রঙধনু?
দ্বিতীয়বার
তৃধা মোহিনী(ছদ্মনাম)
পর্ব দুই
?
রাতেরবেলা,
দেরী করে পৌছাতে মোহর সৎমা নানান কথা শুনিয়ে ফেলেছে এখ।।
“কিরে কোন নাগরের সাথে লীলা করে আসলি যে এতোক্ষণ লাগলো আসতে??কলঙ্কিনী মেয়ে সব আমার সংসারে এসে অন্ন ধ্বংস করার জন্য এসেছে” এইভাবে রাগে গজরাতে গজরাতে আরো নানান কথা তিনি বলেছেন।।
“আহ মা চুপ করো ত..বিরক্ত লাগছে এখন” রিহান কিছুটা চিল্লিয়ে বললো।।
তার মা চুপ হয়ে গেলেও,আবার কিছুক্ষন পর যে স্টার্ট করবেন উনি এটা জানা কথা।।
মোহ অভ্যস্ত হয়ে গেছে এইসব শব্দ শুনে কিন্তু মাঝেমধ্যে খারাপ লাগাটা নাড়া দিয়ে উঠে।।
আজ রাতে ভাত দিবে না তার এই সৎ মা এইজন্য সে পানি খেয়ে নিজের ঘরে খেয়ে ঘুমোতে গেলো।।
ঘরে যেয়ে দেখলো টেবিলের এক পাশে কি ঢাকা আছে উঠিয়ে দেখলো ভাত রাখা আছে..চিরকুটে লিখা”ঝটপট খেয়ে ঘুমিয়ে যা আপু,প্লেটে ধুয়ে রেখে দিস..বেকুবের মতো রেখে দিস না”
চোখে পানি টলমল করছে রিহানের চিরকুট দেখে..হাত ধুয়ে মুখ ধুয়ে ঘুমিয়ে গেলো মোহ।।
রাত্রি ১২টা,
ফাজ পরিবার অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তার বড় সন্তানের কখন আসবে।।
তাদের অপেক্ষার বাসন ঘটিয়ে ফারিশ এক গাদা এটিটিউড নিয়ে হাটতে হাটতে আসছে..পরিবারের সবাই দেখে খুশিতে ডগমগ করছে।।
“এতাক্ষন কই ছিলি??ফ্লাইট ত কবে ল্যান্ড হয়েছে” এভ্রিল এগিয়ে এসে(ফারিশের মা)
“একটু ব্যস্ত হয়ে গেছিলাম দেশে এসে মা..এখন অনেক টায়ার্ড আমি..ফ্রেশ হয়ে ঘুমাবো” ফারিশ বললো নিজের শরীর থেকে জ্যাকেট খুলতে খুলতে।।
“হুহ!!ঢঙ দেখো” ফারিহা ভেঙচি দিয়ে বললো(ফারিশের বোন)
“উপরে যা যেয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ঘুমা” সুলেমান বললো(ফারিশের বাবা)
ফারিশ ফারিহার মাথাতে টোকা মেরে উপরে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।।
নিজের রুমে এসে ফারিশ ফ্রেশ হয়ে উদাম গায়ে বেডে শুয়ে পরলো উপুত হয়ে..কিন্তু যখনি চোখ বন্ধ করছে বাসের মেয়েটার মুখটা বারবার ভেসে উঠছে..কি জন্য ভেসে উঠছে সে নিজেও জানে না।।
“স্টপ কাম ইন টু মাই ড্রিমস” বিড়বিড় করে ফারিশ বলে ঘুম দিলো।।
সকালবেলা,
মোহর সুপারশপ ছুটি আজকে..সে সকালে এমনিতে তাড়াতাড়ি উঠে নাস্তা বানিয়ে ফেলে,আজো তাই নামাজ সেরে নাস্তা বানাতে বসে গেছে।।
নাস্তা সবাইকে খাইয়ে নিজে খেয়ে যখন পড়তে বসে আছে টেবিলে তখনি তার সৎমা তার ঘরে এসে মুখের উপর বাজারের ব্যাগ ছিটিয়ে দিলো।।
“জমিদারের মতো বাড়িতে না থেকে বাজার করে নিয়া আয়..খাচ্ছিস আর হাতির মতো ফুলছিস..শরীরে একটু হাওয়া বাতাস লাগা?” সেলিনা বেগম(সৎমা লিখতে বারবার ভাল্লাগেনা তাই নাম দিয়ে ফেললাম)
পড়া ছেড়ে উঠে পরলো মোহ,এমনিতে কাজের চাপে কোচিং যাওয়ার চাপে পড়া হয় না..আজ একটু সুযোগ পেয়েছে ত আজকেও কাজ করা লাগবে না..কি আর করা বেরিয়ে গেলো বাজার করতে।।
তিনদিন পর,
ফারিশ অস্থির হয়ে নিজের রুমে পায়চারি করছে..এতো অস্থির তাকে কোনকালে দেখা যায় নি..সিগারেটের কয়টা প্যাকেট যে শেষ করে ফেলেছে তার হিসেব নাই।।
“আমার আহার,নিদ্রা শান্তি সবকিছু ওই মেয়ে কেড়ে নিয়েছে..কেড়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে..তাকে এতো খুজলাম কিন্তু তার দেখা নাই..ইনভিজিবল নাকি??” রাগে হাত মুঠো করে কথাগুলো বলছে ফারিশ।।
ফারিহা ঘরে এসে দেখলো তার ভাই হাত মুঠো করে গ্লাস শক্ত করে চেপে বসে আছে।।
“ভাইয়া!! কি করছিস??হাত টা কেটে ফেলেছিস ত” ফারিহা আর্তনাদ দিয়ে বললো।।
ফারিশ তখনো স্থির হয়ে তাকিয়ে রয়েছে বাহিরের দিকে..তার এতোদিকে মন নাই।।
ফারিহা হন্তদন্ত হয়ে ফার্স্ট এইড বক্স খুজে এনে ফারিশকে টেনে এনিয়ে বসিয়ে হাতের রক্ত মুছে দিচ্ছে।।
“কি সমস্যা কি তোর ভাইয়া??তিনদিন হয়ে গেলো তোর আসা কিন্তু কারো সাথে সোজা মুখে কথা ত দূরে থাক..ঘর থেকে বের ও হস নি??কিছু হয়েছে তোর ভাইয়া” ফারিহা একটু নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলো।।
ফারিশ একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে, ফারিহাকে সেদিনের ঘটনা সব খুলে বললো.. এরপর তিনদিন খুজেও সে পায় নাই মেয়েটাকে এইজন্য মাথায় রক্ত চেপে বসে আছে তার।।
ফারিহা এতোক্ষন হা হয়ে কথাগুলো শুনছিলো আসলে তার কানটা মনে হচ্ছে তব্দা খেয়ে গেছে..নাকি নিজেরি মেমোরি লস হয়ে গেলো??যতটুক জানে তার ভাইয়ের স্বভাব সম্পর্কে সে ত কোন ভালোবাসা দূরে থাক..ভালোভাবে কারো সাথে সোজা ভাবে কথা বলবে তাও না..তবে একটু মনে মনে খুশি হলো এই ভেবে যে তার ভাইয়ের রাজত্বে অন্য কোন নারীর আগমন ঘটেছে।।
“দেখ আমার ভাল্লাগছে না..তুই যা পরে কথা বলবো তোর সাথে” ফারিশ কেমন অসহায় ভাবে কথাটা বললো।।
ফারিহা কি বলবে বুঝতে পারছে না..আসলে সে কখনো ভাবতে পারে নাই তার ভাই এমনে আছড়ে পরবে কোন মেয়ের জন্য।।
“ভাইয়া চিন্তা করিস না..যতটুক আমি বুঝছি,আল্লাহ যদি তোর মনের সহানুভূতির মাঝে পবিত্রতা খুজে পায় অবশ্যই উনি তোকে ওই আপুর সাথে মিলিত করাবে” এই বলে ফারিহা নিঃশব্দে ঘর ত্যাগ করলো।।
“তাকে আমার হতেই হবে..তাকে আমার না পেলে চলবে না..তিনদিনে আমার সবকিছু হারাম করে দিয়েছে,তাকে না পেলেয়া আমার নিঃশ্বাস নেয়াটাও দায় হয়ে পরবে” ফারিশ বাকা হেসে আবারো ম্যানেজারকে কল দিলো খোজ নেয়ার জন্য।।
বেলা ১২টা,
মোহ উত্তপ্ত রোদে দাড়িয়ে আছে কলেজের একটা ক্লাস জয়েন দিবে এইজন্য কিন্তু আজ রাস্তায় যেমন ট্রাফিক,ঠিক সেই লেভেলের গরম ও পরেছে..ঘামে পুরো মুখ ভিজে লাল হয়ে গেছে।।
অপরদিকে ট্রাফিকে আটকা পরে আছে ফারিশ..সামনে ড্রাইভার আর ম্যানেজার, পিছনে সে..বিরক্তিতে মুখ টা একদম বিষ হয়ে গেছে তার।।
“এই আপনি বের হয়ে দেখেন ত কি সমস্যা?? লাস্ট আধাঘন্টা ধরে বসে আছি এইভাবে..যতসব ফালতু এরিয়া” ফারিশ রাগে কথাগুলো বললো।।
মোহ দাড়িয়ে দেখলো এক পিচ্চি রাস্তার মাঝখানে নিজের হাতে পরে যাওয়া আইসক্রিম তুলছে..আশেপাশে কত গাড়ি কেও যদি ঠেলা মেরে দেয়..ভাবতেই বুক ধুক করে উঠলো তার।।
দ্রুত পদে পা বাড়িয়ে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিলো..বাচ্চাটা ছিলো ফারিশের গাড়ির সামনে,যখন মোহ বসা থেকে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে দাড়ালো.. ফারিশ ওই মুহূর্তে পাশের জানালা থেকে চোখ সরিয়ে সামনে গ্লাস ভেদ করে চোখ পরলো মোহর দিকে.. চোখ তাৎক্ষণিকভাবে আটকে গেলো..
“ঘাম যুক্ত মুখ এতোটা কি কারো মোহনীয় হয়?” ফারিশ ভাবছে..
“নাহ আর ভাবা যাবে না..যার জন্য আমার শান্তি গায়েব হয়ে গেছে সে দেখি আরামসে সেবিকা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে..সেদিন ভাবতে যেয়ে ওই উধাও” ফারিশ বললো
বাচ্চাটার মা মোহর কাছ থেকে তার নিজের কাছে নিয়ে ধন্যবাদ জানালো মোহকে।।
মোহ এখন রাস্তা দিয়ে হাটতে শুরু করে দিয়েছে বুঝছে হাটা ছাড়া উপায় নাই তার।।
মোহর চলে যাওয়া দেখে ফারিশ ম্যানেজারকে বললো,”ফলো হার..আই নিড ইচ এন্ড এভ্রি ডিটেইলস এবাউট হার..এন্ড আই মিন ইট..আজকের মধ্যে চায় আমার”
ফারিহা কলেজের ক্যান্টিনে বসে ফ্রেন্ডদের সাথে সিঙারা খাচ্ছে..মুখে পানি দিয়ে গিলতে যাবে, ওমনে তার এক ফ্রেন্ড গাল চেপে ধরে নিয়েছে..সামলাতে না পেরে ফারিহার মুখ থেকে পানি বের হয়ে গেছে..খুক খুক করে কেশে উঠলো।।
ফারিহা চোখ তুলে দেখলো তার সামনে একটা পুরুষ দাড়িয়ে আছে,রক্তিম চোখ নিয়ে..তার পরনে শার্ট টা ভিজা..বুঝতে পারলো তারই মুখের পানি উনার শার্টে।।
ফারিহা কটমট করে তাকিয়ে থাকলো ফ্রেন্ডদের দিকে,বেচারারা ও ভয়ে চুপসে গেছে..সরি বলতে যাবে,ওমনে ছেলেটা গ্লাসভর্তি পানি ফারিহা মাথায় ঢেলে দিলো।।
এমন ঘটনা আকস্মিকভাবে ঘটে যাওয়াতে সবাই দাড়িয়ে গেছে..কারন,তারা জানে ফারিহার বাবা এক কলেজের শেয়ারে আছে + পলিটিশিয়ান..কেও মজার ছলে হলেও ফারিহার গা ঘেষে না আর উনি পানি ঢেলে দিলো??
.”ইউকুয়াল নাও বেবি”বলেই ছেলেটি চলে গেলো।।
রাগে ফারিহার শরীর রি রি করে উঠছে..ক্যান্টিন থেকে বের হওয়ার আগে ড্রাইভারকে কল দিয়ে ডাকলো।।
ড্রাইভার আসাতে ফারিহা চটজলদি উঠে পরলো।।
“গাড়ি আমি চালাবো..আপনি এই যে টাকা নিন..ট্যাএক্সি ধরে বাসায় চলে আসুন” ফারিহা বলে গাড়ি নিয়ে উঠে পরলো।।
ফারিহা গাড়ি চালাচ্ছে..মাঠে দেখলো ওই ছেলেটা বাইকের উপর বসে ফ্রেন্ডদের সাথে হিহি করছে…বিনা অপরাধে তার গায়ে পানি ঢেলেছে..ভাবতেই মনে হচ্ছে সারা শরীরে কেও আগুন দিয়ে দিলো।।
ফারিহা দেখলো তারা যেখানে আড্ডা দিচ্ছে,ওখানে কিছু গর্ত হয়ে কাদা হয়ে আছে..জায়গাটা দেখে ফারিহা বাকা হাসলো..গাড়ি চালিয়ে সেখানে জোরে ব্রেক কষে কাদার উপর।।
ব্যাস কাদা যেয়ে ছিটে পরলো ছেলেটির গায়ে।।
ফারিহা নিজের গ্লাস নামিয়ে চোখে সানগ্লাস দিয়ে বললো,
“নাউ ইটস ইউকুয়াল বেবি”
ফারিহা বাকা হেসে গাড়ির গ্লাস উঠিয়ে চলে গেলো।।
ছেলেটি চোখমুখ শক্ত করে আছে..বুঝায় যাচ্ছে রাগে তার শরীর কেপে উঠছে বারবার।।
“ব্রো তুই ফারিহা ফাজকে চিনিস..ও তোর গায়ে এইভাবে কাদা ছিটালো কেন?” রবি(ফ্রেন্ড)
“চিনি না তবে চিনে নিবো খুব শীঘ্রই..আর নুহাস চৌধুরি কি জিনিস সেটাও বুঝাবো” এই বলে নুহাস গাড়ি নিয়ে নিজেও বেরি পরলো।।
চলবে?