রঙধনু পর্ব পাঁচ (Season 05)

0
1936

রঙধনু?

দ্বিতীয়বার

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব পাঁচ

?

ফারিশ মোহকে নিয়ে বাড়ি পৌছালো,এভ্রিল অপেক্ষা করছিলো তাদের।।

ফারিশ মোহকে কোলে তুলে নিয়ে আসলো ভিতরে,এভ্রিল দেখলো তার ছেলের কোলে যে নারীটি আছে সে অচেতন অবস্থায় আছে।।

মেয়েটিকে দেখে এভ্রিলে বুক ধক করে উঠলো,কি বেরহম ভাবে মেরেছে তাকে..সে নিজে ডাক্তার তারপরেও আরো একটা এক্সপার্ট লেডি ডাক্তার আর নার্স আনলো বাড়িতে।।

ফারিশ নিজের রুমে যেয়ে অনেক সাবধানের সহিত মোহকে শোয়ালো তার বিছানায়,মোহকে শোয়ানোর পর ফারিশ এক ধ্যানে তাকিয়ে তার দিকে..এতো রূপবতী তার মোহ?

এরকম কোন মেয়েকে কেও মারা ত দূরে থাক,ফুলের টোকা দেয়ার আগে দশবার ভাববে..তার চোখের কোনে বারবার জল এসে জমছে, বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে মুছছে।।

এভ্রিল তার ছেলের কাধে হাত দিলো,ফারিশ চোখটা বন্ধ করে লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,

“মা ওকে আমার সুস্থ চাই..তোমার ছেলের নিঃশ্বাস তার মধ্যে..ওর যদি কিছু হয়,হয় আমি শেষ হবো নাহলে এই দুনিয়া!! আর ওর জ্ঞান ফিরলে বিয়ে করবো আমি,সবকিছু ব্যবস্থা করছি আমি..তুমি শুধু ওকে সুস্থ করো মা”

কিছুক্ষন থেমে ফারিশ তার মাকে সোফায় বসিয়ে আবারো বলা শুরু করলো,

“মা আমার মোহ কখনো মায়ের স্বাদ পায় নি তা মা মারা যাওয়ার পর..তাকে কখনো কেও ভালোবাসে নি মা..তোমাকে ত সব বলেছি মা..প্লিজ মা তুমি আমার মোহকে কখনো ফেলে দিও না..ওকে যে প্রচন্ড রকমে চাই মা..ও আমার সবকিছুতে অভ্যাসে পরিনত হয়েছে”

এভ্রিল তার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

“ফারিহা আর মোহর মধ্যে আমি কখনো পার্থক্য দেখবো কখনো এটা এভ্রিল সুলেমান ফাজের ওয়াদা তোর কাছে..তুই বলার পর থেকে ও আমার সন্তান হয়ে গেছে..ওর পরিচয় হবে ও ফাইজান ফারিশ ফাজের বউ..তার বাবা মা বলতে শুধু এভ্রিল আর সুলেমান থাকবে..ইভেন তুই কখনো ওকে ভুল ক্রমেও কথা বলিস যদি হার্ট করে তোকে ছাড় দিবো না আমি”

ফারিশ নিশ্চিত ছিলো তার মা কখনো মোহকে ফেলবে না..তার মায়ের কাছে সে সবসময় সবকিছুর ঊর্দ্ধে ছিলো।।

ফারিশ তার মায়ের কপালে চুমু খেয়ে নিচে গেলো কিছু ব্যবস্থা করতে।।

ফারিহা বাড়িতে এসে শুনলো তার ভাবীকে বাসায় এনেছে,হাতে থাকা ব্যাগ গুলো সোফায় রেখে হন্তদন্ত হয়ে ভাইয়ের রুমে ছুটলো সে।।

ফারিহা রুমে যেয়ে দেখলো তার মোহর শরীর দেখছে কোন জায়গাতে ক্ষত আছে কতখানি।।

এভ্রিল যখন মোহর পিঠ উল্টালো,মোটা কালসিটে দাগ দেখে ফারিহা বুকের উপর মনে হচ্ছে কোন ভারী কিছু চাপিয়ে দিয়েছে।।

“ওহ আল্লাহ!!” এইটা বলে মুখে হাত দিলো ফারিহা।।

এভ্রিল দেখলো ফারিহা এসেছে সে বললো জামা নিয়ে আসতে মোহর জন্য যে সে কিনেছে,সিম্পল আর হালকা জামা।।

ফারিহা জামা এনে দেয়ার পর,এভ্রিল আর ফারিহা মিলে তার জামা চেঞ্জ করে দিলো..এরই মধ্যে ডাক্তার আর নার্স হাজির হলো।।

“এরকম নির্যাতন কে করেছে??এইটা পুলিশ কেস ম্যাডাম” লেডি ডাক্তার এভ্রিলকে বললো।।

“আগে ট্রিটমেন্ট শুরু করুন,পরে এইসব দেখা যাবে” এভ্রিল বললো।।

ডাক্তার ট্রিটমেন্ট শুরু করলো..মোহর ক্ষতগুলোতে মলম ও দিলো…শরীরে যে পুষ্টির অভাব এটাও জানালো উনি..বিভিন্ন ইন্সট্রাকশন দিলো যা এভ্রিলের অজানা নয়,তারপরেও সে রিস্ক নিতে চায় না মোহকে নিয়ে।।

ইঞ্জেকশন পুশ করে দিলো,মোহ এখন ঘুমের দেশে তলিয়ে গেছে সকাল ছাড়া উঠবে না..স্যালাইন চলছে তার শরীরের।।

ফারিশ মোহর হাত ধরে বসে আছে,এভ্রিল পাশে এসে বললো।।

“কিছু খেয়ে নে??আগে নিজে খেয়ে সবল হ তারপর ওর জন্য ঢাল হয়ে দাড়িয়ে থাকিস” সুলেমান পিছন থেকে বলে উঠলো।।

“বাবা আ’ম অলরাইট” ফারিশ উত্তর দিলো।।

“আই নো ইউ আর মাই ব্রেভ সান!! বাট তোমাকে খেতে না দেখে তোমার মা কষ্ট অয়ায় তুমি জানো?” সুলেমান ফারিশকে বললো।।

ফারিশ খায় নি দেখে এভ্রিল ও খায় নি,ফারিহা এর মধ্যে হাজির।।

“বাহ!! আমি বাদে ফ্যামিলি ড্রামা শুরু?” ফারিহা ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো।।

এই সময় এর মধ্যেও ফারিশ হাসলো একটু ফারিহার কথা শুনে..ফারিহা তার ভাইয়ের হাত ধরে বললো,

“আমার ভাইকে ডেয়ারিং মানায়!!এমন ল্যাদা প্যাদা না??আর তুই আমাদের জান,আর ও(আঙ্গুল দেখিয়ে মোহর দিকে) তোর জান..কিন্তু তুই ভাববি ও আজ থেকে আমাদের ও জান..ফারিশতা ফারিহা ফাজের বোন হিসেবে আমি তাকে দেখবো??তাকে কখনো এক চুল কষ্ট পেতে দিব না,তুই ওর জীবনের কালি মাখা দিন গুলোকে রঙধনুর মতো রাঙিয়ে দে” ফারিহা চোখ টলমল করছে।।

মোহকে দেখে তারাও যে তার মোহে পরে ফারিশের মতো বাকি সবাই উইক হয়ে পরবে ওর উপর কে জানতো..আসলে আল্লাহ আছেন বলে,মোহর কপালটা এবার ঘুরলো..কিন্তু মোহ সে কি করবে জ্ঞানে ফিরে??

“আমার ফোন কিনে দে ভাইয়া” ফারিহা বলে উঠলো চোখ মুখে।।

“ফোন?তোকে কিনে দিলাম না তোর কিছুদিন আগে তোর লাস্ট বার্থডে তে?” ফারিশ ভ্রু কুচকে বললো।।

“ওইটা এক ইতর বেয়াদব ইবলিশ নামক এক প্রানী ভেঙ্গে ফেলেছে” ফারিহা নাক ফুলিয়ে বললো।।

“আমি যতদূর জানি আমার ফারিহা কাওকে এইভাবে বলে না?..কি করেছে তোর?” এভ্রিল এতোক্ষন সবার কথা চুপ করে শুনছিলো।।

“মা বাদ দাও…নট ইন্টেরেস্টেড টকিং এবাউট হিম” ফারিহা বিরক্তি সুরে বললো।।

“তাহলে দুইটা অর্ডার দিস..কালকে সকালে পেয়ে যাবি..একটা মোহ আরেকটা ফারিহার জন্য” সুলেমান বললো।।

“ইয়াহ!!” ফারিশ ফোনে জানিয়ে অর্ডার দিয়ে দিলো দুইটা ফোন।।

এভ্রিল সবাইকে তাড়া দিলো ঘুমানোর জন্য কিন্তু ফারিশ মোহকে ছাড়বে না,ও ঘুমাবে মোহর সামনে।।

“ভাই!! আমি থাকছি তুই যা?আই প্রমিস,কিছু সমস্যা হইলে তোকে ডাকবো!!” ফারিহা বললো।।

ফারিশ তারপরেও শুনছে না সে মোহর পাশে বালিশ রেখে শুয়ে পরলো,এভ্রিল আর সুলেমান হাল ছেড়ে আগেই চলে গিয়েছে।।

ফারিহা যখন দেখলো তার ভাই যাবে না মানে যাবে না।।

“তোর ফোন দে যাবি না ত?” ফারিহা ভ্রু কুচকে বললো।।

“আমার ফোন?ভুলেও না” আইপ্যাড আসে নিয়ে যা” ফারিশ বলে মুখ বালিশে গুজলো।।

ফারিহা আইপ্যাড নিয়ে চলে গেলো।।

ফারিশ দরজা লক করে,তার মোহকে দেখছে..মাঝেমধ্যে একটু করে ছুয়ে দিচ্ছে।।

মোহর ঠোটের দিকে তাকালে তার রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে,ঠোট ফুলে আছে কিভাবে??”

মোহকে দেখে তার বারবার একটা কথা মনে হচ্ছে,”এই যে নারী তার সামনে আছে,এর মধ্যে তার অন্ধকার জীবনে ছোট একটা আলোর প্রদীপ নিয়ে এসেছে..যার আলোর তেজ অনেক..এই আলোতে তার অন্ধকার জীবনে আলোতে পরিনত হয়েছে..এই আলোকে কখনো নিভতে দিবে না সে”ফারিশ এইসব ভাবছে আর মোহর দিকে তাকিয়ে আছে।।

চৌধুরী বাড়ি,

“গাড়ি ভাঙলি কিভাবে বাপ?” সিরাজ বললো(নুহাসে বাবা)

নুহাস হাত মুঠ করে বসে আছে,কি বলবে সে?? শুরু ত আজকে সে করেছিলো, সেদিনের রাগের বশে কিন্তু সে নিজের হার মানতে নারাজ।।

“থাক আর জিজ্ঞেস করো না??আমি জিজ্ঞেস করেও উত্তর পায় নাই!! গাড়ির দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে কে ওর উপরে রাগ তুলেছে” সুমি বললো(নুহাসের মা)

“মা আমার খিদে পেয়েছে?প্রশ্ন শেষ হলে খেতে দিবা কি?” নুহাস বললো।।

“আয় বাবা!! আমি কিছু বলেছি তোরে?” সুমি বললো।।

নুহাস ধপাধপ পা ফেলে উপরে গেলো, নিজেরে ফ্রেশ করে চেঞ্জ করতে।।

নুহাসের বাবা মা ছেলের এই রাগী ব্যবহার নিয়ে চিন্তিত..রাগলে একদম কেমন হয়ে যায় তার ছেলে,যারে তারে অপমান করে দেয়।।

“কোন মেয়ে যে আছে তোমার ছেলের কপাল” সিরাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো।।

“আছে ত অবশ্যই!! আমার ছেলে যদি বোম হয়,যে আমার ছেলের বউ হবে সে হবে বারুদ..আমার ছেলে তাকে এক ধমক দিলে,ওই মেয়ে আরেক দশ ধমক দিবে..আমার ছেলে একগুন ট্যারা হলে,ওকে সোজা করার জন্য আমার বউমা দশগুন ট্যারা হবে” সুমি বললো।।

“এখন বুঝছি তোমার ছেলে এরকম কেন?..মা ছেলে দুটোই এক” সিরাজ বিড়বিড় করে বললো

“শুনতে পেয়েছি তোমার বিড়বিড়িয়ে বলা কথা!! কাল থেকে সকালে উঠে নিজে চা বানাইয়া খাবা,আমারে বললে খবর আছে!!” সুমি রেগে বলে চলে গেলো ওখান থেকে।।

“আরে আমি কি করলাম??” সিরাজ ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললো।।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে