যদি তুমি বলো পর্ব-১৮+১৯

0
440

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ১৮
আফনান লারা

তিথি তামিয়ার শাড়ীটা পরে রুম থেকে বের হয়।এরপর সবার মাঝে এসে দাঁড়ালেও ইশান কাছে আছে তা জেনেও সে ভুল করেও ওর দিকে তাকায়নি।যেন সব রাগ তার হবার কথা।
ইশান ওর এই জেদে মোটেও পাত্তা দিলোনা।সে চুপচাপ টিভি দেখছিল।কিছু সময় বাদে ভাঁড়া করা প্রাইভেট কার সব আসতেই আত্নীয় স্বজন সবাই গাড়ীতে উঠা ধরেছে এক এক করে।
ইশান আর তিথি আলাদা গাড়ী করে যাবে।তিথি তাই রিদমকে বলেছিল তার সাথে গাড়ীতে উঠতে কিন্তু ইশান তামিয়াকে দিয়ে রিদমকে সরিয়ে ফেলেছে।তার আসলে অন্য প্ল্যান ছিল।
গাড়ীতে ওঠার পরেও তিথি ইশানের দিকে তাকায়নি।সে চুপ করে ফোন টিপছিল আর তানিয়াকে কল দেয়ার চেষ্টা করছিল।কেনো রিদম আসে নাই সেটা নিয়ে কথা বলার জন্য।

ইশান কমিউনিটি সেন্টারে না গিয়ে অন্য পথে চলেছে।তিথি তো আর এতসব কিছু জানেনা।
গাড়ী চালাতে চালাতে একটা সময়ে ইশান বললো,’আদিলের হাত ধরার খুব ইচ্ছা ছিল তোর তিথি?’

তিথি কিছু বলেনা।
ইশান আবার বলে,’ওরে জড়িয়ে ধরতে মন চাইতো তোর?’

তিথি এবারেও কিছুই বলে নাই।ইশান এবার হঠাৎ গাড়ী থামিয়ে দেয়।তিথি ফোন টিপছিল দেখে রাগে সে ওর হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে জানালা দিয়ে ফেলো দিলো।তখন তিথি চোখ রাঙিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজেই গাড়ী থেকে নামতে নিতেই ইশান গাড়ীটা পুনরায় স্টার্ট দিয়ে ফেলে।তিথি তার ফোনটা নিতেই পারলোনা।এবার ওর ভীষণ রাগ হলো।চিৎকার করে বললো,’আপনার সমস্যা টা কি!’

‘সমস্যা?আমার সমস্যার অভাব আছে নাকি।কতবার কত কি জিজ্ঞেস করতেছি উত্তর দেয়া প্রয়োজন মনে করছিস না!’

‘আমার ইচ্ছা আমি উত্তর দিব না।এগুলা উত্তর দেয়ার মতন প্রশ্ন না।আমি আদিলের সাথে কি করছি,কি করতে চাইছি এসব জেনে আপনি কি করতেন?ধরুন,ওর সাথে রাত কাটাইছি।তাতে আপনার কি?’

এটা শুনে ইশানের মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে, সে গাড়ীটা থামিয়ে দেয় তখনই।
জায়গাটি ছিল হাইওয়ে তে।ইশান গাড়ী থেকে বের হয়ে তিথিকেও টেনে গাড়ী থেকে বের করালো। এরপর বললো,’এখান থেকে যাবার মতন কোনো রিকশা পাবিনা।এটা হাইওয়ে!হেঁটে হেঁটে রিসিপসানে আসবি’

এটা বলে ইশান গাড়ীতে উঠে চলে যায়।
তিথি মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। কোনো উপায় না পেয়ে সে একাই হাঁটা ধরে।হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ যাবার পর সে একটা সিএনজির দেখা পায়।এরপর সেটাতে উঠতে নিতেই সিএনজির লুকিং গ্লাসে ইশানের কারের প্রতিচ্ছবি দেখে সে সিনএজি থেকে নেমে বললো,’আপনাকে আরেকজন পাঠিয়েছে তাই না?লাগবেনা আমার দয়া’

এই বলে তিথি নেমে যায়।ইশানই পাঠিয়েছিল এটা সঠিক।এবং সে নিজের চোখে দেখেওছে তিথি যে নেমে পড়লো।
তিথি সোজা হাঁটছে।হাঁটতে হাঁটতে সে হঠাৎ থেমে যায়।
আসলে সে রাগ কেন করছে?
ইশান তো তার সাথে এমন ব্যবহার করার কারণ হলো তার অতীতে করা দূর্ব্যবহার।ইশান তো আর এমনি এমনি এসব করেনা।
সে থেমে যাওয়ায় ইশান ও তার কারটা থামিয়ে নেয়।
অনেক ভেবে তিথি সোজা গিয়ে সিএনজিটাতে উঠে পড়লো আবার।কিছু আর বললোনা।

সবাই ওদের দুজনের অপেক্ষাতেই ছিল।
তিথিপরে এসেছে,ইশান আগেই এসে গিয়েছিল।
তিথিকে তার মা বকাবকি করছিলেন দেরি হওয়ার জন্য।কেউ আসলে জানেনা তিথি কিভাবে আসলো।সবার ধারণা তিথি কার থেকে নেমে আসতে দেরি করেছে।
সে স্টেজে উঠে ইশানের পাশে বসতেই ইশান বললো,’তোর বোঝা উচিত দেমাগ আসলো কার দেখানো যুক্তিযুক্ত ‘

এই বলে সে সরে বসে।দূর থেকে তিথির বাবা মা দারুণ হাস্যজ্জ্বল চোখে চেয়ে চেয়ে দুজন দুজনকে বলছেন তাদের মেয়েকে অবশেষে যোগ্য পাত্রের হাতে তারা তুলে দিতে পেরেছেন।
তিথি চুপ করে বসে ছিল।হঠাৎ ভীড়ের মাঝে সে আদিলকে দেখে।আদিল কাছে এসে ইশানকে জড়িয়ে বললো,’স্যার,,, ভাবী কিন্তু সেই!’

এই কথা শুনে তিথি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।সব কিছু কেমন করে যেন স্বচ্ছ কাঁচের মতন মনে হচ্ছে।আদিল কি তাহলে ইশানেরই লোক!
তিথির ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে ইশান বলে ফেললো আদিল তার অফিসের একজন কর্মচারী।সে ইশানের কোম্পানিতে বাংলাদেশের এজেন্ট হয়ে কাজ করতো।
তিথি সবেমাত্র মনে এসে গেলো আদিল ও কোনো একটা নুডুলসের ফ্যাক্টরির কঘা বলেছিল।
সব খোলসা হচ্ছে একের পর এক।
তিথি কিছুই বলেনা।মনে মনে সব হিসাব মেলাতে ব্যস্ত সে।
রিসিপশানের সব কাজ শেষ হবার পর ঠিক হলো ইশান আর তিথি আজ তিথিদের বাসায় যাবে,এটাই নিয়ম।
কিন্তু ইশান বেঁকে বসলো।সে নাকি চায় তিথিকে নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে।
তিথির বাবা মা এ কথা শুনে তারা আরও মহা খুশি হলেন।

কিন্তু খুশি হতে পারলোনা তিথি।কারণ সে বেশ জানে ইশান মোটেও তাকে ভালবাসায় ঘোরাতে নিচ্ছেনা।বরং নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাতে নিচ্ছে।
তিথির চাহনি দেখে ইশানের শুধু দুষ্টু হাসিই পাচ্ছে।এর বাহিরে কিছুই না।

তিথি হঠাৎ করে বলেই দিলো তার শরীর খারাপ করছে।সে বাসায় ফিরবে।কিন্তু তার কথায় বাধা দিয়ে ইশান ও বলে দিলো ঘুরতে যাবার আগে হসপিটাল হয়ে তারপর যাবে।
মানে সে কিছুতেই তিথির কথা রাখবেনা।এদিকে পরিবারের বাকিদের চাপে পড়ে তিথি আর কোনো বাহানাই দিতে পারলোনা।অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যে যার মতন চলে যাবার পর ইশান তিথিকে নিয়ে চললো অন্য এক অজানা পথে।তিথি গাল ফুলিয়ে শুধু সামনে তাকিয়ে দেখছে পথটা আসলে কোন দিকে যায়।
অনেকটা পথ পাড়ি দেবার পরেও যখন সে দেখলো ইশানের কার থামছেনা তখন সে মুখ ঘুরিয়ে বললো,’জেলে নিচ্ছেন আমাকে??’

‘এত শান্তির জায়গায় কেন নিবো বল?’

‘ওহ!তার মানে জেলের চাইতেও নিকৃষ্ট কোনো জায়গা আছে?’

ইশানের ঠোঁটের কোণায় হাসির আভা দেখা গেলো।পাঁচ তারকা হোটেলের গেট দেখে তিথি হাঁপ ছেড়ে বেঁচে যায়।যাক তাহলে আজ আর তাকে টর্চার করা হবেনা।
সে খুশি হয়ে ইশানের পিছু পিছু চললো।ম্যানেজারের কাছে হোটেল রুম নেয়ার সময় ইশান বারতি টাকা আর একটা প্রেস্ক্রিপশান দিয়ে বললো তারা যেন এগুলো এনে রুম সার্ভিসের সঙ্গে পাঠিয়ে দেয়।কথাটা খুব ধীরে ধীরে বলেছিল।তাও তিথি একটু একটু শুনেছে যে ওগুলো ফার্মেসীর দোকান থেকে আনার জন্য বলছে ইশান।
তিথি চোখ বড় বড় করে ঢোক গিলে ওখানকার সোফায় বসে পড়ে।সে কিছুতেই ইশানের সাথে একা রুমে যাবেনা।তার স্বামী হলেও, কেমন যেন মনে হয় আজকে ইশান ওকে একা পেয়ে উল্টো পাল্টা কিছু করবে।
ইশান কার্ড দিয়ে টাকাটা পে করে এসে তিথিকে বললো চলতে।তখন তিথি বললো,’আমার খিধে পেয়েছে।আগে খেয়ে নি?’

ইশান তখন বললো সে খাবারের অর্ডার দিয়েছে।খাবার রুমে এনে দিবে।
এটা শুনে তিথির গলাটা আরও শুকিয়ে গেলো।সে সোফাকে আঁকড়ে বসে আছে আর মনে মনে ভাবছে ইশান ওকে কেটে টুকরো টুকরো করবে আর সেগুলোতে স্যাভলন,ব্যান্ডেজ লাগাবে তাই ওসব অর্ডার দিয়েছে।
তিথির হাত পা কাঁপছে দেখে ইশান একটা ধমক দিয়ে বললো নাটক না করে যেন রুমে আসে।মানুষ অন্য কিছু ভাববে এখন।

তিথি বললো ইশানকে চলে যেতে।সে কিছু সময় পর আসবে।ইশান ও আর দাঁড়ালোনা।চলে গেলো।তখন তিথি চুপিচুপি ম্যানেজারের কাছে এসে বললো,’আমার হাসবেন্ড আপনাকে কি এনে দিতে বলেছে?’

ম্যানেজার মুচকি হাসি দিয়ে বললো এগুলা বলা পলিসির মধ্যে নেই।তখন তিথি রেগে বললো,’আশ্চর্য! আমি ওনার ওয়াইফ হই।আমাকে বলতে কি সমস্যা? ‘

‘বলা যাবেনা ম্যাম’

‘আপনাদের কাছে স্প্রে আছে?’

‘কিরকম?’

‘বডি স্প্রে’

‘নেই ম্যাম।তবে হোটেল রুমে আছে’

তিথি ঠিক আছে বলে চলে গেলো ইশানের পিছু পিছু।ইশান ততক্ষণে রুমে ঢুকেও গেছে।তিথি ভয়ে ভয়ে ভেতরে ঢুকতেই ইশান বললো দরজা লক করতে।
এটা শুনে তিথি আরও ভয় পেয়ে যায়।কিন্তু নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোলে রেখে সে ভিতরে ঢুকে।
ইশান টিভি অন করে শুয়ে আছে,তিথি ওকে আড় চোখে দেখে নিয়ে দূরে একটা চেয়ারে বসলো।এরপর হাতের চুড়ি গুলো ধরে দেখতে যাবে তখন ইশান দুমদাম আওয়াজ করে বিছানা ছেড়ে উঠলো।ওর এমন ব্যবহারে তিথি ভয় পেয়ে হাত লুকিয়ে ফেলেছে।ইশান যেন ওর কারণেই উঠেছে।উঠে সোজা তিথির সামনে এসে দাঁড়ালো সে।
তিথি তো ভয়ে শেষ,এই বুঝি জ্ঞান হারাবে।
ইশান তখন পাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে বললো,’মনে আছে?তোমায় জড়িয়ে ধরে ছিলাম বলে কি করেছিলে?’

তিথি ঢোক গিললো।ইশান ওকে জড়িয়ে ধরায় সে ওকে তিনটা থাপ্পড় মেরেছিল।ওগুলা মনে করে তিথি নিজেই নিজের গাল ধরে রাখলো ভয়ে।এটা দেখে ইশান বললো,’চড় মারবোনা,তোমার শাস্তি এবার কি হতে পারো নিজেই ভেবে নাও’

তিথি গাল থেকে হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়।এরপর বলে,’এখন কি তবে জড়িয়ে ধরতে হবে?’

ইশান হাতের ঘড়িটা উল্টে দেখে বললো,’উমমমম পাক্কা ষোল মিনিট।তোমার চড়ের জ্বালা ষোল মিনিট ছিল’

তিথি বিরক্তি নিয়ে কাছে এসে ইশানকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে রাখে।ইশান এক মিনিটের জন্য ভুলে গিয়েছিল তিথি তার সঙ্গে কি কি করেছে।সে তিথির গায়ের উষ্ণতায় হারিয়ে তিথিকে আরও মজবুত করে ধরে নিয়েছিল।তিথির ও মনের ভয়টা দূর হয়ে ভাল লাগা কাজ করছিল কিছু সময়ের জন্য।
চলবে♥

যদি তুমি বলো💌
পর্ব ১৯
আফনান লারা

ষোল মিনিট পার হতেই ইশান এক ঝটকায় তিথিকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।তিথি মেঝেতে বসে ওর দিকে বোকার মতন তাকিয়ে আছে।ওর এমন তাকানো দেখে ইশান বললো ‘শাস্তির স্বাদ পেলি?’

তিথি কিছু আর বললোনা।ইশান তখন নিজের ফোন নিয়ে আবার গিয়ে বিছানায় বসেছে।তিথি এবার উঠে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বললো,’আমার ফোনটা তো ফেলে দিছেন।এখন আমি আম্মুকে কি করে কল দিবো?’

‘বাসায় গিয়ে একটা পেয়ে যাবি।এখন আপাতত তোর ফোনের প্রয়োজন নেই বলে আমি মনে করি।নব বিবাহিত দম্পতিকে বিরক্ত করেনা সমাজ’

তিথি হনহনিয়ে এসে ইশানের হাত থেকে টান দিয়ে ফোন নিয়ে দূরে গিয়ে লক খোলার চেষ্টা করলো।কিন্তু কিছুতেই সে লকটা আর খুলতে পারে নাই।
ইশান শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছে এবার,সে জানতো তিথি ওর ফোনের লক খুলতে পারবেনা।তিথি ওর দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ তার কি যেন একটা মনে পড়লো।ওমনি সে ফোনে পাসওয়ার্ড টা টাইপ করতেই লক খুলে গেছে।তিথি মুখে হাসি ফুটিয়ে তার মায়ের নাম্বারে কল করে।
ও লক খুলতে পেরেছে দেখে ইশান হাতের রিমোটটা রেখে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল।
এটা অসম্ভব! ইশান তিথিকে সেই কত বছর আগে চামেলী সম্ভোধন করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতো। তিথি এ কথা কিভাবে জানে!
ইশান চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে দেখে তিথি হাসতে হাসতে তার মাকে বলছে সে আজ দারুণ খুশি।
কোন হোটেলে তারা উঠেছে সেসবও বললো।এরপর ফোন রাখতেই ইশান ওকে প্রশ্ন করে সে কিভাবে জেনেছে পাসওয়ার্ডের কথা।
তখন তিথি ফোনটা ওকে ফেরত দিয়ে বললো,’আমাকে দেয়া সেই প্রিন্ট করা ছবিটার কোণায় লেখা ছিল,’চামেলী’

ইশানের মনে পড়ে যায় সে তিথিকে ওর একটা ছবি প্রিন্ট করিয়ে উপহার দিয়েছিল একবার,তাতে লিখিয়েছিল চামেলী।এ কথা তার মনে পড়লোনা কেন!আচ্ছা তিথির তো স্মৃতি ভুলে যাবার রোগ আছে তবে এটাই বা কি করে মনে রাখলো সে?

তিথি আরও কিছু বলবে তখনই দরজায় নক করে রুম সার্ভিসের একজন লোক।ওমনি ইশান সব ভুলে কেমন করে যেন তিথির দিকে তাকিয়ে গেলো দরজা খুলতে।
তিথির মনে ভয় আবারও সাড়া জাগালো।সে ইশানের আগে ছুটে নিজে গিয়ে দরজা খুলে দিয়েছে এরপর লোকটার হাত থেকে সেই ঔষুধের প্যাকেটটা নিয়ে সে ফেরত ও চলে আসলো।
ইশান দরজাটা আবারও লাগিয়ে এসে বললো,’নিয়েই যখন নিছিস।খুলেই দেখ’

তিথি ভয়ে ভয়ে প্যাকেটটা ছিঁড়ছিল।তখন ইশান ওর ভয়ার্ত চোখ দেখে বলে,’তুই যেটা ভাবছিস সেটা নেই এখানে’

তিথি ব্রু কুঁচকে প্যাকেটটা আরও দ্রুত খুলে দেখে ভেতরে মাইগ্রেনের ঔষুধ আর গ্যাস্ট্রিকের ঔষুধ।
তখন সে দাঁত কেলিয়ে ঔষুধ গুলো সরিয়ে চুপচাপ বসে থাকে ভাল মেয়ের মতন।
ইশান টিভি অন করে বললো,’যারে দু চোখে দেখতে পারিনা তার সাথে কাটাবো সুন্দর মূহুর্ত?নিজেকে কি মনে করিস?তুই মেয়ে বলে তোর সব দোষ মাফ করে আমি তোর সাথে ওগুলা করবো?আমার আত্নসম্মান বোধ আছে।
তোকে আদর সোহাগ করার জন্য বিয়ে করিনি।ওসবের চিন্তা থাকলে এখনই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল’

তিথি গাল ফুলিয়ে রেখেছে কথাগুলো শুনে।ইশান ওকে কথা শুনানোর জন্য ইচ্ছে করে এমন নাটক করছিল তাহলে!
———–
অর্ডার করা খাবার গুলো আসার পর তিথি আর খাচ্ছেনা।কারণ তখন তো সে খুধা পাওয়ার নাটক করেছিল।এখন কি করে খাবে।
ইশান তখন ওর কাছে এসে বসে খাবার চামচে তুলে বললো ‘সত্যি কিংবা মিথ্যা।খাবার যখন এসেছে তখন তোকে খেতেই হবে ‘

এই বলে সে তিথির গাল টিপে ধরে এক চামচ পোলাও খাইয়ে দিয়েছে।তিথি অনেক কষ্টে খাবারটা গিললো।এরপর ইশানের চোখে চোখ রেখে বললো,’আমি কি আপনাকে খাবার দিয়ে এমন কষ্ট দিয়েছিলাম?’

‘এইসব হিসেব করিস না।যদি সমান সমান হিসেব করতেই হয় তবে আজ তুই আমার স্ত্রী হতিনা।যাই হোক,ভাল মেয়ের মতন আবার হা কর দেখি’

তিথি মুখটা চিপে ধরে রেখেছে।আর এক চামচ খাবার খেলে তার বমি এসে যাবে, এদিকে এই ছেলের থেকে রক্ষা পাওয়া মুখের কথা না।

তিথি চামচটার দিকে চেয়ে বললো,’অন্য যেকোনো শাস্তি দিন,এটা বাদে।এটা অনেক সহজ হয়ে যাচ্ছেনা?’

ইশান চামচটা সরিয়ে ফেললো।এরপর দুষ্টুমি করে বললো,’ওমা তাই?ওকে তোর কথাই রইলো তবে’

ইশান নিজের পাঞ্জাবির হাতা উঠিয়ে পোলাও মাখতে মাখতে বললো,’নিজের হাতে খাইয়ে দিবো তোকে’

তিথি চোখ বড় করে একটু পিছিয়ে বলে,’না না।আমার সত্যি খুধা নাই’

ইশান খিলখিল করে হাসছিল,সেইসময় ওর ফোনে কল আসে তামিয়ার।ইশান তিথিকে কলটা রিসিভ করতে বলে।তিথি কল রিসিভ করে স্পিকার দিতেই তারা দুজনে শুনতে পায় তামিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলছে মা নাকি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
এটা শুনে ইশান লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে।দ্রুত হাত ধুয়ে এসে তিথিকেও বের হতে বললো।
গাড়ী দিয়ে যাবার সময় তিথি ইশানের দিকে ফিরে হঠাৎ করে বললো,’আন্টি আমায় পছন্দ করেন না জেনেও কেন বিয়ে করেছেন?আমার উপর প্রতিশোধ অন্যভাবেও নেয়া যেতো’

আসলে তিথি কল স্পীকারে দেয়ায় তামিয়ার কথা শুনেছিল।তামিয়া বলেছে ইশান তিথির করা সব ভুল জেনেও তাকে কেনো শাস্তুি না দিয়ে উল্টে ওকে নিয়ে ঘুরতে গেছে এসব বলতে বলতেই মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।তখন তিথির মাথায় আসলো সম্পূর্ণ ব্যাপারটা।

বাসায় ফিরে মায়ের কাছে এসে বসে ইশান জানতে চাইলো ওনার কি হয়েছে।তখন ওর খালা চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন যা হয়েছে সব ইশানের দোষেই।ইশান তো তিথিকে এই শর্তে বিয়ে করেছিল যে,,,সে তিথির করা সব কাজের শাস্তি তাকে দিবে, তার মাকে করা সব অপমানের জবাব দিবে।কিন্তু এসব না করে সে তিথিকে নিয়ে ওদের বাসায় না ফিরে একটা হোটেলে ঘুরতে গেলো।এগুলা মায়ের সহ্য হয়নি বলেই!’

তিথি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সব শুনছিল।ইশান ঘাঁড় বাঁকিয়ে ওর দিকে তাকাতেই ও চলে যায় তখনই।
ইশান এবার খালার দিকে চেয়ে বলে,’হ্যাঁ,শাস্তি অবশ্যই সে পাবে।কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাকে আমি দূরে রাখবো।যেহেতু বিয়ে করেছি,সেহেতু সে আমার সাথে থাকাটাই তো স্বাভাবিক।’

খালা মুখ বাঁকিয়ে বললেন,’আমি কি জানি বাবা!এতদিন তো মেয়েটাকে খুব ভাল মনে করেছিলাম।কিন্তু আপার থেকে সব শুনে আমি তো অবাক।এরকম একটা মেয়েকেই তোর বউ করে আনতে হলো?মুনিয়া কি এতই খারাপ?তুই জানিস? তোর শোকে মুনিয়া আজ কতদিন হলো অসুখে ভুগছে?’

‘না সে খারাপ নয়।সে যথেষ্ট ভাল মেয়ে।কিন্তু আমি তো তিথিকে ভালবাসতাম এবং বাসি ও।মুনিয়াকে ছোট বোনের চোখে দেখেছি শুরু থেকেই।ওর সাথে তুলনা দেয়ার কি আছে?’

‘তুই ভালবাসিস সেই মেয়েকে যে মেয়ে তোর মাকে কাঁদিয়েছে?বাহ!বেশ সাধু ছেলে!’

‘খালা!আমি আমার মাকে অনেক সম্মান করি।আমার মাথায় আছে মাকে করা অপমানের কথা।তার মানে এই নয় যে আমি ওকে….’

ইশান আর কিছু বললোনা।উঠে বাহিরে এসে একজন ডাক্তারকে ফোন করতে লাগলো।
তিথি সেসময় ইশানের রুমে বসেছিল।আর ভাবছিল এতদিন যা খালারা একটু আদর দরদ দেখিয়েছেন,আজকের পর থেকে মনে হয় তারাও দৃষ্টিকটু হিসেবে দেখবেন তাকে’

তিথির কিছু ভাল লাগছেনা।মন চাইছে উঠে চলে যেতে কোথাও একটা।এ বাসার প্রতিটা মানুষকে দেখে ওর গা গুলাচ্ছে।বারবার মনে হয় এই বুঝি কেউ না কেউ আসবে আর খোঁচা দিবে নয়ত ঝাড়ি দিবে!’

হঠাৎ দরজায় কারোর ঠকঠকানোর আওয়াজ পেয়ে তিথি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।ওপারে ইশান।
সে ভেতরে ঢুকে গায়ের পাঞ্জাবিটা খুলে একটা টিশার্ট পরতে পরতে বললো,’যা আমার মায়ের কাছে গিয়ে বসে থাক।’

‘আমাকে বকবে সবাই’

‘দোষ করলে অবশ্যই বকা খেতে হয়।যেটা বলছি ওটা কর।শাড়ী এটা বদলে তারপর যা’

ইশান দ্রুত টিশার্ট পরে মায়ের কাছে গিয়ে ঐ রুমে থাকা সবার দিকে লক্ষ্য করে বললো,’তিথি মায়ের কাছে এসে বসবে।কেউ তাকে কিছু বলবেনা।সে আমার ক্ষতি করেছে তার শাস্তি আমি তাকে দিবো।তার মানে এই না যে গোটা গুষ্টি শুদ্ধ তাকে কষ্ট দিবে!’

এই বলে সে চলে গেলো ডাক্তারকে গেট থেকে নিয়ে আসতে।
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে