যে প্রেম এসেছিল পর্ব-০৫

0
430

#যে_প্রেম_এসেছিল
#পর্ব৫(বোনাস পর্ব)
#Raiha_Zubair_Ripte

“ এই মেয়ে আমার মায়ের কাছে এটা বলেছো কেনো যে তুমি আমায় বিয়ে করতে পারবে না।”

ইন্দু স্কুলে যাচ্ছিল হেঁটে। হঠাৎ এমন কথা কর্ণকুহর হতে থেমে যায়। পেছন ঘুরে তুহিনের দিকে চেয়ে বলে-“ যা সত্যি সেটাই বলেছি। আপনাকে কেনো আমি বিয়ে করতে যাবো? আই ডোন্ট লাইক ইউ।”

তুহিন দু হাত কোমড়ে দিয়ে ভ্রুকুটি করে বলে-“ আই ডোন্ট লাইক ইউ কথাটাকে কি অন্য ভাবে বলা যায় না। ডোন্ট টা বাদ দিয়েও তো বলতে পারতা যে আই লাইক ইউ।”

ইন্দু আর কথা বাড়ালো না সামনে ঘুরে হাঁটতে লাগলো। তুহিন ইন্দুর পেছন পেছন হাঁটতে লাগলো। ইন্দু বুঝেও কিছু বললো না চুপচাপ চলতে লাগলো।

স্কুলের সামনে আসতেই ইন্দু পেছন ঘুরে বলে-“ এবার চলে যান আমি স্কুলের সামনে এসে গেছি।”

তুহিন মুচকি হেসে ইন্দুর হাত ধরে বলে-“ আম্মাকে আবার পাঠাবো এবার আর না করো না প্লিজ ইন্দু।”

কথাটা কানে আসতেই ঝড়ের বেগে তুহিনের থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিলো ইন্দু। মূহুর্তে মুখের ভঙ্গিমা চেঞ্জ হয়ে গেলো। তুহিনের দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠল-“ আপনি কি বেহায়া? সামান্য লজ্জা নেই আপনার, গন্ডারের চামড়া নাকি আপনার শরীরে? আপনার মা’কে কাল আমি বলে দিয়েছি না আপনায় বিয়ে করতে পারবো না তবু বেহায়ার মতো পেছন ঘুরেন। বাসা থেকে কি এটাই শিখিয়ে দিছে আপনার মা। বেহায়া ছ্যাচড়া ছেলে একটা। মিনিমাম লজ্জা থাকলে আমার সামনে আর আসবেন না প্লিজ এই রিকুয়েষ্ট টা অন্তত রাখবেন।”

কথাটা বলে ইন্দু স্কুলের ভেতর ঢুকে যায়। তুহিন অবাক হয়ে ইন্দুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। কোথায় যেনো পড়েছিল তুহিন ❝ যা তোমার তা তোমারই থাকবে দিনশেষে। আর যা তোমার না সেটা শিকলে বেঁধে রাখলেও দিন শেষে তা তোমার হবে না❞

“কথাটা তাহলে হুবুহু মিলে যাচ্ছে! ইন্দু কি তাহলে দিনশেষে আমার হবে না? কথাটা মনে আসতেই বুকটা বিষাদে ভরে গেল তুহিনের। ইন্দুকে ছাড়া বেঁচে থাকা ইম্পসিবল❝ মানুষ যদি ভালোবাসা দিয়ে পাথরে ফুল ফোটাতে পারে তাহলে আমি ও আমার ভালোবাসা দিয়ে ঠিকই তোমার মন জয় করতে পারবো ইন্দু। ভালোবেসেছি তোমায় নিজের করেই ছাড়বো।❞

কথাটা বলে হসপিটালে চলে যায় তুহিন। হসপিটালে এসে নিজের কেবিনে যেতেই দেখে তার ফ্রেন্ড সাগর বসে আছে। নিজের কেবিনে সাগর কে দেখে ভ্রুকুটি করে ফেলে তুহিন। চেয়ারে বসতে বসতে বলে-“ কি ব্যাপার আমার কেবিনে তুই?”

সাগর হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বলে-“ কয়টা বাজে দেখতো।”

তুহিন হাত ঘড়িটায় টাইম দেখে বলে-“ দশ-টা বাজে।”

“ ডিউটি কয়টায় আরম্ভ? ”

“ এক ঘন্টা লেট হয়েছে।”

“ স্যার আজ রেগে গেছে এভাবে তুই যদি প্রতিদিন লেট করিস তাহলে স্যার তোকে ডাক্তারি ছেড়ে দিতে বলছে।”

“ সুমন স্যার বলেছে এটা?”

“ হুম।”

“ অকে দ্যান আমি রিজাইন লেটার পাঠিয়ে দিব।”

সাগর অবাক হয়ে বলে-“ সিরিয়াসলি তুই জব টা ছেড়ে দিবি?”

তুহিন চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে-“ হুমম ছেড়ে দিব।”

সাগর চেয়ার ছেড়ে উঠে বলে-“ মাথা খারাপ তোর! এমন জব কেউ ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা মাথায় আনে কি করে?”

“ ইন্দু মেয়েটা যে ওর মাথা চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলছে তাই সুখে থাকতে ভূতে কেলাচ্ছে।”

কথাটা বলতে বলতে তুহিনের কেবিনে ঢুকে নীলা। তুহিন চোখ বন্ধ রেখেই মুচকি হেসে বলে-“ মেয়েটা যদি মুখ ফুটে বলতো চাকরি কেনো তোমার জান টা আমায় দিয়ে দাও আমি হাসতে হাসতে আমার জান টা তাকে দিয়ে দিতাম। কিন্তু আফসোস মেয়েটা তেমন কিছুই আমায় বলেনি। চাকরি আমি আমার নিজের ইচ্ছেয় ছাড়ছি। আর স্যার নিজেও তো বলেছে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। ”

সাগর টেবিলের উপর এক হাত ভরে দিয়ে বলে-“ স্যার এমনি এমনি বলে নি তুহিন। তোর অনিয়ম স্যারের চোখে পড়ছে বারংবার। একটা মেয়ের পেছন পড়ে কি থেকে কি হয়ে গেছিস একবার নিজেকে আয়নায় দাঁড় করিয়ে ভাব তো। ভালোবাসা অন্যায় নয়। কিন্তু একপাক্ষিক ভালোবাসা মারাত্মক ক্ষতি করে। এই যেমন তুই একপাক্ষিক ভালোবেসে যাচ্ছিস ইন্দুকে। মেয়েটা তো তোকে ভালোবাসে না তাহলে কেনো মেয়েটার পেছন পড়ে নিজের ফিউচার নষ্ট করছিস। আন্টির কথা ভাব আন্টি তোকে এতো টাকা পয়সা খরচ করে ডাক্তারি পড়িয়েছে কি এই দিন দেখার জন্য? ”

তুহিন বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। নিজেকে দেখিয়ে বলে-“ আচ্ছা দেখতো আমি কি দেখতে শুনতে খারাপ? চেহারা বাজে? ”

“ এটা কেমন কথা বলতেছিস তুই? আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ তুই।”

“ তাহলে ইন্দু কেনো ভালোবাসে না আমায়?”

নীলা অন্যমনষ্ক হয়ে বলে-“ তোর চেহারা ব্যাক্তিত্ব সব সুন্দর কিন্তু যারা ❝ভালোবাসা’ পাওয়ার জন্যে মানুষের কাছে ছ্যাচড়া বেহায়া হয়ে যায়, তাদেরকে মূলত বেহায়া হওয়ার কারণেই ভালোবাসে না মানুষ!❞ উদাহরণ নিশ্চয়ই দিতে হবে না।”

কথাটা বলে নীলা বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। সাগর তুহিনের কাঁধে হাত রেখে বলে-“ একটা ভুল ডিসিশানের উপর কিন্তু তোর পুরো লাইফ নির্ভর করছে। সো ভেবে চিন্তে ডিসিশন নিস।”

কথাটা বলে সাগরও চলে যায়। তুহিন তপ্ত শ্বাস ফেলে। ❝কেউ কারো পরিস্থিতি বুঝতে পারে না যতক্ষণ না সেই ব্যাক্তি, ওপর ব্যাক্তির মতো সেম পরিস্থিতিতে পড়ে। ❞

——————————-

বিকেলের দিকে আকাশটা কালো মেঘে ঢেকে গেছে। চারিদিক দিয়ে বইছে বাতাস। বাতাসের সাথে যুক্ত হয়েছে রাস্তার ধুলোবালি। এই বাতাস গুলো সংকেত দিচ্ছে গর্জে বৃষ্টি বা ঝড় আসবে। ইন্দু স্কুল থেকে বেরিয়ে তাড়াতাড়ি বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরে। বৃষ্টি নামার আগেই বাসায় যেতে হবে। আজ আর নিমি কে পড়াতে যাবে না। বাসার কাছে আসতে আসতেই গর্জে বৃষ্টি নামা ধরলো। ইন্দু আর না হেঁটে রাস্তার পাশে দোকানের সামনে গিয়ে আশ্রয় নিলো।

বেশখানিকটা সময় দাঁড়িয়ে থাকার পরও বৃষ্টি থামার নাম গন্ধে নেই। বৃষ্টির ফোঁটা গুলো বাতাসের কারনে ইন্দুর শরীর কে ভিজিয়ে দিচ্ছে। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে বাসায় আর সন্ধ্যার আগে ফিরতে পারবে না। ইন্দু বৃষ্টি মাথায় নিয়েই হাঁটা ধরলো। কয়েক কদম যেতেই হঠাৎ নিজের উপর বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে না দেখে উপর তাকিয়ে দেখে তার মাথার উপর ছাতা।

পাশে ঘুরতেই দেখে তুহিন ইন্দুর মাথায় ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর সে বৃষ্টি তে ভিজছে। ইন্দু ছাতার নিচ থেকে সরে যেতে চাইলে তুহিন বলে-“ সরে যেও না বৃষ্টি তে ভিজলে জ্বর আসবে।”

ইন্দু বিরক্তি নিয়ে বলে-“ আপনি আবার আসছেন কেনো? আপনি যে ভিজছেন আপনার জ্বর আসবে না? ছাতাটা আপনার আপনি কেনো ভিজছেন? আমার বাসা কাছেই চলে যেতে পারবো আমি।”

তুহিন কথা না বাড়িয়ে ছাতা টা ইন্দুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে-“ চুপচাপ বাসায় যাও। আন্টি হয়তো চিন্তা করছে। আর আমাকে নিয়ে তোমার টেনশন করতে হবে না। কিন্তু তোমাকে নিয়ে আমার টেনশন করতে হবে।”

কথাটা বলে তুহিন পেছন ঘুরে বাসার দিকে চলে যায়। ইন্দু তুহিনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে-“ আমায় কেনো ভালোবাসতে গেলেন তুহিন। আমার সত্যি টা জানলে মানতে পারবেন তো? তখন কষ্ট ঘৃণা লাগবে না?”

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে