যদি তুমি বলো💌
পর্ব ২২
আফনান লারা
তিথি কলটা হোল্ডে রেখে বললো,’কি ভেবেছেন?টাকা খাওয়াবেন আমার পরিবারকে তারপর সেই টাকার জোরে আমি সত্যটা চাপা রেখে দিবো?তা হবেনা মিঃইশতিয়াক!আমি বাবাকে সব সত্যিটা জানিয়ে দিবো।এবং সেটা খুব দ্রুতই হবে।আমার বাবা এমন না যে টাকার লোভে আমাকে আপনার কাছে থাকতে বাধ্য করবে’
এই বলে তিথি ফোন আবার কানে ধরে বললো সে আজ বাবার সাথে দেখা করতে আসবে।এটা বলে কলটা কেটে সে ফোন ইশানের হাতে ধরিয়ে বাকি জামাকাপড় গুলো ধুতে থাকলো।
তার এ কথায় ইশানের যেন কিছুই যায় আসলোনা।সে একটা হাসি দিয়ে চলে যায়।যেন সে জানতো তিথি এটাই বলবে।
তিথি সব জামাকাপড় ধুয়ে এসে দেখে ইশান তিথির জামাকাপড় সব ব্যাগে তুলছে।এটা দেখে তিথি প্রথমে বুঝতেই পারছিলনা আসলে হচ্ছে টা কি।
তিথিকে দেখে ইশান বলে ওঠে সে যেন তৈরি হয়ে নেয়।তখন তিথি জানতে চাইলো কেন সে তৈরি হবে।
‘ওমা!বাপের বাড়ি যাবিনা?তুই তো বললি আমার সংসার করবিনা’
‘আর আপনি দিবেন সেটা? ‘
‘কেনো দিবোনা।অবশ্যই দিবো।’
এই বলে ইশান ব্যাগটা নিয়ে দরজার কাছে রেখে আসে।এরপর নিজের ল্যাপটপটা নিয়ে মায়ের রুমে চলে যায়।তিথি ভাবতে পারেনি ইশান সব এত সিরিয়াস নিয়ে ফেলবে।এখন ব্যাগ নিয়ে বাড়ি গেলে সকলে কি না কি ভাববে।যদি তার কথা কেউ বিশ্বাস না করে?
ঢোক গিলে অনেক চিন্তাভাবনা শেষে তিথি সিদ্ধান্ত নেয় সে যাবেই,যা হয়ে যাক না কেন।
যেমন ভাবা তেমন কাজ।সে ব্যাগ নিয়ে ইশানকে বাই বলে দরজা খুলে চলেও গেছে ।
ইশান তখনও নিজের কাজ করছিল।উঠে একবার দেখতেও আসেনি,কারণ সে জানে এরপর কি হতে চলেছে।
তিথি একটা রিকশা নিয়ে তার বাসায় ফিরে।সে ভেবেছিল সবাই ওকে দেখে অনেক খুশি হবে।কিন্তু হলো তার উল্টো। সবাই ব্যস্ত অন্য কাজে।তানিয়ার কাবিন নিয়ে আলোচনা করছে সবাই।
তিথি গেছে তাতে খুশি হলেও সবাই এখন বেশি ব্যস্ত তানিয়াকে নিয়ে।
এদিকে তিথি মুখ ফুটে বলতেও পারছেনা সে ইশানকে ছেড়ে এখানে এসেছে।একটা সময়ে বাবাকে একা পেয়ে সে ধরলো কথাগুলো বলার জন্য।
‘হ্যাঁ রে মা বল কি বলবি,তুই না কি বলতে চেয়েছিলি?’
‘বাবা আমি ইশানকে….’
‘ইশান যে কি ছেলেরে মা।তোকে আর কি বলবো।যত বলবো তত কম বলা হবে।সে এত কিছু কেন করছে আমি বুঝতেছিনা।আজীবন মেয়ের বাপেরা মেয়ের শ্বশুর বাড়ির জন্য করতে করতে শেষ হয়ে যায়,আর তোর বেলায় হচ্ছে উল্টো। ছেলে তোর জন্য সব করছে।খুব ভাগ্য করে পেয়েছিস রে।তোর বিয়েতে আমার অনেক খরচ হয়েছিল,এদিকে রকিবের পরিবার বিয়ের চাপ দিচ্ছিলো।এই মূহুর্তে আরেকটা বিয়ের খরচ জোগানো আমার জন্য অসম্ভব হয়ে গেছিলো। ঠিক সেসময় ইশান আমায় জানায় তানিয়াকে ছোট বোন হিসেবে ওর জন্য সে কিছু দায়িত্ব পালন করতে চায়।তানিয়া নাকি তার অনেক আদরের।তোর যেমন আদরের তেমনই ওর ও আদরের।
সে জোর করে টাকা দিতে চায়,আমি বারবার মানা করার পরেও শুনলোনা রে।এত ভাল কেন!আচ্ছা তুই ওর মন জুড়িয়ে চলিস তো?ছেলেটাকে একদম কষ্ট দিবিনা।ওর কথা মত চলবি।’
এ কথা শুনে তিথির মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে।সে কিছু না বলেই উঠে চলে গেলো।যাবার সময় নিজের ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো সে।
কোথায় গেলো কেউ জানেনা।বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হবার পর তিথির বাবা ওর কোনো খোঁজ না পেয়ে ইশানকে একটা কল দিলেন।
ইশান মনে করেছিল তিথি হয়ত ওর বাসাতেই আছে,কিন্তু ওর বাবার কাছে এ কথা শুনে সে নিজেও চিন্তায় পড়ে গেলো। শান্ত মনে কাজ করছিল সে আজ সারাদিন ধরে।তিথি তার বাসায় নিরাপদ আছে ভেবে সে আর কোনো খবর রাখেনি।
এখন তিথির বাবার মুখে তিথির না থাকার কথা শুনে সে ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায়।দ্রুত তানিয়াকে কল দিয়ে তিথির কোনো বান্ধবীর কাছে আছে কিনা খোঁজ নিতে বললো।শুরুতে তিথির যে বান্ধবীর বাসায় সে গিয়েছিল সে আপাতত বাংলাদেশে নেই।পরিবার নিয়ে সুইডেন গেছে।তাকে বাদ দিয়ে আর বাকিদের খোঁজ নিতে বললো সে তানিয়াকে।এরপর নিজেই বের হয়ে গেলো তিথিকে খুঁজতে।
তিথি আসলে তার নানুর বাড়িতে চলে এসেছিল।ওর নানুর বাড়ি ঢাকার বাহিরে।
এটার কথা ইশান জানতোনা।অনেক খোঁজাখোঁজির পর হঠাৎ তানিয়া তাকে কল দিয়ে জানায় নানু কল দিয়েছিল।তিথি নাকি উনার কাছে।এটাও তিথি কাউকে জানাতে মানা করেছিল কিন্তু তিথির মা চিন্তা করবেন ভেবে তিনি তিথির থেকে লুকিয়ে কথাটা ওদের জানিয়ে দিয়েছেন।
ইশান আর বাসায় ফিরলোনা,সোজা তিথির নানুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।তিথির নানুর বাড়ি ইশান খুব ভাল ভাবে চেনে। কারণ ইশানের কাছ থেকে মুক্তি পেতে প্রায় এক মাসের মতন তিথি তার নানুর বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করেছে,সে ভেবেছিল ইশান ওর নানুর বাড়ির ঠিকানা পাবেনা,কিন্তু ইশান তো ইশানই।সে ঠিকানা বের করে নিয়েছিল, তা অবশ্য তিথিকে বুঝতে দেয়নি।
তিথি নানুর বাড়িতে বসে বসে মুড়ি দিয়ে চিনি মাখিয়ে খাচ্ছিল আর টিভি দেখছিল।ওমনি দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ শুনে নানু উঠতে গেলেন,তিথি তাকে উঠতে মানা করে নিজেই গেলো দেখতে।দরজা খুলতেই সে দেখে ইশান দাঁড়িয়ে আছে।এত রাতে আচমকা ইশানকে দেখে তিথি ভয় পেয়ে গেছিলো।হা করে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল সে।ইশান ওর সাথে কোনো কথা না বলে হাতে থাকা মিষ্টি আর ফল এনে নানুর সামনে রেখে তাকে সালাম করলো।
নানু তো ইশানকে দেখে আত্নহারা হয়ে গেছেন।তিনি কি দিয়ে ওর আপ্যায়ন করবেন সেটাই ভেবে চলেছেন।
তিথি এক কোণায় দাঁড়িয়ে চোখ বড় করে তাকিয়েছিল।নানু সোফার রুম থেকে চলে যেতেই ইশান খপ করে তিথির হাতটা ধরে একটা রুমে নিয়ে আসলো,তিথি কিছু বলবে তার আগেই ইশান ওর মুখটা চেপে ধরে বললো,’কি ভাবিস নিজেকে?তুই না বাপের বাড়ি যাস?এটা তোর বাপের বাড়ি?’
‘আপনার কি তাতে?আপনার সংসার তো করছিনা আমি’
‘ডিভোর্স হয় নাই যে আমি এসব পাত্তা দিব না’
‘আমার ইচ্ছে আমি বাবার বাড়ি যাবো নাকি মায়ের বাড়ি যাবো।আপনার জীবন নিয়ে আপনি থাকুন।সেই ছোটকালকার বেহায়াপনা আবারও শুরু করেছেন।পিছু ছাড়তে বলেছি,ছাড়ছেন না কেন?’
‘আমি সেই ছোট ইশতিয়াক নয় যে তুই পিছু ছাড়তে বলবি,আর আমিও পিছু ছেড়ে দিবো।এখন তুই আমার বিয়ে করা বউ’
‘না কেউ না আমি।আপনি আমাকে রাখছেন দিনের পর দিন অত্যাচার করার জন্য।যা আমি কিছুতেই সহ্য করবোনা।আপনি চলে যাবেন এখন… ‘
নানু সোফার রুমে শরবতের গ্লাস এনে বললেন,’ইশান নাতি কই তুমি?কোথায় গেলে!তিথি কই তুই?’
তিথি নানুকে ডাকতে যাবে তখনই ইশান ওর মুখটা আরও জোরে চেপে ধরে বললো,’নানু আমি ওয়াশরুমে’
নানু ইশানের এ কথা শুনে অন্যদিকে তিথিকে খুঁজতে চলে গেছেন।তিথি ইশানের শার্ট খাঁমছাচ্ছে নিজেকে ছুটানোর জন্য,কিন্তু কিছুতেই ইশানের সাথে পেরে উঠছেনা।
নানু চলে যাবার পর ইশান ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো,’তখন তোর উপর আমার কোনো অধিকার ছিল না।এখন আছে।তখনও তুই এরকম নাছোড়বান্দা ছিলি আর এখনও আছিস।কিন্তু এখন আর আমি সহ্য করবোনা।আমি যেভাবে বলবো তোকে সেভাবেই চলতে হবে’
‘আর যদি না চলি তখন কি করবেন?আপনি সেইসময় ও আমায় কাবু করতে পারেন নাই।এখন ও পারবেন না।আমি আমার জেদে অটল থাকবো’
ওমনি ইশান ওর হাত ছেড়ে দেয়।ওকে ছেড়ে যাবার সময় চেঁচিয়ে বলে,’নানু খাবার দাও,খেয়ে ভাতঘুম দিবো’
এই বলে একটা হাসি দিয়ে সে নানুর কাছে চলে যায়।তিথি ভাবছে সে কি করার কথা ভাবছে আসলে।তার মাথায় কি চলে যদি একবার সে বুঝতো তাহলে আগে থেকে তৈরি হয়ে নিতো।
রাতে খাবার খেয়ে ইশান ওর জন্য তৈরি করা রুমটাতে গিয়ে আরাম করে বসেছে।তিথি নানুর সাথে ঘুমাবে বলে ঠিক করছিল ঐ সময়ে নানু তাকে ধমকে ইশানের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।কিন্তু তিথি তো জানে,সে এখন ঐ রুমে যাওয়া মানে আজ একটা যুদ্ধ ঘটে যাবে।তাই সে সোফায় এসে শুয়ে পড়ে।
ইশান দেখলো সব রুমের আলো নিভানো।মানে মামা মামি সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।নানু ও ঘুমায়।তবে তিথি আসছেনা কেন?
ইশান সে কারণে বিছানা থেকে নামলো দেখার জন্য।
রুম থেকে বেরিয়ে অন্ধকারে হাঁটতে হাঁটতে সে সোফার রুমে এসে দেখে তিথি সোফায় শুয়ে শুয়ে মশা মারছে।
ইশান তখন রুমের আলো জ্বালিয়ে বললো,’উঠ’
‘যাব না।আমি এখানেই ঘুমাবো।আমার ইচ্ছে’
ইশান জোর করতে যাবে ওমনি নানু পানির বোতল নিয়ে এসে বললেন,’কি গো তোমরা এখানে কি করো?আমি পানির বোতল এনেছি দেয়ার জন্য।একি তিথি!তুই বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে আছিস কেন?যা ঘরে যা!’
ইশান মুচকি হাসি দিয়ে বোতলটা নিয়ে বললো,’এই তো আমিই নিয়ে যাচ্ছি ওকে’
এই বলে সে তিথির হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে গেলো রুমে।এরপর দরজাটা ভেতর থেকে লক করে নিলো।
চলবে♥
যদি তুমি বলো💌
পর্ব ২৩
আফনান লারা
তিথি আঙ্গুল তুলে তাকিয়ে রইলো ইশানের দিকে।ইশান দরজা লাগিয়ে তাতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওকেই দেখছে।তার হাসি বলছে সে একটা কিছু করে তারপর ক্ষ্যান্ত হবে।তিথি ঢোক গিলে বললো,’আপনার শাস্তি কি আসলে….’
‘তুই যেটা ভাবছিস সেটা হতেও পারে’
‘কিন্তু আপনি বলছিলেন আমাকে টাচ করা নিয়ে আপনার ইচ্ছা নাই,আমার নাকি সেই যোগ্যতা নাই।আরও কত কি বলছিলেন।তাহলে এখন আবার এসব কেন?আর আপনি….’
ওমনি কারেন্ট চলে যায়।হুরহুর করে জানালা ভেদ করে বাতাস আসতে শুরু করে।বৃষ্টির আগাম বার্তা।হয়ত আকাশে মেঘের গর্জন আগেই পেয়ে বিদ্যুৎ অফিস কারেন্ট নিয়ে চলে গেছে।
তিথি অন্ধকারে আতঙ্কে রোবট হয়েছিল।হঠাৎ কানের কাছে কারোর গরম নিশ্বাস পড়তেই সে সরে দাঁড়ায়। কিন্তু ঐ মানুষটা হয়ত তার চারিদিকটা দখল করেই দাঁড়িয়েছে।তিথি সরতে গিয়ে যেন তার গায়ের সাথে আরও আষ্টেপৃষ্ঠে গেলো।মানুষটা তার কানে ফিসফিস করে বললো,’কথা শেষ কর’
তিথি কাঁপা কণ্ঠস্বরে জবাব দেয়,’অত্যাচারের মধ্যে ভালবাসাও পড়ে?’
ওমনি তার হাত টান দেয় ইশান।অন্ধকারে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা তিথি।কেবল ইশানের গায়ের শীতলতা তাকে জানান দেয় সে ওর খুব কাছে।ইশান ডান হাত দিয়ে তিথির হাতটা ধরে রেখে বাম হাতটা ওর কোমড়ে নিয়ে চাপ দিয়ে ওকে আরও গায়ের সাথে লাগিয়ে ধরে এরপর বলে,’সবাই চায় আমি তোকে খুব কষ্ট দিই।অনেক অনেক কষ্ট,তাহলে নাকি সবাই খুশি হবে’
‘আর আপনি?’
‘আমি সবার চাইতে বেশি খুশি হবো’
‘তবে দিন।ভালবাসতে চান কেন?এটা তো অত্যাচার না’
‘উমমমম ভাবলাম অন্যভাবে অত্যাচার করা যাক’
‘কোন ভাবে?’
ইশান মুখটা তিথির কানের কাছে এনে তাতে ঠোঁট ছোঁয়ালো।কোমড়ের উপরের হাতটা নিয়ে তিথির চুলগুলোকে শক্ত করে ধরে ঠোঁটটা আরও একবার ছোঁয়ালো সে।তিথি আবেগে হাতটা বাড়িয়ে ইশানকে খাঁমছে ধরতেই ইশান এক ধাক্কা দিয়ে তিথিকে দূরে ঠেলে দেয়।তিথি ধাক্কা খেয়ে বিছানার উপর গিয়ে পড়ে।ইশান তখন বলে,’এটাই তোর শাস্তি।আমার গায়ের গন্ধ পাবি,আমার ছোঁয়া পাবি!কিন্তু সেই ছোঁয়ায় প্রেম খুঁজে পাবিনা’
তিথি বিছানায় পড়ে থেকে বলে ওঠে,’কিন্তু যে একটা ভুল হয়ে গেলো মিঃইশতিয়াক!সে ভুলটা হলো আপনার শাস্তি ভরা ছোঁয়ায় আমি প্রেম খুঁজে পেয়েছি।এই ছোঁয়া আপনি মন থেকে ছুঁয়েছেন।তিথি ছোঁয়ার মানে বোঝে,ওতোটাও অবুঝ না’
ইশানের খুব রাগ হয়।অতীতের সেই দৃশ্যগুলো তার চোখের সামনে ভাসতে থাকে।তিথির এ কথা শুনে তার মনে হয় সে তার লক্ষ্য থেকে সরে যাচ্ছে।এটা হতে দেয়া যায়না।
এইসব ভেবে সে পকেট থেকে ফোন বের করে লাইট জ্বালিয়ে তিথির মুখের দিকে ধরে রাখে। তিথি শুয়ে শুয়ে হাসছে।
ওর হাসিতে ইশানের রাগ হাজারগুণ বৃদ্ধি পেলো।সে এগিয়ে এসে তিথির হাত ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে বললো,’আমি তোকে ভালবাসিনা!বাসতাম!আমার ছোঁয়ায় প্রেম পাবার মিথ্যা নাটক করার কোনো মানে হয়না তিথি!’
‘যদি কথাটা মিথ্যাই হয় তবে আপনার এত প্রমাণ দেবার কি দরকার?লোকে তো কত কথাই বলে’
ইশান তিথির চুলগুলো টেনে ধরে এক চিৎকার করে বললো,’এইবার পেলি প্রেম?’
তিথি হাসছে।শুধুই হাসছে।ইশান ওর চুলটা টেনে ধরলেও সে কেন যেন ব্যাথাই পেলোনা।বরং মন চাইলো একবার এই শরীরটাতে মাথা গুজাতে।তার মনে হয় এই শরীর পাথরের গড়া নয় মোটেও।
তিথির চাহনি ইশানের কাছে সুবিধার লাগলোনা।সে আলোটা তিথির চোখের উপর ধরে বললো,’আমি তোকে কষ্ট দিতে চাই। এটাই সত্যি!’
এই বলে ইশান তিথিকে ছেড়ে বিছানার অন্যদিকে গিয়ে বসে পড়ে।তিথি ও চুপচাপ বসে থাকলো। ইশান আসলে চাইছে টা কি!
ইশান পা দোলাতে দোলাতে মনে করলো সেই আগেকার দিনে তিথিকে একবার হাত জোড় করে ইশান বলেছিল,’আমি বিদেশ চলে যাব তিথি,একটিবার আমার হাতে হাত রেখে নদীর কিনারায় যাবে?পা ডোবাবো ঠাণ্ডা পানিতে’
তার এই ইচ্ছার উত্তরে তিথি বলেছিল,’জাহান্নামে যাও’
এই কথা মনে পড়তেই ইশানের আবারও মাথায় রাগ উঠে গেলো।সে উঠে ঘুরে এসে তিথির দিকে তাকিয়ে থাকলো।তিথি আচমকা ওকে দেখে চেয়েছিল। মনে মনে ভাবছিল ও আসলে করবে টা কি।ইশান হাত বাড়িয়ে তিথির হাত টেনে ধরে দরজা খুলে বের হয়ে যায়।তিথিকে সে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে।
তিথি ওর সাথে পাল্লা দিয়ে যেতে যেতে বললো,’আশ্চর্য! এভাবে টেনে টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?’
ইশান কিছু বলছেনা।বাসা থেকে বেরিয়ে ফোনের আলো সামনে ধরে সে চলছেই।
অনেকদূর আসার পর সে থামে।বাতাসে বোঝা যাচ্ছিলো তারা নদীর পাড়ে।
তিথি জানতে চায় এই বৃষ্টির মধ্যে কেন সে ওকে এখানে নিয়ে এসেছে।তখন বৃষ্টির মাত্রা অনেক বেশি ছিল।দুজনই ভিজে গেছে।
রাত তখন সাড়ে বারোটা বাজে,এত বৃষ্টি।ভয়ে তিথির সারা শরীর কাঁপছিল।ইশানের নিরবতা তাকে আরও ভয় পাইয়ে দিচ্ছিলো।
অনেকক্ষণ কেটে যাবার পর তিথি বললো,’এভাবে নদীর কাছে বৃষ্টির মধ্যে এনে কি বোঝাতে চাইছেন আপনি?’
‘এটাই যে,,, শেষবার দেখা করার দিন তোমায় আমি এই অনুরোধটা করেছিলাম,এবং তুমি সেটার তাচ্ছিল্য করেছিলে ‘
‘তো?কি করতে চান এখন?পানিতে ডুবিয়ে মেরে প্রতিশোধ নিতে চান?’
তিথি কথা শেষ করার আগেই ইশান ওকে ধাক্কা দিয়ে নদীর পানিতে ফেলে দিলো।
তার খুব ভাল করে মনে আছে তিথি সাঁতার জানে।
সে ফোনের আলোটা তিথির দিকে ধরে রাখলো।তিথি নাকানিচুবানি খেয়ে পানির মধ্যেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখন।
‘কি?কেমন লাগছে?যোগ্য প্রার্থী হারালে,কাঁদতে হবে আড়ালে।এখন আমি তোকে আমার সামনেই কাঁদাচ্ছি।কেমন লাগছে তোর?’
‘আমি কাল সকালেই বাসায় চলে যাবো,চিরজীবনের জন্য।আপনার সাথে আর একটাদিন থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব। ‘
ইশান ফোনটা পাশে থাকা একটা পাথরের সাথে দাঁড় করিয়ে নিজেও পানিতে ঝাঁপ দিলো।
তিথি সরে যেতে চাইলো কিন্তু তখনই ইশান ওর কাছে এসে বললো,’একবার আমায় না করে কি ভুল করছিস তার মাশুল মাত্রই দিলি।আরও একবার ভুল করার স্বাদ জেগেছে?’
‘আপনার মতন মানুষের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা যদি ভুল হয়ে থাকে,তবে সেই ভুল আমি হাজারবার করবো’
ইশান তিথিকে টান দিয়ে নিজের সাথে লাগিয়ে ধরে বলে,’কোন হাসবেন্ড এত সুন্দর একটা রোমান্টিক মোমেন্ট উপহার দেয়?’
‘আমার কাছে রোমান্টিক লাগছেনা।বরং বিরক্ত লাগছে।হাত ছাড়ুন,আমি উঠবো এখান থেকে’
‘আজও আমার সাথে থেকে নদী দেখতে ইচ্ছে করেনা তোর?’
তিথি মুখ বাঁকিয়ে হাত ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।
ইশান শুধুই হাসছে।তিথি কিছুতেই নিজেকে ছাড়াতে পারছেনা।আগেকার ইশান ছিল হালকা রোগাপাতলা,তাকে যখন তখন ধাক্কা দিয়ে তিথি সরিয়ে ফেলতো।কিন্তু এখন আর পারেনা কারণ এখনকার ইশানের সাথে পূর্বের ইশানের আকাশ পাতাল তফাৎ।
তিথি শেষে বাধ্য হয়ে বলে,’আপনি কি চান টা কি?’
ইশান হাসে।বৃষ্টির পানিতে তার সারা মুখ ভিজে আছে।চুলগুলো সব মিহিন হয়ে তার থেকে পানি গড়িয়ে গড়িয়ে নাক দিয়ে ঠোঁট মাড়িয়ে চলে যাচ্ছে।
তিথি ওর হাসি দেখে আবারও ভয় পেয়ে যায়।লোকটাকে বিশ্বাস করতেও তার ভয় হয়।কখন কি করে বসবে!
আসলে এখন কি করবে সেটাই তো অজানা।
ইশান হাত দিয়ে তিথির চুলগুলোকে ঠিক করে দিয়ে ওর গাল ধরে বলে,’বিশ্বাস কর!তোর চেহারার মত যদি তোর মনটাও সুন্দর হতো আজ আমি এই নদী রাঙিয়ে দিতাম প্রেমে!তোকে ডুবাতাম সেই প্রেমে।তুই বাধ্য হয়ে বলতি আজকে আর না!’
কিন্তু দেখ!তুই তোর সব চাইতে খারাপ রুপ আমাকে দেখিয়ে দিলি সেই সময়ে যখন তোর সব চাইতে বেশি দরকার ছিল আমার।জানিস এখন আমার ইচ্ছে করে তোকে আঘাত করতে!অন্তত আমার রাগ কমতো তাতে!’
‘দিন আঘাত,আর বাকি রাখছেন কেন?ডুবান পানিতে।মেরে ফেলুন!অপমানের প্রতিশোধ যদি মৃত্যু হয় তবে মানছি আমি সেটা’
‘তুই আমায় শুধু অপমানই করিসনি।আমার কলিজায় হাত দিছস।আমার মাকে কাঁদিয়েছিস!আমার টা নাহয় ভুলেই গেলাম।আমার মায়ের উপর যে জুলুম করেছিস সেটার প্রতিদান কে দেবে?’
‘আজ যদি একটা কম বয়সী ছেলে এসে বলে আপনার ছোট বোনকে বিয়ে করবে,যদি তার চাকরি না থাকে,ঘরবাড়ি না থাকে। সে যদি বখাটে হয়?দিবেন বিয়ে?’
চলবে♥