রঙধনু পর্ব বারো( season02)

0
1877

রঙধনু?

দ্বিতীয়বার

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব বারো

?

বাড়িতে কেও আসার আগেই ফারিশ বাড়িতে চলে আসে,ঘরে এসে দেখে মোহ বারান্দায় ফুলের গাছগুলোকে নেড়েচেড়ে দেখছে..ফারিশ পা টিপে টিপে কোন আওয়াজ ছাড়াই মোহর কাছে যেয়ে,মোহকে পিছন থেকে ধরে ঘাড়ে মুখ ডুবালো।।

মোহ এক প্রকার ভয় পেয়ে অনেকজোরে চিৎকার দিলো..ফারিশ তখনি মুখ চেপে ধরলো।।

“হুসস!!ইটস মি বেবি?” ফারিশ ঘাড়ে মুখ রেখেই বললো।।

মোহর বুকের ভিতর এখনো ঢিপঢিপ করছে,শ্বাস উঠানামা করছে।।

“এইভাবে শ্বাস নিলে লোকে কি ভাববে বউ” ফারিশ কেমন শয়তানি হাসি দিয়ে বললো।।

ফারিশের এমন কথায় মোহর সারামুখ জুড়ে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।।

“আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম এইভাবে ধরাতে!!” মোহ বললো।।

ফারিশ মোহকে সামনে দিকে ঘুরিয়ে কোমর টাকে শক্ত করে চেপে ধরলো..গলায় একটা কামড় দিলো তবে ফিল করার মতো।।

“কারো সাহস আছে??কেও চোখ তুলেই তাকাক না কেন,একদম জ্যান্ত পুতে ফেলবো” মোহর গলাতে মুখ রেখে বললো।।

“ফ্রেশ হয়ে নেন?কি খাবেন বলুন?” মোহ ফারিশের এমন কাজে পানি পানি হয়ে কথাগুলো বললো।।

“এই যে তোমাকেই” ফারিশ কথাগুলো বলে মোহর ঠোটে নিজের ঠোট বসিয়ে দিলো,মোহ আবেশে চোখ বন্ধ করে ফারিশের ঘাড় খামচে ধরলো।।

ইউনিভার্সিটির ক্লাসরুম,

নুহাস যখন ফারিহাকে দাড় করালো বসা থেকে তখন ফারিহা মুখ নিচু ছিলো,মুখ তার অসম্ভব লাল হয়ে আছে কিছু বলতে পারছে না সে।।

“এমন লাল হও কেন?আমি কিন্তু স্ট্রবেরির ফ্যান,খেয়ে ফেলবো তোমাকে ওটা ভেবে” নুহাস শয়তানি হাসি দিয়ে বললো।।

ফারিহা এতোক্ষন কন্ট্রোল করতে না পেরে নুহাসের পায়ের উপর নিজের পা দিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে অনেক জোরে পারা দিলো।।

“আউচ ” বলে নুহাস পা ধরে বসলো।।

“চুমু খাওয়ার সাধ একদম মিটিয়ে দিব অভদ্র লোক” ফারিহা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,ততক্ষনে দরজা খুলে যাওয়াতে ধপাধপ পা ফেলে চলে গেলো সে।।

“ভাঙবে তবু মচকাবে না” নুহাস পা ধরেই বাকা হাসি দিয়ে কথাগুলো বললো।।

ফারিহা সোজা বাড়ি এসে গেছে,ভার্সিটিতেও তার মন টিকছে না..কান্নার দলা পাকিয়ে আসছে কিন্তু যখনি নুহাসের স্পর্শ মনে করছে তখনি কেমন অদ্ভুত শিহরণ জাগছে তার মনে,সুখের নাকি দুঃখের বুঝছে..চুমুর কথা মনে করতেই গায়ের লোম দাড়িয়ে যাচ্ছে।।

ফারিহা বাড়িতে এসে ব্যাগ বেডে ফেলে সোজা ওয়াশরুমে যেয়ে ঝর্না ছেড়ে দিলো,ঝর্নার পানি গুলো সারা শরীর বেয়ে পরছে তার.. পানি দিয়ে ঠোট ঘষলে,হাত থেমে যাচ্ছে এরকম কেন??নুহাসের চেহারা চোখ বন্ধ করলেই ভেসে আসছে।।

“আই ডোন্ট ওয়ান্ট ফল ইন উইথ হিম” ফারিহা ওয়াশরুমে দাড়িয়ে অনেক চিৎকার করে বললো।।

রাতেরবেলা,

সোফাই বসে আছে সবাই,সবাই প্ল্যান করতেছে যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে একটা গ্র‍্যান্ড রিসেপশন দেয়া উচিত,প্রেস মিডিয়া তাদের পলিটিশিয়ান+বিজনেস পার্টনার দের জানানো উচিত।।

মোহ এদিকে ভয় পাচ্ছে যে ডিভোর্সি ছিলো সে এতে তাদের সম্মানে ব্যাঘাত না ঘটে।।

“যা চিন্তা করছো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেও!!আমার কাছে তুমি ইম্পট্যান্ট,ওই সৎমায়ের দেয়া থার্ডক্লাশ পাস্ট না” ফারিশ দাঁতে দাঁত চেপে বললো কারন,সে এতোক্ষন খেয়াল করছিলো মোহর মুখের আকৃতি।।

সবাই বুঝতে পারলো যে ফারিশ কি বুঝিয়েছে।।

“তোকে বলেছিলাম না এইসব নিয়ে না ভাবতে??তুই আমার মেয়ে,ফাজ বংশ তোর পরিচয় আর কিছু ভাবা লাগবে না তোর” সুলেমান বললো।।

সুলেমানের এমন বিহেভিয়ার এভ্রিল আর ফারিহা প্রশান্তির হাসি দিলো,তার বাবা গম্ভীর হলেও অনেকবেশি ভালোবাসে তাদের আর মোহও যে তার মনে জায়গা করে নিয়েছে এটাও অজানা নয়।।

তাদের রিসেপশনের ডেট ঠিক হলো দুইদিন পর,এই দুইদিনে সবাইকে দাওয়াত দেয়া সব ডেকোরেশন করা,কেট্রিং কে জানানো সব করতে হবে..ফারিহা ভার্সিটির কথা ভুলে গেলো যে কি হয়েছিলো,ফ্রেন্ডদের দাওয়াত দিতে বিজি হয়ে গেলো।।

ফারিহা এসে এসে আগে সিম খুলে ফেলেছিলো যেন নুহাস কল না দেয়,ওয়াফাই ত আছেই সমস্যা হবে না।।

এভ্রিল আর ফারিহা মিলে আগে থেকে মোহর জন্য লেহেঙ্গা সিলেক্ট করে রেখেছিলো,আর ফারিশের জন্য স্যুট..ওটাও অর্ডার প্লেস করতে বলতে গেলো।।

এদিকে নুহাস ফারিহাকে যতবার কল দিচ্ছে অফ পাচ্ছে রাগে তার কান দিয়ে মনে হচ্ছে ধোয়া বের হবে..লাস্ট টাইম যখন দেখলো একই কেস,রাগে তার ফোন ছূরে ভেঙ্গে ফেললো।।

“যা করলা ঠিক করো নাই,তোমাকে পস্তাতে হবে!!ইউ হ্যাভ টু পে ফর দিস ফারিহা!” নুহাস চিৎকার করে বললো।।

দুইদিন পর,

পুরা ফাজ ম্যানশন ঝলমল করছে ডেকোরেশনে,হরেক রকমের কাজ মানুষ করছে,সবাই কত ব্যস্ত..সুলেমান এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে, তার মেয়ের বিয়ে বলে কথা..রিসেপশনে না হয় ফারুশের বাবা হবে,এখন মোহর বাবা সে।।

সকাল থেকে ফারিশের মোহর সাথে দেখা মানা কারন জানতে চাইলে তাকে জানানো হয় যে কনেকে হালকা একটু হলুদ ছোয়াবে তাই রিসেপশন ছাড়া দেখা পাবে না তার।

“হোয়াটস দ্যা!” ফারিশ অবাক হয়ে বলেছিলো।।

রাগে গিজগিজ করতে করতে ফারিশ ঘরে চলে গিয়েছে তখন।।

এদিকে মোহকে এতো সুন্দর করে হলুদ শাড়ি পুরাই বাঙালি স্টাইলে পরিয়ে দিয়েছে এভ্রিল,নিজেও পরেছে আর ফারিহাকেও পরিয়ে দিয়েছে..মোহর চুলে হালকা গাজরা দিয়ে খোপা,লাল লিপ্সটিক..দুই হাত ভর্তি হলুদ আর লাল চুড়িতে ভরা..দুই পায়ে পায়েল পরিয়ে দিয়েছে,গলায় হালকা নেকলেস ডায়মন্ডের..নতুন নথ ও পরিয়েছে এভ্রিল,যেভাবে একটা পুতুলকে সাজানো হয় মোহকেও তাই সাজিয়েছে এভ্রিল..সাজানোর শেষে এভ্রিল নিজের চোখের কাজল থেকে একটু কাজল নিয়ে মোহর ঘাড়ে দিলো যেন নজর না লাগে।।

এদিকে ফারিহাকেও সেইম ওয়েতে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে এভ্রিল,দেখতে তাকে আরেকটা পুতুল লাগছে..তার দুজন সেম শাড়ি শুধু কালার আলাদা,এভ্রিল ল তাই..তিন মা মেয়েকে শোপিসের পুতুল লাগছে।।

ফারিহা চোখ নিচু করে একটা স্টাইলিশ ছবি তুললো,ছবিটা মাত্র ইন্সট্রাগ্রাম থেকে ফেসবুকে শেয়ার দিলো..সব ছেলেরা এমনিতে তার উপর ক্রাশ খায়,এইটা দেখে আরো..সবাই উড়াধুরা কমেন্ট আর মেসেজ রিকুয়েষ্ট দিচ্ছে।।

নুহাস এদিকে নিউজফিড স্ক্রোল করতে যাবে ওমনিতে ফারিহার ছবি দেখলো একটা ছেলের কভারে,ক্যাপশনে লেখা,”লেডি ক্রাশ”।।

নুহাস তাৎক্ষণিকভাবে ফারিহার ওয়ালে গেলো দেখলো কিছুক্ষন আগে ছবি দিয়েছে,এমন ছবি দেখে নুহাসের মন গলে গেলেও,ওই ক্যাপশন দেখে মাথার রক্ত আবার গরম হয়ে গেলো..শোয়া থেকে বসে গেলো সে..হাত দিয়ে চুল মুঠ করে নিজেকে শান্ত করছে,এমনিতে দুইদিন ধরে ফোন বন্ধ,বাড়ির সামনে যেয়েও দেখা নাই তার,তারপর এমন ছবি দিয়ে ক্রাশ খেয়ে ছেলে মানুষরে মারার প্ল্যান..রাগ যে তার কত ডিগ্রিতে উঠেছে।।

“সারপ্রাইজ পাবে খুব শীঘ্রই!!” নুহাস বাকা হাসি দিয়ে,রক্তিম চোখ নিয়ে ফারিহা ছবির দিক্ব তাকিয়ে আছে যা নুহাসের ফোনে আছে।।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে