#যে_প্রেম_এসেছিল
#পর্ব৯
#Raiha_Zubair_Ripte
-“ আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
মনোয়ারা বেগম ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বাজারের দিক টায় আসে কিছু সবজি কিনতে। হঠাৎ পরিচিত কন্ঠ শুনে পেছন ঘুরে দেখে তুহিন। ছেলেটা তার দিকে এগিয়ে আসলো। চোখ মুখের হাল দেখে মনে হচ্ছে রাতে ঘুমায় নি। তুহিনের দিকে পলকহীন তাকিয়ে সালামের জবাব দিলেন মনোয়ারা বেগম।
তুহিন তার শুষ্ক ওষ্ঠ জিহবা দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে বলে-
-“ আন্টি আপনি কি ফ্রী আছেন, আসলে আমি একটু আপনার সাথে কথা বলতে চাই।
মনোয়ারা বেগম সবজির দোকান থেকে সবজি নিয়ে টাকা দিয়ে বলে-
-“ কি বলবে তুমি?
-“ আসলে আন্টি আমি ইন্দুর ব্যাপারে সবটা জানতে চাই।
মনোয়ারা বেগম ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করেন-
-“ যা বলার তো ইন্দু বলেই দিয়েছে তোমায়। আর কি জানতে চাও?
-“ আন্টি ইন্দুর এতো বড় একটা প্রবলেম আপনারা ওর চিকিৎসা করান নি?
-“ তোমার কি মনে হয় আমরা চিকিৎসা করাই নি? ইন্দুর বাবা সব রকমের চিকিৎসা ইন্দুর করিয়েছে।
-“ ডক্টর কি বলছে আন্টি আর ওর রিপোর্ট কি বলে?
-“ এটা ঠিক হবে না। ওর সব কিছু মেয়েদের মতে স্বাভাবিক হলেও ও বাচ্চা দিতে অক্ষম।
-“ কিছুতো চিকিৎসা থাকবে আন্টি এটার।
-“ না ইন্দুর এই সমস্যার চিকিৎসা নেই। এটা পারিবারিক ভাবেই এসেছে।
-“ পারিবারিক ভাবে এসেছে মানে?
-“ ইন্দুর একটা ফুফু ছিলো যার ইন্দুর মতো সমস্যা ছিলো।
-“ উনি কি এখন সুস্থ আই মিন উনার এই সমস্যা কি ঠিক হয়েছে।
-“ না উনি ছাব্বিশ বছর বয়সেই গাড়ি এক্সিডেন্ট করে মা/রা যান। তারও এই পিরিয়ড হতো না।
-“ আন্টি আপনি কি আমায় ইন্দুর মেডিকেল রিপোর্ট গুলো দিতে পারবেন?
-“ তুমি রিপোর্ট নিয়ে কি করবা? দেখো তুহিন এসব নিয়ে আর ঘাটাঘাটি করো না এমনি আমার মেয়ে এখনও নিজেকে ঠিক রেখেছে বেশি ঘাটাঘাটি করলে ও একদম ভেঙে পড়বে।
-“ আন্টি ইন্দু জানবে না। আমি শেষ বারের মতো চেষ্টা করতে চাই।
-“ পারবে না তুহিন শুধু শুধু সময় নষ্ট, বড় বড় ডক্টর ফিরিয়ে দিয়েছে ইন্দুকে সেখানে এখন আশার আলো দেখা মানে মরীচিকার পেছনে দৌড়ানো।
কথাটা বলে মনোয়ারা বেগম চলে যায়। তুহিন তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে-
-“ এভাবে আশা হারালে চলবে না। ভেঙে পড়লেও চলবে না।
কথাটা বলে হসপিটালে চলে যায়। ডক্টর সুমনের কেবিনে এসে দরজা নক করে বলে-
-“ স্যার আসবো?
ডক্টর সুমন এক পেসেন্টের রিপোর্ট দেখছিল তুহিনের আওয়াজ শুনে বলে-
-“ হ্যাঁ আসো।
তুহিন ভেতরে ঢুকে বলে-
-“ স্যার আপনাকে কাল যে বিষয়ে বললাম সেটা নিয়ে কথা বলতে চাই।
সুমন রিপোর্ট থেকে চোখ সরিয়ে বলে-
-“ হু আমিও কিছু বলতে চাই।
-“ জ্বি স্যার বলুন।
-“ তুমি বলেছিলে মেয়েটার একবারের জন্য ও পিরিয়ড হয় নি তাই তো?
-“ হ্যাঁ।
-“ তুমি হয়তো জানো যে মহিলাদের পিরিয়ডের বয়স 14 থেকে 16 বছরের মধ্যে। কিন্তু যদি দেরি হয় তাহলে সে অ্যামেনোরিয়ায় আক্রান্ত। উদাহরণ দিয়ে বলি,
এক বা একাধিক মাসিক না হওয়াকে অ্যামেনোরিয়া বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়। 15 বছর বয়সের মধ্যে প্রথম পিরিয়ড না পেয়ে থাকেন তবে এটি প্রাথমিক অ্যামেনোরিয়া হিসাবে পরিচিত।
অন্যদিকে, আগে পিরিয়ড হয়েছে এমন কারো দ্বারা পরপর তিন বা তার বেশি পিরিয়ড না হওয়াকে সেকেন্ডারি অ্যামেনোরিয়া বলা হয়। এটি মূলত প্রজনন বয়সের মহিলাদের ঋতুস্রাব বাদ দেওয়া।
যদিও কারণগুলি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়, তবে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল হরমোনের ভারসাম্যহীনতা। এটি একটি চিকিত্সাযোগ্য অবস্থা, এবং চিকিত্সা কারণের উপর নির্ভর করে।
ঋতুস্রাবের জন্য দায়ী বা সম্পর্কিত অঙ্গ, হরমোন এবং গ্রন্থিগুলির পরিবর্তনের কারণে এটি ঘটে।
অ্যামেনোরিয়ার চিকিত্সা অ্যামেনোরিয়ার ধরণের উপর নির্ভর করে।
বয়সের উপর নির্ভর করে, প্রাথমিক অ্যামেনোরিয়া চিকিত্সা সতর্কতার সাথে অপেক্ষা করা শুরু হতে পারে, বিশেষ করে যদি দেরীতে ঋতুস্রাবের পারিবারিক ইতিহাস থাকে। প্রজনন অঙ্গ বা যৌনাঙ্গে কোনো গঠনগত সমস্যা থাকলে সার্জারি করা যেতে পারে।
তবে এটি স্বাভাবিক মাসিকের নিশ্চয়তা দেয় না।
-“ স্যার পারিবারিক ইতিহাস আছে কিছুটা।
-“ যেমন?
-“ আমি যার কথা বলেছি তার ফুফুর ও এমন প্রবলেম ছিলো তার ও পিরিয়ড হতো না
-“ তাহলে এটা ঠিক হবার চান্স ০%।
-“ কেনো স্যার বিজ্ঞান তো অনেক দূর এগিয়ে গেছে তাহলে এটার সলিউশন নেই কেনো?
-“ বিজ্ঞানের ও কিছু নিয়মবদ্ধ আছে বিজ্ঞান মানেই যে সে সব পারবে এটা কোনো কথা না। উপরেও একজন আছে যিনি সব পরিচালনা করেন। মেয়েটা চাইলে বাচ্চা এডপ্ট করতে পারে। সার্জারী করালেও যে পিরিয়ড হবে তার নিশ্চয়তা নেই।
-“ এটার জন্য বেস্ট চিকিৎসা কেন্দ্র কোথায়?
-“ তুমি বিড়লা ফার্টিলিটি এবং আইভিএফ-এ যাও এবং সেরা অ্যামেনোরিয়া চিকিত্সার জন্য ডাঃ রচিতা মুঞ্জালের সাথে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করো। তবে মনে হয় না সলিউশন বের হবে।রঞ্জন এবং ডাঃ গয়াল বলেছেন যে প্রাথমিক অ্যামেনোরিয়ার প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে পারিবারিক ইতিহাস, জেনেটিক সমস্যা এবং লাইফস্টাইল। অ্যামেনোরিয়া বা প্রাথমিক মেনোপজের পারিবারিক ইতিহাস। জেনেটিক বা ক্রোমোসোমাল ত্রুটি। এগুলো আপনার ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতা এবং মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করে। তবে তুমি গিয়ে দেখতে পারো।
-“ ধন্যবাদ স্যার,আসি তাহলে।
তুহিন কেবিন থেকে বেরিয়ে সোজা ইন্দুর স্কুলের সামনে যায়। গেটের বাহিরে দাড়িয়ে থাকে। ইন্দুর স্কুল ছুটি হতে এখনও আধঘন্টা বাকি। আচ্ছা এই সমস্যার যদি কোনো সলিউশন বের না হয় তখন কি হবে? আমি তো ইন্দুকে ছেড়ে থাকতে পারবো না। প্রায় আধঘন্টা পর ইন্দু স্কুল থেকে বের হয়। কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা বাসার দিকে হাঁটা ধরে। পেছন থেকে তুহিন ডেকে চললো ইন্দু কে কিন্তু ইন্দু শুনলো না্ তুহিন দৌড়ে এসে ইন্দুর সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ সমস্যা কি তোমার ডাকছি শুনছো না কেনো?
ইন্দু তুহিনের দিকে না তাকিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে তুহিন সহসা ইন্দুর হাত টেনে ধরে। ইন্দু সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে-
-“ হাত ছাড়ুন।
তুহিন ইন্দুকে টেনে নিজের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বলে-
-“ হাত তো ছেড়ে দেওয়ার জন্য ধরি নি। এই যে শক্ত করে ধরেছি কখনও ছুটবে না।
ইন্দু চেষ্টা করলো তুহিনের থেকে নিজের হাত ছাড়ানের কিন্তু পারলো না। ইন্দুর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে বারংবার।
-“ প্লিজ তুহিন হাত ছাড়ুন আমার,আর দয়া করে আপনি আমার সামনে আসবেন না কখনো।
-“ হাত ও ছাড়বো না আর তোমার সামনে না এসেও থাকতে পারবো না। বিকজ আই লাভ ইউ,আই কান্ট লিভ উইথআউট ইউ।
ইন্দু তুহিনের দিকে তাকালো।
-“ এখনও এসব বলছেন। হাত ছাড়ুন বাসায় যাবো।
-“ ইন্দু চলো আমরা বিয়ে করি।
এবার ইন্দু তুহিনের হাতে শক্ত করে কামড় দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়।
-“ আপনার কি মজা লাগছে আমাকে কষ্ট দিয়ে তুহিন?
তুহিন নিজের হাত ঝাকাতে ঝাকাতে বলে-
-“ কামড় দিলে তুমি ব্যাথা পেলাম আমি কষ্ট তোমার লাগবে কেনো?
-“ আপনাকে বলেছি তো আমার বিষয়ে সব তবুও কেনো এসব করছেন? আমার মায়ের কাছে কেনো গিয়েছিলেন আমার রিপোর্ট নিতে?
-“ এটাতে তো অন্যায় কিছু দেখছি না আমি ইন্দু। আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমার ভালোর জন্য যেটা করা দরকার সেটাই করতে চাইছি।
-“ আমার ভালো আমার থেকে কি আপনি বেশি বুঝেন? যেখানে আমি আমার পরিবার ডক্টর রা হাল ছেড়ে দিয়েছে সেখানে আপনি কেনো আমার পুরোনো কাসন্দি ঘাটছেন?
-“ তুমি কি কষ্ট পেয়েছো ইন্দু? আচ্ছা আমি আর এটা নিয়ে ঘাটবো না তুমি বিয়েতে রাজি হয়ে যাও। আমার বাচ্চার দরকার নেই এডপ্ট করবো আমরা।
-“ আপনি এখনও আবেগের জোয়ারে ভাসছেন। আপনার মা কতোটা কষ্ট পাবে ভেবেছেন আমায় বিয়ে করলে? তার কি দোষ সে তো নিজের ছেলেকে এমন মেয়ের সাথে বিয়ে দিবে না।
তুহিন ইন্দুর হাত দুটো ধরে বলে-
-“ মায়ের কষ্টের কথা ভাবলে ইন্দু অথচ আমার কষ্টের কথাটা ভাবলে না একবার ও। খুব ভালোবাসি তোমায়।
ইন্দু ছলছল নয়নে তুহিনের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আপনি সত্যি ভালোবাসেন আমায়?
-“ নিজের থেকেও বেশি।
-“ আমার জন্য সব করতে পারবেন?
-“ জাস্ট মুখ ফুটে কিছু চেয়ে দেখো।
-“ তাহলে আমাকে ভুলে যান। আপনি আপনার মায়ের পছন্দের কোনো মেয়েকে বিয়ে করুন।
কথাটা বলার সময় ইন্দুর গলা কাঁপছিল। তুহিন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে-
-“ নিজের স্বত্বা কে মানুষ কি করে ভুলে ইন্দু আমার তো জানা নেই। তুমি আমার স্বত্বা, তোমাকে ভুলে যাওয়া ইহকালে সম্ভব নয়।
-“ মানুষ চাইলে সব পারে। আপনি চেষ্টা করুন আপনিও পারবেন।
-“ তুমি পারবে আমায় ভুলতে ইন্দু?
সহসা উত্তর দিতে পারলো না ইন্দুপ্রভা। কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে বলে-
-“ হ্যাঁ পারবো। আপনাকেও পারতে হবে। সবার জীবনে প্রেম সুখের হয়ে আসে না, আপনার ও আসে নি,তাি এটাকে ভুলে যাওয়াই বেটার।
-“ তোমার মতো পাষাণ হৃদয় আমার না। তুমি পারলেও আমি পারবো না। আর পারতেও চাই না। আমি তোমার পাশে থেকে তোমাকে প্রতি মুহূর্তে অনুভব করতে চাই।
-“ আপনি ভুল মানুষের প্রতি ফিলিংস এনে ফেলছেন। আপনার তো আমার সত্যি টা জানার পরই উচিত ছিলো জীবনে আমার সামনে না আসা।
-“ সবাই তো সত্যি জানার পর চলে যায় আমি সত্যি জানার আগেও ছিলাম পরেও থাকবো। আমার তোমাকে চাই এট এনি কস্ট।আর আমার মাকে নিয়ে সমস্যা? ব্যাপার না ম্যানেজ করে নিবো। তখন তুমি না বললে খবর বানিয়ে ফেলবো।
-“ বড্ড বোকা আপনি জানেন সেটা?
-“ এই যে তুমি বললে আমি জানলাম।
-“ ভালো থাকবেন আসি।
কথাটা বলে ইন্দু চলে গেলো। তুহিন ইন্দুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেললো।
#চলবে