বুঝি জার্মানির, সাথে ইংলিশও।”

“সো হোয়াট?”

রিয়ানা ঘাড় ঘুরিয়ে রায়াদ দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে। রায়াদ মাথার চুল এলেমেলো করে বললো,

“না, কিছু না। শুধু বয়ফ্রেন্ড শব্দ-টা কানে আসলো। এটাই।”

রিয়ানা ভ্রুকুটি করলো। রায়াদকে ছেড়ে ছাঁদ থেকে নেমে আসলো। রায়াদ ছাঁদে এসেছে জুবায়েরের সঙ্গে কথা বলার জন্য। এসে রিয়ানাকে দেখে আর পা বাড়ায়নি। রিয়ানা চলে যেতেই সে জুবায়েরের কাছে কল দেয়। ওপাশ থেকে জুবায়ের কল রিসিভ করতেই রায়াদ ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললো,

“তোর কি আয়াতকে পছন্দ না? ”

জুবায়ের তখন জুতার ফিতে বাঁধছিল। রায়াদের প্রশ্নে ঘাবড়ায় না সে। শান্ত স্বরে জবাব দেয়,

“আয়াত রুপবতী, গুণও যথেষ্ট। শিক্ষা সেটাও বাংলাদেশের শিক্ষার তুলনায় ঢেড় বেশি। পছন্দ না হওয়ার কারণ নেই। তোর কি পছন্দ হয়েছে? হলে বল! আমি আমার পরিবারকে মানা করি যেন কথাবার্তা আগাতে না যায়।”

রায়াদ হতভম্ব হয়ে যায় জুবায়েরের জবাবে। বিস্মিত গলায় বললো,

“তারমানে আয়াতকে তোর পরিবার দেখতে আসছে? কিন্তু আমি জানলাম না কেন? আর আংকেল আবার রাজী হলো কি করে? তুই তো সব ভেস্তে দিয়েছিলি?”

“বাবা ডাকছে রায়াদ। আমি ওখানে পৌঁছে সব প্রশ্নের জবাব দিবো। এবারের মতো রাখি।”

জুবায়ের রায়াদের কথার উত্তর দেওয়ার আগেই কল কেটে দেয়। রায়াদ ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে পরে। প্রশ্নগুলোর জবাব না পাওয়া অব্দি সে শান্তি বা সস্তি কোনো টাই পাবেনা।”

চলবে?

ভুলত্রুটি মার্জনীয়, আসসালামু আলাইকুম।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে