যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
৪.
তরী যখন হসপিটাল থেকে বের হয় তখন মাথার উপর রুটির ন্যায় গোলাকৃতির চাঁদটা নিজের সোনালী আভা চারিদিকে ছড়াতে ব্যস্ত। আজকে লাস্ট মোমেন্টে ডক্টর রায়হানের আদেশে ইমার্জেন্সি একটা সার্জারি এসিস্ট করতে হয়েছে তার। সারাদিনের ক্লান্তি তার চোখে মুখে ফুটে আছে। নীরব পায়ে পার্কিং ধরে হেঁটে নিজের নীল রঙা গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় সে। হ্যান্ড পার্স থেকে কার কি খুঁজে বের করতে করতেই তার চোখ পড়ে রাস্তার অপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাইভেট কারটার দিকে।
তরী ভ্রু কুচকে গাড়ির ভেতর ফ্রন্ট সিটে বসে থাকা ছেলে দুটোর দিকে ক্ষানিকক্ষন তাকিয়ে রয়। তার মনে হচ্ছে এই ছেলে দুটোকে সে আগেও কোথাও দেখেছে। অসভ্য মস্তিষ্ক এই মুহুর্তে তা মনে করতে পারছে না। তরী আপাতত মনে করার চেষ্টা বাদ দেয়। সে সূক্ষ্ম চোখে ছেলে দুটোর দৃষ্টি পরখ করে। হসপিটালের মেইন গেটের দিকেই তাদের দৃষ্টি স্থির।
ফোনের রিংটোনের শব্দে তরীর মনযোগ ভাঙ্গে। ব্যাগ থেকে গাড়ির চাবি এবং ফোন দুটোই বের করে হাতে নেয় সে। কল রিসিভ করে আবার সামনের দিকে দৃষ্টি রেখেই সে বলে উঠে,
“ হ্যাঁ ছোট। “
তূর্য সামান্য চিন্তিত গলায় বলে,
“ আপি, বের হয়েছিস? আমি পিক করতে আসবো তোকে? “
তরী সামান্য শাসিয়ে বলে,
“ আমি গুনে গুনে তোর থেকে ২ বছরের বড়। একদম আমার বড় ভাই সাজতে আসবি না। “
তূর্য বিরক্তিকর গলায় বলে,
“ রাত ১২ টা ১৮ বাজে। সেজন্যই তোকে তূর্য পিক আপ সার্ভিসের অফার করছিলাম। নাহয় আমার এছাড়াও বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে করার মতো। “
“ আই এম এন ইন্ডিপেন্ডেন্ট এডাল্ট ওমেন ছোট। আই নো মাই ওয়ে ব্যাক টু হোম। যদি কিছু করতে চাস তাহলে পাস্তা বেক কর। আই এম সো হাংরি। “
কথাটা বলতে বলতেই তরীর দৃষ্টি যায় হসপিটাল থেকে বেরিয়ে বাইকে উঠে বসা একটা ছেলের দিকে। ছেলেটা বাইক স্টার্ট দিতেই সে গাড়িটা সেই বাইকের পিছু পিছু স্টার্ট দেয়। তরীর সতর্ক মস্তিষ্ক সাথে সাথে কিছু একটা আঁচ করে। সে গাড়িতে উঠে বসতে বসতে তূর্যকে বলে উঠে,
“ তোর যেহেতু এতো চিন্তা হচ্ছে তাহলে ফোন কাটিস না। ফোন স্পিকারে রেখে রান্না করতে থাক। আমি গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছি। “
তূর্য অপরপাশ থেকে বলে,
“ ওকে ওকে। “
তরী গাড়ি স্টার্ট দিয়েই সাথে সাথে সেই গাড়িকে ফলো করা শুরু করে। মূলত সে একটা মিথ্যে অযুহাত দেখিয়ে ইচ্ছে করেই তূর্যকে কলে রেখেছে। কোনো ব্যাক আপ ছাড়া অপরিচিত একটা গাড়িকে ফলো করার মতো বোকা নয় সে।
কিছুদূর যেতেই তরীর সন্দেহ সত্যি হয়। ওই গাড়িটা আসলেই ওই বাইকটাকে ফলো করছে। কিন্তু কারণ কি হতে পারে? তরী ড্রাইভিং করার মাঝেই টুকটাক হুম হা বলে তূর্যের কথার প্রতুত্তর করে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই তার গাড়ির সামনে একটা রিকশা এসে পড়তেই সে গাড়ির স্পিড কমিয়ে ফেলে। চোখের পলকেই সে ওই বাইক এবং গাড়ি দুটোকেই হারিয়ে ফেলে। বিরক্ত ভঙ্গিতে তরী নিজের বাসার রাস্তায় গাড়ি ঘুরায়। মাথায় তার ঘুরতে থাকে এতক্ষণের ঘটনাটা। ক্রাইম রিলেটেড কোনো ঘটনা না তো?
__________
“ আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি। “
সকাল সকাল খাবার টেবিলে শোভনের বলা কথায় যেন একটা ছোট খাটো বিস্ফোরণ ঘটে গেলো। পৃথা প্রবল আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করে,
“ মেয়েটা কে রে ছোট দা? কোথায় পেয়েছিস? পরিচয় কতদিনের? সে-ও কি তোর মতো পুলিশে? “
সাদিকা বেগমেরও বেশ আগ্রহ দেখা গেলো। তিনি শান্ত মন্ত সুরে প্রশ্ন করেন,
“ নাম কি মেয়েটার? “
শোভন বেশ শান্ত গলায় জবাই দেয়,
“ মধুমিতা হায়দার। “
পার্থ এতক্ষণে নীরবতা ভেঙে বলে,
“ পছন্দ করিস ভালো কথা। বিয়ে করতে চাচ্ছিস? “
“ বিয়ে করার ইনটেনশন না থাকলে নিশ্চয়ই আমি ওর কথা তোমাদের জানাতাম না। তাই না? “
ছোট ভাইয়ের সামান্য বাকা কথায় পার্থর মাঝে তেমন একটা ভাবান্তর দেখা গেলো না। সে আপনমনে খেতে খেতে জবাব দেয়,
“ বিয়ে করতে চাইলে মেয়ের পরিবারের সাথে কথা বল। বড়দের পারমিশন চেয়ে দেখ। দিলে দিবে আর না দিলে আমাকে জানাবি। মেয়ে তুলে কাজি অফিসে তোর কাছে সহি সালামতে পৌঁছে দিবো। “
পার্থর এহেন কথায় আফজাল সাহেব হতভম্ব। উনার খাবার গলায় আটকে কাশি উঠে গিয়েছে। সাদিকা বেগমও বোকার ন্যায় তাকিয়ে আছে। তাদের আশ্চর্যের পরিমাণ আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে শোভন বলে উঠে,
“ তা নিয়ে তোমার চিন্তা না করলেও চলবে দাদা। প্রেম যেহেতু করতে পেরেছি, তুলে নিয়ে বিয়ে করাটাও সেহেতু অসম্ভব না আমার দ্বারা। “
দুই ভাইয়ের কথা শুনে পৃথা বেশ মজা পাচ্ছে। তার ভাইদের এই ডেয়ারিং এটিটিউডটা তার বেশ পছন্দের। সে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,
“ ছোট দা, কেউ না মানলেও আমি কিন্তু তোর পাশে আছি। আমাকে না জানিয়ে কিন্তু কিছু করবি না। “
ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিজের গলাটা ভিজিয়ে নেয় আফজাল সাহেব। পর মুহুর্তেই হুংকার ছেড়ে বলে উঠে,
“ আমি এখানে উপস্থিত আছি সেই খেয়াল কি কারো আছে? “
শোভন নির্বিকার ভঙ্গিতে জবাব দেয়,
“ তোমার ছেলেরা অন্ধ না আব্বা। ৮২ কেজি ওজনের তুমি আমাদের দৃষ্টিগোচর নও। “
আফজাল সাহেব আবার ধমকে বলে উঠে,
“ এই ছেলে। পুরো জীবন তোমাদের বয়স স্কুলে পড়িয়েছি যেনো কোনো মেয়ে জাতীয় বিষয়ে জড়িয়ে না পড়ো তোমরা। আর এখন পরিপূর্ণ বয়সে এসে কিনা দুই ভাই মিলে আরেক বাড়ির মেয়ে তুলে আনার পরিকল্পনা করছো? বলি মাথাটা কি গেছে তোমাদের? বাসায় কি মা বোন নেই তোমাদের? “
পার্থ এই পর্যায়ে বলে উঠে,
“ আমাদের বাসায় মা-ও আছে এবং বোন-ও আছে। সেজন্যই সসম্মানে একটা মেয়েকে এই বাড়ির বৌ করে আনার প্ল্যান করছি। আর বিয়ে করা তো কোনো অপরাধ নয়। উল্টো আ’ম প্রাউড অফ শোভন। ও তোমাদের কষ্ট হবে ভেবে নিজেই মেয়ে পছন্দ করে নিয়েছে। “
শোভন খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“ আই হ্যাভ টু গো নাও। আল্লাহ হাফেজ। বাকি কথা রাতে হবে। “
পার্থও পরপর বলে উঠে,
“ আমারও কাজ আছে। রাতে এসে কথা হবে। “
খাবারের টেবিলে রয়ে যায় কেবল পৃথা, আফজাল সাহেব এবং সাদিকা বেগম। আফজাল সাহেবের মাথা দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। উনি রাগী সুরে সাদিকা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
“ পার্থর মা? তুমি নিশ্চিত এই দুটো আমারই ছেলে তো? হসপিটালে অন্য কারো সাথে আমাদের বাচ্চা চেঞ্জ হয়ে যায় নি তো? এরকম বেপরোয়া ছেলে কখনোই আমার হতে পারে না। আমি কখনো আমার আব্বার দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহসও করতাম না। “
সাদিকা বেগম কি জবাব দিবে খুঁজে পায় না। তার ছেলে দুটো খুবই ভদ্র শান্ত। মাঝেমধ্যে দু চারটে ত্যাড়া কথাবার্তা বলে। এই যা! পৃথা কথার মাঝে ফোঁড়ন কেটে বলে,
“ আব্বা, তুমি কিন্তু একটা বিষয় ভুলে যাচ্ছো। “
আফজাল সাহেব চোখ ভাজ করে প্রশ্ন করে,
“ কি? “
“ তুমি আর আম্মাও কিন্তু নানাজানের মতের বিপক্ষে গিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছিলে। “
কথাটা বলেই পৃথা আর এক দন্ড অপেক্ষা করে না। সাথে সাথে সেখান থেকে কেটে পড়ে। মেয়ের মুখে এই কথা শুনে আফজাল সাহেবের মুখটা চুপসে যায়। তিনি সাদিকা বেগমের দিকে চোখ পাকিয়ে বলে,
“ ছেলে মেয়েদের আরো নিজের বিয়ের গল্প শুনাও। দেখলে? শশুড় আব্বা এতদিন কম ছিলো? এখন নিজের মেয়েও এই কথা বলে খোঁচা মারে। “
সাদিকা বেগম কোনো জবাব দেয় না। কিন্তু আড়ালে একগাল হাসতেও ভুলেন না তিনি।
__________
“ আপনার এই ব্যাথাটা ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছে? “
তরীর প্রশ্নের পিঠে তার সামনে বসে থাকা পঞ্চাশোর্ধ মহিলাটি দুখী দুখী মুখ করে বলে উঠে,
“ আমার ভাইটা মারা যাওয়ার দু সপ্তাহ আগে থেকেই খালি এভাবে বুকে চিপ দিয়ে ধরতো থেকে থেকে। আমার সারাদিন মনে হতো কোনো কুলক্ষণে সংকেত এটা। হলো ও তাই। ঠিক দুই সপ্তাহ পরেই আমার ভাইটা মারা যায়। আমি তখন নিশ্চিত হয়ে গিয়েছি যে আমার ভাই মারা যাবে তা আগে থেকেই আমার মন জেনে গিয়েছিলো। এজন্যই তো থেকে থেকে এমন ব্যাথা হয় শুধু। “
ভদ্রমহিলার এতো অপ্রয়োজনীয় উত্তর শুনে তরী হতাশ হয়। এরকম ঘটনা আজ নতুন নয়। ইন্টার্নশিপের শুরু থেকে, জব লাইফের গত এক বছরে এরকম বহু অদ্ভুত অদ্ভুত পেশেন্টের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়েছে। এদের প্রশ্ন করা হয় একটা এবং এরা জবাব দেয় আরেকটা। তরী রেগে যায় না, বিরক্তও হয় না। বরং বেশ বিনয়ী ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে,
“ আমি সময়টা জানতে চাচ্ছি। মানে কতদিন ধরে আপনার এই সমস্যা? “
“ সাত মাস ধরে। “
তরী ফাইলে কিছু টেস্টস লিখে দিয়ে মহিলার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
“ আপনি এই টেস্ট গুলো করে আগামী সোমবার রিপোর্ট সহ আমার সাথে দেখা করতে আসবেন। “
ফাইলে লিখে দেওয়া টেস্টের লিস্ট দেখে মহিলার পাশে বসে থাকা উনার স্বামী বেশ চটে যায়। বিদ্রুপের সুরে বলে উঠে,
“ হসপিটাল গুলো কসাইখানা হয়ে গিয়েছে আর ডাক্তার গুলো কষাই। “
কথাটা তরীর কর্ণগোচর হয় না। সে বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে অমায়িক হেসে লোকটার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
“ প্রথমত রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা অবস্থায় আপনারা নিজেরাই সেটাকে গুরুত্ব দেন না। তারপর যখন সমস্যা বেড়ে কোনো বিশাল আকার ধারণ করে তখন এই কষাইদের কাছেই আসেন। অথচ প্রথমে সমস্যা অনুভব করতেই যদি আপনারা ডাক্তারদের কাছে আসতেন তাহলে কিন্তু এতো টেস্টের প্রয়োজন পড়তো না। নিজেদের দোষটা আপনারা দেখতে পান না কখনো, সব দোষ হয়ে যায় কষাইদের। কি অদ্ভুত তাই না? “
মহিলা আর লোকটার মুখ বেশ থমথমে দেখা যায়। তরী নিজেই আবার বলে উঠে,
“ ফাইলে লিখে দেওয়া একটা টেস্টও অপ্রয়োজনীয় না। উনার কি কি রোগ হয়ে থাকতে পারে সেই ধারণা করেই এই টেস্টগুলো দেওয়া হয়েছে। আর যেকোনো অসুখের প্রথম ট্রিটমেন্টই হচ্ছে নিজের ডাক্তারকে বিশ্বাস করতে শিখুন। আই হোপ ইউ উইল রিমেম্বার ইট। “
সেই ভদ্রমহিলা এবং তার স্বামী বেরিয়ে যেতেই একজন পুরুষ নক করে তরীর কেবিনে প্রবেশ করে। তরীকে একবার দেখে উনি হেসে শুধায়,
“ আপনাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে ডক্টর তরী। খারাপ লাগছে? “
ডক্টর রায়হানের এরকম অযাচিত চিন্তা তরীকে বেশ অস্বস্তি দেয়। লোকটা তার সিনিয়র। তার উপর বিবাহিত। তবুও বিভিন্ন ছুঁতোয় উনি তরীর সাথে খোশগল্পে মেতে উঠার চেষ্টায় ব্যস্ত থাকে সবসময়। ঝামেলা এড়াতে এবং ভদ্রতার খাতিরে তরী সবসময় হাসি মুখেই উনার সাথে কথা বলে। কিন্তু তার এই হাসি মুখে কথা বলাটাকে যেন এই লোক প্রশ্রয় ভেবে বসেছে। তরী মিথ্যা হাসি না দিয়ে মুখে নিজের বিরক্তিটা স্পষ্ট করে বলে উঠে,
“ আমি খুব ব্যস্ত ডক্টর রায়হান। প্লিজ এক্সকিউজ মি। “
কথাটা বলেই তরী ল্যান্ডলাইনে কল করে বাহিরে বসে থাকা এসিস্ট্যান্টকে বলে পরবর্তী পেশেন্টকে পাঠাতে। অপমানে থমথমে মুখ নিয়ে রায়হান চুপচাপ কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতেই তরী প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেয়। মেয়ে মানুষের একটা গুণ আছে। কে তার দিকে কোন দৃষ্টিতে তাকায় তা সে স্পষ্ট বুঝতে পারে। তরীও তার ব্যতিক্রম নয়। তার বয়স বর্তমানে ২৭ ছুঁই ছুঁই। জীবনে বহু ধরনের পুরুষ মানুষকেই সে দেখেছে। তাদের কল্যাণে এখন মানুষ চিনতে মোটেও ভুল হয় না তার।
__________
রাত ১২ টা প্রায়। পৃথা এইমাত্র নতুন একটা সিম ফোনে ইনসার্ট করেছে। বহু সংশয় কাটিয়ে মুখস্ত নাম্বারটা ডায়াল করে সে। আজ ঠিক করে রেখেছে কোনো কথা বলবে না। কেবল একবার সেই অতি শেয়ানা লোকটার কণ্ঠস্বর শুনেই ফোন রেখে দিবে। তার কণ্ঠ না শুনলে নিশ্চয়ই লোকটা তাকে চিনতে পারবে না আর?
যেমন ভাবনা তেমন কাজ। কিছুক্ষণ রিং হতেই কল রিসিভ হয়। পৃথা কোনো কথা বলে না। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে অপর পাশের মানুষটাও টু শব্দ করে না। পৃথা অপেক্ষা করে। মৃদু অধৈর্য্যও হয় বটে। খানিকক্ষণ পার হওয়ার পর অপর পাশ থেকে গভীর কণ্ঠ ভেসে আসে,
“ মিস এ বি সি। আজ কি কথা না বলার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন? “
পৃথা অবাক হয়। মিস এ বি সি? কে? তাকে কি এ বি সি বলে সম্বোধন করলো লোকটা? কিন্তু বুঝলো কিভাবে এটা পৃথা? একই স্বর আবার ভেসে আসে,
“ আপনার নাম আমার জানা নেই। আর ম্যাথ বই হতে মান অথবা নাম না জানা যেকোনো কিছুকে এ বি সি কিংবা এক্স ওয়াই জেট হিসেবে ধরা শিখেছি আমি। আরেকটা কথা হলো এই এতো রাতে আননোন নাম্বার থেকে খোঁজ নেওয়ার মতো কোনো বউ নেই আমার। “
পৃথা নিজের মাথা চাপড়ালো। সে কি বেশি বোকা? নাকি এই লোকটা বেশি চালাক? উত্তর খুঁজে পেলো না সে। বলার মতো কোনো কথাও নয়।
“ পৃথা আমি। মিস এ বি সি অথবা কারো বউ নই। “
কথাটা বলেই পৃথা ফট করে ফোন কেটে দেয়। সবসময় তোতাপাখির ন্যায় কথা বলে বেড়ানো অষ্টাদশী পরপর দুবার একই মানুষের সামনে কথার খেই হারিয়ে ফেলেছে। এ যে মোটেও মেনে নেওয়ার মতো বিষয় নয়।
পৃথার ফোনে টুং করে নোটিফিকেশন বারের শব্দ হয়। আনমনে ফোন আনলক করে ম্যাসেজটা দেখতেই তার চক্ষু চরাকগাছ হয়ে যায়।
“ আমি আপনাকে প্রেমিকা কিংবা বউ হওয়ার অফার করি নি মিস। আর না আমি আপনাকে একবারও কল করেছি। শুরুটা কিন্তু আপনিই করেছেন। তাই বলে শেষ করার অধিকার আমি আপনাকে দেই নি মোটেও। “
চলবে…
[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]