রঙধনু?
দ্বিতীয়বার
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
শেষ পর্ব
?
তিন মাস পর,
ফারিহা বেডের সাথে হেলান দিয়ে বারবার চোখ মুছছে,আজো নুহাস তাকে ভীষনভাবে অপমান করেছে..এই তিন মাস যাবত ফারিহা নুহাসের এভোয়েড আর ইগনরেন্স দেখেই গেছে..ফারিহা তিনটা মাসে এতোটা বদলে গেছে মনে হয় এই ফারিহা আর আগের ফারিহা এক..চার দেয়ালের মাঝে বন্দি করে ফেলেছে নিজেকে,অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছে..যখন সে বুঝলো সে নুহাসকে ছাড়া শুন্য তখন থেকে নুহাসের সাথে কন্টাক্ট করে কিন্তু নুহাস তাকে অপমান ছাড়া কিছু করে নি..ফারিহা নিজদের বাবা মা কে বুঝতে দেয় না ঠিকই কিন্তু তারা ধরতে পারে তার মেয়ের কিছু হয়েছে..অনেকবার তারা জানতে চেয়েও হেসে উড়িয়ে দিয়েছে সে..এই নকল হাসির পিছনে যে এক দলা পাথরের ভারী কষ্ট বোঝা টানছে সে জানে..নুহাসের অফিস অব্দি সে যেয়ে অপমান হয়ে ফিরে এসেছে,আর সইছে না..নিজেকে প্রমিস করেছে আর সে তার পিছু নিবে না বাংলাদেশ ছেড়ে দিবে.. আর সেও ত নুহাসকে কত হ্যারাসমেন্ট করেছে,আজ যখন ভালোবাসা বুঝলো সে পাত্তা দিচ্ছে না..তাই ফারিহা নিজের বাবা মাকে জানিয়েছে যে বাইরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে তার,এখানে আর থাকবে না..বাকি পড়াশোনা বাইরে করবে,সেটেল ও ওখানে হবে..তারা অবাক হলেও ফারিহা এমন ডিসিশনে,তারপরেও সায় দিয়ে ব্যবস্থা করে ফেললো বাহিরে যাওয়ার।।
ইদানীং ফারিশ খুব টেনশনে আছে এক ফারিহার এমন পরিবর্তন দুই মোহর শরীর ভালো না,বমি করে খুব..মাথা ঘুরায় তার,কিছু খেতে পারে না..সব কেমন হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।।
মোহ চোখে পানি নিয়ে, মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে প্রেগ্ন্যাসির কিট+হাসপাতাল থেকে আনা রিপোর্ট ধরে আছে..রেজাল্ট পজেটিভ তার,হ্যা সে প্রেগন্যান্ট.. খুশিতে তার বুক ভরে আসছে..চটজলদি নিচে যেয়ে এভ্রিলকে জানালে,এভ্রিল জোরে ডেকে বাড়ির সবাইকে জড়ো করলও..ফারিহা শুনে মনে হচ্ছে খুশিতে নেচে দিবে,অলরেডি মিউজিক অন করে নেচে দিয়েছে।।
“নতুন মেহমান না আসতে খুশি নিয়ে এলো” এভ্রিল ফারিহার দিকে তাকিয়ে বললো।।
“তুমি ওয়াদা করো??তোমার যা হয়ে থাকনা কেন,সেইজন্য নিজের এই বিহেভিয়ার চেঞ্জ করো না,আমি আমার এই প্রানবন্ত বোনকে অনেক ভালোবাসি” মোহ তার পেটে ফারিহার হাত দিয়ে ওয়াদা করে নিলো,ফারিহা খুশিতে চোখ ভর্তি জল নিয়ে মোহকে জাপটে ধরলো,মোহকে ওয়াদা করলো নিজেকে আর কষ্ট পেতে দিবে না,সবসময় হাসিখুশি থাকবে।।
সন্ধ্যাবেলা,
সুলেমানকে তাড়াতাড়ি জানিয়ে বাড়িতে এনেছে এভ্রিল,সে ত শুনে স্বর্ন নিয়ে হাজির হয়েছে..মোহর মাথায় চুমু দিয়ে,অনেক দোয়া দিলো..তার এতোবেশি খুশি লাগছে যে নিজেদের বেষ্টফ্রেন্ডের ফ্যামিলি ডাকলো ডিনারে।।
ফারিশ বাসায় এসে রুমে যখন গেলো দেখে মোহ কালো শাড়ি পরে চুল খোপা করে আছে..দেখতে আগের থেকেও বেশি সুন্দর হয়ে গেছে সে..ফারিশের সব ক্লান্তি মিটে যায় মোহর চেহারা দেখলে।।
মোহ যখন দেখলো ফারিশ এসেছে সে ধীর পায়ে ফারিশের কাছে তার গলা জড়িয়ে সামনে আনলো..ফারিশ ও তার কোমর ধরে উঠলো।।
“ইউ আর গোয়িং টু বি ফাদার মিস্টার ফাইজান ফারিশ ফাজ” মোহ ফারিশের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো।।
মোহর কথা কানে গেলেও তার নড়াচড়া নেয়,হুট করে মোহকে কোলে তুলে নিয়ে চিৎকার দিলো..সবাই উপরে আসলো,এমন কাজ দেখে তারাও হেসে দিলো।।
“ভাই ওকে নিচে নামা,জানোস আমার পুচকু আসছে” ফারিহা বিরক্তিকর হয়ে বললো।।
“মা আমি বাবা হবো” ফারিশ এই বলে আরেক দফা চিৎকার দিলো,মোহ ত লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না।।
রাতেরবেলা,
সোফায় মোহকে বসিয়ে রেখেছে ফারিহা আর এটা সেটা দেখাচ্ছে,অনেকদিন পর সে ফোন হাতে নিলো..কত শত লাইক ফ্যান বেড়েছে তার সবাই জানতে চাচ্ছে কোথায় গায়েব হয়ে আছে সে।।
ফারিহা মোহকে কোন কাজ করতে দিবে না,সে এখন খালি বসে থাকে খাবে আর ঘুমাবে..এভ্রিল সবার পছন্দের আইটেম রান্না করতে দিয়েছে।।
এমন সময় ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হলো চৌধুরী পরিবার..ফারিহা তখন ও মোবাইল গুতাতে বিজি..কারো সালামের আওয়াজে চোখ তুলার আগে তার বুক ঢিপঢিপ করছে,দেখলো যখন বুকের উপর দিয়ে হালকা স্রোত বয়ে গেলো..হ্যা সামনে নুহাস দাড়িয়ে আছে।।
ফারিহার চোখে পানি টলমল করছে,কোনমতে নুহাসের বাবা মা কে সালাম দিয়ে,নিজের পেট ব্যাথার বাহানা দিয়ে ঘরে চলে গেলো।।
“যা ওর পিছু??এতো কষ্ট দিয়ে ঘুরাইছোস দেখ তোর কি হাল করে আমার বউমা” নুহাসের মা ভেঙচি দিয়ে বললো নুহাসকে।।
“মাঝেমধ্যে মনে হয় তুমি ওরই মা” নুহাস ভ্রু কুচকে বলে,ফারিহার রুমে গেলো।।
ফারিহা বালিশে মুখে গুজে নিঃশ্বব্দে কান্না করছে,কারো আসার শব্দে চোখমুছে স্বাভাবিক রেখে বললো,
“মা আমি পরে খাবো ঘুম পাচ্ছে,তুমি যাও..আর কাওকে আসতে দিও না আমার ডিস্টার্ব করতে”
নুহাস দরজা লক করে ফারিহা কাছে যেয়ে জুতা খুলে ফারিহার পাশে শুয়ে কোমর ধরলো,ফারিহা এমন কান্ডে ভয় পেয়ে ঘুরে দেখলে অনেক বড় ঝটকা খায়..নুহাস তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।।
“ফাতরামি করতে আসছেন??নাকি টাইমপাস??লিভ মি” ফারিহা নুহাসকে রাগে বলছে কিন্তু নুহাস কানে না নিয়ে বললো,
“এতোদিন শুধু তোমাকে বুঝালাম ফোন বন্ধ করে আমার সাথে কি হাল করেছিলা এখন তুমি চাইলেও ছাড়বো,একদম হাত পা ভেঙে রাখবো” নুহাস ফারিহার উপর উঠে বললো।।
“মদনগিরি অন্য কোথাও দেখান,ছাড়েন?” ফারিহা আরো জোরে চিল্লিয়ে।।
নুহাস বুঝলো এইভাবে হবে না,ফারিহা মুখ ধরে তার ঠোটে নিজের ঠোট বসিয়ে দিলো..প্রথমে হাত পা ছাড়াছাড়ি করলেও এক সময় সে নিজেই নুহাসকে চুমু খেতে ব্যস্ত হয়ে পরলো,চুমুর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তাদের মাঝে।।
অনেকক্ষন পর একে অপরকে ছেড়ে শ্বাস নিচ্ছে জোরে জোরে দুইজনই,ফারিহাকে বুকের মধ্যে ধরে আছে নুহাস।।
“আর কষ্ট দিলে জানে মেরে ফেলবো??অনেকবেশি ভালোবাসি” ফারিহা বলে কাদঁতে লাগলো।।
“চুপ!!আর কাঁদতে দিব না,তুমি কি ভেবেছো আমি কষ্ট পাই নি??তোমাকে যতবার ইনসাল্ট করেছি নিজেকে আঘাত করেছি তোমার প্রতিটা খোজ আমি নিয়েছি,ব্যালকনিতে তুমি দাড়িয়ে থাকতে আর কাঁদতে আর আমি গাড়ি নিয়ে তোমাকে দূর থেকে দেখতাম..শুধু তুমিও আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসো” নুহাস ফারিহার চোখ মুছে দিয়ে বললো।।
“আর এইবার বিয়ে করে নিয়ে যাবো??এতোক্ষনে মনে হয় আমার মা বিয়ের কথা পাকা করে ফেলেছে,আর শুরু হবে তোমার উপরে আমার ভালোবাসার অত্যাচার ” নুহাস ফারিহা গাল টিপে বললো।।
“বাসর রাতের বারোটা যদি না বাজাই ত আমার নাম ফারিশতা ফারিহা ফাজ না” ফারিহা নুহাসের গলা ধরে বললো।।
লেগে গেলো দুইজন মারামারি, অনেক কষ্টের পর এক হয়েছে হোক না একটু মধুরমিলন।।
নিচে আসা জানা গেলো দুইজনের বিয়ে ঠিক,ফারিহাও সম্মতি দিয়েছে..দুই বন্ধু বেয়ানে রুপান্তরিত হলো..পুরো বাড়ি খুশির আমেজে মেতে উঠেছে,সবার ইচ্ছা পূরন হচ্ছে।।
মোহকে নিয়ে বুকে শুয়ে আছে ফারিশ,মোহর মাথায় হাত বুলাচ্ছে।।
“আমার জীবনের রঙধনু আপনি” মোহ বললো,ওমনি ফারিশ নিজের চুমু দিয়ে মোহকে তার ভালোবাসার রঙধনুতে রাঙিয়ে দিলো।।
সমাপ্ত?
অবশেষে আমার সবটুকু চেষ্টা দিয়ে গুছিয়ে লিখে রঙধনু শেষ করলাম..কেমন লাগছে জানাবেন…