যুগলবন্দী পায়রা পর্ব-৫+৬

0
898

#যুগলবন্দী_পায়রা🕊️
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
#পর্ব-৫

মেয়েটিকে ঘর থেকে বের করে দেয়ার পর ইয়ামিন লক্ষ করলো তার মন খারাপ লাগচ্ছে।ভিষন রকম খারাপ। অথচ মন খারাপ লাগার মতো কোনো কারণ ছিলো না। বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ইয়ামিন তার হল রুমের বড় কাঁচের জানালার সামনে এসে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরিয়েছে। নিকোটিনের কালো ধোয়া টান দিয়ে নাক, মুখ দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে ইয়ামিন। মেয়েটিকে সে এক রাতের জন্যই আশ্রয় দিয়ে ছিলো। সকাল হয়েছে সে চলে যাবে এটাই স্বাভাবিক! কিন্তু মেয়েটির সাথে সেই রূঢ় ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিয়েছে তাই কি খারাপ লাগচ্ছে? ইয়ামিন সিগারেটের আরেক টান দিলো। বৃষ্টির ঝাপটা আসচ্ছে আধো খাওয়া সিগারেট ভিজে যাচ্ছে। তাতেও তারা নেই ইয়ামিনের। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাহিরে। অথচ তার দৃষ্টি কোথাও স্থীর নেই। চোখে ভাসচ্ছে সকালে টেবিলে বসে খাবার খেতে থাকা মেয়েটি।গোল-গাল একটি পরিচিত মুখ। যেন মনে হচ্ছে কত চেনা? অথচ ইয়ামিন জানে? তা সম্ভব নয়। তবুও মনের মাঝে প্রশ্ন উদ্বেগ হয়, কেন-ও নয়?মনের এই অসংখ্য প্রশ্ন এক পর্যায় জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে জানালা বন্ধ করে দেয়। হয়তো তার ধারণা মনের দুঃখ, কষ্ট সে এই মুহূর্তে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে বাহিরে। ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো ইয়ামিন। সোফায় বসে আরেকটি সিগারেট ধরিয়ে টিভি ওন করলো। সাথে সাথে ভেসে উঠলো চট্টগ্রামের সাথে বিছিন্নর খবর। ইয়ামিন কি ভেবে উঠে দাঁড়ালো। সিগারেট এস্টে মারিয়ে অস্থির হয়ে বেড়িয়ে গেলো। এত ব্যাকুলতা কেন হচ্ছে ইয়ামিনের?

কার্যকরণ ছাড়া পৃথিবীতে কিছুই হয় না!সে কি কার্যকারণ ছাড়াই মেয়েটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে?নিশ্চয়ই না?আবার হয়তো আছে? যা ইয়ামিন স্বীকার করতে চাইছে না? মেয়েটি দু হাত মুখ চেপে কাঁদচ্ছে বসে। যতবার মেয়েটিকে দেখে তার বুক ধকধক করে। মনে হয় তার মেহুলের কথা! কি অসম্ভব মিল তাদের! এলো মেলো কেশ বাতাসের সাথে উড়চ্ছে। ইয়ামি তার কাছে গেলো।

“এক্সকিউজ মি মিস?”

পরিচিত এক কন্ঠে চট করে তাকালো মহুয়া মনের ভয় ভীতি ঠেলে ইয়ামিনকে জড়িয়ে ধরলো। হাউমাউ করে কেঁদে দিল বুকে মুখ গুঁজে। বেচারা ইয়ামিন হতবিহ্বল ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো। কি আশ্চর্য? মেয়েটি কাঁদলেও মেহুলের মতো মনে হয়। শরীর কাঁপতে লাগে ইয়ামিনের! একরকম চেহারার মানুষ অনেকেই আছে এ পৃথিবীতে। মিল থাকা কি অস্বাভাবিক কিছু?

“আপনি ঠিক আছেন? কাঁদচ্ছেন কেনো মিস?”

মহুয়া নাক টানলো। ইয়ামিনের বুক থেকে মাথা তুলে কোঁদন রত কন্ঠে বলল,,

” আমি বাসায় যেতে পারবো না! এখানেও কাউকে চিনি না! কোথায় যাবো ভেবে পাচ্ছি না। যার জন্য এত দূর এসেছি তার ঠিকানা হারিয়ে ফেলেছি। কি করবো বুঝতে পাড়ছি না। আপনাকে দেখে আর কান্না আটকাতে পারিনি৷ মনে হচ্ছিলো আপনি আমার শেষ ভরসা!”

আবার কেঁদে উঠলো মহুয়া। ইয়ামিন বলল,,

“কাঁদবেন না মিস! আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন!”

মহুয়া কিছু বলল না তাকিয়ে রইলো ইয়ামিনের গম্ভীর দাম্ভিকতাপূর্ন মুখ পানে।

————–

সন্ধ্যার আজান দিচ্ছে। মহুয়াকে নিয়ে বের হয়েছে ইয়ামিন। না চাইতেও সে চাইছে মহুয়ার সাহায্য করতে। কিন্তু মেয়েটিকি পাগল? এত দূর এক ধোঁয়াশার পিছনে ছুটে আসচ্ছে মহুয়া?

“তো আপনি আপনার চিঠি প্রেমিক খুজতেই এত দূর চলে এলেন?আদো তার অস্তিত্ব আছে কি না? ভেবেছেন কখনো?এটা পাগলামি ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না মিস মহুয়া!”

মহুয়া গাড়ির জানালা ভেদ করে বাহিরে তাকিয়ে আছে। পড়নে তার কলাপাতা রঙ্গের সুতি জামা। বড় চুল গুলো আজ খোঁপা করা৷ সামনের ছোট চুল গুলো বাতাসের তালে তালে নড়ছে।মহুয়া ডান হাতে চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিলো। ঠোঁটে দেখা গেল চকচক হাসি। বৃষ্টি নেই অন্ধকার স্থীর চারিদিক। মহুয়া বলল,,

“ভালোবাসা মানেই তো পাগলামি! আজ যদি তার সাথে শুধু প্রেমের সম্পর্ক থাকতো? তাহলে হয়তো ভুলে যেতাম৷ কিন্তু তার সাথে আমার অন্তরের সম্পর্ক, আত্মার সম্পর্ক।”

ইয়ামিন হাসলো, কিশোরী তরুণী মেয়েদের এসব বিষয়ে বুঝি ঝোঁক বেশি থাকে? এরা দুনিয়ার কালো কুৎসিত অন্ধকার ভয় পায় না? ভালোবাসায় এত শক্তি? তাহলে ইয়ামিনের সাথে এমন কেন হলো? মুহুর্তে ইয়ামিন বুঝতে পারলো তার বিরক্তি লাগচ্ছে। এই ভালোবাসা নামক বস্তু তার বিরক্তি বাড়চ্ছে। ইয়ামিন অকপটে বলল,,

“এসব গল্প, কথা, কাল্পনিক। বাস্তবতায় ভিত্তিহীন!”

মহুয়া কঁপাল কুচকে ইয়ামিনের দিক তাকালো। বিজ্ঞ মানুষদের মতো বলল,,

“মোটেও নয়। ভালবাসা পবিত্র। ভালোবাসা আছে বলেই এ পৃথিবী টিকে আছে!”

“তা আছে। কিন্তু চিঠি, ফিঠির প্রেম এসব বাচ্চামো!”

“নব্বই দশকের মানুষ গুলো কিন্তু এমন বাচ্চামো করতো সাহেব! ”

“তখনের বিষয় বস্তু আলাদা ছিলো মিস মহুয়া। আর এখন ছেলে, মেয়ে ঘন্টায় ঘন্টায় প্রেম করে। আর সেখানে আপনার পায়রা প্রেমিক খুঁজে পাওয়া কি ধোয়াশা নয়?”

মহুয়ার কান্না পেলো। চোখ দুটি বাহিরে নিবদ্ধ করলো। মিনমিন করে বলল,

” সে আছে। আমি জানি আছে। আমি যেমন তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি? সেও খুঁজে বেড়াচ্ছ। আমার মন বলছে সে আছে!”

মহুয়ার ভাবনা তড়াক করে বেঘাত ঘটলা মহুয়ার ফোনের রিং টোন। কিছুক্ষণ আগেই ফোন ওন করেছিলো সে। বাসায় বার কয়েক কল দিয়েও কোনো লাভ হয়নি মহুয়ার কেউ ফোন তুলে নি। কিন্তু মহুয়া অবাক। বাসা থেকে কল এসেছে দেখে। চোখ দেখে জলের ফোয়ারা। ফোন তুলতেই ওপাশ থেকে ভেসে উঠলো খড়খড়ে কন্ঠ,

” আমাকে অযথা ফোন দিয়ে বিরক্ত করবে না তুমি। আমি ভেবে নিয়েছি আমার এক মেয়ে মরে গেছে। এর পর ফোন দিলে আমার আর তোমার মায়ে মরা মুখ দিখবে!”

মহুয়ার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। ওপাশ থেকে ফোন কেঁটে যেতেই হু হু করে কেঁদে উঠলো মহুয়া। বাবার বলা প্রতিটি কথা বুকে সুইয়ের মতো বিদ্ধ করতে লাগলো।ইয়ামিন মহুয়ার দিক তাকিয়ে রইলো। তার বুকে কেমন জানি লাগচ্ছে মেয়েটিকে কাঁদতে দেখে। মনে হচ্ছে দুনিয়ার সব বাঁধা পেরিয়ে খুশি গুলো মহুয়ার পায়ের নিচে রাখতে। কিন্তু এমন কেন লাগচ্ছে ইয়ামিনে? কেন মন চাইছে? মেয়েটিকে বুকের সাথে শক্ত করে ঝাপটে ধরতে?”

মহুয়ার সাথে ইয়ামিনের দৃষ্টি মিলন হলো। কিছুক্ষন আগের সেই হাসতে থাকা মেয়েটি এখন কতটা না মলিন? ইয়ামিনের সইতে ইচ্ছে করলো না। মহুয়ার হাতে ইয়ামিন আড়ষ্টতার সাথে ধরলো। মহুয়া তাকাতেই ইয়ামিন বলল,,

“মিস মহুয়া এক জায়গায় যাবেন?দেখবেন আপনার মন বালো লাগবে!”

মহুয়া মাথা নাড়লো। সে যাবে। মনের কষ্ট থেকে কিছুটা হলেও দূরে থাকা যাবে!

চলবে,

#যুগলবন্দী_পায়রা🕊️
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
#পর্ব-৬
সাঝের আধার সেই কখন পেড়িয়ে নেমেছে ঘুটঘুটে অান্ধার। ঘন জঙ্গল থেকে ভেসে আসচ্ছে ঝিঁঝি পোকার ডাক। মাঝে মাঝে পালক ঝাপটে জানান দিচ্ছে নিশাচরদের উপস্থিত । মহুয়া এই ছমছম পরিবেশে ভয়ে ভয়ে তাকালো আশে পাশে। মেয়েটির মুখ ভয়ে ফ্যাকাসে হয়েগেছে। ইয়ামিন তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। লোকটিকে দেখে ভয় ভয় করছে মহুয়ার। বার কয়েক জিগ্যেস করেও জানতে পাড়েনি তারা কই যাচ্ছে? এই গহিন জঙ্গল, পাহাড় ঠেলে। চারিদিকে নিস্তব্ধতায় ছায়া। মাথা ভনভন করছে কিছু অযুক্তিকর প্রশ্ন। লোকটি এই ঘন জঙ্গলে কেনো আনলো? মহুয়ার কি ঠিক হয়েছে এখানে আসা? কোনো কু মতলব আটেনিতো?যদি মেরে টেড়ে ফেলে তখন? শহরের লোকালয় ছেড়ে খানিকটা দূরেই চলে এসেছে তারা। মৌয়ালরা তখন মধু সংগ্রহ করে ঘরে ফিরছিলেন। মহুয়া শুঁকনো ঢুক গিললো। আশে পাশে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে আবার প্রশ্ন ছুড়লো,

” আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

ইয়ামিন মহুয়ার দিক তাকালো ফোনের ফ্লাস লাইটে মৃদুমন্দ দেখাচ্ছে ইয়ামিনের গৌরবর্ণ দাম্ভিকময় মায়াবী মুখ খানা। ইয়ামিন মহুয়ার কথার পৃষ্ঠে কোনো উত্তর করলো না। শুধ হাসলো রহস্যময় হাসি। মহুয়ার বুক ধক করে উঠলো খুব জোড়ে। ছেলেটিকে এ প্রথম হাসতে দেখলো সে। হাসিটা একদম বুকে গিয়ে বিঁধল যেন। মহুয়া চোখ সরিয়ে নিলো। বুকের ভিতর দ্রিম দ্রিম করে আওয়াজ হচ্ছে। বাম হাতে বুক চেপে আবার হাঁটা ধরলো। কিন্তু চারিদিকে নিস্তব্ধতা মহুয়ার মন ঘায়েল করে যাচ্ছে। কৌতূহল সৃষ্টি হচ্ছে খুব। সে আবার একই প্রশ্ন করলে এবার উত্তর দে ইয়ামিন,

“আপনি এত ডেস্পারেট কেন মিস মহুয়া? একটু শান্ত থাকুন? যেভাবে জোরে জোরে কথা বলছেন! জঙ্গলের হিংস্র জীব জন্তুর খাবার হয়ে না যেতে হয়?”

ইয়ামিনের কথায় আশেপাশে আরো একবার চোখ বুলিয়ে নিলো মহুয়া।ভয়ে মেয়েটি মুখ সাদা হয়ে গেছে।মহুয়া ফিসফিস করে বলল,,

” এই জঙ্গলে হিংস্র জীবজন্তু-ও আছে? ”

ইয়ামিন দাঁড়িয়ে গেলো। মেয়েটি ভয়ে সিটিয়ে গেছে। মুখ টিপে হেসে মহুয়ার দিক ঝুকে পড়লো।ঠিক সেই মুহূর্তে নাকে বাড়ি খেলে মিষ্টিগন্ধ। মহুয়া শ্বাসরুদ্ধ করে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো। ঠোঁটের কোনে রহস্যময় হাসি ঝুলিয়ে মহুয়ার মতোই ফিসফিস করে বলল,,

“শুধু হিংস্র জীব জন্তু নয় ভূত-ও আছে, গলা কাঁটা ভুত ”

মহুয়া দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো। ইয়ামিন ভুতের কথা বলতেই দূর কোথা থেকে ভেসে এলো কিছু শব্দ। মহুয়া সাথে সাথেই ঝাপটে ধরলো ইয়ামিনের হাত। আর বলতে লাগলো,,

” প্লিজ জলদি চলুন ভুত এসে গেছে!”

ইয়ামিন মহুয়া মুখের ভঙ্গিমা দেখে হু হা করে হেসে দিলো। বলল,

“মিস মহুয়া! এতটুকু কলিজা নিয়ে বেড়িয়েছেন বাসা থেকে পত্র প্রেমিক খুঁজতে? ”

মহুয়া রেগে গেলো। বলল,,

” সকল মানুষেরই কিছু না কিছু দুর্বলতা থাকে। আপনারও আছে তাই বলে মজা করতে হয় না? ”

ইয়ামিন মুখ টিপে হাসলো। বলল,,

“বাচ্চা মেয়েরা এসব দেখেই ভয় পায়! ”

মহুয়া কোমরে হাত দিয়ে আঙুল তুলে গর্ব করে বলল,

“দেখুন মিঃ আমি মোটেও বাচ্চা না। অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি!”

ইয়ামিন আকাশ থেকে পড়লো যেন। বলল,,

“মিস মহুয়া আমিতো নিতান্তই আপনাকে ইন্টারে পড়া বাচ্চা মেয়ে ভেবে ছিলাম!”

মহুয়া হেসে ফেললো। বলল,,

“সবাই এমন ভুল করে ফেলে!”

“এটাই স্বাভাবিক! ”

দুজনের মাঝে শুরু হলো আবারো পিনপতন নিরবতা। তারা আরো কিছু দূর হেঁটে যেতেই মহুয়া বিস্ময়ে কথা বলতে ভুলে গেলো। রাতের আকাশে চাঁদ উঠেছে মাত্রই। পাহারে চুড়ায় দাঁড়িয়ে চাঁদটি ছুঁই ছুঁই । পাহাড়ে নিচ দিয়ে ভেসে গেছে কোনো নদীর শাখা। নদীর পানিতে ফুঁটে উঠছে সেই দৃশ্য। মহুয়া মুখে হাত দিয়ে বলল,

“আল্লাহ কি সুন্দর দৃশ্য। ”

ইয়ামিন পাশে দাঁড়িয়ে মহুয়ার মুখে রিয়াকশন দেখে মজা পাচ্ছে চাদেঁর আলো মেয়েটিকে যে কত স্নিগ্ধ লাগছে! মেয়েটি কি তা জানে?ইয়ামিন নিজের অকপটেই সেই দৃশ্য ক্যাপচার করলো নিজের ফোনে। কেন করলো? কি ভেবে করলো? জানা নেই তার! তবুও মন বলে যাচ্ছে প্রকৃতির পূজারী আমরা সবাই ।

ইয়ামিন পাশেই বসে পড়লো একটি পাথরের উপর। তার থেকে কিছুটা দূরে বসেছে মহুয়া। ইয়ামিন মহুয়ার হাস্যজ্জল মুখ পানে তাকিয়ে রইল। ঘন ঘন চোখের পল্লব ফেলে মহুয়া এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। বাতাসের ঝাপটায় এলো মেলো করে দেয়া চুল গুলো গুঁজে নিচ্ছে কানের পিছনে। ঠোঁটজোড়া মৃদু হাসির খেলা। ইয়ামিন বলল,

“মিস মহুয়া? হাউ ইট ফিলস নাও? ”

মহুয়া খুশিতে আপ্লূত। বলল,

“মনস্পর্শকর অনুভূতি। চারিদিকের হিম শীতল বাতাস। চাঁদের আলো সব মিলিয়ে যেমনটি কখনো ভেবেছিলাম ঠিক তেমন?”

ইয়ামিন ভ্রুকুচকালো। বলল,

“পত্র প্রেমিকের সাথে এমন কিছু কল্পনা করেছিলেন?”

মহুয়া হাসলো।বলল,

“আমার পত্র প্রেমিক খুব রোমান্টিক ছিলো! আপনার বুঝি এমন স্বপ্ন নেই?”

ইয়ামিন জোরালো শ্বাস ছাড়লো। বলল,,

“এবার আমাদের উঠা দরকার। এটা পাহাড়ি অঞ্চল। এই যে দেখন কত সুন্দর চন্দ্রিমা। খনিকারে মাঝেই দেখা দিবে প্রকৃতির তান্ডব লীলা।”

স্পষ্ট বুঝা গেলো ইয়ামিন কথা এড়িয়ে গেছে। মহুয়া বুঝতে পেরেও কিছু বলল না। সবারই তো থাকে মনের মাঝে গোপন কথা৷সে বলল,

“হে শুনেছি পাহাড়ি অঞ্চলের মায়াবী মায়াজালের কথা গুলো।”

তারা চলতে শুরু করলো আবার। তাদের ভাবনা চিন্তা সঠিক করেই শুরু হয়ে গেলো তান্ডব। গাছপালার ডালপালা নাড়িয়ে ঝুমঝুমিয়ে নামলো মুষলধারে বৃষ্টি। বাধ্য হয়ে ছুটতে হয় তাদের।দুজনেই হাঁপাচ্ছে। দুজনেই কাকভেজা। তার উপর ঠান্ডার তোর। সব মিলিয়ে বেহাল অবস্থা তাদের। আরো কিছুটা যেতেই একটি টিলার উপর একটি ছনের ঘর দেখতে পেলো তারা। ঘরটির দুদিক বন্ধ দুদিক খোলা। ঘরের এক সাইডে একটি মাচা বাঁধা। তার উল্টো পাশে একটি হারিকেন ঝুলছে। আর ঠিক নিচেই পড়ে আছে কিছু ছন আর কাঠের স্তূপ। মহুয় অবাক হয়ে বলল,,

“এই গহীন জঙ্গলে এত সুন্দর ঘর। কিভাবে?”

ইয়ামিন এদিক-ওদিক কিছু খুঁজ ছিলো। মহুয়া কথা সে বলল,,

“এমন ঘর মৌয়াল বা কাঠুরেরাই করে সাধারণত আমাদের মতো বিপদে পরে রাত কাঁটানোর জন্য”

ইয়ামিন লাইটার দিয়ে হারিকেন জ্বালালো। হলদে আলোও আলোকিত হলো ঘরটি। ইয়ামিন মহুয়ার দিকে তাকালো। ভিজে যাওয়া কাপড়ে লেপ্টে থাকা মহুয়ার শরীরে কার্ভ গুলো স্পষ্ট। মেয়েটি কাপচ্ছে। তার উপর হু হু করে শীত বাড়চ্ছে। ইয়ামিন চোখ ফিরিয়ে নিলো। আবারো কিছু খুঁজতে লাগলো। মহুয়া জিজ্ঞেস করলো,

” কি খুঁজচ্ছেন?”

মহুয়া কথা গুলো ভাড়ি ভাড়ি শোনাচ্ছে। কন্ঠ মৃদুমন্দ কাঁপছে। ইয়ামি মাটির একটি ভাঙ্গা পাতিল দেখতে পেয়ে তাতে খর আর কাঠ দিয়ে আগুন ধরিয়ে পাশে বসলো। পড়নের কালো জেকেটি বাশের তারকাটায় লাগিয়ে রাখলো। মহুয়া তার ওড়না পেঁচিয়ে নিয়েছে ততখনে। মাথার চুল চুয়ে চুয়ে পানি পড়ছে। ইয়ামিন বলল,,

” মিস মহুয়া এখানে এসে বসুন আরাম পাবেন।”

মহুয়া যেন সেই কথারই অপেক্ষা করছিলো।চটপট এসে৷ বসে পড়লো ইয়ামিনের সাথে। দাঁতে দাঁত লাগানো হাড়কাঁপানো শীতে মরেই যাচ্ছিলো মহুয়া। আগুনের উপর বার বার দু হাত মেলে দিয়ে গালে ধরেছিল সে। ইয়ামিন কাঠ, খর ঠিক করছিলো আর আড় চোখে মহুয়াকে দেখছিলো। মেয়েটির ঠোঁট শুকিয়ে আছে। মুখটা মলিন। তবুও কতই মায়া যেন। ইয়ামিন বুঝতে পাড়লো তার মনের পরিবর্তন। কিন্তু তা কিসের? বিপরীত লিঙ্গের মানুষের শরীরের টান না মোহো? ইয়ামিন বার কয়েক শ্বাস ছাড়লো। ঝিম ধরা একটা ভাব আসচ্ছে গায়ে। তা দূর করা দরকার! সে উঠে মাচার উপর শুয়ে পড়লো কঁপালে হাত ঠেকিয়ে। তার ভয় হচ্ছে এমন নয় যে এভাবে আর সে রাত কাঁটায়নি কখনো তবে এবার ভিন্ন। সাথে একটি মেয়ে আছে। যার ভেজা শরীর তাকে বড্ড আবেদনময়ী করে তুলছে। সে কখন-ও ভাবে নি এভাবে কোনো মেয়ের সাথে রাত কাঁটাতে হবে।ইয়ামিনকে শুয়ে পড়তে দেখে মন খারাপ হলো মহুয়ার সেদিকে এক পলক তাকিয়ে বাহিরে তাকালো আবার। কি ভেবে এবার অস্ফুট স্বরে বললো মহুয়া,

“এই যে শুনচ্ছে?ঘুমিয়ে গেছেন কি?”

ইয়ামিন চোখের উপর থেকে হাত সরালো। ভ্রু কুচকে চাইলো মহুয়ার দিক। মহুয়া স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে লোকটির ভ্রুজোরা কুচকে আছে। মহুয়া কাচুমাচু করতে লাগলো। ইয়ামিন এবার ঠোঁট নাড়লো,

“কি হয়েছে মিস মহুয়া? ”

মহুয়া একটুখানি ঠোঁট কামড়ালো, বলল,,

“আমার বাহিরে যেতে হবে!”

“এই বৃষ্টি বাহিরে গিয়ে কি করবেন মিস?যেভাবে মুশুলধারে বৃষ্টি হচ্ছে! ”

মহুয়া মাথা নত করলো। ওড়নার আঁচলের কোনাটা ঘুরাতে ঘুরাতে বলল,,

“ইয়ে মানে! আমার ওয়াশরুম যাওয়া প্রয়োজন!”

ইয়ামিন কেশে উঠলো। এই জঙ্গলে ওয়াশরুম কোথায় পাবে বেচারা? মেয়ে মানুষ কিছু বলতেও পাড়চ্ছে না। ইয়ামিন যেন পড়লো মাইনকার চিপায়! খানিকটা চুপ থেকে বলল,,

“মিস এখানে ওয়াশরুম পাওয়া যাবে না বরং ঝোঁপের আড়ালেই কাজ সারতে হবে আপনি চাইলে আমি নিয়ে যেতে পারি!”

মহুয়ার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করলো। কিন্তু সে কি করবে? প্রকৃতির নিয়মের সাথে সে কি লড়াই করার ক্ষমতা রাখে? মহুয়া চাইলেও চেপে রাখতেই পাড়ছে না। মহুয়া লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে বলল,,

“প্লীজ!”

ইয়ামিন নেমে এলো মাচা থেকে। ঘরটি কিছু দূরেই ছিলো কচু পাতার বড় বড় গাছ। ইয়ামি তা নিয়ে একটি নিজের ও অপরটি মহুয়াকে দিয়ে এগিয়ে গেলো ঝোপের কাছে। মহুয়া ঝোপে ঢুকবার আগেই ইয়ামি একটি মাটির কলসি এগিয়ে দিলো মহুয়ার হাতে।কলটি সে ছনের ঘরের বাহিরে পেয়েছিলো, বৃষ্টি পানিতে টাইট টুম্বুর ভরা ছিলো। মহুয়া ছু মেরে নিয়ে প্রায় দৌড়ে চলে গেলো ঝোঁপের ভিতর ইয়ামি বাহিরে রইলো দাঁড়িয়ে। মনে মনে হাসলো। মেয়েটির লজ্জা মাখা লাল রঙ্গা মুখটি মনের ধক করে উঠছে বারবার। মিনিট পাঁচেক পর মহুয়াকে আসতে না দেখে ইয়ামিন এগিয়ে যেতেই ভেসে আসলো কারো চিৎকার । ইয়ামিন দাঁড়ালো না দৌঁড়ে গেলো সেদিকে আর তখনি দেখলো…..

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে