যে প্রেম এসেছিল পর্ব-০৬

0
442

#যে_প্রেম_এসেছিল
#পর্ব৬
#Raiha_Zubair_Ripte

আকাশ টা আজ মেঘলা। কালো মেঘগুলো উড়ে চলছে আকাশ জুড়ে। দুদিন আগেও তো আকাশ ঠিক ছিলো,সব স্বাভাবিক ছিলো আজ হঠাৎ কেনো যে সকাল টা এভাবে শুরু হলো কে জানে। ইন্দু রেডি হয়ে নিলো। ডাইনিং টেবিলে গিয়ে খাবার টা চটপট খেয়ে কাঁধে ব্যাগটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। হেঁটে যেতে বেশু সময় লাগে না স্কুলে তাই ইন্দু হেঁটে যাচ্ছে। হাঁটার মাঝে বারবার মনে হচ্ছে এই বুঝি কোথাও থেকে হুট করে তুহিন এসে ইন্দুর পাশে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটবে।

বারংবার আশেপাশে তাকালো। ফলাফল শূন্য। তুহিনের ছিটেফোঁটা ও নেই। নিজের কাজকর্ম দেখে নিজেই বিরক্ত ইন্দুপ্রভা। লোকটাকে মিস করতে শুরু করলো নাকি ইন্দু। হাতে থাকা ফোন টায় একবার সময় দেখে তাড়াতাড়ি হাঁটা ধরলো।
স্কুলে এসে নিজের ক্লাসে চলে গেলো ক্লাস নিতে।

ক্লাসে মন বসছে না ইন্দুর। কিছু একটার শূন্যতা অনুভব করছে। কালো আকাশ টার মতো তার মনটাও কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে।

ক্লাস থেকে বেরিয়ে করিডরে এসে দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়ালো। তিনতলার উপর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে কিছু দেখতে লাগলো।

এরমধ্যে কখন যে পাশে তার কলিগ সিয়াম এসে দাঁড়িয়েছে ইন্দু বুঝতে পারে নি। হঠাৎ কাশির আওয়াজে ইদুর ধ্যান ভাঙে। পাশে তাকিয়ে সিয়াম কে দেখে ভরকে যায়। ইন্দুকে ভরকে যেতে দেখে সিয়াম বলে-

“ রিলাক্স ইন্দু। তুমি এখানে অন্যমনষ্ক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলে তাই আসলাম। কোনো কিছু নিয়ে কি চিন্তিত তুমি?

ইন্দু মুচকি হেঁসে বলল-

“ না না তেমন কিছু না আসলে মাথা টা ধরেছে অনেক তাই আর কি…

সিয়াম কিছুক্ষণ চুপ রইলো। কিছু একটা ভেবে বলল-

“ একটা কাজ করা যায় ইন্দু,পাশেই একটা ক্যাফে আছে ওখানে দারুন কফি পাওয়া যায়। তোমার মাথা ব্যাথা গায়েব হয়ে যাবে।

সিয়ামের কথাটা মন্দ লাগলো না ইন্দুর কাছে এখন একটা কফির ই ভীষণ দরকার। ইন্দু ক্লাস থেকে নিজের ব্যাগটা নিয়ে ক্যাফের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলে পেছন থেকে সিয়াম ডেকে উঠে। ইন্দু পেছন ঘুরে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টি তে তাকালে সিয়াম গাল ভরা হাসি উপহার দিয়ে বলে-

“ তোমাকে এটার সন্ধান দিলাম আমি আর আমাকে না নিয়েই চলে যাচ্ছো?

ইন্দু স্মিত হেসে বলে-

“ সরি আসলে ভুলে গেছি আপনাকে ডাকতে।

“ হুমম সেটাই দেখলাম। তাই নিজেই পিছু ডেকে চলে আসলাম। তাহলে যাওয়া যাক ক্যাফে তে।

ইন্দু মাথা নাড়িয়ে হাঁটা ধরলো। বুকের মাঝে কেমন যেনো চিনচিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। কাজে মন বসলো না। এখন অর্ধেক রাস্তায় এসে আর ক্যাফেতে যেতে ইচ্ছে করছে না। কাউকে ভীষণ মিস করছে। কিন্তু কাকে? আনমনে হাঁটতে হাঁটতে ক্যাফে অব্দি চলে আসলো। ক্যাফের সবার লাস্টে থাকা একটা ফাঁকা বেঞ্চে গিয়ে বসে পড়লো সিয়াম আর ইন্দু। সিয়াম ওয়েটার কে ডেকে দুটে কফি অর্ডার দিয়ে বকবক করতে লাগলো। ইন্দুর বিরক্ত লাগছে তবুও ভদ্রতার খাতিরে চুপ রইলো। ওয়েটার কফি দিয়ে গেলে ইন্দু সেটা মুখে নিয়ে সামনে তাকাতেই তুহিন কে দেখতে পেয়ে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। কিন্তু পরক্ষণেই হাসি টা মিলে যায় ঘন অন্ধকার হয়ে যায় মুকখানা। তুহিনের পাশে অতি সুন্দর একটা রমণী বসে আছে। তুহিন মুখ নাড়িয়ে কিছু বলছে আর মেয়েটা এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তুহিনের দিকে। ইন্দুর এটা সহ্য হলো না।

মেয়েটার উপর না চাইতেও রাগ হলো। কফি আর খাওয়া হলো না ইন্দুর। সিয়াম কে রেখেই হনহন করে বেড়িয়ে গেলো ক্যাফে থেকে। তুহিন এতোটাই মগ্ন ছিলো রিপোর্ট টার দিকে যে এখানে যে কেউ একজন তাকে জেলাস হয়ে রেগে তারই পাশ কাটিয়ে চলে গেছে সে বুঝতেও পারলো না।

রিপোর্ট থেকে মুখ সরিয়ে সামনে থাকা লামিয়া নামের মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে-

“ চিন্তা করবেন না রিপোর্ট টা আমি ভালোমতো ই দেখেছি। আপনার বাবার তেমন সমস্যা নেই আপনি অযথা টেনশন করছেন।

লামিয়া নামের মেয়েটা তুহিনের থেকে রিপোর্ট টা নিয়ে সৌজন্যমূলক হাসি উপহার দিয়ে টুকটাক কথা বলে চলে যায়।

তুহিন তপ্ত শ্বাস ফেলে। একটা সপ্তাহ ধরে তার উপর দিয়ে কাজের প্রেশার যাচ্ছে অনেক। তার উপর এই মেয়ে বারবার ফোন দিয়ে বাবা কে অযৌক্তিক টেনশন সময় বের করে এসে বুঝিয়ে বলতে হলো শুধু শুধু টেনশন করছে।

ইন্দুকে দেখা হয় না সাতটা দিন ধরে। মেয়েটা নিশ্চয়ই খুশি হচ্ছে। এদিকে তুহিন যে ইন্দুকে দেখতে না পেয়ে দহনে পুড়ছে সেটা যদি মেয়েটা একটু জানতো।

ইন্দু আর স্কুলে গেলো না। বাসা যাবের পথে একটা খোলা প্রান্ত মাঠ পড়ে। সেই উদ্যান মাঠে গিয়ে একটা গাছের তলায় বসলো। ফোন বের করে সময় দেখে নিলো। স্মৃতি কে বলেছিলো এখান টায় আসতে মেয়েটা আসছে না দেখে বিরক্ত লাহছে।

মিনিট দশেক বসে অপেক্ষা করলো এরমধ্যে স্মৃতি ও চলে আসলো। স্মৃতি ইন্দুর পাশে বসে বলে-

-“ কি ব্যাপার ম্যাডামের আজ আমার কথা মনে পড়লো যে।

ইন্দু দৃষ্টি সামনে রেখেই জবাব দেয়-

-“ আচ্ছা স্মৃতি আমরা মানুষ গুলো এমন কেনো?

স্মৃতি জিজ্ঞাসুক দৃষ্টি নিয়ে বলে -কেমন?

ইন্দু এবার নড়েচড়ে বসলো। শুকনো ঠোঁট টা জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে নিলো। পরপর লম্বা শ্বাস নিয়ে বললো-

-“ প্লিজ খেপাস না আমায়।

-“ আচ্ছা বল।

-“ আজ তুহিন নামের ছেলেটার সাথে একটা মেয়েকে দেখে বুকের ভেতর টায় কেমন যেনো ব্যাথা করলো।

স্মৃতি স্মিত হাসলো ইন্দুর কথা শুনে। ইন্দুর পিঠে হাত দেয়, স্মৃতি ইন্দুর ভাবসাব দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে বলে-

-“ মানুষ বড়ই বিচিত্র প্রাণী। এদের মনে কি থাকে এরা নিজেরাই বুঝতে পারে না। তবে যাই বলিস তুহিন ছেলেটা কিন্তু দারুন। অন্যান্য ছেলের থেকে ব্যাতিক্রম কিছুটা।

মূহুর্তে ইন্দুর মুখের ভাবভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে যায়। মনে পড়ে ক্যাফের ঘটনা। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কাঁধের ব্যাগটা শক্ত করে ধরে বলে-

-“ সব ছেলে এক। পাত্তা না পেলেই নতুন মেয়ের পেছন ঘুরা শুরু করে। তুই বাসায় চলে যা।

কথাটা বলে ইন্দু হাঁটা ধরে। হঠাৎ রেগে যাওয়ার বিষয় টা বুঝলো না স্মৃতি। ❝এই যে আমরা মানুষ কে ভালোবেসে গ্রহণ করতে পারি না আবার তাদের কে অন্য কারো সাথে দেখলে রাগ করে বসি।❞এই মেয়ে কবে যে নিজের ভালো বুঝবে কে জানে।

————————–

তুহিন আজ তাড়াতাড়ি কাজ সেরে বিকেলেই হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে পড়ে। ফোনের লক খুলে সোজা ইন্দুর নাম্বারে কল লাগায়৷ মেয়েটাকে দেখে না দুটো দিন ধরে। ইন্দু বিছানায় অন্যমনষ্ক হয়ে বসে ছিলো। ফোনের রিংটোন বেজে উঠায় ফোনের স্কিনে নাম্বার টা ভালোমতো না দেখেই ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে তুহিন বলে উঠে-

-“ ইন্দু তুমি কি একটু নিচে আসতে পারবা, আমি তোমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে।

ইন্দু বিছানা থেকে উঠে হন্তদন্ত হয়ে বেলকনি তে আসে। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে তুহিন ফোন কানে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

-“ আপনি আসছেন কেনো আমার বাসার সামনে? বলেছিলাম না না আসতে।

-“ তর্ক করার মুড নেই নিচে আসো। খুব দরকার।

-“ আসতে পারবো না।

-“ ত্যাড়ামি করতেছো কেনো,নিচে আসো দুটো দিন দেখি নি পাগল পাগল লাগছে।

ইন্দু ভেঙচি কাটলো।

-“ পাগল পাগল লাগবে কেনো ক্যাফেতে কি ভালো লাগে নি, সুন্দরী রমণী সামনে বসে ডেঁপ ডেঁপ করে তাকিয়ে ছিলো ভালো লাগে নি?

তুহিন ইন্দুর কথার মানে বুঝলো না। ক্যাফের কথা মনে হতেই কালকের কথা মনে পড়লে। কাল লামিয়ার নামের মেয়েটার সাথে ক্যাফেতে ছিলো। তারমানে ইন্দু ও সেখানে ছিলো। আচ্ছা মেয়েটা কি কোনো ভাবে জেলাশ? কথাটা মনে আসতে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। যাক এবার তাহলে একটা পথ পেয়েছে।

-“ হ্যাঁ মেয়েটা বেশ সুন্দরী ছিলো,আচ্ছা তোমার যেহেতু আসতে সমস্যা তাহলে লামিয়া কে ডেকে নিয়ে যাচ্ছি। মেয়েটা হেল্প করতে পারবে আমার,তোমার তাহলে আসতে হবে না।

-“ কি হেল্প বলেন করে দিচ্ছি।

-“ নিচে না আসলে বলবো কিভাবে। রেডি হয়ে আসবে।

-“ আমি রেডিই।

-“ আচ্ছা নিচে আসো।

ইন্দু আচ্ছা বলে ফোন কেটে দেয়। তুহিন হাসে। মেয়েটা আপন করে নেয় না আবার কারে সাথে দেখলে মেনেও নিতে পারে না। মেয়েদের জাতীয় স্বভাব বুঝি এটাই।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে