#রঙধনু?সিজন ০২
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
পর্ব তিন
?
নুহাস বাড়িতে এসে অনেকক্ষণ যাবত দরজা আটকিয়ে বসে আছে, তার মা এতো করে ডেকেও সে কোন রেসপন্স করে নাই..এখন ওর মায়ের চিন্তা শুরু হয়ে গেছে..ছোটবেলাতে এই অভ্যাসটা ছিলো তার প্রচন্ড রাগলে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতো..আজ এতো বছর পর ও কি নিয়ে আবার রাগারাগি করে এসে এমন দরজা আটকিয়ে বসে আছে??বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ার সুবাদে নুহাস অনেক আলাদা সবার থেকে।।
বড়লোক বাবা মায়ের সন্তান নুহাস হলেও অন্য সব সন্তানদের মতো বিগড়ে যাওয়া কোন পথ ধরে নি,না এমন কোন কাজ করেছে সে।।
নুহাসের চলাফেরা,কথাবার্তা আর বিহেভিয়ার সব হাইক্লাস..নিজের পড়াশোনা শেষে বাবার অফিস জয়েন করা তার মাস ছয়েক হলো..ফেভারিট কাজ হলো সে কার না বাইকে ঘুরাফেরা বেশি পছন্দ করে..তবে অফিস গেলে নিজের কার নিয়ে যায় সে।।
অপরদিকে ফারিহা এসে গোসল করতে ঢুকেছে..মেজাজ গরম হলেও,বাজির উল্টার প্রতিদান দিয়ে একটু হলেও শান্তি লাগছে..সে কখনো কারো সাথে মিসবিহেভিয়ার করে না যতক্ষন না সামনে থাকা ব্যক্তিটি করে,অথচ আজকে তার ভুল না থাকার সত্ত্বেও কিরকম পুরো ক্যান্টিন ভর্তি মানুষের সামনে পানি ঢেলে দিলো??
শাওয়ার শেষে নিজের রুমে এসি টা বাড়িয়ে দিয়ে,গেঞ্জি আর প্লাজো পরে শুয়ে গেলো..রুমের মিউজিক বক্সের ভলিউমটা আরেকটু বাড়িয়ে দিলো..গান শুনলে মেজাজ তার ভালো হয়ে যায়,আজো তাই তাই করলো।।
ফারিশ অনেকক্ষন যাবত তার ম্যানেজারের অপেক্ষা করছে কিন্তু তার আসার নাম গন্ধই নেয়..ফোন করতেও ইগোতে বাধছে তার..রিচ এরোগ্যান্ট পারসোন যখন কারো প্রেমে হাবুডুবু খায় তখনই সমস্যা হয়।।
ফারিশ নিজের কেবিনের চেয়ারে পা উঠিয়ে ঠোটে এক হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে মোহর প্রতিবিম্ব টা সামনে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আজ চোখ বন্ধ করলে মোহর চেহারা ভেসে উঠছে না বরং সে যে কাওকে অন্ধকারে কাওকে হাতড়ে বেড়াচ্ছে এইটা দেখাচ্ছে।।
কেবিনের দরজাতে বারবার টোকা পরাতে ফারিশের ভাবনাতে ব্যাঘাত ঘটলো..টেবিল থেকে পা নামিয়ে,নিজের পায়ের উপর পা তুলে বসলো..ক্রিম কালারের শার্টে মনে হচ্ছে পুরাই মাখন হয়ে আছে।।
“কাম ইন!!” ফারিশ গম্ভীরমুখে বললো।।
দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো ম্যানেজার.. দেখে বুঝা যাচ্ছে যেন দৌড়ের উপর ছিলেন উনি।।
“গুড নুন স্যার” ম্যানেজার উইশ করে নিজের ঘাম মুছলো রুমাল দিয়ে।।
“ইয়াহ..সিট ডাউন” হাতের ইশারার মাধ্যমে বলে ফারিশ বলে উঠলো।।
ম্যানেজার বসে পরলো অনেক ইতস্ততভাবে।।
“যেটা জানতে বলেছিলাম জেনেছেন?” ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো ফারিশ।।
“হ্যা স্যার সব জেনেছি” ম্যানেজার উত্তর দিলো।।
“সো??স্টার্ট স্পিকিং? ” ফারিশ বললো
“স্যার মেয়েটার বিয়ে হয়ছিলো” ম্যানেজার একটু আমতাআমতা করে বললো।।
“বিয়ে?” একটু অবাক হলো ফারিশ
ম্যানেজার পুরো মোহর জীবনে পুরা ইতিহাস ফারিশের সামনে খোলা বইয়ের মতো খুলে দিলো।।
“স্যার মেয়েটি এতো ভালো যে এতো মার খায় তার সৎমায়ের কাছে কখনো কারো সামনে দুর্নাম করে না..বাপ তার থেকেও নাই..নিজের খরচে নিজে চলে..জীবিত লাশের মতো জীবন তার..বিয়ে আসে অনেক তবে সমাজে কিছু নিম্ন শ্রেনীর মানুষের জন্য আর হয় না..মেয়ের নাম কায়নাত আফ্রা মোহ..কোন ব্যাড রিপোর্ট পেলাম না তার” এক নিঃশ্বাস কথা গুলো ম্যানেজার বললো।।
ফারিশ সব শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছে..এতো কষ্ট নিয়ে সে বেঁচে আছে??রাগে তার মাথা ছিড়ে যাচ্ছে মোহর জীবন নিয়ে যারা খেলা করেছে তাদের উপর।।
“স্যার আপনি মেয়েটার খোজ নিলেন যে??মানে কি করবেন তাকে??” ভয়ে ভয়ে বললো ম্যানেজার।।
“সি উইল বি মিসেস ফাইজান ফারিশ ফাজ..নাও লিভ” চোখ মুখ শক্ত করে বললো ফারিশ।।
ম্যানেজার সুরসুর করে বের হয়ে গেলো..তবে তার মনে প্রশ্ন উকি দিচ্ছে যে এরকম সিম্পল মেয়ে তার উপর তালাক প্রাপ্ত মেয়ে এরকম ধনী লোক বিয়ে করবে??নাকি এক রাতের বিছানা সঙ্গী?
ফারিশের মাথার রগ গুলো মনে হচ্ছে ছিড়ে যাচ্ছে।।
“যেমন রুপে যেমনভাবে যেমনি হও না তুমি..এখন থেকে এই মুহূর্ত থেকে প্রতিটা ক্ষনে ক্ষনে প্রতিটা শিরাই শুধু তুমি ফাইজান ফারিশ ফাজের ..ফারিশের কায়নাত হবে তুমি..এখন থেকে যে তোমাকে একটা সেকেন্ডের জন্য কষ্ট দেয়ার কথা ভাববে তাকে আরো দশগুন বেশি কষ্ট দিব আমি”ফারিশ অনেক চোখ মুখ শক্ত করে বললো।।
” বি রেডি টু বি মাই ব্রাইড বেবি” বাকা হেসে মোহর নাম নিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো ফারিশ।।
মোহ বাসায় ফিরেছে..বাসায় ফিরতে না ফিরতে গালে আচমকা এক থাপ্পড় খেয়ে দরজার কোনাতে বারি খেয়ে ঠোটের এক পাশ কেটে গেছে…মোহ তার ঠোটে হাত দিলে বুঝতে পারলো কেটে গেছে অনেকখানি।।
“কাজ কি তোর মরা মা কবর থেকে এসে করে যাবে??এতো দেরী করলি ক্যান তুই??
মোহ ত প্রতিদিন এই সময় আসে,তাহলে এইভাবে মারলো কেন সে ভেবে পাচ্ছে না।।
মোহকে আরো কয়েক দফা মারলো,রিহান বাইরে খেলতে গেছে বিধেয় সেই সুযোগে আরো মেরেছে..তার বাবা টিভি অন করে চা খাচ্ছে।।
রিহান যখন বাড়িতে এসে শুনলো তার বোনকে মেরেছে,তার মাকে কয়েক দফা ঝাড়লো..ছোট হলেও সে মোহর কষ্ট নিতে পারে না।।
ব্যাথাতে মোহ বিছানায় পরে আছে..শক্তিটুকু নাই যে উঠবে।।
রিহানকে ঘরে বন্দি করে রেখছে ওর মা যেন বাইরে না বের হতে পারে।।
একদিন পার হয়ে গেলো মোহ জ্বর নিয়ে ব্যাথা শরীর নিয়ে পরে আছে.. সুপারশপে যেতে পারে নাই সে..না রিহান আসতে পারছে,না কেও মোহর সেবা করার জন্য আগাচ্ছে..মোহ তার এক মেয়ে কলিগ কে অনেক কষ্টে মেসেজ করে দিয়ে বলেছে তার অবস্থা ভালো না।।
ফারিশ পরের দিন যেয়ে সুপারশপে লোক দিয়ে খোজ নিয়েও মোহকে পায় নি..কি হলো তার??ফারিশ মোহর চিন্তাতে ঘেমে গেছে।।
এভ্রিল ঘরে আসলো..জিজ্ঞেস করছে,”কিছু হয়েছে তোমার এমন লাগছে কেনো তোমাকে??”
ফারিশ তার ফিলিংস,মোহর জীবন সব খুলে বললো।।
“আল্লাহ কি বলিস??আর এখনো তুই বসে আছিস??ওর সৎমা যেমন বললি,না জানি নিখোজ হওয়ার পিছনে উনি না থাকে..এক্ষুনি চল ওর বাসায়..এড্রেস জানিস ত??নাকি ভ্যাবলার মতো নাক মুখ ফুলিয়ে আছিস” এভ্রিল এক প্রকার জোরে বলে উঠলো।।
ফারিশ তার মাকে সাথে নিবে না বলছে কিন্তু তার মা জেদ ছাড়ছে না..শেষ নিজের মাকে বুঝিয়ে মোহর বাসার পথে রওনা দিলো।।
রিহান কোন রকমের জোর করে বের হয়ে মোহর অবস্থা দেখে ভয়ে এক প্রকার কেদে দিলো..ফর্সা শরীরে মারের দাগ কেমন ছোপ ছোপ হয়ে আছে।।
রিহান মোহর মাথায় জল পট্টি দিলো..ডাক্তার ত ডাকবে না তার মা বাপ নামে মানুষরুপি জানোয়ার গুলো।।
কলিংবেলটা বাজছে মোহদের বাড়ির..বিরক্তি নিয়ে সেলিনা বেগম খুললো।।
সামনে থাকা লোকটাকে দেখে উনার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো..মুখ দিয়ে গো গো করে একটা লাইন বের হলো,”এতো বড় আমেরিকার বিজনেসম্যান এখানে”
সেলিনা বেগম সবসময় এই সুন্দরের পূজার..নিজের বয়স টা ভুলে যায় অলওয়েজ..সারাক্ষন টিভি দেখার ফল এইটা উনি চিনতে পেরে গিয়েছে ফাইজান ফারিশ ফাজ কে।।
ফারিশ সেলিনাকে ক্রশ করে ভিতরে গেলো..সব রুমে খুজতে শুরু করলো মোহকে,আর সেলিনা বেগম তব্দা খেয়ে ফারিশের কাজ দেখছে।।
চলবে।