#যুগলবন্দী_পায়রা🕊️
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#পর্ব-১
“রেট কত তোমার? হাজার দুইয়ে হবে নাকি আরো লাগবে?”
কথাটায় চোখ তুলে তাকালো মহুয়া। মধ্যবয়সী এক থলথলে দেহের লোকটির বিভৎস রক্তিম নয়ন জোড়া তার সর্বাঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে।।শুকনো ঢুক গিললো মহুয়া। বুকের ভিতর ধ্রিম ধ্রিম আওয়াজে হাতুড়ি পিটানোর মতো শব্দ করতে লাগলো।বাড়ি থেকে মাঝ রাতে বিয়ে করবে না বলে পালিয়ে এসেছিলো মহুয়া। কোথায় যাবে ভাবতে না পেরে স্টেশনে সামনে এসে দাঁড়ালো। রাত তখন একটা কি দুইটা ট্রেন সব একে একে গন্তব্যে ছেড়ে চলে গেছে। শুধু গন্তব্যহীন মহুয়া প্লাটফর্মে বসে কাঁদচ্ছিলো আর ভাবচ্ছিলো কি করবে সে? কোথায় যাবে!তখন-ই লোকটি হাজির হয়। লোকটি আবার গলার স্বর উঁচিয়ে বলল,,
” কি হলো কথা বলছো না কেন? চলো জলদি। না হয় আরো পাঁচশত বাড়িয়ে দিবো!”
লোকটি বিদঘুটে হাসি দিয়ে এগিয়ে এলো। মহুয়া ভয়ে চোখ বুঝে নিলো। লোকটি মহুয়ার হাত ধরতেই ঝাড়া মেরে দূরে স্বরে গেলো সে। লোকটি ক্ষেপে উঠে বিশ্রী গালি দিলো মহুয়াকে।বলল,,
“নাটক করিস আমার সাথে? এখন তোকে প্রয়োজন আমার। চল জলদি ।”
মহুয়ার হাত আবার টেনে ধরলো লোকটি। মহুয়া এবার চিৎকার করে বলল,,
” আমি যাবো না। আপনি ভুল ভাবচ্ছেন আমি তেমন মেয়ে নই!”
লোকটি ভ্রু কুঁচকালো। আগের থেকে শক্ত করে মহুয়ার হাতটি টেনে ধরলো। হিসহিসিয়ে বলল,,
“একদম নাটক করবি না! তাহলে এখানেই..”
মহুয়ার বুক ফেঁটে কান্না পেলো। নিজের দোষে নিজেই ফেঁসে গেছে মহুয়া। মহুয়া মনে মনে আল্লাহকে ডেকে শরীরে সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা মারে লোকটিকে। লোকটি ধুম করে নিচে পড়ে যায়। মহুয়া সেই ফাকে বেগ কাঁধে উঠিয়ে প্রান পন চেষ্টা করে ছুটে পালাতে। কিন্তু তার আগেই লোকটার বিশাল থাবা খামচ্ছে ধরলো মহুয়ার পিঠে। মহুয়া চিৎকার করতে চাইলো। কিন্তু আশেপাশে মানুষের অস্তিত্ব ক্ষীণ। কারো কাছে সাহায্য চাইবে তার-ও উপায় নেই। মহুয়া কি করবে ভেবে না পেয়ে পিছনে ফিরে লোকটির পুরুষ অঙ্গে এক লাথি বসালো। লোকটি কুকিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। মহুয়া এবার আর দাঁড়ালো না। এক ছুঁটে বের হয়ে গেলো স্টেশন থেকে। ছুটতে ছুটতে মেন রাস্তার ধারে আসতেই একটি বাসের দেখা মিললো। কোনো কিছু না ভেবেই উঠে পড়লো সেটায়। জানালার পাশেই সিট পেয়ে বসে পরে সুস্থির নিশ্বাস ছাড়লো মহুয়া। বাহির থেকে বাসের জানালা ভেদ করে আসা জ্যোৎস্নার আলো গায়ে লাগচ্ছে মহুয়ার। হঠাৎ করেই মহুয়ার বুকে এক অসহনীয় যন্ত্রনা চিনচিন করে ব্যথা দিতে লাগলো।কেন করছে এসব মহুয়া? কিসের আশায়? যার জন্য এত বিপদ মাথা নিচ্ছে, সে কি আদো তাকে মনে রেখেছে? বুকের মাঝে জমিয়ে রাখা, দুঃখ কষ্ট গুলো দলা পাকিয়ে কান্নায় রূপ নিয়ে ঝড়ে পড়তে লাগলো।মহুয়া তার ব্যাগ থেকে একটি বক্স বের করলো। বক্স খুলতেই দৃশ্য মান হলো কিছু চারকোনা নানা রঙের ছোট ছোট চিরকুট আর কিছু পায়রার পালক। মহুয়া কাঁপা কাঁপা হাতে তুলে নিলো একটি লাল রঙ্গা চিরকুট। ভাবতে লাগলো গত দুবছর আগে এমনি একটি জ্যোৎস্না আলোকিতময় রাতে মহুয়ার সাথে ঘটে যাওয়া এক অদ্ভুত ঘটনার কথা।
সেদিন-ও জ্যোৎস্নাময় রাত। চারিদিকে স্ব স্ব বাতাস বইছিলো। মহুয়া ধোয়া উঠা এক কাপ কফি নিয়ে ছুটে এলো ছাদে। দোলনায় বসে তাকিয়ে রইলো মায়াবি চাঁদটির দিক।চাঁদটি যেন হাসচ্ছে। মহুয়া-ও হাসচ্ছে। খনে খনে তাল মিলিয়ে চুমুক বসালো চায়ের কাপে। ফুরফুরে মন নিয়ে ফোনের মাঝে ছেড়ে দিলো রবীন্দ্র সংগীত,
“চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে, উছলে পড়ে আলো।
ও রজনীগন্ধা, তোমার গন্ধসুধা ঢালো ॥
পাগল হাওয়া বুঝতে নারে ডাক পড়েছে কোথায় তারে–
ফুলের বনে যার পাশে যায় তারেই লাগে ভালো ॥
নীল গগনের ললাটখানি চন্দনে আজ মাখা,
বাণীবনের হংসমিথুন মেলেছে আজ পাখা।
পারিজাতের কেশর নিয়ে ধরায়, শশী, ছড়াও কী এ।
ইন্দ্রপুরীর কোন্ রমণী বাসরপ্রদীপ জ্বালো ॥”
ঠিক সেই মুহূর্তে কোথা থেকে একটি পায়রা এসে বসলো মহুয়ার সামনে। মহুয়া অবাক হয়ে গেলো। প্রথম ভয় পেয়ে গেলেও শুভ্র পালকে ঢাকা পায়রাটিকে তুলে নিলো কোলে। পায়রাটিও যেন চুপটি করে আছে। যেন সে আদর খেতে খুব ভালো লাগচ্ছে। মহুয়া হাসলো। পায়রার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতেই চোখে পড়লো পায়রার পায়ে বাঁধা কিছু একটা। মহুয়া চট করে খুলে নিলো পায়ের মাঝে বাঁধা কাগজের টুকরোটি। ভ্রুকুচকে পড়তে লাগলো কাগজটি খুলে,
প্রিয়তমা,
দিন ফুরুচ্ছে, মাস পড়চ্ছে, বছর ঘুরছে। শুধু থেমে গেছে আমার ভালোবাসা, আমার আবেগ, আমার অনুযোগ, আমার অনুভূতি। কবে ফিরবে তুমি? আমার নীড়ে আসবে কবে? গুনে গুনে ঘনকাল পাড় করছি। তবুও যেন থেমে গেছে সে দিনটির মাঝেই। হারিয়ে গেছিলে, দূরে চলে গেছিলে তুমি। এখনো বসে থাকি, অপেক্ষা করি আসবে তুমি। হাত দুটি ধরে চোখের কোনের মুক্ত ঝর্ণার বিলিন করে বলবে, আমি এসেছি ফিরে। প্রিয়তমা! তোমায় যে আমি আজ-ও আমার শয়নে স্বপনে খুঁজে বেড়াই! দেখা তো মিলেনা তোমার?আমাকে কি মনে পড়ে না তোমার? একটি বার কি দেখা দিতে ইচ্ছে হয় না? জানাতে ইচ্ছে করে না,
“প্রিয়তম তুমি ছাড়া এ হৃদয় শুন্য, ভাঙচুর।তোমায় ছাড়া অন্ধকার রাত্রিদিন। তুমি এসো? হাতটি ধরো? দূরে কেন জড়িয়ে নেও ভালবাসার চাদরে?”
কিন্তু আমার যে জানতে ইচ্ছে করে। বড্ড জানতে ইচ্ছে করে, কবে পাবো তোমার দেখা? কবে রাখবো হাত তোমার হাতে? কবে জোড়াবো আমার ভালোবাসার চাদরে। সময়ের গতি পথ নাকি তীব্র গতিতে ছুটে। তাহলে আমি কেন থেমে? বলো তো? আজ-ও কি আমার জীবন বিতৃষ্ণায় কেঁটে যাবে! আমি কি আর তোমার দেখা পাবো না প্রিয়তমা! জানো আজ-ও তোমায় লিখে যাই চিঠি কিছু উড়িয়ে দেই আকাশে, কিছু রেখে দেই আমার কাছে।একান্ত নিকটে। কিন্তু উত্তর মিলেনা। তবু-ও অপেক্ষায় থাকি। দেখা হবে তোমার আমার ও-ই পারে।
ইতি
প্রিয়তমার অপেক্ষারত প্রিয়তম
কিছু একটার শব্দে তন্দ্রা ছুটে গেলো মহুয়ার। বাস দাঁড়িয়ে আছে। বাহির থেকে আসা একাধিক কন্ঠের জন্য বুঝ উঠতে পারছে না কিছু মহুয়া। সে জানালা দিয়ে বাহিরে উঁকি দিলো।
——–
(ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের আশা করছি)