যে প্রেম এসেছিল পর্ব-০৪

0
465

#যে_প্রেম_এসেছিল
#পর্ব৪
#Raiha_Zubair_Ripte

“ আসসালামু আলাইকুম ভাবি। আমি তুহিনের মা। চিনেন তো তুহিন কে?”

মনোয়ারা বেগম দরজায় কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলেই সামনে তুহিনের মা দেখে থমকে যায়। প্রথমত চিনে নি তাকে পরিচয় দেওয়ার পর চিনেছে। মনোয়ার বেগম সালামের জবাব দিয়ে সৌজন্যমূলক হাসি উপহার দিয়ে দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়ায় তুহিনের মা কে ভেতরে ঢুকতে দেয়ার জন্য। তুহিনের মা ভেতরে ঢুকে। মনোয়ারা বেগম তনয়া বেগম কে সোফায় বসতে বলে কিচেন রুমে গিয়ে হালকা নাস্তার ব্যাবস্থা করতে নিলে তনয়া বেগম বাঁধা দেয়। মনোয়ারা বেগমের হাত ধরে বলে-“ আপা আপনার সাথে আমি কিছু কথা বলতে এসেছি।

মনোয়ারা বেগম বলে-“ হুমম বলুন কি কথা আপা।”

তনয়া বেগম কিভাবে শুরু করবেন বুঝতে পারছেন না বেশ খানিকটা সময় হাসফাস করে বলে-“ আপা ইন্দুপ্রভা কে আমি আমার তুহিনের জন্য নিতে চাইছি। আপনি প্লিজ আপা অমত করবেন না।”

মনোয়ারা বেগম আন্দাজ করেছিলেন যে তনয়া বেগম এমন কথাই বলবেন। কিন্তু এই কথার প্রেক্ষিতে মনোয়ারা বেগমের কি বলা উচিত সেটা তার সত্যি জানা নেই। অতঃপর কিছু বলার জন্য উদ্যত হলে রুম থেকে ইন্দু বেরিয়ে এসে বলে-“ মাফ করবেন আন্টি আপনার ছেলেকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আপনার ছেলেকে আগেই বলে দিয়েছি তবুও যে কেনো বেহায়ার মতো আপনাকে পাঠালো আমার মাথায় আসছে না।”

কথাটা তনয়া বেগমের গায়ে লাগলেও ছেলের জন্য সয়ে নিলো। মুখে হাসির আভা ফুটিয়ে বলে-“ আমার ছেলে কে বিয়ে করতে তোমার অসুবিধে কোথায় ইন্দু? একটা ছেলে কে বিয়ে করতে হলে যা যা গুন থাকা লাগে সেসবই তো আমার ছেলের আছে। ”

ইন্দু তনয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে-“ আপনার ছেলে কে আমার পছন্দ না আন্টি। আপনি প্লিজ এটা নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করবেন না। আপনার ছেলেকে আমি বিয়ে করবে না। আই হোপ আপনি আপনার ছেলেকে বুঝাবেন আমাকে যেনো আর বিরক্তি না করে। কারন ব্যাবহারেই বংশের পরিচয় আন্টি আশা করি বুঝতে পারছেন কি মিন করছি।”

তনয়া বেগম তব্দা খেয়ে যায়। “ আমার ছেলেকে কেনো পছন্দ না তার একটা রিজন দাও ইন্দু যদি যুক্তিসঙ্গত হয় তাহলে আমি তোমায় কথা দিচ্ছি আর কখনো আমার ছেলে তোমার সম্মুখে আসবে না।”

ইন্দু ভরকে যায়। কি রিজন দিবে? তুহিন যথেষ্ট ভালো ছেলে তাকে অপছন্দ করার রিজন নাই বলতে গেলে। ইন্দুকে চুপ থাকতে দেখে তনয়া বেগম ফের বলে উঠে -“ কি হলো চুপ হয়ে গেলে যে? রিজন দাও। ”

ইন্দু তার মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে ফের তনয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে-“ আন্টি রিজন নেই আমার কাছে এটা সত্যি। কিন্তু ফোর্স করে তো আর সংসার বিয়ে হয় না। আমি মন থেকে আপনার ছেলেকে বিয়ে করতে চাইছি না। আপনি তো চাইবেন না আপনার ছেলে বৈবাহিক জীবনে অখুশি থাকুক। আপনি অন্য কোনো মেয়ে দেখুন আপনার ছেলের জন্য। আমি পারবো না আপনার ছেলে কে বিয়ে করতে।”

কথাটা বলে ইন্দু নিজের ঘরে চলে আসে। তনয়া বেগম মনোয়ারা বেগমের দিকে তাকাতেই মনোয়ারা বেগম বলে উঠে -“ আপা তুহিন কে আমার মেয়ের জামাই হিসেবে ভালোই লাগে। কিন্তু ভালো শুধু আমার লাগলেই তো চলবে না। সংসার তো করবে আমার মেয়ে সে যদি এখন বিয়ে করতে না চায় তাহলে আমি তো জোর করতে পারি না।”

“ আপনার কথায় সহমত পোষণ করছি আমি আপা। কিন্তু আমার ছেলেটা তার বাবা মা’রা যাওয়ার এতো গুলো বছর পর মুখ ফুটে এই প্রথম কিছু চেয়েছে আমার কাছে। আমি আস্বস্ত ও করেছি ইন্দুকে রাজি করাবো কিন্তু আপনার মেয়ে তো রাজি হচ্ছে না।”

“ আপা সময় দিন আরো দুজন কে। আমি চেষ্টা করবো ইন্দুকে রাজি করানোর।”

“ হুমম আপা একটু দেখবেন এই ব্যাপার টা।আজ আসি।”

কথাটা বলে তনয়া বেগম উঠে চলে যায়। মনোয়ারা বেগম ইন্দুর ঘরে গিয়ে দেখে ইন্দু বেলকনিতে বসে আছে। মনোয়ারা বেগম এগিয়ে গিয়ে ইন্দুর কাঁধে হাত রাখতেই ইন্দু তড়িঘড়ি করে বা হাত দিয়ে চোখের কোণে লেগে থাকা অশ্রু মুছে ফেলে। মনোয়ারা বেগম ইন্দু কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে-“ আর কত অশ্রু লুকানোর চেষ্টা করবি। ভালোবেসে ফেলছিস ছেলেটাকে স্বীকার করে নিচ্ছিস না কেনো?”

ইন্দু মনোয়ারা বেগমের থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে-“ কিসের অশ্রু মা। আমি কেনো অশ্রু লুকানোর চেষ্টা করবো? আর ঐ ছেলেকে আমি ভালোবাসি! নাইস জোক্স মা।”

মনেয়ারা বেগম স্মিত হাসে। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে-“ মা কে মিথ্যা ও বলা শিখে গেছিস। আমি তোর মা হই তুই না। জন্ম আমি তোকে দিয়েছি তুই না। কোনটা সত্যি বলছিস আর কোনটা মিথ্যা সেটা আমি খুব ভালো মতোই টের পাই। ভালোবাসা অপরাধ না ইন্দু। ছেলেটা তোকে ভালোবাসে। ভালোবাসে বিধায় তার মা কে আজ বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পাঠিয়েছে।”

ইন্দু তাচ্ছিল্যের সুরে বলে-“ সত্যি টা জানলে মা কখনো আর তার মা কে পাঠাতো না। ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালাতো।”

“ সবাই এক না ইন্দু। তুহিন কে বলে দেখ বিষয় টা। ”

ইন্দু কাট কাট গলায় বলে-“ কোনো দরকার নেই মা। ”

“ তাহলে কি এভাবেই চলতে থাকবে জীবন?”

“ যেভাবে চলছে চলুক না মা যখন জীবনের মোড় আসবে তখন আপনা-আপনিই জীবন থেমে যাবে।”

মনোয়ারা বেগম ইন্দুর দু গাল ধরে বলে-“ এভাবে জীবন চলে না মা। মেয়ে হয়ে জন্মেছো বিয়ে করতেই হবে আজ না হোক কাল।”

ইন্দু তার গাল ধরে রাখা মায়ের হাত দুটোর উপর হাত দিয়ে ছলছল চোখে বলে-“ যে মেয়ে না তার আবার কিসের সংসার কিসের বিয়ে মা? ভুলে গেছো আমি কি। আমি একটা ….

পুরো কথাটা আর শেষ করতে দেয় না মনোয়ারা বেগম মেয়েকে বুকে চেপে ধরে। ইন্দু মায়ের বুকে ঠাই পেয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। মেয়েকে কি বলে শান্তনা দিবে তার জানা নেই। একটা ভুলকে আঁকড়ে ধরে আছে। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে-“ তুই ওটা নস ইন্দু। কতবার বলবো? তোর সব কিছুই তো আর সব মেয়েদের মতোন তাহলে কেনো বারবার নিজেকে ওটা বলিস?”

ইন্দু মায়ের বুক থেকে মাথা সরিয়ে স্মিত হেসে বলে-“ আমাকে স্বান্তনা দিচ্ছো মা? বিশ্বাস করো আর স্বান্তনা নিতে ইচ্ছে করে না। আমি যদি সত্যি মেনে নিতে পারি তুমি কেনো মেনে নিচ্ছো না। আমার যেসব কান্ডিশন তাতে ওটার সাথে তুলনা করা। আর আমি জেনে শুনে একটা ছেলেকে ঠকাতে পারবো না মা।”

কথাটা বলে ইন্দু আকাশের পানে চায়। পাশের রুম থেকে হঠাৎ ইলিয়াসের ডাক আসতেই মনোয়ারা বেগম শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছে মেয়ের পানে চেয়ে চলে যায়।

ইন্দু বেলকনির রেলিং ধরে নিচে বসে পড়ে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। আর পাঁচটা মেয়ের মতো স্বাভাবিক জীবন দিলে কি এমন ক্ষতি হতো স্রষ্টার। যতোই নিজেকে শক্ত করে গড়তে চায় ততোবারই তুহিন নামক ঝড় এসে তাকে নড়বড়ে করে দিয়ে যায়। লোকটার ভালোবাসা স্বীকার করার ক্ষমতা তার নেই। আর লোকটাকে সত্যি বলে দিলে লোকটা নিশ্চয়ই ঘৃণা করবে আর সবার মতো।

কথাগুলো ভেবে ইন্দু নিরবে অশ্রু বিসর্জন দেয়। না জানি আর কত কি সহ্য করতে হবে।

————————

“ মা ইন্দুকে নিশ্চয়ই রাজি করিয়ে ফেলছো তাই না!”

তুহিন পড়নের এপ্রন টা খুলে মায়ের পাশে সোফায় বসতে বসতে উৎফুল্ল নিয়ে কথাটা বলে।

তনয়া বেগম সোফা থেকে উঠতে উঠতে বলে -“ রাজি হয় নি ইন্দুপ্রভা। সে বিয়ে করবে না তোকে।”

মুহুর্তে চোখ মুখে আধার নেমে আসে তুহিনের। মেয়েটা এমন কেনো? মুখে তবুও হাসি এনে তুহিন বলে-“ আমি বলেছিলাম না মা ইন্দু রাজি হবে না। রাজি করাতে হবে।”

তনয়া বেগম ঘুরে ছেলের পানে চেয়ে নির্বিকারে বলে-“ জোর করে রাজি করানো যায় না তুহিন। ইন্দু ডিরেক্টলি বলে দিছে সে তোকে ভালোবাসা না আর বিয়ে তো দূরে থাক।”

“ কিন্তু মা আমি তো ইন্দুকে ভালোবাসি। আমার ভালোবাসার কি মূল্য নেই?”

তনয়া বেগম ছেলের কাঁধে হাত রেখে বলে-” একতরফা ভালোবাসার মূল্য নেই তুহিন। তুই ভালোবাসলেও ইন্দু ভালোবাসে না। ভালোবাসা না থাকলে তো আর সংসার হয় না।”

তুহিন সোফায় থেকে উঠতে উঠতে কাট কাট গলায় বলে-“ দেখো মা আমি ঠিক ইন্দুর মন জয় করে নিবো। তাকে ঠিক রাজি করাবো আমায় ভালোবাসার জন্য। একদিন সে নিজের মুখে বলবে সে আমায় ভালোবাসে,দেখে নিও।”

“ আর কোনো মেয়ে নেই পৃথিবীতে? ইন্দুকেই কেনো ভালোবাসতে হলো?”

“ ভালোবাসা কি আর বলে কয়ে আসে মা? আমার শুধু ইন্দুকেই চাই অন্য কাউকে না।”

কথাটা বলে তুহিন চলে যায় নিজের রুমে। তনয়া বেগম ছেলের যাওয়ার পানে চেয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে