#যুগলবন্দী_পায়রা🕊️
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
#পর্ব-৮
বাহিরে এখন ফুটফুটে ভোর। পাখির কিচিরমিচিরে জেগে উঠছে পৃথিবী। চারিদিকে ঘেরা জঙ্গল আর বিশাল বট গাছের উপরের ফাঁকফোকর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে সূর্যের সোনালী আলো। সারা রাতের বৃষ্টির পর মিষ্টি এক ফালি রোদ চোখে, মুখে পড়তেই বিরক্ত লাগলো মহুয়ার। ভ্রু কুচকে আরো আকড়ে ধরলো ইয়ামিনের উষ্ণ শরীর। কারো নড়চড় অনুভব করতেই ঘুম ছুটে গেলো ইয়ামিনের। পিটপিট করে চোখ খুলে আবিস্কার করলো তার বুকে সাথে কেউ লেপ্টে আছে। এক প্রকার চমকে উঠে বসে ইয়ামিন।মহুয়া তখনও ঘুমে। ড্যাব ড্যাব করে বাচ্চা মুখখানী দেখে ইয়ামিন ফোস করে শ্বাস ছাড়লো। হঠাৎ করে মেয়েটিকে সুন্দর লাগছে কেন? মেয়েটির চেহারার বুঝি রং বদলায়?হলদে আলোয় কান্না জড়িত চোখ মুখ টমেটোর মতো টকটকে লাল তো কখন-ও জ্যোৎস্না আলোয় স্বচ্ছ মুখখানা কখন-ও বা ঘুমন্ত মুখ খানির উপর রোদের সোনালী আলো স্নিগ্ধ মুখখানি । প্রতিটি রূপেই অপরূপা। এনসেল আড়ামের ফটোগ্রাফির বইয়ে পড়েছিলো ইয়ামিন,” তিনটি স্পট লাইটে যে কোনো মানুষের চেহারার রং নিয়ে খেলা করা যায়!” তাহলে কি প্রকৃতি তার চোখ ধাঁধানো আলোও তার চোখের সাথে খেলা করছে?আচ্ছা সে কি মেয়েটির মায়ায় পড়ে যাচ্ছে? কিন্তু তা কি আদো সম্ভব? ইয়ামিন চোখ বুঁজে নিজের ভাবনা কিক মেরে দূরে ঠেলে দিলো, মহুয়াকে আলতো হাতে ডেকে বলল,,
“শুনচ্ছেন মিস মহুয়া? সকাল হয়ে গেছে? এবার আমাদের যেতে হবে? মহুয়া? প্লিজ উঠুন? ”
মহুয়া উঠলো না উলটো পাশে ফিরে শুয়ে পড়লো। ঘুম জোড়ানো কন্ঠে বলল,
“পত্র প্রেমিক তুমি বড্ড পঁচা। সব সময় ঘুম ভাঙ্গতেই পায়রার মতো উড়ে যাও।”
ইয়ামিন চোখ কঁপালো উঠে গেলো। মেয়ে বলে কি? ঘুমের মাঝেও পত্র প্রেমিক পত্র প্রেমিক করে মারা যাচ্ছে এই মেয়ে কি সাংঘাতিক?? কঁপাল কুঁচকে ফেললো ইয়ামিন। দূর কোথা থেকে ভেসে এলো কোকিলের মধুর স্বর। ইয়ামিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আশে পাশে তাকালে বর্ষাকালে কোকিলের ডাক বড্ড বেমানান মনে হলো ইয়ামিনের কাছে। বিপদের সংকেত নয় তো? মহুয়া বার কয়েক ডেকেও উঠানো গেলো না। মেয়েটি এতই ঘুম কাতুরী? তার উপর তার সিক্স সেন্স জানান দিচ্ছে আগাম বিপদ সংকেত। পাহাড়ি অঞ্চল গুলোয় ডাকাত, সন্ত্রাসীদের ঘর বলেও বলা হয়। সময় অপচয় না করে কোলে নিয়ে হাটা ধরলো ইয়ামিন। শুকনো পাতার মর্মর শব্দ করে পা এগিয়ে যেতে লাগলো। মহুয়াকে পরম যত্নে বাচ্চাদের মতো আগলে নিয়েছে। বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি করে বুকে মাঝে লেপ্টে আছে মেয়েটি। ইয়ামিন মুগ্ধ নয়নে দেখছে। তার ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি। ইয়ামিনের মুগ্ধতায় বেঘাত ঘটলো কয়েক জোড়া পায়ের শব্দ। মুখে গামছা বেঁধে হাত ধারোলো অস্ত্র। ইয়ামিন কঁপাল জোড়া সূক্ষ্ম ভাগ পড়লো।ইয়ামিন গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“কি চাই?”
“মাইয়্যা ডারে চাই!”
ইয়ামি লোক গুলোর আগাগোড়া দেখে নিয়ে বলল,
“মেয়েটি কে কেন চাই?”
লোক গুলোর মাঝে এক জন বলে উঠলো,
“আপনার জাইনা কাজ নাই। মাইয়া দিয়া দেন!”
ইয়ামিন মহুয়ার দিক এক পলক তাকালো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। বলল,,
“যদি না দেই?”
“কল্লা ফালায় দিবো!”
বলেই একজন এগিয়ে এলো। তখনি পিছন থেকে একটি লোক ফিসফিস করে বলল,
“হুদাই ঝামেলা কইরিস না। আমাগো কাম মাইয়ারে দিয়া। মাইয়া পাইয়াই আমরা চম্পট! ”
ইয়ামিন লিপ রিডিং জানে। তার বুঝতে অসুবিধে হয় না তাদের কথোপকথন। লোক গুলো আবার এক কথা বলতেই ইয়ামিন উঁচু গলায় বলল,,
“সাহস থাকলে নিয়ে যা আমার কাছ থেকে!”
ইয়ামিনের কথায় তেড়ে এলো একজন তার বুক বরাবর লাথি বসাতেই ছিটকে দূরে গিয়ে পড়লো। ইয়ামিন এবার হাসলো রহস্যময় হাসি,
“আমার এলাকায় এসে আমাকেই মেও মেও করছিস? ”
তখনি বেটে একটি লোক বলল,,
“দেহেন হুদাই আমাগো সাথে পাঙ্গা নিতাছেন?মেয়েটিরে ধইরা নিয়া যাওয়ার অর্ডার আইছে উপর থাইকা। আপনার গায়ে টোকা দিবার চাইনা। মাইয়া ডা দিয়া দেন!”
” কার অর্ডার আছে?”
” বলা নিষেধ! ”
“মেয়েটিকে আমি দিচ্ছি না।!”
হাঁটা ধরলো ইয়ামিন আবার। পিছন থেকে তখন একজন লাঠি ছুঁড়ে দিলো তার গায়ে। ইয়ামিন ধপ করে পড়ে গেলো। ছিটকে গিয়ে মাথায় চোট পেলো মহুয়াও। মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসে আশপাশ চোখ বুলালো। সামনেই তামিল মুভির ভিলেনদের মতো দেখতে লোকদের দেখে চোখ চড়কগাছ। ডান পাশেই ইয়ামিনকে দেখে দৌঁড়ে গেলো তার কাছে। হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
” একি আপনি এভাবে পড়ে আছেন কেন? আর আমরা কই? আমরা না কুড়ে ঘরে ছিলাম? এখানে কি করে এলাম!”
ইয়ামিন হাতে ব্যথা পেয়েছে ভালোই। মহুয়ার কথা বড্ড বিরক্ত এই মুহূর্তে। চাপা রাগ নিয়েই দাঁত খিচিয়ে বলল,,
” এত ঘুম কাতুরী মেয়ে আজ পর্যন্ত দেখিনি আমি। মানে দুনিয়ে এদিকে ভেস্তে যাচ্ছে আর আপনি ঘুম।”
মহুয়া লজ্জা পেলো খুব। মাথা নুয়ে অপরাধীর মতো বলল,
“সরি!”
বিরক্তিতে মুখ কুচকালো ইয়ামিন। মহুয়া প্রসঙ্গ টেনে বলল,
“ইনারা করা? এমন ডাকাত ডাকাত লাগচ্ছে কেন?”
“আপনার আত্মীয়া! আপনাকে নিতে এসেছে। চলে যান এদের সাথে। রক্ষে হবে আমার!”
মহুয়া কিছুই বুঝলো না ড্যাবড্যাব এক বার ইয়ামিন আরেকবার তামিল মুভি ভিলেনদের মতো লোক গুলোর দিক তাকিয়ে ঠোঁট উল্টালো,
” এদের আমি চিনি না!”
ইয়ামিন এবার রাগে গা রি রি করছে। কি বেকুব মেয়ের পাল্লায় পড়েছে সে? তাদের কথার মাঝে এক লোক চেচিয়ে বলল,
“অনেক রং তামাশা হইছে। ওই লালু মাইয়ারে ধর!”
মহুয়া ভয় ভয়ে বলল,,
” আমাকে ধরবে মানে? আমি কি করেছি?”
আরেক লোক হেসে বলল,,
“তোমারে যত্ন-আত্তি করবো!”
মহুয়া ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো। ধরধর করে কেঁপে উঠে ইয়ামিনের দিক তাকালো। লোকটি ভাবলেশহীন ভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। তখনি লালু না নামের লোকটি মহুয়ার হাত টেনে ধরে উঠালো। ইয়ামিন তখন নিশ্চুপ। মহুয়া চেচামেচি করলো। ইয়ামিকে ডাকলো। লাভ হলো না। এক পর্যায় লোক গুলো টেন হিঁচড়ে নিয়ে ধুপ করে ফালিয়ে দিলো নদীর পাড়ে। এবং উঁচু করলো রাম দা। মহুয়া খিঁচিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। মুহূর্তেই মনে পড়লো তার পত্র প্রেমিকের কথা। এই বুঝি তাদের পথ চলা শেষ? এখানেই সব স্বপ্ন শেষ, কেও জানবেও না আর মহুয়া কোথায়? বেঁচে আছে না মোরে গেছে? আচ্ছা তার নিশ্চুপ পাগলাটে প্রেমিক সইতে পারবে তো? দ্বিতীয় বারের মতো তার ভালোবাসাকে হারিয়ে ফেলতে? নাকি সে কখনও জানতেই পারবেনা, তার প্রিয়তমা তার শহরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করছে। মহুয়া চোখ বুঁজে নিলো। মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো। দোয়া করতে লাগলো তার পাগলাটে প্রেমিক যেন ভালো থাকে।
আচ্ছা তার পাগলাটে প্রেমিক কি তার মরার খবর জানতে পারবে?
চলবে,