যদি তুমি বলো💌
পর্ব ১০
আফনান লারা
তিথির বাবা মহাশয় তার মহাশয়াকে ডেকে তুলার জন্য একটা স্টিলের বাটি খুঁজছেন।তিথির মায়ের ঘুম খুবই গভীর।যার কারণে সকাল বেলার মৃদু আওয়াজে ডাকার ফলে তার ঘুম ভাঙ্গার কথাই না।
অনেক খুঁজে স্টিলের বাটিটা বের করে তিনি বাজানো শুরু করে দিলেন।ওমনি লাফিয়ে উঠে বসলেন মিসেস শায়লা।
তিনি চোখ বড় করে জানতে চাইলেন সকালে এত বিদঘুটে পদ্ধতিতে তাকে ঘুম থেকে তোলার কারণ কি।
সুলতান সাহেব তখন ফিসফিস করে বললেন,’তোমার মেয়েকে দেখতে এসেছে এক সনামধন্য পরিবার।জলদি তৈরি হয়ে তাদের সামনে যেয়ে বসো’
‘এ্যাহ?আবার?তানিয়ার না বিয়ে ঠিক হলো?’
‘এরা এসেছে তিথির জন্য’
এ কথা শুনে মা জলদি উঠে পড়লেন তৈরি হবার জন্য।
ওদিকে রিদম পাত্রের খালা দুজনের সাথে ভুলভাল যা পারছে আনাবসানাব বলেই চলেছে।
ঠিক সে সময় তানিয়া একটা ঝাড়ু নিয়ে বেরিয়ে আসতে আসতে বললো,’বান্দর!সকাল সকাল এত ভাষণ শুরু করলি ক্যান?অবশ্য তুই তো ভাষণ দেস আর শোনে কাউয়া জনতা,ভাল মানুষ শোনেনা!’
এ কথা বলে তানিয়া চেয়ে দেখে পাত্রের খালা আর বোন ওর দিকে তাকিয়ে আছে।তানিয়া হাতের ঝাড়ুটা পেছনে লুকিয়ে দাঁত কেলিয়ে সালাম দিলো এরপর এক পা এক পা করে রিদমের পিছনে লুকিয়ে উঁকি দিয়ে বললো,’আপনারা কারা?’
ওনারা নিজেদের পরিচয় দিলেন তানিয়া আর রিদমকে।
এরপর তারা তিথির কথা জানতে চাইলেন।তখন তানিয়া বলে সে ঘুমাচ্ছে।তখন বেলা এগারোটা বাজে।
তানিয়া মুচকি হাসি দিয়ে বললো,’আসলে কাল আমরা রাতের দুইটায় ঘুমাইছি তো।তাই টুকুর উঠতে দেরি হচ্ছে।আমি উঠাই আনি।আপনারা বসুন,এই রিদম তুই তো শরবত বানাতে পারিস।শরত বানিয়ে ওনাদের দে!”
রিদম মাথা চুলকে তাই চলে গেলো।এরই মধ্যে তিথির মা এসে ওনাদের সালাম দিয়ে কথা বলতে বসে গেলেন।
তানিয়া ঝাড়ু ফেলে তিথিকে জাগাতে এসে হাজির।তিথি চিৎ হয়ে শুয়ে আছে।মাথা বালিশের তলায়।
তানিয়া ওর বালিশটা কেড়ে নিয়ে বলে,’টুকু উঠো!তোমায় দেখতে পাত্রপক্ষ এসেছে,জলদি উঠো!’
এ কথা শুনে তিথি উঠলো।চোখ ডলে বললো,’ছেলে কি করে?’
‘ময়দা মাখে,সেটাকে চিকন করে সিদ্ধ করে।তারপর শুকায়’
এটা বলে তানিয়া হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলো।তিথি ভ্রু কুঁচকে বলে,’ময়রা?’
‘আরে ধুর!মজা করতেছি।তুমি উঠো তো।ফ্রেশ হয়ে আমার বেগুনী রঙের জামাটা পরো।ওটা পরলে তোমায় বেগুনী পরীর মতন লাগে।জলদি করো’
তানিয়া জোরপূর্বক তিথিকে উঠিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিয়েছে।এরপর গেছে রান্নাঘরে।
রিদম তিন গ্লাস শরবত তৈরি করে রেখেছে।নিয়ে যাওয়াই ধরছিল তখন তানিয়া ওকে থামিয়ে বলে,’তোর তো পুরান অভ্যাস।চিনির জায়গায় নুন দেস,নুনের জায়গায় চিনি।আজ অবধি তোকে বোয়াম চিনাইতে পারি নাই।দাঁড়া টেস্ট করে দেখি’
এই বলে তানিয়া মুখে দিয়ে ফুরুত করে আবার ফেলে দেয় সব।রিদম পুরান ভুল আবারও করেছে।সে শরবতে চিনির জায়গায় লবণ দিয়ে দিছে।
তানিয়া ওরে কিছুক্ষণ বকাবকি করে বললো বাসায় কিছু নাই।সে যেন তিনটা ডিম পোজ করে নেয়।অন্তত এগুলা দিলেও মান বাঁচবে।
রিদম মাথা নাড়িয়ে ডিম ভাজি করতে চলে যায় আর তানিয়া শরবতের ট্রে নিয়ে ওনাদের সামনে রেখে আসে।
তারপর তানিয়া এসে দেখে তিথি তৈরি।বিয়ে করা নিয়ে এতদিন তিথির তেমন ইন্টারেস্ট না থাকলেও এখন আছে কারণ এখন তার পিছুটান নাই।যাকে নিয়ে সংসার পাততে চেয়েছিল সে মানুষটা একটা ধোকাবাজ বলে এখন তার নতুন একটা মানুষকে বিয়ে করতে কোনো সমস্যা লাগেনা।হয়ত মাঝে মাঝে খারাপ লাগবে এই ভেবে যে এতগুলো দিন কার পেছনে ব্যয় করেছে সে।
চুলগুলোকে ক্লিপ দিয়ে বেঁধে তিথি ওনাদের সামনে এসে হাজির হয়।
সালাম দিয়ে সে দাঁড়িয়ে থাকে।পাত্রের খালা ওকে নিজের পাশে বসতে ডাকলেন তখন। তিথি ও তাই করে।
তিনি তিথির পুরো নামটা জিজ্ঞেস করলেন।এর বেশি একটা প্রশ্ন ও তিনি করলেন না।
সেই সময় রিদম তিনটা ডিম পোজ নিয়ে এসে হাজির।ওনাদের খেতে দিয়ে সে বলে ‘মাস্টার শেফের উইনার ছিলাম।আমার রান্না খেলে খুশিতে মরে যাবন।নিন খান’
পাত্রের খালা হাসি দিয়ে ডিম নিয়ে মুখে দিয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকালেন।তারপর ডিমটা রেখে দিলেন তিনজনেই।
রিদম ভাবছে এত মজা হয়েছে যে হাত থেকে বাটি রেখে প্রশংসা করতে চায় তারা।তাই সে লজ্জায় লাল হয়ে চোখে হাত দিয়ে ঢেকে ফেললো।
তানিয়া ওনাদের মুখের চাহনি দেখে একটা বাটি থেকে ডিম একটু তুলে মুখে দিয়ে বুঝলো রিদম নুনের জায়গায় চিনি দিয়ে ডিম ভাজি করে এনেছে।সে কপালে ঠাস করে বাড়ি একটা দিয়ে এরপর রিদমের কান টেনে ধরে ওনাদের সামনে থেকে নিয়ে গেলো।ওনারা কেউই ডিমের ভাল খারাপ টেস্ট নিয়ে কিছু বলেননি।
তিথিকে চলে যেতে বলে তারা তিথির বাবা মায়ের সাথে অনেক কথাই বললেন।তিথি অবশ্য সেসব শুনতে যায়নি,কিন্তু তানিয়া আর রিদম আড়ি পেতে সব শুনেছে।এবং বুঝেছে ওনারা হয়ত কথাটা আগাতো চান,আর তাই কাল তিথির বাবা মাকে ওনারা বাসায় দাওয়াত দিয়ে চলে গেছেন সবাই।
বাবা ভীষণ চিন্তাভাবনায় আছেন।কি করা উচিত তার। সেটা ভাবতে গিয়ে পরে ঠিক করলেন হয়ত এবার তিথিকে বিয়ে দেয়ার আসল সময় এসে উপস্থিত হয়েছে।তাই আর সাত পাঁচ না ভেবে তিনি সিদ্ধান্ত নেন আগামীকাল ওদের বাসায় যাবার।
তানিয়ার ফোনে আজ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে।সে রিসিভ করতেই কিছুক্ষণ স্তম্ভিত রয়ে যায়।এরপর হঠাৎ ব্যাগ গুছিয়ে সে বের হয়ে গেলো।
এসে উপস্থিত হলো একটা খোলামেলা নিরিবিলি রেস্টুরেন্টে।
সে বসে বসে পা নাড়ছে চিন্তায়।অনেকক্ষণ কেটে যাবার পর তার সামনে এসে দাঁড়ায় ইশান।
তানিয়া মুচকি হাসি দেয় তখন।ইশান চেয়ার টেনে বসে বলে,’বলো কি খাবে?স্ট্রভেরী স্যান্ডুইচ? ‘
‘এখনও মনে আছে ভাইয়া?’
‘হ্যাঁ’
ইশান ওয়েটারকে ডেকে খাবারের অর্ডার দেয়।এরপর বলে,’তোমার টুকুর বাসায় আজ বিয়ের প্রস্তাব গিয়েছিল তাই না?’
‘হ্যাঁ,কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে?’
ইশান তখন সানগ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে বলে,’পাত্র আমি’
এটা শুনে তানিয়া চোখ বড় করে ফেলে।পরপরই খুশিতে তার মন ভরে যায়।সে বলে এটা হলে খুব ভাল হবে।
তখন ইশান বলে,’কিন্তু তোমার একটা হেল্প করতে হবে আমায়।সে জন্যই তোমায় কল দিয়ে এখানে এনেছি’
‘কি ভাইয়া?’
‘বিয়েটা হবে কিন্তু তিথি যেন কোনোভাবেই না জানে তার বিয়ে ইশতিয়াকের সাথে হচ্ছে’
‘সেটা কিভাবে সম্ভব? বিয়ের আগে তো একবার হলেও আপু ছেলেকে নিজ চোখে দেখতে চাইবে।’
‘সেটা জানি।সেটার ব্যবস্থা আমি করতে পারবো।তা নিয়ে ভাবছি না।কিন্তু যাতে সে কোনোভাবে আমায় না চিনে সেই দিকটা তোমার দেখতে হবে।তোমার বাবা,মা,ভাই কেউই আমাকে চিনেনা।তারা দেখলে সমস্যা নেই।
একমাত্র তুমি চিনো,তুমি পারবেনা এ কাজ?’
‘কিন্তু ওর সাথে এমন লুকোচুরি কেন?বিয়ের পরে তো দেখা হয়েই যাবে’
‘তুমি জানো, তিথি আমার কথা শুনলে বিয়েটা কখনওই করবেনা’
‘কেন করবেনা ভাইয়া?আপনি তো এখন ওয়েল সেটেলড্।সে রাজি হয়ে যাবে।বলে দেখুনই না!’
ইশান হাসে।খাবারের প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে বলে,’সব শুনলে রাজি তো হবেই!কিন্তু আমি চাইনা সে জানুক।আশা করি তুমি আমার এই অনুরোধ রাখবে’
তানিয়া মাথা নাড়ে।এরপর বলে ওঠে,’আপুকে অনেক ভালবাসেন তাই না?’
ইশান তার ফোনে একটা ভিডিও দেখছিল তখন।সম্ভবত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ।তিথি তার বাসা থেকে বের হচ্ছে আর তার নামার সিঁড়িতে কেউ একজন তেল ঢালছে।
সেটা দেখে ইশান হাসলো এরপর তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’হ্যাঁ,অনেক বেশি ভালবাসি’
——–
তিথিকে হাসপাতালে এনে বেডে শুইয়ে রাখা হয়েছে আর তার ডান পা উপরে তোলা।
আগামী বিশ/বাইশ দিনের মতন তার পায়ে এই ব্যান্ডেজ এবং চোট,দুটোই থাকবে।
তিথি বারবার বলছে সিঁড়িতে তেল ছিল,তেল আসলো কি ভাবে,তদন্ত করতে।
কিন্তু কেউ তার কথার পাত্তা দিচ্ছেনা।সকলে ওর বিয়ের কথা নিয়ে চিন্তা করছে। ছেলে নাকি জাপান চলে যাবে পঁচিশ দিন পর।সে এর আগে বিয়ে করে নিতে চায়।
তিথি গাল ফুলিয়ে রাখলো আর পা টার দিকে চেয়ে রইলো।তার কাছে কেমন যেন পরিকল্পিত মনে হচ্ছে সব।
চলবে♥
যদি তুমি বলো💌
পর্ব ১১
আফনান লারা
তিথির বেশ ভালমতন মনে আছে সিড়িতে তেলজাতীয় কিছু একটা ছিল,যাতে পা রাখতেই সে পড়ে যায় এত উপর থেকে।
কয়েকদিন ধরে ওর সাথে সব খারাপই হচ্ছে।মনে হয় যেন জীবনে কুফার আগমন ঘটেছে।
ওমনি তিথি শুনতে পেলো তার ভাঙ্গা পায়ের সামনে দাঁড়িয়ে তার বাবা তার বিয়ে ঠিক করছে।তিথিকে তানিয়ার কাছে রেখে সকলে মিলে নাকি আজ পাত্রের বাড়ি যাবে।
তিথি ইশান নাম শুনে সন্দেহ করলেও পরে যখন শুনলো ছেলে ব্যবসায়ী তখন আর সন্দেহ রাখেনি।তবে রিদমকে বলেছে আসার সময় একটা ছবি তুলে আনতে।সে দেখবে ছেলেটা দেখতে কেমন।
তানিয়াকে তিথির কাছে রেখে সকলে মিলে ইশানদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
যেতে প্রায় দু ঘন্টার মতন লেগে যায় তাদের।এর কারণ হলো তারা মেইন রোড দিয়ে এসেছে।আর মেইন রোডে ছিল প্রচুর জ্যাম।
ইশানদের বাসার ভেতর ঢুকে তারা তো সবাই অবাক।এত বড় বাসার ছেলের জন্য কিনা তাদের মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব এসেছে!
কিন্তু বাসায় ঢুকে তারা কোথাও ইশানের মাকে দেখে নি।তারা জানতো বাসায় কেবল ইশানের মা আর দুটো বোন থাকে।তবে বোনদের দেখলেও মায়ের অনুপস্থিতি তাদের মনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া করছিল। তখন ইশানের খালা এসে তাদের আপ্যায়ন করতে করতে জানান ইশানের মা একটু অসুস্থ,তিনি ঘুমাচ্ছেন।বেলা এগারোটার সময় তিনি ঘুমাচ্ছেন,মেয়ে পক্ষের মানুষ আসার পরেও আসলেন না। এসব তাদের মাথার ভেতর চরকির মতন ঘুরছিল তাও তারা খালাদের মিষ্টি ব্যবহারের কাছে হার মেনে সকলে সোফায় এসে বসলেন।
তামিয়া এবং ইকরা এসে দাঁড়িয়ে আছে দুজনে। ইশান বলেছিল তামিয়াকে থাকতে।কিন্তু তিথি থাকলে সে যেন ধারের কাছেও না থাকে।কারণ তিথি ওকে চিনে ফেলতে পারে।
ইশান নিজেই নেই বাসায়।আসতে কিছু সময় লাগবে।সবাই বাসা দেখতে ব্যস্ত। সাথে ইশানের খালারা তো আছেনই,ননস্টপ বকবক করেই চলেছেন।
মিসেস শায়লা করিডোর দিয়ে যাবার পথে দেয়ালে কিছু দাগ দেখে থেমে যান।এরপর বলেন,’এখানে মনে হয় ছবি রাখা ছিল, তাই না?’
‘হ্যাঁ,ফ্রেম ঠিক করাতে সরানো হয়েছে।ঐ আর কি”
খালারা তিথি না আসার কারণ ও জানতে চাইলেন।তখন বাবা তিথির দূর্ঘটনার কথা জানান সবাইকে।
সব কথা শেষে জনাব সুলতান ইশানকে দেখতে চাইলেন।ঠিক সেইসময় ইশান এসে উপস্থিত হয় সেখানে।সালাম দিয়ে সবার মাঝে গিয়ে বসে সে।
ইশানকে চোখের দেখা দেখে তিথির বাবা মায়ের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।এবারের ছেলেটা সব দিক দিয়েই পারফেক্ট।
ইশানের বাসা,ব্যবসার সব কথা শুনে তিথির বাবার মনে ভয় জেগে উঠলো যৌতুক দেয়া নেওয়া নিয়ে।এটাই মোক্ষম সময় বলে তিনি ইশানের সামনেই কথাটা পেশ করলেন।জানতে চাইলেন তার কোনো চাহিদা আছে কিনা।
ইশান তখন কথাটা শুনে মুচকি হাসলো এরপর বললো,’চাহিদা একটাই।আপনাদের মেয়েকে দিয়ে দিবেন একেবারে’
এটা বলে সে উঠে চলে যায়।রিদম ইশানদের ছাদে চলে গিয়েছিল।ইশানের ছবি তোলার কথা তার মনে নেই।যখন তার মনে পড়লো তখনই সে ছুটে আসলো বাসায়।ইশান তখন তার রুমে গায়ের শার্ট খুলছিল।রিদম লুকিয়ে তার কয়েকটা ছবি তুলে পালিয়ে যায় ওখান থেকে।
——
তানিয়া ফোনে রকিবের সাথে কথা বলছিল আর তিথি তার পা টাকে নাড়াচাড়া করার চেষ্টা করছে।জীবনে কখনও তার সাথে এমন ঘটনা ঘটেনি।হঠাৎ করে সব যেন একসাথে ঘটে চলেছে।এর কারণ টা কি!
‘কোনো সিক্রেট লাভারের উদয় হলো নাকি?কিন্তু সমস্যা হলো সিক্রেট লাভার হলে সে আমায় সিঁড়ি দিয়ে ফেলছে কেন?
এটা মনে হয় সিক্রেট এনিমি’
তানিয়া রকিবের সাথে কথা বলতে বলতে অন্য কেবিনে চলে গেছে।এরই মধ্যে সেখানে এসে হাজির হয় একজন ডাক্তার।তিনি তিথির অনুমতি ছাড়াই ওর পায়ের ব্যান্ডেজটা চেক করছিলেন। অনেক দেখাদেখির পর্ব শেষ করে তিনি চেঁচিয়ে নার্স ডাকলেন।এরপর বললেন এত কম দামী ব্যান্ডেজ কেন লাগানো হয়েছে।এটা বলে ধমকে নার্সকে দিয়ে ভাল মানের একটা ব্যান্ডেজ আনিয়ে পুনরায় ব্যান্ডেজ খুলে সেটা লাগিয়ে দিলেন ।তিথি চুপচাপ দেখছে সব।
‘কাহিনী তাহলে এটা!আমায় পাহাড় থেকে ফেলে দিবে,তারপর পাহাড়ের তলা থেকে কুড়িয়ে হাসপাতালে ভর্তি করাবে।কি অদ্ভুত মানুষ!’
তিথিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ডাক্তার থতমত খেয়ে ঐ জায়গা থেকে চলে যাওয়া ধরতেই তিথি বলে উঠে ‘থামুন! শুধু একবার বলেন সাধারণ ব্যান্ডেজ আর দামী ব্যান্ডেজের তফাৎ কি?’
ডাক্তার পেছনে ফিরে হাসি দেয়।এরপর বলে,’আপনাকে বলা প্রয়োজন বোধ করছিনা’
এটা বলে তিনি হাওয়া।তিথি এবার নিশ্চিত হলো এটাকে নিশ্চয় সেই লোক পাঠিয়েছে যে এসব কিছুর পেছনে দায়ী।নরমাল ডাক্তার হলে তিথির প্রশ্নের জবাব দিতো!
——
ইশানদের বাসায় আজ তিথির পরিবারের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।এত সময় হয়ে যাবার পরেও ইশানের মায়ের দেখা মিলছেনা বলে এতক্ষণ মনে মনে হাঁশপাঁশ করলেও সুলতান সাহেব শেষমেশ কথাটি বলেই ফেললেন।
ইশানের মাকে একবার আসতে বললেন।কথাটা পাশের রুম থেকে ইশান ও শুনলো।সে তখন হাতে ঘড়ি পটছিল।
ঘড়িটা পরতে পরতে সে সোজা মায়ের রুমে আসে।
মা অন্যদিকে ফিরে শুয়ে আছেন।
ইশান চেয়ার একটা টেনে নিয়ে মায়ের মুখের সামনে বরাবর বসে।
মা ওকে দেখে চোখ বন্ধ করে ফেললেন সাথে সাথে।
ইশান তখন বললো,’তুমি ঘুমাচ্ছো না।যদি ঘুমিয়ে থাকতে তাহলে পা নাড়তে না এতো!ওদের সামনে যাচ্ছো না কেন মা?’
‘আমি মুনিয়ার সাথে তোর বিয়ে দিতে চাই।অন্য কোনো মেয়ের সাথে না।আর সে মেয়ে যদি হয় তিথি তবে তো জীবনেও না’
‘তিথি আমার উপযুক্ত ‘
মা উঠে বসে ধমকে বললেন,’১১ বছর আগে যখন তুই ঐ মেয়েকে পাগলের মতন ভালবেসেছিলি,সে কি করেছিল মনে নেই তোর?
তোর এই মাকে কত কাঁদিয়েছিল, মনে নেই তোর?’
‘মনে আছে মা’
‘তাহলে কেনো সেই মেয়েকেই তুই ঘরের বউ করে আনতে চাইছিস বাবা?কেন?সে তোর যোগ্য না’
‘যোগ্য।তবে সে যেটা করেছে তার শাস্তি অবশ্যই সে পাবে।কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাকে আমি এ জীবনে হারিয়ে ফেলবো।আমি একবার তাকে চেয়েছি,পাইনি।এরপর কত শ্রম করে এখন এই জায়গায় পৌঁছে তাকে আমি একবার মাত্র চেয়েই পেয়ে যাচ্ছি।।।।। ‘
‘তো?তার যে অপরাধ ছিল সেটার কি হবে?’
‘সেটার শাস্তি ও সে পাবে।তুমি এত ভেবোনা মা।তুমি একবার ওদের সামনে যাও।ওরা তো কোনো দোষ করেনি’
‘করেছে!মেয়ে যেরকম,তার পরিবার ও সেরকমই হবে’
‘ওরা অনেক ভাল।ট্রাস্ট মি!একবার আসো!
ইশান জোর করে মায়ের হাত ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে নিলো।এরপর ওনাদের কাছে নিয়ে আসলো আবারও জোর করে।
সুলতান সাহেব ইশানের মাকে দেখে ভীষণ খুশি হলেন।ওনাকে তাদের সাথে বসে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য রিকুয়েস্ট ও করলেন তিনি।
মিসেস আরাফাত গাল ফুলিয়ে ইশানের সাথে বসেন ওখানে।
ইশান তখন বলে তার মা একটু অসুস্থ। সবাই যেন খাবার খাওয়া শুরু করে।
খাবারের এক সময়ে তিথির বাবা হঠাৎ জানতে চাইলেন ইশানদের গ্রামের বাড়ি কোন জায়গায়।তখন ইশান বললো,’মিসরিপুর।’
‘মিসরিপুর?কি বলো!আমরাও তো সেই গ্রামের।তোমার বাড়ি কোন দিকে?’
‘মিসরিপুরের পশ্চিমে মওলানা বাড়ি’
‘চিনিনা,তবে হয়ত গেলে দেখলে চিনবো।আরেহ বাহ!আমি তো ভাবতেই পারিনি তুমি আমাদের গ্রামের ছেলে হবে।অবিশ্বাস্য ব্যাপার!’
রিদম ইশানের ছবিগুলো গ্যালারিতে দেখতে দেখতে হাসছিল।সে গিয়ে তিথিকে দেখিয়ে টাকা খাবে।সেই ভাবনাতেই তার মন আকুপাকু করছে এখন থেকে,কেবল টাকা খাবে বলে।
—-
তিথি পায়ের ব্যান্ডেজটা নাড়তে নাড়তে হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।
সে মুচকি হাসি দিয়ে নার্সকে ডাক দেয় উঁচু স্বরে।তখন নার্স আসতেই সে জানায় তার বার্থডে কেক খেতে ইচ্ছে করছে,তার এই আবদারের কথা শুনে অন্য কোনো নার্স হলে ঝাড়ি দিতো আর নয়ত পরিবারের লোককে ডাকার কথা বলতো।কিন্তু এখানে হলো তার উল্টো।নার্স ওর কাছে জানতে চাইলো সে কি ফ্লেভারের কেক খাবে।
তিথি মনে মনে জানতো এমন কিছুই হবে।তখন সে স্ট্রভেরি ফ্লেভারের একটা কেক আনতে বলে।তার কথা শুনে নার্স চলে যায়।
তিথি ভাবছে আর কি অর্ডার দেয়া যায়।এমন কিছু করতে হবে যাতে করে ঐ নার্স বিরক্ত হয়ে যায় তারপর তার স্যারকে কল দিয়ে বিষয়টা জানায়।এরপরই তার স্যার নেক্সট পদক্ষেপটা নেবে!সেও প্রস্তুত।দেখা যাক পানি কতদূর গড়ায়!
চলবে♥