রঙধনু?
দ্বিতীয়বার
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
পর্ব ছয়
?
মোহ হালকা টিপটিপ করে চোখ খুলছে কিন্তু মাথাটা মনে হচ্ছে প্রচন্ড ভার লাগছে তার কাছে।।
চোখ খুলে আশপাশে দেখে মনে হলো সে কোন নতুন পরিবেশে এসে পরেছে,হকচকিয়ে গেলো পাশে একটা মেয়ে তাকে ড্যাবড্যাব করে দেখছে।।
“স্যার!!” কিছুটা চিৎকার দিয়ে ডাকলো সামনে থাকা মেয়েটা।।
মোহ হকচকিয়ে গেলো,একে ত সে জানে না কোথায় আছে দুই এই মেয়েটার চিৎকারে।।
মেয়েটির আবারো চিল্লিয়ে বললো,”স্যার সুন্দরী আফা উঠে গেছে নি..জলদি আহেন”
মোহ ভাবছে মেয়েটার বারনার চিৎকার দিয়ে কাকে ডাকছে,আর আমি এই বাড়ির মধ্যে ঢুকছি কেমনে এই ভেবেই মাথা ঘুরতেছে,মোহ তার মাথা ধরে সোফায় বসলো..কেমন যেন ভনভন করতেছে মাথাটা।।
“এতো শাউট করোস ক্যানো ঝুমা?” একটা ভারী কন্ঠস্বরের আওয়াজ পেয়ে মোহ চোখ তুলে উপরে তাকালো।।
মোহ দেখলো একটা সুদর্শন পুরুষ মেয়েটিকে বকছে,থ্রি কোয়ার্টার প্যান্টে,এশ কালারের টিশার্ট।।
মোহর মাথা চেপে ধরলো আবার,কেমন যেন করতেছে মাথাটা।।
“দেখ তোর জন্য ওর মাথা ধরে বসে আছে..যা নিচে” ফারিশ তখন ছুটে এসে ঝুমাকে এইসব বললো..সেই ঝুমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলো যেন মোহ উঠলে নিচে যেয়ে খবর দেয়,কিন্তু তার আগে সে চিল্লিয়ে পুরা বাড়ি মাথায় তুলেছে।।
“তুমি ঠিক আছো” ফারিশ কাছে মোহকে ধরলে,মোহ ছিটকে দূরে সরে ভয়ে..চিনে না জানে না,অজানা বাড়ির অজানা জায়গাতে,অজানা পুরুষ এসে তাকে ধরছে।।
“কোথায় ব্যাথা করছে বলো আমাকে??মা” ফারিশ তার মাকে চিল্লিয়ে ডাকছে,আর মোহ মাথায় আসছে না কেন সে এরকম করছে??সে কি চিনে তাকে?
এভ্রিল দৌড়ে উপরের আসলো,দেখলো মোহ ফারিশকে ভয় পাবার কারনে তার থেকে দূরে কোনে চুপটি মেরে বসে আছে।।
এভ্রিল মোহর অবস্থা বুঝতে পেরে, ফারিশকে ইশারায়া শান্ত হতে বলে কিন্তু ফারিশ অস্থির হয়ে গেছে মোহর অবস্থা দেখে।।
“মা ওর মাথায় পেইন হচ্ছে মেবি,দেখো ত??কেমন করে ধরে বসে আছে” ফারিশ অস্থির গলাতে বললো।।
এভ্রিল দেখলো সে শান্ত হচ্ছে না, তখন পারতে সুলেমানকে ডাকলো সে।।
সুলেমান বের হচ্ছিলো কাজে,এভ্রিলের ডাকে উপরে আসলো..এভ্রিল ইশারায় ফারিশকে নিচে নিয়ে যেতে বলছে কারন ফারিশের এমন অস্থিরতা দেখে মোহর উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে, মোহর কাছে এই পরিবেশ আর মানুষ দুটোই অজানা।।
সুলেমান নিয়ে গেলো কোনরকমে ফারিশকে নিচে।।
এভ্রিল মোহর কাছে যেয়ে তার মাথায় হাত বুলালো..মোহ একটু দূরে সরলো ভয়ে।।
“হেয় হানি,ইটস মি!! ডোন্ট স্কেকায়ার্ড!! হুসস” মোহকে এইভাবে শান্তনা দিয়ে এভ্রিল বুকের মধ্যে তাকে চেপে ধরলো।।
মোহ ও আশ্রয় পেলো বহুদিন বাদে,মায়ের স্নেহের পরশ হালকা অনুভব করলো এভ্রিলের কাছে।।
এভ্রিল মোহর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলছে,
“আমার মামনীকে এখন আমি নাস্তা খাইয়ে দিব আর দুই মা মেয়ে মিলে গল্প করবো..ঠিকাছে?”
মোহ হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো।।
এভ্রিল ঝুমাকে ডেকে নাস্তা আনালো,ঝুমার সাথে মোহর পরিচয় করিয়ে দিলো..মোহ মিষ্টি করে হাসলো।।
ঝুমা একটু খাটো তবে দেখতে সুন্দর অনেক শ্যাম বর্নের হলেও।।
এভ্রিল মোহকে খাওয়াচ্ছে আর এটা সেটা গল্প করছে,মোহ মনে হচ্ছে তার মায়ের সাথে কথা বলছে..আচ্ছা সব মায়েদের শরীর থেকে কি মিস্টি মিস্টি ঘ্রান আসে?
জ্ঞান হবার পর থেকে মোহর কপালে মার ছাড়া কিছুই পায় নাই,এভ্রিলের কথাতে সে মনে হচ্ছে তার মা পেয়েছে।।
“এখন কিছু কথা বলি তুমি মন দিয়ে শুনবে ঠিকাছে” এভ্রিল মিস্টি করে হেসে বললো।।
মোহ ও একটু হেসে বললো।।
“যে ছেলেটা তোমার জন্য অস্থির হয়েছিলো না সকালে??ঝুমাকেও বকলো??সেইটা আমার ছেলে ফাইজান ফারিশ ফাজ” এভ্রিল বললো।।
এভ্রিল শুরু থেকে শেষ অব্দি অনেক গুছিয়ে বুঝিয়ে মোহকে সমস্ত কথা বললো..তাকে কিভাবে চিনে,তার সৎমায়ের আচরণ সবকিছু..বাড়ির সবাইকে তাকে কিভাবে চিনে ফারিশের চিন্তা,অস্থিরতা সবকিছু খুলে বললো সে।।
সবকিছু শুনে মোহর চোখে পানি এসে গেলও আর সে ভাবছে কেও কাওকে কখনো এতোবেশি ভালোবাসতে পারে??কাওকে এতোটা চাইতে পারে যে তার জন্য সমস্ত দুনিয়ার সাথে লড়ায় করার জন্য প্রস্তুত হয়ে পরে??
“কিন্তু মা আমার জীবনে অনেকবড় দাগ আছে,আমি যে ডিভোর্সি ” মোহ কাদতে কাদতে বললো।।
“হুসস!! তোর পরিচয় হবে শুধু আজ থেকে একটাই যে তুই ফাজ বংশের পুত্রবধু” এভ্রিল মোহকে বললো।।
মোহ এতো খুশি পেয়ে মনে হচ্ছে,আল্লাহ তার উপর মুখ তুলে চেয়েছে..তার ভাগ্যে মা, বোন, বাবা আর এই ব্যক্তিটি তার কপালে দিয়েছে।।
দ্বিধা,সংকোচ,ভয় আর অনেককিছু একসাথে এসে ভিড় খাচ্ছে মোহর মনে..তার ছোট ভাই রিহানের কথা বেশ মনে পরছে তার।।
এভ্রিল চলে যাওয়ার পর,মোহ গোসল করে বের হলো…এভ্রিল তার জামাগুলো আলমারিতে সাজিয়ে দিয়ে গেছে।।
চুল মুছছে মোহ আর এক ধ্যানে সামনে থাকা গোল একুরিয়ামের একটা গোল্ড ফিশের দিকে তাকিয়ে আছে,মাছ টা শুধু এদিক সেদিক নাইচা বেড়াচ্ছে।।
ফারিশ নিচে থাকতে না পেরে উপরে আসলো,উপরে এসে মোহকে কমলা রঙের জামাতে দেখে তার উপর দুধে আলতা রঙ, সৌন্দর্য উপচে পরছে।।
পিঠের মারের কালসিটে দাগ গুলোও বুঝা যাচ্ছে,ফারিশ আস্তে আস্তে মোহর পিছনে গিয়ে দাড়ালো।।
মোহ ঘুরতে যেয়ে ফারিশের নাকের সাথে নিজের নাকের ধাক্কা খেলো।।
মোহ নাকে হাত দিয়ে চোখ তুলে তাকালো,দেখলো সকালের ছেলেটি এটা।।
ইনি মায়ের ছেলে ফারিশ,মোহ চোখ নিচু করে মাথা ঘুরিয়ে সরতে গেলে ফারিশ মোহর কোমর টেনে তার দিকে ঘুরিয়ে,কোমরে চাপ দিয়ে মোহকে একটু উপরের দিকে তুলে।।
মোহ এই প্রথম কোন ছেলের স্পর্শ পেয়ে কেমন যেন আতকে উঠেছিলো কিন্তু নিজের শরীরের শিরা উপশিরায় যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিহরণ বয়ে যাচ্ছিলো সেটাও সে বুঝতে পারছিলো।।
“অনেক হয়েছে ঘুরাঘুরি আর না?এখন থেকে তোমার স্বশরীরের, তুমি সহ সর্বক্ষন আমার কাছে উপস্থিত থাকবে..আর হ্যা প্রথম যদিও আমি তোমার কাছে নতুন মানুষ তবুও একটা কথা ক্লিয়ারলি শুনে তোমাকে এই যে ধরেছি সেটা ছাড়ার জন্য নয়,কেও এইটা ছাড়ানোর চেষ্টা করলে বা তুমি চেষ্টা করলে(মোহর ঠোটে বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে ঠেকিয়ে) নেক্সট আর চাঁদ মা আর সূর্য মামাকে দেখতে পাবে না”ফারিশ মোহর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে কথাগুলো বললো।।
” নিচে চলো”ফারিশ মোহর মুখে ফুউ দিয়ে হাত ধরে নিচে টানতে টানতে নিয়ে গেলো।।
লিভিংরুমে,
ফারিশ আর মোহ যখন নিচে নামলো তখন দেখলো,মোহর সৎমা আর বাবা ঢুকছে গার্ডের সাথে জোরাজুরি করে।।
ফারিশ চোখের ইশারায় ঘাড় বেকিয়ে গার্ডদের বাধা দিতে না করে তাদের।।
“যান অসভ্য লোক” গার্ড বিড়বিড় করে বললো।।
মোহ ওর সৎমাকে দেখে লাস্ট মারের কথা মনে পরতেই ফারিশের পিছে লুকিয়ে পরে,আর তার হাত দিয়ে ফারিশ দুই হাত খামচে ধরে থরথর করে কাঁপছে।।
এভ্রিল বুঝতে পেরে ফারিশকে সামনে আগাতে ইশারায় আর উনি মোহর হাত শক্ত করে ধরে,এভ্রিলকে এক হাত মোহ অনেক শক্ত করে ধরে আছে ও ভাবছে আজ আবার ওকে নিয়ে যেয়ে মনে হয় মারবে।।
ফারিশের চোখ স্থির দৃষ্টিতে এখনো তাদের দিকে,হেটে হেটে সোফায় বসলো পায়ের উপর পা তুলে।।
“ত?কি চায় এখানে??এখানে কোন ত্রান বিতরণ কিংবা টাকা ছিটানো হচ্ছে না যে আপনারা আসছেন” ফারিশ বাকা ভাবে উত্তর দিলো।।
সেলিনা আর তার স্বামীর মুখ অপমানে লাল হয়ে গেলেও দাঁত মুখ খিচে বললো,
“আমাদের মেয়ে তুলে এনে গুন্ডামি করে,আমাদের অপমান করেন আপনি?” মোহর বাবা বললো।।
“কে আপনার মেয়ে?” ফারিশ একটু থেমে বললো।।
সেলিনা কারো তোয়াক্কা না করে মোহকে এভ্রিলের পিছন থেকে টানতে যাচ্ছিলো,খবিশ মহিলার নখ বড় হওয়ার কারনে,মোহর হাত ধরে টানাতে আচড় কেটে দিলো।।
“আহ!!” মোহ ব্যাথাতুর আওয়াজ।।
এভ্রিল সাথে সাথে সেলিনাকে এক থাপ্পড় মেরে বসলো..সেলিনা এক থাপ্পড় খেয়ে নিচে তব্দা খেয়ে বসে পরলো।।
“সাহস ত কম না??আমার মেয়েকে আমার সামনে আঘাত দেন??বের হোন এক্ষুনি” এভ্রিল রেগে গিয়ে বললো।।
মোহর বাবা এসে সেলিনাকে তুললো আর সে জানালো,
“মোহকে খুব শীঘ্রই নিয়ে যাবে,মোহ তাদের কেও না তাই বেঈ আইনি করে রাখতেও পারবে না”।।
মোহর কাপাকাপি দেখে এভ্রিল তাকে দ্রুত পদে ঘরে নিয়ে গেলো।।
এদিকে ফারিশ ফোন কাকে ফোন দিয়ে বললো,
” সন্ধ্যায় সব রেডি চায় বাবা”
চলবে?