যদি তুমি বলো পর্ব-৬+৭

0
401

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৬
আফনান লারা

তানিয়া তার কলেজের দোলনায় বাঁদরের মতন ঝুলছিল।কলেজের পিওন আর একজন স্যার এসে ওকে থামানোর চেষ্টা করছেন তাও পারছেন না।সে ঝুলছেই তো ঝুলছেই।
এটা নতুন না।তানিয়া প্রায় সময় এমন করে।তার বাসায় দোলনা নেই,আনলেও একদিনের ভেতরে রিদম সেটাতে ঝুলে ঝুলে দড়ি ছিঁড়ে ফেলে।এদিকে তানিয়ার দোলনার প্রতি অনেক শখ।
তাই কলেজে এসে এই শখ মেটায়।স্যার ওকে বলতে বলতে বিরক্ত হয়ে চলে গেছেন।তিথি কলেজে এসে দেখে সব ছাত্রছাত্রী চলে গেছে।শুধু তানিয়া রয়ে গেছে।
তিথি এসে ওর দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থেকে বললো,’তোর যে আর এক মাস পর বিয়ে সে নিয়ে কোনো চিন্তা নেই?’

এ কথা শুনে তানিয়ে ঝুলতে ঝুলতে পেছনে তাকায়।এরপর বলে,’কিসের টেনসন?আমি বিন্দাস’

‘নাম!’

তিথি জোর করে ধরে নামায় ওকে।এরপর ওকে নিয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে ফুটপাত দিয়ে চলতে চলতে বলে,’একটা কথা বলবি!রকিবকে তোর ভাল লেগেছে?’

‘খারাপ না।’

‘তোর তো বোকা ছেলে পছন্দ ছিলনা।তোর পছন্দ চালাক চতুর ছেলে।সবসময় বলতি বোকা টাইপের ছেলেরা মায়ের কথায় উঠে বসে, তুই নাকি কখনও বোকা ছেলে বিয়ে করবিনা।এটাও বলতি তোর জামাই হবে হ্যান্ডসাম।আর পেলি মেদ-ভূড়ি হওয়ালা একটা বয়স্ক লোক।আমার চাইতেও অনেক বড়।তোর থেকে তো আরও বেশি বড়।কি করে সংসার করবি?চাপে পড়ে হ্যাঁ বলার কি দরকার ছিল!’

‘আমি চাপে পড়ে করিনি।হ্যাঁ এটা ঠিক যে আমার অনেক চাহিদা ছিল,অনেক স্বপ্ন ছিল জীবনসঙ্গী নিয়ে।কিন্তু সেদিন রকিবের সাথে কথা বলে বুঝলাম সংসারে চেহারা কিংবা অতি চালাক হওয়া ম্যাটার করেনা।সংসার তার সাথেই করা যায় যার কাছে দিনশেষে মানসিক শান্তিটা মিলবে।আমি সেদিন বুঝেছি রকিব আমার জন্য একেবারে ঠিক।জানো টুকু! আমি তাকে প্রশ্ন করেছিলাম,কখনও যদি আমার আর তার পার্সোনাল কিছু ঝামেলা ঘটে,সে কথাটা কার সাথে শেয়ার করবে,কিংবা কার কাছে পরামর্শ চাইবে, তখন সে বললো দোষটা আমার হলে সে নিজে নিজে ঠিক করবে আর দোষ তার হলে আমার কাছে এসে পরামর্শ চাইবে।এমন আরও অনেক প্রশ্ন আমি করেছি, শুধু জানতে চেয়েছিলাম সে আজীবন বোকাই থাকবে নাকি সংসার জীবনে এসে সে দায়িত্ব নেয়া শিখবে”

‘তা মানে তুই সিরিয়াস? ‘

‘ইয়েস!’

তিথি খুশি হয়ে তানিয়ার কপালে চুমু খায়।তার ছোট বোন অনেক বড় হয়ে গেছে।চলতে চলতে তারা ফুচকাওয়ালা মামাকে দেখে থেমে যায়।আজ অনেক টক দিয়ে ফুচকা খাবে দুজনে।খাবার সময় তানিয়া বলে ওঠে তিথি তো ওকে বিয়ে দিয়ে হালকা হবে,কিন্তু তিথির বিয়ের কি হবে?’

‘আর মনে করিয়ে দিস না।আদিল যে চিট করেছে,সেটা ভুলতে আমার অনেক দিন লাগবে’

‘আমি তোমায় শুরুতেই বলেছিলাম আদিল ভাইয়া সুবিধার না!’

কথা বলতে বলতে তিথি ফুচকার বিল নিয়ে মামাকে দিতেই উনি বললেন লাগবেনা।তখন তিথি বলে কেন লাগবেনা।সেইসময় মামা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন দূরে একটা ছেলে চলে যাচ্ছে,বিলটা সে দিয়েছে।ছেলেটা হঠাৎ করে এসে ওদের বিলটা দিয়ে চলে গেলো মাত্র।যাবার সময় ইশারা করে গেছে।তিথি আর তানিয়া কথা বলায় এতটাই ব্যস্ত ছিল যে তারা খেয়ালই করে নাই।
তিথি তো ছাড়ার মেয়ে না।সে হাতের ব্যাগ তানিয়ার হাতে ধরিয়ে, দিলো এক ছুট।ছেলেটা পকেটে হাত দিয়ে হাঁটছিল।তিথি ছুটতে ছুটতে ওর অনেকটা কাছে এসে গেছিলো কিন্তু তার আগেই ছেলেটা গাড়ীতে উঠে যায়।গ্লাস কালো রঙের ছিল বলে গাড়ীর ভেতরে তিথি কিছুই দেখেনা।সে বাহিরে থেকে চিল্লাচিল্লি করে কিন্তু গাড়ীর ভেতর থেকে কেউ সাড়া দেয়নি।গাড়ীটা ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।
তিথির কাল রাতের কথা মনে পড়ায় সে গাড়ীর নাম্বার চেক করে দেখে এটা অন্য একটা গাড়ী।তবে মনে হয় মানুষ একটাই।
তিথি এবার রাগ করে নিচু হয়ে মাটি থেকে কিছু একটা নিয়ে গাড়ীর ভেতর মারবে বলে ঠিক করে কিন্তু মনে হয় গাড়ীর ভেতরের মানুষটা তার এই স্বভাবের সাথে পরিচিত।সে গাড়ীটা দ্রুত চালিয়ে চলে যায় ওখান থেকে।
তিথি রাগে চেঁচামেচি করতেছিলো একা একা,তখন তানিয়া ওর পাশে এসে বলে,’তোমার কোনো সিক্রেট লাভার আসলো নাকি টুকু?’

এ কথা শুনে তিথির হাত থেকে কঙ্করটা পড়ে যায়।নামটা শুনে মূহুর্তেই তার সারা শরীর কেঁপে ওঠে।তার চোখের সামনে কতগুলো স্মৃতি ভেসে ওঠে আচমকা।
তানিয়া তখন মুখটা মলীন করে বলে,’সরি টুকু। আমার আসলে হঠাৎ মনে আসলো,তাই বলে দিছি।আমি কিন্তু ভুলিনি,তুমি কি ভুলেছো?’

তিথি কিছু বলেনা।রিকশা একটা দাঁড় করিয়ে উঠে পড়ে চুপচাপ।
——-
গাড়ীতে ইশান ছিল এবং তার বড় বোন তামিয়া ছিল।
(তামিয়া নামটা আমার একজন ভক্তের অনুরোধে দেয়া।)

তামিয়া ইশানকে বলে’একবার শাস্তি দিস,দাঁত কেলিয়ে হাসিস।আবার ওকে কেয়ার ও করিস।ঠিক কি চাইছিস?এইসব না করে বড় কোনো শাস্তি দে!যেন জন্মের শিক্ষা পেয়ে যায়।
তিথি কি করেছে তোর সাথে সেটা কি ভুলে গেছোস?তোর উচিত কেয়ার না করে বরাবরের মতন শাস্তি দেয়া।’

ইশান দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে গাড়ী চালাতে থাকে।
তারপর কি মনে করে গাড়ী থামিয়ে আদিলকে কল দিয়ে তার কাজটা বুঝিয়ে দেয় তাকে।
——
বাসায় আসার পর থেকে তিথির মন ভাল না।কোনো একটা কারণে সে ভার হয়ে বসে আছে।বেশ কিছু সময় পর তার ফোনে একটা কল আসে। অপরিচিত নাম্বার থেকে।
তিথি শুয়ে থেকেই ফোন নিয়ে কানে ধরে।

‘তিথি!’

আদিলের গলার স্বর শুনে তিথি উঠে বসে সঙ্গে সঙ্গে।কলটা কাটতে যাবে তখনই আদিল বলে ওঠে,’কল কাটবানা প্লিজ।তিথি আমি জানি তোমার সাথে আমি খুব খারাপ করেছি।আমায় একটা সুযোগ দেবে নিজেকে শুধরানোর?প্লিস তিথি’

‘সুযোগ তোমায় আমি বহুবার দিয়েছি।আর দিবোনা।এরপর আর আমায় কোনোদিন ফোন দিবেনা তুমি’

‘তিথি একবার শোনো আমার কথা।আমি চাই তোমার সাথে দেখা করে বিষয়টা মিটিয়ে নিতে।প্লিজ একবার দেখা করবে?আমি কথা দিচ্ছি,আমার সব শুনে যদি তোমার কাছে মনে হয় আমি ক্ষমার অযোগ্য,তখন তুমি চলে যেও।আমি আর কখনও তোমায় কল করবোনা’

যতই হোক,এতগুলো বছরের প্রেম।তিথি তো ভালবেসেছিল।তাই আদিলের কথায় সে রাজি হয়।তবে খুশি হয়ে না।আদিল জোর করছে বলেই কাল দেখা করবে বলে ঠিক করে সে।

রকিব তানিয়াকে বিকেলে একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করতে বলে।এদিকে তানিয়া একা যেতে একটু লজ্জা পাচ্ছিল,বন্ধুবান্ধবের সাথে শত রেস্টুরেন্ট ঘোরা হলেও,একা একটা ছেলের সাথে ঘোরা অন্য বিষয়।
তাই সে তিথিকে নেবে বলে ঠিক করে।
দুই বোন তৈরি হয়ে বেরিয়েও যায়।কিন্তু যাবার পথে মা ওকে থামিয়ে বললেন তিথি যেন রকিবের সামনে না যায়।
কেন বললেন তা তিথি বুঝতে পারলো,কিন্ত তানিয়া বুঝলোনা।সে এর ব্যাখা জানতে চাইছে।তিথি তখন কথা ঘুরিয়ে ওকে নিয়ে চলে আসে ওখান থেকে।
রিকশায় করে দুজনে সেই রেস্টুরেন্টে চলে আসে।তিথি এমন একটা কেবিনে বসে যেখান থেকে তানিয়া,রকিবকে দেখা গেলেও ওরা ওকে দেখতে পাবেনা।
তিথি বসে বসে বোর হচ্ছিল বলে সে একটা নুডুলস অর্ডার করে।
সে কাঁচামরিচ একদমই খেতে পারেনা।খেলেই তার দম বন্ধ হয়ে যায়।এরকম অবস্থা থাকে প্রায় এক দু ঘন্টা ধরে।
এ কথা তিথির কাছের মানুষ ছাড়া আর কেউ জানেনা।
অল্প সময়ের মধ্যে তিথিকে তার অর্ডার করা নুডুলসটা দিয়ে দেয়া হলো।সে নুডুলস পেয়ে মহা খুশি।খুঁজে দেখলো কোথাও কাঁচা মরিচ আছে কিনা।
কিন্তু কোথাও সে পায়নি কোনো মরিচ।নুডুলস সমাান্য সবুজ রঙের কেন সেটা ও জানতে চাইলো ওয়েটারের কাছে।
তখন ওয়েটার বলে এটা ফুড কালার।
তিথি আর সাত পাঁচ না ভেবে প্রথবারেই বড় এক চামচ নুডুলস মুখে দিয়ে চিবিয়ে গিলেও ফেলেছে।
গিলে ফেলার পরই তার মনে হলো ওটা ফুড কালার ছিল না,এরা নুডুলসে কাঁচামরিচ বেটে দিয়েছে।তিথি মাথায় হাত দিয়ে পানির জন্য হাঁপাতে লাগলো।টেবিলে একটু পানিও নেই।তার বুক জ্বলছে আগুনের মতন।মুখের চেয়েও বুক জ্বলাটা তার কাছে বেশি কষ্টের মনে হয়।
তার মাথা ঘুরছে।দম পুরো বন্ধ হয়ে আছে।
সে রেগে চেঁচামেচি করতে করতে বলে,’নুডুলসে কেউ কাঁচামরিচ বাটা দেয়!কেস করবো আমি!ভোক্তা অধিকারের কেস!’

তখন ওয়েটার দুজন এসে বলে এটা ফুড কালার।তিথি তাও চিৎকার করতে থাকে।এরপর ওয়েটার দুজন ওকে দেখিয়ে নুডুলস কয়েক চামচ খেয়েও দেখায়।তিথির নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছেনা।
এরা এত ঝাল কি করে খাচ্ছে!তাহলে সে খেতে পারেনাই কেন!
মরিচ আর ফুড কালারের আকাশ পাতাল তফাৎ!
তিথির মরে যাওয়ার মতন অবস্থা হয়ে গেছে।
ওয়েটার দুজন মুচকি হেসে চলে গেলো ওখান থেকে।তিথি যে এত পানি পানি করছে তাও কেউ তাকে পানি এগিয়ে দিলোনা।
শেষে আর সইতে না পেরে তিথি কান্না করতে থাকে।কারণ তার পেট জ্বলছিল।
চেঁচামেচির আওয়াজ তানিয়ার কানে পৌঁছায়।সে রকিবকে রেখে ছুটে এসে দেখে তিথির হাল বেহালৃ
সে দ্রুত পানি এনে ওকে খাইয়ে দেয়,তাও তিথির অবস্থার কোনো উন্নতি হয়না।এই সময়ের মাঝে ওয়েটারটা সেইই নুডুলসের বাটি গায়েব করে ফেলেছে।
তানিয়া ভয় পেয়ে গেলো,সে কি করবে না করবে।সে আরও পানি আনতে ছুটলো অন্যদিকে।তখন সেখানে তিথির সামনে এসে দাঁড়ায় ইশান।মুখে আগের মতন মাস্ক লাগানো।
এই সব কিছু ইশানেরই করা।
তিথি ইশানকে খেয়াল করেনি।সে ঝালে মাথা ঠোকড়াচ্ছে টেবিলে।
ইশান কাছে এসে তিথির মুখ টিপে ধরে।তিথি চোখ বন্ধ করে পানি পানি করছিল।
ইশান ওমনি তিথির মুখ খুলে ওর মুখের ভেতর আঙুল দিতেই তিথি ঐ জায়গাতেই বমি করে দেয় সবার সামনে।
বমির পরেই তার যত হাঁপানি সব আস্তে আস্তে থামে।পেটে যে জ্বালা করছিল সেটাও বন্ধ হয়ে যায়।
তিথি টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে ইশানের দিকে তাকায়।ইশান এক বোতল পানি ওর সামনে রাখে এরপর ওখান থেকে চলে যায়।
তিথি কিছুই বলেনা।শুধু তাকিয়ে থাকে।সেই অজ্ঞাত ছেলেটা আর ইশানের মাঝে কি কোনো যোগসূত্র আছে!
হাঁটা চলা,ভঙ্গিমা সব এক রকম মনে হয় তাদের দুজনের।

ইশাম যাবার সময় ওয়েটারের হাতে টাকা দিয়ে চলে যায়।কাজটা সে করিয়েছিল।তিথিকে কাতরাতে দেখতো তার আনন্দ লাগে!ভীষণ আনন্দ।
চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ৭
আফনান লারা

তানিয়া পানির বোতল নিয়ে ছুটে আসছিল তখনই তার ধাক্কা লাগে ইশানের সাথে।ইশান তানিয়াকে দেখে চোখ ঢাকার চেষ্টা করে কিন্তু তানিয়া ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে বলে, ‘ইশতিয়াক ভাইয়া!’

এটা শুনে ইশান চলে যাওয়া ধরে কিন্তু তখনই তানিয়া ওর পথ আটকে দাঁড়ায়।ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে সে।
ইশান বুঝে যায় তানিয়াকে ধোঁকা দেয়া যাবেনা।
তানিয়া বলে,’আপুর স্মৃতি শক্তি কম হলেও আমার অনেক বেশি,এটা তুমি জানো ভাইয়া!পালানোর কারণ কি?পালাবো তো আমরা!’

ইশান ভাবে এখন তানিয়ার কাছে সব স্বীকার করলে তার যত পরিকল্পনা আছে সব বাতিল হয়ে যাবে।তাই সে তানিয়াকে সরিয়ে দ্রুত চলে গেলো।কোনো কথাই বললোনা।
তিথি মাথায় হাত দিয়ে তখন তানিয়ার কাছে এসে দাঁড়ায়।ইশানকে চলে যেতে দেখে সে বলে,’এই ছেলেটা আমাকে অনেক ডিস্টার্ব করে জানিস!’

‘তাকে চিনো আপু?’

‘চিনবোনা কেন!আমার ভার্সিটিতে নতুন এসেছে’

‘ওহ!তার মানে এই টুকুই চেনো!’

‘আর কি চিনবো?তবে জানিস!ওর চোখটা কার সাথে যেন মেলে!আমার ঠিক মনে পড়ছেনা।তোর কি মনে পড়ে?আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের কারোর এমন চোখ ছিল?আমার পেটে আসছে কথা কিন্তু মুখে আসছেনা’

তানিয়া বুঝে গেছে ইশান চায়না সে তিথিকে ওর পরিচয় জানাক।তাই তানিয়া আর বেশি কিছু বলেনি তিথিকে।
এরই মাঝে রকিব তিথিকে দেখে অবাক হয়ে যায়।দুজনের চেহারায় এত মিল।তিথি একদম ছবির সে মেয়েটির মতই।
রকিব তব্দা খেয়ে বসে আছে।তখন তিথি বলে ‘সরি,এতদিন পরিচিত হইনি।আমি তিথি, তানিয়ার বড় বোন’

‘ওহ আচ্ছা,এবার বুঝলাম।আপনাকে কাল দেখিনি’

‘আসলে আমি বাসায় ছিলাম না।আচ্ছা আপনারা কথা বলুন।আমি আসি’

তিথি তানিয়াকে থাকতে বলে সে চলে যায়।
বাহিরে এসে ইশানকে চারিদিকে খোঁজে।এরপর দেখা হলে গলা টিপে সব কথা সে বের করে নিবে।
কোমড়ে হাত দিয়ে ওসবই ভাবছিল তিথি,
সেসময় তার সামনে এসে দাঁড়ায় মিয়াজুল করীম আঙ্কেল।
ইশান দূর থেকে তিথিকে দেখছিল এতক্ষণ। ওমনি মিয়াজুল আঙ্কেলকে দেখে তার মাথা হেট হয়ে যায়।কি করে সে এই আপদ দূর করবে তাই ভাবে এবার।

‘তিথি মা কেমন আছো?’

তিথি কোমড় থেকে হাত ছাড়িয়ে চোখ বড় করে তাকায়।অনেকক্ষণ দেখার পরেও সে চিনতে পারেনা।
এরপর আঙ্কেল বললেন,’ওহ হো!তোমার তো আবার ভোলার স্বভাব আছে,আরে আমায় চিনতে পারছোনা?তোমার বান্ধবী সনির বাবা আমি’

‘সনি?সনি সনি!ওহ মনে পড়েছো।ঐ যে সব সাবজেক্টে ফেল করতো।সেই সনি?’

‘হ্যাঁ।এই তো চিনতে পারলে!ইশাননন……’

এটা বলতেই দুটো লোক এসো মিয়াজুল আঙ্কেলকে দুপাশ থেকে ধরে তিথির সামনে থেকে নিয়ে গেলো।তিথি ভাবছে আঙ্কেল ইশানের নাম নিলেন কেন!

লোক দুটোকে ইশান পাঠিয়েছিল।আর একটু থাকলেই আঙ্কেল হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিতো, কি একটা ঝামেলা!সব জায়গায় গিয়ে হাজির হয়ে যায়।
তিথি মুখ ঘুরিয়ে ইশানকে খুঁজতে থাকে।কিন্তু কোথাও না পেয়ে সে একাই রিকশাতে উঠে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
মাথায় একটা কথাই ঘুরছে, আঙ্কেল ইশানের নাম নিলো কেন!কোন ইশান!
———-
ঐদিন মিয়াজুল আঙ্কেলকে ইশান তিথির অসুস্থতার দোহায় দিয়ে বাসায় আনা রোধ করেছিল।তারপর আঙ্কেলকে হোটেলে এনে কিছু খাইয়ে ভুলভাল বুঝিয়ল বিদায় ও করেছিল সে।
এসব ভাবতে ভাবতে ইশান ফোন বের করে আদিলকে কল দিয়ে বলে কাল যেন কাজটা সে ঠিক ঠাক করতে পারে।
ফোন রাখতেই ইশানের মায়ের কল আসে।
ইশান ভয়ের কারণে ধরতে চায়নি কিন্তু না ধরেও যে উপায় নেই।রিসিভ করতেই হলো।রিসিভ করতেই মা জানতে চাইলেন সে কোথায়।
তখন ইশান জানায় অফিসের কাজে বাহিরে এসেছে।মা ওকে বেশি কিছু বললেন না শুধু বললেন সে যেন তাড়াতাড়ি চলে আসে।তিনি ওকে দেখতে চান।

এদিকে মাথা ফাটার দাগ,দাগের জায়গাতেই স্থির।এই দাগ দেখলে মা কত হাজার প্রশ্ন যে করবেন,অসুস্থ ও হয়ে যেতে পারেন।
এদিকে মানাও করা যাবেনা।মা মুখ ফুটে যেতে বলেছেন যখন।
———
মাথায় একটা ক্যাপ পরে ইশান বাসায় ফিরে মায়ের সামনে আসে।মা ওকে দুইদিন না দেখে কান্নাকাটি করতে করতে ওকে জড়িয়ে ধরেন।এরপর জানতে চান সে কোথায় ছিল। কেন বাসায় ফেরেনি।
ইশান মায়ের পিঠে হাত রেখে তিথির কথা ভাবছিল।এই এক নারী তার মাকে কাঁদিয়েছিল,এই এক নারী তার জীবন তছনছ করেছিল।এবং এই এক নারীকেই সে সম্ভব ভালবেসেছিল!
তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।চোখ মুছে সে মাকে শান্ত করার চেষ্টা করে।
মা ওর হাত ধরে রেখে সোফায় বসে বললেন,’তোর ফুফাতো বোন মুনিয়া এসেছে।তোকে দেখার জন্য কত অপেক্ষায় ছিল।কিন্তু তুই তো আসছিসই না!সারপ্রাইজ দিবে বলে সে একবার কল ও করেনি। যা ওর সাথে গিয়ে কথা বলে আয়,আমি খাবার দিচ্ছি টেবিলে’

ইশান মাথা নাড়িয়ে চলে যাওয়া ধরতেই মা ওর হাতটা ধরে ফেললেন।এরপর ওর হাতে তিনি একটা আংটির বক্স দিলেন।
ইশান প্রতিমাসে মায়ের একাউন্টে অনেকগুলো টাকা ট্রান্সফার করে।সেই টাকা থেকে মা এই আংটিটা কিনেছেন।হীরের আংটি।
আংটির বক্সটার দিকে চেয়ে রইলো ইশান।তখন মা বললেন,’ওকে আজ পরিয়ে দিবি।আমি চাই তুই মুনিয়াকে বিয়ে করে সংসার জীবনে পা রাখ।আমার বিশ্বাস মুনিয়া তোর জীবনটাকে পূর্ণতা দেবে।’

ইশান কিছু বলেনা।বক্সটা নিয়ে তার রুমে চলে আসে।আসতেই দেখে তার বারান্দায় মুনিয়া দাঁড়িয়ে আছে। বাতাসে তার খোলা চুলগুলো উড়ছিল।সে অন্যমনস্ক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল।
ইশান আস্তে করে রুমে ঢুকে বক্সটা তার আলমারিতে রেখে দেয়।এরপর সে চলে আসে তামিয়ার রুমে।মুনিয়া তখনও কিছুই টের পায়নি।
ইশান তামিয়ার রুম থেকে একটা আংটি নিয়ে ফেরত আসে আবার।এরপর মুনিয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
মুনিয়া ইশানের গায়ের গন্ধ পেতেই চোখ বুজে অন্যদিকে ফিরে যায়।
তখন ইশান বলে,’লজ্জা পেলে তোর লস।এই রিং কিন্তু পাবিনা’

তখন মুনিয়া আড় চোখে ইশানের হাতের দিকে তাকায়।তার হাতে একটা রিং ছিল।
সে হাতটা বাড়িয়ে ধরে ওর দিকে।ইশান মুচকি হেসে রিংটা বারান্দার রেলিংয়ের উপর রেখে বলে,’কোনো নারীর অনামিকা আঙ্গুলে রিং পরানোর কারণ জানিস?এর ভিন্ন ব্যাখা আছে তবে আমি যে ব্যাখা জানি সেটাই বলছি।।।নারীর অনামিকা আঙ্গুলে রিং পরানো মানে তাকে জীবনসঙ্গী করার প্রথম ধাপে সই করছি।’

এই বলে ইশান রিংটার দিকে ইশারা করে বলে,’রিংটা পরে নে’

‘তুমি পরিয়ে দেবেনা?’

‘আমি তো তোকে জীবনসঙ্গী বানাতে চাইনা,তাহলে ১ম ধাপের সই কেন করবো?’

এটা বলে ইশান তার রুমে চলে আসে।মুনিয়া সেই রিং নিয়ে ইশানের সামনে এসে দাঁড়ায়।ওর হাতটা ধরে বলে,’আমি চাই তোমার স্ত্রী হতে, করবেনা?তুমি কি অন্য কাউকে পছন্দ করো?’

‘সেটা তোর জানার বিষয় না।রিং দিয়েছি,নিজে নিজে পর ইচ্ছে হলে।’

এটা বলে ইশান তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।মুনিয়া রিংটা নিজে নিজে পরে বের হয়ে আসে।তখন ইশানের মা ডাইনিং টেবিল সাজাচ্ছিলেন। মুনিয়াকে দেখে তিনি বললেন,’কিরে?ইশান কোথায়?’

‘ওয়াশরুমে’

‘মন খারাপ কেন?রিং পরায়নি?’

এটা বলে তিনি মুনিয়ার হাত ধরলেন।কিন্তু তার কেনা রিং আর এই রিংয়ের কোনো মিল তিনি পেলেন না।মুনিয়া রোবটের মতন দাঁড়িয়ে ছিল।
ইশানের মা ভাবছেন তাহলে তার রিংটা ইশান কার জন্য রেখেছে।

ইশান মুখ ধুয়ে বেরিয়ে আলমারি থেকে সেই রিংয়ের বক্সটা বের করে তার কোটের পকেটে ভরে রাখে।কাল এই রিং তার আসল মালিকের কাছে যাবে।
ক্যাপটা পরে মুচকি হাসি দিয়ে ইশান পেছনে তাকাতেই দেখে তার মা দাঁড়িয়ে।

‘রিংটা কাকে দিবি তুই?’

‘কাউকে না’

‘তাহলে মুনিয়াকে দিলিনা কেন?’

‘সে রিংটার যোগ্য না’

‘ তাহলে কে যোগ্য?আচ্ছা,তুই কি এখনও তিথির কথা ভাবছিস ইশান?তার জন্য রেখেছিস?’

চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে