রঙধনু?
দ্বিতীয়বার
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
পর্ব দশ
?
রাতেরবেলা,
মোহ আর ফারিশ বাড়ি ফিরেছে,সেই ভাবে ওয়েলকাম করলো পুরো ফাজ ফ্যামিলি..সবাই অনেক খুশি মোহ আর ফারিশের বিয়ের কথা শুনে..শুধু একজন মুখ গোমড়া করে বসে আছে, ফারিশেএ ফুফু..উনাকে কলে জানানোর পর থেকে উনার মুখ ভার হয়ে আছে,উনার বহুদিনের ইচ্ছা উনার দেবরের মেয়ের সাথে ফারিশের বিয়ে দিবে কিন্তু এদিকে ত ফারিশ নিজেই মোহকে বিয়ে করে নিয়েছে।।
মোহকে এভ্রিল নিজের রুমে যেয়ে একটা লাল টুকটুকে শাড়ি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,”পরে আসো তুমি”
মোহ চুপচাপ যেয়ে ১০মিনিটের মাঝে পরে আসলো..অবাক করা বিষয় ব্লাউজ টা একদম ঠিকঠাকভাবে হয়ে গেছে মোহর..মোহ বের হওয়ার পর এভ্রিল তাকে দেখে,কপালে চুমু একে দিলো..হাতে সিম্পল ডিজাইনে চুড়ি পরালো যেন ব্যাথা বা বাধা না লাগে জামাতে,নথ পরালো যেহেতু নাক আগে থেকে ফুটা ছিলো পরাতে সমস্যা হয় নি,কানের দুল পরালো টপ গুলা,আর চেইন পরালো মাঝখানে ডায়মন্ডের পাথর লকেটে..এইসব কিছু এভ্রিল আর সুলেমান নিজে অর্ডার দিয়ে এনেছে,যেন সবসময় মোহ পরতে পারে..স্বর্নের তৈরী সবকিছু মোহর গায়ে কেমন ঝকঝকে করছে।।
এইসব ড্রেসাপে মোহকে পাক্কা গিন্নি লাগছে..এভ্রিল চিন্তা করলো আজ শাশুড়ী বউ মিলে রান্নাঘরে যেয়ে রান্না করবে..যেমন ভাবা তেমন কাজ..দুজনে গেলো।।
এদিকে ফারিশ অনেকক্ষন যাবত মোহকে দেখতে না পেয়ে,পায়চারি করছে রুমের ভিতর..ফারিহা কিছু জিজ্ঞেস করলে তার টের্যা জবাব আসছে,বুঝতে তার মুড প্রচুর খারাপ।।
নিচে গেলো ফারিশ,বাবার কাছ থেকে শুনলো তারা শাশুড়ী বউ মিলে আজ রান্না করছে.. কিচেনের দিকে এগোলে,এভ্রিল দেখতে পেয়ে বাধা দেয়..ফারিশ ওর মায়ের দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়।।
“জেন্ট নট এলাউড সান!!” এভ্রিল বলে ভিতরে গেলো।।
ফারিশ নাক ফুলিয়ে তার বাবার কাছে আসলো।।
“বলি কফি কি পাবো না আজকে?” সুলেমান মোবাইলে চোখ রেখে বললো।।
“টেবিলে রাখা হয়েছে পাঁচ মিনিট আগে বাবা..চোখ কই থাকে তোমার?” ফারিহা মোবাইলের দিক্ব তাকিয়ে জানান দিলো।।
“উপস!!আই ডিড নট সি” সুলেমান বলেই,কফি হাতে নিয়ে চুমুক দিলো।।
ফারিশের এদিকে সময় কাটছে না মনে হচ্ছে..এভ্রিলের কল আসাতে,সে একটু কিচেন থেকে বের হতেই..ফারিশ টুপ করে কিচেনের দিকে এগোলো..ফারিহা দেখেও কিছু বললো না,হাসছে মনে মনে।।
মোহ শাড়ি কোমরে গুজে,পিয়াজ চপিং বোর্ডে কাটছে..খোপা করা চুল,সামনে কিছু চুল ঝুলে আছে..কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম,হাত দিয়ে মাঝেমধ্যে মুছছে..রান্নার গন্ধে চারিদিক মৌ মৌ করছে..ফারিশ মোহর এমন রুপ দেখে নিজের যে কয়েকটা হার্টবিট মিস হলো সে বুঝতে পারছে।।
ধীর পায়ে ফারিশ মোহর কাছে যেয়ে পিছনদিক থেকে জড়িয়্ব ধরলো,আচমকা স্পর্শের আক্রমনে মোহ লাফিয়ে উঠলে,ফারিশ আরো শক্ত করে ধরে..ঘর্মাক্ত ঘাড়ে মুখ ডুবালো ফারিশ,মোহ শিউরে উঠে চাকুটাকে আরো শক্ত করে ধরলো।।
“এই ঘামেও মাদকতা কাজ করছে আমার উপর” ফারিশ ঘাড়ে মুখ রেখেই ঘোর লাগা কন্ঠে বলে উঠলো।।
মোহ বোবা বনে গেছে,সরতে পারছে না আর সরাতেও পারছে না।।
এভ্রিল আসার শব্দ শুনে ফারিশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে মোহর ঘাড়ে একটা কামড় দিয়ে চলে গেলো..আর বেচারি মোহ দাড়িয়ে ঘাড় ডলছে,বুঝে না কেন সে এখন এই দাগ দেখলে কেও যদি কিছু জিজ্ঞেস করে??
ডাইনিং এ সবাই বসেছে,মোহ সবাইকে দাড়িয়ে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে..মেন্যুতে ছিলো চিকেন রোস্ট,প্লেইন পোলাও,গরুর ভুনা,টিক্কিয়া আর বিভিন্ন রকমের ভর্তা..পোলাও এভ্রিল করেছে বাকি সব মোহ নিজে করেছে এভ্রিলকে করতে দেয় নি..সার্ভ করা শেষে মোহ দাড়িয়ে থাকলে,ফারিশ টেনে চেয়ারে বসায়..সবার সাথে খেতে বলে তাকে..মোহর এক পায়ের উপর ফারিশ পা তুলে দিয়েছে টেবিলের নিচ দিয়ে আর মোহর আরেক হাত ধরে আছে,এরকম অস্বস্তি খাবার খেতে পারছে না সে..ফারিশ যখন ছাড়লো হাত কিন্তু পা সরায় নি,চোখের ইশারায় বুঝালো আরামে খেতে এখন তাকে।।
ফারিহা খাবার খেয়ে এতোবেশি ইমপ্রেস হয়েছে যে সে খাওয়া শেষে মোহর গালে চুমু দিলো।।
“আমার অধিকার এমনে হন্য করিস তুই” ফারিশ বিরক্তি নিয়ে বললো।।
“বেশি বললে ভাবীকে নিয়ে আজকে আমার ঘরে ঘুমাবো উইথ ফুল সেফটি চাইলেও রুমের দরজার এক্সট্রা চাবি দিয়েও আসতে পারবা না” ফারিহা মুখ ভেঙচি দিলো।।
সবাই ভালো প্রশংসা করলো মোহর রান্নার,মা মারা যাওয়ার পর ছোট থেকে রান্নাঘরে যেতে সে ব্যস্ত থাকতো,কত যে হাড়ির পাতিল ধরতে যেয়ে পুড়ছে,কতবার পায়ে গরম পানি তার সৎমা ইচ্ছা করে ফেলেছে হিসাব নাই।।
সুলেমান ১০হাজাত দিলো মোহর উপহার হিসেবে,ফারিহা চুমু দিয়ে তার পাওনা মিটালো।।
সবাই যে যার মতো খেয়ে রুমে গেলো,মোহ রুমে আসতেই ফারিশ তাকে আলমারীর সাথে ধরলো..মোহ চোখমুখ খিচে রইলো।।
“সবাই সবকিছু দিলো,আমার কাছে চাইবে না কিছু?” ফারিশ মোহর কপালে ঠোট রেখে জিজ্ঞেস করলো।।
“আল্লাহ আমাকে আপনাকে দিয়েছে,যা আমার শ্রেষ্ঠ পাওনা আর কিছু চাই না” বেশ কিছুক্ষন পর জবাব দিলো সে।।
“কিন্তু আমি ত দিতে চাই?” ফারিয়া বাকা হেসে বললো।।
মোহ ইশারায় বুঝালো কি।।
“টুইন বেবি” ফারিশ মোহকে বলে ঠোটে ঠোট আবদ্ধ করে দরজা লক করে বেডে যেয়ে নিজের ফ্যামিলি প্ল্যানে ব্যস্ত হয়ে পরলো।।
ফারিহা এদিকে ফেসবুকে বিভিন্ন মীম দেখছে আর হাসছে,একটা আননোন নাম্বার থেকে বেশ কয়েকবার কল আসছে তার কাছে..বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করে রেগে বললো,
“এই কোন বাল আপনি, এতো রাতে অপরিচিত মেয়েকে ডিস্টার্ব করেন?”
ফারিহার এমন বিহেভিয়ারে অপরপাশে ব্যক্তিটি রেগে গেলো খুব।।
“শাট আপ ইউ ইডিয়ট!!কিভাবে কথা বলে শিখেছো এইগুলো” ব্যক্তিটি বললো।।
“ইউ আর ইডিয়ট!!ফোন নিজে দিয়েছেন,আমি কি বলেছিলাম দিতে” ফারিহা আরো দ্বিগুন জোরে বললো।।
ব্যক্তিটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বুঝলো এই মেয়ে ঘাড়ত্যাড়া খুব।।
“না ঘুমিয়ে প্রতিদিন রাতে এইভাবে মীম শেয়ার দেয়া ছাড়া কাজ নাই?” ব্যক্তিটি বললো।।
“তাতে আপনার কি হু??আমার ফোনে,আমার ওয়াইফাই,বিল আমার বাপের..ফেসবুক আমার,আমার আঙ্গুল,আমি শেয়ার দিলে আপনার কি যায়?” ফারিহা চিল্লিয়ে বললো।।
“এতো জোরে চিল্লাও কেন???মেয়ে মানুষ একটু আস্তে কথা বলবা” ব্যক্তিটি বিরক্তি নিয়ে বললো।।
ফারিহা এইটা শুনে খট করে ফোন কেটে ফ্লাইট মোড করে দিলো..মেজাজ চরম খারাপ তার,ফোন চার্জে দিয়ে ঘুম দিলো সে।।
অপরপাশে ব্যক্তিটি ফোন দিয়ে না পেয়ে,কপালের রগ তার ফুলে উঠেছে..এই মেহে এরকম কেন??ব্যক্তিটি আর কেও না নুহাস ছিলো।।
নুহাস ফারিহাকে ফোন দিয়ে এতো উদ্ভট বিহেভিয়ার পেলো..দীর্ঘশ্বাস ফেলে বালিশে মুখ গুজলো নাক ফুলিয়ে।।
চলবে?