#যে_প্রেম_এসেছিল
#পর্ব৩
#Raiha_Zubair_Ripte
“ একটা মেয়ের পেছন আর কত ঘুরবি তুই। এখন যা শুরু করছিস সেটা কে তো ছ্যাচড়ামি বলে তুহিন। মেয়েটা তোকে ভালোবাসবে না বুঝিস না কেনো?”
হসপিটালের নিজের কেবিনে বসেছিল তুহিন হঠাৎ এমন কথা শুনে সামনে তাকিয়ে দেখে তার ফ্রেন্ড নীলা। ভ্রু কুঁচকে বলে-“ নক করে আসতে হয় জানিস না?”
নীলা তুহিনের সামনে গিয়ে বলে-“ না জানি না। তুই যা শুরু করছিস এবার অন্তত থাম।”
“ কি শুরু করছি?”
“ তিন তিনটা মাস ধরে একটা মেয়ের পেছন পরে আছিস এবার মেয়েটাকে রেহাই দে। ও ছাড়া কি আর মেয়ে নেই দুনিয়ায়। ওকেই পছন্দ করতে হলো তোর?”
“ আমি কাকে পছন্দ করবো না করবো সেটা তোর দেখার বিষয় না। কাজে ফোকাস কর।”
“ সেম টু ইউ। কাজে ফোকাস কর ঐ মেয়ের পেছন না ঘুরে।”
“ ঐ মেয়ে ঐ মেয়ে কি ওর নাম আছে। নাম ধরে ডাকতে না পারলে ঐ মেয়ে ঐ মেয়ে ও বলবি না।”
“ মাথাটা একদম খেয়ে ফেলছে ঐ মে.. ঐ ইন্দুপ্রভা তাই না। এর জন্য ফ্রেন্ডদের কেউ সময় দিতে পারিস না। কাল সন্ধ্যায় তোর জন্য আমরা ওয়েট করছিলাম রেস্টুরেন্টে তুই না এসে কি করলি ইন্দুর কাছে চলে গেলি বাহ!”
“ আমি আগেই বলেছিলাম যেতে পারবো না।”
“ কেনো যাবি না। ওর মধ্যে কি এমন আছে যা আমার মধ্যে নেই।”
নৈঃশব্দ্যে হাসলো তুহিন-“ এই তো লাইনে এসেছিস ইন্দুর সাথে কখনো নিজেকে কম্পেয়ার করিস না। ইন্দুকে কারো সাথে কম্পেয়ার করা যায় না। সে আমার ইন্দু একান্তই আমার। আর তোকে আগেও বলছি তুই জাস্ট ফ্রেন্ড আমার এর থেকে বেশি আমার কাছে কিছু আশা বা এক্সপেকটেশন রাখিস না। সবুজ তোকে খুব ভালোবাসে ছেলেটাকে বুঝার চেষ্টা কর।”
“ আমি ও তো তোকে ভালোবাসি আমাকে একটু বুঝার চেষ্টা কর।”
“ আমি ইন্দু কে ভালোবাসি।”
“ আর আমি তোকে।”
“ তুই যদি এমন করতে থাকিস নীলা সত্যি হসপিটাল টা ছাড়তে হবে আমার। আমি চাই না তোর সাথে খারাপ ব্যাবহার করতে। আশা করি তুই চাইবি না আমি হসপিটাল টা ছেড়ে চলে যাই।”
কথাটা বলে তুহিন কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। একটা অপারেশন আছে। অপারেশন টা তার হাতেই হবে।সেজন্য প্রিপেয়ার্ড হতে হবে।
নীলা তুহিনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। অজান্তেই দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে।
“ আমরা এমন মানুষকে ভালেবেসে ফেলি যাদের মনে অন্যের বসবাস থাকে। ভালেবাসায় এতো কষ্ট কেনো? এতো পিড়া দেয় কেনো? সহ্য হয় না।”
———————
আজ স্কুল অন্যান্য দিনের চাইতে তাড়াতাড়ি ছুটি দেওয়া হয়েছে। কাল এক্সাম সিট ফেলাবে সেজন্য। ইন্দু স্কুল থেকে বেরিয়ে সোজা নিমির বাসায় চলে যায়। নিমি এবার ক্লাস ফাইভে পড়ে। নিমিদের বাসায় গিয়ে কলিং বেল বাজাতেই নিমির মা দরজা খুলে দেয়। ইন্দু সৌজন্যের একটা হাসি দিয়ে বলে-“ নিমি কোথায়?”
নিমির মা নীলিমা হেসে বলে-“ সে তোমার জন্য পড়ার টেবিলে বসে অপেক্ষা করছে।”
ইন্দু নিমির রুমে ঢুকে দেখে নিমি খুব মনযোগ সহকারে কিছু একটা আকার চেষ্টা করছে। ইন্দু এগিয়ে গিয়ে দেখে ইন্দু তার ম্যাম কে আকার চেষ্টা চালাচ্ছে।
ইন্দু হেসে নিমির থেকে ড্রয়িং খাতা টা নিয়ে বলে-“ নিমি আমি দেখতে কি এমন? ”
নিমি উৎফুল্ল নিয়ে বলে-“ ম্যাম সুন্দর হয়েছে না?”
“ হুমম অনেক সুন্দর হয়েছে তবে আমার পাশে এই লোক টা কে?”
নিমি ড্রয়িং খাতা টা ইন্দুর হাত থেকে নিয়ে বলে-“ এটা তো তুহিন ভাইয়া।”
মুহূর্তে ইন্দুর মুখে রাগ স্পষ্ট হলে। ড্রয়িং খাতা টা শব্দ করে বন্ধ করে বলে-“ বই বের করো।”
নিমি বই বের করলে ইন্দু তাকে পড়াতে আরম্ভ করে।
তিন মাস আগে নিমি কে পড়ানোর জন্য এসেছিল এই এলাকায়। তখন চিনতো না ইন্দু কোনটা নিমিদের বাসা। ফ্রেন্ডদের থেকে জেনেছিল যে নিমির টিউটর লাগবে। ঠিকানা ও নিয়েছিল কিন্তু নিমি আর তুহিন দের বাসা পাশাপাশি হওয়ায় ভুল করে তুহিন দের বাসায় নক করে ফেলেছিল ইন্দু।
হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে তুহি এগিয়ে এসে দরজা খুলে সামনে অপরিচিত একটা মুখ দেখে থমকে যায়। গোল জামা পরিহিত মেয়ে চুল গুলো খোঁপা করা। কপালের মাঝ বরাবর কালো তিল। মুখে রয়েছে ঘামের ছিটেফোঁটা। এতেই যেনো মেয়েটাকে লাগছে অপ্সরি। মেয়েটার থেকে চোখ সরানো যেনো দুষ্কর হয়ে যায়।
তুহিন কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইন্দু গলা ঝেড়ে কেশে নেয়-“ এটা কি নিমিদের বাসা?”
তুহিন চোখ বন্ধ করে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে-“ এটা নিমিদের বাসা না। পাশের বাসা টা নিমিদের। কিন্তু আপনি কে?”
“ ওহ্ সরি আসলে আমি বুঝতে পারি নি দুঃখিত।”
“ কিন্তু আপনি কে?”
“ নিমির নতুন টিউটর। ”
“ নাম কি আপনার?”
“ জ্বি?”
“ কানে কম শুনেন নাকি? বলেছি আপনার নাম কি?”
“ সেটা আপনায় কেনো বলবো?”
“ আচ্ছা না বললেন জেনে নিবো। পড়ালেখা করেন কোন ক্লাসে?”
ইন্দুর রাগ উঠে গেলো। লোকটা এতো কথা জিজ্ঞেস কেনো করছে। ইন্দু প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা নিমিদের বাসায় চলে আসে।
সেই থেকে রোজ নিমিদের বাসায় আসার সময় গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। কথা বলার জন্য চেষ্টা করতো কিন্তু ইন্দু তুহিন কে ইগনোর করে চলে আসতো।
কাছের কিছু ফ্রেন্ড আর নিমির থেকে বাসার ঠিকানা,নাম, কি করে সব জেনেছে।
সেই থেকে লোকটা পেছনে পড়ে আছে। ভালোবাসি বলে বলে পাগল করে ফেলছে। কত বার ইন্দু বলেছে সে তাকে ভালোবাসে না,এমন কি মিথ্যা ও বলেছে যে ইন্দু অন্য কাউকে ভালোবাসে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। ছেলেটা সেই মিথ্যাও ধরে ফেলছে।
“ ম্যাম অংক করা শেষ।”
হঠাৎ নিমির কথায় ঘোর ভাঙে ইন্দুর। খাতা টা নিয়ে অংক গুলো দেখে আর কিছুক্ষণ পড়িয়ে বাসায় চলে আসে।
——————
“ আজকাল তোকে এতো অন্যমনস্ক লাগে কেনো তুহিন কিছু হয়েছে?”
তুহিন ডাইনিং টেবিলে বসে ভাত না খেয়ে অনেকক্ষণ যাবৎ ভাতের প্লেটে হাত নাড়াচ্ছিল। সেটা দেখে তুহিনের মা তনয়া বেগম কথাটা বলে উঠে।
তুহিন মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে-“ আচ্ছা মা তোমার ইন্দুপ্রভা কে কেমন লাগে?”
তনয়া বেগম ভ্রুকুটি করে বলে -“ নিমির টিউটর? ”
“হুম।”
“ বেশ ভালোই তো মেয়েটা। গোছগাছ পরিপাটি। কিন্তু তুই হঠাৎ ইন্দুপ্রভার কথা বলছিস কেনো?”
“ তাকে তোমার ছেলের বউ করলে কেমন হবে?”
তনয়া বেগম আশ্চর্য হয়-“ মানে কি? ইন্দুপ্রভা কে তুই বিয়ে করতে চাইছিস? ”
“ হুমম মা। আই থিংক তোমার আপত্তি থাকার কথা নয়।”
“ আমার আপত্তি নেই। ”
“ তাহলে মা ইন্দুর বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যাও।”
“ সে না হয় যাবো। কিন্তু…
“ কোনো কিন্তু নয় মা। দেখতেছো তো আমি ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করি না। অন্যমনস্ক হয়ে থাকি তুমিই তো বললা। দেখো চোখের নিচে মেয়েদের মতো ডার্ক সার্কেল হয়ে গেছে। তুমি না সেদিন বললা বিয়ে দিবা তাহলে?”
“ আচ্ছা বাপ আমি কালই যাবো ইন্দুর বাসায়।”
“ শুধু গেলেই হবে না মা ইন্দু কে রাজি ও করাতে হবে তোমার।”
“ সেকি আমি কেনো রাজি করাবো?”
“ ইন্দু আমায় বিয়ে করতে রাজি না মা। তুমি তাকে বুঝাবা রাজি করাবা। আমি কিন্তু ইন্দুকে না পেলে দেবদাস হয়ে যাবো মা। তখন কিন্তু কেঁদে কেটেও আমায় রোমিও বানানো যাবে না।”
“ আচ্ছা আমি দেখছি। তুই আগে খেয়ে নে।”
#চলবে