রঙধনু?
দ্বিতীয়বার
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
পর্ব চার
?
ফারিশ দেখলো বাড়ির শেষ কর্নারের দিকে একটা খুপড়ি মতো ঘর থেকে হালকা আলো আসছে,ফারিশ ওই ঘরের পিছে হন্তদন্ত হয়ে ছুটলো।।
মোহ বিছানাতে জড়সড় হয়ে শুয়ে আছে..মারের কারনে সারা গায়ে ব্যাথা আর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে শরীর তার..ঠোট ও ব্যাথা করছে কেটে যাওয়ার কারনে..পিঠ হালকা দেখা যাওয়াতে মারের নীলচে দাগ দেখা যায়।।
ফারিশ যেয়ে দেখলো যখন মোহ শুয়ে আছে কেমন করে আর পিঠের পিছে দাগ দেখে বুকটা ধড়াস করে উঠলো..পা টা আগাচ্ছে না মনে হচ্ছে তার।।
ফারিশ যখন কাছে গেলো মোহর,মোহ তখন অচেতন ঘুমে ছিলো..চেহারা দেখে ফারিশের চোখে পানি চিকচিক করছে..তার মায়ের ধারনা সঠিক..তার মোহকে অনেক বেহরহম ভাবে মেরেছে এই মা নামে কুৎসিত মহিলা।।
ধরতেও ভয় পাচ্ছে যদি একটু ধরাতে লেগে যায় তার মোহর।।
ড্রাইভারকে অতিদ্রুত ফোন দিয়ে গেটের সামনে নিয়ে ডাকলো,মোহদের বাড়ির।।
এতো অগোছালো জীবনে কখনো কান্না কি জিনিস তার জীবনে ঢুকতে দেয় নি সে,কখনো কাওকে ভালোবাসতে হবে এটাও জানতো না সে..কখনো কাওকে ভালোবেসে যে তার কষ্টে নিজের যে হাজারগুন কষ্ট হবে এটাও ভাবে নি সে..কখনো কেও তার রাজত্ব করা জীবনে নিজে এসে খুটি বসিয়ে তার প্রান হয়ে যাবে এটাও সে কখনো ভাবে নি।।
নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে চোখের কোনে এক পাশ মুছে মোহকে সাবধানতার সাথে কোলে নিলো,যেন তার মোহ ব্যাথা না পায়..মোহকে কোলে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধ সাধলো সেলিনা বেগম।।
“এই এই তুমি এরে নিয়ে কোথায় যাও??তুমি চিনো ওরে??নামাও ওরে” সেলিনা বললো।।
ফারিশ রক্তিম চোখে তাকালো সেলিনা বেগমের দিকে..সেলিনা বেগম কেমন যেন ফারিশের চাহানি দেখে ভড়কে গেলো..ফারিশ দেখলো টি টেবিলে থাকা চায়ের মগ থেকে ধোয়া উঠছে..মোহকে একটু সোফাই বসিয়ে,মগ টা তুলে তার গায়ে ছিটা মারলো।।
“ওহ মা গো!!” এই বলে হাত পা ছুড়তে লাগলো সেলিনা।।
“সবে ত শুরু?আমার মোহর গায়ে তিল তিল করে এতোটা যয়টা আচড় টেনেছেন,তার শতগুন আপনাকে আমি ফেরত দিব..ওয়েট এন্ড ওয়াচ!! আর এই বাড়ি নামক নরক থেকে নিয়ে যাচ্ছি,বেশি উল্টাপাল্টা তেরাবেকা করলে একদম পিঠের চামড় তুলে,রাস্তার কুকুড়দের ওই চামড়া জুতা পরাবো আমি ফাইজান ফারিশ ফাজ!!স্টে এওয়ে ফ্রম মাই মোহ!!”ফারিশ কথাগুলো বলে মোহকে নিয়ে গাড়ির ভিতর ঢুকলো কিন্তু মোহকে জাপটে ধরে কোলেই রাখলো ফারিশ।।
সেলিনা বেগম তখন ফুউ দিচ্ছে তার হাতে পা শরীরের ফ্যানের বাতাস দিচ্ছে..রিহান গেছিলো প্রতিবেশীর কাছে মোহর জন্য ওষুধ নিতে।।
রিহান ফিরে এসে শুনলো পাড়ার লোকের কাছ থেকে মোহকে কোলে করে কোন বড়লোক ছেলে নিয়ে গেলো,দৌড়ে বাড়িতে এসে তার মাকে দেখলো হাতে পায়ে ফু দিচ্ছে।।
“মা?আপুকে কে নিয়ে গেছে?তুমি আবার বিক্রি করে দিয়েছো?” রিহান জিজ্ঞেস করলো রেগে।।
সেলিনা বেগম ঠাস করে ওর ছেলের গালে মারলো।।
“ফাইভের পড়োস এতো কিসের দরদ তোর ওই মাইয়ারর উপর তোর??তোর কি নিজের বোন লাগে?আমি যদি ওর বিক্রি করতাম এখানে বসে নিজের পুড়ে যাওয়া জায়গাতে বসে বসে ফু দিতাম?” সেলিনা বেগম রাগে গজগজ করতে বললো।।
রিহান মার খেয়েও কান্না আসে নি তার বরং তার বোনকে এক অচেনা অজানা ছেলে নিয়ে গেছে তুলে এই ভেবে তার ছোট মাথাতে আসছে।।
শপিংমল,
এভ্রিল ফারিহাকে ফোন করে জানিয়েছে ফারিশ তার ভাবীকে নিয়ে আসছে,কিছু ড্রেস নিয়ে আসতে কিনে..তাই আসছে সে।।
নুহাশ ওর ফ্রেন্ডদের সাথে শপিংমলে দেখা ক্ক্রতে এসেছে অফিস থেকে স্যুট পরে চলে এসেছে।।
ফারিহা অনেকগুলা শপিং করে নিচে নামছিলো পিছনে তার শপিংব্যাগ ধরে আছে তার ড্রাইভার, তার হাতেও কিছু আছে।।
নুহাস তখন ফোনে কল এটেন্ড করতে করতে আসছিলো..মনোযোগ দুইজনের দুইদিকে থাকার কারনে,বাহুতে ধাক্কা লাগার কারনে ফারিহার ফোন থেকে পরে যায় নুহাশের ডান হাতে লেগে।।
নুহাস ও নিজেকে সামলে নিয়ে তাকায় ফারিহার দিকে..ফারিহাকে দেখে তার মেজাজ সপ্তমে।।
ফারিহা ফুল এভোয়েড করলো নুহাসকে যেন সে চিনে না,নিজের হাতের ব্যাগ গুলো উঠাতে সে ব্যস্ত হয়ে পরলো।।
নুহাসের সেটা ইগোতে লাগলো..তখন সে কি করলো ফারিহার ফোনের দিকে তার নজর গেলো।।
নুহাস বাকা হাসি দিয়ে ফারিহার ফোনের উপর তার ব্যুট পরা পা দিয়ে জোরে চাপ দিয়ে পুরো ফোনের ডিসপ্লে গুড়ো করে দিলো।।
ফারিহা শান্ত দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে..যেন কিছু হয় নি।।
“ইটস ফেয়ার ইনাফ নাও বেবি” নুহাস ফারিহার মুখের কাছে বললো..ফারিহার মুখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে কিন্তু সে নুহাসের দিকে তাকালো না..তার চোখে তার ফোন আইফোন এলিভেন ম্যাক্সের দিকে যা তার ভাই তার লাস্ট বার্থডে তে দিয়েছে।।
তার মন মেজাজ তখন ই খারাপ হয় যখন তার বাবা মা আর ভাইয়ের দেয়া জিনিস যত্নে রাখার পর,কেও এসে নষ্ট করে।।
নুহাস দেখলো ফারিহা কিছু বলছে না,তখন উঠে দাড়িয়ে হাতের চাবির রিং ঘুরাতে ঘুরাতে নিচে গেলো।।
ফারিহা শান্তভাবে উঠে ব্যাগ গুলো তুলে নিলো,ফোনটা পাশের ডাস্টবিনে ফেলতে যেয়েও ফেললো না..ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো।।
বেশকিছুক্ষন পর,
নুহাস এসে নিচে দেখে ফারিহা তার গাড়ির কাছে দাড়িয়ে আছে।।
নুহাস ভেবেছে হয়তো ফারিহা তাকে সর্যি বলতে এসেছে,তাই বাকা হাসি দিয়ে তার দিকে আগাচ্ছে।।
নুহাসের ভাবনাতে পানি ঢেলে,ফারিহা তার হাতের পিছন থেকে একটা মোটা শক্ত ভারী লাঠি বের করলো।।
নুহাসের দিকে তাকিয়ে ফারিহা বাকা হেসে নুহাসের গাড়ির গ্লাসে এক বারি দিলো।।
নুহাস যেন শক খেলো এক প্রকার, ফারিহার এমন কাজ দেখে।।
পর পর এমন কয়েকটা বারি মেরে নুহাসের গাড়ির বারোটা বাজিয়ে দিলো সে।।
“ফারিশতা ফারিহা ফাজ কারো উধার রাখে না মিস্টার!! সুদে আসলে খুব সুন্দর করে ফেরত দেয় সে!! যোগ্যতা দেখে নেক্সট টাইম আমার ত্রি সীমানা আসার চেষ্টা করবেন আপনি!!নাউ ইটস টাইম টু সে ইউ দ্যাট ইটস ফেয়ার ইনাফ টুডে বেবি!!”
নুহাসের কাছে ফারিহা ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো।।
নুহাসের কান দিয়ে ধোয়া বের হবে মনে হচ্ছে।।
ফারিহা তার হাতের হাতা উঠিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো..তার সামনে হাতের তালু ঝাড়ি দিয়ে,ফু দিলো নিজের সামনে থাকা চুলে।।
নুহাস ফারিহা কর্মকান্ডে এতোবেশি অবাক হয়ে গেছে যে তার মানতেই অসহ্য লাগছে যে”মেয়ে হয়ে নুহাস চৌধুরির গায়ে টক্কর দেয়?”
ফারিহা নিজের জুতোর দিকে তাকিয়ে নিঃশ্বাস ফেলে গাড়িতে উঠে পরে,পিছন ফিরে তাকায় নি সে..তাকালে দেখতে পেতো নুহাসের রক্তিম মুখটা।।
নুহাস নিজের গাড়িতে এক লাথি দিয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে বললো,”আই উইল নট স্পেয়ার ইউ ফারিশতা ফারিহা ফাজ..দিস নুহাস চৌধুরি উইল শো ইউ সামথিং ফর ইউ সিউর”
আরেকটা গাড়ি ডেকে নুহাস বাড়ির পথে রওনা দিলো।।
চলবে?